Main menu

আমেরিকা ইজরাইলের সাথে এত গা ঘষাঘষি করে কেন? – নোম চমস্কি (২০২৩) Featured

যদি জিজ্ঞাসা করেন, আমেরিকা কেন ইসরাইলের সাথে এত গা ঘষাঘষি করে? তাহলে বইলা রাখি, এইটার পিছনে ইতিহাস আছে। পুরান দিনের হাওয়ায় গড়া এক কাহিনি। আশলে ইহুদি জায়োনিজম পয়দা হওয়ার অনেক আগেই খ্রিষ্টানি জায়োনিজমের বীজ পোঁতা হইছিল। ইংল্যান্ডের এলিট ঘরানার কাছে এই খ্রিষ্টানি জায়োনিজম ছিল ঈমানের জ্বলন্ত আগুন। বালফুর ডিক্লারেশন* ছিল সেই ঈমানেরই একটা সাচ্চা আমল। ব্রিটিশ সরকার ইহুদিপল্লী বানানোর জন‍্য ফিলিস্তিনের জমিনই বাইছা নিছে কেন? আশলে বাইবেলের কথা স্মরণে আছিল তাদের—বাইবেলের ইশারাই সত্য বইলা মাইনা নিছে তারা। ব্রিটিশ এলিটদের মনমগজ ভরাই ছিল বাইবেল দিয়া। যার কারণে ইহুদি কলোনি বানাইতে সাপোর্ট করছিল ব্রিটিশরা।

আমেরিকায়ও ঠিক এইরকম। উড্রো উইলসন আছিলেন একজন ইমানদার নাসারা, প্রতিদিন বাইবেল পড়তেন তিনি। হ‍্যারি ট্রুমানেরও জীবন আছিল বাইবেল। রুজভেল্টের আমলে হারল্ড ইকিস নামে এক বড় সরকারি এক হোমচোমড়া লোক আছিলেন, তিনি একবার বলছিলেন, ইহুদিরা যে ফিলিস্তিনে ফিরা আসছে—এইটাই নাকি দুনিয়ার ইতিহাসে সবচাইতে বড় ঘটনা। এইটারে বাইবেলের খোয়াবের বাস্তব রূপ বইলা মনে করছিলেন হারল্ড ইকিস। আমেরিকা, ইংল্যান্ড নিজেরাই এক ধরনের ধর্ম মাইনা চলা দেশ। বাইবেলের হুকুমগুলারে তারা বেশিরভাগ সময় খালি কথায় না কাজেও হুবহু মাইনা চলে। এইটা খালি ধর্মের আলাপ না, এইটা কলোনি বানানোরও পায়তারা। এইটা আছিল ইউরোপীয় কলোনির আখেরি মঞ্জিল। খেয়াল কইরা দেখবেন ইজরাইলের সবচাইতে বড় সাপোর্টার খালি আমেরিকা না—অস্ট্রেলিয়া, কানাডা—মানে সবগুলাই ইংল্যান্ডের ইশারায় গইড়া উঠছে । অনেক সময় এইটারে ‘অ্যাংলো-স্ফিয়ার’ বা ইংরেজি সালতানাতের বাকশো বইলাও ডাকা হয়। এইসব আছিল আজব টাইপের জুলুমের দখলদারি (যেইটারে কেতাবি ভাষায় সাম্রাজ্যবাদ বলে)। বৃটিশরা ভারতে যেমন কলোনি বানাইছিল ফিলিস্তিনের ব্যাপারটা কিন্তু ওই রকম না। বরং এইসব ছিল, সরাসরি দখল কইরা ইহুদিদের জন্য রাষ্ট্র বানানো। যেইখানে দখলদাররা আইসা নিজেরা পাড়া, মহল্লা, রাষ্ট্র বানাইছে আর লোকাল মানুষদের একরকম হটায়া দিছে। দক্ষিণ আফ্রিকা বা আলজেরিয়ায় ফরাসিরা যা করছিল কিছুটা তেমন। আশলে খ্রিষ্টানি জায়োনিজমের চিন্তা দিয়া প্রভাবিত মানুষেরাই এইসব দেশ বানাইছিল—যারা ধর্মের নামে আইসা দেশ বানাইতো। এইগুলাই ছিল বড় ধরণের ধর্মীয় কালচারাল ব্যাপার- স্যাপার।

