নেপালি গান
নেপাল হিমালের কোলের ছোট্ট একটা দেশ কিন্তু মাল্টি-এথনিসিটি,মাল্টি-কালচারাল,মাল্টি-রিলিজিয়নের দেশ। নেপাল যেমন হিন্দুদের, তেমনি বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, মুসলমানের। নেপালে যেমন ছেত্রী, মাগার, তামাং, গুরুং, লামা, রাই’রা আছে তেমনি শেরপা ও মধেসীরাও আছে।যেমন আছে মেইনস্ট্রিমদের ঢাকা টুপি তেমন ধুতিও আছে। ধর্মের মতো এদের ভাষা যেমন আলাদা তেমনি কালচারও আলাদা, সাথে পোশাক এবং খাদ্যাভ্যাসও। নেপালি মিউজিকও তেমনি ডাইনামিক ও রিচ। এদের যেমন আছে ফোক গানের বিশাল ভান্ডার তেমনি আছে ক্ল্যাসিক্স এবং মডার্ন পপ এবং রক গানের এক উইন্ডো। সেখান থেকে কিছু গান নিয়া দুই/চারটা আলাপ।[pullquote][AWD_comments][/pullquote]
…………………………………………
গান: তুমরো নাই মায়া
আর্টিস্ট: ঝালাক মান গান্ধর্ব
[youtube id=”Y8mtiFrcBRE”]
ঝালাক মান গান্ধর্ব মানে গান্ধর্ব টাইটেল থেকেই স্পষ্ট নেপালি কালচার অনুযায়ী উনি একজন আউটকাস্টের লোক। হিন্দু কালচারে আউটকাস্টের লোক হওয়া তো এখনো মুশকিলের ব্যাপার, আর এই ভদ্রলোক (নাকি ছোটলোক!) তো প্রায় ১০০ বছর আগে জন্মাইছেন! পোখারা’য় জন্ম নেয়া ঝালাক মান নেপালি ফোক কালচারে গান্ধর্ব কালচারকে সামনে আনছেন। ‘কারখা (Karkha)’ মিউজিক নেপালে নিষিদ্ধ ছিলো, কারণ সেখানে গান্ধর্ব বীরদের নিয়া গান গাওয়া হইতো। ঝালাক মান এদিক থেকেও একজন পাইওনিয়ার।
“তুমরো নাই মায়া” মানে তোমার মধ্যে ভালোবাসা নাই, গানটা বিরহের গান। পাহাড়ি অঞ্চলের মিউজিক, সেখানে স্পষ্টই আসছে হিমাল অর্থাৎ হিমালয়ের কথা, যেখানে হিমালয়ের বরফ গলে কিন্তু প্রেমিকার মন গলে না। নিষ্ঠুর তার মন। হিমালয় থেকে বৃন্দাবন বিচ্ছেদের একই সুর বয়ে নিয়ে চলছে।
নেপালি মিউজিকের অন্যতম সিগনেচার ইন্সট্রুমেন্ট ‘সারেঙ্গী’। এই সারেঙ্গী’ও মূলত নেপালে গান্ধর্বদের কালচার।
এই গানেও এর ব্যাপক কাজ আছে। অরিজিনাল গানের অ্যাক্সেন্টের সাথে বর্তমানে যারা এই গানটা কাভার করেন তাদের একটু পার্থক্য আছে।
……………………………………
গান: রাই ঝুমা
আর্টিস্ট: নন্দ কৃষ্ণ জোশি
[youtube id=”sAwTxywz-0k”]
গানটার অরিজিন হচ্ছে নেপালের “সুদূর পশ্চিম প্রদেশ”। সুদূর পশ্চিম ও মধ্য পশ্চিমের কালচার হচ্ছে দেউড়া (Deuda) গান। অর্থাৎ তাদের বিভিন্ন ফেস্টে নেচে নেচে এই গান পরিবেশন করা হয়। আঙ্গিকের দিক থেকে বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলের ধামাইল গানের সাথে অনেকটা মিল আছে। সুদূর পশ্চিম প্রদেশ যেহেতু নেপালের সবচেয়ে অনুন্নত অঞ্চলগুলার একটা, তাই মূলস্রোতের বাইরের গান হিসাবেই এইসব গানকে বিবেচনা করা হয়।
[youtube id=”IM7RM4PVVfo”]
গানটি মূলত সুদূর পশ্চিমাঞ্চলের আদি সুর থেকে কম্পোজ করা। নন্দ কৃষ্ণ জোশি’র পরে যজ্ঞ রাজ উপাধ্যায় (Yagya Raj Upadhaya) গানটির লিরিকে পরিবর্তন আনেন, আদিসুর ঠিক রেখে। যেখানে ঝুমা নামের কেটি’র (মেয়ে) সাথে রসালাপের মধ্য দিয়ে গানটি দেউড়া ধারার নিজস্ব হয়ে ওঠে। এখানে ‘চৌবন্ধী চলো’ (নেপালি মহিলাদের পরিহিত বিশেষ ধরণের ব্লাউজ) ড্রেস, বিলাতি সাবান, গুরাসা ফুল (রডোড্রেনড্রন টাইপের ফুল, যা নেপালে প্রচুর জন্মে) এইসব বিষয় নিয়ে আলাপ পাড়া হয় এবং তা যৌবনদীপ্ত রসের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। দেউড়া গান নেপালের একটি বিশেষ সাঙ্গীতিক ধারা ও কালচার। আর এই কালচারের অন্যতম একজন আর্টিস্ট হলেন নন্দ কৃষ্ণ জোশি।
……………………………………….
গান: কে চাই রা দিও তিমিলাই মাইলে কোসেলি বানেরা
আর্টিস্ট: গোলাম আলী
Song:Ke Cha Ra Diu Timilai Maile Koseli Bhanera
[youtube id=”q2OlEquP-XY”]
“ঝরে পড়া দুই ফোটা অশ্রু এনেছি! বলো,
উপহার আর কী দেবো আমি তোমায়।”
এভাবেই একজন ব্যর্থ প্রেমিকের অব্যর্থ সুরে প্রেমিকার কাছে আকুতি-মিনতি! শুধু দুই ফোটা অশ্রুই আনে নাই, সাথে নিয়া আসছে কবিতা,গান। যদিও কোন এক্সপেক্টশন এখানে নাই যে, প্রেমিকা এই অশ্রু বা কবিতা বা গান গ্রহণ করতেছে কিনা!
বাতাসও বেচইন হয়ে প্রেমিকার দিকেই যাইতেছে যেন। প্রেমিকার সাথে তোলা যে ছবিটা ছিলো, সেটাও যেন কাঁন্তেছে!
এমন একটা গান গোলাম আলী ছাড়া আর কার পক্ষে গাওয়া সম্ভব! গোলাম আলী’র গজল উপমহাদেশের কমবেশি অনেক লোকেরই শোনা! পাকিস্তানি এই ক্ল্যাসিকাল মায়েস্ত্রো পাকিস্তানের পর নেপালি গানই সবচেয়ে বেশি গাইছে, মানে জনপ্রিয়ও ঐরকম। এই গান নিয়ে তেমন কিছু আর বলার নাই,শুনতেই দুঃখ মিশ্রিত আনন্দ!
……………………………………….
গান: গলতি হাজার হোনচা
আর্টিস্ট: নারায়ণ গোপাল
[youtube id=”i5convKzdLs”]
নারায়ণ গোপাল নেপালি মিউজিকে সর্বজনবিদিত এবং সন্মানিত একটি নাম। নেপালি মেইনস্ট্রিম/ক্ল্যাসিকে নারায়ণ গোপালরাই এখনো ডমিন্যান্ট। সুর সম্রাট হিসাবে তাকে ডাকা হয়। “গালতি হাজার হুনসা” গানের লিরিসিস্ট আরেক নেপালি কিংবদন্তী গোপাল ইয়োঞ্জান (Gopal Yonjan)। তার গানও শোনা যেতে পারে।
এই গানটাকে মাতাল প্রেমিকের গান বলা যাইতে পারে। যে মদের মূল্য জানে, জানে প্রেমিকার রূপ,যৌবন ও সৌন্দর্যের মূল্যও। কিন্তু গালতি হয় প্রেমিকার না থাকার কারণেই। ধর্ম,পাপ, ভালোবাসা ও প্রেমিকার যৌবন সবই যেন মদের বোতলে গালতি হিসাবে মিশে যায়। অসম্ভব ঘোর লাগা একটা গান।
………………………………………….
গান: রাম সারিলি
আর্টিস্ট: বিপুল ছেত্রী
[youtube id=”ENVW3uZ3a-4″]
বিপুল ছেত্রী’র একটা গান সিলেক্ট করা মুশকিলের কাজ। যদিও বিপুল ছেত্রী নেপালের না, দার্জিলিং’র (ইন্ডিয়া/ওয়েস্ট বেঙ্গল) এবং গুর্খা অঞ্চলের মানুষের ভাষা যেহেতু নেপালি)। বিপুল নেপালেও বেশ জনপ্রিয়।
রাম সাইলি গানটা মূলত বিপুলের কম্পোজ করা না। গানটার সুর করা বিপুলের বাপ নীরেন্দ্র মোহন ছেত্রী’র। বিপুল ওর বাপের কাছে গানটা শুনতো ছোটবেলায়, কিন্তু সবটুকু মনে রাখতে পারে নি। গানের শুরুর অংশটুকু ঠিক আগের মতো থাকলেও, রাম সাইলি’র জীবনের কঠিন হিসাব নিকাশ করা হইছে বিপুলের লেখা অংশটুকুটে। বাপ এবং ছেলের হিসাব নিকাশ একরকম থাকে নাই,খোলা (নদী) কিনার থেকে বিরান শহর পর্যন্ত পৌঁছাইছে। বিপুলের গানে নেপালি ফোক কালচার, হিলস যেভাবে আসে তার সাথে সমসাময়িক বিষয়াদি, ঠিক এই লিরিকের ক্ষেত্রেও এরই ব্লেন্ড ঘটছে বলা যায়।
রাম সাইলি গানটা “Sketches of Darjeeling” অ্যালবাম থেকে নেয়া। বাকি গানগুলাও শোনা যাইতে পারে। বিশেষ করে Assar (আষাঢ়), Mountain High (Akash Lai Chune)। আরেকটা বিশেষ গানের নাম না নিলেই নয় Maya(2016) অ্যালবামের ‘Syndicate’.যেখানে বাসে পাশের সিটে এক মেয়ের সাথে দেখা হয়, সবাই ফোনে ব্যস্ত, কথা বলার আগ্রহ এবং বিশ মিনিটের প্রেম!এবং শেষে,
“তিমি জানে শিলিগুড়ি মো জানে সিকিম তিরা”
“তুমি যাবে শিলিগুড়ি, আমি যাবো সিকিমের দিকে”।
……………………………………………………………
গান: গুরাস কো ফেদো মোনি
আর্টিস্ট: সবিন রাই
[youtube id=”8AjP9CcCeCM”]
সবিন রাই’র প্রতিটি গানই মুগ্ধ হয়ে শোনা যায়।মানে গানের মধ্যেই এক প্রকার মুগ্ধতা ছড়িয়ে আছে। মূলত নেপালি তরুণ-তরুণীরাই তার গানের মূল শ্রোতা।
গুরাস (এক ধরণের ফুল/রডোডেনড্রন) গাছের প্রেমিকার স্মৃতি’র ছায়ার নিচে দাঁড়িয়ে, প্রেমিক তার নিঃশর্ত ভালোবাসা প্রকাশ করে প্রেমিকার প্রতি।
সবিন রাই মূলত মেলোডিয়াস ঘরানার গান কম্পোজ করলেও তার গানের দুঃখটা অন্য জায়গায়। তার মিউজিকে যেন অনন্তকালের একটা মেলোডিয়াস অপেক্ষা!
সবিনের আরো গান শোনা যেতে পারে। “Sundarta ko Timi Udaharan Ho’ আর ”Timi Nai Ho” এই দুইটা গানও একই অপেক্ষা নিয়ে আছে যেন।
………………………………………….
গান: কাশকো আকা লাগেও বারাই
আর্টিস্ট: রিমা গুরুং হোডা
[youtube id=”YwnWfOseMew”]
রিমা গুরুং নেপালি আধুনিক টাইপের মিউজিক করে থাকেন। তার বাপ প্রকাশ গুরুংও একজন নেপালি সিঙ্গার। তার বাপের জন্ম দার্জিলিং এ। দার্জিলিং এর অধিকাংশেরই মিউজিক্যাল ক্যারিয়ার নেপালভিত্তিক। ‘হীরা দেবী ওয়াইবা’ থেকে শুরু করে হালের ‘মেলিনা রাই’ পর্যন্ত সবাই তো কাঠমান্ডু গিয়েই তাদের ক্যারিয়ার এবং রেসিডেন্স গড়ছে।
গানটার মেলোডিয়াস টোন অনেকটাই ইন্ডিয়ান মিউজিক ইনফ্লুয়েন্সড। অতি দুঃখের আধুনিক টাইপ গান বলতে যা বোঝায় তাই এই গান। আরো একটা ব্যাপার হচ্ছে মহিলাদের পার্সপেক্টিভ থেকে মেলোডিটা আসলে বিষয়টা যেমন ভিন্ন হয়। গানটার কম্পোজিশন সেমি-ক্ল্যাসিক টাইপের।
………………………………….
গান: তিমিলাই দেখেরাই
আর্টিস্ট: রাজু লামা
[youtube id=”OlYoCjUGPJ4″]
রাজু লামা নেপালি পপ গানের এভারগ্রীণ সিঙ্গার। চমৎকার কিছু পপ গান পাহাড়ি (নেপালি/তিব্বতী) মিউজিকে কম্পোজ করছেন ‘Mongolian Heart’ ব্যান্ডের এই সিঙ্গার। সে যখন চিতোনের যুবতীকে উদ্দেশ্য করে গেয়ে ওঠে, “যাও কাঞ্চি চিতোয়ান জিন্দেগি বিতোয়ানা” তখন হৃদয়ে যেন কষ্ট লাগে!
তিমিলাই দেখেরাই, মানে তোমাকে দেখে হিলাম (হিমালয়) হাসে, জীবনের কথা বলে। এই গান সহ রাজু লামা’র অধিকাংশ গানের মধ্যেই প্রাণোচ্ছল একটা ব্যাপার আছে, যার মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায় নেপালি ‘র’ মিউজিক। হিমালয়ান সুর আর মঙ্গোলিয়ান দিল দুইটা মিলাইয়া গানকে করছে (কাতি চারো তিমিমা) চারদিক তুমিময়।
……………………………………
গান: জমসোমাই বাজারমা
আর্টিস্ট: অমিত গুরুং/নেপাথায়া ব্যান্ড
[youtube id=”BN5si4Ze0qc”]
নেপালের খুবই ইনিশিয়াল ফোক রক ব্যান্ডগুলার একটা হচ্ছে ‘Nepathya’.বাংলাদেশের অধিকাংশ ব্যান্ড যেমন ঢাকাকেন্দ্রিক,নেপালেরও অধিকাংশ ব্যান্ড কাঠমান্ডুকেন্দ্রিক। এদিক থেকে ‘Nepathya’ ব্যান্ড ছিলো ‘পোখারা’ কেন্দ্রিক। অমিত গুরুং এর হাত ধরে গড়ে ওঠে এই ব্যান্ড।
এই গানে পোখারা’র একটি অংশেরই কথা সুরে বর্ননা করা হচ্ছে। সাথে আছে পোখারা যাওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হইতেছে এবং সেখানে গেলে তাদের ছোট বাড়িতে থাকার কথাও শোনানো হচ্ছে। ফাঙ্কি স্টাইলে জীবনের কথা শোনাচ্ছে।
“Dila Chhudi Lagyo Nisthuri Le
Maan Ko Betha Bhujau Na Lai Bari Lai”
‘মন নিষ্ঠুর মেয়ের প্রেমে পড়ে,তাই সেই নিষ্ঠুরিকে আসতে বলতেছে মনের ব্যাথা মেটানোর জন্য।’ যদিও মিউজিক্যালি এই গানে কোন দুঃখ নাই।
নেপালের অধিকাংশ গানেই মেয়েদের নিষ্ঠুর হিসাবে চিহ্নিত করা হইছে! আসলেই কি নেপালের মেয়েরা এতো নিষ্ঠুর!
……………………………………………………….
গান: রেশাম ফিরিরি
[youtube id=”WPzbGpe8HN0″]
‘রেশাম ফিরিরি’ হচ্ছে নেপালের সবচেয়ে জনপ্রিয় গান। এই এক গানই নেপালকে রিপ্রেজেন্ট করে খুব সুন্দরভাবে। মূলত পোখারা’র গ্রামগুলোতে মুখে মুখে নানায়াবে ফিরতো এই গান।একদম নেপালি আদিসুরে গাওয়া এই গান। ১৯৬৯ সালে ‘Buddhi Pariyar’ পোখারা’র গ্রাম থেকে গানের কথা ও সুর সংগ্রহ করে রেকর্ডেড ভার্শন বের করেন। তখন থেকে গানটা নেপালি ভাষাভাষীদের মধ্যে ছড়ায়। কাঠমান্ডু,দার্জিলিং এবং সিকিম’র রাস্তাঘাটে এখনো এই গানটা সারেঙ্গী হাতে গাওয়া হয় এই গান। মানে এতো জনপ্রিয় গান এখনতক!
রেশমের মতো মনটা পাহাড়ের উপর বাতাসে ভেসে যেতে চায়। পোখারা’র পাহাড়িদের জীবনযাপন, তাদের কালচার, প্রেম-ভালোবাসা মূলত এই গানের মেইন বিষয়। গানটা প্রিয়ার মতোই সুন্দর।
…………………………………….
এখানে মূলত ১০ টি গান নিয়ে কিছু কথা বলার চেষ্টা করা হইছে। সাথে আরো দুই/চারটা গানের কথা আলাদাভাবে আসছে। মাত্র দশটা গান দিয়ে একটা দেশের মিউজিক্যাল কালচারকে রিপ্রেজেন্ট করা খুবই টাফ ব্যাপার। তবে এটা একটা থ্রেড হিসাবে বিবেচনা করলে হয়তো আরো আরো গান আমাদের প্লে-লিস্টে থাকতে পারে।
আবু ইলিয়াস হৃদয়
Latest posts by আবু ইলিয়াস হৃদয় (see all)
- নেপালি গান - মার্চ 7, 2020
- ওং কার ওয়াই (লাস্ট পার্ট): ২০৪৬ (২০০৪) - মার্চ 6, 2019
- ওং কার ওয়াই (পার্ট ৫, ৬): হ্যাপি টুগেদার (১৯৯৭), ইন দ্য মুড ফর লাভ (২০০০) - ডিসেম্বর 14, 2018