অ্যা ব্রিফ হিস্ট্রি অফ বাংলাদেশি সিনেমা (৩)
পার্ট ৩: হোয়াট ইজ বাংলা সিনেমা?
তো, এখন যেইটারে ‘বাংলা সিনেমা’ বলি আমরা, সেইটা চালু হইছে ১৯৬৫ সালে, রূপবানের পর থিকা। মানে, ‘বাংলা সিনেমা’ বইলা একটা টার্ম তো চালু আছে এখনো আমাদের কথা-বার্তার ভিতরে যে, পুরা ‘বাংলা সিনেমা’র মতন ঘটনা; বা আগেরদিনের ‘বাংলা সিনেমা’ ভালো ছিল, এখন কি সব বানায়… এইরকম। মানে, বাংলা সিনেমা বইলা একটা ধারণা আছে আমাদের মনে। আর এইটা কোন না কোন ঘটনা বা ঘটনাগুলা থিকাই তৈরি হইছে। তো, সেই ঘটনাগুলা, আমার ধারণা ঘটতে শুরু করছে ১৯৬৫ সালে রূপবান সিনেমার পরে। এর আগেও যেই ৩০/৪০ টা সিনেমা বানানো হইছে, সেইগুলা স্ট্রাগল করতেছিল অনেক। হিন্দি আর উর্দু সিনেমার বাইরে আলাদা কইরা বাংলা সিনেমা টিকতে পারবে কিনা, সেইটা নিয়া ডাউট ছিল। কিন্তু রূপবান সিনেমার সাকসেসের পরেই কনফিডেন্স নিয়া বাংলা সিনেমা বানানোর শুরু হয়।[pullquote][AWD_comments][/pullquote]
তারপরও রাষ্ট্র হিসাবে যেহেতু পাকিস্তান ছিল; উর্দু সিনেমা বানানো বন্ধ হয় নাই; তবে যেইভাবে মেইনস্ট্রিম হয়া উঠতেছিল, সেইটা একভাবে কইমা আসছিল। যেইখানে ১৯৫৬ থিকা ১৯৬৫, বাংলা সিনেমা বানানো হইছিল ২৭টা আর উর্দু ছিল ২০ টা; সেইখানে আর ১৯৬৫ থিকা ১৯৭১ পর্যন্ত বাংলা সিনেমা রিলিজ হইছিল ১৩২টা আর ঢাকায় উর্দু সিনেমা রিলিজ হইছিল ৩৩টা (এর মধ্যে রূপবান আর নবাব সিরাজদ্দৌলা সিনেমার উর্দু ভার্সনও আছে)। আরেকটা যেই ঘটনা ঘটছিল ১৯৬৫ সালের ইন্ডিয়া-পাকিস্তান যুদ্ধের পরে ইন্ডিয়া থিকা সিনেমা আমদানি বন্ধ হয়া গেছিল; সেইটাও বাংলা সিনেমার জন্য মার্কেট ওপেন করছিল। আর স্বাধীনতার (১৯৭১ সালের) পরে উর্দু সিনেমাও বানানো বন্ধ হয়া যায়; যার ফলে বাংলাদেশের সিনেমাহলে এই সময়টাতে বাংলা সিনেমা ছাড়া আর কিছু চালানো হয় নাই। ইংরেজি সিনেমার আমদানিও কম-ই থাকার। ‘এক টিকিটে দুই সিনেমা’ নামে হংকংয়ের সিনেমা দেখানো শুরু হয় মেবি ১৯৯০’র দিকে; ‘অশ্লীল সিনেমা’র যুগের কিছুদিন আগে। এইসব কারণে, এই সময়টাতে বাংলাদেশের লোকজনের সিনেমা-হলে বাংলা সিনেমা বাদে অন্য কিছু দেখার সুযোগ আসলে খুব একটা ছিল না। (যদিও ভিসিআর-ভিসিপি’র মাধ্যমে হিন্দি-সিনেমা অবশ্য ১৯৮০’র দিক থিকাই স্ট্রং একটা পজিশনে ছিল।)
………………………………
উর্দু থিকা বাংলা: ‘আযান’ থিকা ‘উত্তরণ’
খুবই ছোট্ট একটা ইনফরমেশন। ১৯৬০ সালে একটা সিনেমা বানানো হয় ‘আযান’ নামে, তখন রিলিজ হয় নাই; পরে এই সিনেমা বাংলায় ডাব কইরা ১৯৭৬ সালে রিলিজ দেয়া হয়, কিন্তু সিনেমা নাম চেইঞ্জ কইরা রাখা হয় ‘উত্তরণ’। 🙂
“মাসিক ‘সিনেমা’র সম্পাদক ফজলুল হক ১৯৬০ সালে ‘আযান’ নামে একটি উর্দু ছবির কাজ শুরু করেন ওবায়েদ-উল-হকের কাহিনি নিয়ে। রিয়াজ বোখারীর ক্যামেরায় ওই ছবিতে অভিনয় করেন রহমান, চিত্রা, শবনম, আনোয়ারা, নাসিমা খান প্রমুখ। ছবির সঙ্গীত পরিচালনা করেন খাদেম হোসেন খান ও খান আতাউর রহমান। মোহাম্মদ নাসের প্রযোজিত এ ছবিটি ‘উত্তরণ’ নামে ১৯৭৬ সালে মুক্তি দেয়া হয় বাংলায় ডাব করে।” (বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিকথা, অনুপম হায়াৎ, পেইজ ৯৭)
ব্যাপারটা একটু খেয়াল কইরা দেখেন, ১৯৭৬ সালে ‘আযান’ ব্যাপারটা কিন্তু এতোটা ‘বাংলা’ ছিল না, যতোটা ‘উত্তরণ’। এইরকমের একটা চিন্তা-ভাবনা তখন ছিল, এখনো তো এই ধরণের চিন্তাই ডমিনেটিং। যে, এইগুলা ‘বাংলা-ভাষায়’ ‘অনুপ্রবেশকারী’ শব্দ; মানে, যেইটা ‘বাংলা’ সেইটা ‘হিন্দি’ বা ‘উর্দু’ থিকা আলাদা, ‘সংস্কৃতের দুহিতা’ :p আর এই ব্যাপারটা স্বাধীনতার পরে পরে আরো বাইড়া গেছিল।
বাইড়া যে গেছিল, এইটার আরেকটা নজির পাইবেন আবুল মনসুর আহমেদের কথাতে:
“প্রথম ঘটনাটা ঘটিল স্বাধীনতার প্রায় শুরুতে্ই – ১৮ ই ডিসেম্বর। ঐ দিন বাংলাদেশের স্বাধীনতা উদযাপনের জন্য দিল্লীর রামলীলা ময়দানে এক বিরাট জনসভা হইল। সে সভায় ভারতের দেশরক্ষা মন্ত্রী শ্রী জগজীবনরাম বক্তৃতায় বলিলেন: ‘এতদিন পাকিস্তানের গর্বের বিষয় ছিল, সে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র। গত পরশু হইতে সে গৌরব বর্তাইয়াছে বাংলাদেশের উপর। বাংলাদেশই এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র।… কিন্তু বাংলাদেশের সদ্য-দীক্ষিত একজন অফিসার মি. রামের ঐ উক্তির তীব্র প্রতিবাদ করিয়া বলিলের: “মি. রামের স্মরণ রাখা উচিৎ ছিল বাংলাদেশ একটি সেকিউলার রাষ্ট্র, মুসলিশ রাষ্ট্রি নয়।’ আমি বুঝিলাম এটা যদি বাংলাদেশের সরকারের সরকারী অভিমত হয়, তবে বিপদের কথা। বাংলাদেশের পরিচালন-ভার এমন সব ‘অতি-প্রগতিবাদী’ লোকের হাতে পড়িতেছে, যারা ইসলামী রাষ্ট্র ও মুসলিম রাষ্্রটের পাথর্ক্য বুঝে না বা বুঝিতে চাহেন না।…
প্রবাসী সরকারের ঢাকায় ফিরার সংগে সংগে প্রমাণিত হইল যে এটা সরকারী অভিমত। দেশে ফিরিয়াই তারা যা দেখাইলেন তাতে রেডিও-টেলিভিশনে কোরান তেলাওয়াত, ‘খোদা হাফেয’ ‘সালামালেকুম’ বন্ধ হইয়া গেল। তার বদলে ‘সুপ্রভাত’ ‘শুভ সন্ধ্যা’, ‘শুভ রাত্রি’ ইত্যাদি সম্বোধন প্রথা চালু হইল।” (আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর, ৫৯৩-৫৯৪)
সরকারি ভাবে নিষিদ্ধ না হইলেও ‘আযান’ নামে সিনেমা বানানোটা রিস্কিই হওয়ার কথা, এইরকম সিচুয়েশনে। আবদুল মান্নান সৈয়দ বলতেছিলেন, ১৯৭৫ সালে অনেক রিস্ক নিয়া উনি ফররুখ আহমদের শ্রেষ্ঠ কবিতার বইটার সম্পাদনা করছিলেন। তো আমার ধারণা, সিনেমাটা সুপার ফ্লপ হওয়ার কথা, কারণ পাবলিকের ‘উত্তরণ’ দেখার কোন কারণ দেখি না; ‘আযান’ নাম হইলেই যে সিনেমা হিট হয়া যাইতো – ঘটনা এইটা না, কিন্তু চেইঞ্জ যে করা লাগলো নামটা, এইটা খেয়াল করার মতো একটা ঘটনা মনেহয়।
……………………………………
তো, আমরা যেইটারে বাংলা-সিনেমা বলি, সেইটা হইতেছে ১৯৬৫ – ১৯৯০, এইরকম ২৫ বছর সময়ের একটা ঘটনা। কিন্তু একটা সিঙ্গুলার কোন জিনিসরে বাংলা সিনেমা বললে ভুল হবে আসলে, বরং বাংলা সিনেমার কয়েকটা প্যাটার্ন ছিল, যেইটা কম-বেশি এখনো কন্টিনিউ হইতেছে। এই ট্রেন্ডগুলা শুরু থিকাই ছিল, বা এখন এই অবস্থায় আছে বইলা কোন না কোনভাবে শুরুটা দেখতে পাইতেছি আমরা। এটলিস্ট চাইরটা ট্রেন্ড বা ধারার কথা বলতে পারি আমি:
‘গ্রামের সিনেমা’ – পরিচিত ‘লোককাহিনি’ বা যাত্রাপালা বেইজড সিনেমা। কিন্তু পরিচিত কাহিনি তো আসলে কম-ই, যার ফলে পরে গ্রামের ‘সমাজ-বাস্তবতা’র উপ্রে বেইজ কইরাও এই জনরা’তে অনেক সিনেমা হয়; কিন্তু এইটা মেবি এখন বাংলা সিনেমার সবচে ‘ক্ষীণ ধারা’, ‘মরা নদী’…। ২০০৬ সালে রিলিজ হওয়া ৯৮টা সিনেমার মধ্যে নাম্বারটা ৮টার বেশি হওয়ার কথা না। মুশকিল হইলো, কিছু ‘ঐতিহাসিক’ সিনেমাও (যেমন ধরেন, হাজী শরিয়তউল্লা, বীরঙ্গনা সখিনা…) এই ক্যাটাগরি ভাইবা বানানো হইছে। মানে, এইসব সিনেমা দেখবে, ‘গ্রামের লোকজন’ – এইরকম একটা অডিয়েন্সের কথা ভাইবা বানানো সিনেমা।
গ্রামের সিনেমা মানে সব গ্রাম-বেইজড সিনেমা না; যেমন ধরেন, ‘সারেং বউ’ পারিবারিক সিনেমাই আসলে। বা এমনকি নবাব সিরাজদ্দৌলা (১৯৭০) ঐতিহাসিক সিনেমা হইলেও আসলে গ্রামের সিনেমা। কারণ, এই সিনেমাগুলা দর্শক হিসাবে এক ‘গ্রামের লোক’ বইলা একটা অডিয়েন্সরে অ্যাজিউম করে। যে, এই সিনেমা ‘গ্রামের লোকজন’ দেখবে, তো, অরা কি পছন্দ করে, সেই জিনিসগুলারে রাখার ট্রাই করে। যেমন, যাত্রা একটা অবভিয়াস ব্যাপার। যে, যাত্রা’তে কি করে? অইরকম কিছু জিনিস রাখতে হবে। যেমন, উঁচা গলার সংলাপ, কাল্পনিক রাজ্য… এইরকম। এন্টারটেইনমেন্টের টুল হিসাবে ‘মঞ্চ-নাটক’ যতোটা না ছিল তার চাইতে বেশি ছিল তো যাত্রাপালা, পালাগান; কিন্তু বাংলা-সিনেমা অইটারে গোড়া হিসাবে নিতে পারেন নাই; খালি কিছু কাহিনিই নিছে। যদিও গানের জায়গা কিছুটা একসেপশনাল… বাংলা সিনেমার গান যতোটা না হিন্দি সিনেমা থিকা আসছে (পরে বরং এই রেফারেন্সটাই মেইন হয়া উঠছে) তার চাইতে যাত্রাপালা থিকা, পালাগান থিকাই বেশি আসছে। কিন্তু বেশ সারপ্রাইজিং একটা ঘটনা হইলো, মিউজিক্যাল মুভি খুব কমই বানানো হইছে বাংলা সিনেমায়। মানে, পালাগান, যাত্রা থিকা কাহিনি নেয়া হইছে, কিন্তু এই মিউজিক্যালের কোনরকম কোন ইম্প্রুভাইজেশন পাইবেন না।
এইটা না হওয়ার কারণ, এইটারে একটা সিনেমাটিক জায়গা থিকা না দেখা, খুবই ইনফিরিয়র একটা জায়গা থিকা লোকেট করতে চাওয়া যে, এই রকমের সিনেমা থিকা পয়সা উইঠা আসে। জহির রায়হান ১৯৬৮ সালে ৪ টা ‘গ্রামের সিনেমা’র (দুই ভাই, কুচবরণ কন্যা, জুলেখা, সুয়োরাণী-দুয়োরাণী) প্রযোজক হয়া টাকা তুইলা অই টাকা দিয়া ‘পারিবারিক সিনেমা’ বানাইছেন। মানে, এইটা একটা ক্যাটাগরি হিসাবে ছিল এবং স্টিল রয়া গেছে যে, পাবলিক তো সিনেমা বুঝে না, যাত্রা দেখতে আসে! 🙁 এইরকম একটা মুর্খতার জায়গা হিসাবে দেখা হইছে এবং হইতেছে এই জনরাটারে। যার ফলে, এইটা সাইড-লাইনের একটা ব্যাপার হিসাবেই আছে, থাকতেছে। এই ধরণের জনরা’র সিনেমার ফুল পটেনশিয়াল কখনোই বাংলা-সিনেমায় আসতে পারে নাই, এইরকম ‘গ্রাম্য’ এটিটুডের কারণে।
‘পারিবারিক সিনেমা’ – শহরের মিডল-ক্লাসের স্ট্রাগল, ইমোশন, সুখ-দুঃখ-আনন্দ-বেদনা-প্রেম নিয়া বানানো সিনেমা। এইটা হইতেছে ‘আগের দিনের ভালো বাংলা সিনেমা’। কিন্তু এই ক্যাটাগরিটা এতো ভালো থাকতে পারে নাই আর। ধরেন, তের নাম্বার ফেকু ওস্তাগার লেন (১৯৬৬), নীল আকাশের নিচে (১৯৬৯), জীবন থেকে নেয়া (১৯৭০) থিকা শুরু কইরা অবুঝ মন (১৯৭২), সারেং বউ (১৯৭৮) হইয়া সহযাত্রী (১৯৮৭) ভেজা চোখ (১৯৮৮) পর্যন্ত কন্সিডার করা যাইতে পারে। এর একটা ক্যাটাগরি হইতেছে, ‘উপন্যাস’ থিকা বানানো সিনেমা। মানিক বন্দোপাধ্যায়ের পদ্মা নদীর মাঝি i দিয়া শুরু হইলেও, মোহাম্মদ নজিবর রহমানের ‘আনোয়ারা’ (১৯৬৭, জহির রায়হান) দিয়া ট্রাই করা হইলেও, শরৎচন্দ্র কিছুদিনের জন্য ভরসা হইয়া উঠছিলেন, ১৯৯০’র দিকে। পরে হুমায়ূন আহমেদ যদ্দিন বাঁইচা ছিলেন, এই ধারাটাতে কাজ করছেন। এখনো যে এইরকম ‘পারিবারিক’ সিনেমা বানানো হয় না – তা না, কিন্তু মোস্টলি ‘বাণিজ্যিক’, ‘রোমান্টিক’ নাইলে ‘পুরষ্কার জিতার লাইগা বানানো সিনেমা’তে কনর্ভাট হয়া গেছে।
পারিবারিক সিনেমা’র একটা ক্রেইজ বা দাপট ছিল, ‘৮০ দশক পর্যন্ত, যতদিন টিভি খুব বেশি এভেইলেবল ছিল না, বা থাকলেও টিভি’তে একটাই চ্যানেল ছিল; নাটক বা ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান দেখানো হইতো, হাতে গোণা কয়েকটা। ডিশ কানেকশনের যুগ যতদিন শুরু হয় নাই। পাইরেটেড সিডি আর ইন্টারনেটে মুভি ডাউনলোড করা তো আরো অনেক পরের ঘটনা। মানে, লোকজন ফ্যামিলি নিয়া সিনেমাহলে সিনেমা দেখতে যাইতো। ১৯৯২ সালে শঙ্খনীল কারাগার সিনেমার কথা মনে করা যাইতে পারে। মানে, আরো পরের এক্সাম্পলও থাকতে পারে, কিন্তু সিনেপ্লেক্সে ‘পুরষ্কার পাওয়ার লাইগা বানানো সিনেমা’ দেখতে যাওয়ার ডাইমেনশনটা অনেকটা আলাদাই হওয়ার কথা। অনেকগুলা ‘ভালো’ বাংলা সিনেমা হইতেছে এই ক্যাটাগরির। তের নাম্বার ফেকু ওস্তাগার লেন (১৯৬৬), জীবন থেকে নেয়া (১৯৭০), টাকা আনা পাই (১৯৭০), অবুঝ মন (১৯৭২), অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী (১৯৭২) মেঘের অনেক রং (১৯৭৬), ছুটির ঘন্টা (১৯৮০), জন্ম থেকে জ্বলছি (১৯৮১), দেবদাস (১৯৮২), পুরষ্কার (১৯৮৩), নয়নের আলো (১৯৮৪), দুই জীবন (১৯৮৮), ভেজা চোখ (১৯৮৮)… এই কয়টা সিনেমার কথা মনে হইলো। আমার ধারণা, রিডার’রা আরো অনেক নাম এইখানে অ্যাড করতে পারবেন।
এই পারিবারিক সিনেমার মধ্যে পলিটিক্যাল একটা ক্যাটাগরিও ছিল ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের পরে, কিন্তু সেইটা খুব বেশি এক্সপ্লোরড হইতে পারে নাই। কিন্তু এর পরে এইটিইসে কাজী হায়াত ‘প্রতিবাদী’ কিছু সিনেমা বানাইছিলেন, যেইটা আর এতোটা ‘পারিবারিক’ থাকতে পারে নাই, বরং ‘বাণিজ্যিক’ ঘরানার একটা ব্যাপার হয়া গেছিল। এর একটা কারণ তো অবশ্যই মিডল-ক্লাস সিনেমা দেখতে আর আসতো না, কিন্তু আরেকটা অবশ্যই এইরকম যে, এই ক্লাসের এন্টারটেইনমেন্ট নিড’টারে কন্সিডার কইরা সিনেমা বানানোর মতো টেকনিক্যাল অ্যাডভান্সমেন্ট আর ইনভেস্টমেন্টও করা যাইতেছিল না। পরে হুমায়ূন আইসা যা করছিলেন, অইগুলা যতোটা না সিনেমাহলে চলতো তার চাইতে টিভি-সিনেমা বা সিডি’র সিনেমাই ছিল।…
‘বাণিজ্যিক সিনেমা’: বাংলা সিনেমা ‘বাজে’ হইতে শুরু করছে আসলে ‘বাণিজ্যিক’ হইতে গিয়া 🙂 – এইরকমের ধারণা সবারই কম-বেশি আছে আমাদের মনে। মানে, হিট খাওয়া’রে ‘বাজে’ হিসাবে রিড করতে তো রাজি আছি আমরা, এমনিতেও।… ‘বাণিজ্যিক সিনেমা’ হিসাবে ‘রংবাজ’ মনেহয় ফার্স্ট সাকসেসফুল সিনেমা, এই ধারায়। পরে অনেকটা ‘নকল সিনেমা’ হিসাবে পরচিতি হইছে মনেহয় এই ধারা’টা, যেমন, ‘শোলে’ ফলো কইরা বানানো ‘দোস্ত দুশন’… এইরকম। আবার, কেয়ামত থেকে কেয়ামত ‘নকল’ হইলেও ‘ভালো’ বাণিজ্যিক সিনেমা হইতে পারছিল মনেহয়। মানে, ‘বাণিজ্যিক’ মানে বাজে, এইরকম সবসময় না। আর সব সিনেমা তো ‘বাণিজ্যিক সিনেমা’-ই, ‘অ-বাণিজ্যিক’ সিনেমা তো নাই কোন; কিন্তু এইখানে আমি বুঝাইতে চাইতেছি এন্টারটেইনমেন্টটাই মেইন, নাচা-গানায় ভরপুর টাইপ জিনিস। আরো ক্লিয়ারলি বললে, ‘হিন্দ সিনেমা’ 🙂 বা ‘মার্ভেল মুভিজ’ 🙂 … এইরকম। কিন্তু আনফরচুনেটলি, এইরকম সাকসেসফুল সিনেমা কমই হইছে, বাংলাদেশে। এক তো হইলো, টেকনিক্যাল এডভান্সমেন্ট হয় নাই, আর মার্কেটও বড় হইতে পারে নাই… তো, ডিম আগে না মুর্গি আগে টাইপ একটা অবস্থা সবসময় ছিল। অনন্ত জলিল দেখবেন, টেকনিক্যাল এই জায়গাটা উতরানোর চেষ্টা করতেছেন। যে, ভালো অ্যাকশন মুভি বানাইতে হবে।
‘বাণিজ্যিক সিনেমা’ মানেই হইতেছে আসলে ‘অ্যাকশন’ বা ‘মাইরপিটের সিনেমা’। রংবাজ (১৯৭৩) হিট হইলেও অনেক নেগেটিভ রিভিউ পাওয়ার কথা সিনেমাটার; যে, বাংলা সিনেমা নষ্ট হয়া যাইতেছে! যদিও অই সময়ের সিনে-ম্যাগাজিনগুলা দেখলে হয়তো আরো ক্লিয়ারলি বলা যাইতো। কিন্তু এইটা থাইমা থাকে নাই এর পরে মাসুদ পারভেজ মেইনলি এই জনরা’টারে লিড দিছিলেন মাসুদ রানা (১৯৭৪), এপার ওপার (১৯৭৫) বানায়া। পরে গুন্ডা (১৯৭৬), দোস্ত দুশমন (১৯৭৭) দিয়া কন্টিনিউড হইতে হইতে ১৯৮২/৮৩’র দিকে একটা জনরা হয়া উঠে; যেইখানে অ্যাকশনটা মেইন, ভিলেন একটা মাস্ট। কিন্তু ধীরে ধীরে ‘হিন্দি সিনেমা’ ভিসিআর/ভিসিপি’র মাধ্যমে ছড়াইতে থাকে যে, ডিফরেন্সটা ক্লিয়ার হয়া উঠে আরো; আর বাংলা-সিনেমা হিন্দি -সিনেমা কাউন্টার করতে গিয়া আরো ‘হাইস্যকর’ হইতে থাকে, কম ইনভেস্টমেন্ট আর টেকনিক্যাল ইনফিরিয়রিটি’টা আরো এক্সপ্লোজ হয়া পড়ে। পরে, ‘অশ্লীল’ সিনেমার যেই ফেইজ, সেইটা এই জনরা’র ফ্রাস্ট্রেশনেরই একটা আউটকাম হওয়ার কথা। ‘অশ্লীল সিনেমা’র আগে হংকং থিকা থিকা ইর্ম্পোট করা ‘এক টিকিটে দুই সিনেমা’ দিয়াও সিনেমাহলগুলা সারভাইব করতে পারার কথা না।…
লাস্টলি, ‘পুরষ্কার পাওয়ার লাইগা বানানো সিনেমা’… মনে হইতে পারে যে, ইদানিং এই ট্রেন্ডটা শুরু হইছে। কিন্তু এইটা অনেক আগে থিকাই আছে। ‘জাগো হুয়া সভেরা’, ‘সুতরাং’… এইগুলা পুরষ্কার পাওয়ার লাইগা বানানো সিনেমার শুরু। এখন এই ট্রেন্ডটা একটা এস্টাবলিশড ট্রেন্ড হইতে পারছে। আমার ধারণা, ওয়েব প্লাটফর্মগুলা আরো পপুলার হইতে থাকলে, ‘ক্রিটিক্যালি অ্যাকসেপ্টেড’ হইতে পারার বাসনা নিয়া আরো আরো সিনেমা বানানো হওয়ার কথা।
‘পুরষ্কার পাওয়ার লাইগা বানানো সিনেমার’ বাংলা সিনেমার লগে রিলেশন আসলে কমই। আমি যেই হিস্ট্রিটা লিখতে চাইতেছি, ১৯৫৬ – ২০০৬, এইরকম ৫০ বছরের টাইমলাইনে কখনোই আলাপের জিনিস হয়া উঠতে পারে নাই। মানে, ‘সিনেমা-বোদ্ধা’রা তো আলাপ আলোচনা করছেনই, করেনই; কিন্তু পাবলিক স্ফিয়ারে ধীরে বহে মেঘনা (১৯৭৩), ঘুড্ডি (১৯৮০) চাকা (১৯৯৪)… এইগুলা কোন সিনেমাই না। এইগুলা যারা বানাইছেন, উনারা পাবলিকরে দর্শক হিসাবে চান নাই, ‘শিল্প-সাহিত্য’ বুঝা দর্শক চাইছেন, এইরকম সিনেমা পাবলিকও দেখে নাই আসলে।
তো, এই ট্রেন্ডগুলা নিয়া ভাবার সময় একটা জিনিস মাথায় রাখলে মেবি ভালো হবে যে, সিনেমার এই আলাপটাই বা আলাপগুলাই সিনেমা না; মানে, এই আলাপের ভিতরে বন্দী কইরা ফেইলেন না বা এই এক্সপেক্টশন রাইখেন না। আমি যেইটা ট্রাই করতেছি, সেইটা হইতেছে এই হিস্ট্রিক্যাল আলাপের ভিতর দিয়া একটা থিওরেটিক্যাল জায়গা স্পষ্ট করার যে, কোন জায়গা থিকা বাংলা সিনেমারে দেখা যাইতে পারে।
ঘটনা’টা কখনোই এইটা না যে, সিনেমার ভিতর দিয়া এইখানে একটা ‘মর্ডানিটি’রে আবিষ্কার চেষ্টা হইতেছে বা হইতেছিল; বরং এন্টারটেইনমেন্টের টুল হিসাবে সিনেমা কিভাবে কাজ করতেছিল, কোন জিনিসগুলারে পিক করতেছিল – সেইটা হইতেছে খেয়াল করার জায়গাটা। হলিউডে যখন সিনেমা বানানো শুরু হইছে, বোম্বে যখন বানানো শুরু হইছে, ঢাকা’তে কাছাকাছি সময়েই শুরু হইছে সিনেমা বানানো ও সিনেমাহলে সিনেমা দেখা ও দেখানোর রেওয়াজ; কিন্তু নিজেদেরকে ‘গ্লোবাল’ মনে করা তো দূর কি বাত, ‘নিজ’ মনে করতে এখনো হেসিটেট করতেছে; তো, প্রব্লেম হইতেছে এই চিন্তার জায়গাটা নিয়া। ‘হোয়াট ইজ বাংলা সিনেমা?’ – এই জিনিসটাই ভাবতে পারতেছি না আমরা। কখনো ভাবতেছি, ‘যাত্রার ঐতিহ্য ধইরা রাখা’; কখনো ভাবতেছি ‘সামাজিক ও পারিবারিক ঐতিহ্য ধইরা রাখা’; ‘নিজেদের মতো কইরা একটা আধুনিকতা তৈরি করা’… এই সেই; মানে, এইসব কিছুর মধ্যেই খাবি খাইতেছে। বাংলাদেশের আর্টের অন্য ফর্মগুলা যেমন গল্প-কবিতা-নভেলেও এই টেনশনটা আছে, কিন্তু সিনেমার মতো এতোটা টেরিবলি আর কোন আর্ট ফর্ম মনেহয় ফেইল মারে নাই।…
আরেকটা জিনিস হইলো, ট্রেন্ডগুলা খুব স্ট্রিক কিছু না, বরং বেশিরভাগ সময়ই ওভারল্যাপ করে। যেমন, ‘পারিবারিক’ সিনেমাও ‘বাণিজ্যিক সিনেমা’, ‘গ্রামের সিনেমা’ও ‘পারিবারিক সিনেমা’; আর ‘পুরষ্কার জিতার লাইগা বানানো সিনেমা’ তো গ্রাম বাদে বানানোই পসিবল না! :p মানে, একটা সিনেমা ‘গ্রামের সিনেমা’ বইলা শহরের মিডল-ক্লাস দশর্করা সেই সিনেমা দেখেন নাই – এইরকম না। বরং অনেক ‘গ্রামের সিনেমা’ বানানো হইছে, শহরের মিডল-ক্লাস পারসপেক্টিভ থিকা। বা হুমায়ূন আহমেদের মিডল-ক্লাস সিনেমা ‘গ্রামের লোকজন’ও দেখছেন। (যদিও উনার মিডল-ক্লাস গ্রাউন্ড থিকা গ্রামের লোকজনের কারেক্টার’রে যে ‘ফানি’ বানায়া তুলছেন সেইটা আর ফানি থাকে নাই, বরং ফার্সিক্যাল একটা ব্যাপারেই শেষ হইছে।) কিন্তু একটা জিনিস রিমার্কেবল যে, খুব কম ডিরেক্টরই আছেন, যারা অ্যাক্রস দ্য জনরা কাজ করতে পারছেন। যেমন এহতেশাম, সফল ‘বাণিজ্যিক সিনেমা’-ই বানাইছেন, খান আতা ‘পারিবারিক সিনেমা’তেই ছিলেন… এইরকম; তবে জহির রায়হান একসেপশনাল, সবগুলা জনরাতেই উনি উনার প্রেজেন্স রাখার ট্রাই করছেন, এই কারণেই মেবি উনি আলমগীর কবিরের মতো এতোটা নাক উঁচা হইতে পারেন নাই।…
আমার ধারণা, যারা কম-বেশি বাংলা সিনেমা দেখছেন, তারা এই ট্রেন্ডগুলারে বেটার লোকেট করতে পারার কথা। তবে জনরা’গুলা আলাপে এটলিস্ট এইটুক মেবি ক্লিয়ার যে, এইগুলা ফিক্সড কোন ক্যাটাগরি না, টাইম টু টাইম চেইঞ্জ হইছে। যেমন, মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী যেমন পুরষ্কার পাওয়ার লাইগাই সিনেমা বানাইছেন, কিন্তু মিডল ক্লাসের এন্টারটেইনমেন্টের জায়গাটারেও মিস করতে চান নাই। এইরকম উইথ-ইন দ্য জনরা, ডিফরেন্সের স্পেইসগুলা আছে।
আমার মনেহয়, টাইমলাইনের বেসিসেও যদি দেখেন, একেকটা হিস্ট্রিক্যাল পিরিয়ডে একেকটা জনরা ডমিনেট করছে।
১৯৬৫ – ১৯৭১: ‘
‘গ্রামের ছবি’ ছিল হিট ক্যাটাগরি। ‘পারিবারিক সিনেমা’ও এমার্জ করতেছিল। এই সময়ের ডিরেক্টর হিসাবে এটলিস্ট দুইজন – এতহেশাম ও জহির রায়হান ইর্ম্পটেন্ট মনেহয় আমার কাছে। সুভাষ দত্ত, নারায়ণ ঘোষ মিতা’র নামও আসতে পারে। শবনম, সুজাতা, সুমিতা দেবী, রোজী সামাদ… ছিলেন এই সময়ের নায়িকা। রহমান, খান আতা, আনোয়ার হোসেন, আজিম ছিলেন নায়ক। সিনেমা হিসাবে এই কয়টার নাম নিতে চাইতেছি:
রূপবান (১৯৬৫)
[youtube id=”aeqfausAd_A”]
১৩ নং ফেকু ওস্তাগার লেন (১৯৬৬)
[youtube id=”w_vCTPqZB48″]
বেহুলা (১৯৬৬)
[youtube id=”oSEezQ0xsu8″]
নবাব সিরাজদৌল্লা (১৯৬৭)
[youtube id=”qDoP_M6xfbU”]
নীল আকাশের নীচে (১৯৬৯)
[youtube id=”8FRxPVLjdaM”]
জীবন থেকে নেয়া (১৯৭০)
[youtube id=”3KwomNGsC6s”]
পীচ ঢালা পথ (১৯৭০)
[youtube id=”1gYd0hCr_gw”]
১৯৭২ – ১৯৮০: ‘পারিবারিক সিনেমা’ ছিল হিট ক্যাটাগরি; মাইরপিটের সিনেমা’-ও শুরু হইছিল। ‘গ্রামের সিনেমা’ আর মেইন ক্যাটগরি ছিল না। বাংলা সিনেমা যেন গ্রাম থিকা শহরে চইলা আসতেছিল। 🙂 ডিরেক্টর হিসাবে – খান আতা, কাজী জহির, চাষী নজরুল ইসলাম, আলমগীর কবির, আমজাদ হোসেন, আজিজুর রহমান, ইবনে মিজান, আবদুল্লাহ আল মামুনের… কথা বলা যায়। কবরী, ববিতা, শাবানা, সুচরিতা, অলিভিয়া,… এই সময়ের নায়িকা। রাজ্জাক, ফারুক, উজ্জ্বল, জাভেদ, ওয়াসিম, আলমগীর, বুলবুল আহমেদ, সোহেল রানা, জাফর ইকবাল… এই সময়ের নায়ক।
ওরা ১১ জন (১৯৭২)
[youtube id=”onNXCzLaSGI”]
অবুঝ মন (১৯৭২)
[youtube id=”jFCkKtXYXA4″]
অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী (১৯৭২)
[youtube id=”UXGVi0SSLgg”]
রংবাজ (১৯৭৩)
[youtube id=”m5zXbWzBSgE”]
তিতাস একটি নদীর নাম (১৯৭৩)
[youtube id=”1Mku90VzJ0s”]
সুজন সখী (১৯৭৫)
[youtube id=”PgkmS56r_5c”]
লাঠিয়াল (১৯৭৫)
[youtube id=”wYnVaG61yzk”]
এক মুঠো ভাত (১৯৭৬)
[youtube id=”80LCy_k8y4I”]
সীমানা পেরিয়ে (১৯৭৭)
[youtube id=”7oUZpPEG8Zw”]
অনন্ত প্রেম (১৯৭৭)
সারেং বউ (১৯৭৮)
[youtube id=”sephN52U8Y0″]
গোলাপী এখন ট্রেনে (১৯৭৮)
[youtube id=”cNLTHbY1Ndk”]
অশিক্ষিত (১৯৭৮)
[youtube id=”eEnYrA5ktto”]
সূর্য দীঘল বাড়ি (১৯৭৯)
[youtube id=”gMeeozaMmIM”]
সুন্দরী (১৯৭৯)
[youtube id=”Mg-kgGcKqWA”]
দি ফাদার (১৯৭৯)
[youtube id=”bF9UeoRRVtw”]
১৯৮০ – ১৯৯০: ‘বাণিজ্যিক সিনেমা’ বা মাইরপিটের সিনেমা এই সময়ে ‘পারিবারিক সিনেমা’রে ক্রস কইরা যায়। এই সময়ের ডিরেক্টর হিসাবে এজে মিন্টু, মতিন রহমান, কামাল আহমেদ, শিবলী সাদিক, । পুরান নায়িকাদের সাথে অঞ্জু ঘোষ, দোয়েল, দিতি, রোজিনা, নূতন, চম্পা, সূর্বণা মুস্তফা… এই সময়ের নায়িকা ছিলেন। ইলিয়াস কাঞ্চন এই সময়ের হিট নায়ক; জসীম আগে থিকা অভিনয় করলেও এই সময়ে নায়ক রোলে আসেন, মাহমুদ কলি, রুবেল, বাপ্পারাজও… ছিলেন।
ছুটির ঘন্টা (১৯৮০)
[youtube id=”_cIDMn2wodQ”]
এমিলের গোয়েন্দা বাহিনি (১৯৮০)
[youtube id=”B6d7aFotHvI”]
জন্ম থেকে জ্বলছি (১৯৮১)
[youtube id=”KVu2RyVNR3I”]
বড় ভালো লোক ছিল (১৯৮২)
[youtube id=”J2sGWE2fIFk”]
দুই পয়সার আলতা (১৯৮২)
[youtube id=”aGaubnuKAgg”]
বদনাম (১৯৮৩)
[youtube id=”tIvDua4Iv4Q”]
লাইলী মজনু (১৯৮৩)
[youtube id=”4YewXm_3BI0″]
দূর দেশ (১৯৮৩)
[youtube id=”oOQ4JtsBOhQ”]
পুরষ্কার (১৯৮৩)
[youtube id=”H02kXOxrR5U”]
ভাত দে (১৯৮৪)
[youtube id=”z0g7cXKqMC8″]
নয়নের আলো (১৯৮৪)
[youtube id=”xM2Y0kS7ymY”]
চাপা ডাঙার বউ (১৯৮৬)
[youtube id=”H2ty5KnQdKY”]
লালু মাস্তান (১৯৮৭)
[youtube id=”y5yyeSlqYyc”]
ভেজা চোখ (১৯৮৮)
ভেজা চোখ সিনেমার পোস্টার
বেদের মেয়ে জোসনা (১৯৮৯)
[youtube id=”x_4SDvh5bwY”]
১৯৯০ – ২০০০: ‘মাইরপিটের সিনেমা’ ছিল ‘আসল’ বাংলা-সিনেমা। পারিবারিক সিনেমাও বানানো হয় কিছু, অন্য ক্যাটাগরিগুলারও। এখন “ছিঃনেমা” ক্যাটাগরি’তে যেই বাংলা সিনেমা’র ইমেজ দাঁড়া করানো হয়, সেইটা মোস্টলি এই সময়ের সিনেমার ঘটনা। মানে, বাংলা সিনেমায় ‘মিডল-ক্লাস এসথেটিকসের’ মরণ হয় বইলা ক্লেইম করা হয়; যেইটা সালমান শাহ মারা যাওয়ার ভিতর দিয়া একভাবে শেষ হয়। তোজাম্মেল হক বকুলল, কাজী হায়াত, শহীদুল ইসলাম খোকন, হুমায়ূন আহমেদ, মমতাজুর রহমান আকবর… এই সময়ের ডিরেক্টর। মৌসুমী, শাবনাজ, শাবনুর, পপি, পূর্ণিমা… এই সময়ের নায়িকা। নাঈম, ওমর সানী, মান্না, আমিন খান… এই সময়ে নায়ক হইলেও সালমান শাহ যদ্দিন বাঁইচা ছিলেন, ডমিনেন্ট করছেন। রিয়াজ, ফেরদৌসের শুরুটাও এই সময়েই।
মরণের পরে (১৯৯০)
[youtube id=”hWgOMsCG2jo”]
পদ্মা নদীর মাঝি (১৯৯৩)
[youtube id=”kHCQud5cUjo”]
কেয়ামত থেকে কেয়ামত (১৯৯৩)
[youtube id=”L3rpjVVfkQc”]
অবুঝ সন্তান (১৯৯৩)
[youtube id=”VmS75_XJhqQ”]
স্বপ্নের ঠিকানা (১৯৯৫)
[youtube id=”dXFYk_VwdUo”]
দীপু নাম্বার টু (১৯৯৬)
[youtube id=”oJsKmmsnQd8″]
হঠাৎ বৃষ্টি (১৯৯৮)
[youtube id=”GJMdS1Q0Ogk”]
আম্মাজান (১৯৯৯)
[youtube id=”gA7wunscmSU”]
২০০০ – ২০১০:
মোস্টলি “প্রতিবাদী সিনেমা” ও “অশ্লীল সিনেমার যুগ”। মান্না-যুগ, ফলোড বাই শাকিব খান। ডিরেক্টর হিসাবে তারেক মাসুদ, মোরশেদুল ইসলাম এই সময়ের লোক; মুস্তফা সরয়ার ফারুকী’র নাম আলাদাভাবে বলতে পারাটা দরকার। এফ আই মানিক, জাকির হোসেন রাজু, তৌকির আহমেদ, এস এ হক অলিক… এই সময়ের ডিরেক্টর। নায়কের বাইরে ডিপজল, হুমায়ূন ফরিদী, দিলদার ইর্ম্পটেন্ট কারেক্টার, এই সময়ের। পূর্ণিমা, পপি হিট নায়িকা হইলেও এইটা আসলে মুনমুন-ময়ূরী-নাসরিনের টাইম। পলি-আলেকজেন্ডার বো, ‘অশ্লীল সিনেমার’ জুটি হিসাবে হিট ছিলেন। শাকিব খান-অপু বিশ্বাসের শুরুটাও এই সময়েই।..
মাটির ময়না (২০০২)
[youtube id=”DHxN53b-sCI”]
মনের মাঝে তুমি (২০০৩)
[youtube id=”rX4EFqTqEmE”]
ব্যাচেলার (২০০৪)
[youtube id=”0xHW7gB3TOo”]
মনপুরা (২০০৯)
[youtube id=”ZYw7PCggOnY”]
২০১০ – ২০২০: শাকিব খান যুগ। জয়া আহসান, মাহিয়া মাহি, পরীমনি… এই সময়ের নায়িকা। ইমন, আরেফিন শুভ, বাপ্পী চোধুরী… এই সময়ের নায়ক। অনন্ত জলিলের সিনেমা বানাইতে আসাটা একটা ঘটনা।
“আব তেরা কেয়া হোগা কালিয়া”? 🙂 মানে, আমি আসলে এই টাইম’টা নিয়া ডিটেইল কমেন্ট করতে চাইতেছি না। সিনেমা জিনিসটাই বেশ ভচকায়া যাইতেছে, এখনকার টাইমে আইসা। অনেকগুলা সিনেমাহল বন্ধ হইছে, ৪০০/৪৫০ থিকা এখন মনেহয় ৪০/৫০টাতে নাইমা আসছে। ঢাকা, চিটাগাংয়ে সিনেপ্লেক্স হইছে। সিনেমা ব্যাপারটা পাবলিক ভিউয়িংয়ের জায়গা থিকা পারসোনাল ভিউয়িংয়ের জায়গাটাতেও ট্রান্সফার হইতেছে ইউটিউব, ওয়েব প্লাটফর্ম, ল্যাপটপ, স্মার্ট ফোনের স্ক্রীণে। জিনিসটা শেষ হয়া যাইতেছে – তা না; ফরম্যাট’টা, মিডিয়ামটা একটা চেইঞ্জের জায়গাতে আসছে, যেইটা নতুন একটা ভিউ-পয়েন্ট থিকা আমাদেরকে দেখতে পারতে হবে।…
ডুবসাঁতার (২০১০)
[youtube id=”KcFqk8BJ9Eg”]
আমার বন্ধু রাশেদ (২০১১)
[youtube id=”u6tyxXUdQ2s”]
টেলিভিশন (২০১২)
ঢাকা অ্যাটাক (২০১৭)
[youtube id=”uLBjt9gqDKE”]
অবভিয়াসলি, এইখানে আরো কিছু সিনেমা যোগ হইতে পারে; কিন্তু আমার ধারণা, এই ৫৪ট সিনেমা দিয়া ‘বাংলা-সিনেমা’ জিনিসটা বুঝা যাইতে পারে। আরো কিছু ডিরেক্টরের নামও হয়তো আসতে পারে। নায়ক-নায়িকা, মিউজিক, পোস্টার, মার্কেটিং নিয়াও আলাদা কইরা কিছু জিনিস বলা যাইতে পারে; কারণ এইগুলাও সিনেমারই পার্ট, আর একটু ইনকোয়ারি করলে আমরা দেখতে পারবো যে, এই জিনিসগুলাও টাইম টু টাইম চেইঞ্জ হইছে। যদিও আমি ব্রিফলিই বলতে চাইতেছি; কিন্তু কেউ যদি বাংলা সিনেমা নিয়া ডিটেইল কাজ করতে চান, এই হিস্ট্রিক্যাল টাইম পিরিয়ডটারেই (১৯৬৫ – ১৯৯০) অবজার্ভ করা লাগবে।
তো, ট্রেন্ড আলাদা হইলেও এর মধ্যে কমন কিছু ফ্যাক্ট কিন্তু আছেই। আপাতত, এই ৩টার কথা বলা যাইতে পারে:
১. টেকনিক্যালি আপগ্রেড না হওয়া। মানে, সিনেমা আর্ট-কালচারের ঘটনা তো অবশ্যই, কিন্তু এর টেকনিক্যাল জায়গাটারে আমলে না নিলে সমস্যাই হওয়ার কথা। মানে, কাগজ-কলম, মোবাইল-কম্পিউটার নিয়া বইসা গল্প-উপন্যাস-কবিতা লেইখা ফেলতে পারবেন, কিন্তু সিনেমা বানাইতে হইলে টেকনিক্যাল কিছু জিনিস তো লাগে! ওভার দ্য পিরিয়ড, বাংলা সিনেমার ক্ষেত্রে এই জায়গাগুলা আপগ্রেড হয় নাই। যার ফলে, কাহিনি বলেন, ডিরেক্টর বলেন, নায়ক-নায়িকা বলেন, ভিজ্যুয়াল হিসাবে ইনফিরিয়র হইতে হইতে একটা পর্যায়ে বাতিলের দিকে চইলা গেছে।…
২. কোন সিগনেচার বানাইতে না পারা। হলিউড, বলিউডের কথা বাদ দেন, একটা তামিল, হংকং বা কোরিয়ান, তার্কিশ পপুলার সিনেমা দেখলেও আমার ধারণা, কোন না কোন সিগনেচার পাওয়া যায়। বুঝা যায় যে, ভাই, এইটা তামিল বা কোরিয়ান সিনেমা (চেহারা বাদ দিলেও এক্সপ্রেশন ধরতে পারেন); কিন্তু বাংলা সিনেমার কোন সিগনেচার আইডেন্টিফাই করাটা মেবি মুশকিল হবে। ইন্ডিভিজ্যুয়াল নায়ক-নায়িকা-অভিনেতার যে কোন সিগনেচার ছিল না বা নাই – তা না; মান্নার ভরাট গলার আওয়াজ, শাবানার ইমোশনাল কান্দা-কাটি, জসিমের ‘চৌধুরী সাহেব…’ তো আছেই; কিন্তু এইগুলা যে ‘বাংলা সিনেমা’ হিসাবে আইডেন্টিফাই করা লাগে, এইটা তো আমাদের কাছে এক রকমের শরমের ব্যাপারই। মানে, ইন ট্রু সেন্স, বাংলা সিনেমার সেলিব্রেটেড কোন সিগনেচারের কথা বলতে পারাটা টাফই হওয়ার কথা।
৩. সবচে ক্রুশিয়াল জায়গা হইতেছে, দর্শকরে ফিক্সড একটা আইডেন্টিটি হিসাবে ভাবা। যে, দর্শক এইটা খায়, অইটা খায় (ল্যাঙ্গুয়েজটা দেখেন, দেখে না, খায়…)। ব্যাপারটা দর্শকরে নতুন কোন এন্টারটেইনমেন্ট দেয়া না, অলওয়েজ দর্শক ‘কি চায়’ বইলা একটা জায়গারে মার্ক কইরা সেইটারে ফুলফিল করার ট্রাই করা। আর্টে বা সিনেমায় এই জিনিসটা পুরাপুরি সুইসাইডাল একটা ঘটনা, আর বাংলা-সিনেমা’তে এই ঘটনাটাই ঘটছে। দর্শকরে বোবা এবং বেকুব হিসাবে কন্সিডার কইরা ‘শস্তা’ এন্টারটেইনমেন্ট দেয়ার কথা ভাবা হইছে। এই জায়গাতে স্টিভ জবসের ফিলোসফি বরং বেটার যে, কাস্টমার তো জানে না সে কি চায়; মোবাইলে এতো কিছু করার কথা কাস্টমাররা তো ভাবে নাই, যতক্ষণ না অ্যাপল তার মোবাইল ফোন নিয়া আসছে। যখন দেয়া হইছে, তখন কাস্টমার ভাবতে পারছে, আরে এইটা এইটাও লাগে দেখি আমার! এইরকম বাংলা সিনেমা’তে খুব কমই ঘটছে যে, দর্শকরা চাওয়ার আগে পাইছে। যে কোন আর্ট যদি খালি কাস্টমারের বেসিক ডিমান্ডটারেই ফুলফিল করতে চায়, সেইটা আসলে আর্ট হওয়ার জায়গাটাতেই যাইতে পারার কথা না। প্রডাক্ট হিসাবেও কাস্টমারদেরকে ইউনিক একটা কিছু অফার করতে পারতে হয় তো! বাংলার সিনেমা তার দর্শকরে অ্যাড্রেস করতে চায় নাই বা খুব ফিক্সড হিসাবে নিছে, যার ফলে না হইতে পারছে আর্ট, আর না করতে পারছে বিজনেস। এইটা বাংলা সিনেমা বেসিক ফেইওলরের জায়গা।
তো, আমার ধারণা, ‘বাংলা সিনেমা’র এক ধরণে দ্য এন্ড ঘটে বা নিউ র্স্টাট শুরু হয় ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ সিনেমা দিয়া। মানে, একটা প্যারাডাইম শিফট যে জরুরি, এই সিনেমা হিট হওয়ার পরে টের পাওয়ার কথা, যেই সিনেমা আমরা বানাইতে ছিলাম, সেইগুলা বাংলা সিনেমা হয়া থাকলে এই ইন্ড্রাষ্ট্রি বেশিদিন টিইকা থাকতে পারার কথা না। যদিও এই ফাটল’টা এক্সপোজড হইতে আরো কিছুদিন সময় লাগছিল, কিন্তু বেদের মেয়ে জোসনা জায়গাটারে ট্রিগার করতে পারছিল, একভাবে।
মানে, আমি বলতে চাইতেছি, ‘রূপবান’ থিকা ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ – এর মাঝখানের সময়টাই হইতেছে ‘বাংলা সিনেমা’। তো, অবভিয়াসলি, আমার পরের আলাপ হইতেছে, বেদের মেয়ে জোসনা নিয়া।
Latest posts by ইমরুল হাসান (see all)
- পলিটিকাল ডাইরি – ২০২৪ (দুই) - সেপ্টেম্বর 17, 2024
- পলিটিকাল ডাইরি – ২০২৪ (এক) - সেপ্টেম্বর 4, 2024
- ধর্ম প্রশ্নে পুরান কমিউনিস্টদেরকে ইনডেমনিটি দিতে চাওয়াটা অনেকটা ইন্টেলেকচুয়াল অসততার ঘটনা: ফরহাদ মজহারের ‘মোকাবিলা’ (২০০৬) বই নিয়া আলাপ - আগস্ট 9, 2024