Main menu

এডিটোরিয়াল: শাসনের মুসাবিদা

সেক্সে কনসেন্ট বা কবুল করা যেমন, শাসনে তেমন ভোট। সেক্সে কনসেন্টকে পাত্তা না দিলে যেসব কন্সিকোয়েন্স ঘটে, শাসনে ভোটের পাত্তা না থাকলে তেমন সব ফল পাইতে থাকি আমরা। শাসনে জনতার কবুল করার নাম ভোট। ফোটা ফোটা পানি আর দরিয়ার রিশতার মতোই সেক্স আর শাসনের রিশতা।

এক ফোটা নষ্ট পানি দরিয়া নষ্ট করতে পারে না, কিন্তু দরিয়া নষ্ট হইলে পানির ফোটাগুলা আস্তে আস্তে নষ্ট হইতে থাকে। সেক্সে কবুলকে পাত্তা না দেবার একটা দুইটা ঘটনা পানির নষ্ট কয়েকটা ফোটা, শাসনে জনতার কবুল না থাকা বা ভোট না থাকা হইলো পুরা দরিয়া নষ্ট। তাই দেখবেন, যেই দল জনতার কবুল করায় যত কম পাত্তা দেয়, সেই দল গদিতে থাকলে সরকারি লোকেরা তত বেশি রেপ করে। স্ট্যাটিসটিক্স মিলাইয়া দেখেন।[pullquote][AWD_comments][/pullquote]

সমাজ যখন সেক্সে কবুল করারে পাত্তা দেবে না, তখন ভালোর বদলে শক্তির ইজ্জত বাড়তে থাকে; রেপ তখন গর্ব করার মতো খমতা। শাসনে ভোট বা জনতার কবুল না থাকলেও একই ঘটনা ঘটে; ভালোর বদলে শক্তি আর খমতার ইজ্জত বাড়ে। সেই খমতা দেখাইতে রেপ করতে হয় তখন; আপনাদের মনে পড়বে, সরকারি মাইয়ারা অন্য মাইয়ারে রেপ করাবার হুমকি দেয়, কোটা মুভমেন্টের এক মাইয়ারে ফেসবুকে রেপের হুমকি দেবার ঘটনা আছে। হিল ট্রাক্টস-এ এক চাকমা মাইয়া বই লিখছিল, জবাবে তারে রেপের হুমকি দেবার ঘটনা আছে।

মানুষের লগে আর সব পশুপাখির ফারাক কই? কালচার-ভাষা-সমাজ? না। শিম্পাঞ্জিদের সমাজ-ভাষা-কালচার আছে। ডিপ্রেশন? না। লবস্টারদের ডিপ্রেশন আছে বইলা দেখছেন কানাডার সাইকোলজিস্ট জর্ডান পিটারসেন। লবস্টারদের উপর এন্টি-ডিপ্রেসেন্ট ড্রাগ মানুষের মতোই কাম করে, জানাইছেন উনি। তাইলে কি?

গ্যাঙ রেপ!

মানুষ এই ব্যাপারে ইউনিক। মাছ বা কুত্তা বা বান্দরেরা গ্যাঙ রেপ করে না। রেপ করতে যেমন হাত লাগে, তেমন হাত কেবল মানুষেরই আছে; কিছু বান্দরের থাকতে পারে, কিন্তু ঐ সব বান্দর সমাজে কিছু রেপ থাকলেও গ্যাঙ রেপ নাই। গ্যাঙ রেপের জন্য দরকারি ডেভলাপড হুশ/কনসাসনেস/কালচার মানুষেরই আছে কেবল! কেমন মানুষের হুশ আর কালচারের এই দিকটা?

এই ব্যাপারে বোঝাবুঝির দরকারে আপনে মানুষের ইগো’র লগে আর সব মাকলুকাতের ইগো’র তুলনা করতে পারেন; টাসকি খাবার মতো ব্যাপার পাইবেন মনে হয়!

মানুষের ইগো নাকি কুত্তা বা বিলাই বা বাঘের ইগো বেশি পাওয়ারফুল? পোষা কুত্তা-বিলাই’র মাঝে হামেশাই জেলাসি পাইবেন, আপনের পোষা বিলাই হিংসা করতে পারে আপনের নাগর বা বাচ্চারে। মানুষের মাঝেও জেলাসি বা হিংসা (এইখানে একটা নোকতা দেবার দরকার আছে–ভারতের মহাত্মা গান্ধির ছাও না হইলে জেলাসির বাংলা হিসাবে হিংসা পাইবেন বাংলায়, ছাও হইলে ভাববেন, হিংসা মানে খুনাখুনি; ‘হিংসুইটা’ শব্দটায় আরো সাফ সাফ বোঝা যাইতেছে।) দেখা যায়।

তো, এই হিংসা হইলো ইগোর ফেনা। মানুষ নিজের হিংসা উতরাইয়া উঠতে পারে প্রায়ই, পশুরা ততোটা পারে না বইলাই আমার আন্দাজ। আমাদের মনে হইতে পারে, এইটা আলবত মানুষের গুণ, আশরাফুল মাকলুকাত হবার আরেকটা কারণ। কিন্তু মানুষের এই গুণেরই আরেকটা নেসেসারি ফল হইলো গ্যাঙ রেপ! ঠিকই পড়ছেন, এইটাই লিখছি আমি :)।

দুইটা পোলা ক্যাঙারু মারামারি করে, মাইয়া হয়তো একটু দূরে বইসা ওয়েট করতেছে, দুই পোলার যে জিতবে তার লগে সেক্স হবে; এমন মারামারি আছে পোলা বান্দর বা গরুদের মাঝেও মনে হয়। এনারা যদি ক্যাঙারু বা বান্দর বা গরু না হইয়া মানুষ হইতো তাইলে হয়তো মারামারি না কইরা গ্যাঙ বানাইতে পারতো, গ্যাঙ রেপ করতে পারতো। আপনে কইতে পারেন, দুই পোলা মানুষও কোন এক মাইয়ার ইস্যুতে এমন মারামারি করে! করে। কিন্তু আমার পয়েন্ট হইলো, পোলারা এমন মারামারি করলেও পেরায়ই আমরা গ্যাঙ রেপের নিউজ পড়ি, শুনি, ঘটে। কিন্তু পশুদের বেলায় এমন গ্যাঙ রেপ একদমই নাই!

এই মারামারির ঘটনারে আমি কইতেছি ইগো এবং ইগোর ফেনা হিসাবে হিংসার ফল। সেই হিসাবে মানুষ কখনো কখনো নিজের ইগো সাসপেন্ড/মুলতবি কইরা গ্যাঙ বানাইতে পারলো, পশুরা পারলো না। কিন্তু খেয়াল করলে দেখবেন, পশুরা শিকার করার বেলায়, হামলা বা ডিফেন্সের দরকারে গ্যাঙ বানায় পেরায়ই, কেবল সেক্সের বেলাতেই পারতেছে না! ইগো এবং হিংসা মুলতবি রাইখা গ্যাঙ বানাবার এই ঘটনার নাম দিলাম দোস্তি। তাইলে দেখা যাইতেছে, মানুষের মাঝে দোস্তি বেশি ঘন হইতে পারে, পশুদের তুলনায় এক কদম বেশি, সেক্স তক একদম।

দুনিয়ার এই দিকে দোস্তি লইয়া অনেক গান আছে। বাংলা আর হিন্দি গান শুনছি, সিনেমায় থাকে মাঝে মাঝে। এখন মনে পড়তেছে–

ক. একটাই কথা আছে…বন্ধু, বন্ধু আমার
খ. ইয়ে দোস্তি, হাম নেহি
গ. যাহে চার ইয়ার মিল…রাত হো গুলজার

পোলাদের দোস্তি ভরপুর এদিকে, এখন মনে হয় আরো পোক্ত হইতেছে, দোস্তদের মাঝে বেঈমানী কমছে মনে হয়, ভাগাভাগি করে সব দোস্তরা।

কতগুলা কথাও তো আছে। যেমন, দশে মিলি করি কাজ, হারি জিতি নাহি লাজ।

ওদিকে, ভারত-বাংলাদেশে মাইয়ারা তো মাল। তিনটা ব্যাপার মিলাইয়া দেখেন এখন। তাইলে এক দোস্ত একটা মাল পাইলে আর সব দোস্তরে ভাগ দেবে না?! প্রেমিকাও তো মাইয়াই, দোস্তদের হক আছে না! তাইলে দ্যাখেন, গ্যাঙ রেপ হইলো দোস্তির সেলিব্রেশান, দোস্তদের লগে বেঈমানী না করা।

দোস্তের প্রেমিকারা হুশিয়ার, দুনিয়ার এদিকের দোস্তরা দশে মিলে কাম করে।

এনিওয়ে, কুত্তা-বিলাই-মানুষ সব জাতের জন্য সেক্স সবচে বড়ো ব্যাপারগুলার একটা এবং তার কারণ মনে হয় সেক্স এবং রিপ্রোডাকশনের রিশতা। আর এই ইস্যুতে আর সব জাতের থিকা মানুষ একদম যুদা হইতে পারলো; পারলো যে তার গোড়ায় আছে মনে হয় সেক্স থিকা খোদ রিপ্রোডাকশনের ব্যাপারটারেই যুদা করতে পারছে মানুষ!

খেয়াল কইরা দেখেন, এই মারহাবা টেকনোলজি পয়দা করার আগেও মানুষ মারামারি করছে কত কত, এক দল আরেক দলকে হামলা কইরা হাইরা যাওয়া দলের মাইয়াদের দখল করছে, রেপ করছে। কিন্তু তখনো ঐ ইগো আর হিংসা খেলা করতেছে, এক মাইয়ার দখল লইয়া মারামারি করতেছে, মরতেছে দখলদার দলের পোলারা, ভাগ দিতে নারাজ! ‘মাই ওম্যান’ ভাবনা পুষতেছে মনে। এই ভাবনা খোদ রেপ থিকা রেহাই দেয় নাই মাইয়াদের, কিন্তু গ্যাঙ রেপ থিকা রেহাই দিছে কতক, তাই রেপের পেইন ফ্যাটাল হইতে পারে নাই পেরায়ই, টলারেবল পেইন সইয়া অন্তত বাঁইচা থাকছে মাইয়ারা! ইতিহাসে রিপ্রোডাকশনের ব্যাপারটা সেক্স থিকা যত বেশি যুদা হইতে পারলো বা রিপ্রোডাকশন কন্ট্রোল করা গেল তত বেশি সেক্স ইস্যুতে ইগো আর হিংসা কমতে থাকলো, পাল্লা দিয়া গ্যাঙ রেপও ততো বাড়তে থাকলো!

কিন্তু তার আগেও গ্যাঙ রেপ পাইবেন আসলে। সেইখানে মাইয়াদের ‘মাল’ হিসাবে দেখা এবং দোস্তির সেলিব্রেশন বা মাস্তি করার লগে পাইবেন মানুষের মাঝে আইডেন্টিটি পলিটিক্স, ফেলো ফিলিং এবং ফেলো ফিলিং-এর উল্টা হিসাবে দুশমনি; অন্যের পোরতি দুশমনি হইলো ফেলো ফিলিং রি-অ্যাফার্ম করা বা আরেকবার জানানো, জিকির করা! ফেলো ফিলিং জিকির করার নাম কইতে পারেন পিরিতি–দেশপিরিত বা জাতি পিরিত বা বর্ণপিরিত ইত্যাদি।

স্পেসিস হিসাবে মানুষের এইসব ভাগাভাগি বা আইডেন্টিটি পলিটিক্স, নিজের জাত বা বর্ণে পিরিত, অন্যের পোরতি দুশমনি; সিভিলাইজেশন সম্ভবত এরেই কয়! ফেলো ফিলিং জিকির করতে করতে আমরা হামলা করি। এবং এই হামলার ১ নম্বর ভিকটিম মাইয়ারা! কেননা, মাইয়াদের উপর হামলার দাগই সবচে কড়া, বাচ্চার সুরতে সুরতে হরদম পোক্ত নিশানা হাজির থাকতেছে! এমন সব হামলায় বাচ্চা হবার চান্স বাড়ায় গ্যাঙ রেপ! মাইয়াদের উপর হামলাই তাই মোক্ষম হামলা!

এখন এই ব্যাপারটা আপনে রাষ্ট্র, শাসন আর সরকারের বেলায় আনেন। একটা সরকার হইলো একটা গ্যাঙ, এই গ্যাঙ রাষ্ট্র চালায়, জনতারে শাসন করে। এই গ্যাঙে আপনে দোস্তি পাইবেন, পাইবেন ফেলো ফিলিং, আইডেন্টিটি, দুশমন, টর্চার/জুলুম, মাস্তি। জনতার লড়াই হইলো এই গ্যাঙের টর্চার মিনিমাম রাখা; রাজনীতির ইতিহাসে দেখা যাইতেছে, গণতন্ত্রেই এই গ্যাঙ সবচে বেশি জনতার কব্জায় থাকে; কেননা, গণতন্ত্রে কিছু দিন পরে পরে জনতা এই গ্যাঙটা ভাইঙ্গা দিতে পারে, আইন নামের একসেপ্টেবল মাত্রার বেশি টর্চার বা জুলুম যেই গ্যাঙ করলো তার বিচার করতে পারে। ইলেকশন নামের মচ্ছবের ভিতর দিয়া জনতা নয়া গ্যাঙকে কবুল করে, শাসক গ্যাঙের লগে সামনের কয়েক বছর ইন্টারকোর্স করবে যেন জনতা!

জনতার টার্গেট হইলো, শাসনকে কবুল করা সেক্সের মতো কইরা তোলা, মজা পাইতে থাকা! তাইলে জনতা যদি কবুল না কয়, জনতার কবুলের তোয়াক্কা করে না যেই শাসক গ্যাঙ, সেই শাসনকে কেমনে বিচার করবো আমরা?

গণতন্ত্রের পয়লা স্টেজ হইলো কবুল করা বা ভোট; এই ভোট থিকা আরামের শাসনে যাওয়া বহু দূরের ছফর, কিন্তু শুরুটা কবুল করাতেই। যেই গ্যাঙ জনতার সেই কবুলের তোয়াক্কা করলো না, সে আসলে জনতারে গ্যাঙ রেপ করলো, করতেছে। যেহেতু জনতার কবুলকে পাত্তা দেয় নাই, গায়ের জোরে জনতারে গ্যাঙ রেপ করলো, করতেছে, এই গ্যাঙই সবচে পাওয়ারফুল, তাই এই গ্যাঙের মেম্বার হবার দৌড়ে মাতে রাষ্ট্রের নাগরিকরা! রাষ্ট্রে এবং সমাজে তখন অন্যের কবুলকে পাত্তা না দেওয়া এবং পাত্তা না দিয়া গায়ের জোর দেখানোরই ইজ্জত বাড়তে থাকে! আগে যে অন্যের কবুল চাইতো, সেও কবুল চাওয়ারে ভাবা শুরু করে দুর্বলতা! সমাজে তখন রেপ এবং গ্যাঙ রেপ–দুইটাই বাড়ার কথা।

ওদিকে, রেপ বা গ্যাঙ রেপ অনেক অনেক জুলুমের একটা, সবচে ভায়োলেন্ট জুলুমের একটা। জনতার কবুলের তোয়াক্কা না করা যেই গ্যাঙ শাসন করে, সে আরো অনেক জুলুম করে, সেই সব জুলুমও উপর থিকা নিচের দিকে নামতে থাকে, সমাজে ছড়াইতে থাকে। জুলুমই ধীরে হইয়া উঠতে থাকে সমাজের ১ নম্বর প্লেজার এবং সেই প্লেজার সবচে বেশি পাবার জায়গা কোনটা? রাষ্ট্রের সিকিউরিটি এজেন্সিগুলা! সরকার নামের সেই গ্যাঙের শরিক হইতে পারা মানে একটা ইমিউন সিস্টেমের আওতায় যাওয়া! ফ্যাসিস্ট বা বাকশালি শাসনে তাই দলে মেম্বার বাড়তে থাকে, সরকারি সিকিউরিটি এজেন্সিগুলায় চাকরি সবচে লোভের হইয়া ওঠে! এমন গ্যাঙ পেরায়ই উন্নয়নের গান গায়; প্রোপাগান্ডার ফজিলত আর মেকানিজম বাদেও শাসনকে যদি সেক্স আর কবুল করার মিটারিং সিস্টেম দিয়া মাপেন তাইলে এই গানের অর্থ হইলো–আমার সেক্স স্লেভ হও, আমি তোমারে শাড়ি-চুড়িতে ভইরা রাখবো!

এই আলাপে সোভিয়েত ইউনিয়ন বা মার্ক্সের তরিকার রাষ্ট্রগুলা লইয়া কিছু আলাপের দরকার আছে; সোভিয়েত ইউনিয়নে সেক্সুয়াল জুলুম কম আছিল বইলা মজবুত দাবি আছে। সত্য হইতেই পারে; এবং ভোটের তোয়াক্কা না করলেও কেন ততো রেপ/গ্যাঙ রেপ পাওয়া যাইতেছে না, সেই জবাব দিতে হয় আমার।

এই ব্যাপারে মজবুত জবাব হয়তো দিতে পারতেছি না, সেই ইতিহাস ততো জানি না। যতটা জানি তাতে কইতে পারি, জুলুম বহাল আছিল, সেক্সুয়াল জুলুমের কমতি থাকলেও। ওদিকে, আমাদের হয়তো উল্টা দিক থিকা সওয়ালটা করা দরকার! সওয়ালটা এমন যে, জুলুম খেদানোর কসম খাইয়া যেই ‘ভালো’ গ্যাঙ গদিতে বইলো, এলেম ও এথিক্সের এতো এতো তালিম যার, সেই গ্যাঙটাও কেন আখেরে জালিম হইয়া উঠলো?

আমার পয়েন্ট হইলো, ১৯১৭ রেভল্যুশন তো জনতাই করছিল, সেইটাই জনতার ভোট আছিল, জার গ্যাঙের শাসন খেদাইয়া, জনতা তখন কবুল কইরাই নয়া গ্যাঙটারে বসাইছে গদিতে। পরে যত দিন গেছে, জনতার কবুল রিনিউ করার আর তোয়াক্কা করতে হয় নাই বলে ধীরে সে জুলুমবাজ হইয়া উঠতে পারলো। সোভিয়েত ভাঙার পরে রাশিয়ায় যেই হিউজ সেক্সুয়াল জুলুম, যৌন ব্যবসার রোশনাই, সেই মন তো সোভিয়েতে শান দেওয়া হইছেই কোন এক ভাবে, হঠাৎ কেমনে গজায়! ওদিকে, ‘বিপ্লবের’ দুশমনদের লইয়া সিকিউরিটি এজেন্সিগুলা কি করতো, তাই বা কতটা জানা সম্ভব এখন!

আমার হিসাবে মার্ক্সের তরিকার গোড়ায় এই গলদ আছে যে, এই তরিকা জনতার কবুল করাকে তোয়াক্কা করে না! মার্ক্সের যতটা বুঝি তাতে উনি বুর্জোয়া গণতন্ত্রের ক্রিটিক করতেছেন এইটা ভেজাল গণতন্ত্র বইলা; মার্ক্স সেইখানে খাঁটি গণতন্ত্র দিতে চাইতেছেন, ভোট বা জনতার কবুলকে তোয়াক্কা না করার হুকুমতের দালালি করতেছেন না! মার্ক্সের তরিকা যখন হুকুমত হইয়া উঠলো তখন মার্ক্সের ঐ গোড়ার ছবক খাইয়া ফেলছে! তাই জুলুম খেদানোর কসম আর থাকে না, জালিম হইয়া উঠতে থাকে ঐ গ্যাঙ!

আরো একটা ব্যাপারে দুইটা কথা কইতে হয়–ভোটের হুকুমত জারি হইলেও কিন্তু তুমুল কিছু জুলুম বা টর্চার হইতে পারে! এইটা বুঝতে পপুলিজমের কথা ভাবতে পারেন। পপুলিজম হইলো রাষ্ট্রের বেশিরভাগ লোকই যখন শাসক গ্যাঙ হইয়া ওঠে, আইডেন্টিটি পলিটিক্সে ঐ গ্যাঙ যখন অল্প কিছু লোককে বাইরে রাখে, সেই অল্পকে ‘অন্য’ হিসাবে দেখে জুলুম করে। তখন গ্যাঙটাই কিন্তু বড়ো, সেই অল্পই আসলে জনতা! এই ব্যাপারে আমার পুরানা একটা লেখারে লেজুড় হিসাবে লাগাই এইখানে। কোটা মুভমেন্টের টাইমে কোটা লইয়া ডেমোক্রেটিক আর পপুলিস্ট পজিশনের তুলনা করতেছিলাম:

পপুলিস্ট পজিশন মানুষের সমাজের বেসিক খাসলতটাই অস্বীকার করে। এরা কোটা শূন্যে নামাইতে চায়। মানুষের সমাজে যেমন দেখা যায়, মরমর বাপ-মা-বাচ্চারে বাঁচাইয়া রাখতে বাড়িঘর বেইচা খয়রাতি হইয়া যায়, ডিজ্যাবল বাচ্চারে বাঁচাইয়া রাখার বাড়তি পেইন লইয়া থাকে বছরের পর বছর, তবু ছাড়ে না, মারে না! পপুলিজম সমাজের এই খাসলত বদলাইতে কয়; দুর্বলকে কোন মওকা দেবে না, দুর্বলকে মাইরা একটা সো কল্ড নেচারাল সিলেকশন কায়েম করতে চায় এরা; নিজের বাচ্চা ডিজ্যাবল হইলে সেই বাচ্চারে মারার পক্ষে এনাদের লজিক।

উল্টাদিকে পাইবেন ডেমোক্রেটিক পজিশন। ডেমোক্রেসির এসেন্স হইলো, সমাজে হ্যাপিনেস ম্যাক্সিমাইজ করা, দুর্বলকে বাঁচাইয়া রাখার চেষ্টা করা, অলিগার্কির মতো সেফটি ফেন্স বানাইইয়া না তোলা, নিচের মানুষকে উপরে ওঠার মওকা বানানো।

কোটার ডেমোক্রেটিক এসেন্স এইটাই; তাই পপুলিজম ডেমোক্রেসি না। ডেমোক্রেটিকরা তাই দুর্বলের জন্য কোটা রাখবে, দুর্বল চেনার ক্রাইটেরিয়া হইতে পারে জেন্ডার, রিজিয়ন, জাতি, বর্ণ/রেস ইত্যাদি; এইটা দুর্বলও মারবে না, অলিগার্কি/মাফিয়াও হইতে দেবে না! আমাদের কন্সটিট্যুশনের এসেন্স এমনই।

সো, ভোট মানে মবের হই হই জিকির না, ভোট মানে কনসেন্ট, কবুল করা, রাজি হওয়া; সেক্সের মতোই আপনে যদি কবুল করা, রাজি থাকা, সব পক্ষের মজা পাওয়াকে মঞ্জিল হিসাবে দেখেন তাইলে পপুলিজম হইলো গণতন্ত্রের খুনী; কেননা, তার কাছে সবচে কম দরকারি জিনিস হইলো, কবুল।

৮ জানুয়ারি ২০১৯

 

The following two tabs change content below.
Avatar photo

রক মনু

কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →