Main menu

পলিটিকাল ডাইরি – ২০২৪ (তিন) Featured

This entry is part 3 of 3 in the series পলিটিকাল ডাইরি

অগাস্ট ০৫, ২০২৪

১.
বসুন্ধরা গেইট থিকা পুলিশ পালাইছে! দেশ স্বাধীন! বুক ভরে শ্বাস নেন!

২.
স্বাধিনতা তুমি আবরারের হাসি-মাখা মুখ
স্বাধিনতা তুমি আবু সাইদের চওড়া বিশাল বুক
স্বাধিনতা তুমি মুগ্ধ’র কপাল বাইয়া পড়া ঘামের ফোটা

স্বাধিনতা তুমি আবার আশায় বুক বাঁধা,
আবার হাঁটতে শুরু করা,
পথে পথে দেখা ফুটতেছে কতো ফুল

স্বাধিনতা তুমি নরোম-সরোম প্রেমের কবিতা
চুপচাপ বইসা থাকা, নিরবতার আওয়াজ শোনা
গাছের পাতাগুলা যেন বাতাসে গাইতেছে বাংলাদেশের গান, আবার…

/আ লং ওয়াক টু ফ্রিডম

৩.
যেই মিল-মিশের ভিতর দিয়া এই মুভমেন্ট হইছে, সেইটা নেকস্ট ইলেকশন পর্যন্ত কনটিনিউ করতে হবে; ডেমোক্রেটিক বাংলাদেশে নানা মত নানা পথ থাকবে, কিনতু কেউ কারো শত্রু না।

মনে রাখবেন, বিপ্লবের চাইতেও সবচে ইম্পর্টেন্ট দিন হইতেছে বিপ্লবের পরের দিন!

আমাদের সেলিব্রেশন চলবে। তবে অনেকে নানান ধরনের সুযোগ নিতে চাইবে, অনেকে অতি-বিপ্লবী হয়া উঠতে চাইবে, কিনতু যে কোন কিছুর চাইতে ডেমোক্রেটিক থাকাটার দিকে আমাদেরকে খেয়াল রাখতে হবে। ইনক্লুসিভ হইতে হবে যে কোন এক্টে, অ্যাকশনের জায়গাটাতে।

তবে অবশ্যই গনহত্যাকারী, তাদের সহযোগি ও এনেবেলারদের কোন মাফ হইতে পারে না, যত দ্রুত সম্ভব এদের বিচার করতে হবে; তা নাইলে ডেমোক্রেটিক বাংলাদেশের দিকে আমরা আগায়া যাইতে পারবো না, কোনদিনই।

৪.
দেশে যেহেতু এখন কথা বলার সুযোগ তৈরি হইছে, অনেকে কথা বলবেন, সকলেই কথা বলবেন; তো, আপাতত আমার পয়েন্ট এই কয়টা –

১. অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ কোন অবস্থাতেই, আই রিপিট কোন অবস্থাতেই ১৮০ দিনের বেশি হইতে পারবে না।

কারন নন-ইলেকটেড গর্ভমেন্টে ফেরেশতা বসাইলেও সে আরেকটা অটোক্রেট হয়া উঠবে।

২. এই সরকারের প্রধান একজন নন-মিলিটারি ও নন-পলিটিকাল পারসন হওয়াটা বেটার।

৩. এই সরকারের এটলিস্ট ৩০%, মানে ৯ জন মেম্বার থাকলে তার মধ্যে ৩ জন ছাত্র-প্রতিনিধি হইতে হবে।

৪. সেকুলার-লিবারাল ফ্রন্টের মেম্বার যেমন থাকা লাগবে ইসলামিস্ট-ঘরানার লোকজনরেও রাখা লাগবে; ইনক্লুসিভ হইতে হবে

৫. সরকারের প্রধান কাজ হবে দুইটা – ফ্রি-ফেয়ার ইলেকশনের বেবস্থা করা এবং এর জন্য যা করার দরকার সেইগুলা করা; এবং শেখ হাসিনা ও তার সহযোগিদের গনহত্যার বিচার করা

৬. এর বাইরে আরেকটা জিনিস নিয়া আমি সর্তক থাকার জন্য বলবো, যারা আওমি-লিগের সরাসরি সাার্পোটার ও বেনিফিশিয়ারি তাদের সবাইরেই আমরা মোটামুটি চিনি ও জানি; কিনতু যারা দুইদিন আগেও হাসিনার নাম মুখে নিতে গেলে ডরের চোটে পাদ মাইর দিতো, তারা অনেক ‘ভুল’ ধরতে আসবে, এমনকি ‘অতি-বিপ্লবি’ কাজ-কাম করার জন্য ‘জরুরি পরামর্শ’ দেয়া শুরু করবে – তাদের থিকা সাবধান থাকাটা বেটার

৭. কারন, এই ফ্যাসিস্ট নয়া বাকশালের পতন মানে সবকিছু বেহেশত হয়া উঠা না, বরং একটা নরমালিটির দিকে, ডেমোক্রেটিক অবস্থার দিকে যাওয়ার শুরু মাত্র, এর বেশি কিছু না

৮. এই আন্ডারস্ট্যান্ডিং’টা, যারা অনেক কিছু স্যাক্রিফাইস করছেন, তাদেরও থাকলে ভালো… হঠাৎ কইরা সবকিছু ভালো হয়া উঠবে না, কিনতু ভালো-মন্দ বিচারগুলা করাটা যেন আমরা শুরু করতে পারি, সেইটার দিকে যাওয়া

৯. প্রতিশোধ, রিভেঞ্জ কখনোই সমাধান না; বিচারের জায়গাটা তৈরি করতে পারতে হবে আমাদের, ন্যায়বিচার বা জাস্টিসের সমাজ তৈরি করার দিকে যাইতে হবে
Continue reading

শহিদী তামান্না – ইয়াহিয়া সিনওয়ার Featured

[এমন একটা সময় পার করতেছি যখন আমাদের দেশে একটা গণহত্যা ঘইটা গেছে। এবং ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি গণহত্যা চলতেছে৷ প্রতিদিন কোনো না কোনোভাবে ফিলিস্তিনের ছবি, ভিডিও নানানকিছু আমাদের সামনে আইসা পড়ে। আমরা কথা বলতে থাকি। আমাদের আন্দোলনেও আমরা ফিলিস্তিনি পতাকা উড়াইছি। গাজার গণহত্যার বিরুদ্ধে কথা বইলা যাইতেছি৷ অনেকগুলা দিন ধরে আমরা ফিলিস্তিনে এই গণহত্যার বিরুদ্ধে নানানভাবে দাঁড়াইছি। মিছিল, কবিতা, গান থেকে শুরু কইরা নানান এক্টিভিজম চালাইতেছেন কবি, লেখক এক্টিভিস্টরা। এই মর্মান্তিক, বর্বর হত্যাকাণ্ডের সামনে এইসব দাঁড়ায়া থাকা আসলে কতটুক কাজে আসবে আমরা জানি না। কিন্তু আমরা কথা বলতেছি এইটাই আপাতত ফ্যাক্ট।

গত ১৬ অক্টোবর, ২০২৪ এ হামাসের প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ার ইজরায়েলি হামলায় শহিদ হন। তার শেষ সময় পর্যন্ত লড়াই চালায়া যাওয়ার ভিডিও বের হয় এবং ভাইরাল হয়ে যায় যা মানুষের ভিতর ব্যাপক উত্তেজনা তৈরি করে৷ আমি কয়েকদিন আগে টিকটকে পোস্ট করা একটা ভিডিও পাই ফিলিস্তিনি একটিভিস্ট paliNada- এর। যিনি ইয়াহিয়া সিনওয়ারের লাস্ট উইল অনুবাদ করছেন আরবি থেকে (যেইটা তাঁর শহিদ হওয়ার পর সামনে আসে)। আরবিতে বলা হয় ওসিয়ত। ভিডিও দেখার পর আমি মূলত খুঁজে বাইর করি এই রাজনৈতিক মেনিফেস্টো যেইটা ইউনাইটেড ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল ২৪ অক্টোবর পাবলিশড করে। এরপর workers world জার্নাল, প্রেস টিভি এবং নানান জায়গায় পাবলিশড হয় এবং ব্যাপকভাবে ছড়ায়া পড়ে৷ এই ওসিয়ত এত বেশি ইন্সপায়ারিং এবং এর ভাষা এত শক্তিশালী এবং পোয়েটিক আমি শখের বসেই প্রথম কয়েকটা লাইন অনুবাদ করি। এবং পরে ভাবি পুরাটাই অনুবাদ করার৷ আমার মনে হইছে, এই উইল যেকোনো মানুষের পড়া জরুরি। এইখানে দেশ ও তার নাগরিকের ইনসাফের জন্য যে লড়াইয়ের কথা বলা হইছে তা খালি ফিলিস্তিন না যেকোনো মজলুম মানুষরে হিম্মত দিবে। এই জায়গা থেকেই আমার এই কাজ করা।]

 

আমি ইয়াহিয়া, এক শরণার্থীর সন্তান—যে নির্বাসনরেই বানাইছে তাঁর মাতৃভূমি এবং খোয়াবরে বদলায়া ফেলছে চিরকালীন লড়াইয়ে।

এই কথাগুলা লেখার সময় জীবনের প্রতিটা মুহূর্ত আমার মনে পড়তেছে! গলিতে দৌড়ায়া বেড়ানোর শৈশব থেকে জেলখানার দীর্ঘ বছরগুলা। মনে পড়তেছে, এই জমিনের বুকে ঝরে পড়া প্রতিটা রক্তের ফোঁটা’র কথা।

আজাদির দিকে দীর্ঘ সফর

আমি ১৯৬২ সালে খান ইউনিস শরণার্থী শিবিরে জন্মাই, ফিলিস্তিন তখন টুকরা টুকরা স্মৃতি হয়া গেছে এবং রাজনীতিবীদদের টেবিলে হইছে বিস্মৃত মানচিত্র। আমি তো সেই ব্যক্তি যার জীবন আগুন ও ছাইয়ের ভিতর গড়া, এবং আমি জীবনের পয়লাই বুঝছিলাম যে জালিমের দখল মাইনা নেয়া মানে আমৃত্যু কয়েদখানা। আমি সেই ছোট্টবেলা থেকেই জানি, এই জমিনে বাঁইচা থাকা স্বাভাবিক ঘটনা না, এবং এখানে যারা জন্মায় তাদের অন্তরে ধারণ করতে হয় একটা অবিচ্ছেদ্য হাতিয়ার; তাদের বুইঝা নিতে হয় আজাদী এক দীর্ঘ সফর। তোমাদের কাছে আমার ওসিয়ত সেই শিশুর কাছ থেকে শুরু হইতেছে, যে প্রথম পাথর ছুঁড়ছিল জালিমের দিকে, সে জানছিল পাথরই পয়লা শব্দ যা আমরা উচ্চারণ করি এমন এক দুনিয়ার মুখের উপর যে আমাদের জখমের সামনে বোবা হয়ে থাকে।

গাজার গলিতে আমি শিখছি, একজন মানুষের কদর তার বয়স দিয়ে হয় না, সে তার মাতৃভূমির জন্য কী কুরবানি দিছে তা দিয়ে মাপা হয় তার উচ্চতা। আমার জীবন ছিল এই : জেলখানা ও যুদ্ধ, জখম ও তামান্না। ১৯৮৮ সালে আমি প্রথম জেলে যাই এবং আমারে যাবজ্জীবনের সাজা শোনানো হয়, কিন্তু ডর কী জিনিস আমি জানি না। সেই আন্ধার ঘরের প্রতিটা দেয়ালে আমি একটা জানলা দেখতে পাইতাম যা দূর দিগন্তের দিকে খুইলা যাইত এবং প্রতিটা গরাদের মধ্যে এমন এক আলো যা আমাদের আজাদির রাস্তারে করতো রোশনাই। কারাগারে আমি শিখছি, সবুর খালি গুণই না বরং হাতিয়ার, একটা তিতা হাতিয়ার , যেন ফোঁটায় ফোঁটায় এক অসীম সমুদ্র পান করা।

“যা তোমার হক তার জন্য কখনো আপোস কইরো না”

তোমাদের প্রতি আমার ওসিয়ত: কয়েদখানারে ডরায়ো না, কারণ আমাদের আজাদির দীর্ঘ সফরে এটা একটা হিস্যা মাত্র।

কারাগার আমারে শিখাইছে, স্বাধীনতা কেবল চুরি করা হক না, এটা এমন এক কনসেপ্ট যা জখম থেকে জন্মায় আর তার চেহারা গইড়া ওঠে সবুর দিয়ে। ২০১১ সালের “ওয়াফা আল-আহরার” বন্দি বিনিময় চুক্তিতে জেলখানা থেকে বাইর হওয়ার পর আমি আর আগের মতো ছিলাম না। আমি আরো মজবুত হই, এই ঈমানের সাথে যে আমরা যা করতেছি তা কেবল সাময়িক লড়াই না, এ আমাদের তকদির; এমন এক তকদির যা আমরা আমাদের রক্তের শেষ বিন্দু দিয়া ধরে রাখি। Continue reading

‘শোনার বাংলা’র এছথেটিক দলা Featured

ক।

আমার বউ আর আমার বড়ো মাইয়ার নাম পার্লিন অপার। ওর একটা পেন্সিল বাক্স আছিলো; শক্ত পেলাস্টিকের। ভাংছে। ও নিজেই হয়তো। জানি না। তাই ও আমারে এইবার বাক্সের বদলে ব্যাগ কিনতে বললো।

ইশকুল থিকা দুই মাইয়ারে লইয়া বাশার নিচে আইলাম, গেটে ওদের নামাইয়া আমি একটা বিড়ি ধরাইলাম [ 🙁 , ছাইড়া দিবো, কছম! ], তারপর গেলাম ইছলামিয়া লাইবেরিতে। কিনা ফেল্লাম একটা ব্যাগ, ১৮০ টাকার নিচে নামাইতে পারলাম না, ছ্যাড!

এই দোকানে এছি আছে, কিন্তু পরে একটা কাচা পেপে কিনতে হবে, তাই বের হইয়া আশতেছিলাম। তখন দেখলাম, ‘কিআ’। অনেকগুলাই, অক্টোবর২০২৪ ইশু। একবার ভাবলাম জিগাই–কেমন কেনে লোকে, কারা? বাদ দিলাম পরে; জবাব শুইনা মন খারাপ হইয়া জাইতে পারে! আর এইগুলা আমার ততো জানাও লাগে না, আমি মোটামুটি আন্দাজেই কাম চালাইতে পারি! জেইটা আন্দাজেই চলে, শেইটা জাইনা লাভ কি আর 🙂 ! আর লোকের জবাবে অতো ভরশাও পাই না আমি, মানুশ হইলো আর্টিশ, মোটিভ মোতাবেক বানাইয়া কইতে পারে কাহিনি, আশলে কয়টা বেচা হয়, শেইটা ব্যাপার না ততো!

এনিওয়ে, আমি ‘কিআ’ উল্টাইয়া দেখলাম একটু; বিজনেছ ভালোই মনে হইলো, মেলা অ্যাড, বেইচা পয়শা উশুল করা লাগে না ওনাদের, আন্দাজ করলাম!

তো, দেখলাম, এডিটর হইলেন আনিসুল হক বুয়েটিয়ান। বাকি রাইটারদের ততো চিনলাম না।

শুরুতে কিছু চিঠিপত্র, তারপরেই আনিসুল হকের লেখা; উনি আলো’র কাহিনি কইছেন দেখলাম; নাহ, বুয়েটিয়ান দেইখা ভাইবেন না জে, অপটিক্স–উনি আন্ধারের উল্টাদিকে আলো’র কাহিনি কইতেছেন, ঐ ‘আলোকিত মানুশে’র কেচ্ছা আর কি!

কইতেছেন জে, দেশের তরুনরা নাকি নয়া শুরুজ উঠাইছেন দেশে; কাভারেও একটা ছবি, বেশুমার তরুন বাংলাদেশের নিশান লইয়া চিল্লাইতেছে, শেই ছবি; এই তরুনদের মনে হইলো শবাই বাংলা মিডিয়ামের হইবেন–মানে এস্টেরিওটাইপ মোতাবেক ছবি একখান।

নজরুলের একটা কবিতা দিয়া শুরু করছেন উনি, একটু পরেই রঠায় চইলা গেছেন, তারপর আলো আর আলো। এইখানে খেয়াল করার ব্যাপার হইলো, এই জে নয়া শুরুজ/আলো, শেইটা কিন্তু কোন আন্ধারের পরে আশে নাই, আগে কোন রাইত আছিলো না, ডিফরেন্ট আলো আছিলো খুব শম্ভব। আরো মজার ব্যাপার হইলো, এই লেখার কোথাও আওমি লিগ নাই, হাসিনা নাই, বাকশাল নাই, ফেছিজম নাই, পুলিশ বা তাদের গুলি নাই, শহিদও নাই–এই আলো খুবই আছমানি ব্যাপার।

এইটার টার্গেট রিডার কারা? ১২/১৫ বছরের বাচ্চারা খুব শম্ভব, হাই ইশকুলের মাইয়াপোলারা হবার কথা। পরথম আলোর ‘বন্ধুশভা’র পোলামাইয়াপান হয়তো এইটা টার্গেট খদ্দের।
Continue reading

বাংলাদেশের দুর্ভিক্ষ – অমর্ত্য সেন (পার্ট ২)

বাংলাদেশের দুর্ভিক্ষ – অমর্ত্য সেন (পার্ট ১)

বাংলাদেশের দুর্ভিক্ষ

বন্যা ও দুর্ভিক্ষ

প্রথমে বন্যা; তারপর দুর্ভিক্ষ। বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের ক্যাপসুল কাহিনীটা মোটামুটি এমন। গিলবার্ট এটিয়েন ১৯৭৪ সালের বন্যার কথা বর্ণনা করছেন এইভাবে:

উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলিতে ১৯৭৪ সালের বন্যা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করছে। নরমাল বছরগুলাতে, বানের সময় ব্রহ্মপুত্র পশ্চিম তীররে সর্বোচ্চ ৩০-৬০ মিটার পর্যন্ত গ্রাস করে। ১৯৭৪ সালে, ১০০ কি.মি. পর্যন্ত, ৩০০ পর্যন্ত প্রশস্ত পানির তোড় এমন ভূমি গ্রাস করে যেখানে জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি কিলোমিটারে ৮০০ জন। ২৪,০০০ মানুষ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়। তাছাড়া পলিমাটিজাত হওয়ায়, কিছু জায়গায় জমি খুব উর্বর হইলেও, অন্যত্র বালুর পরিমাণ এত বেশি যে তা অনেকটা নিষ্ফলা…. জুনের শেষ দিকে ভয়াবহ কয়েকটা বন্যা হয়। এবং আউশের (জুলাই-আগস্টে চাষ করা ধান) ফসলের বড় অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আরও পনের দিন পরে আউশের ফসল তোলার সময়টাতে ব্রহ্মপুত্র আবার বিপদসীমা অতিক্রম করে। আরও ১৫ দিন পর, নদীর পানির মাত্রা আবার বাড়ে এবং ফলে আমনের (জুলাই-সেপ্টেম্বরে চাষ ও নভেম্বর জানুয়ারিতে তোলা ধান) বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপরে, আগস্টের মাঝামাঝি, বন্যা বছরের সবচাইতে ভয়াবহ অবস্থায় পৌছায়। ফলে সদ্যবোনা আমনের ক্ষয়ক্ষতি হয়। এইটাই শেষ না। সেপ্টেম্বরের শুরুতে ব্রহ্মপুত্রের পানি আবারও বিপদসীমার উপ্রে দিয়া যায়, আর আগের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় নাই এমন ধানক্ষেতও ভাসায়ে নিয়া যায়। 

বন্যার সময় এবং বন্যার ঠিক পরেই চালের দাম দ্রুত বাড়তে থাকে। টেবিল ৯.১ -এ এইটা দেখানো হইছে। সবচাইতে বেশি আক্রান্ত জেলাগুলির কয়েকটাতে, জুলাই ও অক্টোবরের টাইমে, তিন মাসের মধ্যে চালের দাম দ্বিগুণ হয়া যায়। বন্যার পরপরই অনাহারের খবর আসতে থাকে, আর দিন দিন তার ভয়াবহতাও বাড়তে থাকে। বাংলাদেশ গভমেন্ট বন্যার অফিশিয়াল ঘোষণা দেয় সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে। দুর্গত ঘরহীন মানুষদের জন্য রান্না করা খাবারের কিছু লঙ্গরখানা খোলা হয়। সেপ্টেম্বরের শুরুতেই এই লঙ্গরখানাগুলা চালানো হয় ব্যক্তি পর্যায়ের উদ্যোগে আর গভমেন্টের লঙ্গরখানা পুরাপুরি চালু হয় অক্টোবরের শুরুতে। এক পর্যায়ে প্রায় ছয় হাজার লঙ্গরখানা খাদ্য ত্রাণ দেয় প্রায় ৪.৩৫ মিলিয়ন মানুষরে — যা দেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৬ ভাগ। নভেম্বর আসতে আসতে দ্রব্যমূল্যের দাম কমতে শুরু করে, রিলিফের চাহিদার তীব্রতাও কিছুটা কমতে শুরু করে মনে হয়। নভেম্বরের শেষে লঙ্গরখানাগুলি বন্ধ কইরা দেওয়া হয়।

অঞ্চলভেদে দুর্ভিক্ষের ভয়াবহতা নানান মাত্রায় ছিলো। টেবিল ৯.২ লঙ্গরখানা থেকে ত্রাণ সংগ্রহ করা মানুষের জেলাভিত্তিক অনুপাত তুলে ধরছে। এই অনুপাত রংপুর জেলার ১৭% থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের ০% পর্যন্ত। এই হিসাবে সবচাইতে বেশি আক্রান্ত পাচঁটা জেলা হইতেছে রংপুর, ময়মনসিংহ, দিনাজপুর, সিলেট ও বরিশাল। ১৯৭৪ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের জরিপে ময়মনসিংহ, রংপুর ও সিলেটরে বলা হইছে ‘দুর্ভিক্ষের জেলা’। সর্বোচ্চ পরিমাণ প্লাবণ যা ‘তিন মাস বা তার বেশি সময় ধরে ৬ ফুটের বেশি উচ্চতার বন্যা’ ও ‘লঙ্গরখানা থেকে জনসংখ্যার শতকরা কতভাগ ত্রাণ নিছে’ — এই দুইয়ের ভিত্তিতে ‘দুর্ভিক্ষের জেলা’ ঠিক করা হইছে।   আগ্রাসী ব্রহ্মপুত্র ও অন্যান্য নদী থেকে বেশ দূরের জেলা দিনাজপুর কিন্তু ‘দুর্ভিক্ষের জেলা’ নামের এই তালিকায় পড়ে নাই অথচ এই জেলার ত্রাণ চাওয়া মানুষের সংখ্যার অনুপাত ছিলো সিলেটের চাইতে বেশি। আবার দেখা গেছে, ‘দিনাজপুরের লঙ্গরখানায় আসা মানুষের একটা বড় অংশ আসছে পাশের জেলা রংপুর থেকে।’ Continue reading

আমি – জহির রায়হান (১৯৬৭)

[আসিরুদ্দীন আহমদ সম্পাদিত সিনে-পত্রিকা ‘ঝিনুক’র ১৯৬৭ সালের জানুয়ারি সংখ্যায় জহির রায়হানের এই লেখাটা ছাপা হয়। জহির রায়হান রচনাবলী’সহ যে কোন এন্থোলজি’তেই এই লেখাটা রাখা হয় নাই বইলাই আমরা জানি। এমনিতেও উনার সিনেমা বিষয়ে কথা বা লেখা তো খুব একটা গুরুত্ব দিয়া কালেক্ট করা হয় নাই; কিন্তু করা যে দরকার, এবং খুঁজলে যে কিছু জিনিস পাইতে পারি আমরা, সেইটার একটা নমুনা হিসাবে এই লেখাটারে দেখা যাইতে পারে। – এডিটর, বাছবিচার]

কি লিখবো?
আমাকে অকারণ কিছু লিখতে বলে অপ্রস্তুত করার কোন মানে হয় না।
আমার জ্ঞান অত্যন্ত সীমিত।
অভিজ্ঞতা অপ্রতুল। সঞ্চয় অতি সামান্য।
আকাঙ্ক্ষা অনেক। অনেক। অনেক। সাগরের ঢেউয়ের মত। আকাশের তারার মত।
শ্রাবণের ধারার মত। এর কোন ইতি নেই। যতি নেই। শেষ নেই।
লিখবো কি?

এককালে স্বপ্ন দেখতাম। ভারী সুন্দর সুন্দর স্বপ্ন।

সূর্যের সোনাঝরা রোদে একঝাঁক পায়রা যেমন করে ডানা মেলে দিয়ে ওড়ে। আঁধারের অন্তরঙ্গ ছোঁয়া পেয়ে জোনাকীরা যেমন মৃদু মৃদু জ্বলে। আর বাতাসের অকৃপণ উদারতার স্পর্শে পালতোলা নৌকোগুলো যেমন দুর্বার বেগে ছুটে চলে, তেমনি আমার অল্প বয়সের অনভিজ্ঞ মনে স্বপ্নের বলাকারা কখনো উড়তো, কখনো জ্বলতো, কখনো ছুটে চলতো এক দিগন্ত থেকে অন্য দিগন্তে।

এখন ওসব বাজে অভ্যেস বর্জন করেছি।
স্বপ্ন দেখি না।
কারণ, স্বপ্নের সাথে বাস্তবের সাপে-নেউলে সম্পর্ক। অকারণ হতাশার বোঝা বাড়িয়ে জীবনকে ভারাক্রান্ত করতে চাইনে।

আমি আমার আবেগের ক্রীতদাস। আমার আবেগ আমাকে যখন যেখানে নিয়ে যেতে চায় আম সুবোধ বালকের মত তাকে সেখানে অনুসরণ করি।
আবেগ যদি বলে, আগুনে ঝাঁপ দাও। দিই। দগ্ধ হই। পুড়ি। পোড়াই আবেগ যদি বলে, মরো। মরি। সে মরণেও সুখ। ওই আবেগের অঙ্কুর থেকে আমার জন্ম। সে আছে বলেই বেঁচে আছি।
সে যেদিন থাকবে না, সেদিন আমার এই অর্থহীন তুচ্ছ দেহটাকে দু’হাত মাটির নীচে পুঁতে আসবে সবাই।
তাই আমার আবেগকে আমি আমার প্রাণের চেয়েও বেশী ভালবাসি। সে যদি বলে, ভাঙ্গো। ভাঙ্গি। ভেঙ্গে সব চুরমার করে দিই।
সে যদি বলে, গড়ো। আবার গড়ার কাজে লেগে যাই।
আমি যে তার হাতের পুতুল।

একদিন। সে অনেকদিন আগের কথা। বায়ান্ন সালের একুশে ফেব্রুয়ারী।
সেদিন অপরাহ্ণে, সে আমার মনে এক দুর্জয় সাহসের সঞ্চার করেছিলো। সে বলেছিলো, ওই হিংস্র দানবের মুখোশগুলা খুলে ফেলো। ভেঙ্গে ফেলো ফেরাউনের দূরাশার স্বর্গ। নইলে তোমার কণ্ঠ চিরতরে রুদ্ধ হয়ে যাবে।
আমি তক্ষুনি সাড়া দিলাম।
আর আমার আবেগ আমাকে কারাগারের অন্ধকার গহ্বরে নিক্ষেপ করলো। Continue reading

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →