Main menu

বঙ্গবন্ধুর শেষ পাবলিক ভাষণ

১৯৭৫ সালের ২৫ শে জানুয়ারি বাংলাদেশের সংবিধানে চতুর্থ সংশোধনী পাশ হওয়ার পরে নতুন সরকার ব্যবস্থা কি রকম হবে, সেইটা জনগণের কাছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ব্যাখ্যা করেন ২৬শে মার্চ, ঢাকার সোহরায়োর্দি মাঠে, বিশাল এক জনসভায়। ১৯৭৫ সালের ১৫ই অগাস্ট  নির্মমভাবে খুন হওয়ার আগে এইটা ছিল উনার শেষ পাবলিক ভাষণ। ভাষণ হিসাবে এইটা খুবই ইম্পর্টেন্ট, উইকিপিডিয়ার এন্ট্রি’তে (https://cutt.ly/2jM02VM) বলা হইছে : ২৬ মার্চ ১৯৭৫ মুজিবুর তার দ্বিতীয় বিপ্লব পরিকল্পনা বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেন, বিপ্লবের চারটি উদ্দেশ্য তুলে ধরেন এবং বহুমাত্রিক সমবায়কে অর্থনৈতিক একক হিসাবে গঠনের অভিপ্রায় ঘোষণা করেন।

পরের দিন, ২৭ শে মার্চ, দৈনিক সংবাদে এই ভাষণের ট্রান্সক্রিপ্ট ছাপা হয়। ২০১৯ সালে বাংলা ট্রিউবিন পত্রিকা সেইটা রিপ্রিন্ট্র করে। (https://cutt.ly/xj1lPmX)  এই ওয়েব সাইটেও সেই ট্রান্সক্রিপ্ট’টা আছে:  1975.03.26 | বঙ্গবন্ধুর ভাষণসমগ্র | বাকশাল নিয়ে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ | সংগ্রামের নোটবুক (songramernotebook.com)  কয়েকটা অডিও, ভিডিও লিংকও অনলাইনে এভেইলেবল। কিন্তু কোন লিংকেই সংবাদের ট্রান্সস্ক্রিপ্টের পুরা অডিও বা ভিডিও নাই। কিন্তু অডিও-ভিডিও যতটুকই পাওয়া যায়, সেইগুলা শুইনা বুঝা যায়, সংবাদের ট্রান্সক্রিপ্ট’টা পুরাপুরি অথেনটিক না, বঙ্গবন্ধুর কথারে ‘লিখিত রূপ’ দেয়ার একটা চেষ্টা ছিল; যা এখনো চালু আছে। যেমন ধরেন, বঙ্গবন্ধু কইছেন, “ফোর প্রিন্সিপাল”, ট্রান্সক্রিপ্টে লেখছে, “চারটি রাষ্ট্রীয় আদর্শ”; বঙ্গবন্ধু কইছেন “স্কয়ার মাইল”, লেখছে “বর্গমাইল”; বঙ্গবন্ধু কইছেন, “জাগা”, লেখছে “জায়গা” – এইরকম প্রতিটা প্যারাতে (আমার ধারণা, ইচ্ছা কইরা) ভুল লেখছে। রাজনৈতিক সিগনিফিকেন্সের বাইরেও, এইগুলা কোন ইনোসেন্ট ঘটনা না।…

তো, এইখানের ট্রান্সক্রিপ্টে একটা অডিও আর একটা ভিডিও ফাইল ফলো করা হইছে। অডিও’টা এই লিংকে পাইবেন: http://103.156.52.70/ (১১৬ নাম্বার ভাষণে অডিও’টা আছে। কিন্তু একটু কনফিউজড হয়া যাইতে পারেন কারণ প্রথম ১১/১২ মিনিটে ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চের ভাষণ। এর পরে ভাষণটা শুরু হইছে।) এবং ভিডিও লিংকটা এইখানে পাইবেন: https://www.youtube.com/watch?v=n2l6eGSIfyM তবে দুইটা লিংকই ইনকমপ্লিট। কিছু কিছু অংশ বাদ দেয়া হইছে। এই অডিও এবং ভিডিও’তে যেই অংশটা পাওয়া যায় নাই, কিন্তু দৈনিক সংবাদের নিউজে ছিল, সেইটা ব্র্যাকেটে গ্রে কালারে রাখা হইছে।

ই. হা.

………………………..

২৬শে মার্চ, ১৯৭৫। সোহরার্দি মাঠ, ঢাকা।

আমার ভাই ও বোনেরা, আজ ২৬শে মার্চ। ২৫শে মার্চ রাত্রে পাকিস্তানের হানাদার বাহিনী বাংলার মানুষকে আক্রমণ করেছিল। হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ লোককে হত্যা করেছিল। সেদিন রাত্রে বিডিআর-এর ক্যাম্প, পুলিশ ক্যাম্প, আমার বাড়ি, বিশ্ববিদ্যালয়, চারিদিকে আক্রমণ চালায় ও নিরস্ত্র মানুষের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে পাশবিক শক্তি।

বাংলার মানুষকে আমি ডাক দিয়েছিলাম। ৭ই মার্চে আমি প্রস্তুত করে দিয়েছিলাম। যখন দেখলাম আক্রমণ শুরু হয়ে গেছে, সেই মুহূর্তে আবার আমি ডাক দিলাম, আর নয়, মোকাবিলা কর! যে বাঙালি যে যেখানে আছে, যার যা কিছু আছে শত্রুর মোকাবিলা কর। বাংলার মাটি থেকে শত্রুকে উৎখাত করতে হবে। বাংলাদেশের মানুষকে স্বাধীন করতে হবে। বাঙালিকে, সাড়ে সাত কোটি মানুষকে দাবায়ে রাখতে পারবে না।

দুনিয়ার মানুষের কাছে আমি সাহায্য চেয়েছিলাম। আমার সামরিক বাহিনী, যারা বাঙ্গালী ছিল, আমার বিডিআর, আমার পুলিশ, আমার ছাত্র, যুবক ও কৃষকদের আমি আহ্বান করেছিলাম। বাংলার মানুষ রক্ত দিয়ে মোকাবিলা করেছিল। ৩০ লক্ষ লোক শহীদ হল। লক্ষ লক্ষ মা-বোন ইজ্জত হারাল। শত শত বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করা হল। দুনিয়ার জঘণ্যতম ইতিহাস সৃষ্টি করল পাকিস্তানের শোষক শ্রেণী, যা কোনদিন দুনিয়ায় হয় নাই। দুনিয়ার ইতিহাসে এত রক্ত স্বাধীনতার জন্য কোন দেশ দেয় নাই, যা বাংলার মানুষ দিয়েছে।

শুধু তাই নয়, তারা এমনভাবে পঙ্কিলতা শুরু করল, যা কিছু ছিল ধ্বংস করতে আরম্ভ করল। আমার এক কোটি লোক ভারতবর্ষে আশ্রয় নিয়েছিল; তার জন্য আমরা অবশ্যই কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করব। আমি তাদের স্মরণ করি, খোদার কাছে মাগফেরাত কামনা করি যারা এই স্বাধীনতার জন্য জীবন দিয়েছে, আত্মাহুতি দিয়েছে। আমি তাদের কথা স্মরণ করব যে সকল মুক্তিবাহিনীর ছেলে, যে সব মা-বোনেরা, আমার কর্মী বাহিনী যারা আত্মাহুতি দিয়েছিল শহীদ হয়েছিল স্বাধীনতা সংগ্রামে। এইদিন তাদের সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করা উচিত। আজ আমি স্মরণ করি ভারতীয় সেনাবাহিনীর যারা জীবন দিয়েছিল বাংলার মাটিতে। তাদের কথাও আমরা স্মরণ করি।

কিন্তু একটা কথা। আপনাদের মনে আছে, তারা যাবার পূর্বে ১৩, ১৪, ১৫ তারিখে, ১৬ই ডিসেম্বরের আগে, কার্ফু দিয়ে ঢাকা এবং অন্য অন্য জায়গায় আমার বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছিল। উদ্দেশ্য ছিল এই যে, বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করব, সম্পদ ধ্বংস করব, বাঙ্গালী স্বাধীনতা পেলেও এই স্বাধীনতা রাখতে পারবে না।

ইনশাল্লাহ, বাংলার স্বাধীনতা রক্ষা হয়েছে। বাংলার লোক স্বাধীন হয়েছে। বাংলার পতাকা আইজ দুনিয়ায় উড়ে। বাংলাদেশ আজ জাতিসংঘের সদস্য। বাংলা জোট-নিরপেক্ষ গোষ্ঠীয় সদস্য, বাংলা কমনওয়েলথের সদস্য, বাংলা ইসলামিক সামিটের সদস্য। বাংলাদেশ দুনিয়ায় এসছে; বাংলাদেশ থাকবে! কেউ একে ধ্বংস করতে পারবে না।

[ এক নেতা, এক দেশ! বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ! ]

ভাইয়েরা, বোনেরা আমার, আমরা চেষ্টা করেছিলাম, একটা ওয়াদা আমি আপনাদের কাছে রাখতে পারি নাই। জীবনে যে ওয়াদা আমি করেছি জীবন দিয়ে হলেও সে ওয়াদা আমি পালন করেছি। আমরা সমস্ত দুনিয়ার রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্ব চাই। আমরা জোটনিরপেক্ষ নীতিতে বিশ্বাস করি। আমরা কো-এক্সিস্টেন্সে বিশ্বাস করি, আমরা বিশ্ব শান্তিতে বিশ্বাস করি। আমরা ভেবেছিলাম পাকিস্তান, তারাও দুঃখ পাবে, তারাও নিশ্চই দুঃখিত হবে, আমার সম্পদ ফেরত দেবে। আমি ওয়াদা করেছিলাম তাদের বিচার করব। একটা ওয়াদা আপনাদের পক্ষ থেকে খেলাপ করেছি, তাদের আমি বিচার করি নাই। তাদের আমি ছেড়ে দিয়েছি। এই জন্য যে এশিয়ায়, দুনিয়ায় আমি বন্ধুত্ব চেয়েছিলাম।

জনসভার পোস্টার

(দুঃখের বিষয়, পাকিস্তানীরা আমার সম্পদ এক পয়সাও দিল না, আমার বৈদেশিক মুদ্রার কোন অংশ আমাকে দিল না। আমার গোল্ড রিজার্ভের কোনও অংশ আমাকে দিল না। একখানা জাহাজও আমাকে দিল না। একখানা প্লেনও আমাকে দিল না। কেন্দ্রীয় সরকারে সম্পদ এক পয়সাও আমাকে দিল না এবং যাবার বেলায় পোর্ট ধ্বংস করলো, রাস্তা ধ্বংস করলো, রেলও ধ্বংস করলো, জাহাজ ডুবিয়ে দিল। শেষ পর্যন্ত কারেন্সী নোটও জ্বালিয়ে বাংলাদেশকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল। পাকিস্তানীরা মনে করেছিল যে, বাংলাদেশকে যদি অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করতে পারে তাহলে বাংলাদেশের মানুষকে আমরা দেখাতে পারবো যে, তোমরা কি করেছো।

ভুট্টো সাহেব বক্তৃতা করেন। আমি তাকে সম্বর্ধনা দিয়েছিলাম লাহোরে আমাকে সম্বর্ধনা দেয়া হয়েছিল বলে। ভুট্টো সাহেব বলেন, বাংলাদেশের অবস্থা কি? ভুট্টো সাহেবকে আমি জিজ্ঞেস করি, ফ্রন্টিয়ারের পাঠানদের অবস্থা কি? ভুট্টো সাহেবকে আমি জিজ্ঞাসা করি বেলুচিস্তানের মানুষের অবস্থা কি? এরোপ্লেন দিয়ে গুলী করে মানুষ হত্যা করছেন। সিন্ধুর মানুষের অবস্থা কি। ঘর সামলান বন্ধু, ঘর সামলান। নিজের কথা চিন্তা করুন, পরের জন্য চিন্তা করবেন না। পরের সম্পদ লুট করে খেয়ে বড় বড় কথা বলা যায়। আমার সম্পদ ফেরত না দেয়া পর্যন্ত তোমার সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব হতে পারে না। তোমরা আমার কি করেছ। আমি সবার বন্ধুত্ব কামনা করি। পাকিস্তানের জনগণের বিরুদ্ধে আমার কিছু বলার নাই। কিন্তু আমার সম্পদ তাকে দিতে হবে। আমি দুনিয়ার প্রত্যেক রাষ্ট্রের সাথে বন্ধুত্ব করতে চাই, কারো সঙ্গে দুশমনি করতে চাই না। সকলের সাথে বন্ধুত্ব করে আমরা শান্তি চাই। আমার মানুষ দুঃখী, আমার মানুষ না খেয়ে কষ্ট পায়। আমি যখন বাংলাদেশ সরকার পেলাম, যখন জেল থেকে বের হয়ে আসলাম, তখন আমি শুধু বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষই পেলাম। ব্যাংকে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা ছিল না। আমাদের গোল্ড রিজার্ভ ছিল না। শুধু কাগজ নিয়ে আমরা সাড়ে সাত কোটি লোকের সরকার শুরু করলাম। আমাদের গুদামে খাবার ছিল না। গত তিন-চার বছরে নাহলেও বিদেশ থেকে ২২ কোটি মণ খাবার বাংলাদেশে আনতে হয়েছে। বাইশ’শ কোটি টাকার মত বিদেশ থেকে হেল্প আমরা পেয়েছি। সেজন্য যারা আমাদের সাহায্য করেছেন সে সমস্ত বন্ধু রাষ্ট্রকে আমরা ধন্যবাদ জানাই। কিন্তু আর একটি কথা। অনেকে প্রশ্ন করেন আমরা কি করেছি? আমরা যখন ক্ষমতায় আসলাম, দেশের ভার নিলাম তখন দেশের রাস্তা-ঘাট যে অবস্থায় পেলাম তাকে রিপেয়ার করার চেষ্টা করলাম। সেনাবাহিনী নাই, প্রায় ধ্বংস করে গেছে; পুলিশ বাহিনীর রাজারবাগ জ্বালিয়ে দিয়েছিল। সেই খারাপ অবস্থা থেকে ভাল করতে কী করি নাই? আমরা জাতীয় সরকার গঠন করলাম। আমাদের এখানে জাতীয় সরকার ছিল না, আমাদের ডিফেন্স ডিপার্টমেণ্ট ছিল না, বৈদেশিক ডিপার্টমেণ্ট ছিল না, প্লানিং ডিপার্টমেণ্ট ছিল না। এখানে কিছুই ছিল না। তার মধ্যে আমাদের জাতীয় সরকার গঠন করতে হলো। যারা শুধু কথা বলেন তারা বুকে হাত দিয়ে চিন্তা করে বলুন আমরা কি করেছি। এক কোটি লোককে ঘরবাড়ী দিয়েছি। রাষ্ট্রের লোককে খাওয়ানোর জন্য বিদেশ থেকে খাবার আনতে হয়েছে। পোর্টগুলোকে অচল থেকে সচল করতে হয়েছে। দুনিয়ার বিভিন্ন যায়গা থেকে ২২ কোটি মণ খাবার এনে বাংলার গ্রামে গ্রামে দিয়ে বাংলার মানুষকে বাঁচাতে হয়েছে।