মিডিলইস্টের মানচিত্রে এই অঞ্চলের যে অবস্থান সেইটাও বড়ো একটা কারণ ছিল ফিলিস্তিন দখলের পিছনে। ১৯৪৮ সালে যখন ইজরাইল কায়েম হলো তখন আমেরিকার ভেতরেই নানান মতের ফারাক দেখা দেয়। একদিকে পেন্টাগন যারা হিম্মতের খেলায় ইসরাইলের পাশে দাঁড়াইতে চাইছিল; আরেকদিকে স্টেট ডিপার্টমেন্ট যারা সরাসরি দখলের খেলায় শরিক হইতে রাজি আছিল না। তাদের নজর ছিল সেই লাখ লাখ মুহাজির মানুষের দিকে যাদের ঘরবাড়ি তছনছ হয়ে গিয়েছিল। তারা চাইছিল এই জুলুমের পরে নিজেদের জমিন থেইকা উৎখাত হওয়া মজলুমদের অন্তত একটা ন্যায্য ফয়সালা হোক। Continue reading

ভ্যালুগুলা না থাকলে আপনি আর্টিস্ট হইতে পারবেন না। আর্টিস্টরা কোনো শূন্য জায়গায় থাকে না। – অমৃতা প্রিতম Featured

[অমৃতা প্রিতমের এই ইন্টারভিউটা রমা ঝা নিছিলেন ১৯৮১ সালে। ইনডিয়ান লিটারেচার পত্রিকায় ১৯৮২ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ইস্যুতে ছাপা হইছিল।]

রমা ঝা: অমৃতা, আপনার লেখালেখির শুরুটা কেমনে হইলো? আমি জানি যে এই প্রশ্ন আপনারে বহুবার করা হইসে, কিন্তু কোনো শিল্পীরে জানার জন্যে এইটাই মনে হয় সবচেয়ে ভালো প্রশ্ন। আমি পার্টিশনের আগের পাঞ্জাবে একজন কবি হিসাবে আপনার শুরুর কথাটা কইতেসি। আমার মনে হয়, ওই সময়ের পাঞ্জাবের কনজারভেটিভ কালচারে আপনিই একমাত্র নারী কবি? আপনারে কবিতা লিখতে উৎসাহ দিসে কোন বিষয়টা?

অমৃতা প্রিতম: লেখালেখিটা আমার কাছে নতুন কিছু ছিল না। আমি ছোটবেলাও লেখকদের মাঝেই বাইড়া উঠসি। আমার বাবা নিজেই একজন কবি। উনি সারা রাত ধইরা কবিতা লিখত আর সারাদিন ঘুমাইত। এইটাই উনার প্রতিদিনের লেখার রুটিন ছিল। আমার যখন মাত্র সাড়ে দশ বছর বয়স, তখন মা মারা যায়। তাই বাবা যখন সারাদিন ঘুমাইত, আর আমার কোনো ভাইবোনও ছিল না— আমার একলাই থাকতে হইত। একলা একলা কী আর করব, নিজেরে বইপুস্তকের মাঝে ডুবায়া রাখতাম। আমাদের বাসাভর্তি অনেক বই ছিল।

রমা: কীরকম বই?

অমৃতা: হয় ধর্মীয় বই, আর নয় ইন্ডিয়ান মিথের।

রমা: আপনার প্রথম পড়া বইগুলা কি পাঞ্জাবি, মানে গুরুমুখী ভাষায় ছিল?

