চাষার ঋণ ও কোঅপারেটিব ক্রেডিট্ – আবুল হুসেন (১৯২৫) Featured

[বাংলা ১৩৩২ সালে ঢাকার ফুলবাড়িয়ায় ইসলামিয়া প্রেসে ছাপানো “বাংলার বলশী” বই থিকা লেখাটা নেয়া হইছে…]
ঋণের দায়ে চাষা ভেঙ্গে পড়ছে। অতিরিক্ত হারে সুদ দিয়ে দিয়ে চাষা ঋণ কিছুতেই পরিশোধ ক’রে উঠতে পারে না। ১ টাকা ধার করে একজন চাষা সারা জীবন মহাজনের ঘরে উসুল ক’রে শোধ করতে পারেনি – তার ছেলে সেই জের টানতে শুরু করেছে। বাংলার পল্লী সমাজে এই চাষার ঋণ একটা দানবের খেলা বলে বোধ হয়। মহাজনের আসন পল্লী সমাজের মাথায় তোলা আছে। মহাজন টাকা না দিলে চাষার মরতে চব্বিশ ঘণ্টাও লাগে না। সে মহাজনের গোলা হ’তে ধান আনছে খাচ্ছে আর চষে খুঁড়ে যা পাচ্ছে তা পিঠে ক’রে নিয়ে মহাজনের গোলা ভরছে। এইরূপে চাষার দুনিয়াটা সত্য সত্য ঘুরছে। বৎসরে এক একবার ঘুরে এসে অমনি মহাজনের প্রাঙ্গণে তার এক আবর্তন পূর্ণ করে। চাষা মহাজনের বাড়ী হ’তে যাত্রা আরম্ভ করে আর মাঠ ঘুরে এসে মহাজনের গোলার মুখে ‘তুচ্ছ দিনের ক্লান্তি মানি’ নিমেষে দূর করে। চাষার সঙ্গে এই মহাজনের এমনি সম্বন্ধ হ’য়েছে যে, কেহই কাহাকেও ছাড়তে পারছে না। চাষা ক্রমেই মহাজনের বাড়ীতে ব’সে যাচ্ছে। মহাজনও সুযোগ বুঝে তার স্কন্ধে চেপে বসছে খুব ভাল ক’রে। চাষা ফিরে বাড়ী যেতে পারছে না। এখন চায়াকে বাড়ী নিতে হ’লে, তার মাঠের ধান নিজের গোলায় উঠাতে হ’বে, মহাজনের গোলার খুঁটি হ’তে তার পায়ের শৃঙ্খল মুক্ত করতে হবে। সে যে নানা উপায়ে সেখানে বাধা পড়েছে। তার জমি ক্ষেতগুলিও মহাজনের বাক্সের মধ্যে আটকান। সে গুলিও বের করে দিতে হবে। মহাজনের সঙ্গে চাষার কোন সম্পর্কই যাতে ক’রে না থাকতে পারে তার একটা ব্যবস্থা করতে হবে।
ভারত গভর্ণমেন্ট এ যে ‘করতে হবে, অনেক দিন পূর্ব্বে বুঝে কো-অপারেটিভ ক্রেডিটের জারি করলেন। অমনি হাজার হাজার কর্মচারী নিযুক্ত হ’য়ে গেল। দেশে দেশে সোসাইটী গঠিত হ’ল। বাংলাদেশে শ্রমন শত শত সোসাইটী হয়েছে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে চাষার ঋণ কমিয়ে দিয়ে তাকে ঋণযুক্ত কর – তাকে মহাজনের গ্রীবা (কবল) হ’তে নিষ্কৃতি ক’রে দেওয়া। আজ প্রায় একুশ বৎসর হ’তে এই অনুষ্ঠান বাংলা দেশের জেলা মহকুমায় বৎসর বৎসর সম্পন্ন হচ্ছে। ব্যাঙ্ক খোলা হয়েছে চাষাকে টাকা দেওয়ার জন্য। ব্যাঙ্কের ডিরেক্টর সেক্রেটারী বড় বড় শিক্ষিত উকিল মোক্তার ইত্যাদি। তাঁরা চাষাকে ঋণ মুক্ত করবার জন্য ব্যবস্থা করতে লেগেছেন। কো-অপারেটিভ ক্রেডিট কাকে বলে সে সম্বন্ধে আমি বলব না। তবে এই চাষার ‘ঋণগ্রস্ত হওয়া’ রোগটাকে সারবার জন্য অল্প সুদে ঋণের যে ব্যবস্থা খোলা হয়েছে তাতে চাষা র রোগ সারছে কি বাড়ছে সে সম্বন্ধে সংক্ষেপে একটু বলে এই প্রবন্ধের উপসংহার করতে চাই। Continue reading