১
পাইপ দুইজন
পয়লা ভার্সনটা, আমার যত দূর মনে পড়ে: একটা যত্ন নিয়া আঁকা পাইপ, নিচে (মক্তব থেকে নেওয়া লেখার ধাঁচে, ইশকুলের ছাত্রর নোটবুকের মলাটে যেম্নে লেখা থাকে, নাইলে জিনিসপত্র চিনানের ক্লাসের শেষে ব্ল্যাকবোর্ডে যেমন ধাঁচে লেখা হয়, এমন বানোয়াট একটা ধাঁচে, কষ্ট করে, মজবুত হাতে) একটা নোট লেখা: “এইটা পাইপ না”।
অন্য ভার্সনটা — মনে হয় একেবারে শেষেরটা — Aube à l’Antipodes-এ গেলে দেখা যাবে। একই পাইপ, একই এজহার, একই হাতের লেখা। কিন্তু বেতরফা [নিরপেক্ষ], সীমাছাড়া, অনির্দিষ্ট জায়গায় পাশাপাশি বসার বদলে লেখা আর তছবির দুইটাই একটা ফ্রেমের ভিত্রে রাখা। ফ্রেমটা নিজে আবার একটা ইজেলের উপ্রে রাখা, ইজেল আবার গিয়া ঘরের মেঝের তক্তাগুলার উপ্রে বসা, তক্তাগুলাও পষ্ট দেখা যাইতেছে। সব কিছুর উপ্রে, ছবির মতই হুবহু একটা পাইপ, কিন্তু বহুত বড়।
পয়লা সংস্করণটা নিজেরই কটকটা সহজামি দিয়া আমরারে অসোয়াস্তিতে ফালায়। দুই নম্বরটা আমরার চোক্ষের সামনে ইচ্ছা করে বানানো আবছালিরে [Ambiguity] বহু গুণ করতে থাকে। ইজেলের গায়ে ঠেস দিয়া কাঠের পায়াগুলার উপ্রে দাঁড়ায়া ফ্রেমটা বুঝাইতেছে যে এইটা একজন পেইন্টারের পেইন্টিং: একটা কামেল কাম, কোনো এক দর্শকের লেইগা লেখাটা-সহ খাড়া কইরা রাখা, লেখাটা ওই পেন্টিংয়ের উপ্রে কমেন্ট করবে বা দর্শকেরে বুঝায়া দিবে। তার পরও এই মাসুম হাতের লেখা যেইটা না ঠিক পেন্টিংটার টাইটেল না আবার এর ছবির কোনো অংশ; শিল্পী হাজির থাকার অন্য কোনো হদিসের গরহাজিরি; গোটা আয়োজনটার খসখসা অবস্থা; মেঝের পাশ পাশ [wide] তক্তা — সব কিছু কইতে চাইতাছে এইটা কোনো ক্লাসরুমের একটা ব্ল্যাকবোর্ড। হয়তো এক্ষনই মুছনির এক মোছা চিত্র আর লেখা দুইটারেই মিটায়ে দিবে। হয়তো “ভুল”টারে (আসলেই পাইপ বাদে অন্য কিছু কিছু একটা এঁকে, নায়লে এইটা আসলেই একটা পাইপ কইয়া এলান করে এমন কোনো বাক্য লেখে) সোধরানের লেইগা কোনো একটা বা অন্যটারে মিটায়ে দিবে। একটা সাময়িক প্যাঁচাল— (“ভুল-লেখালেখি” যেইটা থেকে ভুল-বোঝাবুঝি হইসে বোঝা যায়)-রে ওই এক পোছেই সাদা ধুলা বানায় উড়ায়া দিবে?