তাই আজ কথা আছে। আমি মানুষকে বললাম, আমার ভাইদের বললাম, মুক্তিবাহিনীর ছেলেদের বললাম তোমরা অস্ত্র জমা দাও। তারা অস্ত্র জমা দিল। কিন্তু একদল লোক আমার জানা আছে যাদের পাকিস্তান অস্ত্র দিয়ে গিয়েছিল তারা অস্ত্র জমা দেয়নি। তারা এসব অস্ত্র দিয়ে নিরপরাধ লোককে হত্যা করতে আরম্ভ করল। এমনকি পাঁচজন পার্লামেন্টের সদস্যকেও তারা হত্যা করল। তবুও আমি শাসনতন্ত্র দিয়ে নির্বাচন দিলাম। কিন্তু যদি বাংলার জনগণ নির্বাচনে আমাকেই ভোট দেয় সেজন্য দোষ আমার নয়। ৩১৫ জন সদস্যের মধ্যে ৩০৭ সিট বাংলার মানুষ আমাকে দিলেন। কিন্তু একদল লোক বলে, কেন জনগণ আমাকে ক্ষমতা দিল? কোন দিন কোন দেশে সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে কেউ কাউকে এভাবে অধিকার দেয় না। কিন্তু অধিকার ভোগ করতে হলে তার জন্য যে রেসপনসিবিলিটি আছে সেটা তারা ভুলে গেলেন। আমি বললাম তোমরা অপজিশন সৃষ্টি করো, সৃষ্টি করলো। বক্তৃতা করতে আরম্ভ করলো। অন্ধকারে মানুষ হত্যা করতে আরম্ভ করলো। দরকার হলে অস্ত্র দিয়ে আমাদের মোকাবিলা করতে চায়। অস্ত্রের হুমকি দেয়া হলো। মানুষ হত্যা থেকে আরম্ভ করে রেললাইন ধ্বংস করে, ফারটিলাইজার ফ্যাক্টরী ধ্বংস করে, জাহাজ ডুবিয়ে দিয়ে এমন সৃষ্টি করল যাতে বিদেশী এজেন্ট যারা দেশের মধ্যে আছে তারা সুযোগ পেয়ে গেল। আমাদের কর্তব্য মানুষকে বাঁচানো। চারিদিকে হাহাকার, স্বাধীনতা পাবার সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত দুনিয়ার সমস্ত জিনিসের দাম আস্তে আস্তে বেড়ে গেল। সমস্ত দুনিয়া থেকে আমাদের কিনতে হয়। খাবার কিনতে হয়, কাপড় কিনতে হয়, ওষুধ কিনতে হয়, তেল কিনতে হয়। আমরাতো কলোনী ছিলাম, দুইশ বছর ইংরেজদের কলোনী ছিলাম, পঁচিশ বছর পাকিস্তানের কলোনী ছিলাম। আমাদেরতো সবকিছুই বিদেশ থেকে কিনতে হয়। কিন্তু তার পরেও বাংলার জনগণ কষ্ট স্বীকার করে কাজ করতে আরম্ভ করেছেন। কিন্তু তারা এগুবার দেয় না, কাজ করতে দেয় না। আর একদল বিদেশে সুযোগ পেল, তারা বিদেশ থেকে অর্থ এনে বাংলার মাটিতে বিশৃংখলার সৃষ্টি করলো। স্বাধীনতাকে নস্যাৎ করার চেষ্টা করলো। আজ এই দিনে কেন বলছি একথা। অনেক বলেছি, এত বলার দরকার ছিল না। কিন্তু আমার চোখের সামনে মানুষের মুখ ভাসে, আমার দেশের মানুষের রক্ত আমার চোখের সামনে ভাসে। আমারই মানুষেরই আত্মা আমার চোখের সামনে। সে সমস্ত শহীদ ভাইরা ভাসে যারা ফুলের মত ঝরে গেল, শহীদ হলো। তাদের আত্মার কাছে রোজকিয়ামতে কি জবাব দিব ‘আমরা রক্ত দিয়ে দেশ স্বাধীন করলাম তোমরা স্বাধীনতা নস্যাৎ করেছো, তোমরা রক্ষা করতে পার নাই।’

কেন সিস্টেম পরিবর্তন করলাম? সিস্টেম পরিবর্তন করেছি দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাবার জন্য। সিস্টেম পরিবর্তন করেছি শৃংখলা ফিরিয়ে আনবার জন্য। কথা হলো এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে যে, অফিসে যেয়ে ব্যাঙ্ক থেকে টাকা নিয়ে যায়, সাইন করিয়ে নেয়, ফ্রি-ষ্টাইল। ফ্যাক্টরীতে যেয়ে কাজ না করে টাকা দাবী করে। সাইন করিয়ে নেয়। যেন দেশে সরকার নাই। শ্লোগান হল, বঙ্গবন্ধু কঠোর হও।

বঙ্গবন্ধু কঠোর হবে। কঠোর ছিল, কঠোর আছে। কিন্তু দেখলাম, চেষ্টা করলাম। এত রক্ত, এত ব্যথা দুঃখ, দেখি কি হয়, পারি কি না। আবদার করলাম, আবেদন করলাম, অনুরোধ করলাম, রিকোয়েস্ট করলাম, কামনা করলাম, কথা শুনে না। চোরা নাহি শুনে ধর্মের কাহিনী।

ভাইয়েরা, বোনেরা আমার, আজকে যে সিস্টেম করেছি তার আগেও ক্ষমতা বঙ্গবন্ধুর কম ছিল না। আমি বিশ্বাস করি না ক্ষমতা বন্দুকের নলে। আমি বিশ্বাস করি ক্ষমতা বাংলার জনগণের কাছে। জনগণ যেদিন বলবে ‘বঙ্গবন্ধু ছেড়ে দাও’, বঙ্গবন্ধু একদিনও রাষ্ট্রপতি, একদিনও প্রধানমন্ত্রী থাকবে না। বঙ্গবন্ধু ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করে নাই। বঙ্গবন্ধু রাজনীতি করেছে দুঃখী মানুষকে ভালবেসে। বঙ্গবন্ধু রাজনীতি করেছে শোষণহীন সমাজ কায়েম করার জন্য।

দুঃখের বিষয়, তারা রাতের অন্ধকারে পাঁচজন পার্লামেন্টের সদস্যকে হত্যা করেছে, তিন চার হাজারের মতো কর্মীকে হত্যা করেছে। আরেকদল দুর্নীতিবাজ টাকা, টাকা, পয়সা, পয়সা করে পাগল হয়ে গেছে। তবে যেখানে খালি দুর্নীতি ছিল গত দুই মাসের মধ্যে সেখানে, ইনশা আল্লাহ, কিছুটা অবস্থা ইম্প্রুভ করেছে। দুর্নীতি বন্ধ করার জন্য আজকে কিছু করা হয়েছে। হ্যাঁ, প্রেসিডেন্সিয়াল ফরম অব গভর্ণমেন্ট করেছি। জনগণ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করবেন। পার্লামেন্ট থাকবে। পার্লামেন্টের নির্বাচনে একজন, দুইজন, তিনজনকে নমিনেশন দেয়া হবে। জনগণ বাছবে কে ভাল, কে মন্দ। আমরা চাই শোষিতের গণতন্ত্র, আমরা চাই না শোষকের গণতন্ত্র, এটা পরিষ্কার।

আমি প্রোগ্রাম দিয়েছি। আজকে আমাদের সামনে কাজ কি? আজকে আমাদের সামনে অনেক কাজ। আমি সকলকে অনুরোধ করব। আপনারা মনে কিছু করবেন না আমার কিছু উচিত কথা কইতে হবে। কারণ আমি কোনদিন ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করি নাই। সত্য কথা বলার অভ্যাস আমার আছে। মিথ্যা বলার অভ্যাস আমার নাই। কিন্তু কিছুটা অপ্রিয় কথা বলব। বন্যা হল। মানুষ না খেয়ে কষ্ট পেল, হাজার হাজার লোক না খেয়ে মরে গেল। দুনিয়া থেকে ভিক্ষা করে আনলাম। ৫,৭০০ (পাঁচ হাজার সাতশ’) লঙ্গরখানা খুললাম মানুষকে বাঁচাবার জন্য। সাহায্য নিয়েছি মানুষকে বাঁচাবার জন্য। আমি চেয়েছিলাম স্বাধীনতা। কি স্বাধীনতা? আপনাদের মনে আছে, আমার কথার মধ্যে দুইটা কথা ছিল। রাজনৈতিক স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়ে যায় যদি অর্থনৈতিক স্বাধীনতা না আসে। যদি দুঃখী মানুষ পেট ভরে ভাত খেতে না পারে, কাপড় পরতে না পারে, বেকার সমস্যা দূর না হয়, তা হলে মানুষের জীবনে শান্তি ফিরে আসতে পারে না।)

আজ কে দুর্নীতিবাজ? যে ফাঁকি দেয় সে দুর্নীতিবাজ। যে ঘুষ খায় সে দুর্নীতিবাজ। যে স্মাগলিং করে সে দুর্নীতিবাজ। যে ব্ল্যাক মার্কেটিং করে সে দুর্নীতিবাজ। যে হোর্ড করে সে দুর্নীতিবাজ। যারা কর্তব্য পালন করে না তারা দুর্নীতিবাজ। যারা বিবেকের বিরুদ্ধে কাজ করে তারাও দুর্নীতিবাজ। যারা বিদেশের কাছে দেশকে বিক্রি করে তারাও দুর্নীতিবাজ। এই দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম শুরু করতে হবে।

আমি কেন ডাক দিয়েছি? এই যে ঘুণে ধরা, ইংরেজ আমলের, পাকিস্তানি আমলের যে শাসন ব্যবস্থা, তা চলতে পারে না। একে নুতন করে সেজে ঢেকে গড়তে হবে। তাহলে দেশের মঙ্গল আসতে পারে, না হলে আসতে পারে না। আমি তিন বচ্ছর দেখেছি। দেখে শুনে আমি আমার স্থির বিশ্বাসে পৌঁছেছি। এবং সেখানে, জনগণকে পৌঁছিয়ে দিতে হবে শাসনতন্ত্রের মর্মকথা।

আজকে জানি, আপনাদের কষ্ট হচ্ছে। আমি জানি, না খেয়ে কষ্ট পাচ্ছেন। আমার চেয়ে কে জানতে পারে? বাংলার কোন থানায় আমি ঘুরি নাই, বাংলার কোন যায়গায় আমি যাই নাই, বাংলার মানুষকে আমার মত কে ভালো করে জানে?

[ বঙ্গবন্ধু যেখানে/আমরা আছি সেখানে ]

আপনারা দুঃখ পান, না খেয়ে কষ্ট পাচ্ছেন, আপনাদের গায়ে কাপড় নাই, আপনাদের শিক্ষা দিতে পারছি না। কিন্তু সবচেয়ে বড় জিনিস, খাদ্য।

একটা কথা বলি আপনাদের কাছে – এই দুর্নীতিবাজদের, কোনদিন সরকারি আইন করে দুর্নীতিবাজদের দমন করা সম্ভব নয়, জনগণের সমর্থন ছাড়া। আজকে আমার একমাত্র অনুরোধ আপনাদের কাছে, সেটা হলো এই: আমি বলেছিলাম ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল! জেহাদ করতে হবে, যুদ্ধ করতে হবে শত্রুর বিরুদ্ধে। আজকে আমি বলব, বাংলার জনগণকে এক নম্বর কাজ হবে দুর্নীতিবাজদের বাংলার মাটি থেকে উৎখাত করতে হবে। আমি আপনাদের সাহায্য চাই।

কেমন করে করতে হবে? আইন চালাবো। ক্ষমা করবো না। যাকে পাব ছাড়ব না। একটা কথা আপনাদের করতে হবে। এমন গণআন্দোলন করতে হবে। আমি গ্রামে গ্রামে নামবো। এমন আন্দোলন করতে হবে, যে ঘুষখোর, যে দুর্নীতিবাজ, যে মুনাফাখোর, যে আমার জিনিস বিদেশে চালান দেয়, তারে সামাজিক বয়কট করতে হবে। একথা মনে রাখতে হবে।

গ্রামে গ্রামে মিটিং করে দেখাতে হবে, কোথায় অই চোর, অই ব্ল্যাকমার্কেটিয়ার, অই ঘুষখোর। ভয় নাই! কোন ভয় নাই! আমি আছি। ইনশাল্লা, আপনাদের উপর অত্যাচার করতে দিব না। কিন্তু আপনাদের গ্রামে গ্রামে আন্দোলন করতে হবে। আন্দোলন করতে পারে কে ছাত্র ভাইরা পারে, পারে কে যুবক ভাইরা পারে, পারে কে বুদ্ধিজীবী পারে, পারে কে জনগণ পারে!

(আপনারা সংঘবদ্ধ হন।) ঘরে ঘরে আপনাদের দুর্গ গড়তে হবে। সে দুর্গ গড়তে হবে এইজন্য যে, দুর্নীতিবাজদের খতম কর, বাংলার দুঃখী মানুষের দুঃখ মোচন কর। এই দুর্নীতিবাজদের যদি খতম করতে পারি, শতকরা ২৫ থেকে ৩০ ভাগ দুঃখ বাংলার মানুষের চলে যাবে। এত চোরের চোর! এই চোর যে কোথা থেকে পয়দা হয়েছে জানি না। পাকিস্তান সব নিয়ে গিয়েছে। এই চোরটুক থুয়ে গেছে। এই চোর নিয়ে গেলে আমি বাঁচতাম। কিছু দালাল গেছে, কিছু চোর গেলে বাঁচতাম।

(দ্বিতীয় কথা) আপনারা জানেন, আমার দেশের এক একর জমিতে যে ফসল হয় জাপানের এক একর জমিতে ফসল হয় তার তিনগুন বেশি, তিনগুণ বেশি ফসল হয়। কিন্তু আমার জমি, দুনিয়ার সেরা জমি। আমি কেন সেই জমিতে ডাবল ফসল করতে পারব না? দ্বিগুণ করতে পারব না? আমি যদি দ্বিগুণ করতে পারি তাহলে আমাকে খাদ্য কিনতে হবে না, ভিক্ষা করতে হবে না।

ভাইয়েরা আমার, বোনেরা আমার,ভিক্ষুক জাতে ইজ্জত নাই। আপনারা যখন একটা লোককে ভিক্ষা দেন, এক টাকা কি আট আনা। তারপর তার দিকে কিভাবে চান, বলেন “ও বেটা ভিক্ষুক, যা বেটা, নিয়া যা আট আনা পয়সা।” একটা জাতি যখন ভিক্ষুক হয়, মানুষের কাছে হাত পাতে, আমারে খাবার দেও, আমারে টাকা দেও, সেই জাতের ইজ্জত থাকতে পারে না। আমি সেই ভিক্ষুকের জাতির নেতা থাকতে চাই না।

আমি চাই বাংলাদেশের প্রত্যেকটা কৃষক ভাইদের কাছে যারা সত্যিকার কাজ করে, যারা প্যানট পরা, কাপড় পরা ভদ্রলোক তাদেরও চাই – জমিতে যেতে হবে, ডাবল ফসল করতে হবে। প্রতিজ্ঞা করবো আজকে থেকে, অই শহীদদের কথা স্মরণ করে ডাবল ফসল করতে হবে। যদি ডাবল ফসল করতে পারি, আমাদের অভাব ইনশাআল্লা, হবে না। ভিক্ষুকের মত হাত পাততে হবে না।

আমি পাগল হয়ে যাই। এই বচ্ছর, এই বচ্ছর, ’৭৫ সালে আমারে ছয় কোটি মণ খাবার আনতে হবে। ছয় কোটি মণ! কি করে মানুষকে বাঁচাবো? কি করে অন্য জিনিস কিনবো? অন্যান্য বন্ধুরাষ্ট্র সাহায্য দিচ্ছে বলে বেঁচে যাচ্ছি। কিন্তু এভাবে চলতে পারে না। আমাদের স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে পায়ের উপর দাড়াতে হবে জাতি হিসেবে।

ভাইয়েরা আমার, একটা কথা ভুলে গেলে চলবে না, যে, আমাদের প্রত্যেক বচ্ছর ৩০ লক্ষ লোক বাড়ে। আমার জাগা হল ৫৫ হাজার স্কয়ার মাইল। যদি বছর ৩০ লক্ষ প্রত্যেক বচ্ছর বাড়ে, তাহলে ২৫-৩০ বছরে বাংলায় কোনও জমি থাকবে না হালচাষ করার জন্য। বাংলার মানুষ বাংলার মানুষের মাংস খাবে। সেই জন্য আজকে আমাদের পপুলেশন কন্ট্রোল, ফ্যামিলি প্লানিং করতে হবে। এইটা হল দুই নাম্বার প্ল্যান… তিন নম্বর প্ল্যান। এক নম্বর হল আমার – দুর্নীতিবাজ খতম করা, দুই নম্বর হল আমার – কলকারখানায়, ক্ষেতে খামারে আমার প্রোডাকশন বাড়ানো, তিন নম্বর হল আমার – পপুলেশন প্লানিং, চার নম্বর হলো আমার – জাতীয় ঐক্য। জাতীয় ঐক্য গড়ার জন্যই একদল করা হয়েছে। যারা বাংলাকে ভালোবাসে, আদর্শে বিশ্বাস করে, ফোর প্রিন্সিপাল মানে, সৎপথে চলে, তারা সকলেই এই দলের সদস্য হতে পারবেন। বিদেশি এজেন্ট, বহিঃশত্রু যারা করে, কাছ থেকে যারা পয়সা নেয়, যারা বহিঃশত্রুর এজেন্ট, যারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চায়, যার চোর, তারা…। আমরা শতকরা ২০ জন শিক্ষিত লোক। সরকারী কর্মচারীরাও এই দলের সদস্য হতে পারবে। কারণ তারাও এই জাতির একটা অংশ। তাদেরও অধিকার থাকবে এই দলের সদস্য হওয়ার। এই জন্য, সকলে যা যেখানে আছি একতাবদ্ধ হয়ে দেশের কাজে লাগতে হবে।

ভাইয়েরা, বোনেরা, আমার, কিন্তু এই দলের ৫টা আপাতত ব্রাঞ্চ হবে। একটা হবে শ্রমিক ভাইদের জন্য, একটা হবে অংগদল কৃষক ভাইদের জন্য, একটা হবে যুবক ভাইদের জন্য, একটা হবে ছাত্রদের জন্য, একটা হবে মহিলাদের জন্য। এই ৫টি অংগদলের দল হবে কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ। আমারে অনেকে বলে যে, কৃষক, শ্রমিক করলেন, আওয়ামী লীগ করলেন, অন্য লোকদের বলবেন না! আমি বলি কৃষক শতকরা আশি জন, শ্রমিক ভাইরা, তারা থাকবে। আওয়ামী মানেই জনগণ। ছাত্র, যুবক, বুদ্ধিজীবী সকলে মিলে। সরকারি কর্মচারি তারাও হইলো আওয়ামী, তারা সকলে মিলে কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ।

কিন্তু একটা কথা আজকে আমাকে বলতে হয়, আমি শিক্ষিত সমাজকে কথাটা ভাবতে অনুরোধ করব, আমরা কতজন শতকরা শিক্ষিত লোক? আমরা শতকরা ২০ জন। তার মধ্যে শতকরা পাঁচজন লোক আমরা বলতে পারি, আমরা শিক্ষিত। আজকে একটা কথা, প্রশ্ন আমার, এই যে দুর্নীতির কথা বললাম, আমার কৃষক দুর্নীতিবাজ? না। আমার শ্রমিক? না। তা হইলে কে? ঘুষ খায় কারা? স্লামগিং করে কারা? বিদেশী এজেন্ট হয় কারা? বিদেশে টাকা চালান দেয় কারা? হোর্ড করে কারা? এই আমরা, যারা শতকরা ৫ জন শিক্ষিত লোক। এই আমাদের মধ্যেই ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজ। এবং আমাদের চরিত্রের সংশোধন করতে হবে, আত্ম-সমালোচনা করতে হবে।

এই দুর্নীতিবাজ এই শতকরা ৫ জনের মধ্যে, এর বাইরে নাই। কেন নাই? আমার কৃষক দিন ভরে পরিশ্রম করে। আর শিক্ষিত সমাজকে একটা কথা বলব, যে, আপনাদের চরিত্রের আমাদের চরিত্রের পরিবর্তন হয় নাই। একজন কৃষক যখন আসে, খালি গায়, লুঙ্গি পরিয়া, আমরা বলব, “এই বেটা কোত্থকে আইছিসস, বাইরে বয়, বাইরে বয়। একজন শ্রমিক যদি আসে, অইখানে দাঁড়া। এই রিকশাওয়ালা, অইভাবে চলিস না! এই পায়ে নোংরা করিসা না!” তাচ্ছিল্যের সঙ্গে কথা বলে। তুচ্ছ করে। পরিবর্তন করতে হবে!

আপনি চাকরি করেন, আপনার মাইনা দেয় অই গরিব কৃষক। আপনার মাইনা দেয় অই গরিব শ্রমিক। আপনার সংসার চলে অই টাকায়। আমি গাড়ি চড়ি অই টাকায়। আমরা বাড়িতে থাকি অদের টাকায়। ওদের সম্মান করে কথা বলেন, ইজ্জত করে কথা বলেন। ওরাই মালিক। ওদের দিয়াই আপনার সংসার চলে। “অই বেটা কই থিকা আসলি…” । সরকারী কর্মচারীদের বলি, মনে রেখ এ স্বাধীন দেশ। এ বৃটিশের কলোনি নয়। পাকিস্তানি কলোনি নয়। যে লোককে দেখবা তার চেহারাটা তোমার বাবার মত, তোমার ভায়ের মত, ওর পরিশ্রমের পয়সা, ওরাই হবে, সম্মান বেশী পাবে। কারণ ওরা নিজে কামাই করে খায়। আর তোমরা কাজ কইরা। একটা কথা আমি জিজ্ঞাসা করি আপনাদের কাছে, মনে করবেন না কিছু, আমাদের কাছে জিজ্ঞাসা করি, আপনাদের বলবো কেন, আমি তো আপনাদের একজন। আমাদের লেখাপড়া শিখাইছে কেডা? আমার বাপ-মা, আমরা বলি বাপ-মা। লেখাপড়া শিখাইছে কে? ডাক্তারি পাস করায় কে? আর ইনজিনিয়ারিং পাস করায় কে? আর সায়েন্স পাস করায় কে? আর বৈজ্ঞানিক করে কে? অফিসার করে কে? কার টাকায়?
বাংলার দুঃখী জনগণের টাকায়।

আপনাদের কাছে আমার জিজ্ঞাসা, শিক্ষিত ভাইরা, যে আপনার লেখা পড়ার খরচ দিয়েছে, শুধু আপনার সংসার দেখার জন্য নয়। আপনার ছেলেমেয়ে দেখার জন্য নয়। দিয়েছে, তাদের জন্য আপনি কাজ করবেন, তাদের সেবা করবেন। তাদের আপনি কি দিয়েছেন? কি ফেরত দিচ্ছেন? কতটুকু দিচ্ছেন? তার টাকায় ইনজিনিয়ার সাব, তার টাকায় ডাক্তার সাব, তার টাকায় অফিসার সাব, তার টাকায় রাজনীতিবিদ সাব, তার টাকায় মেম্বার সাব, তার টাকায় সব সাব। আপনি দিচ্ছেন কি? কি ফেরত দিচ্ছেন? আত্মসমালোচনা করেন!

(বক্তৃতা করে লাভ নাই। রাতের অন্ধকারে খবরের কাগজের কাগজ ব্ল্যাকমার্কেটিং করে সকাল বেলা বড় বড় করা লেখার দাম নাই। হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে মদ খেয়ে অনেষ্টির কথা বলার দাম নাই। আত্মসমালোচনা করুন, আত্মশুদ্ধি করুন তা হলেই হবেন মানুষ।) এ যে কি হয়েছে সমাজের। সমাজ যেন ঘুণে ধরে গেছে। এই সমাজকে আমি চরম আঘাত করতে চাই। এই আঘাত করতে চাই যে আঘাত করেছিলাম পাকিস্তানিদের। সে আঘাত করতে চাই এই ঘুণে ধরা সমাজব্যবস্থাকে। (আমি আপনাদের সমর্থন চাই। আমি জানি আপনাদের সমর্থন আছে। কিন্তু একটা কথা, এই যে নতুন সিস্টেমে যাচ্ছি আমি, গ্রামে গ্রামে বহুমুখী কো-অপারেটিভ করা হবে।

ভুল কইরেন না! ভয় কইরেন না! আমি আপনাদের জমি নিবো না। ভয় পাইয়েন না যে জমি নিয়ে যাব – তা নয়। পাঁচ বচ্ছরের প্ল্যান-এ বাংলাদেশের ৬৫ হাজার গ্রামে একটা কইরে কো-অপারেটিভ হবে, প্রত্যেকটা গ্রামে গ্রামে। এই কো-অপারেটিভ–এ জমির মালিকের জমি থাকবে। কিন্তু তার অংশ যে বেকার প্রত্যেকটা মানুষ, যে মানুষ কাজ করতে পারে তাকে সেই কো-অপারেটিভের সদস্য হতে হবে। এবং বহুমুখী কো-অপারেটিভ হবে। আল্টিমেটলি পয়ষট্টি হাজার ভিলেজে একটা করে কো-অপারেটিভ করা হবে, আগামী পাঁচ বছরে, প্ল্যান নেওয়া হয়েছে। তাদের কাছে পয়সা যাবে, তাদের কাছে ফার্টিলাইজার যাবে, তাদের কাছে টেস্ট রিলিফ যাবে, তাদের কাছে ওয়ার্ক প্রোগ্রাম যাবে। আস্তে আস্তে ইউনিয়ন কাউন্সিল, অই টাউটদের দল বিদায় দেয়া হবে। তা না হইলে দেশকে বাঁচানো যাবে না।

এইজন্যই ভিলেজে কো-অপারেটিভ হবে। আমি ঘোষণা করছি আজকে যে, পাঁচ-বছরের প্লানে প্রত্যেকটি গ্রামে হাজার ফ্যামিলি থেকে, পাঁচশ থেকে হাজার ফ্যামিলি পর্যন্ত কম্পালসারি কো-অপারেটিভ। আপনার জমির ফসল আপনি নেবেন, অংশ যাবে কো-অপারেটিভে, অংশ যাবে গভর্নণমেণ্টের হাতে।

দ্বিতীয় ধাপ, থানায়, থানায় একটা করে কাউন্সিল হবে। এই কাউন্সিলে রাজনৈতিক কর্মী, সরকারি কর্মচারি যেই হয়, একজন তার চেয়ারম্যান হবে। এই থানা কাউন্সিলে থাকবে অই ডিপার্টমেন্টের স্ব স্ব সরকারি কর্মচারি। আর তার মধ্যে আমাদের কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি থাকবে, যুবক প্রতিনিধি থাকবে, কৃষক প্রতিনিধি থাকবে, তারা থানাকে চালাবে।

আর জেলা থাকবে না, সমস্ত মহকুমা জেলা হয়ে যাবে। প্রত্যেকটা মহকুমাকে জেলা করবো। সেই মহকুমায় একটা করে এ্যাডমিনিষ্ট্রেটিভ কাউন্সিল হবে। তার একজন চেয়ারম্যান থাকবে। সব কর্মচারি এক সঙ্গে তার মধ্যে থাকবে। এর মধ্যে পিপলস রিপ্রেজেনটেশন থাকবে, পার্টি রিপ্রেজেনটেটিভ থাকবে। সেখানে তারা সরকার চালাবেন – এইভাবে আমি একটা সিস্টেম চিন্তা করেছি। এবং করবো বলে ইনশা-আল্লাহ আমি ঠিক করেছি। আমি আপনাদের সাহায্য, সহানুভূতি চাই।

(ভাই ও বোনেরা আমার, আজকে একটা কথা বলি। আমি জানি শ্রমিক ভাইয়েরা, আপনাদের কষ্ট আছে। এত কষ্ট, আমি জানি। তা আমি ভুলতে পারছি না। বিশেষ করে ফিকসড ইনকাম গ্রুপের কষ্টের সীমা নাই। কিন্তু কোথায় থেকে হবে? টাকা ছাপিয়ে বাড়িয়ে দিলেই তো দেশের মুক্তি হবে না। ইনফ্লেশন হবে। প্রোডাকশন বাড়াতে পারলে তার পরেই আপনাদের উন্নতি হবে, না হলে উন্নতি হবে না। আমি জানি। যেমন আমরা আজকে দেখেছি। কপাল। আমাদের কপাল। আমরা গরীব দেশতো। আমাদের কপাল-)

আমার পাটের দাম নাই। আমার চায়ের দাম নাই। আমরা বেচতে গেলে অল্প পয়সায় বিক্রি করতে হয়। আর আমি যখন কিনে আনি – যারা বড় বড় দেশ, তারা তাদের জিনিসের দাম অনেক বাড়ায়া দেয়া হইছে। আমরা বাঁচতে পারি না। আমরা এই জন্য বলি তোমরা মেহেরবানি করে যুদ্ধ মনোভাবটা বন্ধ করো। (আর মামেণ্ট রেস বন্ধ করো। তোমরা অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধ করো।) করে অই সম্পদ দুনিয়ার দুঃখী মানুষকে বাঁচাবার জন্য ব্যয় করো। (তাহলে দুনিয়ায় শান্তি ফিরে আসবে। আজকে তোমরা মনে করেছো আমরা গরীব-
হে মোর দুর্ভাগা দেশ যাদের
করেছো অপমান,
অপমানে হতে হবে তাদের
সবার সমান।
তোমরা মনে করেছ আমরা গরিব, যে দামই হোক আমাকে বিক্রি করতে হয়।) এইদিন থাকবে না। আমরা বাংলাদেশের মানুষ, আমাদের মাটি আছে, আমার সোনার বাংলা আছে, আমার পাট আছে, আমার গ্যাস আছে, আমার চা আছে, আমার ফরেস্ট আছে, আমার মাছ আছে, আমার লাইভস্টক আছে।

যদি ডেভলাপ করতে পারি ইনশাল্লাহ, এইদিন আমাদের থাকবে না। (তোমরা আজকে সুযোগ পেয়ে জাহাজের ভাড়া বাড়িয়ে দাও। জিনিসের দাম বাড়িয়ে দাও। আর তাই আমাদের কিনতে হয়। আমরা এখানে না খেয়ে মরি, আমাদের ইনফ্লেশন হয়, আমরা বাঁচতে পারি না। ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে যাই, তোমরা কিছু খয়রাত দিয়ে একটু মিষ্টি হাসো। হাসো, হাসো, হাসো। দুঃখে পড়েছি, বিক্রীত হয়েছি। তোমাদের কাছে হাত পাততে হবে, হাসো। অনেক হেসেছে- যুগ যুগ ধরে হেসেছে। হাসো। আরব ভাইয়েরাও গরীব ছিল।) আজ আরব ভাইদের সঙ্গে আমরা একাত্মতা বোধ। আজ প্যালেস্টাইনের আরব ভাইদের ন্যায্য দাবী সমর্থন করে বাংলার মানুষ। আরব ভাইদের পিছনে তারা থাকবে প্যালেস্টাইন উদ্ধার করার জন্য। এও আমাদের পলিসি। যেখানে নির্যাতিত দুঃখী মানুষ, সেখানে আমরা থাকব।

শ্রমিক ভাইয়েরা, আমি জানি, আমি শ্রমিক প্রতিষ্ঠান করেছি। আপনাদের প্রতিনিধি ইনডাস্ট্রি ডিপার্টমেন্ট, লেবার ডিপার্টমেন্টে শ্রমিক প্রতিনিধিরা বসে একটা প্লান করতে হবে। সেই প্লান অনুযায়ী কি করে আমরা বাঁচতে পারি, তার বন্দোবস্ত করতে হবে।

ছাত্র ভাইরা, লেখাপড়া আপনারা শেখেন। আমি খুশী হয়েছি যে, আপনারা নকল-টকল বন্ধ করেছেন একটু। কিন্তু একটা কথা আমি বলব, আমি পেপারে দেখেছি যে, আবার খবরও পাই, এক পার্সেন্ট পাস, দুই পার্সেন্ট পাস, তিন পার্সেন্ট পাস। শিক্ষক সম্প্রদায়ের কাছে আমার একটা আকুল আবেদন, ফেল করাবেন, নকল বন্ধ করতেছি। ঠিক। আপনাদের একটা কর্তব্য আছে। অইরকম তো বলতে পারেন দুই পার্সেন্ট পাস করালাম, আপনাদের কর্তব্য আছে, যে ছেলেদের মানুষ করতে হবে। ফেল করানোতে আপনাদের তেমন বাহাদুরি নাই, পাস করালেই বাহাদুরি আছে। (আপনাদের কর্তব্য পালন করুন। খালি ফেল করিয়ে বাহাদুরি নিবেন তা হয় না। তাদের মানুষ করুন। আমি তো শিক্ষকদের বেতন দিব। আমরা সব আদায় করবো। আপনারা লেখাপড়া শিখান, আপনারা তাদের মানুষ করুন। শৃংখলা ফিরিয়ে আনুন, রাজনীতি একটু কম করুন। তাদের একটু মানুষ করার চেষ্টা করুন। একটু সংখ্যা বাড়ান শুধু ১, ২, ৫ দিয়ে বাহাদুরি দেখিয়ে বলবেন খুব ষ্ট্রিকট হয়েছি। আমি ষ্ট্রিকট চাই, নকল করতে দিবেন না। তবে আপনাদের কাছে আবেদন, মেহেরবানি করে আপনাদের কর্তব্য পালন করুন। ছেলেদের মানুষ করার চেষ্টা করুন। পাসের সংখ্যা বাড়াবার চেষ্টা করুন। ওদের মানুষ তৈরি করুন। সেটাই ভালো হবে।)

রাগ কইরেন না, রাগ কইরেন না। আপনারা আবার আমার উপর রাগ করেন। আমি নাকি বুদ্ধিজীবীদের বলি, না, না, আমি বুদ্ধিজীবীদের কিছু বলি না, তাদের শুধু আমি সম্মান করি। শুধু এইটুক বলি যে বুদ্ধিটা জনগনের খেদমতে আপনারা ব্যায় করেন, সেই বুদ্ধিটা চাই। এর বেশি আমি বলবো না। বাবা, বলে কি মারা যাব! আবার কোনসময় বই লিখে বসে। আপনাদের শ্রদ্ধা করি, কিন্তু চাই ন্যায্য কাজটা করেন। খালি সমালোচনা করে লাভ হবে না, কতটুকু কাজ করলেন।

আমার যুবক ভাইরা, আমি যে কো-অপারেটিভ করতে যাচ্ছি গ্রামে গ্রামে, এর উপর বাংলার মানুষের বাঁচা নির্ভর করবে। আপনাদের ফুলপ্যান্টটাকে একটু হাফপ্যান্ট করতে হবে। একটু পাজামা ছাইড়া একটু লুঙ্গি পরতে হবে। আর গ্রামে গ্রামে যেয়ে এই কো-অপারেটিভকে সাকসেসফুল করার জন্য কাজ করতে হবে। যুবকও চাই, ছাত্র চাই, সকলকে চাই।

 

আর একটি কথা বলতে চাই। বিচার! বিচার!

বাংলাদেশের বিচার। ইংরেজ আমলের বিচার। আল্লার মর্জি যদি সিভিল কোর্টে কেস পড়ে, সেই মামলা শেষ হতে লাগে ২০ বছর। আমি যদি উকিল হই আমার জামাইকে উকিল বানায়া কেসটা দিয়া যাই। অই মামলার ফয়সালা হয় না। আর যদি ক্রিমিনাল কেস হয়, চার বচ্ছর তিন বচ্ছর আগে শেষ হয় না। এই বিচার বিভাগকে নতুন করে এমন করতে হবে যে থানায় ট্রাইব্যুনাল করার চেষ্টা করছি আমরা এবং সেখানে মানুষ এক বছর দেড় বছরের মধ্যে বিচার পায়, তার বন্দোবস্ত করছি । আশা করি সেইটা হবে।

ভাইরা আমার, আমি আপনাদের কাছ থেকে জানতে চাই একটা কথা। এই আমি যে চাইরটা প্রোগ্রাম দিলাম, এই যে আমি কো-অপারেটিভ করব, থানা কাউন্সিল করব, সাব-ডিভিশনাল কাউন্সিল করব, আর আমি যে আপনাদের কাছ থেকে ডাবল ফল চেয়েছি, জমিতে যে ফসল হয় তার ডবল, কলে-কারখানায় কাজ (- সরকারী কর্মচারী ভাইয়েরা একটু ডিসিপ্লিন এসে গেছে। অফিসে যান, কাজ করেন। আপনাদের কষ্ট আছে, আমি জানি। দুঃখী মানুষ আপনারা। আপনারা কাজ করেন। তাদের পেটে খাবার নাই। তাদের উপর ট্যাকস বসিয়ে আমি আপনাদের পুষতে পারব না। প্রোডাকশন বাড়লে আপনাদেরও এদের সঙ্গে উন্নতি হবে।) এই যে কথাগুলি আমি বললাম আপনারা আমাকে সমর্থন করেন কিনা, আমার উপর আপনাদের আস্থা আছে কিনা, আমাকে দুই হাত তুইলা আপনারা দেখায়া দেন।

ইনশায়াল্লাহ আবার দেখা হবে। আপনারা বহু দূর থেকে কষ্ট করে আসছেন। গ্রামে গ্রামে যান। যেয়ে বলবেন, দুর্নীতিবাজদের খতম করতে হবে। ক্ষেতে খামারে কলে-কারখানায় প্রোডাকশন বাড়াতে হবে। সরকারি কর্মচারি ভাইরা, আপনারাও কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগের সদস্য হবেন। আপনারা প্রাণ দিয়ে কাজ করেন। ইনশাল্লাহ বাংলাদেশ এসেছে, বাংলাদেশ থাকবে।

জয় বাংলা। জয় বাংলা।

………………….

The following two tabs change content below.

বাছবিচার

এডিটর, বাছবিচার।

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →