Main menu

ফিলোসফি আর পলিটিক্স – অ্যালান বাদিউ

ফরাসি ফিলোসফার অ্যালান বাদিউ উনার এই লেখাটা পরে আরো বিস্তারিত করছেন ‌’ইনফিনিট থট’ (২০০৩/২০০৫) বইয়ে। ইনসাফ, ট্রুথ আর ইক্যুয়ালিটি নিয়া কথাগুলি’রে আরো এক্সপ্লেইন করছেন। এই জিনিসগুলি যেমন খুব অবজেক্টিভ টার্ম না, আবার সাবজেক্টিভ সিচুয়েশনও না। বাদিউ’র মতে, যেই পলিটিক্যাল ইন্সটিটিউটগুলির কাছে আমরা এক্সপেক্ট করি যে, ইনসাফ করবে; তাদের (এখনকার লিবারাল ডেমোক্রেটিক স্টেইট-ই হোক আর পুরানা সোশ্যালিস্ট স্টেইট) পলিটিক্যাল স্ট্রাকচারের কারণেই ফিলোসফিক্যালি এইটা পসিবল না। বরং যে কোন রিভোল্ট বা রেভিউলেশন শুরুই হয়, ইনসাফ আর ইক্যুয়ালিটির নাম নিয়া। ইনসাফ হইতেছে ইনকনসিসটেন্সি’র জায়গাটা যেইখানে পলিটিক্যাল পরিস্থিতিগুলি বাঁইকা যাইতে শুরু করে।

তো, বাদিউ ফিলোসফি’র জায়গা থিকাই পলিটিক্যাল জায়গাগুলিরে দেখছেন যেইখানে পলিটিক্যাল সিচুয়েশনগুলি অনেক ক্রিটিক্যাল মোমেন্টে ফিলোসফি’র জায়গাটাতে চইলা আসতে পারে বা না আইসা পারে না। একজেক্ট ফিলোসফিক্যাল পলিটিক্যাল স্ট্রাকচার পসিবল কিনা বা কেমনে পসিবল হইতে পারে – ওই জায়গাটাতে উনি যান নাই। রিলেশনটারেই উনি যাচাই করতে চাইছেন। 

এই ইংরেজি ভার্সন’টা ছাপা হইছিলো ‘রেডিক্যাল ফিলোসফি’র ৯৬ নাম্বার পাবলিকেশনে (জুলাই/অগাস্ট ১৯৯৯)। ফরাসী থিকা ইংরেজি’তে কনভার্ট করছিলেন Thelma Sowley.

ই. হা.

————————————————————

প্লেটো থিকা শুরু কইরা আজকে পর্যন্ত, একটা শব্দ আছে যেইটা পলিটিক্স নিয়া ফিলোসফারদের কনসার্নটারে পুরাপুরি কইতে পারে। এই শব্দটা হইতেছে “ইনসাফ” (Justice)। পলিটিক্সের দিকে ফিলোসফারের প্রশ্নটা এইরকম: একটা ইনসাফের পলিটিক্যাল ওরিয়েন্টেশন কি সম্ভব? এমন একটা ওরিয়েন্টেশন যেইটা চিন্তার প্রতি ইনসাফ করতে পারবো? যেইটা দিয়া আমরা শুরু করতে পারি, সেইটা হইতেছে: বে-ইনসাফি’টা (বা অবিচার’টা) ক্লিয়ার, ইনসাফ করাটা ঝাপসা। যার প্রতি অবিচার করা হইলো, সে এইটা এমনিতেই টের পায়। কিন্তু ইনসাফ’টা যাচাই করবো কেডা? অবিচারের একটা এফেক্ট আছে – একটা যন্ত্রণা হয়, একটা বিদ্রোহ দেখা দেয়। অথচ দেখেন, এমন কিছুই নাই যা ইনসাফ’রে বুঝায়, যেইটারে কোন ঘটনা দিয়া বা অনভূতি দিয়া দেখানো সম্ভব।[pullquote][AWD_comments][/pullquote]

তাইলে কি আমরা এইটা বইলাই বাদ দিবো যে, ইনসাফ হইতেছে খালি অবিচার না করাটা? এইটা কি দুইবার বাতিল করার পরে একটা ফাঁপা নিরপেক্ষতা? আমি এইটা মনে করি না। আমি এইটাও মনে করি না যে, অবিচার দেখতে পাওয়ার, এক্সপেরিয়েন্স করার বা সাবজেক্টিভ একটা জিনিস; বা ইনসাফ হইতেছে বুঝতে পারার, বা যুক্তি’র বা অবজেক্টিভ একটা ব্যাপার। অবিচার ইনসাফের ইমিডিয়েট কোন বিশৃঙ্খলা না, যেইখানে ইনসাফ হইতেছে আদর্শ একটা অবস্থা।

‘ইনসাফ’ হইতেছে ফিলোসফি’র একটা শব্দ, যদি অন্তত আমরা আইনি অর্থগুলিকে একপাশে সরাইয়া রাখি (আমরা অবশ্যই এইটা করতেছি), যেইটা পুরাপুরি পুলিশ এবং ম্যাজিস্ট্রেটদের অনুগত একটা জিনিস। কিন্তু ফিলোসফি’র মধ্যে এই শব্দটা শর্তের ভিতর আছে। এইটা পলিটিক্যাল অবস্থার শর্তের ভিতরে আছে। কারণ ফিলোসফি জানে সে এই সত্যগুলিরে পৃথিবীতে রিয়ালাইজ করতে পারবো না, যেইখানে এইটারে যাচাই করা যাইবো। এমনকি প্লেটোও জানতেন, ইনসাফের লাইগা, এইটা ধইরা নিছিলেন যে, ফিলোসফারই রাজা হইবেন, কিন্তু এই ধরনের রাজা হওয়ার ব্যাপারটা ফিলোসফির উপর ডিপেন্ড করে না। এটা ডিপেন্ড করে পলিটিক্যাল পরিস্থিতির উপর, যেইটা থিকা বাইর হওয়াটা সম্ভব না। আমরা সেইটারেই “ইনসাফ” কইতে পারি যেইটা দিয়া একটা ফিলোসফি একটা পলিটিক্যাল অরিয়েন্টশনের ভিতরে সত্যের সম্ভাবনা’রে দেখাইতে পারে।

 

alain-badious-quotes-2

 

আমরা জানি, বাস্তবের বিশাল পলিটিক্যাল পরিস্থিতি সেইখানে এই সত্যি’রে নিয়া কিছুই করার নাই। এইটা পাওয়ার আর অপনিয়নগুলার একটা জঘন্য মিকচার’রে এক জায়গায় নিয়া আসে। যে সাবজেক্টিটিভিটি এইটারে সতেজ রাখে সেইটা হইতেছে নানান গোষ্ঠী আর লবি, ইলেকশনের চূড়ান্ত বাড়াবাড়ি আর এবং কমিউনিটিগুলির আন্ধা-গুন্ধা মারামারি। ফিলোসফি’র এইগুলি নিয়া কিছু বলার নাই, কারণ ফিলোসফি খালি চিন্তা (thought) নিয়া ভাবে, কিন্তু এই পরিস্থিতিগুলি’রে স্পষ্টভাবেই অ-চিন্তা (non-thoughts) হিসাবে দেখা যায়। যাদের এইখানে স্বার্থ আছে তাদের কাছে এই সাবজেক্টিভ এলিমেন্টের গুরুত্ব আছে।

ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায, কয়েকটা রাজনৈতিক পরিস্থিতি’র একটা সত্যের সাথে একটা সর্ম্পক ছিল বা থাকবে। একটা সত্যি যেইটা যৌথতার মতো একটা ব্যাপার। এইগুলি রেয়ার কিছু চেষ্টা, অনেক সময় সংক্ষিপ্ত, কিন্তু এইগুলি খালি ফিলোসফি’র শর্তের অধীনের ঘটনা, যেইটা ফিলোসফি চিন্তা করতে পারে। এইসব পলিটিক্যাল সিকোয়েন্সগুলি একটা রকমের, কোন গন্তব্যের দিকে যায় নাই, তারা কোন বিরাট ইতিহাসও বানাইতে পারে নাই। যদিও, ফিলোসফি’র জায়গা থিকা জিনিসগুলিরে আলাদা একটা কমন ফিচার হিসাবে দেখা যায়। এই ফিচার’টা হইতেছে যে, এই পরিস্থিতিগুলি চায় মানুষজন খালি তাদের একদম জেনেরিক মানবতা নিয়া আগাইয়া আসুক। তারা তাদের কাজের মূলনীতি’র ভিতর দিয়া পার্টিকুলার কোন স্বার্থ’রে প্রেফারেন্স দিবে না। এই পলিটিক্যাল পরিস্থিতিগুলি এমন একটা কালেক্টিভ সামর্থ্য’রে রিপ্রেজেন্ট করে যা তার প্রতিনিধিদেরকে পুরাপুরি সমতা’র কথা বুঝায়।

এই ‘সমতা’ (equality) কি মিন করে? সমতা মিন করে যে, এই পলিটিক্যাল অ্যাক্টর সাইন হিসাবে তার স্পেসিফিক মানবিক সামর্থ্যের প্রতিনিধিত্বই করতেছেন। স্বার্থ’টা স্পেসিফিক একটা মানবিক সামর্থ্যের ব্যাপার না। প্রতিটা বাঁইচা থাকা সত্তারই তাদের বাঁইচা থাকার লাইগা স্বার্থগুলি রক্ষার করার  একটা জরুরত আছে। এই স্পেসিফিক মানবিক সামর্থ্য’টা হইতেছে আসলে চিন্তা, আর এই চিন্তা আর কিছুই না যেইটার ভিতর দিয়া একটা সত্যের পথ’রে বাইছা নেয়া যায় এবং মানুষ পশুটারে পার করা যায়।

এইভাবে একটা পলিটিক্যাল পরিস্থিতি ফিলোসফি’র কাছে সাবমিট করতে পারে ইনসাফের একটা ধারণা’র ভিতর, যেইখানে একটা পরিস্থিতি’র ইউনিক স্বতঃসিদ্ধতা’টা হইতেছে যে : মানুষ ভাবতে পারে যে, মানুষ সত্যের যোগ্য। সেইন্ট-জাস্ট (Saint-Just) এইরকম পুরাপুরি সমতাবাদী স্বীকৃতির কথা ভাবছিলেন, সত্যের ক্যাপাসিটি নিয়া, ১৭৯৪ সালের এপ্রিলে, কনভেশনে, পাবলিক কনশাসনেস নিয়া কইছিলেন: ‘আপনাদের একটা পাবলিক কনশাসনেস গইড়া উঠুক, যেইখানে সকল হৃদয় ভালো আর মন্দের অনুভূতির প্রতি সমান হবে, আর এই কনশাসনেসের প্রবণতা মানুষরে নিয়া যাক সবার ভালোর দিকে।’ আর পুরোপুরি একটা ভিন্ন রাজনৈতিক পরিস্থিতি’তে, চীনে কালচারাল রেভিউলেশনের সময় আমরা একই নীতি খুঁইজা পাই, উদহারণস্বরূপ ১৯৬৬ সালের ৮ই অগাস্ট ১৬ দফা সিদ্ধান্তে: ‘জনগণকে নিজেদেরকে শিক্ষিত হইয়া উঠতে দেন এই মহান বিপ্লবী আন্দোলনের মধ্যে দিয়া, তাদের নিজেদেরকে ঠিক করতে দেন, আলাদা করতে দেন কোনটা ইনসাফ আর কোনটা তা না।”

 

Alain-Badiou-Quotes-4

 

—————————————————————–
ইংরেজী টেক্সট: http://anselmocarranco.tripod.com/id16.html

 

The following two tabs change content below.
Avatar photo
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →