মারজুক রাসেলের কবিতা
………………………
।। চাঁদের বুড়ির বয়স যখন ষোলো ।। অরণ্যভ্রমণ ।। মারজুক শা’র মাজার ।। হ্যান্ডিক্র্যাফট ।। মুরুব্বিরা ইন-লক পছন্দ করেন না ।। চিতাইপিঠা ।। মেয়েদের জিনিস ।। অল্টারনেটিভ ।। সেমি-ডাবল-লাইফ ।। বালিশ নিক্ষেপ ।। খরগোশ, সহনশীল উচ্চতা থেকে ।। ভাগ্যবান নামের একজন স্লিপ-ওয়াকার আমারে বলেছিল এইগুলো লিখে রাখতে ।। বৈবাহিক অবস্থা: □ অবিবাহিত □√ বিবাহিত ।।
………………………..
চাঁদের বুড়ির বয়স যখন ষোলো
আমি ইশকুলকে নাইনে পড়াই। লাইন (প্রেম!) করার চেষ্টা বলে ‘চালিয়ে যাও’… চালাতে গিয়ে বন্ধুকে দাঁড় করিয়ে তার সাইকেল, সাইকেল-আরোহণ, লক্ষ্য রিকশা, রিকশার মেয়েটা, মেয়েটার ইশকুল, ইশকুলের গেট থেকে দারোয়ানের তেল-চকচকে লাঠি আর রাগী চোখ দেখে ফিরে আসা। লুকিয়ে ধুমপান। পয়সা অনুকূল টাকায় উত্তীর্ণ হলে সিনেমা-হল, ফারুক-ববিতা। সেলুন দেখলেই ঢুকে পড়া, চুলসহ নিজেকে আঁচড়ে নেয়া। ‘প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য’ নোটিশের পুস্তিকা দেরত দিতে যাওয়া সন্ধ্যা, সন্ধ্যামালতী। টেক্কা-সাহেব-বিবি-গোলামের ব্যবহার শেখানো বয়োজ্যেষ্ঠদের পেছনে লেগে-থাকা রাত্রি, টুয়েন্টি নাইন, কলব্রিজ, ব্রিজ… । বাকি চাইবার আগে দোকানের বেড়ায় টাঙ্গানো ‘বাকী দেয়া বড় কষ্ট, বাকিতে বন্ধুত্ব নষ্ট’- লেখাটাকে মনেমনে আবজর্না-পর্যায়ে ছুঁড়ে ফেলা। বাবার পকেট, পকেট থেকে দুচারখানা ছোট নোট সরানো, ধরা পড়ে যাওয়া, আমার উপস্থিতিতে মাকে শুনিয়ে বাবার (বড় হলে চোর হবে) ভবিষ্যদ্বাণী । … কোন বাড়ির একতলা-দোতলা-তেতলা-চারতলা-পাঁচতলার বারান্দায় দিকটায় শুকোতে দেয়া যাবতীয় নারীপোশাকে দৃষ্টি আটকানো আমার ১৭, আমার অন্যায়…
মুরব্বিস্থানীয় নিকটজনেরা বয়সকে দোষ দেয়। বয়স আমাকে পুনরায় প্রশ্রয় দিয়ে বোঝায়- ‘চাঁদ ও তার বুড়ি, দুইজনেই কলঙ্কের সমান অংশিদার।’
অরণ্যভ্রমণ
মোটামুটি এক প্রবেশপথের
মুখে একটা ময়ূরী দেখে
ফিরে আসলাম বিভূতিভূষণ।
মারজুক শা’র মাজার
দম।
দমে মুক্তি, দমে পুণ্য
‘শূন্য আকাশ আকাশ শূন্য…’
জিকির বাড়বে আকাশ আকাশ,
তাহলেই সবুজসুমতি মৃতপ্রায় ঘাস।
দানবাক্স অক্সিজেন, প্রেম ছাড়া কিছুই গ্রহণ করে না।
হে-এএএই, অন্ধকারে কে যাচ্ছ? দাঁড়াও;
মারজুক শা’র মাজার সামনে-
‘শূন্য আকাশ আকাশ শূন্য…’ জিকিরটা বাড়াও।
হ্যান্ডিক্র্যাফট
‘যার কেউ নাই তার ‘হাত’ আছে’ –
এই বাক্য নিউজপ্রিন্টে
নীল কালিতে লেখার পরে
ঘি-রং আঠায় কে লাগালো
থুড়থুড়ে বটগাছে?
যার কেউ নাই তার হাত আছে!
‘যার হাত নাই, তার?’
সন্ত বলল, “আহাহহাহা…।’
মুরুব্বিরা ইন-লক পছন্দ করেন না
আমি করব, তুই পাহারা দিবি;
আমি পাহারা দিব, তুই করবি!
চিতাইপিঠা
উপুড় কইরাও খাইয়া দেখছি- যায়-
খাড়া কইরা তো যায়ই,
মাথার দিকে দিয়া শুরু করতে হয়।
শোয়াইয়া খাইতে দিক লাগে না- বিদিক লাগে;
খাইয়া সাইরা গরম হইতে শীতে বাইরাইবার রাস্তা দেখা যায়।
মেয়েদের জিনিস
আমার চুল*i বাঁধার কালো-মোটা রাবার-ব্যান্ডে বাম হাতের তর্জনী প্রায়-ঠেকিয়ে ১৪+ মেয়েটি বলল, ‘মেয়েদের জিনিস লাগাইছেন ক্যান?’ ‘আরে! আমি তো পারলে মেয়েদেরই লাগিয়ে রাখতে চাই! মেয়েদের লাগাইতে পারতেছি না বলেই তাদের জিনিস লাগাইতেছি।’
চেহারায় লজ্জা আগে-থেকেই ছিল, আমার উত্তরের পরপরই তাতে খানিকটা রাগ মাখিয়ে, জোরের আর আস্তের মাঝামাঝিতে কণ্ঠস্বর এনে ‘অসভ্য’ ছাড়া অন্য-কোনো শব্দই সে বের করল না! আমার বেরোলো ‘হ্যাঁ, তাই!’
অল্টারনেটিভ
তোমার দেখা পাচ্ছি না; তোমার দেড়-তলা বাড়িটাকে দেখতেছি। বাদামি পর্দা-উড়া-হালকা-খোলা জানলা দিয়ে যত ভেতরে দেখা যায়। ছাদে শুকাতে দেয়া কাপড় চোপড়, “ফিরোজা+পিংক” কম্বিনেশন ড্রেসে তোমাকে একদিন মর্কেটে দেখেছিলাম; ওই ড্রেসটা কি ভিজায় থাকে, শুকাইতে দাও না, ছায়াতে শুকাও? গোপনে শুকাও ?
তোমার এলাকার হোটেলগুলায় নাশতা; দুপুর, রাতের খাবার, টং দোকানের চিনি-ছাড়া-কাঁচাপাতি-দুধ-বেশি-চা; চানাচুর, আপঝাপ, মিনারেল পানি, চুইংগাম, ক্যাকজ্যাক খাচ্ছি প্রসংসা করছি। তোমারে খাইতে পারতেছি না।
তোমার এলাকার রোদ, বৃষ্টি, ধোলিবালি, প্যাঁক, ময়লাটয়লা লাগায় বেড়াচ্ছি;তোমারে লাগানো হইয়েই উঠতেছে না, হবে …
তোমার এলাকা ছাইড়া যাচ্ছি;
তোমারে ছাড়ার ফিলিংস্ হচ্ছে, হোক –
আমি অনেক-কিছুই-ছাইড়া-আসা-লোক !
সেমি-ডাবল-লাইফ
সে আর আসতেছে না। পুনরায় ফেরার বাসনায় কতদিন কতবার দেহ রেখে প্রাণ নিয়ে চলে গিয়ে ইদানীং কেন কবিতা বিবন্ধুসুলভ? আমি তো তাকে মধু, চিনি, নুনের মতো নয়; ভালোবাসার মতোই ভালোবাসি। কোনোদিন জোর করিনি – একদিন মেঘ, মেঘঘটিত হাওয়া, তার পোশাকআশাক, সাজগোজ, অগোছালো ওঠা-বসা-হাঁটা আর নির্জনতারা আমাকে নির্লজ্জ করেছিল বিধায়, বলে ফেলেছিলাম, ‘দিবা?’
‘দিবা?’র উত্তর ‘বাসায় যাওয়া দরকার… রাস্তায় সম্ভবত জ্যাম… মিনিমাম একঘণ্টা লাগবে… সন্ধ্যা ওভার হয়ে গেলে মা রাগ… আসি… হ্যাঁ…’ দিয়ে নিজেই দরোজা খুলে সেই যে গেল!
অই সময়ের পর থেকে ক্রিয়াপদের সামান্যতম গন্ধ আছে – এমন যে-কোনো প্রশ্ন তার মুখ থেকেই প্রথমে আসুক আশা করে আছি!
কবিতা কি আসবে না?
আমি এখনো আগের মতোই কাগজ-কলম পকেটে নিয়ে ঘুরি, বালিশের বাম পাশে রেখে জেগে থাকি, ঘড়ি দেখি না, গড়াগড়ি দিই… ঘুমাই!
বালিশ নিক্ষেপ
তোমার মাইয়া তোমার কাছ থিকা আমার চোখ কাইড়া নিয়া
যারে যারে দেখাইতেছে,
তারে তারে আমি প্রথমে ছবিতে,
পরে ফিল্মে, পরে বাস্তবে দেখছিলাম, ওর বয়সেই।…
ওর কাছ থিকা কেউ কাইড়া নেওয়ার আগে ফেরত দিয়া যাইতে কইও―
আমি বেশি দিন অন্ধ থাকতে পারি না।
তুমি যার কাছ থিকা কাইড়া নিছিলা
সে আরেকজনের কাছ থিকা কাইড়া আনছিল;
সে যার কাছ থিকা কাইড়া নিছিল, তারে আমি সাইধা দিছিলাম।
খরগোশ, সহনশীল উচ্চতা থেকে
তোমাদের পছন্দের শয়ন শিখতে একদিন লাগে মাত্র;
দেড় ঘণ্টার তিনটি ইংরেজি সিনেমা আর আয়না দেখতে হয় –
দেখলাম, শিখলাম –
শেখাটাকে প্রয়োগ করতে এসেছি, জায়গা দাও।
‘যখনতখন গোসল করতে পারি, সাঁতার জানি’ –
অতীত আমার এতটুকই।
সহনশীল উচ্চতা থেকে লাফাতে থাকব, সংকেত দাও-
ভালো আচরণ পেলে থেকে যাবার বাসনা আছে।
ভাগ্যবান নামের একজন স্লিপ-ওয়াকার
আমারে বলেছিল এইগুলো লিখে রাখতে
৫.
বেলুন আমারে ফুলাও, বান্ধো, ফাটাও―এই নাও সুঁই।
আমি তোমাদের জন্মদিনের কেকফেক-কাটা দেইখা ক্লান্ত।
আমি তোমাদের স্পোর্টসজোনের লাথিগুঁতা খাইতে-খাইতে ক্লান্ত।
আমি তোমাদের ফুঁ-য়ে ফুঁ-য়ে বাঁশির আগায় ফুইলা-পোতাইয়া-ফুইলা-পোতাইয়া ক্লান্ত।
আমি তোমাদের বাসররাইতের কাহিনী শুইনা-দেইখা ক্লান্ত।
আমি তোমাদের এর, ওর, তার ফিতা-কাটা দেইখা ক্লান্ত।…
ফুলাও, বান্ধো, ফাটাও―এই নাও ফাল―ফাটাইতে মায়া জাগলে
উড়ায় দাও; ঘাসের খাড়া মাইয়ের উপর গিয়া পড়ি―
ওরা আমারে অনেকদিন ফাটায় না।
বৈবাহিক অবস্থা: □ অবিবাহিত □√ বিবাহিত
গেছে; শুদ্ধ ভাষায় গেছে! কিছু আর অবশিষ্ট নাই!
গ্যাস ফুরোলো বেলুন কি আর শূণ্যে থাকতে পারে!
একটা বেলুন চোখের সামনে মাটিতে ঝরল,
হাত বাড়ালো অনেকে, কিন্তু একজন ধরল –
ধরে, গিঁট খুলে, মুখে নিয়ে
অনেক-অনেক ফুঁয়ে তাকে ফোলাতে পারল,
ওড়াতে পারল না!
মারজুক রাসেল
Latest posts by মারজুক রাসেল (see all)
- গান-ভাঙ্গা গান, লিরিক মারা লিরিক, সুর মারা সুর - জুন 15, 2021
- মারজুক রাসেলের কবিতা - মে 27, 2021
- আউলা - জানুয়ারি 27, 2021