Main menu

আহমেদ মুজিবের কবিতা

১৯৯১ সালে আহমেদ মুজিবের প্রেসের কবিতা বইটা ছাপা হইছিল, লেটার-হেড প্রেসে। ততদিনে কম্পিউটারে কম্পোজ কইরা ছাপানোর মেশিন চইলা আসছে; আজকে যেমন মাওবাদী গেরিলাদের জায়গায় ইসলামিস্ট জঙ্গী’রা চইলা আসছে। কিন্তু আহমেদ মুজিব স্টিল একজন ওল্ড-ফ্যাশনড মাওবাদী। জঙ্গীদের এগজিসটেন্সটারে ইগনোর করেন না, কিন্তু নিজেরে মানাইতে পারেন না এই চেইঞ্জড রিয়ালিটিতে, আবার একটু একটু কইরা নিজেরে ইনসার্ট করার ট্রাই করেন।[pullquote][AWD_comments][/pullquote]

যার ফলে একটা সাপ্রেশন চইলা আসে উনার কবিতায়; তেমন কোন কমপ্লেইন নাই, যা ঘটার সেইটা ঘটতেছে, উনি দেইখা যাইতেছেন খালি, দেখাটারেও এড়াইয়া যাইতেছেন। এইরকম একটা সিচুয়েশন এইটিইসে যে আমরা পার করি নাই তা না; মেশিনের রিয়ালিটিতে অনেকেই সাবস্ক্রাইব করছেন, আহমেদ মুজিবই মে বি একমাত্র যিনি মেশিনরে মানুষ বা মানুষরেই মেশিন ভাবতে পারার মতোন ভুল করার কাছাকাছি যাইতে পারছেন।

এই কবিতাগুলি উনার বেস্ট কবিতা না, বরং অ্যাভেইলেবল কবিতাগুলি’র একটা সিলেকশন।

/ই.হা.

——————————————————————

না-চালু মেশিনের ছায়া ।। কানচাবি চাঁদ ।। কালো কালি ।। ছাপাখানার ভূত ।। ২৩.৩.৯১ ।। পরিত্যক্ত বস্তুদের না যেতে চাওয়া ।। প্রেসের কবিতা ।। প্রেমের কবিতা ।। দিনলিপি ১ ।।  ক্ষমা ।। বুড়িগঙ্গার তীরে ।। খুব মনে পড়ে ।। সব জীবিতদের মনে পড়ে ।। আবার আরেকটি শীতকাল ।।

———————————————————————

 

নাচালু মেশিনের ছায়া

ওরা দুজন, লাল কিশোর-কিশোরি, না-চালু মেশিনের ছায়ায় বসে

হায়, রোজই দেখি, যা আছে ফাঁকা সব পৃথিবীর নয়,
দিনের পর দিন সূর্যের খরচ ছাড়া
এই নগরে এই মুর্হূতে পার্ক নেই কোনো
কোনো বিশাল অথবা কোনো কালো একফালি মৃত্যুর গান ঘিরে।
কি জানি আমারও না
ফ্লাট মেশিনে ওঠার আগে একটি হ্যান্ডকম্পোজ পাখি কাঁপতে-
কাঁপতে পাখনা মেললে
বৃষ্টির খোসারা তার ডানা কেড়ে নিলো বনের ঢালুতে
ভরা পৃথিবীটায়, পুরোনো সারির নিচে অথবা
চিরকালের মতো আস্ত পাতার সরসর শব্দে।

ওরা তখনও, লাল কিশোর-কিশোরি, কথা বলছিলো,
না হেঁটে মনের শিরাগুলি খুব কাছে থেকে বেয়ে।

সাতটি কালির রামধনু উঠছে আকাশে,
নগরের তলায় দোকানিরা সব হারায়া গেলে
এই কথা স্পষ্ট হয়
আর কাটা কাগজের গাদায় এইসব জ্বলা কথাগুলো জেঁকে বসলে
ওরা না শুনে দেখলো নতুন চাকার কোরাস
ঢুলছিলো তার ব্যথা গোলাপি কথায়।

মেয়েটি বললো – গভীর মেশিন, শুধু তার ছায়া,
তোমার রঙিন চোখ ও দুটো রোদ, পার্কের পাকা পাতা
ছেলেটি বললো – এই তো গভীর মেশিন, কলকব্জার কাকলি
খেয়ে আছে
মনে হয়, অনেক দিন অনেক মাস গরম তারার মতো।

তারই একটু পর, নিজেদের মধ্যে কয়েক হাত পাগলা হাওয়া
নামহীনভাবে ধাওয়া করে এলো
মরচেরা পোশাক ছাড়লো খোলা প্রান্তে,
যার আনমনা কুয়াশার স্বাদ
বারবার মরে গেলো নিঃস্ব ধোঁয়ার কাছে
আত্মার ক্ষয়ে যাওয়ার মতো রোদের করুণা আর দেশি চালাকিতে।

ফুলের ঝরা গন্ধ চলে গেলো,
চলে গেছে নগরের দুটি ছোটোমানুষ
টানা হাত-পায়, শব্দ ও সন্ধ্যার মধ্য দিয়ে
একটা ফুলের পিছনে আরো কিছু পরে বিছুটা ফুলে।

(প্রেসের কবিতা; ১৯৯১)

 

কানচাবি চাঁদ

আপার-সিলিন্ডারে একফালি কানচাবি চাঁদ
মনে হয় ধুলো ও জং-এ-ধরা
জেগে আছে শহরে, এইখানে, এই দামহারা প্রেসের আকাশে।

শাদা বালুর মধ্যে দিয়ে যখন সূর্য গেল, একাকী একবার।
আর আচমকা বিদ্যুতের তারগুলো কালো
বীণা সেজে
এক থাম থেকে আরেক থামে, সরু ও থমথমে।

তখন পাড়ার ছোট্টো ছেলেরা গেঞ্জি বদল করে,
চাঁদ খুঁড়লো নিজেদের চোখ দিয়ে
যেখানে ছাদে এক কিশোরি-কন্যার
ভিনদেশের দূরবীনে, ছানি-পড়া দাদার হাসি ও কালো রঙ
শেষ চিল, কিছু জ্বলা মেঘ ও হাওয়া ধরে থাকে।
আর দূরে চাঁদ মিথ্যে নয় – বাঁকা হয়ে আছ ফাঁকায়
কোনো এক নারীর চোখের মতো ভেজা, দীর্ঘ ও পাপড়ির।
কিন্তু কোনো চাঁদই উঠলো না, কাঁচের কিংবা তামার এবং আমার।

এইখানে, একফালি কানচাবি চাঁদ।
ধুলো ঝেড়ে বল্টুর সাথে, জং-এ ও পাথুরে রঙিন।

(প্রেসের কবিতা; ১৯৯১)

 

কালো কালি

রাত নামলো গরম ট্রেডেল মেশিনে আর ছেঁড়া কাগজের ব্যথায়,
তুমি কি জানো, রাত নামলো লোহার চাকার গুঁড়োয় আর
অন্ধ ইঁদুরের মনে?

রুমের মধ্যে গ্রামের কাঠ, তার কিছুটা ক্ষত,
মুখ গোঁজার মতো অনেক ময়লা লতা; আর
হাইডেলবার্গের নিচে নিয়মিত প্রুফ-কাটা জঙ্গলের পর
মবিল-তেলের ছোট্টো জলাশয়। দেখো,
তার কাদায় বুঝি শাপলার বীজ, শামুকের গান।
রাত নামলো কাঁপা পানির শব্দে
তুমি কি জানো, তা থেকে হাওয়া এসে আমার কানে লাগে?

রাত নামলো হুগলির খালি কৌটায় কালি কালি ভরতে।
তুমি কি জানো, ছাপা-গল্পের একটা কুকুরের হাঁটুতে রাত নামলো
শুধু একটি সকালের জন্য?

(প্রেসের কবিতা; ১৯৯১)

 

বইয়ের কাভার

বইয়ের কাভার

 

ছাপাখানার ভূত

শুনেছি তুমি আছো বহুকাল,
বহুকাল কোথাও-না কোথাও খেটে চলেছো
আর ছাপার পর ঝলসে ওঠো আর দেখা দাও।

সীসার ফিনকি ঘিরে তুমি
দস্তার অসুন্দরকে ঘিরে তুমি
কোত্থেকে আসো
কোথায়-বা যাও?

তুমি সোনার কাদা ঠেলেছো?
নাকি খড়ের মই বেয়ে আজ
টেবিলে প্রতিভাত।
ও ভূত অশরীরী,
জানতে পারি, জানতে পারি, জানতে পারি?

রূপার নিবকে ঘিরে কলংক
পাকা অক্ষরের ঘ্রাণ-কে ঘিরে তুমি
স্থির, বসে থাকো তুমি
মনে হয় কোথাও কখনো ছিলে না
মনে হয় কোথাও বসে নেই তুমি, এখন,
আর এইমাত্র।

(প্রেসের কবিতা; ১৯৯১)

 

২৩.৩.৯১

তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করে,
এই প্রেসের ভিতর, আর এই ক্ষুদ্র চাকার মহান ছোট্টো দাগে।
লোহায় তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করে।

ধাতব শব্দ সুদূরে পায় মানা, তবু
আমি থামি না;
কঠোর ওহে হলুদ কাঠ শোনো,
ছোট্ট ঘুণের নিঃশ্বাসে আজ
তোমাকে কেন দেখতে ইচ্ছে হয়?

ক্ষুদে ও কালো,
নীরব আর গভীরতর কিংবা
বধির আর প্রতিবন্ধী এক ছোট্ট করেট, এখন হলো; ম্যাগনাম।
তার পাশে বসে আসি ঘন প্রিয়তমা আমি-
তাকে নয়, থেকে-থেকে তোমাকেই খুব দেখতে ইচ্ছে হয়;

তুমি এসেছো প্রেসে
রুল-শিরিশের লোক যে-ভাবে আসে
আর হরফ গলানো লোক:
দুটোর সাথেই মুদ্রা জড়িত
তুমি ভালোবাসার।

তুমি এসেছো প্রেসে
আমাকে ফেরত নিতেই,
আমার তবু
তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করে।

(প্রেসের কবিতা; ১৯৯১)

 

পরিত্যক্ত বস্তুদের না যেতে চাওয়া

চ্যাপ্টা করেট, পাইকা আর ঐ হলুদ ঝুড়িটা
যদিও বাতিল তবু যেতে চায়নি প্রেসের বাইরে
কেউ কাউকে ছেড়ে গতানুগতিক।

এই শীত অনেক ভালো,
ভালো একেবারে কাউকে না পাওয়া।
ভাবলো মাকড়ের জাল আর কিছু লালা,
মাটি ছুঁয়ে দু’টি বাল্ব।

(প্রেসের কবিতা; ১৯৯১)

 

প্রেসের কবিতা

প্রেসের মধ্যদিয়ে সময় ঐ যায়, সময়।
রাত তুমি যাও?

আহা, কী সুন্দর হাওয়া
টেবিলের মধ্যখান দিয়ে যায়
আর আমার চুল ছোঁয়
আর আমার কান্না ছোঁয়।
কয়েকটি কান্না যায় গড়িয়ে, ঐ।
কোথায়?

দিনগুলো কোথায় যাও? প্রেসে?
শাদা আমাকে নাও না।
রঙ, প্রেসে যাও?
কাগজ, কালো ক্যালেন্ডার, টাকা তুমি,
পাইপের জল, আর ঐ তিতাসের চাপ
কই যাও, কোথায়,
কোন প্রেসে?

শুধু আমাকে নাও না,
ও বিদ্যুৎ
ও নতুন মিটার
শুধু আমাকে নাও না।

(প্রেসের কবিতা; ১৯৯১)

 

প্রেমের কবিতা

লোডসেডিঙের ভিতর ফুটে উঠছে আমার ব্যক্তিগত বিদ্যুতের প্রেমমুখ।
বহুদিন লক্ষ্য করেছি, গোপন চাপ ও তাপে
আলোহীন আমার বুকে একটুকরা কয়লা শুধু হীরা হ’তে চলেছে।

কালো একজোড়া জুতার কালিকে পেয়েছিলাম সেদিন।
পেয়েছিলাম আমার নিঃসঙ্গ পকেটে থাকা ঠিকানাময় কাগজগুলোর নিচে ঐসব অন্ধকার মুহূর্ত।
আর সড়কে কালো মাটির স্তুপকে ঘুমন্ত ঝোপ ভেবে
পেয়েছিলাম সারারাত বন্য ফুল ফোটার সুতীব্র ভাবনা।

কিন্তু জানা, কোনদিন, সামান্যভাবে, তোমাকে পাবো না আমি
গাছের মন থেকে, ধীরে ধীরে, তোমাকে লক্ষ্য করে পেয়ারাফুল ঝরে।

(ফৃ স্কুল স্ট্রীট পত্রিকা থেকে)

 

দিনলিপি ১

আমি কি লবুনে ক্ষেত,
আমার জন্য শুধু লোনা পানি রেখে গেলে?
থিতু হয়ে বসতে বসতে:
খুব ভালভাবে ভালবেসে ছিলাম
খুব নতুনভাবে ভালবেসে ছিলাম

চেগাই-পোরখান,
এফোঁড়-ওফোঁড়-করা পাথুরে মাটি শক্ত সমুদ্র,
আমাদের দুটি হৃদপিন্ডের হিসাবহীন লাল গোশতও

তবু ভাল লাগে জীবনের না দেখা দৃশ্যগুলি,
বীট লবণে ব্যক্ত তোমার না বলা কথা।।

(শুধু টের পাই আমি; ২০০৭)

 

বইয়ের কাভার

বইয়ের কাভার

 

ক্ষমা

বারবার তোমাকে ক্ষমা করি আমি
যদি কালো পাথরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতাম
তাহলে সে ছুটতো ঝর্ণার মতো শাদা কন্ঠস্বরে ।
যদি কুকুরকে ছুঁয়ে দিতো আমার দু’হাত
তাহলে সে হতো মানুষের ছোটো ভাই ।
ক্ষমা করার জন্য আকাশের দিকে তাকালে
মুক্তি পেতো খুচরা পয়সার মতো ঝমঝমে তারা;
প্যারেক থেকে প্যাঁচ খুলে মশারির চিকন দড়ি কালসাপ হয়ে
ফিরে যেতো মায়ের ই কোলে।
বারবার ক্ষমা করি আমি তোমাকে, বার-বার ।

(শুধু টের পাই আমি; ২০০৭)

 

বুড়িগঙ্গার তীরে

জাহাজ তৈরী হয় না
এরকম অনুভব নিয়ে লাল-শাদা জাহাজগুলি তৈরী হয়।
স্মার্ট ঘোলা পানি সরে যায় দ্রুত
মরিচার তীর ছুঁয়ে, তারপর, নিহত বুড়িগঙ্গায়।
মিটফোর্ড হাসপাতালের বিছানায়
ব্যান্ডেজ বাঁধা, কর্তিত, উন্মাদ, সব ছোটছোট জাহাজ থেমে
শুয়ে থাকে
লাল পানিময় মাংশ নিয়ে নরম বিছানায়।
শাদা লোহার কাপড় পড়া ডাক্তার,
শাদা লোহার কাপড় পড়া নার্স,
আমি দুই বেলা খেতে ভালবাসি লোহার ট্যাবলেট।

(শুধু টের পাই আমি; ২০০৭)

 

খুব মনে পড়ে

সিগারেট আর চা খাওয়ার জন্যই মনে হয় আমার জন্ম।
মান্নাকে খুব মনে পড়ে, পাপলুকে খুব মনে পড়ে,
মাসুদকেও খুব মনে পড়ে।
সিগারেট আর চা খাওয়ার জন্য আমাকেও আমার খুব মনে পড়ে।

দেয়ালে বাড়ন্ত ঝুল আর আমার বুকে কালো পশমের মতো
পৃথিবীর কোনে সবুজ চাপাতার চাষবাস।

অনেকদিন ডামি সিগারেট খেলাম নিজের মতো করে,
অনেকদিন দামি সিগারেট খেলাম অন্যের টাকায়।
শুধু সিগারেট খাওয়ার জন্যেই ওর সংগে অনেকক্ষণ আড্ডা দিলাম।
কয়েকদিন পর, জানি না, ওদের মতো এদেরকে খুব মনে পড়বে কিনা আমার।

শুধু সিগারেট খাবো বলে সরোয়ার্দি উদ্যানে ঘুরলাম
শুধু চা খাবো বলে সংসদ ভবনে গেলাম।
আরো অনেক সিগারেট খাবো বলে বন্ধুপত্নীকে সিগারেটে উদ্বুদ্ধ করলাম,
কিন্তু আরো অনেক সিগারেট খাবো বলে নিজপত্নীকে সিগারেটে উদ্বুদ্ধ করলাম না আমি।

(শুধু টের পাই আমি; ২০০৭)

 

সব জীবিতদের মনে পড়ে

সব জীবিতদের মনে পড়ে,
সব জীবিত গাছের বড়ো বড়ো পাতা চোখে এসে ঝরে বারবার।
প্রিয় মা আমার, আমাকে পশম দেখার মতো যোগ্যতর আলো এনে দিলে অতিদ্রুত দাও,
আঁধারে কিভাবে কবিতা লিখি আমি? জ্যোৎস্না নেই,
আমার ঘরে শুধু কালো বাল্ব জ্বলে,
সুন্দর জীবনের মতো লেখার কাগজ কোথায় চলে গেল?
আর দামি কলম হারালো।
এখানে এসে পৌঁছেছি বহুদিন চলে গেল, চলে যাবে জানি
সন্ধ্যাতারার তাপে সন্ধ্যামালতি শিকড়ে নিয়ে আসে খবর।

জলেচাপে ফেটেছে আমার শাদা কাপড়ের বেলা,
শতোছিন্ন চাঁটাইয়ের মতো বাঁশের জীবনগুলি ধ্বস্ত
তবু হাড়মাংস ম্লান করে দুর্বা কতো সুন্দর কতো সাবলীল এইখানে
আর আমি অন্য এক গলা-বোধের ভিতর ভ্রমণে উৎসাহী
মাটির মোমবাতি জ্বালাবো, মাটির কাগজে লিখি নতুন কবিতা হয়তো
ঐ তো দেখা যায় একটুকরা আকাশ
বাতাস যাওয়ার দৃশ্য
পৃথিবীর

মাটির গাদায় মিষ্টিআলুর বাঁকা শিকড়ের মতো লুকিয়ে রেখে গেছো তোমরা আমাকে
কিন্তু কে আমায় মধুর স্বরে ক্ষেতের প্রান্তে
কৃষকের মতো ডাকছো? শীতকালে
কে নতুন সংকলনে আমাকে সংগ্রহে প্রস্তুত? কে? কে?

একসময় রাস্তার শাদাকালো কুকুরের মতো হত্যা করার জন্য ছিলে যে তৈরী তোমরা,
তোমার অবৈধ কাজকে বৈধ করার জন্য
আমাকে বাতিল করার গান গেয়েছিলে তোমরাই।
এগুলো ছিলো বেলে মাটির ঢেলার কল্পনা,
সামান্য বৃষ্টিতে গলে যায়, আমার ছিলো না জানা
কিন্তু আমার লাল মজ্জা খেয়ে দেখো আজ পবিত্র গোলাপ ফোটে বাইরে
পাঁপড়ির ভিতরে ভিতরে দোয়েলের লং প্লে বাজে ভোরবেলায়
নির্ঘুম গ্রহের মতো।

আর প্রথমবার মনে হতো,
ঘাসেরা বাড়ে, আমি পচি
পোকরা হাসে, বাঁশ পচে দিনদিন।

অথচ আজ আমি দেখছি আমার মুখ থেকে কথারা ঠিকই বেরুচ্ছে,
উঠে বসছি আমি নিজস্ব ভঙ্গিমায় আর
দুপাশের বাড়ির লোকদের সাথে বন্ধুত্ব;
যে কখনো ভালোবাসা পায়নি বলে কুৎসিত বলে পৃথিবীর বুকে
শুয়ে শুয়ে ভালোবাসছি মাথার দিকের ফ্ল্যাটের
ঐ কামিজ পরা মেয়েটিকে এইখানে।

তার তুমি কিছু জানবে না, বুঝবে না, দুজনের সম্মতিতে
এসবই লাল মাটির গভীরে নরম সুড়ঙের ভিতর দিয়ে ঘটবে।
কেউ জানে না যেমন, আমাকে একমাত্র তুমিই বইয়ের মতো গুছিয়ে রেখেছো
পৃথিবীর শোয়ানো সবুজ বুকশেলফে!

তার নামে পাঠাবো একলক্ষ লজ্জাবতী গাছ,
ভরা বর্ষায় সুন্দরী কেন্নোর দল, মিষ্টি মাশরুম সত্যি।
কেউ জানবে না তা।

(শুধু টের পাই আমি; ২০০৭)

 

আবার আরেকটি শীতকাল

আবার আরেকটি শীতকাল শাদা ভাঁপা-পিঠার
লাল গুড়ের সাথে ফিরে আসে হাতে।
মিউনিসিপ্যালটির থাবা থেকে বেঁচে যাওয়া শাহবাগের কোনো এক গাছের জীবনে
লাল হতে থাকা সবুজ পাতার তলে
কমা চিহ্নের মতো শাদা কুয়াশাগুলো রোজই আত্মহত্যা করে।

এই শীতকালে আমার না-দেখা শীতল মনে
রোদ পোহাতে পোহাতে শুয়ে থাকে জন্তুর চামড়ায়
আরেকটি নদীর মতো একাএকা এক ঘড়িয়াল
আর আসল মরুভূমিতে রুটলেস কাঁটাঝোপের মতো উঠে আসে
দ্রুক হিমেল চরোঝড় হঠাৎ।

এই শীতকাল শুধু শীতকাল, দেখি না কোন সবুজ বর্ষাকাল;
আর অবহেলায় ভাবি না অসহ্য গ্রীষ্মের কথা।
কিন্তু জানো ভালবেসে কে পাঠায় রোজ সর্বত্র
ঝরাপাতা, টায়ার ও কাগজ পুড়িয়ে ছোটোছোটো আগুনের মুখ?
ক্ষুদে গ্রীষ্মকাল।

শীতে কাঁপতে কাঁপতে পকেটে পার্ক করে আমার দু’টি হাত,
সিলিং ফ্যানগুলির শুকিয়ে যাওয়ার প্রবণতায় এই মনে হয়।
মনে হয় পরীর ডানার মতো জানালার পর্দা স্থির হলে
কুয়াশা এক অন্যরকম দুঃখের নাম।

আর এবারই প্রথম, ঢাকায়, মোবাইল ফোনের অজস্র গোল এন্টেনায়
তরুণ কুয়াশা ঝরতে ঝরতে বাড়ি খেয়ে মরে,
কিন্তু হাসপাতালে ভোরের জানালা দিয়ে আসা বয়স্ক কুয়াশাটি বোতলের ছিঁপিতে
বসে শেষবারের মতো দেখে যায় তরুণ কবির মৃতমুখ।

(শুধু টের পাই আমি; ২০০৭)

 

মেয়ের সাথে কবি আহমেদ মুজিব।

মেয়ের সাথে কবি আহমেদ মুজিব।

The following two tabs change content below.

বাছবিচার

এডিটর, বাছবিচার।

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →