অবিচুয়ারি
কিম কি দুক
ডিসেম্বর ১১, ২০২০
কিম কি দুকে’র আরিরাং সিনেমাটা ভাল্লাগছিলো। অটো-বায়োগ্রাফিক্যাল ডকুমেন্টারি। তখন লিখছিলাম, মানুশ নিজেরে তার আশ-পাশ দিয়াই বুঝার ট্রাই করে।
“স্প্রিং, সামার, ফল, উইন্টার… অ্যান্ড স্প্রিং” ভাল্লাগে নাই, কারণ কোন লাইফই কোন আইডিয়ারে রি-প্রডিউস করে না বা কনফার্ম করে না, বরং কোন আর্ট যদি আইডিয়ার ভিতর দিয়া লাইফরে দেখার অভ্যাস করাইতে চায় সেইটা যে ‘বাজে আর্ট’ এইটা মানতে উনি পুরাপুরি রাজি হইতে পারেন নাই। হেসিটেট করছেন, কিন্তু এর বাইরে না যাইতে পারার হাঁসফাঁসটা মেবি এড়াইতে পারেন নাই। কিন্তু ব্যাপারটা তো বাজেই, অস্বস্তিকর অর্থে না, একটা রিডিউসিং ফর্ম হিসাবেই।
ব্রেথ সিনেমাটার কথা মনে আছে। উইয়ার্ড ব্যাপারটা তো উনার মধ্যে খুবই ইন-বিল্ড একটা জিনিস। যেইটা লোকজন এপ্রিশিয়েটও করে। যেই জিনিসটা ভাবছি, দুয়েকজনরে হয়তো বলছিও, কিন্তু ‘লিখিত’ করা হয় নাই, সেইটা হইতেছে, সাউথ কোরিয়ার ইকনোমিক গ্রোথের প্রেশারের সাথে এই দমবন্ধ অবস্থার একটা রিলেশন থাকার কথা। মানে, যে কোন আর্টই সোসাইটির বাইরের কোন ঘটনা না, বরং কেমনে কানেক্ট করতেছে, কোন জায়গাগুলারে রিলিভেন্ট কইরা তুলতেছে, সেই ব্যাপারগুলা আছে বা থাকে। কিন্তু অইটুকই আর্ট না আর কি!
কিম কি দুকের প্যাশনটাই উনার স্ট্রেংথের জায়গা। বোবা একটা প্যাশন। আওয়াজ বেশি, কিন্তু কথা কম। মানে, ডায়ালগ তো মোটামুটি নাই-ই উনার সিনেমায়।
যা-ই হোক, উনার বোবার ঘূর্ণিতে উনি যে দুনিয়ারে বান্ধছিলেন, সেইটাতে কয়েক জেনারেশনের লোকজন নিজেদের বোবা-প্যাশনগুলা নিয়া যে জড়ো হইতে পারছে বা পারবে, সেইটা নিয়া উনি খুশি না হইলেও বেজার না মনেহয়।…
রেস্ট ইন পিস ইন ইউর ইটারনাল এগনি (agony)!
অ্যানিইগং (annyeong)!
মিতা হক
এপ্রিল ১১, ২০২১
মিতা হক মারা গেছেন আজকে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ছাড়া অন্য কোন গান মনেহয় উনি গান নাই। (গাইলেও সেইটা উনার পরিচয় হয়া উঠতে পারে নাই, বা উনিও মেবি চান নাই।) রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য ও গান মারা গেছে অনেকদিন আগেই, কিন্তু পাকিস্তান আমলে উনার গান গাইতে পারাটারে ‘প্রতিবাদী’ ব্যাপার কইরা তোলা হইছিল। যেইটা আসলে ‘বাংলার মানুশের’ কোন ‘প্রতিবাদ’ ছিল না, ঢাকা শহরের মিডল-ক্লাসদের একটা ঘটনাই ছিল। পলিটিক্যালি রিলিভেন্টও ছিল কিছুদিন। কিন্তু কালচারালি এখন কম-বেশি একটা ডেড ঘটনাই। মানে, ‘রবিগান’ গাইয়া এবং শুইনা জমিদারি বা স্মার্টনেস জাহির করা যায় না এতোটা বাংলাদেশে, এই ২০২১ সালে।
কিন্তু মিতা হক’রা অই ‘প্রতিবাদ’ এর ঘটনাতেই পইড়া ছিলেন, এর থিকা বাইর হয়া আসতে পারেন নাই, এরে কোনভাবে আপডেট করতে পারেন নাই, বা সময়ের সাথে রিলিভেন্ট কইরা তুলতে পারেন নাই। যারা ফলে উনাদের ‘প্রতিবাদের সংস্কৃতি’ একটা ‘হেইট ক্যাম্পেইন’ হয়া উঠছিল। এইটা বেশ বাজে ঘটনাই যে, শারীরিকভাবে মারা যাওয়ার আগেই মিতা হক কালচারালি মারা গেছিলেন। আমাদের বেশিরভাগ কালচারাল আইকনরাই নিজেরা মারা যাওয়ার আগে উনাদের কাজগুলা ইরিলিভেন্ট হয়া উঠে, মারা যায়।
এইটা একটা স্যাড ঘটনাই।
কবরী
এপ্রিল ১৭, ২০২১
“The death of a beautiful woman is, unquestionably, the most poetical topic in the world.” – Edgar Allan Poe
কবরী মারা গেলেন। কবরী বাংলাদেশি সিনেমার নায়িকা ছিলেন।
নায়িকা হিসাবে উনার ছোট কিন্তু স্ট্রং একটা সিগনেচার ছিল, যেইটা সিনেমায় ‘বাংলাদেশি’ একটা ব্যাপার হয়া উঠছিল। সেইটা হইতেছে, উনার হাসি। এর আগে এবং পরে, সিনেমায় নায়িকা অনেকেই ছিলেন, কিন্তু বাংলাদেশের মানুশের মনে স্ট্রং নায়িকা ইমেজ ছিল সুচিত্রা সেনের। আর খেয়াল কইরা দেখবেন, উনাদের দুইজনের যেই ‘সিগনেচার ইমেজ’ সেইখানে সবচে আলাদা জায়গা হইতেছে, হাসি’টা।
সুচিত্রা সেন হাসেন না – তা না, কিন্তু এইটা উনার ইমেজের মেইন ঘটনা না, একটু চুপচাপ, মাপা-মাপা হাসি হইতেছে উনার সিগনেচার। এখনো এইটারে আর্টিস্টিক একটা ব্যাপার ভাবা হয়। (স্যাড!) কবরী’র হাসিতে এই মাপামাপি নাই। হাসি আসছে, হাসতেছেন, এইরকম। ঘটনা’টা ড্যাম-কেয়ার বা চাতুরি করার ব্যাপারও না, যেইটা পরে ববিতা ট্রাই করতেন।
এইটারে অনেকে বলবেন, খুবই ছোট-খাট জিনিস। কিন্তু এইগুলা সিগনিফিকেন্ট জিনিস, ইমেজের ঘটনাগুলা। এখনো নাটক-সিনেমার নায়িকারা যে সুচিত্রা সেন’রে ফলো করেন এবং কবরী’র মতন হাসতে পারেন না, এইটা কবরী’রে বাতিল কইরা দেয় না, বরং কবরী’র মতো হাসি আর আমরা দেখতে পাই না – এই অভাব থাকার কথা, অডিয়েন্সের মনে।
এইটা যে উনার সিগনিফিকেন্স – এইটা কবরী জানতেন। এই কারণে নিজেরে কপি করছেন অনেক। এই বারবার কপি করতে পারা’টা উনারে বাংলাদেশি সিনেমার নায়িকা হিসাবে আরো পছন্দের কইরা তুলছে, দর্শকদের কাছে। অথচ কলকাতার ঋতিক ঘটক তারে নিয়া যেই সিনেমাটা বানাইলো সেইখানে তাঁর হাসিটারেই বাদ দিয়া দিছে! সত্যজিৎ-ও একই কাহিনি করছেন ববিতা’রে নিয়া। যেন বাংলাদেশের মেয়েরা হাসতে পারে না! রবীন্দ্রনাথের নায়িকাদের মতন, সদা-দুখী থাকা লাগবে! হাসলে নায়িকা-ভাব থাকবে না! আর্ট হিসাবে এইগুলারে গ্লোরিফাই করা বাজে জিনিস, চাপায়া দেয়ার ঘটনা। ইমেজের এই লড়াইগুলা ইর্ম্পটেন্ট জিনিস। সবসময় ইগনোর কইরেন না।…
উনি মারা যাওয়ার পরে আরেকটা জিনিস দেখতেছি, মিনা পাল নিয়া। আমার ধারণা, ববিতারে নিয়া আলাপে ফরিদা আকতার পপি নাম পাইবেন না। ইভেন হিন্দি সিনেমার মুহাম্মদ ইউসুফ খান’রে নিয়াও এইরকম হেডলাইন হবে না। স্ক্রিনে ‘নাম নেয়া’ একটা ঘটনা ছিল সবসময়ই। এইটা অনেক বেশি পারফর্মারদের ট্রাডিশন থিকাই আসার কথা। নন-পলিটিক্যাল কোন ঘটনা না, কিন্তু গোড়া’টা পলিটিক্যাল না, পারফর্মেন্সের ঘটনা।
জীবনের শেষদিকে উনি যে পলিটিক্স করলেন, এইটারে বরং আমি দেখতে চাই যে, বাংলাদেশে আর্ট-কালচার করতে গেলে একটা পলিটিক্যাল দলের গোলামি যে করতে হয়, এই জায়গা থিকা বাইর হওয়াটা মুশকিলের। এই পলিটিক্যাল গোলামি থিকা বাইর হওয়ার রাস্তা আমাদের আর্টিস্টরা যে নিজেদের জন্য বাইর করতে পারতেছেন না, সেইটা উনাদের আর্ট-কালচারের জন্য আরো বড় অবস্টেকল হয়া উঠতেছে দিন কে দিন। কবরী জাস্ট এর বাইরের কেউ ছিলেন না।
কবরী যতদিন-ই বাঁইচা থাকবেন মানুশের মনে, এই নায়িকার হাসি নিয়াই বাঁইচা থাকবেন। উনার হাসি সুন্দর, কিন্তু এইরকম সহজ কইরা হাসতে পারা সহজ জিনিস ছিল না, এখনো না।
ওয়াসিম
এপ্রিল ১৮, ২০২১
ওয়াসিম’রে তো বাংলা সিনেমার নায়ক হিসাবে আমরা খুব একটা পছন্দ করতাম না। যদিও উনি কয়েকটা ‘সামাজিক সিনেমা’ করছেন। (“মানসী” সিনেমার “এই মন তোমাকে দিলাম” গানটার কথা মনে থাকার কথা অনেকেরই।) কিন্তু উনি আসলে “ফোক-সিনেমা” বা “ফ্যান্টাসি-সিনেমা” বেশি করছেন। ‘বাঙালি’ হয়া ঘোড়া দৌড়াইছেন, তলোয়ার দিয়া মাইর-পিট করছেন। অথচ বাংলা-সিনেমা নিয়া একটা লেখা’তে আমি কইছি যে, এই ক্যাটাগরিগুলাই হইতেছে আসল সমস্যা। বাংলাদেশের মানুশ-জন যেই গান শুনে তার ক্যাটাগরি আমরা বানাইছি ‘ফোক সং’। মানে, এইগুলা আসলে “প্রকৃত গান” না এতোটা! সিনেমাতেও এই জিনিসটা হইছে; যেইসব সিনেমা গরিব লোকেরা দেখে, অইগুলা হইতেছে “ফোক-সিনেমা”, আসল সিনেমা হইতেছে “আর্টফিল্ম”!
এই কারণে ওয়াসিম-অঞ্জু’র হিট গান, যেইটা সিগনেচার সং-ও মেবি উনার, অঞ্জু ঘোষের, খুরশিদ আলমের (রুনা লায়লা তো লিজেন্ড আসলে… ) সেই “চাকবুম চাকবুম”রে আমরা এখনো “অশ্লীল গানের” বাইরে কিছু ভাবতে পারি নাই। অথচ এইটা হওয়ার কথা ছিল ঢাকা শহরের পার্টি সং, এইটিইজের মেজর একটা রিমিক্স! নতুন মিউজিক অ্যারেঞ্জমেন্টে কেউ যে গাওয়ার কথা ভাবেন নাই, এইটা আজিব একটা ব্যাপার। ইউটিউবে অরিজিনাল ভিডিও’টাও পাইলাম না।
ওয়াসিম-জাভেদ-উজ্জলদেরকে আমরা (‘শিক্ষিত’ ‘আরবান’ ‘মিডল-ক্লাস’) যে নিতে পারি না বাংলাদেশি সিনেমার নায়ক হিসাবে এর একটা কারণ তো অবশ্যই যে, উনারা ‘অভিনয় জানেন না’, কিন্তু এই ক্যাটাগোরাইজেশনটারও ভিক্টিম উনারা। কারণ “অভিনয়” যে বুলবুল আহমেদ-আলমগীর-সোহেল রানাও খুব বেশি জানতেন – তা না, কিন্তু উনারা যেহেতু এইরকম “ফোক-ফ্যান্টাসি” সিনেমা খুববেশি করেন নাই, ওয়াসিমের মতন খুববেশি “হাইস্যকর” নায়ক হইতে পারেন নাই। তো, এই “হাসি” উনার এতোটা পাওনা ছিল না আর কি! উনার মারা যাওয়ার খবরে এই কথাটাই মনে হইলো আবার।
শঙ্খ ঘোষ
এপ্রিল ২১, ২০২১
নাইনটিইজের শুরুর দিকে আমরা যখন কবিতা লিখি তখনো শঙ্খ ঘোষের “ছন্দের বারান্দা” আমাদের “পাঠ্য” ছিল। এর বাইরে শঙ্খ ঘোষের কবিতা পড়ছি, কিন্তু কোন সময়েই আলাদা কইরা কিছু মনেহয় নাই। উনার কবিতা মৃদু-মন্দ স্বরের, বিষাদ-বেদনার, ট্রাডিশন্যাল কলকাতার। উনার কবিতা আলাদা কইরা মনে করার, মনে রাখার কোন কারণ খুঁইজা পাই নাই।
কলকাতায় উনি মেবি “বড় কবি” ছিলেন। বাংলাদেশে যারা কবিতা লেখেন, কবিতা পড়েন, তারাও উনারে মনে রাখছেন, অই জায়গা থিকাই। কিন্তু বাজে ব্যাপার হইলো, এইসব বড়কবি, ছোটকবি ব্যাপারগুলা সাহিত্য-সমাজের ঘটনা, মইরা যাওয়ার আগেই এইগুলার দাফন-কাফন হয়া যায়।
যারা উনারে আজকে মনে করতেছেন তাদের কাছে যতোটা না উনার কবিতা, তার চাইতে উনার কবিতা পড়ার মেমোরিই মেইন ঘটনা। যে, আরে, স্কুলে থাকতে, কলেজে থাকতে, ভার্সিটিতে থাকতে পড়ছিলাম তো! আর আমরা আমাদের মেমোরিগুলারে তো সবসময় রিলিভেন্ট রাখতে চাই। এইটা অবশ্যই দোষের কিছু না। কিন্তু পারসোনাল মেমোরি’রে যেমন হিস্ট্রি বইলা দাবি করা যায় না, একইভাবে আমি পড়ছি বা পড়ি নাই বইলাই কোন কবি’র কবিতা ভালো বা খারাপ হয় যায় না।
আমার ধারণা, উনি উনার মতো কইরা একটা কবিজীবন পার কইরা যাইতে পারছেন। জীবনটারে কবিতার ভিতর দিয়া ভাবতে চাইছেন। এই কারণে উনার কবিতার চাইতে কবিতা নিয়া লেখা উনার গদ্য বেশি “কবিতা” হয়া উঠতে পারছিল। যেই কারণে মেবি উনি খুববেশি কবিতা লিখতে পারেন নাই।
আর উনি যা পারছেন, সেইটা তো উনার কবিতাতেই আছে। যা হইতেছে, মোলায়েম একটা কবি-স্বভাবের ঘটনা।
কবিতা যে এইটুকই না, এইরকম ভদ্রলোকি কোন ঘটনা না, জীবনের ফাইনার ফিলিংগুলাই না, এইটা ফিল করতে পারাটা, এইরকম বদ্ধ একটা জায়গা থিকা কবিতারে বাইর করতে পারাটা আজকে বাংলাদেশে, আমাদের জন্য বরং অনেক বেশি জরুরি একটা ঘটনা। এই ডিফরেন্সের জায়গাটা আমি মনে রাখতে চাই, উনার মারা যাওয়ার দিনে।
আজকে শঙ্খ ঘোষের মারা যাওয়াটা কলকাতার সাহিত্য-সমাজের একটা ঘটনা। বাংলাদেশের সাহিত্য-সমাজেরও হয়তো কিছুটা। কিন্তু আমি আশা করি, একজন কবি সমাজের একজন হয়া উঠতে পারবেন। দুনিয়ার একজন হয়া উঠতে পারবেন। আর এইটা কবি’র বাঁইচা থাকার ভিতর দিয়া হয় না, মরলেও হয় না। এইটা তার কবিতার একটা ঘটনা।
যার হয় তার হয়, যার হয় না তার হয় না।
আর এইটা নিয়া কবিদের খুব বেশি টেনশন করার কিছু নাই। আই হোপ, শঙ্খ ঘোষেরও ছিল না।
বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত
জুন ১০, ২০২১
ব্যক্তিত্বের নামে অনেক ক্রিয়েটিভ পারসন’রা যা করেন এক ধরণের প্রেজুডিস তৈরি করেন নিজেদের আর্টে, বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের অই জিনিস কম ছিল, বা ছিল না উনার সিনেমায়। আর্টের নামে একটা প্রেজুডিস তৈরি করার চাইতে যে কোন ধরণের প্রেজুডিসের হাত থিকা নিজের বাঁচায়া রাখতে পারাটাও একজন আর্টিস্টরে হেল্প করতে পারে, অনেক সময়। এই কারণে মেবি প্রেজুডিসে ভরপুর কমলকুমার মজুমদারের কাহিনিরে বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত সিনেমায় ভালো ট্রান্সলেট করতে পারছিলেন। মানে, নিম অন্নপূর্ণা আর তাহাদের কথা দেখছিলাম অনেকদিন আগে, আর এইগুলা উনার বেস্ট ওয়ার্কও না। উত্তরা, লাল দরজা, চরাচর – এইগুলার জন্য এওয়ার্ড পাইছিলেন, ইন্ডিয়ায়, ন্যাশনাল লেভেলে। কিন্তু সিনেমায় উনার সিগনেচার নাই তেমন, হয়তো অই স্ট্রং কোন প্রেজুডিস না থাকার কারণেই, যেইটা ধরেন, উনাদের সতজিৎ’র ছিল, ঋতিকের, ঋতুপর্ণের ছিল। উনার তেমন কোন প্রেজুডিস দেখি নাই (বা মনে করতে পারতেছি না এখন)। তো, অই না-থাকাই মেবি উনার বেস্ট পার্ট। যার ফলে, সিনেমার কাহিনি’টারে, কাহিনি’র সুরটারে যতোটা সম্ভব ‘অ্যাজ ইট ইজ’ নিতে পারছেন।…
মহিউদ্দিন আহমেদ
জুন ২২, ২০২১
“Every published book is a group effort” – Margaret Atwood
জীবনের ঘটনাগুলা ব্যাক-ওয়ার্ডে গিয়াই রিলিভেন্ট হয়া উঠে। মানে, যখন ঘটতেছে, আপনি এর সিগনিফিকেন্স সবসময় টের পাইবেন না। পরে অনেক ইম্পর্টেন্ট ঘটনাও ফানি লাগে, অনেক ছোট-খাট জিনিসও জরুরি হয়া উঠে। ইউপিএল’র মহিউদ্দিন আহমেদের সাথে আমার এনকাউন্টার’টা এইরকমের একটা ঘটনা।
ভার্সিটি লাইফে পাবলিকেশনের উপরে একটা কোর্স করতে গিয়া উনার লগে দেখা হইছিল, ৫/৭ বার। অই কয়েকবারই যেই জ্বালানি’টা জ্বালাইছেন আমারে, আমার এখনো মনে আছে। লেকচার দিতে আসতেন, কিন্তু ক্লাসে ১৫/২০ জনের প্রেজেন্স পুরাপুরি ইগনোর কইরা আমার সাথেই “তর্ক” করতেন। এইটা পড়ছেন? অইটা দেখছেন? এইটা নিয়া এইরকম কেন মনেহয়? এইরকম… বুড়া মানুশের বাতিক মনে হইতো আমার। এড়াইতেই চাইছি। কোর্সের পরে কোন যোগাযোগও রাখি নাই।…
পরে যখন বই-পত্র পড়ার পাশাপাশি বই-ছাপানোর ব্যাপারে যখন ইন্টারেস্টেড হইছি, তখন উনার কথা মনে হইছে। একটা পাবলিকেশন হাউজ খালি একটা বিজনেসের ঘটনা না, সোশ্যাল-পলিটিক্যাল ঘটনাও। এইটা যে কোন বিজনেসের ব্যাপারেই সত্যি। বিজনেস এক্টিভিটির ভিতর দিয়াই সোসাইটি চলে, কে কি বিজনেস করতেছেন, কেমনে করতেছেন, এইগুলা সোসাইটির কোর ঘটনা। মহিউদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশে বইয়ের ব্যবসারে একটা বিজনেস এক্টিভিটি হিসাবে এস্টাবলিশ করতে পারছিলেন। এইটা বাংলাদেশে খুবই বড় একটা ঘটনা।
উনি যেইভাবে বইয়ের বিজনেস করছেন, অইটারেই আমি মডেল মনে করি না। কিন্তু উনি একটা এক্সাম্পল ক্রিয়েট করছেন। এইটা যে কোন বিচারেই মনে রাখার মতো একটা ঘটনা। মুক্তধারা’র চিত্তরঞ্জণ দাশ আর ইউপিএল’র মহিউদ্দিন আহমেদের বাইরে আর খুব বেশি নাম আমরা হয়তো নিতে পারবো না।
এইটা খালি একটা বিজনেস-বুদ্ধি’র ঘটনা না, বা একটা ভিশন থাকাও না; বরং দুইটা জায়গাতেই কোন স্যাক্রিফাইস না কইরা একভাবে মিলাইতে পারার ঘটনা। মহিউদ্দিন আহমেদ নিজের জন্য এই দুইটা জায়গারে কোন না কোনভাবে কিছু দূর পর্যন্ত মিলাইতে পারছিলেন বইলাই আমার ধারণা। আর এইটা বাংলাদেশের জন্য ছিল ভালো একটা ঘটনা। ফি আমানিল্লাহ!
Latest posts by ইমরুল হাসান (see all)
- পলিটিকাল ডাইরি – ২০২৪ (দুই) - সেপ্টেম্বর 17, 2024
- পলিটিকাল ডাইরি – ২০২৪ (এক) - সেপ্টেম্বর 4, 2024
- ধর্ম প্রশ্নে পুরান কমিউনিস্টদেরকে ইনডেমনিটি দিতে চাওয়াটা অনেকটা ইন্টেলেকচুয়াল অসততার ঘটনা: ফরহাদ মজহারের ‘মোকাবিলা’ (২০০৬) বই নিয়া আলাপ - আগস্ট 9, 2024