কবি ডেরেক ওয়ালকটের কবিতা লইয়া
ডেরেক ওয়ালকট নোবেল পাওয়া কবি। ফলে, কবিতায় তাঁরে অথরিটি ধরা যায়। মানে, তেনার ‘কবিত্ব’ নিয়া প্রশ্ন করা অযৌক্তিক কিন্তু আমরা তেনার কবিতা পড়তে চাই ভাষা, আঞ্চলিকতা, কসমোপলিটান ভিউ, কলোনিয়াল লিগেসি, রেইস ইস্যু ইত্যাদি চোখা হইয়া থাকা ব্যাপারগুলারে কিভাবে ডীল করছেন, করতে পারতেনের নজরে।[pullquote][AWD_comments][/pullquote]
ওয়ালকটের যে কবিতার দরিয়া তাতে ক্যারিবিয়ান ব্যাপারস্যাপার এমন যে, যেন ক্যাপ্টেন জ্যাক স্প্যারোর ‘ব্ল্যাক পার্ল’, ছুইটা যাবে রহস্যের আবিষ্কারে আর সাক্ষী রাইখা যাবে আমরা যারা পাঠক তাদের! ক্যারিবিয়ান দুনিয়ায় অবশ্য আমাদের কবি জনি ড্যাপের মতো অতো রেডিকাল না, পাইরেট না হোন ছিঁচকেচোর তো তেনারে অবশ্যই কইতে হয়!
তো, এক দোস্তরে কইতেছিলাম, ডেরেক ওয়ালকট এতো বেশি ক্যারিবিয়ানের ক্যাপ্টেন জ্যাক স্প্যারো যে, ইভেন তেনারে লইয়া একটা কবিতাও তিনি লেখছেন, ইন্টারেস্টিংলি ওইটাতে তেনারে সম্বোধনও করছেন ‘জন’ বইলা, এজ জন টু পেটমুচ, এবার জনি ড্যাপরে ননাই কইরা জন কইয়া ডাকেন!
উনার কবিতা নিয়াই আলাপ। নাটকে যাব না। তো, কবিতায় উনি বলতেছেন, কতটুকু ইংরাজ আর কতটুকু ক্যারিবিয়ান তা বুঝতে পারতেছেন না তিনি। যেই জবানে লিখবেন তার যে জুলুমের পরম্পরা তা নিয়াও তিনি ভাবতেছেন, উপনিবেশ হইয়া কতো কতো ক্ষতির শিকার হইছেন এইগুলা কাব্য কইরা বলতেছেন। উনার কবিতা নিয়া প্রাথমিক অবজারভেশন হইলো, উনার বেশিরভাগ কবিতায় ক্যারিবিয়ান নেচার আর কলোনি ডীলিং এমনভাবে সেঁটে আছে যে কবিতার যে রস তারে আর খুঁইজা পাই না। মানে, উনার অনেকগুলা কবিতা এথনোগ্রাফি বা সাবঅল্টার্ন বয়ানের মতো অলটারনেটিভ হিস্ট্রি হইয়া রইছে আসলে!
তো, তেনার ক্যারিবিয়ানের হইয়া উঠতে না পারা বা আধুনিক রাষ্ট্রের জাতীয়তাবাদে পুরাপুরি আস্থা না রাখতে না পারা, কবিতার ভাষা হিসাবে কলোনিয়াল ল্যাঙ্গুয়েজরে বেছে নেয়া সবগুলার গোড়ায় পাবেন, তেনার একজাতীয় কসমোপলিটান ভাবনা। দুনিয়ার ইতিহাসে অবশ্য এর নজির যে নাই তা না। সিনিক দার্শনিক ডায়োজিনিসের কথা ধরেন, যেনার জন্ম বর্তমান তুরস্কে। তেনারে জিগানো হইছিল যে, আপনার পরিচয় কি? মানে, কোন জাতীয়তারে ওন করেন আরকি! তখন যেহেতু নগররাষ্ট্রের যুগ, জাতিরাষ্ট্র না, ফলে লোকে তেনার জন্মস্থান পোলিসরেই ধইরা নিছিল। পোলিস প্রাচীন গ্রিসের নগররাষ্ট্র। কিন্তু তিনি বলতেছেন, আমি পোলিসের সিটিজেন না বরং কসমোপলিটিসের..! ওইখান থেইকাই কসমোপলিটান শব্দের আবির্ভাব। এইখানে কসমো মানে হইলো দুনিয়া, আর বাকি শব্দ পলিটানে লুকায়া আছে গ্রিক নগররাষ্ট্র পোলিস..! মানে, ডায়োজিনিসের পক্ষে নগররাষ্ট্রের লগে লগে গ্লোবাল একটা পরিচয় নেয়াটা সাংঘর্ষিক মনে হয় নাই। যেইটা পরে স্টোয়িকরা ধার করে। ইমানুয়েল কান্টে আইসা পরে আমরা ওইটা পাইতেছি যে, আ ওয়ার্ল্ড এজ আ স্টেট..! অবশ্য এইটার নেগেটিভ ব্যবহার যে হয় নাই তা না। রুশদেশের স্টালিন ইহুদীদের যথেষ্ট দেশপ্রেমিক না বুঝাইতে কইতেন, কসমোপলিটান! তো, এই আইডেন্টিটি বাইছা নিছিলেন আমাদের কবি, ডেরেক ওয়ালকট। উনার প্রায় লেখালেখি তাই দেখবেন ইংরাজিতে যেই জাতি তেনাদের কলোনি কইরা রাখছিল বইলা বারবার জানাবেন উনি, উনার নাটক-পেইন্টিং-কবিতায়! আবার স্থানিকতা মেইন্টেইনের জন্য তেনার দরকার পড়ে ক্যারিবিয়ান ফ্লেবারে মহাকাব্য রচনার, ওমেরস। যেইটাতে ট্রয়ের যুদ্ধ হয় দুই জেলের ভিত্রে, হেলেন লইয়া! উনার যেই জন্মস্থান, সেন্ট লুসিয়া, সেইটারে অবশ্য ‘হেলেন অব ওয়েস্ট ইন্ডিজ’ বইলাও ডাকা হয়! তাতেও কি পশ্চিমা নজরে ক্যারিবিয়ানদের ‘অপর’ হওয়া থেইকা মুক্তি ঘঠছে? না।
কালা ক্যারিবিয়ানদের শাদা পশ্চিমে ‘কালা সৌন্দর্য’ হিসাবে দেখাইতে হাজির হইছেন ওয়ালকট। অবশ্য এই সিলসিলা আরো আগের। চিনুয়া আচেবে, নগুগি ওয়া থিয়োঙ্গাদের কথা মনে পড়তেছে। এই গোত্রে হীনমন্যতার ব্যাপার থাকলেও দরকারি ভায়োলেন্সও কম নাই! এজ জন টু প্যাথমুস, ফার ক্রাই ফ্রম আফ্রিকা, দ্য গাল্ফ, রুইনস অব গ্রেট হাউস, দ্য গ্লোরি ট্রাম্পলেটর প্রভৃতি কবিতাগুলা নাড়াচাড়া করলে বুঝা যায়।
যেহেতু কলম্বাসরে দিয়াই ওয়েস্ট ইন্ডিজের আবিষ্কার সেহেতু ইতিহাস না থাকার যেই পশ্চিমা গালি ক্যারিবিয়ানরা তার অন্তর্ভুক্ত। এই যুক্তি দিয়া নিজেরারে প্রাসঙ্গিক করতে ওয়ালকট কলোনিয়াল ভাষা বেছে নেবার একটা জরুরত বুঝাইতে পারতেন। ফ্রাঞ্জ ফাঁনো ‘ব্ল্যাক স্কিন হোয়াইট মাস্ক’ লিখে অলরেডি তেনার পাশে আছেন! বলতেছেন, ফরাসি কলোনিতে ফ্রেঞ্চ না জানা যেন ক্যারিবিয়ানদের একমাত্র দোষ, পশ্চিমা বিদ্যা কালাদের জানাইতেছে! কিন্তু ওয়ালকটে ওই ধরনের কোন উইটি জবাব দেখি না, তবে ফ্রেঞ্চ ক্রেওল নিয়া তেনার নাট্যকর্ম আছে। তো, ক্যারিবিয়ানদের লগে ভারতীয়দের যদি কলোনি হবার বিষয়ে তুলনা দিই তাইলে দেখবো ইন্ডিয়ানদের ক্যারিবিয়ান বা আফ্রিকানদের মতো ইতিহাসহীনতার লজ্জ্বা বা গাইল খাইতে হয় নাই। রামায়ণ বা মহাভারতের মিথ পাশে ছিল। যেইজন্যে এদিকে ট্রয়ের যুদ্ধ বা ট্রোজান হর্স নিয়া কারো ডীল করার দরকার হইতেছে না। কারণ ইন্ডিয়ানরা ওয়েস্টের মতো না, বাট কমও তো না!