কিন্তু এরপরেও এইগুলা সবচেয়ে পাতলা কিসিমের আবছালি; এগুলা বাদে আর কয়েকটা দেখা যাক। পাইপ এখানে দুইটা। নাকি কওয়া উচিত হবে, একই পাইপের দুইটা ড্রয়িং? নাকি আবার একটা পাইপ আর ওই পাইপের ড্রয়িং, আবার নায়লে দুইটা আলাদা পাইপরে রিপ্রেজেন্ট করে এমন আলাদা দুইটা ড্রয়িং? কিংবা দুইটা ড্রয়িং একটা কোনো পাইপরে রিপ্রেজেন্ট করে আরেকটা করে না, নাকি আবার দুইটা ড্রয়িং যার এইটা বা ওইটা কোনোটাই পাইপ বা পাইপরে রিপ্রেজেন্ট করে না? নাকি আবার, কোনো পাইপরে রিপ্রেজেন্ট করার বদলে অন্য একটা ড্রয়িংরে রিপ্রেজেন্ট করে যেই ড্রয়িংটা আবার একটা পাইপরে এত ভালো রিপ্রেজেন্ট করে যে আমি নিজেরে না জিগায়া পারি না: পেন্টিংয়ের মধ্যে লেখাটার সম্পর্ক কিসের সাথে? “ব্ল্যাকবোর্ডে সাজানো লাইনগুলা দেখো — এগুলার উপ্রে যেইটা দেখানো হইতেছে ওইটারে এরা নূন্যতম পাও না হড়কায়ে বা নাফরমানি না করে নকল করতেছে। ভুল কইরো না য্যান; পাইপটা হইলো উপ্রে, এই ছেলেমানুষি হিজিবিজির ভিত্রে না।”
আর নায়লে হয়তো বাক্যটা সোজা ওই বে-সাইজ, ভাসমান, পরম পাইপখানের — মানে পাইপের সহজ খেয়াল বা খোয়াবের দিকে আঙুল দেখায়তেছে। তায়লে আমরার পড়া উচিৎ, “সত্যিকার পাইপ দেখনের লেইগা উপ্রে চাইও না। ওইটা একটা পাইপ স্বপন। পেন্টিংয়ের ভিত্রের পোক্ত এবং পইপই করে আদল দেওয়া চিত্রটারেই সাক্ষাত সত্য কয়া মেনে নিতে হইব।”
এর পরেও ব্যাপারটা আমার চোখে লাগে যে, চিত্রের মধ্যে — ব্ল্যাকবোর্ডে না ক্যানভাসে যে ছাইয়েই হোক গিয়া — যেই পাইপরে রিপ্রেজেন্ট করা হইসে, এই “নিচা” পাইপটারে প্রস্থ (লেখা বাক্যটা, ফ্রেমের উপর আর নিচের বর্ডার দুইটা), লম্বাই (ফ্রেমেরে দুই সাইড, ইজেলের পায়া), আর গভীরতা (মেঝের তক্তার মাঝে মাঝে ফাঁকগুলা) দিয়া দেখার লায়েক একটা স্থানাঙ্কের ভিত্রে শক্ত করে আটকায় দেওয়া আছে। একটা পোক্ত জেল। উল্টা দিকে উঁচা পাইপটার কোনো স্থানাঙ্ক নাই। এর বিশাল সাইজ এর অবস্থানরে অনিশ্চিত করে দেয় (Tombeau des lutteurs-এ দানবীয় আকার সবচেয়ে ভালো সীমানা-বান্ধা জায়গার মধ্যে আটকায়ে যাওয়া থেকে যেই ভাবটা বাইরয়া আসে, এইখানে তার উল্টা ভাবটা পাওয়া যায়)। এই বে-সাইজা পাইপটা কি পেন্টিংটার সামনে আঁকা, যার মানে পেন্টিংটা আরো পেছনে বইসা আছে? নাকি আসলেই এইটা একেবারে ইজেলের বরাবর উপরে লট্কায় আছে, একটা ভাপ বা কুয়াশার মতন, পেন্টিংটা থেকে এই মাত্র আল্গা হইতাছে — পাইপের ধোঁয়ায় (La Bataille de l’Argonne-এ ধোঁয়াসা আর কঠিনের মধ্যে যেমন উপমা আর তফাতের খেল দেখা যায় ওই খেলার নিয়মে) পাইপের আকার, গোলগাল ভাব নিয়া পাইপের বিরোধিতা করতেছে আবার পাইপরে রিপ্রেজেন্টও করে যায়তেছে? অথবা শেষমেষ আমরার ধরে নেওয়া কি উচিত না যে, ওই পাইপটা ইজেল আর পেন্টিংটার থেকে পেছনের দিকে ভাসতেছে, যেমন দেখায়তেছে আসলে তার চেয়ে আরো বিরাট? সেই ক্ষেত্রে ত এর উপড়ায় আসা গভীরতাটা, ক্যানভাস (বা প্যানেল)- ফাটায়া দিতে থাকা ইনার ডাইমেনশনটা আস্তে আস্তে, কোনো রেফারেন্স পয়েন্ট পাওয়া যায় না এমন এক জায়গায়, উইঠা আইসা অসীমতক ফেপে উঠতেছে? Continue reading →