Main menu

পোলা-মাইয়া-হিজড়া মানুষেরা

মাঝে মাঝেই দেখি, নারীবাদ আর পুরুষবাদরে এক পাল্লায় মাপতে চান অনেকে, কেউ কেউ ঘেন্না জানান। তারা মানবতাবাদে ফয়সালা দেখেন দুনিয়ার।

এনারা মনে হয় মহাত্মা গান্ধি আর রঠার ফ্যান। শুইনা অনেকের ভালোও লাগে, দামী কথা মনে হইতে পারে।

তো, এখন যদি সিম্পল দুয়েকটা হিস্ট্রিক্যল ঘটনা দেখেন, কেমন হয়?[pullquote][AWD_comments][/pullquote]

মানবতাবাদের আতুরঘরগুলির খবর লইয়েন প্লিজ। ধরেন, ফ্রান্স একটা; দুই-তিনশো বছর ওনারা মানবতাবাদী হইয়া আছেন, কিন্তু ফ্রান্সের মাইয়ারা ভোট দিতে পারলো ১৯৪৫ সালে আইসা, মহান সেই মানবতাবাদী ফ্রেন্স রেভ্যুলুশনেরও ১৫০ বছর পরে, তাইলে মানবতাবাদ কি করছিল এতদিন? এমনকি এইটা কি মানবতাবাদ দিছে? নো। ইউরোপে গড়পরতা ১৯২০ দশক থেকে মাইয়ারা ভোট দিতে পারে; খেয়াল করেন, ততদিনে ফেমিনিজম ইউরোপে ভালোই তোলপাড় করতেছে! সো, ঐটা আসলে মানবতাবাদের বিরুদ্ধে ফাইট কইরা আদায় করছে ফেমিনিজম। পর্তুগালে এই ফাইটে পুরা জিততে লাগছে ১৯৭৬ সাল তক!

ওদিকে খেয়াল করেন, মডার্ন স্লেভারির ট্রেড শুরুই হইছে ইউরোপে মানবতাবাদ গজাবার পরে! মানবতাবাদ না হইলে কঠিন আছিল; কেননা, তার আগে রিলিজিয়নের শাসনের অনেক মুশকিল থাকলেও আগের খ্রিস্টিয়ানিটি কালাদের মানুষই মনে করতো, মানবতাবাদ যে বিবর্তনবাদ/ইভুল্যুশনের আইডিয়া বানাইছে সেইটাই বরং কালাদের ইতর হিসাবে দেখার লাইসেন্স দিল!

এদিকে, মহাত্মা গান্ধির বর্ণবাদের খবর জানতে পারবেন একটু খবর লইলেই; রঠার নিজের মাইয়া বাল্যবিয়ার শিকার হইয়া মরছে, পড়ায় নাই রঠা তাগো। তার মাইয়া ক্যারেক্টারগুলিরে আমার মনে হইছে অক্সিলারি হিউম্যান বিইং; নন্দিনীরে মনে হইতে পারে বেহেস্তের সুবাস, কিন্তু আখেরে সে ইনোসেন্ট ইগনাইটার মাত্র, অক্সিলারিই তো! মৃম্ময়ী গল্পের ভিতর ধীরে ধীরে অক্সিলারি হইয়া উঠতেছে, হৈমন্তি অক্সিলারি হইতে রাজি হইতে পারলো না, বেশি বয়সে বিয়া হইছে বইলা ফ্লেক্সিবিলিটি হারাইছে, আসল পুরুষের হাতেও পড়ে নাই, তাই মরতে হইলো হৈমন্তিরে। মাইয়াদের জন্য নিয়তির কানুন দেখাইয়া গেছেন রঠা।

কিন্তু ইতিহাসের এই ধাপে আইসা তো মানুষ একমাত্র ভাবনার ইস্যু না! দুনিয়ারে  খাইয়া ফেলছে মানুষ, তারপর বিষ খাওয়াইছে; দুনিয়ার গাছ খাইছে, জমিতে এমনভাবেই বিষ দিছে যে ঘাস হয় না আর, সাগরের পানিতে বিষ দিয়া মাছের ক্যান্সার বানাইয়া দিছে। দুনিয়ায় মানুষের জিন্দা থাকার শর্তগুলিরেই খুন করছে মানুষ। এইসব গত ৫০০ বছর মানবতাবাদেরই শাসনের ফল, আকাম। মাইয়ারা মানবতাবাদের ভিকটিমদের একজন মাত্র, পুরা দুনিয়াই ভিকটিম আসলে!

ইতিহাসে ফেমিনিজমের ইন্টারভেনশনই দুনিয়া এবং মানুষের শেষ আশা। ক্যাপিটালিজমের টর্চার থেকে মুক্তি দিতে যেই মার্ক্সিজম পাইলাম আমরা, সেও তো নেচারের দুশমন; কেননা, দুইটা তো আসলে মানবতাবাদেরই দুইটা প্যারালাল প্রজেক্ট!

ফেমিনিজম মানুষেরে নেচারে সিচুয়েট করে আবার, মানুষের বাঁচার শর্তগুলি দেখাইয়া দেয়; মানবতাবাদ-ক্যাপিটালিজম-মার্ক্সিজম মানুষেরে যেই গডলি স্পিরিট বানাইয়া তুলছিল, ফেমিনিজম তারে দুনিয়ার আরেকটা স্পেসিস হিসাবে দেখাইয়া দেয়। আজকে যদি মানবতাবাদ বা মার্ক্সিজমরে আগের চাইতে অনেক ফ্লেক্সিবল মনে হয়, সেনসিটিভ লাগে, সেইটা আসলে ফেমিনিজমেরই গিফট, ফেমিনিজম ইতিহাসে হাজির হবার আগে তো ঐ ফ্লেক্সিবিলিটি পাই নাই আমরা! ঐ দুইটাতে ফ্লেক্সিবিলিটি তো দিছেই, ইভেন আজকের এনভায়রনমেন্টের আম্মাও ফেমিনিজম!

এই ফেমিনিজমকে বুঝতে অনেকেই যে ঝামেলায় পড়েন তার একটা কারণ মনে হয় শব্দের অর্থ করার আদি ইভোল্যুশনিস্ট ঢঙ। এই ঢঙটা শব্দের অর্থ বোঝেন তার আদি অরিজিন দিয়া; সেই কারণে এনারা ফেমিনিজম কইলে বোঝেন ফিমেলের শাসন, আজকের পোলারে মাইয়া দিয়া রিপ্লেস করা! অথচ, অনেক অনেক অনেক ফেমিনিজম থাকলেও অমন এজেন্ডা কারোই নাই! সমাজ-কালচার-ইতিহাসে শব্দের যেই অর্থ আছে সেইটাতে নজর দিতে রাজি না হইয়া ওনারা অরিজিনে যাইতে চান, ইতিহাসে এই আগ্রহ সবচে ভায়োলেন্ট রূপে আমরা পাইছি রেসিজমে! অরিজিন আর ইভোল্যুশনের এই নেশায় আমরা এমনকি কালা মানুষেরে মানুষের ইজ্জতই দেই নাই খোদ ঐ মানবতাবাদের শাসনের আমলেই!

কিন্তু শব্দ অরিজিনের লগে ঐভাবে গাটছড়া বাইন্ধা থাকে না তো! সিম্পল দুইটা নজির ভাবতে পারি আমরা। হিন্দিতে মানুষ মানে তো আদমী; অরিজিনের হিসাবে তাইলে কি হিন্দিভাষী হিন্দুরা নিজেদের আদমের বাচ্চা-কাচ্ছা হিসাবে পরিচয় দিতেছে? না তো! তাইলে তো, তারা আর হিন্দুই থাকে না! হিন্দুধর্মে মনুর বাচ্চারাই আদমী, তাই আদমী মানে হিন্দিতে মনুর বাচ্চারাই! আবার হিন্দিভাষী মোসলমান-খ্রিস্টানদের কাছে আদমী মানে আদমের বাচ্চারাই!

এদিকে, বাংলায়? শব্দের অরিজিনের হিসাবে মানুষ তো মনুর বাচ্চারা, তাই মোসলমান বাঙালিরা কি আদিপুরুষ হিসাবে আদমেরে মানে না? না তো! মানুষ মানেই আদমের বাচ্চা।

আরো মজার নজির হইলো পুরুষ শব্দটা; অরিজিন মোতাবেক এইটার মানে পার্সন, বাংলা-ইংরাজি গ্রামার তুলনা করলে বুঝবেন সিধা, তাতে পোলা, মাইয়া, হিজড়া–সবাই আসলে পুরুষ! কিন্তু দেখেন, ঐ অরিজিনবাদীরাই পুরুষ কইলে বোঝেন খালি পোলা!

এইভাবেই অরিজিন মরে, নতুন সমাজ-কালচার, কনটেক্সটে নয়া অর্থ গজায়। অরিজিনের চিন্তা আমাদের আন্ধা বানাইয়া ফেলতে পারে। হুশিয়ার!

 

The following two tabs change content below.
Avatar photo

রক মনু

কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →