Main menu

ও পোলা, ও পোলা রে–ও মাইয়া, ও মাইয়া রে

This entry is part 6 of 7 in the series নাউ প্লেয়িং

‘আমার বলার কিছু ছিল না, চেয়ে চেয়ে দেখলাম…’–হৈমন্তি শুক্লাদের কওয়ার কিছু কেন থাকে না? এনারা তো ‘বিশ্ব সাহিত্য’র লোক, কত কত দেশের কবিতা বা কেচ্ছা-কাহিনি খাইছেন এনারা, বানাইছেন কত কোটি কোটি শব্দের আর্ট-কালচার, কেন তবু এনারা কইবার কিছু পাইতেছেন না!

উল্টাদিকে, আরমান আলিফ বা মমতাজরা একই টাইপের ঘটনায় কত কি কইতেছেন! মমতাজদের বুকটা ফাইট্টা যায়, আলিফ কইতেছেন–ও মাইয়া, তুই অপরাধী রে!

[youtube id=”qbN7DtPAKQo”]

হৈমন্তি শুক্লাদের ছাইড়া যাওয়া নাগরেরা নাগালের বাইরের কোন ‘ভালো’, ইনকম্প্যাটিবল বেটার; আলিফ বা মমতাজদের ছাইড়া যাওয়া নাগরেরা বেঈমান, পাপী, নেমকহারাম; খারাপ লোক এরা, তাই ভালো ছাইড়া গেছে!

হৈমন্তিরা যেন নেচারাল সিলেকশনে বাদ পড়তেছেন, বেটারের দিকে যাইতেছে তাগো নাগরেরা, সোনাবন্ধুর ছাইড়া যাওয়ায় হৈমন্তিরা স্যাড, নিজেদের ইনফিরিয়রিটি মালুম হইলো বইলা ডিপ্রেসড, কম্পিটিশনে ডাব্বা মারছেন এনারা, ‘বিশ্ব সাহিত্য’ তাগো মুখে বুলি দিতে পারতেছে না! আহা![pullquote][AWD_comments][/pullquote]

কিন্তু ‘ও মাইয়া, তুই অপরাধী রে…’ কইতেছেন আলিফ, টুম্পা খান নামে এক মাইয়া জবাব দিছেন, ‘ও পোলা, তুই অপরাধী রে…’। হৈমন্তিদের তুলনায় টুম্পা বা আলিফ বা মমতাজরা ভাবে পুরাই উল্টা! গানের কথার বাংলায় নজর দিলে দেখবেন, হৈমন্তিরা কোলকাতাই বাংলার কালচার্ড মিডল ক্লাস ধনী, টুম্পা-আলিফরা আম জনতার কমন বাংলার কমন গ্রাউন্ডের লোক, ক্লাসের সীমায় বন্দী নাই।

দেখা যাইতেছে, টুম্পাদের ইনফিরিয়রিটি নাই, হৈমন্তিদের মতো! এদের বিরহ আছে, দুঃখ আছে, ডিপ্রেশন নাই! আম বাংলায় বৈরাগিরও ডিপ্রেশন নাই, বরং মুক্ত আজাদ!

[youtube id=”OilWv8zCOY8″]

‘আধুনিক’ গানের লগে বাংলার আমজনতার গানের এই এক গোড়ার তফাত! কিন্তু বাংলার ‘আধুনিকতা’ কেন এমন ডিপ্রেসড? এইটা কলোনিয়াল আমদানি, এই কি কারণ! ‘আধুনিকতা’ মানেই কি এমন ডিপ্রেসড? আমার ধারনা, ‘মডার্নিটি’র একটা নেসেসারি ফিচার ডিপ্রেশন হইলেও, কলোনিয়াল কোলকাতার মতো মডার্নিটি এতো কামিয়াব হয় নাই আর কোথাও!

কেননা, সমাজে অনেক ভাবনাই একই জামানায় একটিভ থাকে, জামানার নামগুলা যুদা হয় মাতবর ভাবনার হিসাবে; যে জামানায় যেই ভাবনা মাতবর হইয়া ওঠে, সে সরদারি কইরা নিজের নামে জামানার নাম দিয়া দেয়! কলিকাতায় মডার্নিটি মাতবর হইয়া উঠলো কলোনিয়াল ইংরাজের কোলে বইসা, কিন্তু এইটা কামিয়াব হবার পিছে লোকাল কিছু ব্যাপার মদদ দিছে!

[youtube id=”SoSSm6Cxq0c”]

কইতেছি আর্যামীর কথা; জীবনানন্দ দাশে খেয়াল করেন, বনলতা সেন বা অরুণিমা স্যানালে মনে হইতেছে কাস্ট মিলানো পিরিতের ইশারা (স্যানাল মনে হয় বামুন, তবে তার মুখ মনে পড়তো দাশের, তারচে বেশি কিছু না 🙂) ! ব্রাহ্ম হবার পরেও সাহস পাইতেছেন না দাশ! সুরঞ্জনা হয়তো মুখার্জী আছিলেন, নামের মাঝে রঙের খবরও আছে একটু; তাই হয়তো সুরঞ্জনার পদবী আর রাখার সাহস পান নাই জনাব দাশ! আরো পরে বিনয় মজুমদার এক চক্রবর্তীতে কেমন ইনফিরিয়র! মধুসূদন কাস্টে সুবিধা করতে না পাইরা খৃস্টান হইলেন!

কাস্টের ব্যাপারে আন্দাজ হইলো, আর্য বামুন আর ক্ষত্রিয় ফর্সা, বাকিরা কালাই গড়ে; আর্যের এই রঙের দেমাগ কালাদের মন ইনফিরিয়র কইরা রাখতে চায়, তারা কামিয়াবও ইন জেনারেল, সেইটা এখনো দেখতেছেন পাউডার মাখার ঘটনায় বা অপো/স্যামসাং ক্যামেরার ফিল্টারে।

ইংরাজে ইনফিরিয়র মন আর পোক্ত ইনফিরিয়র হয় এই কাস্টের সীমার কানুনে! ইংরাজের মদদে আর্য না হইয়াও জমিদার হইতেছে, ইংরাজির ছবকে কলোনিয়াল কেরানি বা জজও হইতেছে, কিন্তু কাস্টের সীমা ডিঙাইতে পারতেছে না; এই কাস্ট এমনকি ইংরাজের রেসিজমের চাইতেও মজবুত; মধুসূদণ খৃস্টান হইয়া হোয়াইট মাইয়া বিয়া করতে পারলো, কিন্তু হিন্দু থাইকা কাস্ট ডিঙাইতে পারেন নাই!

কলোনি, রেসিজম আর কাস্টের এই কঠিন মজবুত সীমানার ভিতরে থাইকা কলিকাতা যখন মডার্ন ডিপ্রেশনের ছবক পায়, সেইটা আর সব দেশ-মানুষের তুলনায় কামিয়াব হইয়া উঠতে পারে! একটা আরেকটারে মদদ দিতে থাকে!

কিন্তু আমজনতার মাঝে ঐ মডার্নিটি ততো ঢুকতে পারে নাই; কলোনিয়াল ছবক পুরা লয় নাই আম বাংলা, আবার মোসলমান বা বোস্টমদের মাঝে কাস্টের অমন চাপ আর দেমাগ ততো নাই, ডিঙাইতে পারে প্রায়ই! খেয়াল করলে দেখবেন, মনুসংহিতা মানা হিন্দুরা এখনো নিজেদের নামে পদবী রাইখা জানায় কাস্টের খবর, বোস্টম বা মোসলমানদের মাঝে পদবী ততো নাই; থাকলেও সেইটা ক্লাস আর বনেদিয়ানার দেমাগ, কখনো বা মিডল ইস্টের লগে শিকড়ের রিশতা, কিন্তু কাস্টের সীমার মতো হারাম ব্যাপার না ততো! পদবীর লগে রঙেরও ততো ঘন রিশতা পাইবেন না!

হৈমন্তিদের ইনফিরিয়রিটির গোড়ায় এইসব কাহিনি আছে, তাই তারা কথা পায় না মুখে, কিন্তু মমতাজ-আলিফ-টুম্পারা গলার জোর পুরাটা দিয়া গালি দিতে পারে, ‘বেঈমান’!
[youtube id=”1m4kt8TgTPY”]

 

২.

ও মাইয়ার’ জবাবে ‘ও পোলা…’। বাংলার ‘ডেসপাসিতো’ মনে হইতেছে, ভাবে না ভাইব্রেশনে, ডান্স মিসিং অবশ্য, ভাইব্রেশন ঠিক শরীলের না ডেসপাসিতো’র মতো…

কিন্তু আবারো আপনেরা যেইটা মিস করতেছেন– এই লিরিকের বাংলা! বুঝতে রাজি হওয়া উচিত আপনাদের, আম/কমন বাংলার এতো কাছে না গেলে আপনাদের আর্ট-কালচারের ভাইব্রেশন ছায়ানটী কুয়ার বাইরে যাইতে পারবে না… ‘ভাষা প্রতিযোগ’ টাইপের চিটিংবাজি দিয়া কাম হবে না 🙂!

 

৮জুন ২০১৮

Series Navigation<< বাংলাদেশি বাংলায় গাননেপালি গান >>
The following two tabs change content below.
Avatar photo

রক মনু

কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →