মাই ফিয়াঁসে’স ওয়াইফ
বর্তমান (ইংরেজী ২০০০সন পরবর্তী) সময়ে বাংলাভাষায় ছোটগল্প লিখা হয়; শামীমা বিনতে রহমানের একটা নমুনা।
____________________________
ই.
প্রায় ৪ ইঞ্চি পুরু কমলাটে-লাল সেঞ্চুরি পাতার স্তুপ জমে আছে পুরা রাস্তা জুড়ে। আমি হাঁটছি। সেই স্তুপ ঠেলে। পায়ের অ্যাংকলেট ছুঁয়ে ঝরা পাতারা সরে সরে গিয়ে একটা অস্পষ্ট রেখা তৈরি করসে। পাতা বিদ্ধ করে সূর্যের আলো, ঝরা পাতায় কমলা রঙের ওপর এমন ভাবে পড়েছে যে ওটার কমলা ছিঁড়ে ছিটকে পড়সে লাল। এইটা বনভূমি না, রাস্তা; অবশ্য ভেতরটা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা বলে একটা বন-জঙ্গল ফ্লেবার আছে। আমার লং ওভারকোটের দুই পাশে কেউই নাই অর্থাৎ আমি একলাই হাটছি। হাঁটছি এবং খুঁজছি। ইউক্যালিপটাস গাছ। বড় না চারা গাছ। ছোট গাছ। আমার খুব দরকার।[pullquote][AWD_comments][/pullquote]
হাঁটতে হাঁটতে আমার প্রেমিককে মনে পড়সে ভীষণ। স্মৃতিগুলা এত মধুর! আমাদের এত এত গল্প। উম্মাই গড! ৭ দিন! লাস্ট সেভেন ডেইজ, উই আর নট ইন অ্যা সিঙ্গেল কন্টাক্ট। আমি তার ফোন রিসিভ করা বন্ধ করে দিসি। টেক্সটের রিপ্লাই দেই না। কিন্তু আমি আসলে সারাটা দিন, সারাটা রাত, প্রতিক্ষণ তার সঙ্গেই থাকি। আয়নার সঙ্গে আগে যেরকম একলা একলা কথা বলতাম, এখন তার সাথে কথা বলি। অনেক কথা। আমাকে যে অযথাই ভুল বোঝে, সন্দেহ করে, পসেসিভ হয়ে ওঠে, এসব আলাদা আলাদা সিটিংয়ে কত গল্প করি! অনেক সময় বোঝানোর ভঙ্গিতে বলি, এত পসেসিভ হওয়ার কিছু নাই। আমি তোমার ভিত্রে একটু একটু করে বড় হৈতেসি। ডু কেয়ার প্লিজ। ডু কেয়ার।
যে কারণে আমরা কথা বলা বন্ধ করে রাখসি, তা আমার মনে বার বার, এখন, এই আজকেও দৃশ্যকল্পের মতো ভেসে উঠে। দৃশ্যকল্পটা এইরকম: একটা লম্বা টানা, সাদা রঙের টেবিল শুয়ে আছে। এইটা আমার কাছে মনে হয়, প্লেনের ওপর থেকে দেখা সাদা রঙের লম্বা-চওড়া ভেসে থাকা মেঘ। টেবিলের আমার একটু দূরে বসে আছে আমার প্রেমিক, আমি ডান দিকে। আর আমার ঠিক উল্টা দিকে, ওই প্রান্তে চোখ-নাক-ঠোঁট-মূখহীন এক নারী বসে আছে। আমি তারে জীবনে দেখি নাই, তার কোন চেহারা ভাসে না মনে, নাকি আমি তার চেহারা ভাসাতেই চাই না, জানি না, কিন্তু ঘটনাটা এরকমই ফুটে থাকে আমার কল্পে। আমার প্রেমিক বলে উঠে, ইটস ইম্পসিবল টু লিভ য়্যু। ট্রাস্ট মি, আই নেভার ওয়ান্টেড টু লুজ য়্যু’; লাইটটা আসলে স্পট লাইট। আমি তার মুখের দিকে চেয়ে থাকি। মিনিটখানেকের নিরবতা ভেঙ্গে আমি চোখ-নাক-ঠোঁট-মুখ বিহীন নারীকে প্রশ্ন করি, হোয়াট য়্যু ওয়ান্ট? সাদা টেবিল আর স্পট লাইটে তাকে জীবন্ত একটা মাংসপিন্ড ছাড়া আমার কিচ্ছু অনুভব হয় না। সে খাঁ খাঁ গলায় বলে উঠল : আই আ্যাম ওয়েটিং ফর য়্যুর লিভিং’।
এই দৃশ্য যতবার আমি ভাবি, ততবারই প্রবল অনিচ্ছা সত্ত্বেও বার বার রিপিটের মধ্যে থাকি। আর আমার পুরা শরীর জুড়ে বেদনা পাক খেয়ে খেয়ে ঘুরে বেড়াতে থাকে।
জো, মানে জোভিসি কাটিয়া অপেক্ষা করসে, আমার ঘরে। একটা সাবআর্ব এরিয়ায় আমার দুই রুম, এক ব্যালকোনির ছোট্ট ঘর। কোনকিছুই সাজানো-ঘোছানো না, আবার সবকিছুই ঠিকঠাক আছে। ছোট্ট কলম, অনেক কাপড়ের মধ্যে ডুবে থাকা কালো রঙের প্যান্টি অথবা নোট বুক কিচ্ছুই হারাই না, খুঁজে পেতে অবশ্য একটু সময় লাগে। আমার ঘরের ঠিক ওপরের তলায় থাকে জো, ফিজি দেশের ছেলে, এইখানে ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট। অদ্ভুত সব শান্তি আনার তরিকা জানা আছে তার। আমি ইউক্যালিপটাসের শেকড় নিয়ে গেলে পরে ব্লেন্ডারে ওই শিকড় থেকে রস বের করবে জো, তারপর সেটা একটু পানির সাথে মিশায়ে কুকারে দিলে টগবগে গরমে ধোঁয়া ছড়াবে। তারপর সেই ধোঁয়া নাক দিয়ে শ্বাস নেয়ার মতো করে নিতে হবে। কয়েকবার নিলেই আমার ইন্দ্রিয়রা নাকি আমার নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে পুরা।
ঈ
আশীষ একটা আজব ছেলে। বিহার থেকে এইখানে পড়তে আসছে। ঘরে সাপ পালার কারণে ডিপার্টমেন্টের হেড থেকে শুরু করে সবাই ওরে একটু বিশেষ চোখে দেখে। একদিন সে ক্লাসে আসছিল বাম চোখ ফুলায়া। সবাই তাকে প্রশ্ন করছিল, আর সে নির্বিকারের ভঙ্গিতে বলে যাচ্ছিল, তার পালিত সাপ লেজ দিয়া চোখে বাড়ি মেরেছে আর তাই চোখ ফুলে আছে।
খুবিই আজিব! এই ছুটির দিনের ক্যাম্পাসে আশীষ! আমি তাকে এড়াতে বাঁ দিকে টার্ন নিলাম। দেখি সে পিছন থেকে চিল্লাচ্ছে। ‘হোয়ার আর য়্যু গোয়িং?’
আমরা আমাদের পুরাতন চা-পাকোড়ার দোকানে গিয়ে বসলাম। সে তার ব্লগ ওপেন করে দেখাতে থাকলো নতুন আপলোড করা ফটোগ্রাফ। এই চায়ের দোকানটা ক্যাম্পাসের ভিত্রেই, একটা অতি প্রাচিন ভবনের এক তলা। শ্যাওলা, নোনা ধরা ইট, আবার কোথাও রেনোভেশনের ট্রিটমেন্টও একটুখানি বোঝা যায়। মিনিমাম দেড়ফুট পুরু দেয়ালে অনেক পোস্টার, ছবির মধ্যে ম্যাডোনা, লেডি গাগার ছবিও আছে। অল্প আলো। এখানে চা বানাতে কাপ আর চামচের ছন্দ শুনা যায় না। এরা ঢাকার চাইতে একদম ডিফরেন্ট ওয়্যেতে চা বানায়। কেতলির বদলে সসপ্যান টাইপ বিশাল হাড়িতে দুধ গরম করে। তারপর তুলনামূলক ছোট আরেক হাঁড়িতে দুধ-চিনির সাথে চা-পাতা মেশায় আবার চুলায় দেয়। ব্যাপক লম্বা প্রসেস। চায়ের অর্ডার দিয়া বসে থাকতে হয় কিছুক্ষণ। আর তখনই দুই জনের আড্ডা চার পাশে বিস্তৃত হওয়ার সুযোগ পায়। পাশের টেবিলে দেখি নির্মল আর রন। নির্মল দ্য হিন্দুতে সাংবাদিকতা করে আর রন একটা মিউজিক ক্যাফে চালায়। আমি ওদের হাই করলাম, ওরা আমাদের টেবিলে জয়েন করলো। আমরা কেউই এই শহরের না। রন আসছে চণ্ডিগড় থেকে আর নির্মল জলপাইগুঁড়ি থেকে।
এটা এমন এক শহর, যে শহরের বাসিন্দারা ১৮৫৭’র সিপাহি বিদ্রোহের সময়টাকে তাদের গর্ব মনে করে। সেই সময় সিপাহিরা এখন রেসিডেন্সি নামে পরিচিত ব্রিটিশ সেনা কর্মকর্তাদের আবাসন স্থানে হামলা চালায়ে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ঘোষণা করেছিল। সেই গল্প, এখানকার কারো সাথে পরিচিত হলেই সে বলবে আপনাকে। আরো একটা ব্যাপার আপনাকে অবশ্য প্রশ্ন করে জানতে হবে। আপনি দেখবেন, শহরের ভেতর বয়ে চলা গোমতি নদীর ওপর যত জায়গায় ব্রিজ হয়েছে, তত জায়গাতেই ব্রীজের রেলিং অনেক উঁচু আর নেট দিয়া ঢাকা। সাধারণ কৌতুহল থেকে জানতে চাইবেন, এত উঁচু রেলিং আর নেট ক্যান? তখন জানতে পারবেন, এই শহরের ছেলে মেয়েদের একটা ধরন হল, নদীতে লাফ দিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করতে চাওয়া। ভীষণ রকমের বিষন্ন একটা শহর।
আমরা কেউ কথা বলছি না। আশীষ তার আইপ্যাডে একটা মুভি দেখছে, রন হোয়াটস আপে চ্যাট করছে আর নির্মল মোবাইলে ফেইসবুকিংয়ে আছে। আর আমি সবুজ দেখি।
আশীষের বৈশিষ্ট্য হল, সবসময় মনযোগ হায়ার করা বা হায়ারের চেষ্টা করা। ওকে অনায়াশেই ‘আ্যাটেনশন সিকার’ বলা যায়। ও হঠাৎ শব্দ করলো: ওয়াও! খুব জোরে না আস্তেও না, যেন ভেতর থেকেই বের হয়ে আসলো, এমন শুনাল। ওর দিকে তাকালাম, সবাই তাকায়ে থাকলো। আশীষ বলতে থাকলো, প্লিজ, এই দুইটা ডক্যু দেখ, ফ্যান্টাসটিক! আই এম অলসো লেসবিয়ান। হা হা হা।
আমরা ৪জনই একসাথে দেখতে থাকলাম তার আইপ্যাডে। একটা ডক্যু’র নাম ‘রিইকারনেশন অফ মহাত্মা গান্ধি’ আর আরেকটা ‘লেসবিয়ান’; লেসবিয়ানের গল্পটা হলো, একটা পাবে গিয়ে এক ফরটি প্লাস বয়সের লেখক বসে লিকার খাচ্ছে। তখন আরেকটা অল্প বয়সি মেয়ে এসে তার পাশে বসে লিকারের অর্ডার দেয়। লোকটা মেয়েটার সাথে পরিচিত হয় এইভাবে ‘আই এম অ্যা রাইটার। আই রাইট ব্লা ব্লা ব্লা, তার পাবলিকেশনের সংখ্যা, বিষয় ইত্যাদি জানায়। তারপর মেয়েটা বলে, আই এম আ্য লেসবিয়ান। কিভাবে লেসবিয়ান, সেটা সে এক্সপ্লেইন করে সে মেয়েদের শরীর, শরীরের ভঙ্গিমা দেখতে পছন্দ করে। গোসল করার দৃশ্য কল্পনা করতে ভাল্লাগে তার ব্লা ব্লা ব্লা। তো এরপর মেয়েটা লিকার খেয়ে চলে গেল পরে লেখক লোকটার মনে হৈল সে একজন লেসবিয়ান, কারণ তারও ওই মেয়েটার মতোই মেয়েদের দেখতে ভাল্লাগে। সেও গোসল করতে থাকা মেয়ের শরীর কল্পনা করে। এই ডক্যুটা দেখে সবাই বিস্তর ফুর্তি পাইলাম আমরা। ডক্যু দুইটা লেসবিয়ান, গান্ধি, রিকারনেশন ইত্যাদি ট্যাগ নেইমে গল্পের উপকরণের জোগাড় দিতে থাকল। নির্মল আমাকে জিজ্ঞেস করল:
আচ্ছা, বাংলাদেশে লেসবিয়ানের সংখ্যা কেমন?
আছে, কিন্তু পার্সেন্টেইজ বলতে পারবো না। সোসাইটাল প্রেসারে কেউ শেয়ার করতে চায়না আর কি। আর একটু সময় গেলেই হয়ে যাবে। তখন লেসবিয়ান বিয়ের রাইট নিয়াও আন্দোলন হবে, যেইটা আ্যামেরিকায় হৈয়া গেল। ওদের তো গে, লেসবিয়ান বিয়া জায়েজ এখন, না?
শুন লেসবিয়ান, গে, এক্সট্রা মেরিটাল আ্যাফেয়ার, এথিয়েস্ট এই সবকিছুই সোসাইটি বলে একটা জিনিস যে আছে তার স্বীকৃতি জানান দেয়। আমার কি মনে হয় জানো, এই ফেনোমেনাগুলা পুরা দুনিয়াজুড়ে এমন ভাবে বাড়তেসে যে, সোসাইটির নিয়মভাঙ্গা মানুষগুলা এখন আরেকটা সোসাইটি করতে পারে। মানে সংখ্যাটা, অল্প সময়ে ব্যাপক বাড়ছে। ওরা কিন্তু কেউ আর এলিয়েন না, ভার্চুয়ালি কমিউনিকেট, শেয়ার করতে পারতেসে।
তাইলে আমরা এরকম আলাদা আলাদা থাকি ক্যান, আই আ্যাম টকিং এবাউট উই ফোর। আশীষ নির্মলকে জিজ্ঞেস করলো।
হোয়াট? উই আর নট ইন সেইম প্রফেশন। আই আ্যাম প্রফেশনাল, য়্যু আর স্টুডেন্ট।
ওকে,তুমি কি বলবা তুমি এই অবজেকশনাবল সোসাইটিরই বাসিন্দা?
না, আমি তা ভাবতেও চাই না।
কাম অন, তাইলে বল, পাল্টা সোসাইটি হবে ক্যামনে? আমরা তো নিজেরাই নিজেদের কমিউনিক্যাট করি না। ইটস নট সো ইজি ইয়ার। আজকে আমাদের দেখা হৈসে-ইটস আ্যা কোইনসিডেন্স। আমরা কেউ কাউর সরো অর হ্যাপিনেস শেয়ার করি না বা চাই না। বাট ইটস ট্রু, উই ক্যান সিট টুগেদার। উই ক্যান সিট টুগেদার উইদাউট টকিং।
নির্মল আর আশীষ একটানা ভারি ভারি কথা বলতে থাকল আর আমি আনমনা হয়ে ঘুরে বেড়াতে থাকলাম। আমি কিচ্ছু শুনতেসিলাম না। আমার মাথার ভেতর টেবিলের দৃশ্যকল্প ঘুরপাক খেতে থাকল। আমি বার বার নিজেকে সেই দৃশ্য থেকে বাইর করে আনার চেষ্টা করছি, আর বার বারই ব্যর্থ হচ্ছি। এখন আর কোন শব্দ শুনা যাচ্ছে না কল্পনার ভিজ্যুয়ালাইজেশনে। কী অসহ্য! আমার প্রেমিক আমি আর সেই নাক-চোখ-ঠোঁট-মুখহীন মাংসপিন্ড কেবল ঠোঁট নেড়ে যাচ্ছি। উফ! আর সহ্য করতে পারতেসি না। আমি কেঁপে নড়ে উঠলাম। একটু থিতু হয়ে খেয়াল করলাম, ওরা নিজেরাই গল্পে ব্যস্ত।
হেই আমার ছোট ইউক্যালিপটাস গাছ লাগবে কতগুলা। একটু জোরেই বললাম, যাতে সবাই আমার কথা শুনতে পায়।
হোয়াই? চোখ কুঁচকে প্রশ্ন করলো রন।
আই নিড ব্যাডলি, সিরিয়াসলি। আমার আর্জ বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য জো আমাকে যেই প্রসেসটা বলসে, আমি সেটা বলে গেলাম। ‘আমার শান্তি দরকার’।
আমার ক্যাফেতে চলো, অনেক শান্তি লাগবে। আমরা গান শুনবো। ভদকা খাবো। মিউজিক আ্যান্ড ভদকা। গাইজ, লেটস গো টু মাই ক্যাফে। উইল হ্যাভ ফান ।
প্লিজ। আমি সাউট করলাম। আই ডোন্ট নিড আ্যানিথিং। ট্রাস্ট মি। আই নিড ওনলি ইউক্যালিপটাস।
হোয়াট হেপেন্ড? টেল মি, হোয়াট হেপেন্ড। এবার রন অনেক সিরিয়াস। আমি চোখ বাঁ দিকে সরাতে গিয়ে দেখি নির্মল আর আশীষের চোখও আমার দিকে এবং আসকিং লুক। আমার ভীষণ কান্না পেতে থাকলো। আমি কাঁনলাম না এবং খুব বলতে চাইতেছিলাম আমার ভিত্রের অস্থিরতার ঘটনা প্রবাহ। সত্যিই আমি বলতে চাই। কিন্তু বলার মতো সাহস অথবা সহজতা অথবা নিজের প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সত্ত্বার ফারাকের দৈর্ঘ্য প্রকাশ ঘটে যাবার আশঙ্কা, জানিনা কোনটা, আমার ভেতর থেকে কথাদের বের হৈতেই দেয় নাই। অপ্রকাশ্য হয়ে বসে থাকলাম এবং প্রিয় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডাটাকে মেঘলা করে ফেললাম। এটার জন্য অপরাধ বোধও হতে থাকলো।
তখনই আমার মোবাইল ফোনটার রিংটোনের বাজন শুনতে পেলাম। তাড়াতাড়ি ফোন পকেট থেকে বের করতেই মিস কল হয়ে গেল। দেখি ৯টা মিসকল। আমার প্রেমিকের নাম্বার। বাংলাদেশের নাম্বার। আমি তাড়াতাড়ি দাঁড়ায়ে বাইরে বের হয়ে আসলাম ফোন করার জন্য। ফোন করবার আগেই আবার কল। আমি দ্বিধা এবং আনন্দের তীব্র টানাটানি খেয়াল করলাম আমার ভিতর। কোন কিছু না ভেবেই কল রিসিভ করলাম। আমার হ্যালোর ওই পাশে একটা নারী কণ্ঠ। ব্যাপারটা কি-এরকম ভাবতে ভাবতেই নারী কন্ঠটা বললো, ভয় পাচ্ছেন কেন? আমি আপনার প্রেমিকের স্ত্রী। শুনেন একটা কথা শুধু আপনাকে বলি, ওর জামা-কাপড়, আন্ডারওয়্যার পরিস্কার করা থেকে সকালে অফিসে যাওয়ার সময় মুজাটা পরাইয়া জুতাটা পায়ের ভিত্রে আমিই ঢুকাই দেই। ও আমাকে ছেড়ে কোথাও যেতে পারবে না তো। শুনেন, পুরুষরা বউয়ের নামে সার্ভিস প্রোভাইডার খোঁজে, বাংলায় ভালো করে বললেও দাসিই শুনায়। ওরা বউ চায় না তাদের নিজেদের জীবনে…’
আমার প্রেমিকের স্ত্রী, আমার প্রেমিক আমার ফিয়াঁসে, হ্যা পরস্পরের কাছে বাগদত্তা, কমিটমেন্ট বলতে পারেন, একসাথে বাকী জীবন কাটায়ে দেয়ার অঙ্গিকারে আবদ্ধ-সেই আমার প্রেমিকের স্ত্রীর আর কোন কথাই শুনতে ইচ্ছা হৈল না। লাইনটা না কেটেই ফোনটা দূরে একটা ঝোপ মত জঙ্গলে ছুঁড়ে মারলাম।
কিছুক্ষণ একাকী ঘুরলাম, কোন দৃশ্যকল্প ভেতরে দৃশ্যমান নাই। কেবল সমস্ত গা-মাথা জুড়ে আ্যাড্রেনালের দৌড়াদুড়ি টের পাচ্ছি। আবার আড্ডায় ফেরত গেলাম, স্বাভাবিক ভঙ্গিতে।
শামীমা বিনতে রহমান
Latest posts by শামীমা বিনতে রহমান (see all)
- মাই ফিয়াঁসে’স ওয়াইফ - অক্টোবর 2, 2013