রিভিউ : কীভাবে ‘জিজেকের জোকস’ পড়বেন?
ডিয়ার রিডার, কীভাবে ‘জিজেকের জোকস’ পড়বেন? আপনার যেখান থেকে মনে চায় সেখান থেকেই বিসমিল্লা করতে পারেন। কৌতুক— যেহেতু একটা মৌখিক লিটারেচার, এইটা কোনো ধারাবাহিকতার ওজর তুলে নাই; আপনে বইটা তুইলা লন আর শুরু কইরা দেন সিধা যেখান থেকে মন চায়। এতে আরো বিবিধ সুবিধা পাইবেন আপনে। যেহেতু এইটা একটা অনুবাদ বহি অতয়েব অনুবাদক পয়লাতেই অনুবাদ+বহি বিষয়ক নানান কৈফিয়ত আপনার সামনে হাজির কইরা থাকেন নিয়মমাফিক, হাজির করেন কৌতুকগুলা পাঠ করার বিবিধ তরীকা ও প্রেসক্রিপশন। ডিয়ার রিডার, আপনে এই প্রেসক্রিপশন পইড়েন না; এড়াইয়া যান। আপনার জন্য বেটার এইটা যে, আপনি ঢুইকা পড়েন বইয়ের ভিত্রে আর মজা নিতে থাকেন জিজেকের জোকগুলার। এইটুকু মাথা পাইতা নিলেই হইব যে, এইটা একটা ‘রাইটারলি টেক্সট’। ফলে আপনের যেমনে মন চায় আপনে কন্টেক্সচুয়ালাইজ কইরা লন আপনার সোসাইটি, আপনার কাম আর আপনার অর্থনৈতিক বাস্তবতার লগে। কূল না পাইলেও সমস্যা নাই। সব নৌকা কূলে ভিড়ে না।[pullquote][AWD_comments][/pullquote]
অনুবাদক কে এম আমাদের জানাইতেছেন যে এই বইখানার জোকগুলা এমআইটি প্রেস সংগ্রহ করছেন জিজেকের নানান রচনার ফাঁক-ফোকর হইতে। সুতরাং, এগুলার তর্জমার লোকেশন আপনার আন্দাজের উপরেই বহাল রহিবে। কিন্তু ফ্যাঁকড়া পয়দা হইছে অন্য বিষয়ে।
যেহেতু জিজেক এই জোকগুলা টুল হিশাবে ইয়ুজ কইরা থাকেন উনার তত্ত্ব-চিন্তা-রাজনৈতিক আলাপের লগে অডিয়েন্সরে কানেক্ট করার লাইগা অতয়েব অই অর্থে ফিলোসফিক্যাল, ক্রিটিকাল, হেগেলিয়ান কিংবা লাকাঁনিয়ান এনালিসিসের নানান পজিশন তো আছেই এই জোকগুলাতে। লেকিন রিডারগো লাইগা এইটা সবচে’ সুবিধার যে, বহিখানা তৈয়ার করার যেহেতু কোনো ধারাবাহিকতা কিংবা পজিশন নাই— সেহেতু সব জোকের কাঠামোতে আপনার হাসি না আসলেও কিংবা কোনো কোনো কৌতুক আপনি বুঝতে না পারলেও পোবলেম নাই। স্তালিন কিংবা ক্রুশ্চেভ কবর থেকে উইঠা আইসা এর দণ্ড হিশাবে আপনারে শ্রমশিবিরে পাঠাইবে না।
অনুবাদক কে এম বইয়ের জন্মের বিষয়ে বলেন যে, ‘বইটার বেশিরভাগ জোক সোভিয়েত ইউনিয়ন আমলের’। এই কথার পাবন্দী কইরা খুঁজলে দ্যাখা যায় যে ‘সোভিয়েতস্কি কৌতুকভ’-এর দুই একটা জোক এইখানেও আছে; সামান্য চেইঞ্জ কইরা। যেমন : ‘লেলিন ওয়ারস-এ’ কিংবা ‘কথা ঘুরাইয়ো না’। ‘সোভিয়েতস্কি কৌতুকভ’র মধ্যে একটা জোক আছে এইরকম যে, ঘরে আইসা ওয়াইফরে আরেক ব্যাটার লগে শুইয়া থাকতে দেখলে কোন দেশের মরদ কোনরকম আচরণ করে। এই অবস্থাতে রাশান দেশের মরদের আচরণ দেখানো হইছে এইরকম :
– হারামজাদী। ওই মোড়ের দোকানে মাখন বিক্রি হচ্ছে, আর তুই এখানে শুয়ে মজা মারছিস?
জিজেক ‘কথা ঘুরাইয়ো না’ জোকে এই যায়গাটাতেই নয়া ইন্টারপ্রিটেশন দিছেন। এইখানে লক্ষণীয় বিষয় দুইটা :
১) জোকের সোশ্যাল ব্যাকগ্রাউন্ড ২) জিজেকের চিন্তায় সেক্সিজমের বীজ।
কৌতুক— যেহেতু আগেই বলছি যে এইটা একটা মৌখিক সাহিত্য— এইটার বেইজ তৈয়ার হয় সোশ্যাল ক্রিটিকের ক্ল্যামোফ্লেজের উপ্রে ভর দিয়া। সোভিয়েত এয়ুনিয়নের দমন জমানার কৌতুকগুলা পাঠ করলে দেখা যায় যে সেইসময়ে দেশলাই, ইলেকট্রিক শেভিং রেজার, মাংস কিংবা মাখন এইরকম নেসেসারি গেরস্থালি জিনিসপত্র লইয়াই হাইস্যকর সব জোক তৈয়ার হইতেছিল। সেইম জিনিস আমরা দেখতে পাই খোন্দকার আলী আশরাফের স্যাটায়ার ‘দুর্জন উবাচ’-এর পয়লা কান্ডতে। আলী আশরাফ ‘দুর্জন উবাচ’-এর পয়লা কান্ডে ১৯৭৩ সাল হইতে ‘৭৬ সাল পর্যন্ত বাঙলাদেশের তৎকালীন সোশ্যাল ক্রাইসিসগুলা তুইলা ধরেন স্যাটায়ার আকারে। এলাকার মাস্তান দল দুই ভাগ হইয়া ন্যায্যমূল্যের দোকানে কিংবা রেশনের দোকানে পালাক্রমে টিন-বোতল লইয়া ইট বিছাইয়া সিরিয়াল দিয়া রাখতেছে; অথবা রেশনের অসিলায় রেডিওর ৪টা ব্যাটারি জুইটা যাওয়ার পর পাড়ার ৫০টা বাসাবাড়িতে সিরিয়াল কইরা একদিন পর একদিন রেডিও বাজিতেছে; কল্যাণপুর ডিপোতে বিআরটিসি বাসের মৃত কঙ্কালের স্থুপ পাহাড়ের আকার লাভ করিয়া পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন ঘটাইতেছে; অথবা পাট চাষ কইরা টু পাইস বেশি বৈদেশি পয়সা কামানো যায় বইলা বাজারে তখন চালের ‘সাময়িক সংকট’ ঘটিতেছে; এবং সোভিয়েত এয়ুনিয়নের মতোই বাজারে কিংবা ন্যায্যমূল্যের দোকানে জরুর ব্লেড-ম্যাচের অভাব দেখা যাইতেছে। এইর’ম সোশ্যাল ক্রিটিকের ক্ল্যামোফ্লেজ আকারে জিজেকের কিছু জোকও আমরা চিহ্নিত করতে পারি। ‘না থাকা’ অথবা ‘কোনো সিস্টেমই পুরাপুরি পারফেক্ট না’ এই বহি হইতে এগুলা নোকতা হিশাবে উল্লেখ করা যায়।
দুসরা যে লক্ষণের কথা বলতেছি সেটা এই বহির আরো কতকগুলা জোকরে রিপ্রেজেন্ট করে। মূলত সেক্স এন্ড ভালগারিটি সংক্রান্ত প্রচুর জোক জিজেক এই পুস্তকে আর্কাইভ করছেন। এর মধ্যে ‘কথা ঘুরাইয়ো না’ জোকে জিজেক নারীরে যে লোকেশন থেকে চিহ্নিত করছেন সেইটাতে জিজেকের চিন্তার ‘সেক্সিস্ট’ যায়গার ক্লিয়ার ইমেজ পাওয়া যায়। অনেকে হয়ত জিজেকের এই অবস্থানরে ‘মিসোজিনিস্ট’ হইয়া উঠার লোকমা হিশাবে দেখাইয়া চিন্তার কমজোরিটা দেখাইতে পারেন । ফলে, এইটা হইবে মিসরিডিং এর খেসারত।
দেখতে পাওয়া যাইতেছে যে জিজেক অই ওয়াইফরে দিয়া বলাইতেছেন, ‘আমি তোমারে আগে জিগাইছি, কথা অন্যদিকে ঘুরানোর চেষ্টা কইরো না’। এখান থেকে মাইয়াদের যে স্টেরিওটাইপ ‘মেয়েলি’ আচরণ সেইটারে জিজেক স্যাটায়ার করছেন। এরকম আরো দুই তিনটা জোকেও জিজেক ঠিক একই কাজ করছেন। মেবি এইটা মনে হওয়া স্বাভাবিক, জিজেক যদি মাস পিপলের যায়গা হইতে জোকগুলার ফিচার নিয়া ভাইবা থাকেন তাইলে উনার চিন্তায় ‘সেক্সিস্ট বীজ’ আছে কি নাই এইটা লইয়া আলাদা কোনো ফাঁপরে পড়া লাগতেছে না । কেননা পুরা দুনিয়ার সোশ্যাল স্ট্রাকচার নিজেই একটা প্যাট্রিয়াকল কাঠামো লইয়া খাঁড়ায়া আছে। সেখান হইতে উৎপাদিত কৌতুকে ‘সেক্সিস্ট বীজ’-এর মালমসলা না থাকলে জোকগুলা এতো ফেমাসও হইত না কিংবা ফেইসবুক/টুইটারের পেইজগুলা ‘মিম’ বানায়া এতো ভার্চুয়াল কারেন্সিও কামাইতে পারতো না।
‘কীভাবে’ জিজেকের জোকস পড়বেন মানে শুদ্ধ এই না যে জিজেকের কৌতুকগুলার সেরেফ ‘গুণ’ কিংবা ‘পদ’ নির্ণয় করা। ইহার বাইরে গিয়াও ক্যামনে জোকগুলার কন্টেক্সচুয়ালাইজ করবেন আপনার লোকেশনের লগে মিলাইয়া সেইটাও ভাবতে পারেন। কিংবা ভাবা যাইতে পারে সিগনিফায়ারের আড়ালে অর্থাৎ ক্ল্যামোফ্লেজ দিয়া কোন কোন সিগনিফায়েডরে লুকায়ে রাখা হইছে।
‘ইহুদিরা কেমনে টাকা কামায়’ জোকের লগে অনায়াসে মাড়োয়াড়িগোরে লইয়া পয়দা হওয়া সাউথ এশিয়ান জোকগুলার মিল পাইলেও অবাক হওয়ার কিছু নাই। অথবা ‘পুলিশ’ কৌতুকে মাই ডিয়ার রিডার আপনার চিন্তা হইতে বাংলাদেশের পুলিশের আরো আরো ক্রুয়েল অভ্যাসের যোগ কিংবা গুনে জোকের কন্টেক্সচুয়ালাইজ হওয়ার সম্ভাবনার নয়া নয়া পথ উন্মোচন হইতে পারে বইলাই মনে হয়।
কোনো একটা জোকরে কোথায় রিলেট করতে হবে কোন লোকেশন থেকে কিংবা এক্সচেইঞ্জ করতে হবে কোন যায়গাটাতে— সেইটাও আমাদের ইন্টারটেক্সট বুঝার গভীর সামর্থ্যের উপ্রেই নির্ভর করতেছে। আমীন।
মেহেরাব ইফতি
Latest posts by মেহেরাব ইফতি (see all)
- লাগে যেন আপনে আমার মুখের ভিত্রে হাঁটতেছেন : রেন হ্যাং (১৯৮৭-২০১৭) এর কবিতা - জুলাই 19, 2020
- যেকোনো সে কি ভাবতে থাকবে যেকোনো শে’রে নিয়া - মে 11, 2020
- মিথ্যার লগে কাভি কইরো না বসবাস ।। আলেকজান্দার সলঝেনিৎসিন - এপ্রিল 18, 2019