সামান্যের লগে সহবত হবে নাকি জোনায়েদ সাকির?
[pullquote][AWD_comments][/pullquote] যেন ছাগল বা পাখি বা টিকটিকির বলাবলিরে বুলি বলা যাইতে পারে, বাট মানুষ এক হামবড়া স্পেসিস, তার বলাবলিরে কইতে হবে ভাষা; সুপিরিয়টির এই কনসাসনেস লইয়া আমজনতার সামান্যের রাজনীতি কতটা করা যায়? অন্তত এই সময়ে, যখন আর আর স্পেসিসরে মানুষ মজলুম বানাইয়া রাখছে, এবং তাতে সামান্য মানুষ আর গাছ বা জমির লগে তার পীরিত মেসমার হইয়া যাইতাছে; কেবল বড়ো বড়ো মানুষেরে সামান্যে নামাইয়া আনলেই বাঁচা যাইবে না আর, হামবড়া মানুষেরেই করে তোলা দরকার সামান্য স্পেসিস।
আর আর স্পেসিসের তুলনায় গরিব মানুষের ওই হামবড়া ভাব কম, তারা কইতে পারে, “এক দেশের বুলি, আরেক দেশের গালি।”; পোলামাইয়ার কথা বলা শুরুরে তারা বলতে পারে “বুলি ফোটা”, তাতে পোলামাইয়া ছাগলের বাচ্চা হইয়া যায় না।
ফলে ইংরাজিতে যারে ‘ল্যাঙ্গুয়েজ’ বলে তারে বাংলায় কইতে ‘ভাষ’ ধাতুর কাছে যাওয়া লাগতে পারে না সামান্যের রাজনীতির; সামান্যের রাজনীতি এরে জনতার আওয়াজে বলবে ‘বুলি’, সে সইরা আইবে হামবড়া মানুষের থেকে দূরে; কেননা সে করে সামান্যের রাজনীতি।
বাংলাদেশে সামান্যের রাজনীতি যারা করেন তারা এখনো ওই হামবড়া ‘ভাষা’য় থাকেন, কেন থাকেন?
বাংলাদেশে হামবড়াভাব বোঝা কিছু কঠিন, এই সময়ে; একটা বড়ো কারণ হইলো, পুরানা হামবড়াভাব এখনকার সোশিও-কালচারাল কনটেক্সটে মনে হইতে থাকে নিম্নবর্গ, সামান্যের রাজনীতির দোস্ত। যেমন, লালন; উনি কইলেন আক্ষেপ কইরা, “পাবে সামান্যে কি তার দেখা?”, তারপর উনি ‘অসামান্য’ হইয়া উঠলেন, মানুষেরে গালি দিলেন ‘কানা’ বইলা। এখন আর এগুলি খেয়াল করতে পারি না আমরা, সোশিও -কালচারাল পাওয়ার-ডিনামিক্সে মনোযোগ দিয়া কালচারাল স্টাডিজ করি আমরা, কইরা বই লিখি, নাম দেই “কানার হাটবাজার”। এই নামের ভিতর দিয়া আমাদের জ্ঞানে কতক পোস্ট-মডার্ন ইনডেফিনিটির দাবি বা ইনভেনশন করা যাইতে পারে ট্রাই করলে, বাট একই সাথে এইটা আমাদের পলিটিক্যল গোল ডিটারমাইন করাটা ইম্পসিবল কইরা তোলে পুরাই; আর লালনের সেই হামবড়াভাব থাকতেই থাকে।
এই সময়ে প্লুরাল পশ্চিমের দাবড়ানিতে লালনরে মনে হইতে থাকে সামান্যের ইন্টেলেকচুয়াল, বাট নতুন জালিম আইছে বইলা পুরানা বামুন জালিমের ঐ হামবড়া রুচি দিয়া সামান্যে ঘেন্না করা শেখা ছাড়া কিছু কি পাবার আছে সামান্যের রাজনীতির?
এই হামবড়াভাব চিনতে না পারায় আমরা পোস্ট-কলোনিয়াল হইতে যাইয়া কট্টর জাতীয়তাবাদীর বেশি কিছু হইতে পারতাছি না; আমরা রিলিজিয়নরে শাস্ত্র-কেতাবে ঢুকাইয়া ফেলছি পুরা বা বাংলা-পীরিত দিয়া বাংলারে মারতাছি; বাংলা কি হওয়া উচিত সেইটা খুঁজতে থাকি ২০০/৫০০ বছর আগের বাংলায়, এখন যেই জিন্দা মানুষ আছে চারপাশে তারে দেখার দরকার দেখতেই পারতাছি না; আমজনতা ‘মোবাইল’ কইতে থাকবে, বাট আমরা তারে লিখবো ‘মুঠোফোন’, তারা বলতাছে ‘লেবার’, আমরা কইবো ‘শ্রমিক’, তারা বলতাছে, ‘আমরা বানাই, কাম করি।’, আমরা কইবো, ‘না, আপনারা কর্মী, কাজ করছেন, নির্মাণ করছেন।’ কেননা, আমাদের হামবড়া বড়ো বড়োরা ব্যাকরণ বানাইয়া রাইখা গেছেন, বাংলায় ইংরাজি শব্দ পাইলেই সংস্কৃতমূলক অনুবাদ করবা, লোকসমাজের শব্দগুলি কুরুচিতে ভরা, ছোটলোক কাম আর কামাই বলতে চাইবে, তোমরা ওগুলি লিখবা না, তোমরা লিখবা-বলবা ‘কাজ, ভালো হয় যদি বলো কার্য, কামাই বলবা না, বলবা উপার্জন।
আমাদের সামান্যেরা বলবে, ড্রাইভার, হেলপার, ‘ওস্তাদ, ক্লিয়ার’ বা গার্মেন্টস, সামান্যের রাজনীতি যদি কইতে থাকে চালক, সাহায্যকারী, ‘গুরু, পরিষ্কার’ বা পোশাকশিল্প তাইলে এরা কি আর সামান্যের রাজনীতি করতাছেন আদৌ?
সামান্যের রাজনীতি বক্তৃতা দিয়া যায়, সামান্যে শুনতে চায় ওয়াজ-কখনো হয়তো বক্তিমা; সামান্যের রাজনীতি আহ্বান জানাইতে থাকে, সামান্যে দাওয়াতের ডাকের মালুম করতে পারে না! সামান্যের রাজনীতি ‘বুক টান টান করে’ খাড়াইতে কয়, সামান্য সব মাইয়ার শরম করে; সামান্যের রাজনীতি রণসঙ্গীত গাইয়া সামান্যের গান-বাজনা করার ঢেকুর তোলে; সামান্যের রাজনীতি ২১ ফেব্রুয়ারিরে বাংলা-পীরিতের বাইরে নিয়া লড়াইয়ের ইতিহাস বানাইতে পারে নাই, তাই সেই সামান্যের রাজনীতি যখন ফুল লইয়া বাঙালির হামবড়া শহীদ মিনারে যাইতে থাকে মান্দি আর মারমা আর বিহারী আর আর আরেরা তখন নিজ নিজ বুলিতে কসমের মিনিং বুঝে নিতে থাকে।
এইবারে, ভোটাভুটি থেকে দূরে থাকা সামান্যের রাজনীতির বাইরে আসছেন জোনায়েদ সাকি; উনি ঢাকার মেয়র ইলেকশনে খাড়াইছেন; ওনার লেখাজোখায় সামান্যের দরবারে যাবার কসম আছে, বাট সেইটা আছে অসামান্যের ভাষায়, সামান্যের বুলিতে নিজের তরজমা করতে কি রাজি হইবেন উনি এইবার? না হইলে ওনার সামান্যের রাজনীতি কি সামান্যের দেখা পাইবে?
২৯-৩০ মার্চ ২০১৫
রক মনু
Latest posts by রক মনু (see all)
- ‘শোনার বাংলা’র এছথেটিক দলা - নভেম্বর 8, 2024
- হিস্ট্রিওগেরাফি এন্ড পলিটিকেল লয়ালটি - অক্টোবর 18, 2024
- খলিফা হইয়া ওঠা - সেপ্টেম্বর 2, 2024