MANIFESTO OF RaTa (রঠা) ।। মে ই & তু খা
সোশ্যাল মিডিয়া এবং বিভিন্ন পার্সোনাল স্পেস/ব্লগ থেকে লেখা এই বিভাগে পাবলিশ করবো আমরা; ক্যাটেগরি নামেই একভাবে ক্লিয়ার করা হইছে যে, আমাদের বিবেচনায় যেগুলি আরো বেশি রিডারের মাঝে ছড়ানো দরকার এবং আর্কাইভিং ভ্যালু আছে সেগুলিই রাখা হবে এই ক্যাটেগরিতে। যে লেখাগুলিকে অমন মনে হবে তার সবগুলি ছাপাইতে পারবো না মে বি; এখানে আমাদের চোখে পড়া বা আওতা এবং রাইটারের পারমিশন–এইসব ইস্যু আছে; ইস্যুগুলি উতরাইয়া যেইটার বেলায় পারবো সেগুলিই ছাপাতে পারবো মাত্র।
………………………………………………….
।। মেহরাব ইফতি ।। তুহিন খান ।।
রঠা বিষয়ক ৩ প্রস্তাব :
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুররে ‘রঠা’ বলাতে কোনো গ্রাম্যতা নাই। রঠার নানাবিধ অ্যাক্টিভিজম হইতে পারে; পলিটিকাল, কালচারাল, ইন্ডিভিজ্যুয়াল ইটিসি; আমার মেনিফেস্টো হইল যে ‘রঠা’ এমন টাইম পিরিয়ডে উচ্চারিত হইতেছে ইভেন ভবিষ্যতে আরো হবে যেখানে এই পয়লা মাইনসে টেকনোলজির ‘স্লিমনেসের’ কাছে হারতেছে; কোনোভাবেই এরে কপ করা যাইতেছে না; রবীন্দ্রনাথ ঠাকুররে রঠা করার মাধ্যমে এই স্লিমনেসের লগেও একটা ফাইট দেওয়া হইতেছে; আমরা তো দিনমান টেক লইয়াই পার করতেছি; এখন কনশাসলি ‘রঠা’ তৈয়ার হওয়ার পিছনে একপ্রকার আনকনশাস ‘টেক’ স্লিমনেসও কাজ করে (যে কোনো কনশাস-ই তৈয়ার হইতেছে যে কোনো প্রকারের জিনিস হইতে); টেক এর যে ফিলোসফি যেটা মানুষ কপ করতে পারতেছে না অথবা পারতেছে স্ট্রাগল করতে করতে কিছুটা, সেই রেসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুররে রঠা হিশাবে নামাইয়া তো দেওয়া গেলো; আলহামদুলিল্লাহ![pullquote][AWD_comments][/pullquote]
(২)
রঠার আরেক প্রকার প্রস্তাব কি হইতে পারে? স্লিমনেস বাদে। এইটা কি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুররে ছোট করা হয়? “রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর”- এই নামের মধ্যে যে ‘ফেনোমেনন’ আছে, যেইটার কারণে আম ও খাস উভয়ই তার জেনারেল ক্রিটিকের বাইরে আরো আরো ক্রিটিক করার সীমাবদ্ধতা নিয়া বইসা থাকে (এই এমবিপিএসের জমানায়!), তারে একপ্রকার গতি (সাহস) দেয় এই রঠা; এইটা একটা ‘মুভ’ যেটা অই আইডিয়াল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আইডিয়াল মূর্তিটারে কেয়ার করে না; ডরায় না। ক্রিটিক করার লাইগ্যা এই ‘ডর’ থেকে মুক্তি পাওয়া তো জরুরিই আছিল, নাকি!
(৩)
এইটা রঠার তৃতীয় প্রস্তাব হিসাবে ধরা যাইতে পারে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুররে রঠা বললে নাম বিকৃত করা হয় কি? না, হয় না। এইটা তো অবিকৃতই রাখা হইছে আসলে। রবীন্দ্রনাথের ‘র’ আর ঠাকুরের ‘ঠ’; অতিরিক্ত কিছু যেমন কাসেমরে কাসেইম্ম্যা কিংবা বিকৃত অর্থে স্যার-রে ষাঁড় এইরকম বাড়তি কোনো কিছু + এবং – করা হয় নাই। এইভাবে ছাড়া আর কোনোভাবে কি আপনে স্লিম করতে চান? রবিঠাকুর? রবীন্দ্র? কিংবা, রবি?
এইটা করলে কিন্তু প্রতিবার-ই নামের অর্থ পাল্টাইয়া যাইতেছে। একবার দেবরাজ ইন্দ্র বাদ যায়, একবার নাথ (প্রভু) বাদ যায়। সো, সমস্যা তো! কি দরকার ডিস্টর্শন করার!
রঠার ফ্লেক্সিবিলিটি, এস্থেটিক্স :
রঠা’ শুনতে নাইস লাগে। কাজী নজরুল ইসলামরে ‘কানই’ করলে নাইস লাগে না তো! বিকজ উনারে স্লিম করার লাগি আরো পপ-টাইটেল আছে। যেমনঃ বিদ্রোহী কবি। যেমন ধরেন, CR7. নাইস লাগে। কিন্তু ধরেন, ZZ5. এইটারে তো কেউ চিনেন না লাগতেছে! কিন্তু, এইটা কিন্তু আরেকটা রূপে পাওয়া যায়। সেটা হইলঃ Zizou। তো সবগুলার স্লিমনেস কিন্তু একই ওয়েতে হইবে এমন না!
আবার মাঝারি জনপ্রিয় আছে। D K (দিনেশ কার্তিক)। আশা করি সে তার নামটার রিয়াল ব্রান্ডিং কইরা পয়লা কাতারে নিয়া আসতে পারবে। সম্প্রতি শুনলাম সে নাকি এইটার আরেক দফা আপডেট দিয়া কইতেছেঃ D K ভার্সন 2। হাউ সুইট! এইরকম ভাবেই মাঝারি জনপ্রিয় ‘জীদা’-রে আমরা জনপ্রিয় করতে পারি কিন্তু!
রঠা বিষয়ক পরিসংখ্যান :
এইবার স্ট্যাটিস্টিক। ‘রঠা’ হ্যাশ ট্যাগ স্ট্যাটাস হিসাবে ফেবুতে পোস্টানো হইছে ৫৬ বার। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিভিন্ন গানে, কবিতা, কোটেশন, পুচুপুচু আবেগীয় প্রেমের মোমেন্ট, হিস্ট্রি ইত্যাদিতে হ্যাশ ট্যাগ গুলা ইয়ুজ করা হইছে। ৫৬ হ্যাশ ট্যাগ ইন্ডিভিজ্যুয়াল কেউ ইয়ুজ করেন নাই; আলাদা আলাদা অনেকেই। সুতরাং, এইটা পপ-কালচার অ্যান্ড নন+ পপ-কালচারে গাঢ়ভাবে ইনভলব হওয়ার দিকেই আছে। স্ট্যাটাসগুলায় ১৬ সালের প্রাধান্য দেখা গেছে। তরুণীরা কেউ কেউ (যারা এই হ্যাশ ট্যাগ ইয়ুজ করছেন) এইটারে ‘আদরীয়’ হিসাবেও দেখতে ও দেখাইতে চাচ্ছেন। নিচে দোহাই:
নোট ১ : হ্যাশ ট্যাগ ছাড়া অনুমানিক রঠা লেখা কতগুলা পোস্ট হইছে এইটা গোনা সম্ভব তো হইবে না আর! বিপুল সম্ভাবনাটা তাইলে বুঝতে পারা যাইত। 🙁
নোট ২ : রক মনু হ্যাশ ট্যাগ বিষয়ে জানাইলেন, “ফেসবুকে তখনো হ্যাশট্যাগ দেয় নাই মনে হয়… ২০১৫’তে রঠা লিখছি বহুবার, কবে বা কেমনে শুরু মনে নাই… বাট হ্যাশট্যাগ যেমন এখনো খুব কমই ইউজ করি… সো রঠা আরো অনেকই পাইবেন… 🙂 ”
নোট ৩ : হ্যাশ ট্যাগ অন্যান্য মাধ্যমেও থাকতে পারে যেমনঃ গুগল প্লাস, ইন্সটা কিংবা টুইটার। সেগুলা গোনা সম্ভব হয় নাই।
___________________________________________________________
রঠা উইথ মকারি :
(১)
‘রঠা’ লেখলে নাকি গ্রাম্যতা হয়, সাম্প্রদায়িকতা হয়, নামবিকৃতি হয়। আর নামবিকৃতি তো কবিরা গুনাহ।আচ্ছা, ‘র.ঠা.’ লেখলে কী গুনাহ কিছুটা কমবে? ঈশ্বরচন্দ্র-মোতাবেক যতি ইউজ করছি। গুনাহ কিছুটা কইমা তো সগিরা হওয়ার কথা।কথা হইলো, র.ঠা.-য় যদি সাম্প্রদায়িকতা বা গ্রাম্যতা না হয়, তাইলে ‘রঠা’য় হবে ক্যান? যুক্তিটা কী আসলে?
(২)
এই যে, ‘ঢাবি’, ‘খুবি’, ‘চবি’, ‘কুবি’, ‘বেরবি’, ‘জাবি’, ‘জবি’, ‘রাবি’, এমনকি ‘বমুশেরকৃবি’! ভাবা যায়! ‘বমুশেরকৃবি’ যারা লেখে, ওদের তো নামবিকৃতি আর গ্রাম্যতার দায়ে, শহরছাড়া করা উচিত, উপরন্তু, দেশদ্রোহীতার দায়ে ফাঁসিতে ঝুলানো উচিত! বঙ্গবন্ধুর নাম বিকৃত করে, সাহস কতবড়!
যারা এই এভ্রিবিয়েশানগুলা ইউজ করেন, উনারা এই নামবিকৃতকরণমূলক গ্রাম্যতা নিয়া কীভাবে পড়েন ভার্সিটিতে, খোদা মালুম! এইখানে একটা ভালো কথা মনে আসলো। রঠা-র পরিবর্তে কেউ কেউ দেখলাম নজরুলরে ‘কানই’ লেখার উদাহরণ আনছেন। হাহা, মানে ওই পুরান ঝগড়া আরকি, রবিবাবুরে কিছু কইলেই তারে নজরুলপন্থী ধইরা ‘নজরুলরে গাইল দিমু কিন্তু’টাইপ প্রতিরোধ! ফানি। নজরুলরে ‘কানই’ লেখলে কার বাপের কী! কত বড় বড় অপমান নজরুল এই সেক্যুলার সমাজে, ধার্মিক সমাজে অহরহ পায়। তার নামের এব্রিভিয়েশন করলে কী এমন অপমান হইব আর! হাহা! কথা হইলো ‘কানই’ পাবলিক খাবে না। ‘জীদা’ খাইতে পারে।
(৩)
ধরেন, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম সংক্ষেপ করলে হয় ‘বিবি’। আর যদি ‘বিশ্ব’ না থাকত, তাইলে হইতো ‘ভাবি’। কোলকাতার ওদিকে ‘ঢাবি’, ‘চবি’টাইপ এব্রিভিয়েশন আছে কিনা জানি না। থাকলে বিশ্বভারতীরে ‘রঠার বিবি’ বা ‘রঠার ভাবি’ বলত লোকে (বলে নাকি?)। রঠাপূজারীদের তখন কী অবস্থা হইতো খোদা মালুম!
অ্যাকাডেমিক ফ্যাক্ট চেক :
লিগালি, মানে যদি ব্যাকরণের আলাপে যাই, ‘রঠা’ বা ‘কানই’ বা ‘জীদা’ সহি। বাঙলা অ্যাকাডেমির অভিধানে লেখকদের নামের এইটাইপ এব্রিভিয়েশান ইউজ হইছে, ডট ছাড়াই। কিন্তু, খেয়াল করেন, আপনি যে এব্রিভিয়েশান করবেন, শ্রুতিমাধুর্য আর সহজবোধ্যতার দিকে মিনিমাম খেয়াল দিতে হবে, তখনই ওইটা পপুলার কালচার হবে। উদাহরণ কই, অ্যাকাডেমির ডিকশনারিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামের এব্রিভিয়েশন ‘রঠা’, বাট কাজী নজরুল ইসলামের নামের এব্রিভিয়েশান ‘নই’, ‘কানই’ না। আবার, রজনীকান্ত সেন-র এব্রিভিয়েশান ‘রজসে’, ‘রসে’ না। মানে, যার নাম যেইভাবে সুন্দর ও সহজ শুনায়, সেইভাবেই এব্রিভিয়েশান হবে। ‘রঠা’ এইজন্যেই এত পপুলার হইছে যে, এইটা শুনতে ও বলতে সহজ ও মজার।
রঠা আলাপের ইতি:
‘রঠা’ নিয়া আলাপের ইতি টানি। আমি রবীন্দ্রনাথ লেখি, রবিবাবু লেখি, ঠাকুরমশাই লেখি, রঠাও লেখি। রঠা আমার প্রিয়, পছন্দেরও। আমি রঠার পক্ষে। রঠা-ব্যাকরণে শুদ্ধ ও সিদ্ধ। এখন কেউ যদি ভাবেন যে, রবিবাবুরে নিয়া বাঙলাদেশে এখন খালি গালাগালি আর খিস্তি হয়, কেউ তারে ভালো কয় না (ফাও কথা। রবিবাবুর সমালোচনা অনেকেই যুক্তিতর্ক দিয়াই করে এখনও, রক মনু আর রিফাত হাসান তাদের অন্যতম। আর যারা এগুলা এক্সট্রিম পর্যায়ে করে, তাদের কাজ রিএকশনমূলক; ঠাকুরমশাইরে নিয়া যে পূজা ও ধান্দাবাজি হইছে এদ্দিন, তার রিএকশন। খুব স্বাভাবিক ব্যাপার।), আর তাই কেউ ‘রঠা’ লেখা মানেই তার দিলেও লুকায়ে আছে রবির প্রতি দ্বেষ দুশমনি, তাইলে আমাদের কিছু তো করার নাই। এইটা আপনের দিলের ব্যাপার।
শেষের আগে একটা মজার তথ্য দিয়া যাই। এইটা অসিরিয়াস আলাপ। অ্যাকাডেমির ডিকশনারিতে মাইকেল মধুসূদন দত্তের এব্রিভিয়েশান হইলো ‘মদ’, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর ‘নীচ’, কালীপ্রসন্ন দাসগুপ্তের ‘কাগু’, বিহারীলাল চক্রবর্তীর ‘বিচ’, বদরুদ্দীন উমরের ‘বউ’, আনিসুজ্জামানের ‘আনিস’! দেখছেন অবস্থা! 😛
মেহেরাব ইফতি
Latest posts by মেহেরাব ইফতি (see all)
- লাগে যেন আপনে আমার মুখের ভিত্রে হাঁটতেছেন : রেন হ্যাং (১৯৮৭-২০১৭) এর কবিতা - জুলাই 19, 2020
- যেকোনো সে কি ভাবতে থাকবে যেকোনো শে’রে নিয়া - মে 11, 2020
- মিথ্যার লগে কাভি কইরো না বসবাস ।। আলেকজান্দার সলঝেনিৎসিন - এপ্রিল 18, 2019