বিজ্ঞানমনস্কতা নামের দুশমনের লগে ঝগড়া
আমার মেয়ের পেটের ভিতর একটা বাচ্চা; সেই বাচ্চার বাপের ঠিক নাই, মানে জারজ; তাঁর বন্ধু-বান্ধব-পরিচিতের মাঝে তাঁর আর ইজ্জত থাকবে না, সমাজে আমাদের থাকবে না– যদি জানে সবাই!
আমি বল্লাম, মা, আই লাভ ইউ; এবং তোমার অনার আর আমাদের সবার ইজ্জত বাঁচাইতে তুমি বিষ খাইয়া মর; আমার মাইয়া মরে গেল বিষ খাইয়া।
খুনী কে? লিগ্যাল ইত্যাদি ডেফিনিশন অনুযায়ী এইটা সুইসাইড; আমি সুইসাইডে প্ররোচণাদাতা; কিছু আবেগী কবি/বুদ্ধিজীবী/সমাজবিজ্ঞানী আর এনজিও এইটারে সামাজিক কিলিং বলবে, সুইসাইড হিসাবে মাইনা নিয়াও এবং নিয়াই।
খেয়াল করা দরকার যে, বিষরে খুনী বলবেন না কেউ; কেন? খুন করা তো বিষের কাম; এইটা এতই কন্সট্যান্ট যে এরে দোষ দিয়া লাভ নাই কোন; বরং যেই যেইভাবে এইটা শরীরে ঢোকে সেইগুলিরে ঠেকাবার চেষ্টাই কামের।
সুইসাইডের প্ররোচণা অনেক রকমে হয়:
ক. আমি যেইভাবে দিলাম।
খ. আমাদের বীরশ্রেষ্ঠদের খেয়াল করলে দেখবেন, তাঁরা নিজেদের মরণ বেশ জানত; এইটারে আমরা দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হওয়া বলি; মুক্তিযুদ্ধের গান, বা চরমপত্র টাইপ রেডিও অনুষ্ঠান, জাতীয়তাবাদ, বঙ্গবন্ধুর আগুনে ওয়াজ, ইতিহাসের কতগুলি মরণরে গ্লোরিফাই করা ইত্যাদি তাদেরকে সুসিসাইডে প্ররোচিত করছিলো। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি যারা মরলো তাদের মরণরে গ্লোরিফাই করছি আমরা; এতে কইরা ইতিহাসে অনারেবল পজিশনের লোভে দেশ বা জাতির জন্য মরার আগ্রহ হয়। এইটা সুইসাইডে কালচারাল প্ররোচণা। আমি যেই প্ররোচণা দিছিলাম তার লগে এইটার ফারাক বেশি নাই; দুইটাই কালচারাল প্ররোচণা। আমারটায় জাতীয় লাভ কম, বা ক্ষতিই বেশি; কেননা, ওতে একজন লেবার কমাইতে উৎসাহ দিলাম আমি, আরো আরো লেবারের (মানুষের বাছুর) একটা কারখানা আমার প্ররোচণায় মইরা গেল; এডাম স্মিথ এইটারে বলতে পারেন লেবারের মজুরি বাড়াবার ষড়যন্ত্র।
গ. কালচারবাদী সেক্যুলার জাতীয়তাবাদীরা নিন্দা করে আরেক প্ররোচণার–ধর্মীয় প্ররোচণা; শহীদের ধারনা আছে বিভিন্ন ধর্মে, শহীদের মর্যাদাও আছে বিশেষ। এইটাও আসলে কালচারাল প্ররোচণা; এই শহীদের আইডিয়াই আপাত অধর্মীয় ভাবনায় ইউজ করা হইছে; মজার ব্যাপার হইলো, দেশীয় স্বঘোষিত নাস্তিক আর বিজ্ঞানবাদীরা ওই শহীদ আইডিয়া’র বেশ ভক্ত; এই ভক্তি তাঁরা প্রায়ই সুইসাইডের কালচারাল প্ররোচণা দিতে ব্যয় করেন।
ওকে, এদের কামরে কেন বললাম কালচারাল প্ররোচণা? হুমায়ুন আজাদ বা রাজীব হায়দার বা অভিজিত রায়ের অনুমিত খুনীদের ধর্মান্ধ, জানোয়ার, অমানুষ হিসাবেই দেখছেন এ পক্ষ; বলা হচ্ছে, এরা তো খুন করবেই; হিস্ট্রিক্যালি দেখলে বোঝ যায়, সুইসাইড করতে এদের যেই কালচারাল প্ররোচণা দেওয়া হয় সেইটাও বেশ কার্যকর, মুক্তিযুদ্ধের গান বা জাবি’র সংশপ্তক ভাস্কর্যের মতো আর্ট ততো ঘন প্ররোচণা দিতে পারে কিনা সন্দেহ। এর অর্থ দাঁড়ায়, এই খুনীরা মইরা হইলেও মারবে। এতে করে এরা বিষের মতো একটা কন্সট্যান্ট, খুন করাই তাদের কাম।
তাইলে এই বিষের দিকে কাউকে যারা পাঠায় তারা কি আমার ক্যাটেগরির? মানে, আমার মাইয়ারে যেমন বিষ খাইতে প্ররোচণা দিলাম, সেই একই ক্যাটেগরির প্ররোচণা হবে নাকি ওই খুনী বিষের লক্ষ্য হইয়া ওঠার প্ররোচণা দিলে? আমার প্ররোচণার চাইতে মুক্তিযুদ্ধে সুইসাইড করার প্ররোচণা নিশ্চই বেশি একসেপ্টেবল এই দেশ/জাতির কাছে; কারণ, মুক্তিযুদ্ধে সেইসব সুইসাইড জাতীয় মুক্তির জন্য দরকারি ছিলো; তেমনি ভালো কিছু কারণ পাওয়া যাইতে পারে যাতে করে বলা যাবে যে, ওই খুনী বিষের দিকে অভিজিত রায় বা এমনসব বিজ্ঞানবাদীরে যাইতে প্ররোচণা দেওয়া আমার প্ররোচণার চাইতে ভালো একটা ব্যাপার।
পাওয়া যায় নাকি? হুমায়ুন আজাদ বা অভিজিত রায়ের কাম দেশ বা জাতির উপকার কতটা করলো সেইটা বোঝার ট্রাই করে আমরা এই প্ররোচণা আমার মাইয়ারে বিষ খাবার প্ররোচণার চাইতে ভালো হিসাবে ভাবার চেষ্টা করি।
একটা প্রশ্ন দিয়াই শুরু করি; বিজ্ঞানমনস্কতা বিজ্ঞানের দোস্ত নাকি দুশমন? কিছু উদাহরণ দিয়া বুঝতে চাই এইটা; ড. জাফর ইকবাল একজন বিজ্ঞানমনস্ক লোক; বিজ্ঞানের এক বিশেষ ব্রাঞ্চে ওনার ডক্টরেট আছে; বাট ওনার বিশেষ কোন বিজ্ঞানকাম পাই না আমরা, উনি বিজ্ঞানমনস্ক হইতে এবং বিজ্ঞানমনস্কতা ছড়াইতে থাকেন, বিজ্ঞানের কোন ইনভেনশনে মন না দিয়া; উনি ফিকশন লেখেন, কলাম লেখেন, গণিত অলিম্পিয়াড জাতীয় উৎসব করেন, মানে বিজ্ঞানমনস্কতা করেন, বিজ্ঞান ততো করেন না। ওনার ভাই হুমায়ুন আহমেদও বিজ্ঞানে ডক্টরেট আছিলেন, তিনিও ফিকশনে গেছেন, বিজ্ঞানের কাম নাই কোন তাঁরও, যদিও ভাইর মতো অতো বিজ্ঞানমনস্কও আছিলেন না। ড. জাফর ইকবালের বিজ্ঞানমনস্কতাও অবশ্য বোঝা শক্ত হবে যখন আমরা যুক্তি পাবার চেষ্টা করবো যে, বিজ্ঞানের ঠিক কোন শাখার মনস্কতা দিয়া উনি হুমায়ুনরে ত্যাজ্যভাই করছিলেন যখন হুমায়ুন গুলতেকিনরে তালাক দিয়া শাওনরে বিয়া করে।
দেখা যাইতাছে, বিজ্ঞানমনস্কতা করতে করতে বিজ্ঞান করার টাইম ততো আর পাওয়া যায় না; বিজ্ঞানের ভাগ্য ভালো যে, নিউটন বা ভিঞ্চি বিজ্ঞানমনস্কতা করেন নাই, তাইলে ক্যালকুলাস, অপটিক্স, ডিনামিক্স, প্লেন, ট্যাঙ্ক, ফিজিওলজি করার টাইম পাইতেন না ওনারা; মজার ব্যাপার হইলো এদের ভক্ত পরের কালের দেশি বিজ্ঞানমনস্করা ওনাদের বিজ্ঞানমনস্কতা না করাটারে বা বিজ্ঞান করাটারে নেন নাই আদৌ!
আরো কিছু ইতিহাস দেখি এবার; ইংরাজ ভারতীয় সাম্রাজ্যে নতুন শিক্ষাব্যবস্থা চালু করে; বাট সেইটা ইউরোপের বিজ্ঞান শিক্ষা ছিলো না, ইউরোপের দর্শন, সাহিত্য ইত্যাদি পড়ানো হইছিলো। মানে হইলো, কাপড়ের কল বা স্টিম ইঞ্জিন বা ছাপাখানা বা গোলাবারূদ বানাবার বিদ্যা শিখানো হইতো না, ম্যাথ বা ফিজিক্স বা কেমিস্ট্রি নাই, শেক্সপিয়র আর হিউম আছে মাত্র; পরে কোন এক সময় বিজ্ঞান শিক্ষা শুরু হইলো। কিন্তু আদি সেই সাহিত্য-দর্শন শিক্ষা এতোই পাওয়ারফুল হইয়া এখনো আছে যে, পরে আমরা বিজ্ঞান শেখা শুরু করলেও বিজ্ঞান করা শুরু করতে পারি নাই; বরং সেই সাহিত্য-দর্শনের কন্টিন্যুশন হিসাবে বিজ্ঞানমনস্কতা শুরু করছি, করতেছি। আমাদের বিজ্ঞানের ডক্টরেরা বিজ্ঞানমনস্কতা করেন, বিজ্ঞান করেন না। তাইলে এই বিজ্ঞানমনস্কতা দেশি বিজ্ঞানের দোস্ত হইলো নাকি দুশমন?
অভিজিত রায়ও বিজ্ঞানের লোক; তবে বিজ্ঞানের ততো না, যতোটা বিজ্ঞানমনস্কতার। এঁনার বিজ্ঞানমনস্কতার আরো বৈশিষ্ট্য আছে; ইনি ডারউইন দিবস পালন করছেন এবং ডারউইনের ভাবনা বা বিবর্তনবাদ নিয়া বই লিখে বিজ্ঞানমনস্কতা করছেন। বিবর্তনবাদ কি? একটা হাইপোথিসিস, পর্যাপ্ত প্রুফের অভাবে বিজ্ঞান কখনোই এইটা নিতে পারে নাই এইটা; খুবই বিতর্কিত, বর্ণবাদের দোসর হিসাবেও বেশ পরিচিতি আছে এর। বাংলাদেশে বিজ্ঞানমনস্কতা করতে যাইয়া ওনার ‘মুক্ত’ মন বিবর্তনবাদ করতো।
এই ব্যাপারটা ভালো কইরা বোঝা দরকার; মানুষের উদ্ভব সম্পর্কে হিন্দু, খৃস্ট ও ইসলামধর্মের বক্তব্যের বিপরীতে একটা হাইপোথিসিস দেওয়া ছাড়া বিবর্তনবাদের বিশেষ কোন উপযোগ নাই; এই উপযোগও কেবল বিজ্ঞানমনস্কতার, বিজ্ঞানের কোন কামেই লাগে না এইটা। এই তত্ত্ব দেশের সব মানুষের কাছে পৌঁছাইতে পারলে কী কী যে লাভ তাও বোঝা শক্ত। বিজ্ঞান যারে রিকগনাইজই করে না তার প্রচারে এমনকি বিজ্ঞানমনস্কতারও লাভ হবার কারণ নাই। রিলিজিয়নের বেশ ক্ষতি আছে অবশ্য; মনে হচ্ছে, ভুলসম্ভব বৈজ্ঞানিক হাইপোথিসিস দিয়া হইলেও রিলিজিয়নের গোড়ায় চাপাতির চাইতে ওজনদার কুড়ালের কোপ দেওয়া ছাড়া এই সময়ে দেশে বিবর্তনবাদ প্রচারের কারণ নাই কোন।
ওদিকে বিজ্ঞানমনস্কতা বা বিজ্ঞান সমাজ জীবনের কয়টা প্রশ্নের জবাব দিতে পারে? কথা দিয়া কথা রাখা উচিত কেন–এই প্রশ্নেরই তো কোন জবাব নাই বিজ্ঞানের কাছে! ক্রাইমের ডেফিনিশন আছে বিজ্ঞানের কাছে? আমার ভৌত শরীরে ঘুষি মারলে কেন ঘুষিদাতার শাস্তি হওয়া উচিত সেই প্রশ্নের কী জবাব পদার্থবিদ্যার কাছে; শক্তির নিত্যতার সূত্র মোতাবেক খুনকে কোন ক্রাইম হিসাবেই তো চেনা যায় না! একজন বিজ্ঞানমনস্ক লোকের কাছে কী লজিক আছে মরতে থাকা অভিজিতকে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নেবার?
অভিজিতকে বাঁচাতে হবে কেন, বিজ্ঞান কী বলে? কতটা ক্রুয়েল একটা প্রশ্ন! বিজ্ঞানমনস্কতা কি এনাফ এই প্রশ্নের ক্রুয়েলটি বুঝতে! সমাজ জীবনের এসব সওয়ালের জবাব পাইতে কোন না কোন ধর্মের কাছে যাওয়া লাগে; মানুষের উদ্ভব সম্পর্কে যদি ভুলভালও বলে থাকে ধর্ম তবু মানুষকে কেন বাঁচানো দরকার সেই সওয়ালের জবাব ধর্মই দেয়, বিজ্ঞান বা বিজ্ঞানমনস্কতা নয়; কোন কোন ধর্মীয় ব্যাখ্যা মানুষ খুন করতে বললেও খুন যে আদৌ খারাপ একটা ব্যাপার সেইটাও বলে কোন না কোন ধর্মবোধই!
তবু অভিজিত বা জাফর কিছু ভালো, দেশের মানুষের পরিবর্তনে বিলিভ করেন এঁনারা; হুমায়ুন আজাদ সেইটাও করতেন না। এই দেশের মানুষ যে মধ্যযুগীয় ধর্মান্ধ সে ব্যাপারে মি. আজাদের সংশয় ছিলো না কোন; ওই মধ্যযুগ যে কখনো শেষ হবে না সে ব্যাপারেও সংশয় ছিলো না তাঁর। মজার ব্যাপার হইলো, মানুষের মনে যে পার্মানেন্ট মোহর মাইরা দেওন যায়–এমন যে ধর্মীয় ভাবনা আছে মি. আজাদ অবিকল তেমনভাবেই ভাবতেন যে এই দেশের মানুষ পার্মানেন্টলি ধর্মান্ধ, মধ্যযুগ এইখানে অবিচল! মধ্যুযুগের এই ধারনা আবার এই অঞ্চলের সুলতানী/মোগল আমল বা বৈষ্ণব/সুফি সাহিত্য-চিন্তার যুগ নয়, ওনার মধ্যযুগ ইউরোপের ডাইনী পোড়াবার মধ্যযুগ; এই দেশ এমন এক মধ্যযুগে পার্মানেন্টলি আছে বলে উনি বলতেন যেইটা হিস্ট্রিক্যলি এই দেশে কখনোই আছিলো না, সেইটা আসলে অন্য দেশের অন্যভাবে থাকা!
এসব ভাবে, সুইসাইডে এঁনাদের প্ররোচণায় দেশ বা জাতির কোন উপকার পাইলাম না আমি। ফলে, দেশ/জাতির উপকারের দিক থেকে এঁনাদের প্ররোচণারে আমার প্ররোচণার ক্যাটেগরিরই ভাবতে হইলো আমার। কিন্তু পসিবল ক্ষতির দিকটাও ভাবা দরকার।
ইন্টারেস্টিংলি, আগে আমরা বহু মোসলমান শাসক, পলিটিশিয়ান এবং ইসলাম প্রচারক পাইছি ইতিহাসে, কিন্তু এখনকার অর্থের ‘এক্সট্রিমিস্ট’ পাই নাই বিশেষ। অস্ত্র, যোগাযোগব্যবস্থা ইত্যাদি বহু দিক থেকেই এখনকার এক্সট্রিমিস্টরা যে আধুনিকতারই অবদান–তেমন ভাবেন অনেক ইতিহাসবিদ; তালাল আসাদের শক্ত এবং সাফ কিছু লজিক আছে যদ্দূর মনে পড়ে; এই ব্যাপারটা বা বাংলাদেশে যে এখন স্যুডো নদীয়ার ভাবরসে ডোবা ‘ইসলামী মার্ক্সিজম’ নড়তেছে কোথাও কোথাও তারও গোড়া পাইবেন অনেকটা আলাল আসাদে। লগে এডোয়ার্ড সাঈদও পড়া যাইতে পারে। দেশের চিন্তাজগতের অবস্থা তো খারাপ; আগে প্লেটোর অনুবাদক দার্শনিক বইলা পরিচিত হইছেন, এখন দার্শনিক পদ লইয়া ঘোরা যায় কতক আসাদের বেনামী অনুবাদ চিন্তা দিয়াই।
যাহোক, এইএক্সট্রিমিস্টরা একাট্টা যে হওয়া দরকার সেইটা ফিল করে কেমনে? কী ধরনের কথাবার্তার মাধ্যমে এক্সট্রিমিস্ট রিক্রুটমেন্ট ঘটে? অনুমান করি, আধুনিকতা এবং বিজ্ঞানমনস্কতার বিরামহীন আক্রমণরে সামনে রাইখাই এক্সট্রিমিস্টরা এখন একাট্টা হবার প্রেরণা পাইয়া থাকে। নিউ রিক্রুটরে বোঝানো বেশ সহজ হইয়া ওঠে যে, ইসলাম বিপন্ন আজ! অন্তত যখন যখন তাদের বেশ একাট্টা দেখা যায় তার ঠিক আগেই ধর্মের উপর কোন একটা আক্রমণ হবার ঘটনা পাওয়া যায়।
যদি ধইরা নেই যে, খুন করাই এদের কাম তাইলে এরা এমন এক কন্সট্যান্ট খুনী হইয়া ওঠে যে সেইটা এদের বিষ ক্যাটেগরির খুনী বানাইয়া ফেলে; এমনকি ধরা পড়া বা নিজেদের মরণরে আদৌ কেয়ার না কইরা এঁরা আরো যাইতে থাকে বিষ ক্যাটেগরির দিকে। তাইলে বিজ্ঞান না কইরা বেশি বেশি বিজ্ঞানমনস্কতা করার মধ্য দিয়া মি. (ডক্টরও) আজাদ বা ড. জাফর বা মি. অভিজিত একে-অপরে বা অন্যভাবে প্ররোচিত হইয়া সুইসাইডের দিকে গেছেন এবং তাদের বিজ্ঞানমনস্কতা দিয়া আরো আরো বাংলা পড়া মানুষরে সুইসাইডে প্ররোচণা দিয়া যাইতাছেন।
বিপরীতে, বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকা ছোট ছোট বিষকে একাট্টা হবার, বংশবিস্তার করার, প্লান কইরা আক্রমণ করার প্রেরণা দিয়া যাইতাছেন। এমন প্রেরণা দিয়া যাওয়া কখনো কখনো দরকারিও হইতে পারে; যেমন একাত্তরে উপায় আছিলো না, মুক্তির জন্য “…রক্ত আরো দেব…” এমনভাবে সুইসাইডে প্ররোচণা না দিলে বাংলাদেশ রাষ্ট্র হইতেই পারতো না মে বি! একাত্তরে আরেকটা জিনিসও খেয়াল করতে পারি আমরা; তখন নাস্তিক-ধর্মবিদ্বেষী-বিজ্ঞানমনস্ক কম আছিলো না, কিন্তু শেখ মুজিব নামের একজন আন্তরিক মোসলমানের ডাকের ভূমিকাই সবচে বেশি বাংলাদেশ রাষ্ট্রের তৈরিতে! বাঙালিরে সুইসাইড করার সেই ডাক নিশ্চই পাকিস্তানীদের প্রেরণা দিছিলো ২৫ মার্চের রাতের আক্রমণে; কিন্তু আমরা সেই ডাক পজিটিভ হিসাবেই দেখবো; কারণ, তাতে করেই আমরা পাইলাম বাংলাদেশ, জাতীয় অধীনতা থেকে মুক্তির সম্ভাবনা। কিন্তু ড. জাফর বা অভিজিতের বিজ্ঞানমনস্কতা বিষরে যেই প্রেরণা এবং আরো বহুজনরে সুইসাইডের প্ররোচণা দিয়া যাইতাছে তা আমাদের কোন কামেই লাগছে না।
এর ভিতর দিয়া আমরা দেশের বিপুল মানুষকে ঘৃণা এবং অবজ্ঞা করা শিখছি মাত্র, বিজ্ঞান করার দরকার মনেই পড়তে পারছে না আমাদের, আমরা ঐ ঘৃণাতেই তৃপ্তি পাইতে পারতাছি। কিছু দুঃখও হয় অবশ্য; মি. আজাদ যেমন দুঃখ করেন,
যে তুমি ফোটাও ফুল বনে বনে গন্ধভরপুর-
সে তুমি কেমন ক’রে, বাঙলা , সে তুমি কেমন ক’রে
দিকে দিকে জন্ম দিচ্ছো পালেপালে শুয়োরকুকুর ?
(হুমায়ুন আজাদ।। যে তুমি ফোটাও ফুল)।
আজাদ সাহেব ইয়াহিয়া খানের মতোই মাটি পাইলেই খুশি মনে হচ্ছে, মানুষগুলি না থাকলেই ভালো; দেশের তাবৎ মানুষেরে ‘শুয়োরকুকুর’ বলে গালি দিলে কী লাভ হবে আমাদের? উপমান শুয়োর বা কুকুরেই বা কী লাভ! বরং এইভাবে উপমান হইয়া ওঠাই তো অবমাননাকর! ফলে অমন অমন বিজ্ঞানমনস্কতায় কোন পার্সোনাল বা জাতীয় উপকার পাই না আমরা।
ফলে, সুইসাইডে এঁনাদের এই প্ররোচণা আমি ঠেকাইতে চাই; ওনাদের জাতীয় নায়ক হইয়া ওঠা অনুমোদন করতে পারি না আমি; আমি এই হত্যাকে ক্রসফায়ার বা চাপাতি দিয়া বিশ্বজিত হত্যা বা বিজ্ঞানমনস্ক উৎসবমুখর গণপিটুনিতে খুন হওয়া পেট্রোলবোমা মারা লোকটার মরণের লগে মিলাইয়া ফেলতে চাই। লেখার সুতায় আমার গোত্রের লোক হওয়ায় আমার বাড়তি দুঃখ হবে, ওনারা কেউ খুনী নন ওই পেট্রোলবোমা মারা লোকটার মতো সে কারণে আমার বেশি খারাপ লাগবে ওনাদের মরণে, কিন্তু সেই দুঃখ আমি দেখাবো না কাউরে। কারণ আমি চাই না ইতিহাসে ওনাদের কনফার্ম পজিটিভ পজিশন তৈরি হচ্ছে আর সেইটা দেইখা আরো আরো দেশি মানুষ সুইসাইডে প্ররোচিত হৌক, শিখুক দেশি মানুষরে ঘৃণা আর অবজ্ঞা করা, বিষের উৎপাদনে অবিরাম প্রেরণা দিয়া যাইতে থাক, এখনো যে বিষ হয় নাই তাদেরকে বিষ হবার উৎসাহ দিয়ে যাক।
বরং আগ্রহ এবং বিনয় নিয়া আমি আলাপ করবো দেশের মানুষের লগে, আমি ধর্ম, বিজ্ঞান বা সাহিত্য বা সমাজতত্ত্ব বা দর্শন–যখন যেটা লাগে সেইটা দিয়া ওয়াজ করে যাবো কেন মানুষের জীবনের উদ্দেশ্য হতে পারে না খুন করা, কেন বিষের মতো একাগ্র লক্ষ্য থাকতে পারে না মানুষের। আমি ওনাদের নায়ক হতে দিমু না। আরো আরো খুনের মতো এই খুনেও স্টেটের শাসকদের ফেইল্যুরের সমালোচনা করবো আমি; আমি আরো বুঝবো, এ তো খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার এই শাসনে যেইখানে কিনা এই শাসক নিজেই মহাখুনী।
আমার পাসপোর্ট নাই; মাচুপিচু বা খাজুরাহো ইত্যাদি দুই-চারটা জায়গা ভিজিট করতে মন চায়, এর বেশি বিদেশের প্রতি কোন লোভ নাই আমার। কিন্তু বিদেশে যাইতে হয় অনেকেরই, মেডিক্যল থেকে যৌন-অ্যাডভেঞ্চার–বহু কারণেই। বাংলাদেশরে যারা বাংলাস্তান বা তালেবানি বলছেন তাঁরা আসলে কী করছেন সেইটা খেয়াল রাইখেন প্লিজ; আপনাদের তৈরি এই ইমেজ দিয়া যখন আপনের নাম দেইখা আপনারে তালেবান হিসাবে ট্রিট করবে হিথরো এয়ারপোর্ট তখন আপনারই কিন্তু প্রতিবাদ করতে হবে; আপনাকেই বলতে হবে, মোসলমানমাত্রই তালেবান নয়, আপনি বাংলাদেশের সিটিজেন, বিভিন্নস্তানের নন। যা ছোট ছোট এবং বিচ্ছিন্ন তারে একাট্টা বড়ো কইরা তুলবেন না প্লিজ– আপনার বিজ্ঞানমনস্কতার ঝাড়ু দিয়া কুড়াইয়া কুড়াইয়া; আমি তা হতেও দিতে পারি না, যতটা পারি ঠেকাবো।
ঢাকা।। ২৭-২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫
রক মনু
Latest posts by রক মনু (see all)
- হিস্ট্রিওগেরাফি এন্ড পলিটিকেল লয়ালটি - অক্টোবর 18, 2024
- খলিফা হইয়া ওঠা - সেপ্টেম্বর 2, 2024
- আমাদের নিয়ত এবং বাংলাদেশের ফিউচার - আগস্ট 25, 2024