সিলেক্টেড টেক্সট: আত্মস্মৃতি – আবু জাফর শামসুদ্দীন (৩)
এইখানের টেক্সটগুলি পাকিস্তান আমলের কথা (টাইমটা ১৯৪৬ – ১৯৬৪ এইরকম হবে)। ফার্স্ট পার্টে ছিল ব্রিটিশ আমলের কাহিনি, গ্রামে ছিলেন উনি, তারপরে ঢাকায় আসছিলেন; আর সেকেন্ড পার্টে ঢাকা থিকা কলকাতায় যখন হিজরত করলেন, তখনকার কথা। আর এই থার্ড পার্টে যখন পাকিস্তান হইতেছে এবং ঢাকা গ্রো করতেছে – ওই টাইমের কাহিনি। মাইনর কারেক্টার’রা আছেন। মেজর কারেক্টারদের মাইনর ঘটনাগুলিও আছে।
——————————————-
মওলানা শামসুল হুদা
১৯৪৬ সালের নির্বাচনের পুর্বে তৃতীয় এবং সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিলাম গফরগাঁয়ে। গফরগাঁয়ের পাশের গ্রাম পাঁচভাগে মওলানা শামসুল হুদার বাড়ি। তিনি দেওবন্দ মাদ্রাসার আলেম। কৃষক প্রজা আন্দোলন করতেন। জীবনে কখনও মুসলীম লীগ করেন নি। তাঁর দলের নাম ছিল ইমারত পার্টি। পার্টির কাজকর্ম গফরগাঁ অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ ছিল। মওলানা শামসুল হুদাও ছিলেন মওলানা ভাসানীর মতো গফরগাঁ, হোসেনপুর প্রভৃতি অঞ্চলের অপ্রতিদ্বন্দ্বী পীর শুধু নয় একচ্ছত্রাধিপতি। তাঁর বহু মাজেজার কথা সে অঞ্চলে প্রচলিত ছিল।[pullquote][AWD_comments][/pullquote]
গফরগাঁ নির্বাচনী এলাকা হতে মওলানা শামসুল হুদা বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভায় নির্বাচন প্রার্থী। ধর্ম সাম্প্রদায়িক দ্বিজাতিতত্ত্বের ভোট। মুসলিম লীগকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসন ছেড়ে দেয়া যায় না। মওলানা শামসুল হুদা তাঁর নিজ দল ইমারত পার্টির টিকেটে প্রতিদ্বন্দিতা করছিলেন।
মুসলিম লীগ ঐ নির্বাচনী এলাকাটিকে ওয়াটারলুর যুদ্ধক্ষেত্রের গুরুত্ব দেয়। সেখানে তারা দলের সর্বশক্তি নিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নেয়। জনসভার তারিখ ঠিক হলো। বক্তা নিখিল ভারত মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক লিয়াকত আলী খান, স্যার নাজিমুদ্দীন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী প্রমুখ নেতা। ব্যাপক প্রচার আবশ্যক। নির্দিষ্ট তারিখের দু’দিন পুর্বে টাঙ্গাইলের শামসুল হকের (পরবর্তীকালে আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রথম সাধারণ সম্পাদক) নেতৃত্বে ঢাকা হতে ৭০/৮০ জনের একটি ছাত্রদল গফরগাঁ গেল। আজাদ কর্তৃপক্ষ জনসভার রিপোর্ট নেয়ার জন্য আমাকে কলকাতা হতে টেলিফোন করে। পরদিন মিটিং। আমি আগের দিন সকালের ট্রেনে গফরগাঁ রওয়ানা হই। কাওরাইদ স্টেশনে কিছু যাত্রী উঠলেন। তাঁদের মুখে শুনলাম মওলানা শামসুল হুদা সাহেবের কেরামতির কাহিনী। একজন বললেন, এক ব্যক্তি মওলানা সাহেবের নিন্দা করছিল। সেদিনই তার প্রায় পায়খানা বন্ধ হলো এবং পেট ফুলে মারা গেল। গফরগাঁয়ে গিয়ে দেখি রাত্রিযাপনের জায়গা নেই। ডাকবাংলো গিয়াসুদ্দীন পাঠান, আবুল মনসুর আহমদ প্রমুখ ময়মনসিংহের মুসলিম লীগ নেতৃবৃন্দের দখলে। আমার ন্যায় একজন সাধারণ সাংবাদিকের স্থান সেখানে হলো না। ঢাকা হতে আগত ছাত্রদের জন্য মাঠে খড়ের ডেরা উঠেছিল। ছাত্র নেতারা তাঁদের সঙ্গে আমার থাকার ব্যবস্থা করলেন। গফরগাঁ হতে হোসেনপুর সাত মাইলের কাঁচা সড়ক পথ। সেদিন বিকেলে হোসেনপুরের হাট। ঢাকার ছাত্র বাহিনী প্রচারের জন্য হোসেনপুর রওয়ানা হলো। শামসুল হক বললেন আপনিও চলুন। আমি বললাম, আমি এতটা রাস্তা হেঁটে যেতে পারবো না, সাইকেল হলে যেতে পারি। ওঁরা একটি সাইকেল জোগাড় করে দিলেন। আমার অনেক আগেই ছাত্রদল মিছিল করে নানা ধ্বনি করতে করতে রওয়ানা হয়ে গেল। পরে আমি একা সাইকেলে রওয়ানা হলাম। পথে হাঁটুরেদের অতিক্রম করছি। কেউ কোনো জিজ্ঞাসাবাদ করলেন না। হোসেনপুর পুরাতন ব্রহ্মপুত্রের ওপারে। খেয়া নৌকোটি বেশ বড়। সাইকেলটি খেয়া নৌকোর মাঝির হাওলায় রেখে হোসেনপুরে গিয়ে দেখি হাট জমজমাট কিন্তু একটা থমথমে ভাব। আমি কাউকে কিছু জিজ্ঞাসাবাদ না করে ধীরে-সুস্থে হাঁটতে হাঁটতে হাটের এক প্রান্তে উপস্থিত হলাম। সেটা মেছো হাট। পাশে একটি কাঁঠাল গাছ। কমলালেবুর দোকান থেকে এক জোড়া কমলালেবু কিনে কাঁঠাল গাছের নিচে দাঁড়িয়ে কমলা খাচ্ছি। এমন সময় ঘটনাটা ঘটলো। এক জায়গায় একটা খালি গরুর গাড়ি পড়েছিল। সেটার ওপরে দাঁড়িয়ে শামসুল হক বক্তৃতা শুরু করেছেন। পাঁচ মিনিট যেতে না যেতেই দেখলাম আক্রমণকারীরা তাঁকে ঘিরে ফেলেছে। এক যুবক গরু জবাইর ছুরি নিয়ে গরুর গাড়ির ওপরে চরলো। শামসুল হকের বুকে ছুরি বসিয়ে দেয়ার পূর্ব মুহূর্তেস্থানীয় প্রধানিয়া গোছের বৃদ্ধ “আরে কি করস কি করস” বলতে আততায়ীর হাত ধরে ফেললো। শামসুল হক প্রাণে বেঁচে গেলেন। সঙ্গে সঙ্গে শুরু হলো ছাত্রদলের ওপরে হাঁটুরেদের এলোপাতাড়ি মার। কে কোথায় ছিটকে পড়লো ঠিক-ঠিকানা নেই। যে পথে ওঁরা এসেছিল সে পথে ওরা পালাতে পারলো না। হোসেনপুর নদী দুটি শাখায় বিভক্ত। একটি শাখায় পানি খুব কম। কাপড়-চোপড় ভিজিয়ে সেটি পার হয়ে ওরা গফরগাঁ হতে আগত শাখার অপর পার দিয়ে প্রাণপণে ছুটলো। আমি ছাত্রদলে যোগ না দিয়ে একা ধীরেসুস্থে সিগারেট টানতে টানতে খেয়াঘাটের দিকে চললাম। বয়স বেশি, তাই আমাকে হাটুরেরা ছাত্র মনে করে নি। তখনও হাট ভাঙ্গে নি। ময়মনসিংহ জেলার ঐ অঞ্চলের হাট অনেক রাত পর্যন্ত চলে। আমি যখন খেয়া নৌকোয় চড়ে আমার সাইকেলটি হাতে নিয়েছি তখন ওপারে যাওয়ার লোক মাত্র দু’চারজন। এরি মধ্যে একটি ষোল সতের বছরের ছেলে নৌকোয় চড়লো। তাঁর চোখে-মুখে ভীতির ছাপ। সে আমাকে ঘেঁষে দাঁড়িয়ে পরিচিতের মতো কথা বলতে চাইলো। আমি তাঁকে নিচু গলায় বারন করলাম। নদী পার হওয়ার পর অন্যেরা যাঁর যাঁর গন্তব্যস্থলের দিকে চলে গেল। ছেলেটি তখন বললো, সে ঢাকা ইন্টার কলেজের ছাত্র। দলের সঙ্গে এসেছিল। কিন্তু দলছুট হয়ে পড়েছে। এখন ফিরবে কেমন করে? বেলা তখন ডোবে ডোবে। সাত মাইল পথ একা চলতে ভয় পাচ্ছে। বললাম, আমার সাইকেলের পেছনে পা-দানিতে দাঁড়াও, কিন্তু খবরদার পথে কেউ কিছু প্রশ্ন করলে তুমি জবাব দেবে না, যা বলার আমি বলবো। অর্ধেকের বেশি পথ অতিক্রম করতে পথে পড়লো একটি ছোট হাট। সেদিন হাটবার নয়। খালি জায়গায় বসে পাঁচ-সাতজন লোক বাঁশের চাটাই বুনছে। ওদের প্রত্যেকের কাছে বড় বড় ধারালো দা। ওরা নির্দেশের সুরে সাইকেল থামাতে বললেন। থামালাম। ওরা প্রশ্ন করলেন কোথায় গিয়েছিলাম। বললাম। তারপর আরো প্রশ্ন, বাড়ি কোথায়? হাটে কেন গিয়েছিলাম। কোনো দলের লোক? শান্তভাবে বললাম, ঢাকার লোক, কোন দল করি না, আমি সাংবাদিক লোক, এখানে সভা হচ্ছে, দেখতে এসেছি, রিপোর্ট পাঠাতে হবে কলকাতায়। ওরা কি বুঝলেন বা ভাব্লেন জানি না, বললেন-দলের বাইরে থাকবেন না, হয় ইমারত পার্টি করবেন নয়তো মুসলিম লীগ, মওলানা সাবের পক্ষে রিপোর্ট যায় যেন। ওরা দয়া করে আমাদের ছেড়ে দিলেন। পুনরায় সাইকেলে চড়েছি, এমন সময় শুনলাম ওরা বলাবলি করছেন, মিছিল করে যাওয়ার সময় ওদের কল্লা রেখে দিতে পারতাম, কিন্তু মওলানা সাহেব মানা করলেন। বাকী পথে আর কোনো বাধা পাই নি। গফরগাঁ পৌছে প্রথমেই গেলাম ডাকবাংলোয়। সেখানে গিয়ে দেখি গিয়াসুদ্দীন পাঠান সিথানে একটি বন্দুক এবং পৈথানে আর একটি বন্দুক নিয়ে তার তক্তপোশে। আবুল মনসুর আহমদ আন্য তক্তপোশে। ওঁদের কাছে ঘটনার রিপোর্ট করে বললাম, ছাত্রদল নদীর ওপার দিয়ে ফেরত আসছে। পথ নিরাপদ নয়। এখান থেকে কিছু উদ্ধারকারী পাঠান। আবুল মনসুর আহমদ গোসার গলায় বললেন, আপনি কাওয়ার্ড (ভীরু), ওদের ছেড়ে পালিয়ে এসেছেন। আমি ক্রোধ দমন করতে পারি নি। কণ্ঠ চড়িয়ে বললাম, আমি কাওয়ার্ড হলেও তো ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম, রিপোর্ট দিচ্ছি; কিন্তু আপনাদের মতো দুঃসাহসীরা সিথানে-পৈথানে বন্দুক নিয়ে ডাকবাংলোর নিরাপত্তায় আছেন। আপনারা নেতা। এতই যদি সাহস তাহলে নদী পার হয়ে ওদের উদ্ধার করতে যান না কেন? আমার এ জবাব শুনে ওরা নড়লেন না। মনে হলো সংবাদ শুনে ওদের হৃৎকম্প উপস্থিত হয়েছে। উদ্ধারকারী পাঠাবার চেষ্টাও করলেন না কোনো নেতা।
রাত দশটা এগারোটার দিকে ছাত্রদল ফিরে এলো। সুখের বিষয় পথে কারো প্রাণ যায় নি। কিন্তু পথে কারো বাড়িতে তৃষ্ণা নিবারণের পানিও পায় নি ওরা। শুনলাম, মা একটু পানি খাওয়াবেন আবেদন শুনে ক্রুদ্ধ গৃহিণীরা নাকি জবাব দিয়েছিলেন, হারামজাদা আমি তোর মা হলাম কোন্ সুবাদে। তোর বাপের সঙ্গে কি আমার সাঙা হইছিল?
পরদিন জনসভা। বাহাদুরাবাদের দিক থেকে আগত ট্রেনে লিয়াকত আলী, সোহরাওয়ার্দী, নাজিমুদ্দীন প্রমুখ বড় বড় নেতারা আসছেন। সেদিন (খুব সম্ভবত সোমবার) গফরগাঁয়ে গরুর হাট-আসল হাট থেকে কিছুদুর উত্তরে। সকাল হতেই গরুর হাট জমতে শুরু করেছে। বেলা বোধ করি দশটা এগারোটা। ঢাকার ছাত্রদল এবং স্থানীয় কিছু মুসলিম লীগার মিছিল করে স্টেশনে গেলেন নেতাদের সংবর্ধনা জানাতে এবং আগ বাড়িয়ে নিয়ে আসতে। আমিও সঙ্গে গেলাম। গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছি। ট্রেন গরুর হাট বরাবর আস্তেই ইষ্টক বৃষ্টি শুরু হলো। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর জানালার কাচ ভাঙলো। গাড়ি এসে স্টেশনে ভিড়তে মুসলিম লীগ জিন্দাবাদ, পাকিস্তান জিন্দাবাদ ধ্বনির মধ্যে নেতারা নামলেন। নেতাদের চারদিকে কর্মীদের ব্যূহ। ডাকবাংলো পর্যন্ত সড়ক পথ, মিছিল করে যাচ্ছি। এমন সময় শুনতে পেলাম আল্লাহু আকবর ধ্বনি। বিপরীত দিক থেকে মিছিল আসছে। ভাবলাম মুসলিম লীগার মিছিল বুঝিবা। কিন্তু নিকটবর্তী হতে যা দেখলাম তাতে আমাদের চক্ষু ছানাবড়া হওয়ার উপক্রম হলো। জেলা বোর্ডের সড়কের দু’কিনার ধরে রামদা, লাঠি, বল্লম প্রভৃতি মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্র সজ্জিত হাজার হাজার লোক সারিবদ্ধভাবে আমাদের দিকে আসছে। কয়েক মিনিটের মধ্যে আমরা স্যানডুইচ হয়ে পড়লাম। আমাদের রাস্তার মাঝখানে ফেলে ঐ সশস্ত্র বাহিনী এগুতে লাগলো। সেনাবাহিনীর কোম্পানির মতো ওরা গ্রুপে বিভক্ত। বাবরি চুলআলা সশস্ত্র গ্রুপ কমান্ডারগণ আল্লাহু আকবর, ইমারত পার্টি জিন্দাবাদ, মওলানা শামসুল হুদা জিন্দাবাদ, মুসলিম লীগ মুরদাবাদ ধ্বনি করার সময় লাফ দিয়ে তিন চার হাট ওপরে উঠছেন এবং হাতের রামদা বা লাঠি ঘোরাচ্ছেন। পশ্চাতের সাকরেদরাও তাই করছেন। আমি নেতাদের কাছেই ছিলাম, নাজিমুদ্দীন সাহেবের পদযুগল ঠকঠক করে কাঁপছিল। অন্যদেরও সে অবস্থা। মুসলিম লীগের সংবর্ধনা মিছিল চুপ, কারো মুখে টুঁ শব্দটি নেই। শহীদ সোহরাওয়ার্দী সাহেবকে দেখেছিলাম একমাত্র ব্যতিক্রম। তিনি রাস্তার দু’কিনারের এই মারমুখী মিছিলের দিকে ঘাড় ফিরিয়ে তাকাচ্ছিলেন এবং সম্পুর্ণ স্বাভাবিকভাবে হাঁটছিলেন। সেদিনই প্রথম বুঝতে পেরেছিলাম, সে সময়ের মুসলিম লীগের লিখিল ভারতীয় নেতাদের মধ্যে একমাত্র শহীদ সোহরাওয়ার্দী ব্যতীত বাকী প্রায় সবাই ছিলেন সাধারণ মানুষের চেয়ে অনেক বেশি কাওয়ার্ড। ১৯৪৬ সালের ১৬ আগস্ট তারিখে ডাইরেক্ট এ্যাকশনে নামার পর যখন গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং শুরু হলো তখনও একমাত্র শহীদ সোহরাওয়ার্দীই জীবন বিপন্ন করে মারমুখী হিন্দুপ্রধান মহাল্লায় যাচ্ছিলেন। অন্য মুসলিম লীগ নেতাদের নাম তখন শোনা যায় নি। মি. জিন্নাহ তখন বোম্বাইর মালাবার হিলে নিজ বাড়িতে অথবা দিল্লিতে নিরুদ্বেগে হিমরক্ত নৈয়ায়িকের আয়েশী জীবন ভোগ করছিলেন। বিকেলে জনসভা হয়েছিল। কিন্তু উদ্যোগ আয়োজনের তুলনায় লোক সমাগম ছিল খুবই কম। বলাবাহুল্য, নির্বাচনে মওলানা শামসুল হুদা বিপুল ভোটাধিক্যে জয়লাভ করেন।
(প. ১৯৬ – ১৯৯)
মওলানা আকরাম খাঁ
মওলানা আকরাম সাহেবের অবস্থানকালে একটি মজার অভিজ্ঞতা হয়। কলকাতায়ও তাঁকে নিকট থেকে দেখেছি। তিনি কোনো মারেফতি তরিকার সুফি ছিলেন কিনা অথবা ইহজাগতিক জীবনে ঈশ্বরের হস্তক্ষেপ বিষয়ে সংশয়ী ছিলেন-তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের এসব গোপন বিষয়ে আমি অবগত নই। তবে এটা দেখেছি যে ধর্মের আনুষ্ঠানিক দিক অর্থাৎ নামাজ, রোজা, হজ্ব, যাকাত ইত্যাদি কার্যাদির প্রতি ছিলেন সম্পূর্ন নিরাসক্ত এবং উদাসীন। লাগোয়া কামরায় আমি থাকি। আমার স্ত্রী ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি নিয়মিত পালন করেন। ছাদের উত্তর দিকের কিছু অংশ খালি। সকালে পায়চারি করা যায়। খালি জায়গাটার এক কোণে প্রস্রাব করার জায়গা। পাশেই পায়খানা। আমাদের কামরার উত্তর দিকের জানালা দিয়ে ছাদের ঐ খালি অংশটুকু দেখা যায়। একদিন সকালে আমার স্ত্রী বললেন, মওলানা সাহেবকে দেখলাম পানির বদনা হাতে না নিয়েই পেশাব করতে গেলেন। মুরুব্বিদের কাছে শুনেছি, পেশাব করে পানি নেয়া নাকি লাজেম। মওলানা সাহেব পানি নিলেন না, এটা কি রকম ব্যাপার? আমার স্ত্রী লেখাপড়া জানেন না বললেই চলে। মহিলাকে কি বুঝ দেবো। সহসা মাথায় বুদ্ধি খেলে গেল। বললাম, বড় বড় আলেম এবং সুফি দরবেশদের এসব শরিয়তি কাজ করতে হয় ন্স। ওরা ইলমে লাদুন্নীর জগতে বিচরণ করেন। লেঙটা দরবেশের কথা শোনো নি। এই বলে তাকে বাবুর বাজারের লেঙটা দরবেশের কেরামতির কাহিনী শোনালাম। দরবেশ বস্ত্র দিলেও পরতেন না। নেঙটা ঘুরে বেড়াতেন। নেংটা তো থাকতেনই। বাবুর বাজারের পুলের ওপর দিয়ে লোকজন, গাড়িঘোড়া চলছে। নেঙটা দরবেশ সাহেব নির্বিকার। কৌতূহলী কিছু লোক নাকি একবার তাঁকে প্রশ্ন করেছিল, হুজুর আপনি এমন দিগম্বর চলাফেরা করেন কেন? হুজুর সেদিন খোশ মেজাজে ছিলেন। তিনি তাঁর বাঁ হাত উঁচিয়ে বললেন, দেখ আমার বগলতলা দিয়ে চেয়ে দেখ কি দেখা যায়। লোকজন নাকি অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখলো, সড়কের ওপর শুধু শিয়াল, কুকুর, বিড়াল প্রভৃতি পশু চলছে, একটি মানুষও নেই। কি দেখলি? দরবেশ প্রশ্ন করলেন। তাঁরা জবাব দিলো, শিয়াল-কুকুর। দরবেশ তখন বললেন, শিয়াল-কুকুরের সমাজে কাপড় পরবো কেন? দেশে মানুষ নেই, যখন প্রকৃত মানুষ দেখবো তখন কাপড় পরবো। এ গল্প শোনার পর আমার পতিভক্ত স্ত্রী আর শব্দ করেন নি।
——————-
মওলানা আকরাম খাঁ যখন তাঁবুতে চলে যান তখন তাঁর বয়স বোধ করি ৮০-এর কম নয়। আমাকে বলেছেন, ১৮৯৮ সালে তিনি কলকাতা মাদ্রাসার আরবি বিভাগ হতে দ্বিতীয় বিভাগে জামতেউলা পাস করেন। ছাগল বিক্রয়লব্ধ দশ আনা পয়সা নিয়ে ভাগ্যান্বেষণে হাকিমপুর হতে কলকাতায় আসেন। আশি বছর বয়সেও তার কর্মদক্ষতা দেখে বিস্মত হয়েছি। ইংরেজিতে Entrepreneur বলে একটি শব্দ আছে। উদ্যোক্তা বললে তার ঠিক অর্থ হয় না। মওলানা আকরাম খাঁ ছিলেন সত্যিকার অর্থে একজন Entrepreneur। কুশাগ্র বুদ্ধিতো ছিলই। তাছাড়াও তিনি Ends & Means-এর দার্শনিক তত্ত্ব নিয়ে কখনও মাথা ঘামিয়েছিলেন বলে মনে হয় না। উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য তিনি যে-কোনো উপায় অবলম্বন করতে দ্বিধাবোধ করতেন না। সাপ্তাহিক মোহাম্মদীর কোয়াডক্রাউন প্রেসটি তিনি আহলে হাদিস জামাতপন্থী ধনী ব্যবসায়ী আব্দুল্লাহ সাহেবের কাছ থেকে নানা কৌশলে সংগ্রহ করেছিলেন। মওলানা আকরাম খাঁর নিজস্ব বাসগৃহ তৈরি হওয়ার পর তাঁর কর্মক্ষমতা ভালোভাবে দেখার সুযোগ হয়েছে। আজাদের পুরনো প্রেসের সঙ্গে তাঁর বইপত্রও কলকাতা হতে স্টিমারযোগে নিয়ে আসা হয়। তাঁর ব্যক্তিগত লাইব্রেরিতে আরবি, ফারসি, উর্দু বইয়ের সংখ্যাই ছিল বেশি। ইংরেজি বাংলা বইও যথেষ্ট ছিল। তার মধ্যে এ্যান্সাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকার চতুর্দশ সংস্করণ দেখেছি, গিবনের ডিক্লাইন এন্ড ফল অব রোমান এ্যাম্পায়ারও ছিল বলে মনে পড়ে। ইসলামধর্ম সম্পর্কিত ইংরেজি বইপত্রও যথেষ্ট ছিল। ইতিহাস ও ধর্মতত্ত্ব বিষয়ক বইয়ের প্রতি তাঁর ঝোঁক ছিল বলে মনে হয়। তার লাইব্রেরিতে অনুমান তিন-চার হাজার গ্রন্থ ছিল। সকালে নাস্তার পর তিনি লেখাপড়া করতেন। কোনো কোনো দিন বেলা দশটা এগারোটা কোনো কোনো দিন বিকেলে তিনি সম্পাদক আবুল কালাম শামসুদ্দিন সাহেবের কামরায় আসতেন। সহকারী সম্পাদক মুজিবুর রহমান খান এবং আমি একই ঘরে বসতাম। তিনি এসে আমাদের সঙ্গে দিনের সম্পাদকীয় নিয়ে আলোচনা করতেন। কখনও কখনও বিষয়বস্তু নিজেই ঠিক করে দিতেন। তবে খুব বেশি একটা হস্তক্ষেপ করতেন না। কখনও নিজেই সম্পাদকীয় লিখে পাঠিয়ে দিতেন। মধ্যাহ্ন ভোজনের পর ঘণ্টাখানেকের চেয়েও কম সময় চোখ বুজে শুয়ে থাকতেন। কিন্তু ঘুমোতেন বলে মনে হয় না। বেলা তিনটার দিক হতে পাঁচটা অবধি পুনরায় লেখাপড়া করতেন। তিনি ছিলেন একজন একনিষ্ঠ পাঠক। তাঁর বাংলা রচনার মধ্যে তৎসম ও তদ্ভব শব্দের সংখ্যা বেশি। বহুল প্রচলিত আরবি উর্দু শব্দের ব্যবহার খুব কম। কেরামতি মাজেজা প্রভৃতিতে তিনি বিশ্বাস করতেন না। মোস্তফা চরিত, সমস্যা ও সমাধান ও কোরান শরীফ অনুবাদের মধ্যে তাঁর যুক্তিবাদী মনের পরিচয় পাওয়া যায়। তবে রাজনৈতিক এবং আর্থিক স্বার্থে যুক্তি বিসর্জন দিতে কিছুমাত্র দ্বিধাবোধ করতেন না।
——–
আইয়ুব খাঁ পূর্ববাংলায় প্রেরিত পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অধিনায়ক হয়ে আসেন। মনে পড়ে, তিনি আজাদ অফিসে মওলানা আকরাম খাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসেন। ওরা মওলানার বাসগৃহে নিভৃতে আলাপ-আলোচনা করেন। পরে সেনাবাহিনীর গাড়ি পাঠিয়ে মওলানাকে ক্যান্টনমেন্টেও নিয়ে যাওয়া হয়। তারপরে দেখলাম মওলানার মার্শাল স্পিরিট, তিনি পাঞ্জাবি সেনাদের বীরত্বের কথা শোনাতেন। সঙ্গে নিজের এবং তাঁর পরিবারের মার্শাল স্পিরিটের গল্পও বলতেন। ঐ স্পিরিট প্রমাণ করার জন্য তিনি ক্যান্টমেন্টে গিয়ে রাইফেল চালিয়ে এলেন। তিনি একটি রাইফেল উপহার পেয়েছিলেন, মনে পড়ে।
১৯২০-২১ সালে কংগ্রেস-খেলাফত আন্দোলন এবং স্বসম্পাদিত দৈনিক সেবক পত্রিকায় রাজদ্রোহকর বিষয় প্রকাশ করার অপরাধে মওলানা আকরাম খাঁ জেলও খাটেন। কিন্তু বাঙালি মুসলিম সমাজের তৎকালীন হীনমন্যতাবোধ তিনি কাটিয়ে উঠতে পারেন নি। আজীবন তিনি এ হীনমন্যতাবোধে ভুগেছেন। আজীবন অবাঙিল নেতৃত্বের পায়রবি করছেন। শিক্ষা এবং বুদ্ধিমত্তার কমতি ছিল না। রাজনীতিতে তিনি কোনো স্বাধীন ভূমিকা পালন করতে পারেন নি। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন মিডিয়কর-অবাঙালি স্বার্থের শিখন্ডী। তিনি বিত্তশালী হয়েছিলেন, কিন্তু মধ্যবিত্তের সঙ্কীর্ণ বলয়ের মধ্যেই বিচরণ করেছেন। মওলানা আবুল কালাম আজাদের উদার মানবিক গুনাবলি অর্জন করতে পারেন নি। বিশ্বসভ্যতা ও সংস্কৃতির বৃহত্তর অঙ্গনে প্রবেশলাভ ঘটে নি তাঁর।
(প. ২০৫, ২০৮ – ২০৯, ২১১)
খাজা নাজিমুদ্দীন
মি. জিন্নাহর মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত খাজা নাজিমুদ্দীন পূর্ব বাংলার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের এম. এ. ডিগ্রি এবং বারএট ল’ প্রভৃতি বিদ্যাবত্তার নিদর্শন তাঁর নামের শেষে যুক্ত ছিল। জিন্নাহর মৃত্যুর পর তিনি হন পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল। লিয়াকত আলী খুন হওয়ার পর তিনি হন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। ব্রিটিশ আমলে তিনি প্রথমে ছিলেন ঢাকা মিউনিসিপ্যালিটির চেয়ারম্যান, দ্বিতীয় পর্যায়ে গভর্নরের শাসক পরিষদের অন্যতম সদস্য এবং ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর তিনি বাংলা সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর পদ অলঙ্কৃত করেন। বিভাগ-পরবর্তী পূর্ব বাংলার প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে তাঁর সঙ্গে বেশ কয়েকবার দেখা-সাক্ষাৎ করার সুযোগ হয়। দু’ একটি ঘটনা মনে পড়লে এখনও হাসি পায়।
সমগ্র ভারতবর্ষের মুসলিম সরকারি কর্মচারীরা অপসন দিয়ে পূর্ব বাংলায় বাঁ পশ্চিম পাকিস্তানে চলে এসেছেন। ঢাকা মফস্বল শহর। আয়তন ৬ বর্গমাইলের কম, লোকসংখ্যা মাত্র ১ লাখ। নবাগতদের জন্য স্থানাভাব। হিন্দুদের পরিত্যক্ত বাড়িঘর বরাদ্দ করার জন্য কাছারিতে স্টেট অফিস খোলা হয়েছে। স্টেট অফিসার একজন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। ভদ্রলোক ছিলেন মদ্যপ এবং জুয়াড়ি। স্টেট অফিসে ব্যাপক দুর্নীতি চলছিল। দুর্নীতির রিপোর্ট পত্রিকায়ও প্রকাশিত হয়েছিল।
আমার মস্তিষ্কে সাংবাদিকতার ব্যামো ছাড়াও সমাজসেবার কীট তখনও বেশ সক্রিয় ছিল। পাকসাফ দেশ পাকিস্তান। সেক্রেটারিয়েটে মধ্যবয়সী সরকারি কর্মচারীরা তখন মূত্রত্যাগের পর পানি ব্যবহার করে খুশি নন। তারা তখন লুঙ্গি-পাজামার তলা দিয়ে মাটির ঢেলা পুরুষাঙ্গে ঠেকিয়ে খড়ম পায়ে চল্লিশ কদম পায়চারি করে পুরোপুরি পাক হচ্ছিলেন। টয়লেটে মাটির ঢেলা স্তূপীকৃত করে রাখা ছিল। আজাদের বার্তা সম্পাদক মোহাম্মদ মোদাব্বের তখন ঢাকায়। স্টেট অফিসের দুর্নীতির প্রতি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষন করার জন্য আমরা দু’জন নাজিমুদ্দীন সাহেবের সঙ্গে তাঁর বর্ধমান হাউসস্থ বাসভবনে সাক্ষাৎ করি। আমাদের অভিযোগ তিনি খণ্ডাতে চেষ্টা করলেন; বললেন, প্রমাণ কি? আমরা জবাবে বললাম, স্টেট অফিসারের বেতন মাত্র চার পাঁচশ’ টাকা। কিন্তু তিনি রোজ ঢাকা ক্লাবে প্রচুর মদ্যপান করেন এবং আরমানিটোলার এক জমিদার বাড়িতে রাত্রে জুয়া খেলেন। এতো টাকা তিনি কোথায় পান? নাজিমুদ্দীন সাহেব নির্দ্বিধায় স্বীকার করলেন, ‘Yes I know he goes for high stakes but… ‘বাট’ শব্দটির পর তিনি চুপ হয়ে গেলেন।
অন্য একদিনের ঘটনা। দৈনিক আজাদের জন্য পছন্দমতো জমি পাওয়া যাচ্ছে না। সরকারি মহল নানা অজুহাত উত্থাপন করছে। তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করি। সেদিন সম্ভবত আমার সঙ্গে ছিলেন সহকর্মী খায়রুল কবির। বর্ধমান হাউসেই সাক্ষাৎকার। আমরা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁর হস্তক্ষেপ প্রার্থনা করি। জবাবে নাজিমুদ্দীন সাহেব বললেন, “হাম সিধেসাধে আদমী হো, সিধেসাধে বাতাইন সমঝাতে, ইয়ে বহুত সখত মামলা হ্যায়, আপলোগ হামিদুল হক সাহেবকা পাছ যাইয়ে।” আমরা লা-জবাব। বাইরে এসে আমরা খুব একচোট হেসেছিলাম। এই ছিলেন ব্রিটিশ আমলে গভর্নরের এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের মেম্বার, অবিভক্ত বাংলার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী এবং অবশেষে গোলাম মোহাম্মন কর্তৃক ডিসমিসড আলহাজ খাওয়াজা নাজিমুদ্দীন এম. এ. ক্যান্টাব, বার এট ল’ সাহেবের রাজনৈতিক যোগ্যতা। তাঁর এবং তাঁর মতো যোগ্যতার অধিকারী আরো অনেকের নেতৃত্ব বাঙালি মুসলিম মধবিত্ত সমাজ সেদিন মেনে নিয়েছিল। তার প্রায়শ্চিত্ত করতে হয়েছে ১৯৭১ সালে এবং এখনও করতে হচ্ছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তারিখের পরে যাঁরা বাংলাদেশের ওপর রাজত্ব করছেন তাঁরা নাজিমুদ্দীনেরই ভাবশিষ্য। ‘সখত মামলা’ সমাধানের ভার তাঁরা সাম্রাজ্যবাদের হাতে ছেড়ে দিয়েছেন। নিজেদের হাতে রেখেছেন ডান্ডাবাজি করার নিরঙ্কুশ এখতিয়ার।
(প. ২২৩ -২২৪)
শামসুল হক
টাঙ্গাইলের উপনির্বাচন হয় ১৯৪৯ সালে। শামসুল হক নবীন যুবক অল্প আগে বি. এ. পাস করেছেন। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। একমাত্র সম্বল তাঁর আদর্শনিষ্ঠা এবং সততা। শামসুল হক মুসলিম লীগের দুঃশাসন হতে পাকিস্তানকে, পূর্ব বাংলাকে মুক্ত করতে চান-‘রাব্বানীয়াত’, আল্লাহর আধিপত্য, কিংডম অব গড-যেখানে সকল মানুষ সমান অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবে।
অপরপক্ষ মুসলিম লীগের দখলে তখন গোটা পাকিস্তান। পাকিস্তান কায়েমের কৃতিত্বও তাদের। পাকিস্তানের ওমর তখন মাত্র দু’বছর। এই সামান্য সময়ের মধ্যে মুসলিম লীগের ইমেজ নষ্ট হওয়ার কথা নয়। মুসলিম লীগের শ্লোগান, আল্লাহ এক, রসুল এক, কেতাব এক, কাবা এক, কাবা এক, অতএব মুসলমানেরও এক দল হতে হবে এবং সেটি মুসলিম লীগ। বিরোধীরা হিন্দুর দালাল, ভারতের দালাল, কাফের ইত্যাদি।
জয়লাভ সম্বন্ধে পূর্ণ আস্থাবান সত্ত্বেও মুসলিম লীগ টাঙ্গাইলের উপনির্বাচনে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছিল-প্রচুর টাকা পয়সাও ঢেলে ছিল। কিন্তু কোনো ফল হয় নি। পূর্ব বাংলার নিরক্ষর জনসাধারন অন্তঃসারহীন শ্লোগানে বিভ্রান্ত হয় নি। ভোট গণনার পর দেখা গেল, নিঃসম্বল শামসুল হক বিপুল ভোটাধিক্যে জয়লাভ করেছেন। শামসুল হক আমার প্রিয়ভাজন ছিলেন। তাঁর বিজয় কামনা করেছিলাম। কিন্তু মনে মনে সন্দেহ ছিল।
টাঙ্গাইলের উপনির্বাচনই ১৯৪৬ সালের সাধারণ নির্বাচনের পড়ে একমাত্র এবং শেষ উপনির্বাচন। ১৯৫৪ সালের মধ্যে যতোদূর মনে পড়ছে, ২৮টি আসন খালি হয়। এই অপূর্ণ প্রাদেশিক আইন পরিষদ নিয়ে মুসলিম লীগ রাজত্ব করতে থাকে। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারির শোকাবহ ঘটনা-পরবর্তী প্রবল রাজনৈতিক আন্দোলন মুসলিম লীগকে ১৯৫৪ সালে সাধারণ নির্বাচন দিতে বাধ্য করে।
শামসুল হক আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু মুসলিম লীগ সরকার তাঁকে রাজনীতি করতে দেয় নি। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে তাঁকে আটক করা হয়। তখন তিনি বিবাহিত, একটি কন্যাসন্তানের পিতা। স্ত্রী নরসিংদীর সেকান্দর মাস্টার সাহেবের কন্যা আফিয়া খাতুন এম. এ, কলেজের লেকচারার। আফিয়া খাতুন নবাবপুর রোডের এক দোতলায় কন্যাকে নিয়ে বাস করতেন। ইয়ার মোহাম্মদ খান তাঁর খোঁজ-খবর নিতেন। তিনি একবার আমাকে আফিয়া খাতুনের বাসায় নিয়ে গিয়েছিলেন। অসচ্ছল জীবনের চেহারা দেখেছিলাম।
দীর্ঘকাল জেলখানায় অবস্থানকে শামসুল হক অনুন্নত দেশের রাজনৈতিক জীবনের স্বাভাবিক ব্যাপাররূপে গ্রহণ করতে পারেন নি। জেলখানায় তাঁর মস্তিষ্ক বিকৃতির সূত্রপাত হয়। তাঁর মন আপন পরিবারসহ সবকিছুর ওপর সন্দিগ্ধ হয়ে পড়ে। আফিয়া খাতুন তাঁকে ত্যাগ করেন। আফিয়া এখন পাকিস্তানে মিসেস আফিয়া দিল।
শামসুল হক সম্পূর্ন বিকৃত মস্তিষ্ক অবস্থায় জেলখানা হতে বেরিয়ে আসেন। অর্থাভাবে তাঁর চিকিৎসা হয় নি। আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক শামসুল হকের চিকিৎসার জন্য আওয়ামী মুসলিম লীগ কোনো উদ্যোগ নিয়েছিল বলেও মনে পড়ে না। শামসুল হক ঢাকার রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াতেন-কখনও কখনও বন্ধু-বান্ধবদের বাড়িতে উপস্থিত হয়ে টাকা ধার চাইতেন, কেউ সমাদর করলে আহার করতেন।
এক দিনের ঘটনা মনে পড়ে। আমি আমার বইয়ের দোকানে বসে আছি। বেলা দুপুর। হঠাৎ কোথা থেকে এসে উপস্থিত হলো শামসুল হক। পরনে পুরনো কালো আচকান, নিচে ময়লা পাজামা এবং জরাজীর্ণ ইংরেজি জুতো। সালাম জানিয়ে আমার সামনের চেয়ারে বসলেন। আচকানের পকেট থেকে বের করলেন একটি কাগজের বান্ডিল। খুলে ধরলেন। দেখলাম এটি ইংরেজি ভাষায় রচিত একটি দরখাস্তের অথবা বলা যায় মেমোরান্ডামের খসড়া। ফুলস্কেপ সাইজের ২৫/৩০ পৃষ্ঠায় টাইপ করা এই দরখাস্তের প্রাপক-His Imperial Majesty the Almighty Allah. আবেদনকারী শামসুল হক। উল্টেপাল্টে কিছু কিছু পাঠ করেছিলাম। পূর্ববঙ্গের রাজনৈতিক অবস্থা এবং পূর্ববঙ্গবাসীর অভাব-অভিযোগ জ্ঞাপন করে আল্লাহতালার হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে। শামসুল হক সাহেব বললেন, এটি কয়েক কপি টাইপ এবং প্রাপকের কাছে ডাকযোগে প্রেরণের জন্য টাকা পয়সা আবশ্যক। তিনি আমার কাছে ৫০ টাকা চাঁদা চাইলেন। আমি তাঁকে ১০টি টাকা দিয়ে বললাম, আমার আর্থিক অবস্থা ততো ভালো নয়, অনুগ্রহ করে দশ টাকাই নিন। শামসুল হককে চা-বিস্কুট আনিয়ে দিয়েছিলাম। তিনি খেয়েছিলেনও। দশ টাকা নিয়েই তিনি চলে গেলেন। বেশির জন্য পীড়াপীড়ি করেন নি। আমি দোকান হতে বেরিয়ে চেয়ে রইলাম। আচকান-পাজামা ও জিন্নাহ-টুপি পরিহিত শামসুল হক মুখ নিচু করে কাছারির দিকে চললেন। একবারও পিছু ফিরে তাকালেন না। ঘাড় ফিরিয়ে ডানে-বায়ে তাকাতেও তাঁকে দেখলাম না।
তাঁর সঙ্গে এই আমার শেষ দেখা। শুনেছি, শামসুল হক জীবিত নেই। কিন্তু টাঙ্গাইলের ওয়াটার্লু বিজয়ী শামসুল হকের মৃত্যু কোথায় কি অবস্থায় হলো তার কোনো বিবরণ সংবাদপত্রে প্রকাশিত হতে দেখি নি। শোকসভাও করে নি কোনো রাজনৈতিক দল বা অন্যরা। অথচ এই শামসুল হক একদিন ছিলেন বাংলার তরুণ মুসলিম ছাত্রসমাজের প্রিয় নেতা-১৯৫২ সালেও ভাষা সংগ্রামী এবং আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক। ১৯৪৬ সালের সাধারণ নির্বাচনে মুসলিম লীগের পক্ষে প্রচারকার্য চালাতে গিয়ে হোসেনপুরের হাটে এই শামসুল হকই আততায়ীর ছোরার আঘাতে নিহত হওয়া থেকে দৈবক্রমে রক্ষা পান। প্রয়োজন যখন ফুরালো তখন মুসলিম লীগ, আওয়ামী লীগ উভয় দলই তাঁকে জঞ্জালরূপে বিসর্জন করলো।
শামসুল হক রাজনীতি এবং ব্যক্তিগত জীবনে ছিলেন সৎলোক। তাঁর কথা মনে হলে দুঃখ হয়। বৈপ্লবিক দৃষ্টিতে ইসলাম নামে গ্রন্থের তিনি লেখক। গ্রন্থটি সে সময়ে প্রশংসিত হয়েছিল।
(প. ২২৪ -২২৭)
সোহরাওয়ার্দী’র পারসোনাল লাইফ
আজ মনে হয়, সোহরাওয়ার্দী নিঃসঙ্গ মানুষ ছিলেন। বহু লোকের সঙ্গে তিনি মিশতেন, বহু রকমের রাজনীতি করেছেন-প্রথমে ছিলেন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসে : দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের সহকারী হিসেবে তার জীবনারম্ভ, জীবন শেষ হলো আওয়ামী লীগে; কিন্তু তাঁর কোনো পরমাত্মীয় বন্ধু ছিল না। তিনি সর্বদা লোক পরিবৃত থাকতেন-তাঁর ব্যক্তিগত জীবনে প্রাইভেসি-অন্দর বাহির বলে কিছু ছিল না-তবু তিনি ছিলেন তাদের থেকে আলাদা। আচার-আচরণ জীবন-যাপন প্রণালিতে তিনি ছিলেন পুরোপুরি পশ্চিমি, রাজনীতি করতেন কুসংস্কারাচ্ছন্ন নিরক্ষর জনসাধারণের। বাস্তব জীবনের এই কন্ট্রাডিকশনই সম্ভবত তাঁর নিঃসঙ্গতার কারণ। তাঁর প্রথম স্ত্রী ছিলেন স্যার আবদুর রহীমের কন্যা। তিনি এক পুত্র এবং এক কন্যা সন্তান রেখে পরলোকগমন করেন। পুত্রটি বিলেতে লেখাপড়া করছিল। মহাযুদ্ধকালে খুব সম্ভবত জার্মান বিমান আক্রমণের সময় সে নিহত হয়। সোহরাওয়ার্দী সংবাদ পেয়ে সেই ভয়ানক বোমাবাজির মধ্যেও বিমানে করে পুত্রকে দেখতে গিয়েছিলেন। দ্বিতীয়বার তিনি এক ইহুদি রমণীকে বিয়ে করেন। ঐ রমণীর স্বামী কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করলে সে বিয়ে বাতিল হয়ে যায়। শেষের স্ত্রীর গর্ভে তাঁর এক পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করে। সে ব্রিটেনেই বসবাস করছে।
সোহরাওয়ার্দী ছিলেন অদ্ভুত চরিত্রের লোক। তাঁর সবচেয়ে বিশ্বস্ত লোক ছিল তাঁর হিন্দু চাকর। ব্যক্তিগত জীবনে তাঁর মধ্যে সাম্প্রদায়িকতার লেশমাত্রও ছিল না। স্নেহভাজনদের তিনি সবকিছু উজাড় করে দিতেন। তারা কখন কোন দলে সে বিচার তিনি করতেন না। একটি ঘটনা মনে পড়ে। ফরমুজুল হক নামক বরিশালের এক ভদ্রলোক কলকাতায় মুসলিম লীগের অফিস সেক্রেটারি ছিলেন। কিছু পারমিটের ব্যবসায় হাজার ষাটেক টাকা মুনাফা নিয়ে পার্টিশনের পড়ে তিনি ঢাকায় এসে শান্তিনগরে বাসা নেন। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের কোটা হতে যুক্তফ্রন্টের নমিনেশনে এম. এল. এ. হন। আমিরানা চালচলনে তাঁর পয়সাকড়ি শিগগিরই নিঃশেষ হয়ে যায়। ফজলুল হক সাহেবের কৃষকপ্রজা এবং সোহরাওয়ার্দী সাহেবের আওয়ামী লীগ দলীয় সদস্যদের মধ্যে যখন এ্যাসেম্বলীতে টাগ অব ওয়ার চলছে তখন তিনি আবু হোসেন সরকারের নেতৃত্বাধীন কৃষক প্রজাদের পক্ষে ভোট দিয়ে সকলকে বিস্মিত করেন। তার কিছুদিন পর রাজারবাগ এলাকার রাস্তায় তাঁর সঙ্গে আমার দেখা হয়। তাঁর অভাব-অভিযোগের কথা আমি জানতাম। তাঁকে জিগ্যেস করলাম, চলছেন কেমনে? ফরমুজুল হক জবাবে বললেন, সোহরাওয়ার্দী সাহেবের বদান্যতায়। এই সেদিন সারকিট হাউজে তাঁর সঙ্গে দেখা করে বললাম, স্যার কাচ্চাবাচ্চা নিয়ে বড় কষ্টে আছি। তিনি বললেন, আমার কোটের পকেট দেখ। পকেটে তিন হাজার টাকা ছিল, নিয়ে এসেছি। এ টাকাটা সেদিনই তিনি মামলার ফি- রূপে পেয়েছিলেন।
আমি বললাম, এই সেদিন আপনি তাঁর দলের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করলেন, তাঁর কাছে টাকার জন্য যেতে আপনার লজ্জা হলো না। ফরমুজুল হক বললেন, তাতে কি হয়েছে। ওসব উনি মনে রাখে না। সোহরাওয়ার্দী সাহেবের এই বাউন্ডেলে বদান্যতায় সবচেয়ে বেশি লাভবান হন পরলোকগত মানিক মিয়া। দৈনিক ইত্তেফাক সোহরাওয়ার্দী সাহেব প্রদত্ত বিশ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে যাত্রারম্ভ করে বলে শুনেছি। তারপরেও মানিক মিয়া তাঁর অনুগ্রহ অবিরত পেয়েছেন। অবশ্য মানিক মিয়ার প্রতিভা ছিল। কিন্তু সোহরাওয়ার্দী সাহেবের সহায়তা ব্যতীত মানিক মিয়া তার প্রতিভা কাজে লাগাতে পারতেন কি না সন্দেহ।
(প. ৩১৭ – ৩১৮)
শওকত ওসমানের ছেলের আত্মহত্যা
২৪.২.৬৪ তারিখে পাড়ায় এক দুর্ঘটনা ঘটলো। সে ঘটনার স্মৃতি আজও ভুলতে পারি নি। শওকত ওসমান এক পাড়ার পাশাপাশি বাসিন্দা। শওকতের চতুর্থ ছেলের বয়স তখন সাড়ে ষোল :ম্যাট্রিক পরিক্ষার্থী। সকালে ছোট ভাই-বোন এবং তার মার সঙ্গে ঝগড়া করে বাড়ি হতে বেরিয়ে যায়। সে আর বাড়ি ফিরে আসে নি। চাষাঢ়া স্টেশনের কাছে রেলগাড়ির নিচে গলা বাড়িয়ে দিয়ে আত্মহত্যা করে। রাত সাড়ে তিনটার সময় শোকে উন্মাদপ্রায় শওকত পুত্রের গলাকাটা লাশ নিয়ে ফিরে আসে। ছেলেটা খাতায় লিখে যায়, তার মৃত্যুর জন্য সে-ই দায়ী, অন্য কেউ নয়, দেশকে ভালবাসতে পারে নি বলেই জীবন শেষ করে দিলো। পরদিন সকালে ছেলের জানাজা এবং আজিমপুর কবরস্থানে দাফনে শামিল ছিলাম। শওকতের স্ত্রী এবং বড় একটা ছেলে গলাকাটা পশুর মতো ধড়ফড়িয়ে কাঁদছিল। সান্ত্বনা দেয়ার ভাষা খুঁজে পাই নি। জানাজায় শামিল ছিলেন জহুর, কামরুল হাসান, ইসমাইল মোহাম্মদ, সৈয়দ নুরুদ্দিন এবং আমরা পাড়ার লোক।
ডক্টর শহীদুল্লাহ
বাংলা একাডেমীর সেক্রেটারি তখন অধ্যাপক হোসেন সাহেব। কিছু বকেয়া বেতনের দরবার করার জন্য তাঁর কামরায় যাই। সেখানে হলো এক অপ্রত্যাশিত অভিজ্ঞতা। প্রবেশ করে দেখি, ডক্টর শহীদুল্লাহও সেখানে বসে আছেন। তাঁরও একই দরবার। ইসলামিক এ্যানসাইক্লোপেডিয়ার সম্পাদক হিসেবে তিনি মাসিক ১২০০ টাকা পাচ্ছিলেন। কিন্তু তাঁর ওপর বাংলা অভিধান সম্পাদনার দায়িত্বও ন্যস্ত। সুতরাং শেষোক্ত পদের নির্ধারিত বেতন ১০০০ টাকা একুনে এই ২২০০ টাকা দাবি তাঁর। না দিলে তিনি পদত্যাগ করবেন-এই ছিল তাঁর কথা।
কেন জানি না এ সময়ে কিছু দিন পূর্বের একটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা মনে পড়লো। ২১.৩.৬৪ তারিখে করাচি যাওয়ার দিন আমি কিছু বিলম্বে বিমানবন্দরে পৌঁছি। সুতরাং আমাকে সরাসরি লাউঞ্জে নিয়ে যাওয়া হয়। গিয়ে দেখি সেখানে ডক্টর শহীদুল্লাহ এবং ডক্টর এনামুল হক পাশাপাশি বসে আছেন। ওঁরা দু’জনই বিদ্বান ব্যক্তি এবং মুরুব্বি। আমি কুণ্ঠার সঙ্গে ওঁদের পাশে বসলাম। হঠাৎ শহীদুল্লাহ সাহেব আমাকে ইঙ্গিত করে এনামুল হক সাহেবকে বললেন, “ইনি আজকাল গ্রিক থেকে অনুবাদ করেন।” এনামুল হক জিগ্যেস করলেন, “গ্রিক জানেন না কি?” আমি উত্তর দিলাম, “কিছুই তো জানি না।”
শহীদুল্লাহ সাহেব জানতেন আমি ভাষাবিদ নই; গ্রিক জানার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। তাঁকে বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি হিসেবে শ্রদ্ধা করতাম। কিন্তু বিনা কারণে কেন যে তিনি আমাকে এভাবে আক্রমণ করলেন কিছুই বুঝতে পারলাম না। সেদিন হতে ডক্টর শহীদুল্লাহর প্রতি শ্রদ্ধাবোধ হারালাম।
(প. ৩২৩)
বাছবিচার
Latest posts by বাছবিচার (see all)
- আমি – জহির রায়হান (১৯৬৭) - অক্টোবর 31, 2024
- (বই থিকা) ঈশ্বর কোটির রঙ্গকৌতুক – কমলকুমার মজুমদার - অক্টোবর 12, 2024
- নজরুলের চিঠি: ফজিলাতুন্নেসা ও নারগিস’কে - জুন 13, 2024