গান-ভাঙ্গা গান, লিরিক মারা লিরিক, সুর মারা সুর
#
‘এমন একদল চোর বানাইছো
এমন অনেক চোর বানাইছো
এমন একজন চোর বানাইছো
লজ্জা-শরম নাই;
কার কাছে চুরির বিচার চাই?
ও দয়ালরে/…’
#
৮০’র দশকের শেষ দুই বছরের দিকে হবে। এরশাদ-সরকারশাসিতশোষিত দেশে আমরা পোলাপাইনের বয়স পার হইতেছি হাফপ্যান্ট [তখন ইংলিশপ্যান্ট] ছাইড়া টেট্রনের একটামাত্র ঘিয়া কালারের ফুলপ্যান্টের সাথে শিল্পাঞ্চল খুলনার নিক্সন মার্কেটের পুরানা জিন্স প্যান্ট স্বল্পমূল্যয় কিনা পরা শিখা। ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক/ গণতন্ত্র মুক্তি পাক’, ‘কেউ খাবে,কেউ খাবে না’, ‘মাঝরাতে চাঁদ যদি আলো না বিলায়’, ‘আমায় একজন শাদা মানুষ দাও’, ‘ দেরে দে গেলাশ ভরে দে’, ‘ তুমি রোজ বিকেলে আমার বাগানে’,‘একদিন পাখি উড়ে যাবে’,‘রসিক আমার মন বান্ধিয়া’র সাথে ‘মিলন হবে কত দিনে’র গোলকধাঁধায় মনখারাপরে ভালো লাগাইয়া সাজুর (Saz Khan) [আমাদের গায়ক, গিটারিস্ট বন্ধু] সাথে বিএল কলেজের (Govt. B.L University College, Khulna) আর্টস বিল্ডিঙের নিচ তলার সিঁড়িতে বিকাল-সন্ধ্যার চোখ লাল করি। ও[সাজু] গান গায় আমরা শুনি,আর সিগারেট ভাগ কইরা খাই।… এইসব সময়ে ‘এমন একখান ঘর বানাইছো’ গানটা লেখা। সাজু একটা সুর কইরা গায়,আমরা মাঝে মাঝে গলা হান্দাই।… ‘দিন যায়রে বিষাদে’…
… চাকরি থিকা বাপের অবসর। বাপ-মায়ের বাড়ি গোপালগঞ্জে ফেরা। সেইখানে অনেক সমবয়সী-অসমবয়সী বন্ধু মিলা যাওয়া; যাঁদের ভিতর গান নিয়া সময় কাটানো মানুষও পাওয়া ; আরিফ,আলিম,সিরাজ ( Shirazul Hoque) … গোপালদা। … ‘এমন একখান ঘর বানাইছো’ এঁদের সাথেও শেয়ার কইরা আড্ডায় আড্ডায় অসুরা-গলায় আমিও গাই সাজুর করা সুরের সাথে আমার করা অসুর মিলাইয়া। গোপালগঞ্জের আনাচেকানাচে, বঙ্গবন্ধু কলেজের (Govt. Bangabandhu College, Gopalganj ) নানান জায়গায়, স্পেশালি কমনরুমের পাশের ক্লাসরুমে আড্ডা আর বেঞ্চ বাজাইয়া অনেকে মিলা গান গাওয়ার দুপুরগুলা এহনওতো তরতাজা।… তারপর কত ‘চড়াই-উতরাই’―
চড়াইতে প্রথমে কবিতা পরে গান,তারও সাড়ে পাঁচ বছর বাদে কৌতূহলের প্রেমে পইড়া ভিজুয়াল-মিডিয়ামে নিবেদিত হওয়ার ভিতরে একদিন, ২০০৪/৫-এর মধ্যে দুপুরবেলায় আজিজ সুপার মার্কেটের অডিও সপ ‘সুরের মেলা’ থিকা কানে আইসা ঢুকল ― ‘এমন একখান ঘর বানাইলা/দরোজা-জানালা নাই/কেমনে তোমার দেখা পাই?/…’। মুহূর্তে আউলাইয়া গেলাম;পুরা খুলনা-গোপালগঞ্জের সেইসব দিন ভর করল মাথায়। ‘সুরের মেলা’য় ঢুইকা ক্যাসেটটা হাতে নিয়া খুইলাখাইলা দেখলাম অ্যালবামের নাম ‘হীরা চুনি পান্না’, শিল্পী : Asif, Sumon, Tito। অডিও-লেবেল : Soundtek।
সাউন্ডটেকের ইউটিউব লিঙ্ক-এর টাইটেল-সিরিয়াল মোতাবেক গানটা নাই,আছে ইউটিউব-ভিডিওর টাইম কোড ২৭:৭ থিকা। গানটার নাম ‘কবর’, গীতিকারের নামে গোপালদা ও আমি।
প্রিন্স মাহমুদের সুরে (যদিও গানটার সুরে আমাদের [সাজু,আমার ও গোপালদার] করা সুর স্পষ্ট)। কণ্ঠশিল্পী : Atahar Tito। গানের কথার মুখে আমার লেখা ‘বানাইছো’র জায়গায় ‘বানাইলা’ ছাড়া ঠিকঠাক আছে; অন্তরা দুইটা সম্পূর্ণ আলাদা―গোপালদা গানটার ‘মুখ’ বুইঝা তাঁর-সঙ্গে-কাটানো-দিনগুলায় আমার গাওয়া কথা ভুইলা গিয়া যেভাবে পারছেন লিখছেন, গেয়েও থাকবেন।
আমার লেখাটা ছিল―
ঘর
এমন একখান ঘর বানাইছো
দরোজা-জানালা নাই,
কেমনে তোমার দেখা পাই।
#
সেই ঘরেতে এমন থাকি
সারাক্ষণ তোমারে ডাকি―
এমন এক পাপী কি আমি,
ক্ষমা কি আমার নাই?―
কেমনে তোমার দেখা পাই।
#
ওরে আমার দমের-পাখি
দয়ালরে দিও না ফাঁকি―
তাঁর কাছে রেখো না বাকি,
জীবন-যে সদাই―
কেমনে তোমার দেখা পাই।
যাইহোক, ওইরকম ভার্সনে গানটা শোনার পর প্রচণ্ড বিলা হইলাম; কাউরে কিছু জিগাইলাম না, এমনকি বন্ধু টিটোরেও কিছু জিগাইলাম না, আউলাইয়া থাকলাম কয়েকদিন; ভুইলা যাইতে পারলাম না, মনে রইয়া গিয়া ডিস্টার্ব হইতে থাকলাম মাঝেমধ্যে। দিন যায় হরিষে-বিষাদে―
দীর্ঘদিন পর গানটার আরেকটা ভার্সন কানে আসলো, ‘গুরু ঘর বানাইলা কি দিয়া/দরজা-জানলা কিছু নাই/কেমনে তোমায় দেখতে পাই/…’। কণ্ঠ জেমসের। গীতিকার-সুরকার : প্রিন্স মাহমুদ। অডিও-লেবেল :সঙ্গীতা। উল্লেখ্য, ‘হীরা চুনি পান্না’য় টিটোর গাওয়া গানটাও প্রিন্স মাহমুদের তত্ত্বাবধানে হইছিল।
https://www.youtube.com/watch?v=nyTSU17WOMo
‘হীরা চুনি পান্না’র ‘কবর’ গানটার রচনায় আমাদের নাম থাকার পরও একটা-দুইটা শব্দ বদলায়া [গানের মুখটা] নির্লজ্জ ও সচেতনভাবে গানটাকে সম্পূর্ণ নিজের লেখা হিসাবে প্রকাশ করলেন আর হিন্দি সিনেমা ফিজায় (২০০০) Anu Malik-এর করা ‘মেহবুব মেরে’ গানটার সুর হুবহু মেরে দিয়ে নিজের নামে চালিয়ে গেলেন।
নতুন-পুরাতন সকল সচেতন শ্রোতার কর্ণ-আকর্ষণ করতেছি।
…………………
বি.দ্র.
jahangir Akram (comment): লেখাটা আগেও পড়েছি যখনি পড়ি সব সময় মনে হয় কোন এক জায়গায় হইতো ভুল হচ্ছে, বাকিটা আপনারাই ভালো জানেন। আপনাদের গানের ভক্ত গান শুনি এবং কার লেখা বা সুর করা সেটা জানার স্রেটা করি সব সময়। ‘গুরু’ গানটা “যন্ত্রণা” মিক্সড অ্যালবামে ছিলো, প্রিন্স মাহমুদের সুরে ‘গুরু’ গানটায় গীতিকারের নাম লেখা ছিলো “রাহাত হোসাইন”, প্রিন্স মাহমুদ না।
রিপ্লাই > Marzuk Russell: ইংরেজি ‘সং-রাইটার; শব্দটার অর্থর সাথে ‘গীতিকার’ বা ‘লিরিসিস্ট’ শব্দের বিশাল ব্যবধান আছে।… গীতিকারের নামে যে-ই থাকুক, সুরকার সাহেব ওই কথাগুলার সাথে ‘হীরা চুনি পান্না’র সূত্রে ভালোভাবেই পরিচিত [যদি তাঁর মেমোরি লস না ঘইটা থাকে)। লাইনস , আইডিয়া শেয়ার কইরা কাউকে দিয়া লেখাইয়া নেয়া অথবা ঘোস্ট-রাইটারের অভাব নাই দুনিয়ায়।
মারজুক রাসেল
Latest posts by মারজুক রাসেল (see all)
- গান-ভাঙ্গা গান, লিরিক মারা লিরিক, সুর মারা সুর - জুন 15, 2021
- মারজুক রাসেলের কবিতা - মে 27, 2021
- আউলা - জানুয়ারি 27, 2021