ধরনের ভিত্রে আফ্রিকান ইংরাজি নামের এক জনরা খাড়া হইয়া রইছে। আফ্রিকার জীবনের বাস্তবতা উপস্থাপনের জন্যে ওই ভাষায় স্থানীয় শব্দের ইংরাজিকরণ করা হয়। নয়া গদ্যশৈলীর স্বার্থে রাইটারদের ভিতর তো এইটা খুবি আবেদন তৈয়ার করে। কিন্তু স্থানীয় ভাষাগুলা প্রভাবশালী রাইটারদের সোহবত থেইকা বঞ্চিত হয়। উল্টা তার সম্পদ ধনী ইংরাজির ভান্ডারে জমা পড়ে! এর জন্য আপনে কারে দায়ী করবেন! মার্কেট, বিশ্বায়নের এই যুগে। ভাষার হিস্ট্রিতেও তা নাজায়েজ নয়। কিন্তু অপরাপর জুলুমের মতো এইটারেও ইংরাজির জালেম হওয়া হিসাব করেন নগুগি ওয়া থিয়োঙ্গারা, ডিকলোনাইজিং মাইন্ড নামে বহি আছে। গরীবের ঘামে হৃষ্ট হয় ধনীর প্রকল্প!
লিঙ্গুইস্টিক্সে পিজিন-ক্রেওল নামের কতগুলা আইডিয়া আছে। স্লেবারি আর কলোনির রেজাল্ট ওইগুলা। মালিকের লগে অচেনা দাসের বাতচিতের দরকারে ‘লিঙ্গুয়া প্রাঙ্কা’ হইয়া যেই ভাষা গইড়া উঠে সেইটা হইলো পিজিন আর ওইটা যখন নেক্সট জেনারেশনরে নেটিভ বানায়া তোলে তখন বইনা যায় ক্রেওল। মানে, দুই বা ততোধিক ভাষার দেখা হইলে কাম চালাইতে নিজেদের গড়ে আর ভাঙ্গে, একজন অন্যের দুইটা শব্দ শেখে, ভুল উচ্চারণে কয়, দূরের প্রবাদের ইশারা লয়, এমনে নতুন একটা ভাষার সম্ভাবনা গজায় এবং পরে খাড়ায়া যায়। কিছু দিন পরে ঐ নয়া ভাষায় আর্ট-কালচার হইতে থাকে, ওয়ালকটেরা নোবেল পায়! এইভাবে ক্রেওলে ভর দিয়া নিজেদের মজলুমি হিস্ট্রি, কলোনির মাইর ইত্যাদিরে রিপ্রেজেন্ট করেন কারণ ক্রেওল ইটসেল্প তো নেটিভের উপ্রে যে জুলুম করা হইছে তার নিশানা, যেন ম্যালকমের ‘এক্স’ উপাধি লওয়া!
ওয়েস্টার্ণ মানবতাবাদী প্রকল্প ও সার্বজনীনতার যে ফাঁদ তাতে অপশ্চিমারা অপর হইয়াই থাকেন; জানেজিগার উম্মত হইলেও অন্তরঙ্গ হওয়ানি আর হয় না। তাইলে মজলুমের পক্ষে না থাইকা নিছক নৈতিক অভিযোগের তবলা বাজায়া দুই নৌকায় ঠ্যাং রাখাতে লাভ কি! অবশ্য ওইটা দিয়া নোবেল জোটে, বাট কতো প্যাশনেট থাকতে হয় ‘বন্ধু’র ব্যাপারে..! ডেরেক ওয়ালকটের আর্ট ভি এস নাইপলের তুলনায় পাতলা জাতীয়তাবাদী, পরে কিছু লেখমু ভাইবা নোকতা দিয়া রাখলাম।
জোবাইরুল হাসান আরিফ
Latest posts by জোবাইরুল হাসান আরিফ (see all)
- লালসালুর মাজার ও টেক্সটবুকের রাজনীতি - সেপ্টেম্বর 7, 2024
- নিসিম এজিকিয়েলের ভারত দর্শন - আগস্ট 26, 2021
- ক্রাইমের পানিশমেন্ট ও দস্তয়ভস্কি - নভেম্বর 13, 2020