সিলেক্টেড টেক্সট: ‘আত্মস্মৃতি’ – আবু জাফর শামসুদ্দীন (১)
আবু জাফর শামসুদ্দীন (১৯১১ – ১৯৮৯) উনার জীবনকাহিনি লিখছেন ‘আত্মস্মৃতি’ নামে বইয়ে। প্রথম খন্ড ছাপা হইছিল ১৯৮৯–তে আর দ্বিতীয় খন্ড ১৯৯০-এ। পরে দুইটা বই একসাথে কইরা ‘সাহিত্য প্রকাশ’ ২০০৫–এ ‘অখন্ড সংস্করণ’ নামে একটা বই ছাপাইছে। এই পোস্টের টেক্সটগুলি ওই বই থিকা নেয়া।[pullquote][AWD_comments][/pullquote]
বইয়ের শুরুতেই উনি বলতেছিলেন, যেই সময়ের কথা না, বরং যেই সময়ে বলা হইতেছে সেইটা বেশি ইর্ম্পটেন্ট i; ১৯৮৬ সালে ১৯২০-৪০ এর যেই কথা উনি বলতেছেল, সেইটা আসলে ১৯২০-৪০ এর ভাবনা না, ১৯৮৬ সালের ভাবনাই বেশি। উনার নৈতিক, সেক্যুলার পারসপেক্টিভ থিকাই উনি ঘটনার কথা বলতেছেন। কিন্তু ঘটনাগুলি আর সেইটাই থাকে নাই আসলে; ভাষা ইটসেলফ কিছু জিনিস ইনসার্ট করতে পারে যেইটা রাইটারের লেখার বাইরের একটা ব্যাপার। দুইটা মিলাইয়াই এই ঘটনাগুলি আছে এইখানে।
এর বাইরেও, এই টেক্সটটা অথনেটিক হিস্ট্রিক্যাল কোন ডকুমেন্ট না, বরং একটা পারসোনাল পারসপেক্টিভ। উনি যা যা ইর্ম্পটেন্ট ভাবছেন, সেইগুলি বলছেন। সেইখান থিকা যা যা ইন্টারেস্টিং মনে হইছে, সেইগুলি আলাদা কইরা রাখতে চাইছি এইখানে। পেইজ নাম্বার ফলো কইরা রাখা হইছে; মানে, যেইটা উনি আগে বলছেন সেইটা আগেই রাখা হইছে। শিরোনামগুলি টেক্সটের ভিতর থিকা বাছাই করা রাখা হইছে, উনি আলাদা কোন শিরোনাম ইউজ করেন নাই। এমনিতে তিনটা পর্ব আছে প্রথম খন্ডে – আমার পাঠশালার দিনগুলি (প. ১১ – ১১২), বৃহত্তর ভারতে (প. ১১৩ – ২০১), পাকিস্তানে (প. ২০২ – ৩৪২) আর দ্বিতীয় খন্ডের নাম সংগ্রাম ও জয় (প. ৩৪৩ – ৬২৪)।
এখন এই টেক্সটগুলির অনেক রকমের রিডিং হইতে পারে। রিডিংয়ের সময় ঘটনা ঘটার টাইমটা মনে রাখতে পারলে সুবিধা হওয়ার কথা। হ্যাপি রিডিং!
ই.হা.
______________________
নাসিরউদ্দিন আহমদ
গ্রামের মুসলমানদের মধ্যে দু’জন যুবক ১৯২০ বা ১৯২১ সালে মেট্রিক পাস করেন। ওরাই ছিলেন মুসলমান পাড়ার প্রথম মেট্রিকুলেট। ওদের একজনের বিদ্যাশিক্ষার কাহিনী এখনও মনে পড়ে। তাঁর নাম নাসিরউদ্দিন আহমদ। তিনি তখন চার মাইল দূরে অবস্থিত কালীগঞ্জ হাই স্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্র। একদিন বেলা দশটা এগারোটা দিকে তিনি বাবার কাছে উপস্থিত হন। তাঁর ডান কি বা ঠিক মনে নেই, হাতের বাজুতে কামড়ের দাগ। দাঁত চামড়া ভেদ করে মাংসে প্রবেশ করেছে। নাসিরউদ্দিন জানালেন, বড় ভাই জহরউদ্দিন তাঁকে কামড়েছে। একটু দূরে অন্য পাড়ায় বাড়ি। বাবার কাছে এসেছেন বিচারের দাবিতে। চাষী পরিবার। পিতা নেই। বড় ভাই এবং ছোট ভাই মাঠে হালচাষের কাজ করেন। মেজো ভাই হালচাষ ছেড়ে লেখাপড়া করছে কেন বড় ভাইয়ের বিচারে এটা তার অপরাধ। দেবরের জন্য স্কুলের ভাত রেঁধে দেয় কেন এ অপরাধেবড় ভাই তার বউকেও প্রায়ই মারধর করতেন। বাবা বড় ভাই জহরউদ্দীন এবং পাড়া-প্রতিবেশীদের ডাকিয়েছিলেন। বিচারের রায় কি হয়েছিল আজ আর মনে নেই। কিন্তু এটা মনে আছে যে বাবা নাসিরউদ্দীনকে বলেছিলেন, ও বাড়িতে তোমার লেখাপড়া হবে না; তুমি আমার বাড়িতে থাকো এবং ওদের দু’জনকে (আমি এবং আমার ছোট ভাই) কিছু কিছু দেখাও-শোনাও (পড়াও)। নাসিরউদ্দীন সাহেবের কাছেই আমার ইংরেজি শিক্ষা শুরু হয়। আমাদের বাড়ি হতেই তিনি ম্যাট্রিক পরীক্ষা দেন এবং ম্যাট্রিক পাশ করার পর তিনি চাকরির খোঁজে কলকাতা চলে যান। সেখানে তিনি ক্যালকাটা সোসাইটি ফর দ্য প্রটেকশন অব ক্রয়েলটি টু এ্যানিমেলস সংক্ষেপে সি.এস.পি.সি.এ. তে সাব-ইন্সপেক্টরের চাকরি পান। শুনেছি ঐ চাকরিতে বিস্তর উপরি রোজগার ছিল। তিরিশের দশকে তিনি চাকরি হারান বা ছেড়ে দেন। দেশে ফিরে তিনি বলদা স্টেটে নায়েবির চাকরি নেন। যুদ্ধের সময় তিনি হোম গার্ডের ক্যাপ্টেন হন। তাঁর সঙ্গে থানার গভীর যোগসূত্র ছিল। ইউনিয়ন বোর্ডের সদস্যও তিনি নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৫২ সালে আমাদের গ্রামেও সাম্প্রদায়িক হাঙ্গামা ছড়িয়ে পড়ে। গ্রামের একজন গরিব গোয়ালা রাত্রিকালে নিহত হয়। সে দই বেচতো। ধুতির কোঁচড়ে নাকি তার মূলধন তিনশ’ টাকা ছিল। আমি তখন ঢাকায় সাংবাদিকতা করি। দাঙ্গার সংবাদ পেয়ে বাড়িতে গিয়ে শুনেছিলাম নায়েব নাসিরউদ্দীন সাহেব নাকি স্ব-গ্রাম এবং পার্শ্ববর্তী গ্রামের নিরক্ষর সাধারণ মুসলমানদের লুটপাটের কাজে উৎসাহিত করেছিলেন। নাসিরউদ্দীন আহমেদ ১৯৫২ সালের এক রাত্রিতে স্বগৃহে আহাররত অবস্থায় আততায়ীর ছুরিকাঘাতে নিহত হন। তিনি ছিলেন আমার ছেলেবেলার শিক্ষক। রাত্রি প্রভাতের প্রথম আলো তাঁর কাছেই প্রথম পেয়েছিলাম। তিনি অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে পড়াতেন। কর্মজীবনে জনস্বার্থের ক্ষেত্রে প্রবল মতভেদ সত্ত্বেও আমি তাঁর প্রতি কখনও অশ্রদ্ধা প্রদর্শন করি নি। তাঁর কথা যখনই স্মরণ করি তখনই মনে প্রশ্ন জাগে, তিনি তো ছিলেন সাধারণ খেটে-খাওয়া পরিবারের সন্তান। নিপীড়িত জনগণের বন্ধু হওয়াই তাঁর পক্ষে স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু তা না হয়ে হলেন বিপরীত চরিত্রের লোক। কেন এমন হলো? তা হলে কি প্রচলিত অর্থে সামাজিক-রাজনৈতিক পদ্ধতি এবং তার সঙ্গে সঙ্গতিপুর্ন শিক্ষা ব্যবস্থাই মানব চরিত্র গঠন করে? প্রচলিত ধর্মও প্রকৃতপক্ষে প্রচলিত পদ্ধতির সহযোগী? প্রচলিত পদ্ধতির বিরুদ্ধে সামাজিক বিদ্রোহ এবং নতুন ধর্ম বা দার্শনিক পদ্ধতির যুগপৎ উদ্ভব একটি ঐতিহাসিক সত্য। বলাবাহুল্য, অন্যদের মতো তিনিও নামাজ-রোজা করতেন।
(প. ২০ – ২১)
বেনজীর আহমদ
আমাদের বাল্যকালে ব্রিটিশবিরোধী টেরোরিজম বা সন্ত্রাসবাদ ছিল বেশ প্রবল। কাজ চালানোর জন্য অর্থের প্রয়োজন। রাত্রিনিশীথে সুদখোর মহাজন জালেম ধনী জমিদার তালুকদারদের বাড়িতে সশস্ত্র অভিযান চালিয়ে সন্ত্রাসবাদীরা দেশমাতৃকার সেবার জন্য অর্থ সংগ্রহ করতেন। সন্ত্রাসবাদীদের প্রায় সকলেই ছিলেন হিন্দু। আমার জানামতে আমাদের অঞ্চলে একমাত্র ব্যতিক্রম ছিলেন পরবর্তীকালে কবিরূপে খ্যাত বেনজীর আহমদ। গ্রামবাসীরা ডাকাতিকে ডাকাতিই বলতো এবং ডাকাত কে বলতো ডাকাত। সন্ত্রাসবাদীরা অর্থ সংগ্রহের ব্যাপারে হিন্দু-মুসলিম ভেদাভেদ করতেন না। তবে কিনা শুধু জালেম হলে চলতো না, ধনীও হওয়া চাই। যার বাড়িতে হানা দিলে বিশ-তিরিশ হাজার বা লাখ টাকা পাওয়া যাবে এমন মুসলমানের সংখ্যা ছিল খুবই কম। কাজেই মুসলমানদের বাড়িতে ডাকাতিও হতো কম। গ্রামবাসীদের মুখে আমি এখনও এমন কথা শুনি নি যে, মুসলমানের বাড়িতে ডাকাতি করেছে হিন্দু ডাকাত অথবা হিন্দু বাড়িতে ডাকাতি করেছে মুসলমান ডাকাত।
সন তারিখটা ঠিক মনে নেই। তবে ১৯২০ সাল বা তার পরবর্তী দু’তিন বছরের যে-কোনো বছরের ঘটনা। বেনজীর আহমদ বড় রকমের স্বদেশী ডাকাতি করেছিলেন ডেমরা গ্রামের রূপচান্দ নাথ নামক জনৈক সুদখোর মহাজনের বাড়িতে। যতদূর মনে পড়ছে আমি সেদিন ডেমরা ছিলাম। হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে গ্রামবাসীরা বেনজীর আহমদ এবং তাঁর দলকে ঘিরে ফেলেছিল। লুটের এক লাখ টাকার মধ্যে কাঁচা টাকার তোড়া ছিল ত্রিশটি অর্থাৎ তিরিশ হাজার রুপোর টাকা। বেনজীর আহমদ টাকাগুলো ছড়িয়ে দেন। সমবেত লোকজনের লোলুপ দৃষ্টি সেদিকে আকৃষ্ট হয়। বেনজীর আহমদ ও তাঁর দল সেই সুযোগে বাকি সত্তর হাজার টাকা নিয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। তবে এটা ঠিক যে, স্বদেশী ডাকাত অর্থাৎ সন্ত্রাসবাদীদের প্রতি জনসাধারণের রোমান্টিক আকর্ষণ ছিল। ওরা বিষয়টাকে সহানুভূতির চোখে দেখতো। সন্ত্রাসবাদীর গুলিতে ইংরেজ মরলে জনসাধারণ খুশি হতো। ডাকাতির টাকা ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ব্যবহৃত হচ্ছে না-সন্ত্রাসবাদীদের অধিকাংশই ছিলেন ব্রহ্মচারীদের মতো অনাসক্ত-দেশকে স্বাধীন করার কাজে ব্যয় হচ্ছে, সম্ভবত এটাই ছিল সহানুভূতির প্রধান কারণ। অবচেতন মনে হয়তো আরো একটি ভাব সক্রিয় ছিল। জালেম ধনীর জাতধর্ম নেই, যেমন নেই শ্রেণী স্বার্থান্ধ শাসক শ্রেণীর অনুপার্জিত ধনে ধনীর ধন কমেছে, ওপরওয়ালার আগেই ওদের শাস্তি দিচ্ছে মানুষ-এ বাস্তবতাও সম্ভবত সাধারণ মানুষের অবচেতন মনে আনন্দ দিয়ে থাকবে। ব্রিটিশ রাজের প্রতিনিধিত্ব করতো থানা পুলিশ। থানা এবং তার পরেই জমিদারের কাছারি ছিল সকল প্রকার জুলুম ও নির্যাতনের কেন্দ্রস্থল। থানার সঙ্গে স্থানীয় জালেমদের গভীর যোগসূত্র ছিল।
(প. ৩১ – ৩২)
জিন পরী
অল্প বয়সে প্রায়ক্ষেত্রে নাবালিকা অবস্থায় মেয়েদের বিয়ে দেয়া হতো যুবকদের সঙ্গে। প্রথম রাত্রির অভিজ্ঞতা সম্ভবত অপ্রাপ্তবয়স্কা বধূর মনে ভীতির সঞ্চার করতো। ভূত পেতনি জিন পরীর দৌরাত্ম্যটা ছিল এই বধূদের ওপর সবচেয়ে বেশি। সরষে পড়া, তাবিজ, পানি পড়া প্রভৃতিতে কাজ না হলে জ্বলন্ত মরিচের ধোঁয়ায় ঘর আচ্ছন্ন করে দুষ্ট জিন তাড়ানো হতো। ঠাণ্ডার মা নাম্নী একটি বালিকার কথা মনে পড়ে। তিরিশ-বত্রিশ বছর বয়স্ক এক যুবকের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। মেয়েটি একদিন দুপুরে সম্পূর্ণ উলঙ্গ অবস্থায় স্বামীগৃহ হতে ছুটে এসে আমাদের বাড়ির উঠোনের কোণের জাম্বুরা গাছের আগায় চড়ে বসে। অভিভাবক পিতা, ভ্রাতা এবং স্ত্রী নামক সম্পত্তির মালিক স্বামী বহু কষ্টে তাকে নামিয়েছিল। নামাবার পর সকলে মিলে তাকে পিটাতে পিটাতে বাড়ি নিয়ে যায়। আজো সেই নৃশংসতার দৃশ্য মনে হলে সর্বাঙ্গ শিউরে ওঠে। তাকে দুষ্ট জিনের আসর হতে মুক্ত করা সম্ভব হয় নি। সে মাঝে মাঝে অজ্ঞান হয়ে পড়তো। দাঁত কপাটি লাগতো। ঐ অবস্থায় ঠান্ডার মা’র মৃত্যু হয়।
(প. ৪০)
খাইনি
একটি ঘটনার কথা অল্প অল্প মনে পড়ে। জয়দেবপুর রাজপরিবারের সঙ্গে আত্মীয়তাসূত্রে আবদ্ধ এক ব্রাহ্মণ যুবক এক মুসলমান চাষীর যুবতী পত্নীর সঙ্গে অবৈধ প্রণয়ে লিপ্ত হয়। টাকাকড়ি পেয়ে লোকটি তাঁর স্ত্রীকে তালাক দেয়। ব্রাহ্মণ যুবক ধর্মান্তরিত হয়ে তাঁকে বিয়ে করে। সেকালে জয়দেবপুরের মতো হিন্দু-প্রধান জায়গায় বসবাস করা বোধ করি তাঁর পক্ষে নিরাপদ ছিল না। তাছাড়া পৈতৃক সম্পত্তির অধিকার হতেও সে বঞ্চিত হয়। সে দীন মোহাম্মদ নাম গ্রহণ করে তাঁর মুসলমান পত্নীকে নিয়ে আমাদের গ্রামে চলে আসে। গ্রামবাসী মুসলমানগণ মহাখুশি। একটি পরিবার তাঁকে ভিটের জায়গা দান করে। গ্রামবাসীগণ চাঁদা তুলে এই দম্পতির জন্য ঘর তুলে দেয়। দীন মোহাম্মদ নও-মুসলিমরূপে সয়ারে (সফরে) বেরোত। এটাই ছিল তাঁর জীবিকা নির্বাহের একমাত্র পেশা। সপ্তাহ-দু’সপ্তাহ অন্তর সে ভিক্ষালব্ধ টাকাকড়ি ধানচাল প্রভৃতি নিয়ে ঘরে ফিরতো।
অবৈধ প্রণয়ে লিপ্ত হওয়া বোধ করি মহিলার এক দুরারোগ্য ব্যাধিতে পরিণত হয়ে গিয়েছিল। স্বামীর অনুপস্থিতকালে মহিলার ঘরে বিবাহিত-অবিবাহিত নির্বিশেষে প্রচুর লোক সমাগম হতো। এমনকি পিতা-পুত্র উভয়কে প্রণয় বিতরণেও তার কুণ্ঠা ছিল না। বিষয়টা সবাই জানতো। মহিলা অচিরে ‘খাইনি’ পদবি লাভ করলো। খাইনির ঘরে যত খুশি ফ্রি তামাক টানা চলতো। বোধ করি এজন্যই তাকে কেউ কিছু বলতো না।
গ্রামে তখনও অবস্থা-ব্যবস্থায় হিন্দু সমাজ প্রবল। সংখ্যায়ও তারা প্রায় সমান সমান। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক কলহ বা দাঙ্গাহাঙ্গামায় লিপ্ত হওয়ার চিন্তাও করে নি দু’ সম্প্রদায়ের কোনো গোষ্ঠী। জনৈক প্রৌঢ় ব্রাহ্মণও খাইনির ঘরে অভিসারে আসতেন এমন একটা কানাঘুষাও ছিল। ঘূর্ণিঝড়ের দিক নির্ণয় করা কঠিন। ছোটকালে ছোট ছোট ঘূর্ণিবায়ু-আমরা বলতাম বানকুড়ালি দেখেছি। পাক খেতে খেতে শুকনো পাতা উল্টিয়ে নিয়ে যেতো। নদীর স্থানে স্থানে ঘূর্ণাবর্ত দেখা যায়। আশপাশে যা পায় তাই টেনে এনে শুষে নেয় ঘূর্ণমান জল। ঘূর্ণি বায়ু উড়ায়। ঘূর্ণাবার্ত ডুবায়। বিচিত্র মানবজীবন। একই মানুষের জীবনে অসংখ্য রকমের যে আকর্ষণ-বিপ্রকর্ষণ তার লেখাজোখা নেই। দু’তিন বছর খাইনির ঘরে প্রণয় লেনদেনের খেলা অবিরাম চলছিল। সহসা একদিন দেখা গেল মূল খেলোয়াড় দীন মোহাম্মদ খাঁ ক্রীড়াস্থল হতে উধাও। শুনলাম, সে তার জন্মস্থান জয়দেবপুরে ফিরে গেছে এবং প্রায়শ্চিত্ত করে পুনরায় হিন্দু হয়েছে। কিন্তু তার জীবন সঙ্গীতে তালমাত্রা ফিরে আসে নি। কয়েক বছরের মধ্যে এক রাত্রিনিশীথে সে গুপ্তঘাতকের হাতে নিহত হয়। খাইনি এক দিনমজুর মুসলমান যুবককে নিয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। আজ ওরা কেউ পৃথিবীতে নেই। কিন্তু ওরা যে অলিখিত ইতিহাস রচনা করে গেছে, অল্প বিস্তর অদলবদল হয়ে আজও পৃথিবীর সর্বত্র তার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। কখনও হচ্ছে প্রহসন, কখনও বিয়োগান্ত।
(প. ৪১ – ৪২)
মামুদ আলী বেপারি
রেহানী খতের দায়ে যে পরিবারটির জমিজমা নিলাম হয়েছিল, তাদেরও বাড়িভিটা হতে উৎখাত করা হয় নি। এই পরিবারের বুড়ো মামুদ আলী ব্যাপারি ছিলেন অদ্ভুত চরিত্রের লোক। যৌবনে নাকি তিনি ছিলেন বড় বড় নৌকোর মালিক পাট ব্যাপারি। রেলি ব্রাদার্স কোম্পানিতে তিনি পাট দিতেন। তাকে আমি দেখেছি কুষ্ঠরোগীরূপে। হাত-পার আঙুল পড়ে গিয়েছিল। পায়ে ন্যাকড়া পেঁচিয়ে লাঠিভর করে হাঁটতেন তিনি। তার বগলে থাকতো ন্যাকড়া পেঁচানো কাগজপত্রের বস্তানি। এই বস্তানি বগলে প্রায় রোজ সকালে মামুদ আলী ব্যাপারি বাবার কাছে আসতেন। কাগজের বস্তানি খুলে বাবার সামনে ধরে জিজ্ঞাসা করতেন, এই গা মিয়া কইন-তো মামলায় আমি জিতুম না। এই গা মিয়া ছিল তার মুখের লফজ। বাবা তাকে বহু কষ্টে বিদায় করতেন। কুষ্ঠরোগী মামুদ আলী ব্যাপারির দুই বিবাহিত পুত্র ছিল। বড় জন মাথায় কলস নিয়ে বাড়ি বাড়ি গুড় ফেরি করতো। বড়মা মরিচা গুড় পছন্দ করতেন। পাটের মৌসুমে সে পাট ব্যাপারও করতো। সেকালে ফড়ে পাট ব্যাপারিরা দলবদ্ধভাবে ব্যবসা চালাতো। এক এক দলে ৮/১০ জনকে দেখেছি। নানা গ্রাম হতে পাট কিনে এনে ওরা সেই পাট উঠোনের ওপর বিছিয়ে তার ওপর প্রথমে পানি এবং পরে ধুলো ছিটাতো। পরে পরিপাটি করে আশি তোলার মাপে দশ সেরি আঁটি বাঁধতো। গৃহস্থের বাড়ি থেকে আনতো ৮৫ তোলার মাপে। গৃহস্থ বাড়ি হতে কিনে আনার সময় পাথরও ব্যবহার করতো না, এক ধরনের কাঠদন্ডের অপেক্ষাকৃত সরু অগ্রভাগ ছিদ্র করে তার মধ্যে দড়ি বাঁধতো। নিচে ছিল লোহার বাঁকানো আল, ওপরে বাড়তি দড়ি। ঐ আলে পাট ঝুলিয়ে পাঁচ সের দশ সের করে মাপা হতো। এখানেও ফাঁকি ছিল। এ ধরনের মাপদন্ডকে বলা হত ডাডি। এভাবে বিক্রেতা গৃহস্থ এবং গঞ্জের খরিদ্দার উভয়কে প্রতারণার ব্যাপারটা অন্যান্য প্রচলিত প্রথার মতোই বহাল ছিল। গঞ্জের বড় খরিদ্দার অবশ্য ঠকতো না। তারা বাড়তি ওজনের পাট কয়ালদের সহায়তায় কমিয়ে দিতো। লোকসানটা বহন করতে হতো গৃহস্থকেই। ফড়ে ব্যাপারিরা বড় বড় নৌকো বোঝাই করে গঞ্জে নিয়ে যেতো পাট, ফিরে আসতো অনেক রাতে। মামুদ আলী ব্যাপারির কনিষ্ঠ পুত্র পাটের মৌসুমে তন্দুর রুটি বানিয়ে বাড়ি বাড়ি ফেরি করতো। বিনিময়ে নিতো পাট। পাড়ার ছেলেমেয়েদের কাছে তন্দুর রুটি ছিলো প্রিয় খাদ্য। অন্য সময়ে সে কাচের চুড়ি, নানা ধরনের ফিতা, কোমরের তাগা-কখনও পান-সুপারি গ্রামে গ্রামে বেচতো। এতেই চলতো ওদের সংসার।
মামুদ আলী ব্যাপারির স্ত্রীবিয়োগ হয়। প্রতিবেশী এক চাষী বড় বড় তিন কন্যা এবং এক শিশুপুত্র রেখে পরলোকগমন করে। ওরা নিঃস্ব ছিল না। ফলের বাগানসহ বাড়ি এবং কয়েক বিঘা চাষের জমিও ছিল। ওদের বিধবা মা কোলের ছেলেটিকে সঙ্গে নিয়ে স্বেচ্ছায় ও সজ্ঞানে কুষ্ঠরোগী মামুদ আলী ব্যাপারিকে দ্বিতীয় স্বামীরূপে গ্রহণ করে। আমার চেয়ে দু’তিন বছরের বড় ঐ ছেলেটির নাম ছিল মোহাম্মদ আলী। সে ছিল ভারি ফুর্তিবাজ। ভালো পুঁথি পরতো, তাস খেলতো। কৈশোরে সে আমার বন্ধু হয়।
(প. ৬১ – ৬২)
জৈবধর্মের প্রেম
ডেমরা থাকাকালে আমার এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা হয়েছিল। গরিব মধ্যবিত্ত ঘরের এক মহিলা প্রেমে পড়েছিলেন। বামন হয়ে চাঁদ ধরতে চেয়েছিলেন তিনি। আমাদের সঙ্গেও তাঁর কী যেন একটা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিল। লাগালাগি গ্রামে ছিলেন একজন অবস্থাপন্ন তালুকদার। দশগ্রামে তাঁর নামডাক। সুশ্রী পুরুষও ছিলেন তিনি। আমিরানায়ও তিনি খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। তাঁর লাল রঙের তাজী ঘোড়াও ছিল। ভদ্রলোকের ঘরে স্ত্রীও ছিল। মহিলা আড়ালে-আবডালে থেকে ভদ্রলোককে দেখে থাকবেন। ঐ দেখাই হলো তাঁর কাল। তিনি একতরফা প্রেমে পড়লেন। অভিভাবকগণ নাকি তাকে বিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি স্বামীর ঘর করলেন না। ফিরে এলেন। আমরা যখন দেখেছি তখন তিনি অর্ধোন্মাদ। কোনো অভিভাবক বেঁচে নেই। মহিলা সুপারিবাগের মধ্যে একটি ছোট কুটিরে একা বাস করতেন। উঠোনটি ছিল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। ঘরের এক পাশে ছোট্ট মাঠ। ধোপ-দুরস্ত শয্যা বালিশ ইত্যাদি। অপরদিকে চুলো, হাঁড়ি-পাতিল, সিকেয় বাসন ও গেলাস। নিজেও অত্যন্ত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতেন।
প্রেমাস্পদ ভদ্রলোকের কাছে নাকি তিনি বহুবার বিয়ের পয়গাম পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু পয়গাম সত্য সত্যই যথাস্থানে পৌঁছত কি না সন্দেহ। মহিলার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তাঁর অন্ন ধ্বংস করাটাই সম্ভবত ছিল পয়গাম বহনকারীদের উদ্দেশ্য। মানবসমাজটাই এমন যে, এখানে পাগলেরও ক্ষমা নেই। শুধু উপহাস্যাস্পদ হয়ে রেহাই পাওয়া যায় না, দণ্ডও দিতে হয়। আমার গ্রামে আমার চেয়ে বয়সে বড় এক বালক নির্বোধ হয়েই জন্মগ্রহণ করেছিল।পাড়ার লোকেরা তাঁকে মগা বারেক ডাকতো। তাঁর ওপর শুধু সমবয়সীরাই নয়, বড়রাও কম অত্যাচার করে নি। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে তাঁর মগামিও বাড়তে থাকে। স্ত্রী-পুরুষ নির্বিশেষে যে-ই তাঁর সামনে পড়তো, তাকেই বলতো আমি তোমারে বিয়া করুম। একবার এক স্থুলকায়া মহিলা বললেন, বিয়া তো করবি, আমারে লইয়া যাইতে পারবি? সে বললো, পারমু। মহিলা তাঁর ঘাড়ে চেপে বসলেন। তাঁর দৌরাত্ম্য যাতে বেড়ে না যায়, সেজন্য বাপ-মা তাঁকে তিন বেলা নিয়মিত আহার্য দিতেন না। ফলে তাঁর গায়ে বলশক্তি কম ছিল। সে পারবে কেন ঐ স্থুলকায়া মহিলাকে বহন করতে। অতিরিক্ত ভারে তাঁর জিব বের হওয়ার অবস্থা। বধূকে নিয়ে বাড়ি যাওয়া হলো না। আমার সামনেই ঘটনাটা ঘটেছিল। খুব হেসেছিলাম। আজ মনে হয় একটা নির্বোধ মানুষের সঙ্গে কি নিষ্ঠুর রসিকতাই না করা হয়েছিল। মগা বারেক অনেক আগেই মরে গেছে। কিন্তু তাঁর বেদনাবিধুর স্মৃতি এখনও বহন করে চলছি।
ডেমরার সেই প্রেমোন্মাদ মহিলা তাঁর প্রেমাস্পদের পক্ষ হতে কোনো সাড়া পান নি। হয়তো সে ভদ্রলোক ঐ মহিলাকে দেখেনও নি কখনও-কোনো খোঁজখবর রাখতেন না। তবু মহিলা আজীবন তাঁর প্রতীক্ষায় ছিলেন। গাছের ডালে দাঁড়কাক এসে বসলো। মহিলা মাথায় ঘোমটা তুলে দিয়ে বলতেন, “এইত তাইন কাউয়া অইয়া আইছেন।” দাঁড়কাকরূপী প্রেমাস্পদের জন্য উঠানে ছিটিয়ে দিতেন খাদ্য সম্ভার। দুষ্ট বালক-বালিকারা খবর দিতো, অমুক দিন তিনি আপনার এখানে আসবেন। মহিলা তাঁর ক্ষুদ্র তহবিল উজাড় করে পোলাও, কোর্মা, ফিরনি, জর্দা রান্না করতেন, ঘরের খাটটি ঝেড়ে-মুছে পাততেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন শয্যা, গিরদা বালিশ প্রভৃতি। তারপর মিয়ার আগমন প্রত্যাশা করতেন। মিয়া আসতেন না, আসতো দুষ্টু ছেলেমেয়েরা। আর আসতো দাঁড়কাক-বেশী মিয়া এবং তার সহচরগণ। আহার্য দু’ভাগে বিভক্ত হতো। প্রথম ভাগ পেতো কাক-শালিক প্রভৃতি পাখিরা। দ্বিতীয় ভাগ উপস্থিত ছেলেমেয়েরা ভাগাভাগি করে খেতো। অল্প অল্প মনে পড়ে, একদিন আমিও সুপারিবাগিচায় ঘেরা ঐ কুটিরে প্রস্তুত খাবারের ভাগ পেয়েছিলাম। মহিলা রীতিমতো নামাজ-রোজা করতেন, পর্দাপুশিদায় থাকতেন। ছোটখাটো মহিলা বেশ সুন্দরীও ছিলেন মনে পড়ে। এই একটি ব্যাপার ছাড়া অন্য কোনো পাগলামি তাঁর ছিল না। অন্তর্জ্বালার দহনে তাঁর ছিপলেছাপলা ছোটখাটো দেহটি ক্রমে ক্রমে কৃশ এবং নিস্তেজ হয়ে পড়ে। মৃত্যুতে সব জ্বালারই অবসান হয়। মহিলার মৃত্যুর কথা মনে নেই। হয়তো আমি তখন ডেমরা ছেড়ে দিয়েছি। কিন্তু ঐ মহিলাকে ভুলতে পারি নি। যখনই স্মরণ হয় মর্মবেদনা অনুভব করি। আমরা কী এক নিষ্ঠুর নাটকে ফেউয়ের ভূমিকায় নিযুক্ত ছিলাম। পরিণত বয়সে ঐ মহিলার শোচনীয় পরিণামের কথা যখনই ভেবেছি তখনই মনে পড়েছে ইয়ুসুফ-জুলেখার প্রেমোপাখ্যানের কথা। জুলেখার প্রেম প্রত্যাখ্যান করেছিলেন ইয়ুসুফ। কিন্তু জুলেখা তাঁকে ভুলতে পারেন নি। ইয়ুসুফ ইয়ুসুফ জপতে জপতে বনবাসিনী হন তিনি। বিরহের তীব্র দহনে যৌবনেই তিনি লোলচর্ম বৃদ্ধায় পরিণত হন। ইয়ুসুফ তখন মিসরের প্রধান উজির। তিনি একদিন রাজকার্জে ঐ পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন। কুটিরে কঙ্কালসার বৃদ্ধাকে দেখে ইয়ুসুফের দয়া হলো। তিনি ঘোড়া হতে নেমে জিজ্ঞাসা করলেন, কি দুঃখ আপনার? আমি কি আপনার কোনো উপকার করতে পারি? জুলেখা নিজ পরিচয় গোপন করে বললেন, আপনি পয়গম্বর, দোয়া করুন আমি যেন আমার হৃত যৌবন ফিরে পাই। ইয়ুসুফ বললেন, তাই হোক। সঙ্গে সঙ্গে জুলেখা মিশরের সেরা সুন্দরীতে পুনরাভির্ভুত হন। তখন ইয়ুসুফের প্রেমের পালা শুরু হলো। জুলেখা প্রত্যাখ্যান করলেন। পুঁথির কাহিনীর বাকি অংশ মনে নেই। কিন্তু ডেমরার সে প্রেমপাগলী মহিলা তাঁর প্রেমাস্পদের সাক্ষাৎ ইহজীবনে পান নি। দু’জনই এখন কবরে। ওদের অস্থিও এখন খুজে পাওয়া যাবে না। লাইলী-মজনুর কাহিনীতে বেহেশতে বিয়ের ব্যাবস্থা আছে। জীবনে যাঁরাদাড়িতে ক্ষুরকাঁচি লাগান নি তাঁরা নাকি ঐ বিয়েতে দাওয়াত পাবেন। ডেমরার ঐ নিরক্ষর মহিলা হয়তো লাইলী-মজনুর কাহিনী শুনে থাকবেন। জামীর ঐ ফার্সি কাব্য তখন মুসলিম সমাজে খুবই জনপ্রিয় ছিল। বেহেশতে মিলনের আশায়ই কি ডেমরার ঐ মহিলা পৃথিবীর অস্থিমাংসময় জীবনকে বরবাদ করলেন-কল্পনার স্বর্গে দিলেন আত্মাহুতি?
পশুর জৈবধর্ম কবে কোন কালে ব্যক্তিকেন্দ্রিক প্রেমে রূপান্তরিত হলো জানি না। হিন্দু পুরাণের একজন বিখ্যাত ঋষির নাম উদ্দালক। তাঁর পুত্রের নাম শ্বেতকেতু। একদিন পিতাপুত্র এক সাথে বসেছিলেন। এমন সময় এক কামাতুর ব্রাহ্মণ এসে পুত্রের সমুখ হতে তাঁর মাতাকে টেনে নিয়ে গিয়ে মৈথুনে প্রবৃত্ত হয়। এতে শ্বেতকেতু অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হওয়াতে পিতা উদ্দালক পুত্রকে বলেন, “হে পুত্র ক্রুদ্ধ হয়ো না, ইহাই সনাতন ধর্ম, গাভীদের ন্যায় স্ত্রীলোকও অরক্ষিতা।” হোমারের কাহিনীতেও আমরা দেখতে পাই, প্যারিসের অন্তঃপুরে এসে মেনেলাউসের পত্নী হেলেনের কোনো হা-হুতাশ নেই। দশ বছরের যুদ্ধ শেষে পুনরায় মেনেলাউসের অন্তঃপুরে প্রবেশ করতেও তাঁর কোনো মানসিক দ্বন্ধ নেই। হোমার চতুর কাহিনীকার। দশ বছর ঘর করা সত্ত্বেও প্যারিসের ঔরসে হেলেনের কোনো সন্তান হয় নি। সন্তান হলে হোমার ঐ সমস্যার কি সমাধান করতেন জানি না। শকুন্তলার কাহিনীতেও প্রেম নেই। শকুন্তলাকে গর্ভবতী করে কালীদাস তাঁর কাহিনীতে নাটকীয় পরিবেশ সৃষ্টি করেন। জৈবধর্মের মধ্যে প্রেমের প্রবেশ মানবেতিহাসে অনেক পরের ঘটনা বলেই মনে হয়। প্রেম মানবসভ্যতার একটি বিশেষ স্তরের ব্যৈক্তিক অনুভুতি এবং এ অনুভুতি হতেই উন্নত মানের আর্টের উদ্ভব। ডেমরার সেই মহিলার স্মৃতি আমার মনকে এখনও অসম্ভব রকম পীড়িত করে বলেই এতোগুলো অবান্তর প্রসঙ্গ টেনে এনে হৃদয়টাকে হালকা করলাম।
(প. ৭১ – ৭৩)
ওস্তাদ মোহাম্মদ হোসেন খসরু
কাজী নজরুল ইসলাম ঢাকা এসেছিলেন ১৯২৬ এবং ১৯২৭ সালে। মুসলিম হলে মুসলিম সাহিত্য সমাজে তাঁকে দেখতে গিয়েছিলাম। তখন এস.এম. হল ছিল বর্তমান মেডিকেল কলেজের ওপর তলায়, নিচে বিশ্ববিদ্যালয়। নিচের তলার একটি বড় কামরায় (সম্ভবত ডাইনিং হলে) অধিবেশন হয়। কিন্তু সেদিন সকালে অধিবেশনে কবি উপস্থিত হতে পারেন নি। তাঁর পরিবর্তে ওস্তাদ মোহাম্মদ হোসেন খসরু (তখন তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বি. এ. অথবা ল ক্লাসের ছাত্র) রবীন্দ্রনাথের ‘দখিন হাওয়ার পথিক হাওয়ায়’ গানটি গেয়ে সভা উদ্বোধন করেছিলেন। খসরু সাহেবের কণ্ঠস্বর এবং পরিবেশন ভঙ্গি ছিল অপূর্ব। এখনও যেন তাঁর সেদিনের কণ্ঠস্বরের রেশটি শুনতে পাই। খসরু সাহেব ছিলেন সেকালের ঢাকা শহরের একজন অত্যন্ত জনপ্রিয় শিল্পী। ঝুলন যাত্রার সময় মদনমোহন বসাক রোডে লালমোহন সাহা শঙ্খনিধির নাটমন্দিরে কলকাতা লক্ষ্ণৌর বাইজিরা গান করতো। এক রাত্রে ওদের ওস্তাদি কালোরাতি শুনছিলাম। অলঙ্কারে, পোশাকে সুসজ্জিতা এক সুন্দরী বাইজি তখন সঙ্গীত বিস্তারে নিমগ্না। রাত প্রায় এগারোটা।এমন সময় দেখলাম লোকজন নাটমন্দিরের আঙিনা ছেড়ে চলে যাচ্ছে। কি সমাচার? শুনলাম বিপরীত দিকের গলিতে খসরু সাহেবের গান হচ্ছে। আমিও সঙ্গ নিলাম। ছোট পার্ক ঘেঁষে গলিটি মৈশুন্ডির ভেতরে প্রবেশ করেছে। গলির সামান্য ভেতরে ডান দিকে এক তলা ছোট দোতলা বাড়ি। যতদুর মনে পড়ছে সেটিই ছিল গলির ভেতরে ডান দিকের প্রথম বাড়ি। খসরু সাহেবের কোনো হিন্দু সহপাঠী সম্ভবত সে বাড়িতে বাস করতো। ঐ এলাকায় কোনো মুসলমানের বাড়ি তখন ছিল না। নিচের তলার একটি কামরায় ফরাশ পাতা হয়েছে। খসরু সাহেবের সম্মুখে পানের বাটা। তিনি হারমোনিয়াম সহযোগে গান করছেন। অন্য একজন তবলা বাজাচ্ছে। রূপসী বাইজির সঙ্গীত ছেড়ে প্রায় সকল লোক চলে এসেছে গলির ভেতরে। কামরায় জায়গা নেই। গলিতে দাঁড়িয়েই বহুক্ষণ তাঁর গান শুনেছিলাম। পরবর্তীকালে তিনি ভারত বিখ্যাত ওস্তাদ হয়েছিলেন। তাঁর সঙ্গে হৃদ্যতা জন্মেছিল। তাঁর কলকাতার বাসা বাড়িতে গান শোনার সুযোগ পেয়েছি। এই অসাধারণ প্রতিভাবান শিল্পী কোনো ঘরানার লোক ছিলেন না। কোনো ওস্তাদের শিষ্য ছিলেন, এমন কথাও শুনি নি তাঁর কাছে। কিছু দিন তিনি লক্ষ্ণৌ ছিলেন। তখন ওস্তাদ মেহেদী হোসেনের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব হয়। তাঁর মুখে মেহেদী হোসেনের নাম অনেকবার শুনেছি। খসরু সাহেবের ক্ষমতা সম্বন্ধে একটি কাহিনী শুনেছিলাম আমার কলকাতা জীবনের বন্ধু এবং কেরানি জীবনের সহকর্মী ভাঙা থানার কাজী আবদুর রশীদ সাহেবের কাছে। ওস্তাদ আবদুল করিম খাঁ নাকি বাদল খাঁর বাড়িতে সঙ্গীতের জলসা বসেছে। শীতকাল। ঘরের জানালা-দরজা ভেজানো ছিল। খসরু সাহেব রাত একটা দেড়টার দিকে খেয়াল শুরু করেন। রাত যখন তিনটে সাড়ে তিনটে তখন সহসা দরজা-জানালাগুলো ফটাফট খুলে গেল। ওস্তাদ আবদুল করিম খাঁ (অথবা বাদল খাঁ) নাকি তখন চিৎকার করে বললেন, বাস্, খতম করো। তখন না কি ধারণা ছিল, এটা অশরীরী জীবদের উপস্থিতির প্রমাণ। সঙ্গীত শিল্পীদের জীবনে নাকি ওটা পরম সফলতার নিদর্শন। খসরু সাহেব বহুদিন হলো পরলোকগমন করেছেন। তাঁর সঙ্গে শেষ দেখা হয়েছিল তাঁর ছোট ভাই ফরিদ সাহেবের সিদ্ধেশ্বরীর বাসায়। তখন তিনি গুরুতর অসুস্থ। খসরু সাহেবকে এখনও ভুলতে পারি নি। গান গাওয়ার সময় তাঁর ওষ্ঠদ্বয়ে একটি মধুর হাসি ফুটে উঠতো। মুখমণ্ডলে দেখা দিতো এক অপূর্ব জ্যোতি। তাঁর হাত বিস্তারের ভঙ্গিটিও ছিল ভারি সুন্দর। তিনিই সম্ভবত প্রথম উচ্চ শিক্ষিত বাঙালি মুসলিম সঙ্গীত ওস্তাদ।
(প. ৮৪ – ৮৫)
বেনজীর আহমদ
সময়টা সম্ভবত ১৯২৭ সালের শেষভাগ অথবা ১৯২৮ সালের প্রথম দিক হবে। আগেই যেমন বলেছি, আমি তখন নাসিরুদ্দীন সরদার লেনের বস্তিতে জায়গির থাকি। সদু খাঁ সাহেবের হোটেলটি তখন ঐ গলিতে। আমি প্রায় দিন সকালে ঐ হোটেলে প্রাতঃক্রিয়া এবং গোসল করতে আসতাম। একদিন সকালে হোটেলে বেশ আলোড়নের সৃষ্টি হয়। আমিও কৌতূহলী হয়ে উঠি। দুটি আলাদা আলাদা দালান নিয়ে হোটেল। তার একটি ছিল গলি হতে ভেতরে প্রবেশের পর বহির্বাটির বড় উঠোনের ডান পাশে। অন্যটি বরাবর সোজা দক্ষিণ দিকে। বহির্বাটির ঐ এক কামরাবিশিষ্ট দালান হতে বাইরে বেরোলেন দাড়ি-গোঁফ কামানো এক সুদর্শন এবং স্বাস্থবান যুবক। প্রায় ছয় ফুট লম্বা এই যুবকের কোমরটি ছিল হরিণের মতো সরু এবং বুক সিংহের বুকের মতো চওড়া। বাঙ্গালির জন্য অস্বাভাবিক রকমের উজ্জ্বল ফর্সা গাত্রবর্ণ যুবকের। মাথার তেলবর্জিত হালকা চুল ব্যাকব্রাশ করা। পরনের ফকফকে ফর্সা সরু পাড় মোটা সুতোর ধুতি, সাদা মোটা টুইলের শার্ট গায়ের রঙের সাথে চমৎকার মানিয়েছে। তাঁর পায়ে ছিল স্যান্ডেল।
আমি তাঁর দিকে বিস্ময়মাখা দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে আছি। কে ইনি? মামলা-মোকদ্দমার লোক হতেই পারে না। এমন সময় কে যেন বললেন, ইনি বেনজীর আহমদ। আগেই উল্লেখ করেছি, ডেমরা গ্রামে থাকাকালেই আমি তাঁর নাম শুনেছিলাম। তিনি ছিলেন দূর সম্পর্কে আমার মামা। মাদ্রাসার কমনরুমে মাসিক নওরোজ আসতো।নওরোজের সম্পাদক হিসেবে শান্তিপুরের কবি মোজাম্মেল হকের পুত্র আফজালুল হক সাহেবের নাম ছিল। মাত্র পাঁচটি সংখ্যা প্রকাশিত হয়ে যাওয়ার পর পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু এরি মধ্যে পত্রিকাটি মুসলিম পাঠকসমাজে প্রবল আলোড়ন সৃষ্টি করে। প্রতি সংখ্যায় কাজী নজরুল ইসলামের এক বা একাধিক রচনা প্রকাশিত হচ্ছিল। নওরোজেই পাঠ করেছিলাম বিদ্রোহী কবির নাটক সারাব্রীজ। এটি অন্য নামে বই আকারে প্রকাশিত হয়। পরে জেনেছিলাম, নওরোজের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন বেনজীর আহমদ, অর্থও যোগাচ্ছিলেন তিনিই।
নোয়াখালীর এক ডাকাতিতে সংযুক্ত থাকার অভিযোগে তিনি কলকাতায় গ্রেফতার হন। গ্রেফতার অবস্থায় হাতকড়া লাগিয়ে যখন তাঁকে গোয়ালন্দ হতে স্টিমারযোগে চাঁদপুর নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তখন তিনি গভীর রাতে প্রহরীদের অসতর্কতার মুহুর্তে চাঁদপুরের কাছাকাছি এক জায়গায় আশ্বিনের পদ্মায় ঝাঁপিয়ে পড়েন। হাতকড়াবদ্ধ অবস্থায় সাঁতার কাটতে কাটতে এক সময় তিনি হাতকড়া খুলে ফেলতে সক্ষম হন। আরো অনেকক্ষণ সাঁতার কাটার পর তিনি অর্ধমৃত অবস্থায় এক চরে অজ্ঞান হয়ে পড়েন। সকালে গ্রামবাসীরা তাঁকে গ্রামে নিয়ে গিয়ে শুশ্রূষা করে ভালো করে। কিন্তু স্থানীয় পুলিশ খবর পেয়ে তাঁকে সেখানে পুনরায় গ্রেফতার করে। তাঁকে নোয়াখালী হাজতে প্রেরণ করা হয়। সরকার পক্ষ তাঁর বিরুদ্ধে নোয়াখালী কোর্টে ডাকাতি ও নরহত্যার অভিযোগ এবং মুন্সিগঞ্জ কোর্টে আত্মহত্যার চেষ্টা করার অভিযোগে মামলা দায়ের করে।
যেদিন সদু খাঁর হোটেল প্রাঙ্গণে আমি তাঁকে প্রথম দেখি সেদিন তিনি নোয়াখালী ডাকাতি কেস হতে জামিনে মুক্ত হয়ে ঢাকা এসেছিলেন অথবা খালাস পেয়ে এসেছিলেন আজ আর সে-কথা মনে নেই। কিন্তু সেদিনের পরেও তিনি প্রায় ঢাকা আসতেন এবং সদু খাঁর হোটেলেই উঠতেন। মুন্সিগঞ্জের তৎকালীন এস.ডি.ও. ছিলেন ফজলুল হক সাহেবের ভাগ্নে এবং জামাতা ওয়াজির আলী সাহেব। তাঁর কোর্টেই ছিল বেনজীর সাহেবের বিরুদ্ধে আত্মহত্যার চেষ্টা করার অভিযোগে আনীত মামলা। এ মামালায় হাজিরা দেয়ার জন্য তাঁকে ঢাকা হয়ে মুন্সিগঞ্জে যেতে হতো। বেনজীর সাহেবের পৈতৃক বাড়ি আড়াইহাজার থানার অন্তর্ভুক্ত ইলুমদি গ্রামে, সেখান হতে মুন্সিগঞ্জ যাওয়ার অন্য কোনো সহজ পথ ছিল না।
এই আসা-যাওয়ার মধ্যেই বেনজীর সাহেবের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠতার জন্ম। তিনি ছিলেন সেকালের মুসলিম তরুণ সমাজের লিজেন্ডারি হিরো-কল্পকথার রবিনহুড। তরুণ মনকে আকৃষ্ট করার অসাধারণ ক্ষমতা ছিল তাঁর। মুসলিম সমাজের একমাত্র রাজনৈতিক সন্ত্রাসবাদী বেনজীর আহমদ ছিলেন নাটকের রোমান্টিক নায়ক। বেনজীর আহমদ সম্বন্ধে আমি দৈনিক সংবাদ পত্রিকার ২০-১২-৮৪ তারিখ এবং তার পরবর্তী কয়েক সংখ্যায় বিস্তারিত লিখেছি। সেটি কখনও পুস্তকাকারে প্রকাশিত হলে পাঠক তাঁরসম্বন্ধে আরো বিস্তারিত জানতে পারবেন। তাছাড়া আমার কলকাতার জীবনে তিনি বহুবার আসবেন। এখানে শুধু তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার পর আমার ঢাকার সংক্ষিপ্ত ছাত্রজীবনের কয়েকটি ঘটনার উল্লেখ করছি। তাঁর ওপর পুলিশের সার্বক্ষণিক নজর ছিল। গ্রামের বাড়িতেও তাঁর ওপর নজর রাখার জন্য ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চের একজন লোক সর্বক্ষণের জন্য নিযুক্ত ছিল। এ অবস্থার মধ্যেও তিনি দমেন নি, তাঁর কাজ তিনি চালিয়ে যাচ্ছিলেন। নিম্নোক্ত ঘটনাগুলো সেই প্রমাণ দেবে।
বেনজীর সাহেব সুযোগ পেলেই আমার সঙ্গে দেশের পরাধীনতা এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের পশ্চাৎপদতার বিষয় আলোচনা করতেন। তিনি বলতেন দেশ স্বাধীন করতে হবে, মুসলিম সমাজকে অজ্ঞানতা, কুসংস্কার এবং দারিদ্র্য থেকে মুক্ত করতে হবে। সর্ববিষয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের সমকক্ষ হতে হবে। এ লক্ষ্য কি উপায়ে পূরণ সম্ভব আমার মোহাবিষ্ট তরুণ মনে সে প্রশ্ন জাগে নি, জাগা স্বাভাবিক ছিল না। আমি তাঁর রিক্রুট হয়ে পড়লাম।
—————
হিন্দু মহাসভার সম্মেলন উপলক্ষে মুদ্রিত প্রচারপত্র এবং ন্যাশনাল মেডিকেল স্কুলের গেটে ঝুলন্ত ব্যানারে দেখলাম নিখিল ভারত হিন্দু মহাসভার নেতা ডক্টর মুঞ্জে এবং এ. সি. কেলকার ঢাকায় আসবেন এবং বক্তৃতা দেবেন। সম্মেলনে বিধর্মীর প্রবেশ নিষিদ্ধ। বেনজীর সাহেব সর্বক্ষন ধুতিশার্ট পরতেন। তাঁর লুঙ্গি ছিলই না। আমাকে বললেন, ধুতি শার্ট পরে চলুন, ওঁরা কি বলে শুনে আসি। আমি মাদ্রাসার ছাত্র; ধুতি ছিল না। ঢাকা কলেজে ভর্তি হয়ে আমি প্রথম ধুতি ক্রয় করি। এক বন্ধুর কাছ থেকে ধুতি যোগাড় করলাম। বিকেলে দু’জনে মিলে সভায় গেলাম। ডক্টর মুঞ্জে এবং কেলকার উভয়েই উগ্র সাম্প্রদায়িক বক্তৃতা করলেন। দু’জনের মধ্যে ঠিক কে আজ এতোকাল পরে মনে করতে পারছি না, কিন্তু দু’জনেরই একজন বলেছিলেন যে, মুসলমানরা যদি এদেশে থাকতে চায় তাহলে হিন্দুর সঙ্গে লীন হয়ে থাকতে হবে, নতুবা সাতশ’ বছর রাজত্ব এবং বসবাসের পর মুসলমানরা স্পেন হতে যেভাবে বিতাড়িত হয়েছিল আমরাও তাদেরকে সেভাবে আরব সাগর পার করে দেবো। তখন বিলেতে চলছে রাউন্ড কনফারেন্স এবং জাতিগত নয় সাম্প্রদায়িক স্বার্থ নিয়ে দরকষাকষি। পাঞ্জাবে চলছে জোর শুদ্ধি আন্দোলন। স্বামী দয়ানন্দ ছিলেন আর্যসমাজ এবং শুদ্ধি আন্দোলনের নেতা। দয়ানন্দের মৃত্যুর পর স্বামী শ্রদ্ধানন্দ ঐ আন্দোলনের নেতা হন। ১৯২৬ সালে আবদুর রশীদ নামক এক ব্যাক্তির ছুরিকাঘাতে তিনি নিহত হলে হিন্দু-মুসলিম সমস্যার দারুন অবনতি ঘটে। কলকাতা এবং ঢাকায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়, যার উল্লেখ উপরে করেছি।
বলাবাহুল্য, হিন্দু মহাসভার সম্মেলনে ঐ উগ্র বক্তৃতা শুনে বেনজীর সাহেব এবং আমি খুবই ক্ষুদ্ধ্ব হই। আমরা সভা শেষ হওয়ার আগেই বেরিয়ে পড়ি এবং সদরঘাটে করোনেশন পার্কে চলে যাই। সেখানে চীনাবাদাম খেয়ে রাত আটটা ন’টার দিকে ফিরে আসার সময় আন্ডাঘরের ময়দানের (বাহাদুর শাহ পার্ক) কাছে পৌঁছে দেখি আতঙ্কগ্রস্ত লোকজনের মধ্যে দৌড়োদৌড়ি ছুটোছুটি শুরু হয়ে গেছে। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লেগে গিয়েছিল কিনা আজ আর তা মনে করতে পারছি না।
(প. ৯৩ – ৯৪, ৯৬ – ৯৭)
টু বি কনটিনিউ…
বাছবিচার
Latest posts by বাছবিচার (see all)
- আমি – জহির রায়হান (১৯৬৭) - অক্টোবর 31, 2024
- (বই থিকা) ঈশ্বর কোটির রঙ্গকৌতুক – কমলকুমার মজুমদার - অক্টোবর 12, 2024
- নজরুলের চিঠি: ফজিলাতুন্নেসা ও নারগিস’কে - জুন 13, 2024