অমৃতা: হ্যাঁ, এইরকমই…

রমা: ইংলিশ বইয়ের দেখা কবে পাইলেন?

অমৃতা: ওইটা অনেক পরে।

রমা: আপনার ছোটবেলায় পড়া লেখকদের কয়েকজনের নাম কইতে পারেন?

অমৃতা: যদ্দূর মনে পড়ে, ক্লাসিক্যাল পাঞ্জাবি কবিতার একটা কালেকশন ছিল। ওইটাতে শেখ ফরিদ, শাহ হুসেইন, ওয়ারিস শাহ, পিলু আর হাশেমের লেখাগুলাই সবার আগে পড়সিলাম। আর মিথোলজির বইগুলা সব সংস্কৃত থিকা পাঞ্জাবিতে অনুবাদ করা হইসিল। সবই হাতেলেখা। আমার বাবা বিভিন্ন পণ্ডিতের কাছ থিকা বইগুলা ধার করতেন, এরপর লোক রাইখা ওইগুলা কপি করাইতেন। আমার মনে আছে, বিকালবেলা আমাদের বাসায়…(উনি মনে করতেসিলেন)…এই লেখাগুলা নকল করার সময়, লাল-কালো রঙের কালিতে তখন দারুণ ক্যালিগ্রাফিও আঁকা হইত।

রমা: এইটা কই? গ্রামে? আপনার বাবা কি জমিদার ছিলেন?

অমৃতা: না না, এইটা গ্রামে না। এইটা লাহোর শহরের কথা। আমার বাবা বেশ ভালো বড়লোকই ছিল। জায়গিরদার পরিবার থিকা আসা। বেশ সামন্তবাদী ঘরানার। কিন্তু লাহোরে উনি বেশ বড় একটা বাড়ি বানাইসিলেন। তবে, (মনে হইলো, উনি উনার পরিবারের কোনো গোপন কথা কইতে যাইতেসেন) আমার বাবা কিন্তু চৌদ্দ বছর বয়সে ঘর ছাইড়া সন্ন্যাসী হইসিল— বালক সাধু আরকি। আর ওই সাধু থাকা অবস্থাতেই উনি আমার মায়ের প্রেমে পড়লেন। এইভাবেই কবি হয়ে উঠলেন। Continue reading

এইটা একটা পাইপ না – মিশেল ফুকো (১)


পাইপ দুইজন

পয়লা ভার্সনটা, আমার যত দূর মনে পড়ে: একটা যত্ন নিয়া আঁকা পাইপ, নিচে (মক্তব থেকে নেওয়া লেখার ধাঁচে, ইশকুলের ছাত্রর নোটবুকের মলাটে যেম্নে লেখা থাকে, নাইলে জিনিসপত্র চিনানের ক্লাসের শেষে ব্ল্যাকবোর্ডে যেমন ধাঁচে লেখা হয়, এমন বানোয়াট একটা ধাঁচে, কষ্ট করে, মজবুত হাতে) একটা নোট লেখা: “এইটা পাইপ না”।

অন্য ভার্সনটা — মনে হয় একেবারে শেষেরটা — Aube à l’Antipodes-এ গেলে দেখা যাবে। একই পাইপ, একই এজহার, একই হাতের লেখা। কিন্তু বেতরফা [নিরপেক্ষ], সীমাছাড়া, অনির্দিষ্ট জায়গায় পাশাপাশি বসার বদলে লেখা আর তছবির দুইটাই একটা ফ্রেমের ভিত্রে রাখা। ফ্রেমটা নিজে আবার একটা ইজেলের উপ্রে রাখা, ইজেল আবার গিয়া ঘরের মেঝের তক্তাগুলার উপ্রে বসা, তক্তাগুলাও পষ্ট দেখা যাইতেছে। সব কিছুর উপ্রে, ছবির মতই হুবহু একটা পাইপ, কিন্তু বহুত বড়।

পয়লা সংস্করণটা নিজেরই কটকটা সহজামি দিয়া আমরারে অসোয়াস্তিতে ফালায়। দুই নম্বরটা আমরার চোক্ষের সামনে ইচ্ছা করে বানানো আবছালিরে [Ambiguity] বহু গুণ করতে থাকে। ইজেলের গায়ে ঠেস দিয়া কাঠের পায়াগুলার উপ্রে দাঁড়ায়া ফ্রেমটা বুঝাইতেছে যে এইটা একজন পেইন্টারের পেইন্টিং: একটা কামেল কাম, কোনো এক দর্শকের লেইগা লেখাটা-সহ খাড়া কইরা রাখা, লেখাটা ওই পেন্টিংয়ের উপ্রে কমেন্ট করবে বা দর্শকেরে বুঝায়া দিবে। তার পরও এই মাসুম হাতের লেখা যেইটা না ঠিক পেন্টিংটার টাইটেল না আবার এর ছবির কোনো অংশ; শিল্পী হাজির থাকার অন্য কোনো হদিসের গরহাজিরি; গোটা আয়োজনটার খসখসা অবস্থা; মেঝের পাশ পাশ [wide] তক্তা — সব কিছু কইতে চাইতাছে এইটা কোনো ক্লাসরুমের একটা ব্ল্যাকবোর্ড। হয়তো এক্ষনই মুছনির এক মোছা চিত্র আর লেখা দুইটারেই মিটায়ে দিবে। হয়তো “ভুল”টারে (আসলেই পাইপ বাদে অন্য কিছু কিছু একটা এঁকে, নায়লে এইটা আসলেই একটা পাইপ কইয়া এলান করে এমন কোনো বাক্য লেখে) সোধরানের লেইগা কোনো একটা বা অন্যটারে মিটায়ে দিবে। একটা সাময়িক প্যাঁচাল— (“ভুল-লেখালেখি” যেইটা থেকে ভুল-বোঝাবুঝি হইসে বোঝা যায়)-রে ওই এক পোছেই সাদা ধুলা বানায় উড়ায়া দিবে?

কিন্তু এরপরেও এইগুলা সবচেয়ে পাতলা কিসিমের আবছালি; এগুলা বাদে আর কয়েকটা দেখা যাক। পাইপ এখানে দুইটা। নাকি কওয়া উচিত হবে, একই পাইপের দুইটা ড্রয়িং? নাকি আবার একটা পাইপ আর ওই পাইপের ড্রয়িং, আবার নায়লে দুইটা আলাদা পাইপরে রিপ্রেজেন্ট করে এমন আলাদা দুইটা ড্রয়িং? কিংবা দুইটা ড্রয়িং একটা কোনো পাইপরে রিপ্রেজেন্ট করে আরেকটা করে না, নাকি আবার দুইটা ড্রয়িং যার এইটা বা ওইটা কোনোটাই পাইপ বা পাইপরে রিপ্রেজেন্ট করে না? নাকি আবার, কোনো পাইপরে রিপ্রেজেন্ট করার বদলে অন্য একটা ড্রয়িংরে রিপ্রেজেন্ট করে যেই ড্রয়িংটা আবার একটা পাইপরে এত ভালো রিপ্রেজেন্ট করে যে আমি নিজেরে না জিগায়া পারি না: পেন্টিংয়ের মধ্যে লেখাটার সম্পর্ক কিসের সাথে? “ব্ল্যাকবোর্ডে সাজানো লাইনগুলা দেখো — এগুলার উপ্রে যেইটা দেখানো হইতেছে ওইটারে এরা নূন্যতম পাও না হড়কায়ে বা নাফরমানি না করে নকল করতেছে। ভুল কইরো না য্যান; পাইপটা হইলো উপ্রে, এই ছেলেমানুষি হিজিবিজির ভিত্রে না।”

আর নায়লে হয়তো বাক্যটা সোজা ওই বে-সাইজ, ভাসমান, পরম পাইপখানের — মানে পাইপের সহজ খেয়াল বা খোয়াবের দিকে আঙুল দেখায়তেছে। তায়লে আমরার পড়া উচিৎ, “সত্যিকার পাইপ দেখনের লেইগা উপ্রে চাইও না। ওইটা একটা পাইপ স্বপন। পেন্টিংয়ের ভিত্রের পোক্ত এবং পইপই করে আদল দেওয়া চিত্রটারেই সাক্ষাত সত্য কয়া মেনে নিতে হইব।”

এর পরেও ব্যাপারটা আমার চোখে লাগে যে, চিত্রের মধ্যে — ব্ল্যাকবোর্ডে না ক্যানভাসে যে ছাইয়েই হোক গিয়া — যেই পাইপরে রিপ্রেজেন্ট করা হইসে, এই “নিচা” পাইপটারে প্রস্থ (লেখা বাক্যটা, ফ্রেমের উপর আর নিচের বর্ডার দুইটা), লম্বাই (ফ্রেমেরে দুই সাইড, ইজেলের পায়া), আর গভীরতা (মেঝের তক্তার মাঝে মাঝে ফাঁকগুলা) দিয়া দেখার লায়েক একটা স্থানাঙ্কের ভিত্রে শক্ত করে আটকায় দেওয়া আছে। একটা পোক্ত জেল। উল্টা দিকে উঁচা পাইপটার কোনো স্থানাঙ্ক নাই। এর বিশাল সাইজ এর অবস্থানরে অনিশ্চিত করে দেয় (Tombeau des lutteurs-এ দানবীয় আকার সবচেয়ে ভালো সীমানা-বান্ধা জায়গার মধ্যে আটকায়ে যাওয়া থেকে যেই ভাবটা বাইরয়া আসে, এইখানে তার উল্টা ভাবটা পাওয়া যায়)। এই বে-সাইজা পাইপটা কি পেন্টিংটার সামনে আঁকা, যার মানে পেন্টিংটা আরো পেছনে বইসা আছে? নাকি আসলেই এইটা একেবারে ইজেলের বরাবর উপরে লট্কায় আছে, একটা ভাপ বা কুয়াশার মতন, পেন্টিংটা থেকে এই মাত্র আল্গা হইতাছে — পাইপের ধোঁয়ায় (La Bataille de l’Argonne-এ ধোঁয়াসা আর কঠিনের মধ্যে যেমন উপমা আর তফাতের খেল দেখা যায় ওই খেলার নিয়মে) পাইপের আকার, গোলগাল ভাব নিয়া পাইপের বিরোধিতা করতেছে আবার পাইপরে রিপ্রেজেন্টও করে যায়তেছে? অথবা শেষমেষ আমরার ধরে নেওয়া কি উচিত না যে, ওই পাইপটা ইজেল আর পেন্টিংটার থেকে পেছনের দিকে ভাসতেছে, যেমন দেখায়তেছে আসলে তার চেয়ে আরো বিরাট? সেই ক্ষেত্রে ত এর উপড়ায় আসা গভীরতাটা, ক্যানভাস (বা প্যানেল)- ফাটায়া দিতে থাকা ইনার ডাইমেনশনটা আস্তে আস্তে, কোনো রেফারেন্স পয়েন্ট পাওয়া যায় না এমন এক জায়গায়, উইঠা আইসা অসীমতক ফেপে উঠতেছে? Continue reading

শেষ খুতবা (১৯৭৬) – আবদুল হামিদ খান ভাসানী

[১৯৭৬ সালের ২৮শে নভেম্বরে মক্কায় হজ্জ্বে মওলানা ভাসানী’র এই খুতবা পড়ার কথা ছিল। ১৮ই নভেম্বর হজ্জ্বের জন্য ঢাকা ছাড়ার কথা ছিল উনার। কিন্তু ১৭ই নভেম্বর সন্ধ্যায় মওলানা ভাসানী মারা যান। পরে উনার এই লেখা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রজেক্ট কমিটির চেয়ারম্যান বজলুস সাত্তার ও অন্যতম সদস্য মওলানা মুহিউদ্দিন খান আরবী ভাষায় অনুবাদ কইরা লিফলেট হিসাবে হাজীদের কাছে বিতরণ করেন। ১৯৭৭ সালের ৭ই মে, হক-কথা পত্রিকায় এই লেখা ছাপানো হয়।]

॥ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম ৷৷

প্রিয় ভাই ও বোনেরা,

আজকের এই মহান দিনে পৃথিবীর বিভিন্ন এলাকা হইতে একই মহান উদ্দেশ্যে, একই পোষাকে একই তৌহিদের তারানা মুখে, আল্লাহর একত্ববাদের মহিমা প্রচারার্থে তাঁরই ডাকে সাড়া দিতে আজ আমরা এখানে সমবেত হইয়াছি। আজ সর্বত্র সবারই মুখে একই ধ্বনি উচ্চারিত হইতেছে, “আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবর, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার ওয়ালিল্লাহিল হামদ।” অর্থাৎ আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ, সর্বশ্রেষ্ঠ। আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নাই। তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ এবং যাবতীয় প্রশংসা তাঁহারই।

আজ আর আমাদের মধ্যে আরবী, আজমী, সাদা কাল, প্রাচ্য প্রতীচ্যের কোন ভেদাভেদ নাই। আজকের এই মহান দিনে সব রকমের ভেদাভেদ ও বৈষম্যের অবসান ঘটিয়াছে। আমরা সবাই এক রব্বুল আলামীনের বান্দা আর তিনিই আমাদর সকলের কর্তব্য ও দায়িত্ব পবিত্র কোরআনে নিরূপণ করিয়াছেন : ইন্নামাল মুমেনুনা ইখওয়াতুন ফাসলেহু বায়না আখাওয়াইকুম ।

ভাইসব,
গত দুই শতাব্দীর শোষণ, নির্যাতন, অত্যাচার ও উৎপীড়নের কালোরাত্রি পাড়ি দিয়া আজ আমরা এক নূতন দিনের সুবেহ সাদেক প্রত্যক্ষ করিতেছি। এখন আমরা আর ইহুদী, হুনুদী ও নাসারাদের শাসিত পরমুখাপেক্ষী সম্প্রদায় নই ।

মুসলিম জাতীয়তাবাদের ভিত্তি যদিও তওহীদ, তথাপি ইসলামের শত্রুদের ষড়যন্ত্রে ১৯১৭ সনে খেলাফতের বিলুপ্তির পর খেলাফতের ভৌগোলিক ভিত্তিতে বিশ্বে যে ৪৬টি স্বাধীন সার্বভৌম মুসলিম রাষ্ট্রের উদ্ভব হইয়াছে তাহাদের সীমারেখার ভিতর অবস্থিত আল্লাহ প্রদত্ত তেল ও খনিজ সম্পদের বদৌলতে বর্তমান দুনিয়ার সম্পদের সিংহ ভাগ আজ মুসলমানদের নিয়ন্ত্রণে। এই অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে রবুবিয়াত প্রতিষ্ঠা করার জন্য তৃতীয় বিশ্বের নেতৃত্ব মুসলমানদিগকেই নিতে হইবে। তাই মুসলিম জাহানকে নতুন দায়িত্ববোধে উদ্বুদ্ধ হইয়া মানুষে মানুষে সবরকম অসাম্য ও অনৈক্যের দুর্লঙ্ঘ্য প্রাচীর চূর্ণ বিচুর্ণ করিয়া সকল রকম শোষণ শাসনের পরিসমাপ্তি ঘটাইয়া সারা দুনিয়াতে শান্তি স্থাপনের জন্য রাব্বুল রবুবিয়াতের আদর্শে প্রকৃত সাম্যবাদ কায়েম করিতে হইবে। Continue reading

আমরা কি ক্ষমতার নতুন সিনেমাটিক রিয়েলিটিতে প্রবেশ করতেছি কিনা?

ফিকশন হ্যাজ দা স্ট্রাকচার অফ ট্রুথ- লাঁকা

পর্তুগিজ রাইটার হোসে সারামাগোর বিখ্যাত ডিস্টোপিয়ান উপন্যাস ‘ব্লাইন্ডনেস’। ব্লাইন্ডনেসের প্লট হইতেছে এমন যে, হঠাৎ কোন কারণে কোন এক শহরের লোকজন অন্ধ হইতে থাকে। ধীরে ধীরে সংক্রামক রোগের মত ছড়ায়া পড়ে। কোন কারণ ঠিক বোঝা যায় না। কাইন্ড অফ মহামারীর মত। তবে অন্ধ লোকেরা অন্ধকার দেখে না, বরং সব কিছু সাদা দেখে।

সরকার প্যানিকড হয়ে এইসব লোকজনের কোয়ারিন্টিনের ব্যবস্থা করে। ধীরে ধীরে সোসাইটির যে সাইকি, তা এংজাইটি ইত্যাদিতে ভেঙে পড়তে থাকে। অর্থাৎ না দেখলে, আমরা কোন ট্রাস্টেড রিয়েলিটি তৈরি করতে পারি না।

‘ব্ল্যাক ব্যাগ’ (২০২৫) স্টিফেন সদারবার্গের স্পাই থ্রিলার। পিওর থ্রিলার।

কয়েকজন স্পাই বা সিক্রেট এজেন্টদের মধ্যকার বিট্রেয়ালের ঘটনা। তারা একই এজেন্সিতে কাজ করে। তাদের চাকরির একটা শর্ত হইতেছে, তারা ওই এজেন্সির বাইরে ডেট বা বিয়ে করতে পারবে না। মাইকেল ফেসবেন্ডার এবং কেট ব্লাঞ্চেট ওইরকম দুইজন বিবাহিত স্পাই।

এই রকম পাঁচজন স্পাই বা এজেন্টদের নিয়েই সিনেমা। তারা ডেট বা বিয়ে করলেও একে অপরের কাজকর্ম সবকিছু শেয়ার করতে পারে না। যেইটা শেয়ার করবে না বা করা যাবে না-সেই জায়গায় পার্টনার প্রশ্ন করলে, তারা উত্তর দেয় ‘ব্ল্যাক ব্যাগ’। অর্থাৎ ওই বিষয়ে আর আলাপ নাই।

অর্থাৎ এমন একটা পরিবেশ, যেইখানে আপনি আপনার পার্টনারকে কমপ্লিটলি জানতে পারবেন না। কোনটা আসলে ব্ল্যাক ব্যাগ আর কোনটা তার পার্টনার সুবিধা অনুযায়ী ব্যবহার করতেছে, তা বোঝা মুশকিল। ফলে, ফিলোসোফিকালি এই পরিবেশকে এক রকম রিকগনাইজড ব্লাইন্ডনেস বলতে পারেন। সিনেমা কোন দার্শনিকতার মধ্যে হাঁটে নাই। টিপিক্যাল ভালো থ্রিলার।

যাই হোক, এই পরিবেশ হইতেছে এমন একটা ব্যবস্থা, যেইখানে আপনার পার্টনার সম্পর্কে আপনি আপনার কৌতূহল মেটাইতে পারবেন না।

জানতে পারবেন না। এইরকম পরিস্থিতিতে, আপনি কেমনে সারভাইভ করবেন? Continue reading

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
জীবিকার জন্য একটা চাকরি করি। তবে পড়তে ও লেখতে ভালবাসি। স্পেশালি পাঠক আমি। যা লেখার ফেসবুকেই লেখি। গদ্যই প্রিয়। কিন্তু কোন এক ফাঁকে গত বছর একটা কবিতার বই বের হইছে।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →