এডিটোরিয়াল: ইতিহাস মেরামতে সৈয়দ হকের জিন্দেগি
সরকারের লগে আর্ট-কালচারের লোকদের/ইন্টেলেকচুয়ালদের রিলেশন খুবই কমন হিন্দু/মোসলমান বাঙালিদের ভিতর। বিদ্যাসাগর বা বেগম রোকেয়া ইংরাজের কোলে কোলে থাকতেন, সৈয়দ হকও তেমনই থাকতেন।
রঠা বৃটেনের রাণীর স্যার হইছেন, ফালাইয়া দিছিলেন বইলা মিছা কথা আছে বাজারে, আসলে কিন্তু ফালাবার ঘোষণার ১০ বছর পরে নিজের পেইন্টিং এক্সিবিশনের পোস্টার ছাপাইছেন স্যার রঠা হিসাবেই; পরে মহাত্মা গান্ধির/কংগ্রেসের চান্দা লইয়া বিশ্বভারতী বানাইছেন। অবাংলায় যদি নজর দেন, মীর্জা গালিব মোঘল আর ইংরাজ দুয়ের পয়সায়ই আর্ট করতেন বা খাইতেন। আরো আগে, শাহনামার ফেরদৌসিরে লইয়া ভাবতে পারেন।[pullquote][AWD_comments][/pullquote]
মে বি পোস্ট-রেনেসা মডার্ন এইজে পিপলের কাছে বই বেচাই যখন রাইটার/ইন্টেলেকচুয়ালদের কামাইয়ের রাস্তা হইয়া উঠলো, আমরা তখন কিছু এন্টি-গভর্নমেন্ট রাইটার/থিংকার পাইলাম; গ্রীক সক্রেটিসের কথা ভাবতে পারি, বাট ওনারো কামাইয়ের রাস্তা আছিল আম-জনতার কাছে বুদ্ধি বেচা।
১৯৬৬ সালে পাবলিশড সৈয়দ হক-মুনীর চৌধুরীদের ‘রণাঙ্গনে’ বই লইয়া জোর একটা আলাপ দেখতেছি এখন; i
ওনারা পাকিস্তানবাদী আছিলেন তখন, তাতে কি? এইটা আসলে সরকারের লগে খাতির করা বা রাখা; পরে তারা আওয়ামী লীগ ক্যাম্পে যাইতেই পারেন, তাতে কোন কন্ট্রাডিকশনও নাই আসলে! কারণ, তারা তো ঠিকই অনুমান করছিলেন নতুন পাওয়ারের ব্যাপারে; ১৯৭০ নির্বাচনে লীগই তো জিতলো, তারই তো গদিতে বইবার কথা, মানে ওনারা নেক্সট সরকারের লগে খাতির জমাইছিলেন।
এই দলবদল খুব স্মুথও আছিল না; মনে রাখা দরকার, পরে ঐ আইউবই কিন্তু মুনীর চৌধুরীরে জেলে ভরছে, উনি জেলে কবর নাটক লিখছেন। এই নাটক কিন্তু এন্টি-আইউব!
আমি ভাবি আসলে আরেকটা ব্যাপারে; ১৯৬৫ যুদ্ধের গরমে পাওয়া বাঙালি রাইটারদের অমন দোস্তি আইউব কেমনে হারাইয়া ফেললেন! এইটা আওয়ামী লীগের সাকসেস আসলে; ১৯৬৫-৬৬ সালে আইউব লৌহমানব, মানে লোহার আদম, পরের ৩/৪ বছরে আওয়ামী লীগ তারে সামরিক শাসক বানাইয়া দিছে পূবের পাকিস্তানে, পশ্চিম পাকিস্তানে আরো বেশি বানাইছে পিপলস পার্টি/ভুট্টো! লীগের এই সাকসেস আন্দাজ কইরা ওনারা আওয়ামী হইছেন, মানে পাওয়ারের কাছে থাকতেই চাইছেন–নো কন্ট্রাডিকশন!
বুদ্ধি বেচা লোকেরা আর আর ব্যবসায়ীদের মতোই, আপনের লগে আর না থাকলে ভাববেন কিনতে পারেন নাই, বা লিজ রিনিউ করতে পারেন নাই। কারো আন-কন্ডিশনাল পিরিত যদি পান তাইলে সে আপনের নাগর আসলে, তেমন কেউ কেউ বুদ্ধি/আর্টও ভালো পয়দা করতে পারে আলবত! কিন্তু ইন্টেলেকচুয়ালরা বাই ডিফল্ট আপনের নাগর হইবেন কেন, হনও না।
আপনের জন্য ভালো হইলো, আমগাছ লইয়া মাথা কম ঘামাইয়া আম খাওয়া; এই ব্যাপারে ছোটলোকের কাছে ছবক লইতে পারেন; তারা দেখেন আর্টের আব্বা আম্মা চেনেই না প্রায়, আরামসে আর্ট খাইতেছে–সৈয়দ হকের গানের কথাই ভাবেন! আর্টিস্টের ভিতর তারা নায়ক-নায়িকা-সিঙ্গারদের চেনে। এই চেনার ফল কি? ওনারা কোন সাবান গায়ে দেন, লাইফস্টাইলের এমন কিছু জিনিস নকল করলেও মামলা বা রাজনীতির বুদ্ধি লইতে যান না তাগো কাছে।
আমি অবশ্য সরকার বা জনতা কারো কোলেই পুরাপুরি থাকতে/উঠতে চাই না; আমার এজেন্ডা আছে, আমি সরকার বা জনতা দুই পক্ষরেই আমার বানানো রাস্তায় হাটাইতে চাই। আমি হিসাব কইরা দেখছি, সবচে দেমাগি রাইটার/ইন্টেলেকচুয়াল সবচে উপকারী। সৈয়দ হকের দেমাগ কম আছিল, মুনীর চৌধুরীর চাইতেও কম।
ইন্টেলেকচুয়ালের/আর্টিস্টের কাছে আমার পয়লা চাওয়া– দেমাগ। হক সাবের সেইটা কম কম থাকলেও ওনার জিন্দেগি ইতিহাসের আওয়ামী ন্যারেশনে ইন্টেনশনাল মিসিং লিংকগুলি দেখাইয়া দিতে পারে।
আইউব/পাকিস্তান পিরিতি, এন্টি-ইন্ডিয়ান হওয়া, ইসলামি ভাব চর্চা, আম-জনতার ভাব/বুলিতে আর্ট করতে পারলেও সেইটা ঔন না কইরা কোলকাতার পিঠ চাপড়ানি পাইবার খায়েশ, ঘোর বাঙালি নেশনালিস্ট হওয়া–এইসব চেঞ্জের ভিতর দিয়া গেছে তো পুবের বাঙালরা! আওয়ামী ইতিহাস এর অনেকগুলি লুকায়। সৈয়দ হকের জিন্দেগি ঐ ইতিহাসকে স্ট্রেইটেন করে, আমাদের জন্য ভাল কেস স্টাডি। তাই তো, ভারত বা পাকিস্তান কেউ তো পরম দোস্ত না আমাদের! হক সাবের জিন্দেগি ফকফকা কইরা দিতেছে তো পুরা!
আমাদের নিজেদের পোটেনশিয়ালকে ঔন না করার নজির উনি,ii আমাদের হাটার রাস্তায় যেইসব টার্ন লওয়া ঠিক হবে না সেইগুলা জানা থাকার লাভ অনেক। হক সাবের ওবিডিয়েন্স আর টার্নগুলি এড়াইয়া এড়াইয়া যাবো আমরা, নেতাইয়া পড়তে নিলেই ওনারে মনে করলে দম পাইবো ফের!
[youtube id=”Swq-aSX8fic”]
রক মনু
Latest posts by রক মনু (see all)
- হিস্ট্রিওগেরাফি এন্ড পলিটিকেল লয়ালটি - অক্টোবর 18, 2024
- খলিফা হইয়া ওঠা - সেপ্টেম্বর 2, 2024
- আমাদের নিয়ত এবং বাংলাদেশের ফিউচার - আগস্ট 25, 2024