নিসিম এজিকিয়েলের ভারত দর্শন
নিসিম এজিকিয়েল নামের এক কবির বসতি ছিল ভারতে। ইংরাজি ভাষায় লিখতেন। সাবকন্টিনেন্টের মেবি একমাত্র ইহুদি কবি! তাঁর সম্প্রদায়ররে ‘বেনে ইজরাঈল’ বইলা ডাকত স্থানীয়রা। মানে বোম্বাই থেইকা মুম্বাই হওয়া পাবলিকরা, যেই শহর’রে কবি নিজের বইলা ভাবতেন। তাঁর কাব্যের যেই তালা, তা ভাঙতে, কম্যুনালি উনি যে মাইনোরিটি, সেই পরিচিতিটা সামনে রাখবো আমরা। হিন্দি, সংস্কৃত বাদ দিয়া কবির ইংরাজিতে সাহিত্যচর্চার অদম্য বাসনার হেতু মাথায় রাখতে হবে। মানে, ভাষা চয়েজ তো কবির সচেতন কাজ, ফলে পলিটিক্স ও কালচার নিয়া নানান বুঝাপড়া এমবেডেড হইয়া থাকে, থাকবে ওইসব ডিসিশনে। উনি কি লেইখা কার কাছে পৌছাইতে চান’, এর জওয়াব মিলাইতে গেলে আমাদের দরকারি কাজে আসতে পারে আরকি!
রামায়ণ, মহাভারত না ছুইয়াও যে প্রমিনেন্ট ভারতীয় কবি হওয়া যায় তার মেছাল হইয়া রইবেন ইনি! উনার কবিতার সহযোগিতায় লইয়া আমরা উনার দর্শন নিয়া আলাপ করবো। তবে তা করতে গেলে ব্যাপারটারে একটা শিরোনামে ঢুকানো তো টাফ, ফলে আমাদের কাছেও যেই জিনিসটা চোখা লাগতে পারছে, সেইটারে ধইরা নিয়াই আমরা নাম দিলাম একটা, ভারত দর্শন।
নিসিম এজিকিয়েল টিপিক্যাল ইন্ডিয়ান কবি ছিলেন না। এই কথার শানে নুযুল বুঝতে হলে আপনারে দেখতে হবে উনার বেড়ে উঠার সময়কাল। দেশভাগ বা নিজদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় উনি টগবগা জোয়ান কবি! ইউরোপের হিউম্যানিজমে উনার অগাধ আস্থা। ‘অন্ধকারাচ্ছন্ন’ ভারতে চেরাগ জ্বালার পশ্চিমা নবুয়তি সীল ফেইড হইয়া থাকে তেনার কলমে! যদিও প্রাথমিক পাঠে উনারে জনরার বিচারে ভারতীয় (দর্শনার্থে) বইলা ভ্রম হয়।
উনার ম্যাগনাম ওপাস কাব্যগ্রন্থ হইতেছে, দ্য এক্সেক্ট নেইম। ওই বইয়ের কবিতার বাইরে আমরা কানপড়া দিবো না। ইন্ডিয়ান ইংলিশ লিটারেচারের গুরুত্বে পূর্ণ কিছু কবিতারে বিশ্লেষণ কইরা তেনার ভাবের তালা ভাঙবার স্বার্থে চাবিকাঠির কোন খোঁজখবর পাওয়া যায় নাকি, দেখার কোশেশ করি।
‘নাইট অব দ্য স্করপিয়ন’ বা ‘বিচ্ছু রাইত’ নামের এক কবিতা দিয়া শুরু করা যাক। পইড়া আপনে আবেগে ভাইসা না গেলেও জোয়ার অন্তত টের পাইবেন এর! কবিতাটা গল্পের আদলে তৈয়ার করা। মানে, কবি অটোবায়োগ্রাফিকাল কলমে ফিকশনাল একটা কাহিনী বর্ণনা করতেছেন। এইটা পড়তে গিয়া বব ডিলানের ‘দ্য ব্যালাড অব ফ্রাঙ্কি লি এন্ড জুডাস প্রিস্ট’ গানটার কথা মনে পড়তে পারে, 🙂 নো অফেন্স। তো, কবিতাটায় ন্যারেটর বলতেছেন, এক ভয়াবহ বাদলা রাতের কথা। যেই রাতে তার আম্মাজান এক বিষাক্ত বিচ্ছুর কামড়ে প্রায় মূর্ছা গেছেন। তো, এই ঘঠনায় পাড়াপড়শি, তাহার শ্রদ্ধেয় পিতাজান, স্থানীয় বৈদ্য এবং শেষে মায়ের কমেন্টারি কি কি ছিল, কবি তার নির্মোহ বর্ণনা দিতেছেন। কবিতাটার রন্ধ্রে রন্ধ্রে আইরনি, মকারির লেয়ার অল্প মনোযোগেও চোখে পড়ার মতো। এই ব্যাপারটারে বাদ দিয়া গেলে কবিতাটা আমরা যেই এনালিসিস দেখাব তার বিপরীত কোন বুঝাপড়া তৈয়ার করবার পারে। তাই আমরা উনার ফিলোসফি, বেড়ে উঠা ও নানান কবিতায় তেনার অটোবায়োগ্রাফিকাল চালচলনের খোঁজখবর দেবার চেষ্টা করবো। এতে বুঝা যাবে, কেন বা কিভাবে তেনার পক্ষে একজন নারী বা মায়ের কাল্পনিক যন্ত্রণায় ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্ট, কমলা দাসের ভাষায় ‘রুথলেস ওয়াচার’, বা ডিটাচড অবজারভার হওয়া সম্ভব হইয়াছে। এবং এতে কবিতার সমাপ্তিতে উনার সিরিয়াস (আইরনি মুক্ত আরকি) বর্ণনা উনার কমেন্টারিরে মকারিতেই পর্যবসিত করলো।
কৃষক পরিবারের পড়শিরা আইসা বিচ্ছু কর্তৃক আহত (জীবন্মৃত) মা’রে সিম্পেথি জানায়া যাইতেছে। যে যার যার খোদার নাম জপে জপে বিচ্ছুর পরানে করুণা সৃষ্টি করবার কোশেশ করতেছে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হইতেছে না। এভাবে নানান কায়দা কইরা সফল না হওয়ায় তেনারা নয়া এক জিনিস আবিষ্কার করলেন, পুরানা পাপ! ভিক্টিমের আগের জন্মের পুরানা পাপের জাগতিক প্রায়শ্চিত্ত হইতেছে আসলে, মত দিতেছেন তারা। পাশাপাশি বিচ্ছুটারও একটা জাগতিক বিহিত করবার জন্যে তারা অনেকগুলা লণ্ঠন আনাইলো, রাতের মেটাফোরের বিপরীতে আলোর মতো, তবুও কিছুতেই কিছু হইতেছে না। এবার কথকের বাপের পালা, তিনি একজন যুক্তিবাদী এবং বিজ্ঞানমনষ্ক লোক। ফলে কৃষকগোষ্ঠীর লোকাল চিকিৎসায় তিনি বেজার। কিন্তু তেনার এনলাইটেন্ড দেমাগও তো পুঁছতেছে না বিচ্ছু! এজন্যে পাশে শ্লোক আওড়ানো বৈদ্যের কাজেও কোন গ্যাঞ্জাম লাগাইতেছেন না তিনি, মশকরা করতেছেন কবি। বারো ঘন্টা পর, মায়ের যন্ত্রণা কমে, আপনাআপনিই বিষ নাইমা যায়! আইরনি পাকাপোক্ত হইতে না হইতেই খুশি হইয়া উঠেন মা, এবং খোদাকে থ্যাংকস জানান, কারণ তার উসিলায় তিনি তার সন্তানদের তো মুক্তি দিছেন অন্তত! এই ছিলো গল্প, কবিতাটায়। নামটাতে খেয়াল করেন, রাত হলো অন্ধকারের ইমেজ, আবার বিচ্ছু হলো খারাপ, ইভিল। ওই খারাপ আন্ধারে কথকের মা ভোগান্তির শিকার হবে। মানে, মায়ের সাফারিং ওই অন্ধকারটারে হাত বুলাইতে বুলাইতে আলোকিত করবে যেন! শেষে ভারতীয় মা-সুলভ প্রার্থনা দিয়া কবিতা শেষ হলো, এনলাইটেন্ড প্রজেক্টে ইন্ডিয়ান সেক্যুলারজিমের ইন্টারভেনশন বলবেন নাকি এটারে অথবা বলা যাইতে পারে ইংলিশ কবির ইহুদী দেমাগ!
কবির জীবনটারে কাব্যকাহিনী দিয়া মিলাইতে গেলে আপনার স্মরতে হবে শেক্সপিয়রের কমেডি ‘এজ ইউ লাইক ইট’রে! যেইখানকার এক ক্যারেক্টার জ্যাক বলেন জীবনের সাতটা স্টেজের কথা, ওইখানেই মূলত পুরা দুনিয়াটারে ধরা হইছিল রঙ্গের মঞ্চ হিসাবে! তো, নিসিম এজিকিয়েলের বেড়ে উঠারে আপনে এইখানে ফেলাইতে পারবেন ‘ব্যাকগ্রাউন্ড ক্যাজুয়ালি’ নামের আরেক কবিতা দিয়া! উপরের কথা মতো, এটাও একি কাব্যগ্রন্থের।
গরিব ও ইহুদি হইয়া জন্মান বইলা জানাইতেছেন কবি, সেই হিসাবে এটারে আত্মজৈবনিক কবিতা বলা যায়। স্কুলে যাওয়ার বয়সে ‘Mugging Jew’ হিসাবে ভর্তি হন রোমান ক্যাথলিক স্কুলে। যেখানকার খ্রিষ্টান স্টুডেন্টরা তাঁরে যীশুখ্রিষ্টের খুনী হিসাবে চিহ্নিত করে! কারণ ইহুদীদের ষড়যন্ত্রেই তো যীশুরে দেহত্যাগ কইরা ভক্তদেরো অরজিনাল সীনের প্রায়শ্চিত্ত করতে হয়!
I went to Roman Catholic school,
A mugging Jew among wolves.
They told me I had killed Christ,
That year I won the scripture prize…
A Muslim sport man boxed my ears.’
মকারি হিসাবে কবি বাইবেলের এক এক্সামে সেরা স্টুডেন্ট হিসাবে পুরস্কার জিতেই থামেন নাই, ভাস্কর্য নির্মাণে পুরষ্কার পান বইলা জানাইতেছেন। ভুইলা যাইয়েন না যে, প্রতিযোগিরা সবাই ছিল খ্রিস্টান পোলা-মাইয়া। তথাপি, এরপরে মুসলমান, হিন্দুর পোলারাও তেনারে টিজের উপর রাখতেন বইলা জানা যাইতেছে।
The Indian landscape sears my eyes
I have become a part of it
To be observed by foreigners’
সো, পকেটে ছুরি রাখা শুরু করেন কবি, সেল্ফ-ডিফেন্সের স্বার্থে। ইয়োগা আর ধর্ম প্রচারে ব্যর্থ হইয়া, টেকাটুকা ধার কইরা তিনি বিলাতে যান উচ্চশিক্ষা নিতে।
Philosophy
Poverty and Poetry three
Companions shared my basement room.’
সেখান থেইকা ইংরাজ জাহাজে ফ্রেঞ্চ গোলাবারুদের লগে প্যাসেঞ্জার হইয়া বোম্বে ফিরা আসেন তিনি। বিয়া করেন। রিয়েলাইজ করেন যে, বলদ বইনা গেছেন! সেকেন্ড ওয়ার্ল্ডওয়ারের ডর এড়াতে কবিতা চর্চা শুরু করেন কবি। তো, এই ছিল কবির স্বীকৃত জীবনালাপ। তাইলে দেখা যাইতেছে, কবি একপ্রকার বিচ্ছিন্নতাবোধে আক্রান্ত হইছিলেন। কারণ হিসাবে জানাইতছেন, সবাই ‘ইহুদি’ বইলা তাঁরে ‘আদার’ কইরা দিতো। বিলাতে প্রতিষ্ঠিত হইবার না পারলেও ‘সভ্যতা’ শিইখা আসেন। এবং সভ্য’কেন্দ্রিক সেইসব চিন্তাধারা কবিতার গাঁয়ে সেঁটে দেন। এভাবে তেনার কবিতায় নেটিভ ইনফর্মারের কারুকাজ রাইখা দেন কবি।
তাইলে, ‘বিচ্ছু রাইত’এ আসা যাক। হুশ ফেরা মাত্রেই মা তাঁর সন্তানে খোঁজখবর নেয়া শুরু করছেন। খোদারে থ্যাংক্স দিতাছেন তাঁর পুত্রধনরে ওই আজাবে না ফেইলা, খোদ নিজেরেই ফেলাইছেন বইলা।
তো, চোখা নজরে যদি আপনি কবির বক্তৃতা খেয়াল করেন তাইলে দেখবেন কবি সবধরনের ‘আবেগ’ থেইকা নিজেরে দূরে সরায়া রাখছেন, বিলাতি ডিগ্রী মনে হয় যা কিছু ইন্ডিয়ান সবকিছুর থেইকা তফাতে থাকতে হবে এরাম বুঝ দিছে তেনায়! মানে ইন্ডিয়ান মাম্মির পোলা হইয়া না, ঘঠনা অবজারভেশন করতেছেন সাংবাদিকসুলভ ‘আত্ম’বিচ্ছিন্ন দর্শক হইয়া! ইভেন মায়ের যন্ত্রণায় করুণাময়ী পিতার অযৌক্তিক মন্ত্রপাঠের কথা বইলা মশকারা করতেছেন! যে, বাপরে তো যুক্তিবাদী স্কেপটিক হিন্দু হিসাবেই তো জানতাম! অথচ ইন্ডিয়ায় আয়ুর্বেদ নামের জীবন-বিদ্যার সিলসিলা ছিল বা আছে ভারতের, অথর্ববেদ এর যে অংশে ডাক্তারি আছে তা-ই আয়ুর্বেদ। বৌদ্ধ গুরু ও মুসলিম সুফিদের মেডিটেশন নিয়া ঘাঠলেও মডার্নিস্ট সাইকোলজিস্টদের কোর মালমসলার সন্ধান পাইতেন কবি, যেইগুলায় ইউরোপ বা মডার্নিটির সীমাহীন আস্থা। কিন্তু কবির এনলাইটেন মন তাতে সায় দেয় না। ধরলাম সায় না দেয়াটা যৌক্তিক, পোস্ট-কলোনিয়াল চিন্তা নিয়া বুঝাপড়ার সিলসিলা পান নাই ধইরা বেনিফিট অব ডাউট দিলাম ধরেন, কিন্তু ছকরাতের মুহুর্তে কবির চেরাগি ফীলিংস কিসের বার্তা দেয় আমাদের!
গ্রামবাসীর বিপদে ঝাপাইয়া পড়াটারে নিয়াও ব্যঙ্গ করতেছেন কবি। কইতে চাইতেছেন যেন, এক বিচ্ছু কামড়াইছে, আরো সহস্র বিচ্ছুর কেন বিষ নামাইতে ছুইটা আসতে হবে! পাবলিক বা আমজনতারে এজেন্সি লেস মনে করার সেই পুরানা ব্যারাম, প্লেটোর আগে থেইকাই চলতেছিল মনে হয় ওই সিলসিলা। কিন্তু গ্রামের ওই কিষানদের তো এক্ট করার ক্ষমতা ও ইচ্ছা দুইটাই আছে। নিজের ন্যারেটিভ নিজে বানিয়ে য়ুরোপীয় নন্দনতত্ত্বের এলিটি কানপড়া না নিতেই পারে। বোঝা যাইতেছে, ভারতীয় সোসাইটির গড়নে তেনার সাপোর্ট নাই, মনে পইড়া আছে য়ুরোপীয় ক্লিনিক ও তার সাইন্সের কাটাকাটিতে। অথচ চেরাগরাও নিজেরার ভিতরের যেই বন্ডিং তার রোগ থেইকা বাঁচতে ও নিজে সারতে কামে লাগান! তাছাড়া এই যে তথাকথিত কুসংস্কার কিম্বা চিকিৎসার আলো, তার পয়গামে সাড়া না দেয়াতে ওই কৃষকগোষ্ঠীর ব্যর্থতা টাইপ কিছু বুঝা যায় না তো। বরং এইটা নিসিম এজিকিয়েলদের মতো চেরাগদের ব্যর্থতা যে তাদের নিজের দলে আনা যায় নাই, কিম্বা কায়দা করে আমরা বলবো, তা’ই হইতেছে ইমাজিন্ড ইন্ডিয়ান পাবলিকের পলিটিকাল বা কালচারাল কনশাসনেস, যে, আমরা ইন্ডিয়ান ডার্কনেস লইয়াই থাকবো। কারণ ওইটাতে তারা ইম্প্রেসড, যদি সায়েন্স বা মডার্ন মেডিকেলের ব্যাপারে পাবলিক’রে কনভিন্স করাইতে হয় তাইলে তো কাজ বাড়ে, এজন্যে মনে হয় কবি মেটাফোরের সাহায্য নিয়া গাইল দিয়াই সইরা দাঁড়াইছেন..
ইন্ডিয়ান রিচুয়ালসগুলারে নিয়াও মশকরা করতাছেন কবি! সাফারিংয়ের পর মহাসুখের সম্ভাব্যতায়ও সন্দেহ। যখন গ্রামবাসীর বলতাছেন,
May the sum of all evil
balanced in this unreal world
against the sum of good
become diminished by your pain.
May the poison purify your flesh
of desire, and your spirit of ambition,
they said, and they sat around
on the floor with my mother in the centre,
the peace of understanding on each face.’
যেন ট্রাই করতাছেন বিপুলা হাসি দিয়া তথাকথিত ‘আধ্যাত্মিকতা’ ছুটাইতে!
আরেকটু বাড়ায়া ভাবি চলেন, খোদ ‘বিচ্ছু’ নিয়াই! ‘বিষ নিজে থেইকা নাইমা যাবে’র মতো প্লট ইউজ করাটারে সন্দেহ করা যায় তো। গ্রামবাসী আর পিতার ইগারনেস’রেই যেন নাই করে দেবার ধান্ধা তা! নাইলে সাপ বা বিষ না নামে মতো প্রাণীই কেন কামড়াইলো না পরানের আম্মাজানরে! তাইলে তো মায়ের মরণে তেনার শোকাহত কলম চেরাগের আলো জ্বালাইতে পারতো না, কিসব বেদ ও সোসাইটি লইয়া কি আর্টে অতো রোশনাই আসে! মানে বলতে চাইতেছি, কবির ইমাজিনেশন বা মেটাফোরের ব্যবহার অরাজনৈতিক না, এরও পলিটিক্স আছে, কালচারালি তার স্বরূপ কিরকম হইতে পারে তা বলার চেষ্টা করলাম এতক্ষণ।”
শেষ স্ট্যাঞ্জাটা খেয়াল করেন,
My mother only said
Thank God the scorpion picked on me
And spared my children.’
কবির জীবনদর্শন মাথায় রাইখা এইটারে বিশ্লেষণে নামলে আরো আইরনি টের পাইতে পারি আমরা। চোখা নজর না দিলে মনে হবে, এখানটায় টিপিক্যাল ইন্ডিয়ান মা’দের মাতৃত্বের জয়গান করা হইতেছে। কিন্তু এইখানে কবি ইঙ্গিত দিতে চাচ্ছেন, ভারতীয় মায়েরা এভাবেই বাধ্য থাকেন সন্তানের প্রতি ভালোবাসা দেখাইতে। বিশঘন্টা পর হুঁশ ফিরলেও সোসাইটির কাছে শে দায়বদ্ধ তাঁর নির্ধারিত কর্মের ফলানিতে! ওয়েস্টার্ন ফেমিনিজমের কপি-পেস্ট প্রিচিং টের পাওয়া যাইতেছে কিন্তু, দেখেন! মানে, এইভাবে মায়েদের মহান রূপে চিত্রিত কইরা ইন্ডিয়ান পুরুষতন্ত্র জুলুমে নামেন। খেয়াল করলে দেখবেন, ধনী বা দরিদ্র, হিন্দু বা মুসলিম যাহাই হোক এই সাবকন্টিনেন্টে মহিলারা খাইতে বসে সবার শেষে এবং পায় সবচাইতে কম খাবার। এ যেন মহান কইরা নারীর মাতৃরূপ দেখাইয়া নারীর প্রতি নীরব হিংস্রতার কাব্যিক উপস্থাপন! মানে, সোসাইটি কবির আম্মার ব্যারাম থেইকা বেশি আগ্রহী পোলাদের প্রতি তাঁহার দরদে। কিন্তু এইখান কথা আছে। পশ্চিমের মত ইন্ডিয়ান সাবকন্টিনেন্টের নারীবাদকে একি পাল্লা দিয়া মাপলে তো হবে না। লোকালিটিরে পাত্তা দিতে হবে। যেমনে এইখানকার ফেমিনিজম ওয়েভ দিয়া ভাগ করা সম্ভব না। ফলে কবির ফেমিনিজম কপি-পেস্ট, স্বোয়াহীহ ফেমিনিজম প্রচার করবার গিয়া তিনি স্থানীয় মাইয়াদের হিস্ট্রি নাড়াচাড়া করেন নাই, নাইলে চিপকোর মতো কতো শতো ইকো-ফেমিনিজমের হদিশ যে পাইতেন! কিন্তু তাতে তো তেনার সেক্যুলার মডার্ন আর্টি সিলসিলা তৈয়ার করতে কষ্ট হইতো কম, এই বেদনার ভার কেন নিবেন একজন কবি (🙂)!
গুডবাই পার্টি ফর মিস পুষ্পা টি.এস’ পড়ার পরামর্শ থাকলো, যেইখানে কবি আজকে যেইটারে আমরা ইন্ডিয়ান একসেন্ট বলি তা নিয়া ঠাট্টা করতেছেন। ‘লর্ড অব ওয়ার’ নামের একটা সিনেমার কথা মনে পরলো। যেইখানকার হিরো আফ্রিকান এক ওয়ার লর্ডের ইংলিশ প্রেইজ ঠিক কইরা দিতে গেলে সে বলতো, আমি যেইভাবে বলছি ওইভাবেই বলবো কারণ ওইটা ‘মাই ওয়ে’..। এই জায়গায় বাঙলাদেশের কায়সার হকের কথা বলা যায়, কারণ একি জিনিস তিনি ‘সিভিল সার্ভিস রোমান্স’ নামে করছেন, কিন্তু এজিকিয়েলের মতো আগলি হয় নাই। কারণ হক মকারি করছেন গভমেন্ট এমপ্লয়িদের, যারা কলোনিয়াল ল্যাঙ্গুয়েজের দরখাস্ত ফরমেট কপি-পেস্ট কইরা জীবিকা না শুধু পিরিতিও চালাইতে চাচ্ছিলেন।
গুরু নামের আরেক কবিতায় আশ্রমের ভন্ডামি তুইলা ধরতে দেখবেন। যেখানে সাধু আধ্যাত্মিকতায় ততটা আগ্রহী না যতটা ভোগের দরকারে! ওই যে, ইন্ডিয়ান লালসালু আরকি! তাতেই থাইমা নাই কবি, ইন্ডিয়ানদের ইংরাজি না জানাটারে তথা রেগুলার টেন্সের ভুল করাটারে মকিং করতাছেন! ‘গুড বাই পার্টি ফর মিস পুষ্পা’ উল্টায়লেই পাইবেন। অথচ ওইসব ভুলরে সিগনেচার বানায়া এক কিসিমের ইন্ডিয়ান ইংলিশ প্রস্তাব করবার পারতেন কবি এজিকিয়েল 🙂!
ভারতের পপুলেশনরে অভিশাপের নজরে দেইখা দুর্ভিক্ষপীড়িত এক কৃষকের জবানে কহান,
I have eleven children,
Two I have left to the mercy of God.
The rest are begging, somewhere.’
অথচ আর কিছুদিন হায়াত পাইলে কবি দেখতেন, পপুলেশনরে পপ ওয়েলথ বানায়া শাইন করতেছে কতো কতো রাষ্ট্র!
সিলভিয়া প্লাথ, এলেন গিন্সবার্গদের লগে প্রম বিষয়ে কবির বুঝাপড়ার পরিচয় মিলে। ও হ্যা! আছেন, ইন্ডিয়ান কমলা দাস।
“Did you enjoy it? No? You have
To love the other person, then you do.
Never mind, you love my breasts, thighs, Buttocks, don’t you? Of course, you do
It’s ok, you know, and I love
Your body too, is though you are hardly
my cup of tea.’‘
ইউরোপের হইয়া ভারতরে আক্রমণের শেষ আরেকটা মেছাল দিয়া শেষ করা যাক, In India ‘The non-drinker drinking, non-smoker smoking.’
তবে, ‘Naipaul’s India and mine’ নামের একক লেখায় আশ্চর্যজনকভাবে তাঁর শিল্প বা জীবনে ইন্ডিয়ার গুরুত্ব বোঝাইতে গিয়া কহেন, In the India which I have presumed to call mine, I acknowledge without hesitation the existence of all darkness Mr. Naipaul discovered to other countries where I am a foreigner. In India I am an Indian.’ কবিতায় কহেন, My backward place is where I am.’
তবে, তেনার সব আক্রমণ কি বাজে? না। একটা উদাহরণ নেন। কাশ্মিরের স্বাধীনতা যুদ্ধরে অমর কইরা রাখার পাশাপাশি কবি নিজের প্রেমের বয়ান দিতাছেন-
“To judge by memory alone
Our love was happy
When the bombs burst in Kashmir;
My life had hurts
and merged in yours
The war did not matter
Though we tried to care,
The season, time and place
Rejected their usual names.’‘
শেষে আইসা “ফিলোসফি” শিরোনামের ওই কাব্যের আরেকটা কবিতা দিয়া কবির সাথে একাত্মতা পোষণ করা যাক। যেইখানে কবি বলতেছেন, তিনি সায়েন্স ও ফিলোসফি উভয়ের মূল্য বুঝেন, কিন্তু তিনি এও বুঝেন যে পোয়েট্রি হইতেছে সবচে ভ্যালুয়েবল। কারণ, ওই দুইটা ক্লিয়ার-কাট জবাব দিতে আগ্রহী, একটা যুক্তির উপর ভর করে তো, আরেকটা ভর দেয় নির্মোহ গবেষণায়। কিন্তু এমন বহু কিছুর জবাব পাই না আমরা যেগুলার সমাধান পাইতে আমাদের মন স্ট্রাগল কইরা যায় রীতিমতো। ফলে, এমন কিছু দিয়া মনের ওইসব জবাব খুঁইজা বাইর করতে হয়, যেইটা অবচেতন বা অচেতনের কাছাকাছি দিয়া যায়। এভাবে ক্লিয়ার-কাট জবাব পাইতে পাইতে ক্লান্ত মন কবি পয়দা করে, যারা মিস্ট্রি-মাইন্ড-ন্যাচারের দরকারিসব ফর্মুলা বাইর করে। এবং কবি হইয়া উঠে আরো গুরুত্বে পূর্ণ সায়েন্টিস্ট বা দার্শনিক! যেহেতু হিস্ট্রি ও কালচারের সাথে কবির হিউম্যান আনকনশাস বা সাবকনশাস নিয়া অভিযান চালাইতে হয়, সেহেতু তার বাখোয়াজি পঙক্তিও বাখোয়াজি না, ফিউচারের জন্য তুইলা রাখতে হবে, যদি আমরা সমাধানে যাইতে চাই, আমার ধারণা।
হামফ্রে বোগার্টের একটা সিনেমার রেফারেন্স দিয়া শেষ করি। আপনারা যদি উনার ‘পয়েম অব দ্য সেপারশন’ কবিতাটা পড়েন, অতি অবশ্যই ‘ক্যাসাব্লাঙ্কা’র কথা মনে পড়বে আপনার। কিন্তু কবিতায় আসল আছে কাশ্মীরের কথা..!
/সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৯
জোবাইরুল হাসান আরিফ
Latest posts by জোবাইরুল হাসান আরিফ (see all)
- লালসালুর মাজার ও টেক্সটবুকের রাজনীতি - সেপ্টেম্বর 7, 2024
- নিসিম এজিকিয়েলের ভারত দর্শন - আগস্ট 26, 2021
- ক্রাইমের পানিশমেন্ট ও দস্তয়ভস্কি - নভেম্বর 13, 2020