ফিকশন: দেনা পাওনা (পার্ট ১)
ক.
এর পরে বাদল যাবে বেডরুমে; পিসিটা আগেই অন কইরা আসছে। বাট তার আগে মুনার মাস্টারের লগে কিছু আলাপ করা দরকার। ড্রয়িং রুমে বইছে ওরা, নিজের রুমেই বইতে চাইছিল মুনা, বাট বাদল আর চম্পা আগেই ঠিক কইরা রাখছিল ড্রইংরুমের ব্যাপারটা। একটু ড্যাম-শিট করছিল, নেট আওয়ার আধা ঘন্টা বাড়াইয়া দিতেই গোমড়া মুখে হইলেও মুনা কইলো ‘ওকে’। বাদল বুঝলো, এন্টিভাইরাসের প্যারেন্টাল কন্ট্রোল কাম করতেছে ভালোই।
চম্পা, মানে শিরিন বাথরুমে, বের হবে যে কোন সময়ে। শিরিনরে শিরিন ডাকা যাইতেছে না আর; বাদল একদিন শিরিন ডাকতেই মুনার মা আর কামের মাইয়া–দুই জনেই হাজির! তার পর থেকে শিরিন হইয়া গেল চম্পা, কইলো, ভাতার চেঞ্জ করতে পারি না পারি, নামটা পাল্টাই এই সুযোগে! কবে যে আবার নিজের নামের ড্রাইভার আইসা পড়ে, চিন্তায় আছে বাদল।[pullquote][AWD_comments][/pullquote]
এনিওয়ে, সেই শিরিন থাকতেই চম্পা এমন, বাথরুমে ঢোকে আর বাইর হয়, কেমনে যে কি করে আল্লা মালুম! দুয়েকজন কলিগের বউ শুনছি বেটার এই ব্যাপারে, বউ বাথরুমে থাকার টাইমে তারা একটু ফূর্তি-ফার্তিও করতে পারে চাইলে।
চম্পা বের হবার আগেই মুনার মাস্টারের লগে আলাপটা সাইরা ফেলতে হবে বাদলের; পিসিটা ওপেন হইয়া গেছে মনে হয় এতখনে, এসিটাও ছাইড়া আসছে বাদল। এসি যদিও লাগে না এখন, শীত আসি আসি করতেছে। তবু এসি ছাড়ার সুবিধা আছে কিছু, দরজা লাগানোটা তাইলে অড লাগে না আর; নাইলে এই সন্ধ্যার সময়ে দুয়ার দেওয়াটা একটু কেমন কেমন লাগারই কথা। চম্পা অবশ্য অল্টারনেটিভ বুদ্ধিতে চলে; সে দুয়ারে অটো-লকের সিস্টেম বানাইয়া নিছে; তবে না লাগলে দুয়ার খোলাই থাকে, পাল্লার নিচে একটা ঠেকনা দেওয়া থাকে। তাই এসি ছাড়াই ভাল।
ড্রইংরুমে ঢুইকা বাদল কইলো,
– স্যরি, ডিস্টার্ব করি একটু।
মুনা আর ওর মাস্টার এক লগেই চাইলো বাদলের দিকে। অবাক হইলো বাদল; আরে, মুনা আর ওর মাস্টারের চেহারায় এতো মিল! পরেই বুঝলো, নাহ্, মিল বেশি নাই; দুইজনেই একটু নাখোশ হইছে, প্রায় সমান; তাই এক রকম লাগতেছিল চেহারা। মুনার মাস্টার অবশ্য লগে লগেই লুকাইয়া ফেললো তার মন, হাসলো-মোলায়েম, কইলো,
– জ্বি বলেন।
– কী যেন নাম আপনের?
– অপরা।
– হ হ, অপরা। তো কোনটা দিয়া শুরু করলেন? পয়লা দিন না আজকে আপনের?
– হ, আজ পয়লা; বাংলা দিয়াই শুরু করলাম।
– আচ্ছা, গুড। শোনেন অপরা, আপনের পড়ানোটা ম্যাক্সিমাইজ করতে চাই আমি, মানে, একটা সিস্টেম করছি; আপনে যখন নাই তখনো আপনে পড়াইতেছেন–এমন একটা সিস্টেম। আই মিন, আপনের এই পড়ানোটারে ভিডিও টিউটোরিয়াল বানাইয়া ফেলতে চাইছি।
উপরে দেখেন, সিসি-ক্যাম, টেবিলে আপনাদের দুইজনের কাছাকাছি মাইক্রোফোন লাগানো আছে, টেবিলে জুম করা থাকবে ক্যামেরা, খাতা বা বই পড়ার মতো ক্লিয়ার হবে পিকচার!
অপরার নাখুশি আরো বাড়লো মনে হয়, পাত্তা দিলো না বাদল, হাসা মুখে চাইয়া থাকলো অপরার দিকে। একটু পরেই অবশ্য নাখোশ মনে হইলো না আর, হাসলো অপরাও। কইলো, আমারে একটা কপি দিয়েন, ব্যবসার সম্ভাবনা দেখতেছি :)। আলাপ আর আগাইলো না বাদল।
মুনাকে মনে হইলো, আগাগোড়াই নাখোশ! প্যারেন্টিং জিনিসটা খারাপ না, ভাবলো বাদল। এনগেজড থাকতে হয়, অকুপাই কইরা রাখে মাইয়া-পোলা, বাট অনেক পাওয়ারফুল লাগে নিজেরে। অপরার কাছে বিদায় নিলো বাদল। কইলো, ঠিক আছে পড়ান, কথা হবে। অপরাও হাসলো আবার।
“ড্রইংরুম থেকে বের হইয়া বাদল দেখলো, টিভির সামনে বসা শিরিন। টিভিতে কী দেখতেছে খেয়াল না কইরা শিরিনকে ডাকলো,
– শিরিন।
অর্ধেক মাথা ঘুরাইলো শিরিন, বেখেয়ালে মনে হয়। তারপর মাথা সোজা কইরা বসা থিকা খাড়াইলো, লগে পুরা বডি ঘুরাইয়া চাইলো বাদলের দিকে, কইলো,
– জ্বী, মামা।
– মুনার ম্যাডামরে চা-কফি দাও, লগে বিস্কিট বা মিস্টি যা আছে দাও।
-পাস্তা বানাইছি মামা, দিমু?
– আচ্ছা দাও।
– জ্বী, দিতেছি।
– আমাদেরো দাও, একটু পরে কফি। না, কফিও এক লগেই দাও, হট পটে দাও। আর দুইটা মগ।
– জ্বী, মামা।
ভিডিও টিউটোরিয়াল জিনিসটা বাদলের পছন্দ। আনারস দিয়া ওয়াইন বানাইছে বাদল, ফোনের ভাঙ্গা টাচস্কিন বদলাইতে শিখছে নিজে নিজে– এগুলি ভিডিও টিউটোরিয়ালের দৌলত। চম্পাও ভিডিও টিউটোরিয়ালের ফ্যান। ছোট কইরা ‘ভিটি’ কয় চম্পা-বাদল। জিন্দেগীর বহু সেক্টরেই হেল্প করতে পারে এই জিনিস।
বেডরুমে ঢুইকা গেল বাদল; ভাল একটা ওয়েবসাইট পাইছে সে, এইখানে সব ভিটি ফ্রি। তারচে বড় ব্যাপার পুরাটা থাকে–ভিটি’র অনেক ফ্রি সাইট থাকলেও পুরাটা কমই পাওয়া যায়, ভিডিও কোয়ালিটিও খারাপ বেশিরভাগ সাইটে। টরেন্ট ফাইল ডাউনলোড করে না বাদল, রিস্কি; ফাইলগুলি পিসিতে থাইকা যায়, হিস্ট্রি-টেম্প ফাইল থাকে, ভিডিও প্লেয়ারের প্লেলিস্টেও এন্ট্রি থাকে। সবগুলি ক্লিয়ার করায় টাইম লাগে, দুয়েকটা মিসও হইতে পারে। ওদিকে, ক্রাইম হিসাবে টরেন্ট-সিডিং ধরা পইড়া যাবার মতোই। তারচে নেট ব্রাউজারে ‘ক্লিন অন এক্সিট’ ফিচার অন রাখলেই মামলা খতম, বা ইনকগনিটো মোডে ব্রাউজ করা।
খ.
কমোডে বসা চম্পা, তেমন কিছু ভাবার নাই, ভাবতেছেও না। কিছু প্রিপারেশন আছে, সেইটাই যা একটু ভাবা দরকার।
বাদলরে নিয়া মুসকিল হইলো, চম্পার ঘামের ঘ্রাণে খুব লোভ তার; অফিস থেকে ফেরার পরে গায়ে যে একটু পানি দেবে, তখনই বাদলের কথা মনে পড়ে। হাত সরে না আর, এইটারেই হয়তো পিরিত কয়!
বাদল একটু গাবর টাইপ, মিন্সট্রুয়েশনের ব্লাডও সে সমান আগ্রহে টেস্ট করে! প্রোবলেমটা চম্পারই। বাদলের দুইটা মুখ থাকলে ভালো হইতো! ঐ একটাই তো মুখ, সেই মুখেই চুমাচুমি করতে হয়।
বাজারে মাইয়াদের কনডম আইছে, চম্পার জন্য এইটা ভালোই হইছে। স্পেশালি মিন্সট্রুয়েশনের ওয়াক্তে। চম্পার আজকের প্রিপারেশন হিসাবে ফেমিডম পরতে হইবে; অনলাইনে কিনে রাখছিল আগেই। দেশের আরেকটা আজব ঘটনা হইলো, কনডম বেচে ফার্মেসিতে, সেই ফার্মেসিগুলা আবার সবই পোলায় ভরা! পোলাগুলাও আবার আজব কিসিমের হাবা। ফেমিডম কিনতে গেলে ফার্মেসির পোলাগুলি এমন এক নজর দেবে যেন বা মাইয়ারা সেক্স-টেক্স করে না, ওদের মায়েরা সব ভার্জিন! বা সেক্স-টেক্স করলেও কনডম কেন কিনবে, কেনা লাগলে কিনবে তাগো পোলা পার্টনারেরা! আজব! কেন, মাইয়ারা চালায় তেমন ফার্মেসিও দুই চারটা থাকতে পারতো না!
এইগুলাই চম্পার ভাবনার টপিক এখন। কয়দিন আগে চম্পার বাপ মরলো, সেই শক মোটামুটি কাটাইয়া উঠছে। বাপের মরাটা অবশ্য ততো বড়ো শক না চম্পার জন্য, তারচে বড়ো শক মরার ঠিক আগে বাপের বিয়াটা, পুরা পালাইয়া বিয়া।
বাপের সেবায় এক নার্স রাখছিল চম্পা, কয়দিন পরে দেখা গেল সেই নার্স পোয়াতি! সেই সব কাহিনি আর ভাবে না চম্পা, আরো কত কি ভাবে না! অনেক আগেই চম্পা বুঝছে, সহি হিসাব করতে পারলে ভাবনার চাপে কাহিল হইতে হয় না, এমনকি বড়ো বড়ো ইস্যুও আলগোছে মাফ কইরা দেওন যায়!
চম্পার বাপের বিয়ার কাহিনি আসলেই জটিল। ঘটনার শুরু এক উড়া চিঠি হইতে। একদিন সকালে দাড়োয়ান একটা চিঠি দিয়া গেল, কুরিয়ারে আসছে নাকি। চিঠি পইড়া তো চম্পা ১৫ মিনিট নড়াচড়া করতেই ভুইলা গেল, চিঠিতে লেখা,
“প্রিয় পড়শি,
সালাম লইবেন। শরমের কথা, তবু না কইয়া পারতেছি না! আমাদের বাসায় ছোট ছোট পোলা-মাইয়া, বারান্দায় যাইলেই চোখে পড়ে আপনাদের বারান্দা। পরশু বারান্দায় যাইয়া দেখি আপনের বাপে বইসা রইছে চেয়ারে। বুড়া মানুষ, ডাইনে বামে চাইলো এক নজর, কিন্তু সামনে চাইতে ভুইলা গেল! বা চোখে ঠিকঠাক দেখেই না হয়তো।
যাই হোক, ডাইনে-বামে একবার চাইয়া আপনের বাপে মাস্টারবেট করতে শুরু করলো!
পোলা-মাইয়া আসে বারান্দায়, কি যে করি–ভাবলাম একদিন। কইতেও পারি না, সইতেও পারি না! মনে মনে এলাহি ভরসা কইয়া এই চিঠি লিখতেছি, কিছু একটা কইরেন প্লিজ।
ভালো থাকবেন,
আপনাদের এক পড়শি,
সালাম।
চিঠি পাইয়া বেদিক হইয়া গেল চম্পা। কপাল ভালো ছিল, ২ দিনের ভিতর তাসলিমারে আনলো বাসায়।
তাসলিমা হইলো লুৎফার বোন। চম্পার অফিসের সুইপার লুৎফা একদিন কইলো,
-আপা, আমার বইনটা ভালো। স্বামী মরলো কয়েক মাস আগে, বাচ্চা-কাচ্চা হয় নাই একটাও! বাজা।
-বাজা!
-হ।
-এখন তাইলে কি দশায় আছে? নিজের কামাই আছিল নাকি?
-স্বামীর সেবাই তো চাকরি আফা, স্বামীও নাই, চাকরিও নাই। কামাই কেমনে থাকে!
-হুম, কি করবে তাইলে এখন?
-হেই কারণেই কইতেছিলাম, আপনের বাসায় রাইখা দেন।
-হ, রাখা যায়। আমারও একজন দরকার।
-আপনের বাসা দেইখা রাখতে পারবে।
-হুম। কালকে লগে লইয়া বাসায় আইতে পারবেন?
-অফিসের পরে যামু?
-আসেন, ৭-৮টার দিকে।
বোনরে লইয়া সময় মতোই আইলো লুৎফা। বেডরুমেই ডাকলো চম্পা, শিরিনকে কইলো দুইটা টুল দিতে।
এই সময় ছোট্ট একটা ঘুম দেয় চম্পা, আজকে আর হইলো না। তবু শুইয়াই থাকলো। বাদল গেছে বাজারে, মুনা যে কি করে, খোদা মালুম। পড়ালেখায় তো ঠনাঠন, সারা দিন খালি কম্পিউটার আর ফোনের অ্যাপ না যেন কি বানায় নাকি!
টুল আইনা দুইজনরে বসাইলো শিরিন। চম্পা তখন জিগাইলো,
-বাসায় কলা আছে শিরিন?
-আছে আন্টি। আঙুরও আছে।
মেজাজ একটু খারাপ হইলো চম্পার। চাইপা যাইয়া কইলো,
-আচ্ছা দাও এনাদের। কয়েকটা বিস্কুটও দিও, পরে চা।
-জ্বি আন্টি।
শিরিন ঘর থেকে বাইরাইতেছে, দুই বোন চাইয়া রইছে শিরিনের পিছে। ডাকলো চম্পা, নজর ঘুরাইলো দুই বোন। চম্পা কইলো,
-তো, আপনে হইলেন তাসলিমা, তাই তো? কেমন আছেন?
-আল্লার ইচ্ছায় ভালো এখন।
-কি হইছিল আপনের স্বামীর?
-কইতে পারি না। ভোরে উইঠা কয়, বুকে ব্যথা। তেল মালিশ করলাম, কমে না। জহুরের ওক্তে ভ্যানে শোয়াইয়া হাসপাতালে লইয়া গেলাম, ডাক্তার নাড়ি দেইখা কয়, ‘নাই’। আল্লায় লইয়া গেছে, ডাক্তার রাখবে কেমনে!
-বুকে ব্যথা হইতো নাকি মাঝে মাঝে?
-বছর তিনেক আগে একবার হইছিল রাইতে। ফজরের ওক্তে কইমা গেছিল।
-বয়স কত হইছিল?
-কইতে পারমু না। মুক্তির বছর ৭/৮ আছিল শুনছি।
চম্পার অনুমান, হার্ট অ্যাটাক। কিন্তু কইলো না কিছু ঐ ব্যাপারে। জিগাইলো,
– কি করতেন উনি?
– ভ্যান চালাইতো। ৫ জনের একটা দলে আছিলো, বাসা-বাড়ি আর অফিসের মালামাল টানতো। ঐ যে, এক বাসা ছাইড়া আরেক বাসায় যায় না? ঐ দলের একজনের ভ্যানে কইরাই নিছিলাম হাসপাতালে।
– পরে দাফন করলেন কই?
– দাফন করা হয় নাই। ডাক্তারি পড়ার একটা কলেজে দিয়া দিছি।
– কন কি!
– হ, ডাক্তার সাব কইলো, ‘ডাক্তারির এলেম বাড়াইতে সাহায্য করে লাশ, মানুষের উপকার হবে।’
– দিয়া দিলেন?
– ভাইবা দেখলাম, মানুষের উপকার হইলে তো আল্লার বেজার হবার কথা না। লাশ লইয়াই বা কই দাফন করমু! আসমানি ফয়সালা ম্যাডাম।
– হুম।
কামের কথায় যায় চম্পা, তাড়াতাড়ি বিদায় কইরা একটু ঘুমাইতে পারলে ভালো। ঘুম না কইয়া ঝিমানো কওয়া উচিত অবশ্য! বা ঘুমও হইতে পারে! কফি বনাম পারফর্মেন্স, বাদলের পারফর্মেন্স যেই দিন শিরিনের কফিরে হারাইতে পারে, সেই দিন ঘুম, যেই দিন শিরিন জেতে সেইদিন ঝিম মাইরা শুইয়া থাকা কতখন! অবশ্য পুরা দায় বাদলের উপ্রে দেওয়া ঠিক হবে না, চম্পার মুড আর পারফর্মেন্সের মামলাও এইটা! কোন দিন হয়তো বাদল জান লাগাইয়াই চেষ্টা করে, কিন্তু চম্পাই কেমন দায় সারা গোছে ঠ্যাঙ মেইলা থাকে স্রেফ! তবে এই ব্যাপারটা সব সময়ই চম্পার মনে মনে, বাইরে খোশ মেজাজই দ্যাখে বাদল!
বিয়ার পরে পরেই চম্পা বুঝতে পারছিল, কনজ্যুগাল লাইফ মানে ‘ওয়েলফেয়ার লাইং’! কেবল মুখের মিছা কথা না, পুরা শরীল দিয়াই মিছা কইতে হয়, পিরিতি মানে এইসব মিছা কথা কইতে রাজি হওয়া, হাচা কথা কনজ্যুগাল রিশতায় প্রায়ই খুব নিঠুরিয়া!
লুৎফারে কয় চম্পা
– শোনেন লুৎফা, শিরিন আছে বাসায়, সব কামই পারে ও, করেও, করবেও। ঘরের এইসব কামে তাসলিমার ভাগ লইতে হবে না।
– কন কি, তাইলে ও আর কি কাম করবে!
– তাসলিমার কাম হইলো, আমার বাপের সেবা করা, আর কিছুই না।
– হ, খালুজানের তো বয়স হইছে!
– শোনেন লুৎফা, তাসলিমাও মন দিয়া শোনেন।
রুমে তখন ঢুকলো শিরিন, হাতে একটা ট্রে। কলা, আঙুর আর বিস্কিট আনছে ট্রে ভইরা। টি টেবিলে নামাইয়া রাখলো। পানি? জিগায় চম্পা। দিতেছি, কইয়া ঘোরে শিরিন। চম্পা ডাকে আবার। চা দিয়া যাইও শিরিন। চম্পা ভাবছিল, কফি দেবে কিনা জিগাইবে শিরিন। ধুরন্ধর শিরিন আবারো হারাইয়া দিলো চম্পারে! স্রেফ কইলো, আচ্ছা। শিরিন বাইরাইতে চম্পা আবার কামের কথায় ফিরলো।
– হ, আব্বার বয়স হইছে। ও আচ্ছা, খান আপনারা।
লুৎফা কইলো, আপনে লইবেন না কিছু! চম্পা জবাব দেয়, আমি একটু আগে খাইছি, এখন দুয়েকটা আঙুর খাইতেছি। তারপর ফেরত যায় আগের আলাপে।
– যা কইতেছিলাম, আব্বা বুড়া হইছে। কিন্তু একটা কথা কি জানেন, বয়স মানুষের খায়েশ মারতে পারে না সব সময়!
এইবার কথা কইয়া ওঠে তাসলিমা।
– কত কি বাকি থাইকা যায়, জিন্দেগি আসলে একটা লম্বা খরার মৌসুম!
চম্পা কিছুখন চাইয়া থাকলো তাসলিমার দিকে। এই একটা জিনিস বহুবার মালুম হইছে চম্পার–মানুষ আসলে ভিতরে খুবই মরমী। মুখে কইলো,
– আব্বা তো একলা পুরা, গত কয় বছর। শরীলের কত ডাক আছে! হয়তো পায়ে ব্যথা ব্যথা, একটু টিপে দিলে আরাম হবে।
কলায় একটা কামড় দিতে যাইয়াও দিলো না লুৎফা, কইলো
– বুড়া মানুষ এমনই আফা, এইগুলাই তো বুড়াদের সেবা।
শিরিন আবার হাজির হইলো তখন, চা লইয়া আসছে। চম্পা চাইয়া আছে শিরিনের দিকে। একবার চম্পার দিকে চাইলো শিরিন। চোখে চোখ পড়লো, চা নামাইয়া রাইখা বাইরাইয়া গেল। চম্পা শুরু করলো আবার, চাইলো তাসলিমার দিকে, তাসলিমার নজর চম্পার দিকেই।
– শোনেন তাসলিমা, আমার আব্বার গার্জেন হবেন আপনে, তার সব দরকার মিটাইবেন। যা কিছু লাগবে, কইবেন আমারে।
– জ্বী আফা।
– আপনের তো বাচ্চা-কাচ্চা হয় নাই, আপনের জন্যই তো? লুৎফা তাই কইতেছিল।
– জ্বী আফা।
– তাইলে তো ঝামেলা নাই আর। আপনেও ভালো থাকবেন, আব্বাও ভালো থাকবে। বেতন-টেতন যতটা পারি দিবো, ব্যাংকে একটা একাউন্ট কইরা লইয়েন, নাকি আছে?
– নাই আফা।
– আচ্ছা, আমি কইরা দিবো নে। আপনের খরচ তো আর নাই কোন, ব্যাংকে জমাইয়া রাইখেন বেতন, বুড়াকালে কামে লাগবে।
কিছু আর কইলো না দুইজনের কেউ। তিনজনেই চুপচাপ কিছুখন। চা খাইতেছে লুৎফা আর তাসলিমা।
চা খতম হইলো একটু পরেই। লুৎফা বিদায় লইলো, তাসলিমা আর চম্পা দুয়ার তক আগাইয়া দিলো লুৎফারে। যাবার আগে তাসলিমারে জড়াইয়া ধরলো লুৎফা, তাসলিমাও। লুৎফা কইলো তাসলিমারে – ভালোই থাকবি তুই, আফা মানুষটা ভালো।
এই বিদায় বেলায় শিরিন আইলো না, চম্পাও ডাকে নাই। মন দিয়া টিভি দেখতেছে, মাঝে মাঝেই হাসির আওয়াজ ফুটতেছে। লুৎফা বিদায় নিতে চম্পা ডাকলো; শিরিন, তাসলিমারে আব্বার রুমে দিয়া আসো। তাসলিমার দিকে নজর দিয়া কইলো, নিজেই নিজের মতো চিন-পরিচয় কইরা লন তাসলিমা।
গ.
হাকিম খা’র মনের শিরিন চম্পা হইতে পারে নাই। হাকিম খা মানে চম্পার, মানে শিরিনের বাপ। গরুর গোশত তার পছন্দ, গত ৫ বছর উনি গরু খাওয়া বাড়াইয়া দিছেন। শিরিনের মা মইরা গেল ৫ বছর আগে, হাকিম খা তখন ৬৪।
বেশি বেশি গরু খাইয়া ঝামেলা বাড়ছে আরো। শিরিনের মা, মানে সোনালতা বাঁইচা থাকতে হাকিম খা হায়াত বাড়াইতে চাইতেন; তাই গোশত কমাইছিলেন।
(টু বি কন্টিনিউড)
রক মনু
Latest posts by রক মনু (see all)
- ‘শোনার বাংলা’র এছথেটিক দলা - নভেম্বর 8, 2024
- হিস্ট্রিওগেরাফি এন্ড পলিটিকেল লয়ালটি - অক্টোবর 18, 2024
- খলিফা হইয়া ওঠা - সেপ্টেম্বর 2, 2024