Main menu

জেমস টেইটের কবিতা

[pullquote][AWD_comments][/pullquote]যদিও কান্ট্রি এটমোসম্ফিয়ারের কবিতা উনি লিখছেন, তারপরও জেমস টেইটের (১৯৪৩ – ২০১৫) কবিতার টোনটা আসলে পল্লীকবি রবার্ট ফ্রস্টের মতো না। ফ্রস্টের পল্লীকবিতার মধ্যে ব্রিটিশরা যেই মেডিভেল ইংল্যান্ডের আনন্দ খুঁইজা পায়, আম্রিকান লিটারেচারের হিস্ট্রিতে সেইটা বেশ দূরের একটা জিনিসই হওয়ার কথা। জেমস টেইটের কবিতাতে সারফেইসগুলি খালি এক একটা ইল্যুশন না যা ডিপ থটের দিকে নাইমা গেছে; বরং সারফেইসগুলিই আছে, ডিপ বইলা যদি কিছু থাকে সেইটা ভিজিবল হইতেছে এইখানেই; ব্যাপারটা একইসাথে খুবই কমিক্যাল এবং স্যাড।   

এইখানে ঠিক বাইছা বাইছা উনার বেস্ট কবিতাগুলিই রাখা হয় নাই, বরং বিভিন্ন সময়ের লেখা কবিতা আছে, যেইটা পইড়া উনার কবিতা  সম্পর্কে কিছু ধারণা করা যাইতে পারে।

 

———————————————————————————————————-

মিথ্যার বই।। কেন আমি বিছানা থিকা উঠবো না।। আয়না।। লেইট হারভেস্ট।। সঞ্জারী।। শ্যাডো বক্সিং।। দ্য ট্রাপ।। যদি তুমি সাগরে হারায়া যাও।। বধির মেয়েটা গান বাজাইতেছে।। উল্লুকরে কেমনে কবিতা লেখা শিখাইবেন।। কঠিন একটা চইলা-যাওয়া।। আমর্হাস্ট থিকা ইস্ট হ্যাম্পটন।। কবিতা ।। গুডটাইম জিসাস।। ওদেরকে বলো  ছিলো এইখানে।। নেইবারস ।। এইটা এমনেই ঘটে ।। নাশকতার ষড়যন্ত্র ।। গরম গরম কথা ।। নাথিং সেইটাই, এইটারে যা মনে হয়।। ঝিঁঝিঁ পোকা ঝিঁঝিঁ পোকা ।। পুরান সোলজাররা ।।

———————————————————————————————————-

 

মিথ্যার বই

তোমারে বলতে চাই আমি
একটা কথা। এক মিনিটের লাইগা
তুমি কি একলা হইতে পারবা? এখন পর্যন্ত আমি
মিথ্যা কথাই বলছি। তুমি কি বিশ্বাস করো

আমি যে বিশ্বাস করি নিজেরে? তুমি কি বিশ্বাস করো
তোমারে, যখন তুমি বিশ্বাস করো আমারে? মিথ্যা বলাটা
ন্যাচারাল। আমারে মাফ কইরা দাও। সারজীবনের লাইগা
আমরা কি একলা হইতে পারবো? আমাদের সবাইরে মাফ কইরা দাও। শব্দগুলি

আমার দুশমন। কখনোই একলা ছিলাম না আমি;
উপরিগুলা, বেঈমানিগুলা ছিলোই। এমনকি এখনো আমি
মিথ্যা বলতেছি। বিশ্বাস করো তুমি
এইটা? আমি সত্যি কথা বলতেছি তো।

[দ্য লস্ট পাইলট, ১৯৬৭।]

 

কেন আমি বিছানা থিকা উঠবো না

রিবনের পাঁকগুলির মতো
আমার পেশীগুলি খুলে আসে:
একটা ছায়াও নাই

বেদনার। এইরকম ভঙ্গিতে
বিকালের বাকি সময়টা
শুইয়া থাকবো আমি,

পুরা দুপুরের কথা
মনে কইরা। বৃষ্টি
বানাইতেছে একটা খাঁড়ি

আমার মলিন আদলগুলির।
আলবেনিয়াতে আছি আমি,
আছি আমি রাইনে।

এখন হেমন্ত,
বৃষ্টির গন্ধ আমি পাই,
বাচ্চাগুলি খেলতেছে, আমি দেখি

ঝুলগুলির ভিতর দিয়া।
মধু আমি,
আমি বিভিন্ন বাতাস।

আমার নার্ভগুলি গলে যায়,
হাত-পাগুলি শুকাইয়া আসে –
তোমারে আমি ভালোবাসি না।

তোমারে আমি ভালোবাসি না।

[দ্য লস্ট পাইলট, ১৯৬৭।]

 

[youtube id=”LAi9tl2DwyQ”]

 

আয়না

সে বলে আমারে
যে, আমি পারি
দেখতে, ভিতর দিয়া
তার, বাট আমি
তাকাই আর দেখি
কিছুই নাই:

সো, আমরা
আগাই আর চুমা খাই। সে হইলো
সুন্দর গ্লাস, বলি
আমি, ছুঁড়ে ফেলে দিয়া
তারে
ফ্লোরে…

[দ্য লস্ট পাইলট, ১৯৬৭।]

 

লেইট হারভেস্ট

আমি উপরে তাকাই আর দেখি
একটা শাদা মোষ
বাইর হয়া আসতেছে
বিশাল লাল গেইটগুলি দিয়া
একটা গবাদিপশুর ট্রাক
টক টক কইরা চইলা যাইতেছে
সূর্যের মুখে।
প্রেইরির মুর্গিগুলা
মনেহয় ডরায় না
আমারে; এমনকি সেলোফিনপরা মেয়েগুলিও না,
মাঠে, আমার কাছাকাছি, শুনতে পায় ওরা
ফ্ল্যাট টায়ার চেইঞ্জ করতেছি আমি
আমার কালো ট্রাক্টরের।
আমি ভাবি চিল্লাবো
ওদের দিকে; তারপর, রাত আসে।

[দ্য লস্ট পাইলট, ১৯৬৭।]

 

150714_tate_lost_pilot

 

সঞ্জারী

ভালোবাসার তেমন কোন দাম নাই;
সবকিছুর লাইগাই আমি পস্তাই।
এখন আমাদের পিছনে
তারাগুলি ঝরে পড়ে
ফায়াতেবিলে, আরাকানসে
আমাদের চিড় খাওয়া চোখের ভিতরে।

আমার হাত দুইটা দিয়া
আকাশরে ছুঁইতে চাই আমি
আর চাঁদের ভিতর থিকা বাতাস বাইর করে আনি।
শোঁ শোঁ আওয়াজে সে
কুঁচকায় আর ডুবে যায়
সাগরে।

তুমি কানতে পারো না;
কিছুই করতে পারি না আমি
যা কিছুর একটা সময় এক আউন্স
মিনিং ছিলো আমাদের কাছে।
পাইনের সুঁইগুলি দিয়া
আমি ঢাইকা দেই তোমারে।

যখন সকাল আসবে,
আমাদের শরীরের চারপাশে
আমি একটা ক্যাথিড্রাল বানাবো।
আর ঝিঁঝিঁ পোকাগুলি,
যাঁরা তাদের হাঁটু দিয়া গান গাইতো,
সেইখানে আসবে
আরো দুঃখী হইতে, রাতে,
যখন তারা আর গান গাইতে পারবে না।

[দ্য অবলিভিয়ন হা-হা, ১৯৭০।]

 

শ্যাডো বক্সিং

অনেকসময় তুমি একটা ঘুষির মতো খাও।
তখন কিছুদিন ধইরা তুমি তার চেহারাটা আর দেখতে চাও না,
অথবা তাঁর থাকাটা কিছুটা আরামের হয়
একটা সময় পরে।

সে বলে: গতকাল রাতে আমি তোমারে হাঁটুতে ভর দিয়া হাতগুলি দিয়া
হামাগুড়ি দিতে দেখছি।

সে বলে: কেমনে তুমি সারাক্ষণ খালি
আরেকজন হইতে চাও, কেমনে তুমি কখনোই তোমার লাইফরে
সিরিয়াসলি নাও না?

আর তুমি বলো: চুপ করো! এইটা কি এনাফ না,
আমি যে বলছি, আমি তোমারে ভালোবাসি। তোমারে আমি সবকিছু দিছি!

সে তার ঘরের মধ্যে ঘুইরা বেড়ায়, হাত রাখে
চিবুকে, আর কয়: তুমি কতো গ্রেট!

এইখানে আসো, দেখি, টাচ করি আমি তোমারে, তুমি বলো।

সে কাছে সইরা আসে। কাছে আসো, তুমি বলো।
সে কাছে সইরা আসে। তখন। ওয়াক! আর
আবার তুমি শুরু করো, ঘুরতে থাকো আর ঘুরতে থাকো
সারা ঘরে, ঘরটা বড় হইতে থাকে
আর আরো বড়, ডার্ক হইতে থাকে আর ডার্কার। একটা কালো চাঁদের মতোন।

[দ্য অবলিভিয়ন হা-হা, ১৯৭০।]

 

দ্য ট্রাপ

পুরান চেয়ারটার ভিতরে
আমি দেখি আরেকটা চেয়ার;
যদিও ছোট, আমার
ভালোই লাগে বসতে।
সেই চেয়ারটার ভিতরে
আমি দেখি আরেকটা চেয়ার;
যদিও ছোট, অনেকভাবেই
আমার ভাল্লাগে বসতে, সেইখানে।
সেই চেয়ারটার ভিতরে
আমি দেখি আরেকটা চেয়ার;
এইটা ছিলো আরো ছোট আর
মনে হইতেছিল বানানো হইছে
খালি আমার লাইগাই।
সেই চেয়ারের ভিতরে
আছে আরো একটা;
এইটা খুবই ছোট,
এতো ছোট যে, সেইটা থিকা
আমি কোনমতে বাইর হইতে পারি না।
সেই চেয়ারটার ভিতরে
আমি পাইলাম আরেকটা;
সেইটার ভিতরেও, আরেকটা,
আর আরেকটা, যতোক্ষণ না
এমন ছোট একটা চেয়ারে
আমি বসছিলাম
যাতে বলাটা কঠিন যে
আমি একটা চেয়ারেই বসছিলাম।
আমি উইঠা যাইতে
বা পইড়া যাইতে পারতাম না, আর কেউই
আমারে ধরতে পারতো না।

[দ্য অবলিভিয়ন হা-হা, ১৯৭০।]

 

যদি তুমি সাগরে হারায়া যাও

যদি তুমি সাগরে হারায়া যাও,
যদি আমি ঘোড়ায় চইড়া চইলা যাই পাহাড়ে
চিলি থিকা মেক্সিকো’তে…

না, আমরা তো সিনেমাতে নাই।
তোমারে আমি প্রমিজ করতে পারি না
দিতে পারি না প্রমিজের লাল মালাগুলি।

দুইটা রুম দেখতেছে একজন আরেকজনরে।

সবখানে দরোজা আর ওইখানেও
কড়া লাগানো, বেজার মুখের;
বাড়ি’র এতো কাছে, যাওয়ার কোন উপায় নাই।

আমরা নিজেদের ফেলে আসি, হয়া উঠি
অদৃশ্য, তার উপর দিয়া বইয়া যাই

পোড়া মাঠে, গর্বিত হই
যে আমরা খাঁটি অ্যামেচারের মতো
বানায়া নিছিলাম
নিজেদের বাঁচানোর বৃত্ত।

[এবসেন্সেস, ১৯৭২।]

 

tate 2

 

বধির মেয়েটা গান বাজাইতেছে

এইটাই সেই মাঠ যেইখানে একবার একটা বধির মেয়েরে আমি গান বাজাইতে দেখছিলাম।
কারণ আমি জানতাম না কেমনে তার কাছে যাবো, বাজানোর তারিফ না কইরা
তার, অথবা কেমনে আমি তারে আমার থাকার কথা বোঝাবো, আমি লুকায়া ছিলাম। আমার এতো
বাজে লাগতেছিলো, এমনো মনে হইতে পারতো যে আমি একটা বাচ্চারে রেইপ করতেছি, একটা জোয়ান
লোক উবু হয়া শুইয়া একটা মাঠে দেখতেছে একটা বধির মেয়ে গান বাজাইতেছে।
আমার স্যুটের গায়ে ঘাস লাইগা ছিল আর আমার এক ঘণ্টা লেইট হয়া গেছিল
ডিনারে। আমারে স্যুট’টা ফালায়া দিতে হইলো কারণ আমার বউরে কোনকিছু বইলা
বুঝাইতে পারতাম না, একটা একশ ডলারের স্যুট! আমরা টাকা-পয়সাওলা
লোক না, একদমই না। সো, সামারে আমি ছিলাম গরমে ওলের স্যুট ছাড়া,
ঘামতে থাকতাম প্রতিদিন দুপুরে। পুরা অফিসের লাইগা আমি ছিলাম একটা অস্বস্তি:
অন্য কলিগের লাইগাও এইটা ঝামেলার ছিল, আরেকজনের গরিবি সহ্য করাটা।
কয়েক সপ্তাহ দাঁত কিড়মিড় করা টেনশনের পরে শেষমেশ আমার সুপারভাইজার আমারে
তার অফিসে ডাকলেন। সত্যি কথা বইলা নিজেরে হিউমিলেট করার চাইতে আমি কইলাম
আমার যেইরকম ইচ্ছা সেইরকম স্যুট আমি পড়বো, আমার ইচ্ছা হইলে চকমকি লাগানো
স্যুটও আমি পড়বো। এই পয়লা বার আমি তার অথরিটিরে চ্যালেঞ্জ করছিলাম। আর এইটাই
ছিল শেষ। আমারে বরখাস্ত করা হইলো। আমার পাওনা বুঝাইয়া দিয়া। বাড়ি যাইতে যাইতে
আমি ভাবলাম, আমি তারে সব সত্যি কথা বইলা দিবো, হ্যাঁ, কেন কমু না! আমি তারে সহজ
সত্যি কথাটা বইলা দিবো, আর এর লাইগা শে আমারে ভালোও বাসবো। কি রকম
হৃদয়স্পর্শী একটা কাহিনি। যাই হোক, আমি তারে কই নাই। আমি জানি না কি হইছিলো,
মনেহয় আমার সাহস কইমা গেছিল। আমি তারে কইছিলাম যে, একটা ভুল কইরা ফেলছি আমি
যেই কারণে কোম্পানীর কয়েক হাজার ডলার লস হইছে আর এর লাইগা আমারে চাকরি থিকা
বাইর কইরা দিছে, আমার কোন একটা উপায় বাইর করা লাগবো, তাদের যে ক্ষতি হইছে
সেই টাকা ফেরত দেয়া লাগবো। শে কান্দা-কাটি করলো, মাইর-ধর করলো, আর সবকিছুর লাইগা
দায়ী করলো, আমার ছোটলোকামি থিকা শুরু কইরা লাগাইতে না পারা – সবকিছুই কইলো। আমি
তারে সবকিছু গোছাইতে হেল্প করলাম আর তারে ড্রাইভ কইরা বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত দিয়া আসলাম। অনেক
দেরি হয়া গেছে, এখন আর কিছু এক্সপ্লেইন করা সম্ভব না। এখন কইলেও শে আর আমারে বিশ্বাস
করবো না। শে ছাড়া বাড়িটা কি রকম ঠান্ডা। কি রকম নিরব। যখন এক একটা প্লেট আমি
ফেলে দিতেছিলাম মনে হইতেছিল একটা জন্তুর শরীর থিকা মাংস খসে খসে পড়তেছে। যখন
সবকিছু ছড়াইয়া পইড়া ছিল, একটা কোণায় জড়োসড়ো হয়া বইসা আমি ভাবার চেষ্টা করলাম,
কি কইতে পারতাম আমি তারে? মাঠের সেই মেয়েটার কথা। কি কইতে পারতাম
আমি? কোন উচ্চারণই তো তার কাছে পৌঁছাইতো না। একটা চোরের মতোন
মখমলের আন্ধারে আমি ঢুকে গেলাম, আমার আঁচড়ানোর চিহ্ন রাখতেছিলাম
গাছে, বাড়ির বেড়ায় আর বিলবোর্ডে। ব ধি র  মে য়ে টা  বা জা ই তে ছে। এইখানে
তার ছাপ আছে। শোন। স্লিপার আর হাউজকোট পইড়া
দলে দলে বেটারা তাদের ঘুমানো বউয়ের সাইড থিকা উইঠা আসতেছে:
ট্যাক ট্যাক ট্যাক: ব ধি র  মে য়ে টা  বা জা ই তে ছে: ট্যাক ট্যাক ট্যাক: আরেকটা
ব ধি র  মে য়ে টা  বা জা ই তে ছে। কোনকিছু নিয়াই কেউ কিছু কয় না, খালি খামচায়
আর দেখে তার মায়াময় লিনেন।

[এবসেন্সেস, ১৯৭২।]

 

উল্লুকরে কেমনে কবিতা লেখা শিখাইবেন

এইটা ওদের লাইগা কঠিন কিছু না
উল্লুকটারে কবিতা লিখা শিখানোটা:
পয়লা তারে ওরা চেয়ারে বাইন্ধা ফেলে,
এরপরে পেন্সিলটা গিঁট দেয় তার হাতে
(কাগজটা অলরেডি পেরেক দিয়া লাগানো ছিলো নিচে)।
এরপরে মি. ব্লুস্পেয়ার তার কান্ধে ঝুঁইকা পড়ে
আর তার কানে ফিসফিস কইরা বলে:
“তোমারে তো পুরা গডের মতোন লাগতেছে।
তুমি কিছুএকটা লেখার ট্রাই করো না কেন?”

[এবসেন্সেস, ১৯৭২।]

 

কঠিন একটা  চইলা-যাওয়া

বাই!

খুবই দূরের একটা জায়গাতে চইলা যাইতেছি আমি
কখনোই তুমি আর আমার দেখা পাইবা না।

কোন ট্রেন জাহাজ বিমান বা গাড়ি
কখনো যায় নাই সেইখানে

এখনো নিশ্চিত না আমি এইরকম জায়গা আছে কিনা
বা ছিলো কিনা কখনো
ম্যাপ দেইখা ঠিকমতো বোঝা যায় না
কেউ কয় এইখানে কেউ কয় ওইখানে
কিন্তু বেশিরভাগ মানুষই এইটা নিয়া কোন কথা কয় না

হ্যাঁ, সাহস তো লাগেই এইটা করতে
প্রত্যেকদিন আমার দুই বোতল পুরান শ্যাম্পেন খাওয়া লাগবো
আমার মনোবল ধইরা রাখতে

আর তুমি কি মাইন্ড করবা যদি আমি তোমার বউরে নিয়া যাই?
ঠিকাছে, এইটাই আসলে ঘটনাটা
দরজায় দেখা হইবো আমাদের নিজেদের সাথে

আমরা কই…?

[ভাইপার জ্যাজ, ১৯৭৬।]

 

আমর্হাস্ট থিকা ইস্ট হ্যাম্পটন

কোন বডিই পাইলাম না আমি
যে আমার স্পিরিটরে ধইরা রাখবো।
আমার স্পিরিচুয়াল বডির কোন বডি নাই।
আমার বডি’র নাই কোন বডি
আর আমার স্পিরিটের নাইরে কোন স্পিরিট।
যেমন যেমন যেমন যেমন
মাকড়সার জাল তোমার হাতের তলে,
হাওয়া নিয়া যায় তোমার ছায়া তার কালো পাহাড়ে।

যেই অন্ধকার তুমি ছড়াও, খুঁজে আমারে,
একটা গর্তের ভিতর দিয়া খায়া ফেলে চকলেট বনটারে
আলাদা করছে যা, আমারারে;
শূণ্য জায়গাগুলি ভরাট হয়ে উঠে একটা সুন্দর নিচের পথে।

[ভাইপার জ্যাজ, ১৯৭৬।]

 

tate 1

 

কবিতা

তখনকার দিনগুলিতে ভাষা ছিলো মোটামুটি অসম্ভব একটা ব্যাপার
এখন যেমন আমরা মাঝে মাঝেই বুঝতে পারি।

যখন তুমি আমারে তোমার অপারেশনের কথা বলো
তোমার কথা আমি শুনি, কিন্তু তোমার কথা আমি শুনি না।

একটা গোলাঘরের পিছনে বাতাস জড়ো হয়:
টর্চগুলি জ্বলে, মানুগুলি ফিসফাস করে।

একজন একটা হ্যাট পড়ে আর তার বেডরুমে
যুদ্ধ নিয়া সে খুব সিরিয়াস।

“তোমার কি মনে হয় সারাক্ষণ আমি ঘুমায়া থাকি?”
আমারে জিগায় আরেকবার।

আম্মা, দেখো, আজকে আমি সুন্দর একটা জিনিস পাইছি
বাইরের জঙ্গলে, এইটা এখনো জ্যান্ত আছে…

[ভাইপার জ্যাজ, ১৯৭৬।]

 

গুডটাইম জিসাস

নরমাল টাইমের চাইতে একটু দেরিতেই একদিন জিসাসের ঘুম ভাঙলো। এতো গভীর একটা স্বপ্ন সে দেখতেছিলো যে তার মাথাতে আর কিছুই ছিলো না। কি ছিলো এইটা? একটা বাজে স্বপ্নই। চোখ উল্টানো, চামড়া খুইলা পইড়া যাইতেছে এইরকম মরা মানুষগুলি তার চারপাশে হাঁটতেছিল। কিন্তু এইসবকিছুতে সে ভয় পায় নাই। খুবই সুন্দর একটা দিন এখন। কফি খাবো নাকি? খাওয়া তো যাইতেই পারে। ছোট্ট গাধাটার পিঠে একটু চড়ি, এই গাধাটারে আমি ভালোবাসি। আজিব, আমি তো সবাইরেই ভালোবাসি।

[রিভেন ডগিরিজ, ১৯৭৯।]

 

ওদেরকে বলো   ছিলো এইখানে

আমি সময়মতো ওইখানে আসলাম
আর বাসায় কেউ ছিলো না।
অপেক্ষা করলাম আমি, হাঁটলাম সাইডের রাস্তায়।

আমার ঘড়ির দিকে তাকাইছিলাম আমি আর নাড়াইছিলাম
আমার মাথা: কই গেলো ওরা?
পিছনের দিকে গেলাম আমি আর উঁকি দিলাম
জানালাগুলি দিয়া: কেউই নাই।

নিমকহারাম আত্মীয়রা!
তারপর তো রাতই হয়া গেলো আর আমি
সন্দেহ করতে শুরু করছিলাম: সবকিছুই মিথ্যা,
কারো কাছ থিকা আসি নাই আমি, কোন জায়গা থিকা,
যার কেউ নাই আর নিজের কোন শহর নাই,

কোন পুরান ফ্রেন্ড নাই। জন্মাইছিলাম আমি
গুজবগুলি থিকা, এক ধরণের একটা ফিসফিসানি
থিকা, একটা বেহুদা ঝগড়া থিকা
আরেকটায়, অসংলগ্ন অবস্থার ভিতর।

এইখানে সবুজ ছিল, হিবিজিবি লিখলাম আমি
একটা ছিঁড়া কাগজে, আর সেইটা গুঁইজা দিলাম
স্ক্রীণের ভিতরে। চলে যাইতে নিছিলাম

ফিরা তাকাইলাম, আঁচড়াইয়া লিখলাম আমার নাম-
তারপরে লিখলাম আবার।

[কনসটেন্ট ডিফেন্ডার, ১৯৮৩।]

 

নেইবার

ওরা কি বাচ্চা নিবে? ওরা কি আরো বাচ্চা নিবে? কুত্তাদের নিয়া ওদের চিন্তা-ভাবনাটা আসলে কি? বড় কুত্তা ওদের পছন্দ নাকি ছোটগুলা? চেইনে বাইন্ধা রাখবে নাকি ফ্রিলি ছাইড়া দিবে? বউটা কি জামাইটার চাইতে বেশি চালাক? বউটার বয়স কি বেশি? শেষ পর্যন্ত এইটা কি কোন সমস্যার ব্যাপার হবে? জামাইটার প্রমোশনটা কি হবে? যদি নাহয় তাইলে কি এইটা নিয়া ওদের মধ্যে ঝামেলা হবে? জামাইয়ের ফ্যামিলি কি বউটারে পছন্দ করে, আর বউয়ের ফ্যামিলি জামাইটারে নিয়া কি ভাবে? শুশ্বরবাড়ির ঝামেলাগুলি ওরা কেমনে হ্যান্ডেল করে? এইটা কি অলরেডি কোন সমস্যা করতেছে? বউটা যদি চাকরি করা শুরু করে তাইলে জামাইটা কি নিজে ডিনার রান্ধতে পারবে? সে যে উঠানে এতো কাজ করে আর বৃষ্টির লাইগা শেড লাগানোর কাজে বিজি থাকে এইটা কি ঘরের ভিতরের সমস্যাগুলি এভেয়ড করার লাইগা করে? ওরা কি এখনো সেক্স করে? ওরা কি একজন আরেকজনরে স্যাটিসফাই করতে পারে? সে কি আরেকটু বেশি করতে চায়, বা শে? ওরা কি ওদের প্রব্লেমগুলি নিয়া কথা কইতে পারে নিজেদের মধ্যে? ওদের গোপন প্রাইভেট ফ্যাণ্টাসিগুলির ভিতর দিয়া ওরা কেমনে একজন আরেকজনের লাইফরে চেইঞ্জ করে? আর ওরা আমাদের সম্পর্কে কি ভাবে, নেইবার হিসাবে, মানুষ হিসাবে? এমনিতে তো ওরা খুবই আন্তরিক, রাস্তার পাশে মেইলবক্সের কাছে যখন দেখা হয় তখন চরম ভদ্র বিহেভ করে – কিন্তু তারপর, চুম্বকের মতোন উল্টাদিকে যাইতে থাকি আমরা,

আমাদের ডিপ রুট স্টিটেমে, আমাদের লোনলি লাইফের পিপাসা মিটানোর লাইগা, তারে বাঁচানোর লাইগা যে কোন বাঁইচা থাকা জিনিসের দম আটকাইয়া ফেলতে থাকি আমাদের অন্ধকার আর শেষ না হওয়া ডিজায়ারের ভিতরে। আর আমরা আমাদের নেইবারদেরকে ভালোবাসি এইরকম অপারচুনেটি দেয়ার লাইগা, আর আমরা আমাদের কুত্তাদের ভালোবাসি, বাচ্চাদের ভালোবাসি, ভালোবাসি আমাদের জামাইদের আর বউদেরকে। এইটা যে কি কঠিন কাজ!

[রিকয়েনার, ১৯৮৬।]

 

[youtube id=”vkC-c6cwpi4″]

 

এইটা এমনেই ঘটে

আমি সেন্ট সিসিলিয়া’র রেক্টরের বাইরে একটা সিগ্রেট খাইতেছিলাম যখন একটা ছাগল আমার পাশে চইলা আসলো। ছাগলটা মোটামুটি কালো আর সাদা, কিছুটা লালচে বাদামী আছে এইখানে ওইখানে। যখন আমি হাঁটতে শুরু করছিলাম, এইটা ফলো করতেছিলো। আমি খুব মজা পাইতেছিলাম আর খুশি হইতেছিলাম, কিন্তু ভাবতেছিলাম এইরকম একটা জিনিস নিয়া আইন কি বলে। কুত্তাদের শিকল পরানো নিয়া একটা আইন আছে, কিন্তু ছাগলদের বিষয়ে কি রকম? লোকজন আমার দিকে তাকায়া হাসতেছিলো আর ছাগলটার তারিফ করতেছিলো। “এইটা আমার ছাগল না,” আমি ব্যাখ্যা করতেছিলাম। “এইটা এই শহরের ছাগল। আমার পালা আসছে বইলা আমি জাস্ট এইটার দেখাশোনা করতেছি।” “আমি জানতাম না যে আমাদের একটা ছাগল আছে,” ওদের মধ্যে একজন বলতেছিলো। “আমি অবাক হইতেছি আমার পালা কখোন আসবো।” “শ্রীঘ্রই,” আমি বলছিলাম। “ধৈর্য্য ধরেন, আপনার টাইম আসতেছে।” ছাগলটা আমার পাশে থাকতেছিল। যখন আমি থামতেছিলাম, সেও থামতেছিলো। এইটা উপরে আমার দিকে তাকাইতেছিলো আর আমিও তার চোখের দিকে স্থিরদৃষ্টিতে তাকাইলাম। আমার মনে হইলো সে আমার সম্পর্কে প্রয়োজনীয় সবকিছুই জানে। আমরা হেঁটে যাইতেছিলাম। একজন পুলিশ-ম্যান তার বীটে আমাদেরকে দেখতে পাইলো। “আরে, একটা দারুণ সুন্দর ছাগল পাইছেন আপনি,” সে কইলো, থামলো তারিফ করার জন্য। “এইটা এই শহরের ছাগল,” আমি বললাম। “তার ফ্যামিলি বিগত তিনশ বছর ধইরা আমাদের সাথে আছে,” আমি বললাম, “একদম শুরু থিকা।” অফিসারটা সামনে নুইয়া আসলো তারে ছোঁয়ার লাইগা, তখন থামলো আর আমার দিকে তাকাইলো। “তারে চাপড়ানি দিলে কি মাইন্ড করবেন?” সে জিজ্ঞাসা করলো। “ছাগলটারে ছুঁইলে আপনার জীবন চেইঞ্জ হয়া যাবে,” আমি বললাম। “এইটা আপনার ডিসিশান।” সে মিনিটখানেক গভীরভাবে চিন্তা করলো, আর তখন উঠে দাঁড়াইলো আর বললো, “তার নাম কি?” “তারে শান্তির রাজকুমার বইলা ডাকা হয়,” আমি বললাম। “আল্লা! এই শহরটা পুরা একটা রূপকথার মতো। যেইখানেই আপনি যান সেইখানেই রহস্য আর বিস্ময়। আর আমি জাস্ট একটা বাচ্চা যে চিরকাল চোর পুলিশ খেলতেছি। প্লিজ, আমি যদি কাইন্দা দেই আমারে মাফ করে দিয়েন।” “আমরা আপনারে মাফ করে দিছি, অফিসার,” আমি বললাম। “আর আমরা বুঝতে পারি কেন আপনার, যে কারো’র চাইতে, কখনোই এই রাজকুমারকে ছোঁয়াটা উচিত না।” ছাগলটা আর আমি হাঁটতে লাগলাম। অন্ধকার হয়া আসতেছিলো আর আমরা ভাবতেছিলাম রাতটা আমরা কোথায় কাটাবো।

[পোয়েমহান্টার.অর্গ থিকা নেয়া।]

 

নাশকতার ষড়যন্ত্র

আমারে যেই লোকটা ফলো করতেছিল তারে দেখতে পুরা সরকারি এজেন্টের মতো লাগতেছিল, তো আমি ঘুইরা তার কাছে গিয়া জিগাইলাম, “আপনি কেন আমারে ফলো করতেছেন?” সে কইলো, “আমি আপনারে ফলো করতেছি না। আমি একজন ইন্স্যুরেন্স এজেন্ট, কাজে যাইতেছি।” “ও, আচ্ছা ভাই, মাফ কইরা দেন, আমার ভুল হইছে,” আমি কইলাম। “আপনি কি কোন দোষ করছেন, দেশদ্রোহী কোন কাজ করছেন নাকি এমনিতেই ডরাইতেছেন?” সে কইলো। “আমি কোন দোষ করি নাই, দেশদ্রোহীও না, আর ভাই আমি ডরামু কেন?” আমি কইলাম। “ঠিকাছে, কিন্তু কেউ এর আগে আমারে সরকারি এজেন্ট ভাইবা ভুল করে নাই।” সে কইলো। “আমি সরি,” আমি কইলাম। “আপনার মনের মধ্যে একটা কিছু লুকাইয়া রাখছেন আপনি, তাই না?” সে কইলো। “না, কক্ষণোই না। আমি জাস্ট সাবধান হইতে চাইছি,” আমি কইলাম। “দেখেন ভাই, আপনার সাথে আমার কোন কাম নাই।” “নিশ্চয় আপনে কোন একটা নাশকতার ষড়যন্ত্র করছেন আর ওরা আপনারে ঠিকই ধইরা ফেলবো,” সে কইলো। “আপনে পুরা পাগল হইয়া গেছেন,” আমি কইলাম। “আপনি হইতেছেন বেনডিক্ট আর্নল্ড, আপনি সেইটাই,” সে কইলো। “আপনার মেজাজ ঠান্ডা করার লাইগা বলি, আমি একটা শান্তি-মিছিলে যাইতেছি,” আমি কইলাম। “ও, একটা শান্তিবাদী। এইটা তো নাশকতার ষড়যন্ত্রের মতোই ব্যাপার,” সে কইলো। “এইটা এইরকম না,” আমি কইলাম। “হ্যাঁ, এইটা তা-ই,” সে কইলো। “না।” “হ্যাঁ।” “না।” “হ্যাঁ।” আমরা তার অফিসের দরজার কাছে পৌঁছাইয়া গেলাম। “তোমারে গুড-বাই বলতে আমার খারাপ লাগে। আমরা কি আগামীকালকে একসাথে লাঞ্চ করতে পারি,” সে কইলো। “আমি তো খুবই খুশি হবো,” আমি কইলাম। “গুড। সাডি’র ক্যাফে তাইলে, দুপুরে,” সে কইলো। “দুপুরে, সাডি’র ক্যাফেতে,” আমি কইলাম।

[দ্য ঘোস্ট সোলজার, ২০০৮]

 

গরম গরম কথা

জেসপার’রে আমি জিগাইলাম বিপ্লব যে আইতেছে সামনে, সেইটা নিয়া তার কোন ধারণা আছে কিনা। “আমি তো জানি না সামনের দিনে কোন বিপ্লব হইতেছে,” সে কইলো। “ঠিকাছে, মানুষজন কিন্তু খুবই বিরক্ত। বিপ্লব একটা হইতেই পারে,” আমি কইলাম। “তুমি বানায়া বানায়া বলতেছো না তো? তুমি তো সবসময় আমারে বেক্কল বানানোর ট্রাই করো,” সে কইলো। “সব জায়গায় সৈন্যরা ছড়াইয়া আছে। এইটা বলা মুশকিল ওরা কোন পক্ষে আছে,” আমি কইলাম। “ওরা আমরার বিপক্ষে আছে। সবকিছুই আমরার বিপক্ষে। তুমি তো এইটাই বিশ্বাস করো, না?” সে কইলো। “একদম সবাই না। কিছু বিপথগামী মানুষ আছে যারা এখনো কোনকিছু বা অন্যকিছুতে বিশ্বাস করে,” আমি কইলাম। “ঠিকাছে, এইটা একটা আশার কথা,” সে কইলো। “কোন সময় তোমার বিশ্বাস ছাইড়ো না,” আমি কইলাম। “কে কইলো যে আমার কোন বিশ্বাস আছে?” সে কইলো। “লজ্জা নাই তোমার, জেসপার। কোন একটা কজ-এ বিশ্বাস করাটা জরুরি,” আমি কইলাম। “যাতে তোমার কজ আমরারে আরো গর্তের ভিতরে গাইড়া ফেলতে পারে?” সে কইলো। “না, কজ’টা হইলো মানুষ যাতে তার অধিকার, তার স্বাধীনতা আর সবকিছুর লাইগা একসাথে দাঁড়াইতে পারে,” আমি কইলাম। “ঠিকাছে ভাই, এইটা বহুত পুরান কথা। আমাদের কোন অধিকারই আর নাই,” সে কইলো। এরপরে কয়েক মিনিট আমরা চুপ কইরা বইসা রইলাম। আমি জানালা দিয়া তাকায়া একটা ইঁদুর’রে দেখতেছিলাম, উঠানে। শেষমেশ, আমি কইলাম, “আসলে তোমারে খুশি করার লাইগা আমি এইসব কথা বলতেছিলাম।” “আমিও তাই করতেছিলাম,” সে কইলো। “তুমি কি খোদায় বিশ্বাস করো?” আমি কইলাম। “খোদাতালা জেলখানায় আছে,” সে কইলো। “ওইখানে সে কি করে?” আমি কইলাম। “সবকিছুই করে।” সে কইলো।

[দ্য ঘোস্ট সোলজার, ২০০৮]

 

Tate-Ghost

 

নাথিং সেইটাই, এইটারে যা মনে হয়

“নাথিং হইলো সেইটাই, এইটারে যা মনে হয়।” একদিন মরগান আমারে এই কথা কইছিল। এইটা খুবই ভাবের কথা মনে হইছিল, কিন্তু আমার মনে সন্দেহ ছিল এইটা আসলে কোন খাঁটি জ্ঞানের কথা কিনা। মানে, আমি জানি দুনিয়াতে অনেক ইল্যুশন আছে, কিন্তু একটা জুতার দোকান তো জুতার দোকানই, আর আমার রেজারটা একটা রেজারই, আমার হ্যাট একটা হ্যাট। মরগান মনে হয় কোন জেন বই পড়তেছিল। ও এইরকমই, আজগুবি সব জিনিস নিয়া থাকে আর আমার উপরে আইসা ওইগুলা ঝাড়ে। আমি তেমন কিছু মনে করি না। আমিও এইগুলি নিয়া তখন ভাবতে পারি। একবার সে আমারে কইছিল যে, ভুতেরা কিন্তু আসলেই আছে, আর আমার আসলে ওদেরকে ডরানোর কিছু নাই কারণ ওরা ভয়াবহ রকমের লোনলি আর খালি একটু সঙ্গ চায়। তারে আমি কইছিলাম যে, আমি জীবনেও কোন ভূত দেখি নাই আর সে কইছিলো যে, আমি আসলে ঠিকভাবে জিনিসটার দিকে তাকাই নাই। সে আমারে কখনোই বলে নাই এই ঠিকভাবে দেখার জিনিসটা কি রকম। আমার ধারণা, এইটার জন্য একটা স্পেক্ট্রাফ্লোরমিটার দরকার, আর আমার সেইটা ছিল না। কিন্তু এই জিনিস মরগানেরও ছিল না। আমি সারারাত বাইরে বইসা আকাশের তারাগুলি দেখতে পছন্দ করতাম। ছায়াপথে বিলিয়ন বিলিয়ন তারা আছে। আমরা অবশ্য কয়েক হাজারই দেখতে পাই, আর এইটাও অনেক আমার জন্য। প্রতিটা মুর্হূতেই কোন না কোন তারা ঝরে পড়তেছে, হাইড্রোজেন শূণ্য হইয়া, পঁচিশ বিলিয়ন বছর বা তারেও পরে। মাঝে মধ্যে আমার অবাক লাগে এইরকম তীব্রগতিতে তারা কোথায় যাইতেছে? আমাদের সূর্যটাও পঁচিশ বিলিয়ন বছর পরে নাই হইয়া যাবে, এরপরে কি হবে?

[দ্য ঘোস্ট সোলজার, ২০০৮]

 

ঝিঁঝিঁ পোকা ঝিঁঝিঁ পোকা

একটা গরমের রাতে যখন আমি একলা ছিলাম তখন একটা ঝিঁঝিঁ পোকা ছিল বাড়িতে; আমার সবসময় মনে হইতো, অবস্থাটা আরো বাজে হইতে পারতো। হয়তো বৃষ্টি পড়তেছে, আর তারপর বিদ্যুতচমক আর বজ্রপাতের কারণে বাড়িটা কাঁপতেছে। কারেন্ট চইলা গেলো আর অন্ধকারে চারপাশে আমি একটা মোমবাতি খুঁইজা বেড়াইতেছি। অবশেষে, একটা মোমবাতি খুঁইজা পাওয়া গেলো, কিন্তু ম্যাচটা কই গেলো? সবসময় ড্রয়ারেই তো রাখতাম আমি। একটা ফুলদানি ফালায়া দিলাম আমি, কিন্তু সেইটা ভাঙে নাই। এইটা আমি ভাইঙাও তো ফেলতে পারতাম এই ভয়ে আমি চেয়ারটাতে গিয়া বসলাম আবার, অন্ধকারে। বাড়িটার চারদিকে বজ্রপাত হইতেছে। তখন ঝিঁঝিঁ পোকাটার কথা আমার মনে হইলো, আর তার গুণগুনানি আমি শুনতে থাকলাম। কিছুক্ষণ পরেই ঝড়টা থাইমা গেলো, আর কারেন্ট চইলা আসলো। একটা ভূতুড়ে সবুজ নিরবতায় আমার বাড়িটা ভইরা গেলো। আমি ভয়ে ভয়ে ভাবলাম, ঝিঁঝিঁ পোকাটা হয়তো তার নিজের কোন বজ্রপাতেই মারা গেছে।

[দ্য ঘোস্ট সোলজার, ২০০৮]

 

পুরান সোলজাররা                                

যখন আমি স্টাডি থিকা বাইর হয়া আসছিলাম, জিনি তখন ভিজা চুল নিয়া দাঁড়ায়া ছিলো। “তুমি কি আজকে টাউনে যাইবা?” শে জিগাইছিলো আমারে। আমি কইলাম “ঠিক করি নাই এখনো”। “ওহ, ঠিকাছে তাইলে,” শে কইলো। আমি কইলাম, “কিছু লাগবো নাকি?” “আমার এলার্জির লাইগা কিছু জিনিস দরকার আছিলো, কিন্তু আমি কালকে নিয়া আসতে পারবো,” শে কইলো। আমি কইলাম, “না, আমি যাইতে পারি তো। এইটা কোন ব্যাপার না। আমারে জাস্ট একটা লিস্ট কইরা দাও।” মহিলা ভোটারদের লীগের একটা প্ল্যানিং সেশনে যাওয়ার কথা ছিলো জিনির। আমার ডেস্কের উপরে কয়েক ডজন লিড সোলজারদের সাজানোর লাইগা আমার স্টাডিতে ফেরত গেছিলাম আমি। এইগুলা খুবই দামি এণ্টিক জিনিস। ছোটবেলা থিকা আমি ওইগুলা জমাইছিলাম। আমি যেমনে সাজাইতে চাইছিলাম সেইভাবে যখন সাজাইয়া সারলাম তখন সবগুলিরে ফালাইয়া দিলাম। জিনি চেঁচাইয়া উঠলো, “তুমি ঠিক আছো তো?” “কিছু হয় নাই, জাস্ট একটা ছোট অ্যাকসিডেন্ট,” আমি চেঁচাইয়া জবাব দিলাম। শে লিস্টটা কাউন্টারে রাইখা গুডবাই কইয়া চইলা গেলো। আমি নিজের লাইগা একটা বোলগনা স্যান্ডউইচ বানাইলাম আর বইসা লিস্টটা দেখলাম। এইটাতে এমনসব জিনিস লেখা যেইটা আপনারে মাইরা ফেলতে পারবো। কিন্তু এইটা যদি আপনার নাক থিকা পানি পড়া আর চোখ থিকা পানি পড়া বন্ধ করতে পারে, তাইলে ঠিকই আছে। আমি হাঁইটা ফেরত গেলাম আমার স্টাডিতে, দরজায় দাঁড়ায়া দেখলাম: সবগুলা মরছে। তারপর আমি আমার জ্যাকেটটা পড়লাম আর ড্রাইভ কইরা টাউনে গেলাম, যেইখানে খুব মানুষজনের ভীড় আছিলো আর কোন কারণে সবাই খুব ছোটছুটি করতেছিল। ডেলি’র পিছনে আমি আমার সিক্রেট পার্কিং স্পেইসটা খুঁইজা পাইলাম। অষুধের দোকানে এলার্জির অষুধের তাকটা খুঁইজা পাওয়ার আগ পর্যন্ত আমারে ঘুরা লাগলো একটু। মনে হইলো হাজারটা অষুধ আছে যারা বিশাল বিশাল ক্লেইম করতেছে মারাত্মক সব ওয়ার্নিংসহ: ঘুমঘুমভাব, অজ্ঞান হওয়া, বমি বমি ভাব, নানানকিছু। ওইখানে দাঁড়ায়া থাকতেই আমার নিজেরে অসুস্থ মনে হইতে লাগলো। শেষমেশ জিনির যা কিছু দরকার সবকিছু আমি পাইলাম। ওইগুলা সত্যিই খুব দামি জিনিস আছিলো। আমার যা টাকা আছিলো সব মোটামুটি শেষ। যখন আমি বাইরে আসলাম দেখলাম যে, একদল মানুষ পার্কে জড়ো হয়া আছে। আমার পাশে দাঁড়ানো এক মহিলারে আমি জিগাইলাম, “কি হইতেছে এইখানে?” “অরা প্রতিবাদ করতেছে,” শে কইলো। “কিসের প্রতিবাদ করতেছে?” আমি কইলাম। “জাস্ট প্রতিবাদ করতেছে। এখন আপনার আর স্পেশাল কোন কজের দরকার নাই তো। বরং এখন এইরকম কিছু ভাবাটাই উদ্ভট আর ওল্ড-ফ্যাশনড একটা ব্যাপার। আমার মনেহয় এইটা একটা উন্নতির লক্ষণ, আপনার কি মনেহয়?” শে কইলো। “আমি সবসময় পুরান জিনিসগুলা মিস করি, যতক্ষণ না ওরা ফিরা আসে আর আমারে হণ্ট করে।” আমি কইলাম। শে আমার কাছ থিকা এমনভাবে সইরা গেলো যেন আমার গা থিকা বাজে গন্ধ বাইর হইতেছিল। পুলিশ জমায়েতটার দিকে যাইতেছিল, ওদের লাঠিগুলি উঁচা কইরা। আমি শুনলাম ওদের একজন বলতেছে, “এইখানে কি হইতেছে?” আরেকজন উত্তর দিলো, “আকাইম্মা পোলাপালনগুলির শনিবারগুলাতে কোন কাজকাম থাকে না তো।” অবশেষে আমি ডেলি’র পিছনে আমার গাড়ির কাছে পৌঁছাইতে পারলাম, আর দেখলাম ওইখানে একটা টিকেট লাগানো আছে। দেইখা মনটা খারাপ হইলো। এই একটা খুঁতই আছিলো, তা নাইলে আমার মিশন পারফেক্ট ছিল। আমি ড্রাইভ কইরা বাড়িতে আসলাম আর কাউন্টারে মেডিসিনগুলি সাজায়া রাখলাম। আশা করি জিনি অজ্ঞান হয় নাই, সিঁড়ি থিকা পড়ে নাই আর ওর মাথা ফাইট্টা যায় নাই। আমি স্টাডি গেলাম আর পয়লাই যে জিনিসটা দেখলাম যে, সবগুলি সোলজার দাঁড়া করানো ছিল। আমি নিশ্চিত ছিলাম আমি সবগুলারেই ফালায়া গেছিলাম। জিনি তখন বাড়িতে নাই। আমি ছাড়া বাড়িতে আর কেউ ছিল না। সম্ভাবনাগুলি নিয়া ভাবতে আমার ভালো লাগতো না। যা-ই হোক, আমি একটা রুম থিকা আরেকটা রুমে হাঁইটা গেছিলাম, ধীরে ধীরে, নিরবে, প্রত্যেকটা জিনিসের দিকে সাবধানে তাকাইতেছিলাম। সবকিছুই মনে হইতেছিল নরমাল, ঠিকঠাক, খালি খাড়া-থাকা সোলজারগুলির কোন ব্যাখ্যা নাই। আমার মেজাজ খারাপ হইতেছিল। এইটা একটা সিম্পল ব্যাখ্যার ব্যাপার। হ্যাঁ, এইরকমই তো ব্যাপারটা। তা নাইলে সোলজারগুলা নিজে নিজে কেমনে খাড়াইলো। অরা তো বুড়া আর ওদের আছে হাজার হাজার যুদ্ধের অভিজ্ঞতা। মেবি অরা দুয়েকটা জিনিস শিইখা ফেলছে। আবার আমি আমার স্টাডিতে ঢুকলাম আর বসলাম ডেস্কে। একটা মুহূর্তের মধ্যে আমি অদেরকে দেয়ালে ছুঁইড়া মারলাম, অনেকগুলি বেয়নেট ভাঙলো, কারো একটা বা দুইটা পা। তারপর, চুপ কইরা বইসা আমি কি করছি সেইটা ভাবতেছিলাম। জিনি’র বাড়িতে আসতে আরো তিন ঘণ্টা লাগবো। এইটারে অনেক লম্বা সময় মনে হইতে থাকলো। আমি লিভিংরুমে চইলা গেলাম। আর অপেক্ষা করতে থাকলাম অরা যাতে নিজেদেরকে সাজায়া নিতে পারে। আমার এমন একটা ফিলিং হইতেছিল যে মরার লাইগা অনেক লম্বা যুদ্ধ করা লাগবো, কিন্তু তারপরও কি রকম যে শান্ত ছিলাম আমি।

[দ্য ঘোস্ট সোলজার, ২০০৮]

 

[youtube id=”BtO1LCbfsFc”]

 

 

The following two tabs change content below.
Avatar photo
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
Avatar photo

Latest posts by ইমরুল হাসান (see all)

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →