Main menu

বাছবিচার এডিটোরিয়াল আলাপ (২) : ইব্রাকর ঝিল্লী – জ্যাক দেরিদা ও আর্কাভাইজেশন

এইটা সেকেন্ড আলাপ আমাদের। জানুয়ারি ২ – ৩, ২০২২-তে করা হইছিল। এইটারও কিছু অংশ ট্রান্সস্ক্রিপ্ট কইরা নিচে রাখা হইলো। পুরা আলাপ শুনতে ভিডিও লিংকে ক্লিক করেন। শোনার জন্য হেডফোন ইউজ করলে বেটার।

ইব্রাকর ঝিল্লী:

গ্রামে এই কথা শুনবেন, এখনও, যে আমাদের মুরুব্বিরা কইত যে অমুক ধরনের লোকজনরে বিশ্বাস করতে নাই বা, রোগে শোকে এইটা কইরো বা, ঝড়বইন্যায় সেইটা কইরো বা, পোলা কেমন হইলে ভালো, মাইয়া কেমন হইলে খারাপ- মানে মুরুব্বিদের, বাপ দাদাদের উইজডম শেয়ার করতে দেখবেন। এইটা এখন কিছু কইমা আসছে বা, অনেকটাই ইনফরমাল হইয়া আসছে। আমাদের দাদা-দাদিদের মুখে এইটা আরও বেশি শুনা যাইত। এবং এগুলি মোটামুটি রুরাল এরিয়াতে প্রত্যেকের ভিতরেই ইকুয়ালি ছড়ায়ে যাইতে পারত। মানে রাফলি বলা যাইতে পারে প্রত্যেকেই ইকুয়ালি এডুকেটেড ছিল এতদবিষয়ে। আমরা যেমন শুনি, গেরামের লোকজন আনএডুকেটেড মূর্খ ছিল, এইটা আসলে আমরা মনে হয় ওই ইকুয়াল এডুকেশনরে ঘা দেয়ার চেষ্টা করি। এবং এইটা আমরা করি একটা মডার্নিস্ট পার্সপেক্টিভ হইতে। এইরকম একটা ভাইব আমাদের মইধ্যে আছে যেন আমরা একটা বিরাট জ্ঞান বা এডুকেশন। মানে আমাদের কালেক্টিভের জ্ঞানই আমাদের জ্ঞান। মানে জ্ঞান ছড়ানোর চেয়ে জ্ঞান জমা হওয়ার ব্যাপারটা জ্ঞানের ব্যাপার হইয়া দাড়াইছে। একাডেমিয়াতে, সোমাজে, রাষ্ট্রে যত বেশি জ্ঞান জমা হইতেছে, ততই যেন আপনে বা আমি জ্ঞানী হইতেছি। মডার্নিটির যে ইডিওলজিকাল ছক তার ভেতরে এই মেসেজ ইনগ্রেইনড থাকে।

তো দেরিদা কইতেছিলেন আর্কাইভাইজেশন নিয়া যে, ভুইলা যাওয়ার আরম্ভও হয় ওইখান থেকে। কীভাবে ভুইলা যাওয়ার আরম্ভ হয় আর্কাইভাইজেশন হইতে? এই কোশ্চেনটা আমার মনে হয় মডার্নিটির মেইক আপরে কোশ্চেন করতেছে। রেকর্ড কিপিং… মানে এক অর্থে একটা ওরাল ট্রেডিশন, যেইটা পুরাটাই টিকা থাকে জ্ঞান ছড়ায়ে দেয়ার মাধ্যমে জ্ঞানরে টিকায়ে রাখার ভিতর দিয়া, সেইটারে অচল বানায়া ফেলে। জ্ঞান যেহেতু তখন রেকর্ডের ভেতরেই টিকা থাকতে পারতেছে, তখন আসলে অতটা না ছড়াইলেও চলে। মডার্ন দুনিয়া মানে পুঞ্জিভূত জ্ঞানের দুনিয়া। এখন এইটা ভালো না খারাপ সেইটা বোঝার চেয়েও জরুরি মনে হয় এই এওয়ারনেসটা থাকা মডার্ন দুনিয়ার জ্ঞানের ব্যাপারে। মানে এইটা হয়ত এখন পসিবলই না, সকল জ্ঞানরে সমানভাবে সকলের কাছে পৌছায়ে দেয়া। কিন্তু প্রশ্ন সেইটা না, প্রশ্ন হইল মডার্নিটির মেইক আপটা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল না থাকলে মডার্নিটিরে ভুল বুঝবেন আপনে, কিছু ক্রাইসিস তখন ইনেভিটেবল। আমি মাঝে মাঝেই খেয়াল করি, ফেসবুক টেসবুকে পাবলিকরে কোশ্চেন করা হয়, ইজি ইজি, পাবলিক সেগুলি পারে না, তখন সেইটা খুব হাস্যকর লাগে। বিলাতেও এগুলি দেখা যায়, এমেরিকার লোকজনরেই জিগান হইতেছে এমেরিকার মাদার টাং কী? হেরা কইতেছে এমেরিকান। ইজি জিওগ্রাফির প্রশ্ন জিগানো হইল, পারবেনা। ওয়েস্টে এইটা মোটামুটি প্লেফুলি নেয়। সংকটটা খেয়াল করবেন আমগো মত দেশে, যেইখানে ডেভেলপমেন্ট, ডিজিটাল বাংলাদেশ, মডার্নিটি এগুলি প্রোপাগাণ্ডার টুলস হিসাবে ইdউজ হয়। জুলুমের প্রিটেক্সট। বাংলায় খেয়াল করবেন, ‘অত্যাধুনিক’ বইলাও একটা চালু শব্দ আছে। বাংলাদেশে এই রকম কয়েক বছর আগে রেন্ডম পিপলরে জিগানো হইতে বাংলা বার মাসের নাম, সাতজন বীরশ্রেষ্ঠ’র নাম, জাতীয় সংগীত, বাংলা বর্ণমালা এইসব। এগুলি আবার এই দেশের নিউজের কন্টেন্ট হইত যে দেখেন এইসব প্রশ্নের উত্তরও এরা পারেনা! আফসোস! মানে মডার্ন রাষ্ট্রে যে জ্ঞানের পাহাড়, আধুনিক রাষ্ট্র মানেই তো জ্ঞানের শাসন তাতে রাষ্ট্র সম্পর্কিত যে বেসিক জ্ঞান, যেই জ্ঞান দিয়া আপনের মগজ ওয়াশ কইরা রাষ্ট্র গিলানো হবে আপনাকে পরতিনিয়ত, তাই লোকে পারতেছে না! এইটা তো মানা কষ্ট! এই নিয়া দেখতেন যে খুব ক্ষেপ আক্ষেপ চলতেছে।

 

 

এই আক্ষেপটাই হইল মডার্নিটির কনস্ট্রাক্টটা না বোঝা। এবং আমাদের বুঝতে হবে মডার্নিটির কনস্ট্রাক্টটা বোঝা আসলে মডার্নিটির ঘটনাও না। যেই ইন্টেলেকচুয়াল প্রসেস ধইরা আপনে এইটা বুঝবেন সেইটাই হইল পোস্টমডার্নিস্ট ধারা। পোস্ট মডার্নিজমরে কওয়া যায় মডার্নিটিরে বোঝার একটা লিটারারি-ইডিওলজিকাল ডিভাইস। মডার্নিটি যে প্রগ্রেস, নলেজ এইসবের কথা কয়, মডার্ন দুনিয়ায় বাস করা লোকজনের সাথে যে এর গ্যাপ আছে, এইটা বুঝানো হইল একটা হোল আদার ডিসকোর্স। যেইটারে আমরা পোস্ট মডার্নিজম বলতে পারি। পোস্টমডার্নিস্ট হওয়ার কিছু নাই আসলে। অনেকেই দেখবেন খুব শুন্য শুন্য ভেক ধইরা থাকে। পোস্ট মডার্নিজমের ঘটনাটা আসলে এমন না যে আমরা কিছু জানি না, বা আমরা যে জানি না সেইটা জানতে পারার জ্ঞান নিয়া থাকা। এইটা আমার কাছে মনে হয়, ইন্ডিভিজুয়াল আর ইনস্টিটিউশনের ফ্র‍্যাকচারের জায়গাটা বুঝতে পারা। মডার্নিটির ল্যান্ডস্কেপটা ধরতে পারা। মডার্নিটি হইল পদ্মা সেতুর মতন, ট্রলার লইয়া যে পদ্মা সেতু দেখতে যাইতেছে লোকে, পদ্মা সেতুর এই রিপ্রেজেন্টেশনটাই মোর পদ্মা সেতু। প্ল্যানিং মিনিষ্টার মনে হয় বলছিল এইটা রাতশেষে যে আমরা বড়লোক হইয়া যাইতেছি এইটা বুঝতেছিনা আমরা। আসলেই তো, বড়লোক হওয়ার যে সুবিধাবলী সেইটা তো পাইতেছেন না, তাইলে সেইটা তো টের পাওয়ার কথাওনা! কিন্তু মডার্ন রাষ্ট্র যেমন জ্ঞানের পুঞ্জিভূত হওয়াটারেই জ্ঞানের ছড়ানো মনে করে, টাকা কড়িরও পুঞ্জিভূত হওয়াটারেই টাকার ছড়ানো মনে করে, সে মোট টাকারে ষোল কোটি দিয়া ভাগ দিয়া পার কেপিটা ইনকাম দেখায়ে দেয়। কিন্তু আপনে তো টের পাইতেছেন না আপনের ইনকাম অতটা, মডার্নিটি কইবে আপনে রিচ হইয়া গেছেন জাস্ট টের পাইতেছেন না। এই টের না পাওয়ার ঘটনাটাই হইল মডার্নিটির কোর ক্যারাক্টারিস্টিক। পোস্ট মডার্নিস্ট টুল দিয়াই আপনে বুঝতে পারবেন মডার্নিটির যে কোন প্রোপাগাণ্ডার আন্ডারলাইং মেসেজটা যে, রিচ এক জায়গায় আছে, সেইখানে আপনের একসেস নাই; জ্ঞান এক জায়গায় আছে, কিন্তু আপনে সেইখানে নাই। এবং আপনে যেইখানে আছেন অনেকেই সেইখানেও নাই। কিন্তু মডার্নিটি বলতেছে সবাই আপনেরা একই রকম মডার্ন, ফলে কেউ যখন কোন কিছু পারতেছে না বা জানতেছে না তাতে খুব টাশকিও খাইতেছেন। রক মনুর মনে হয় এইরকম কথা আছে, সব যুগেই মধ্যযুগীয়, আধুনিক ইত্যাদি লোকজন থাকে। মডার্নিটির এই মেইক আপ এর কারণেই মনে হয় আপনে যেই খানে আছেন সেইখানে সবাই আছে; কিন্তু দেখা গেল আপনে খোদই সেইখানে নাই। আপনের মডার্ন দীক্ষার কারণেই, নিজের অবস্থান সম্পর্কে যেমন জানতেছেন না, তেমনে আপনে মডার্নিটির মার্জিনের ভেতরে যারা নাই তাদেরও দেখতে পাইতেছেন না। তার মানে এই না যে তারা নাই, তার মানে হইল তাদের রিপ্রেজেন্টেশন নাই। এবং যাদের রিপ্রেজেন্টেশন আছে তাদের আবার রিয়েলিটি কম্প্রোমাইজড। রিপ্রেজেন্টেশনটাই তো রিয়েলিটি না। সুতরাং মডার্নিটি যে এক এস্কিউড অবস্থা এইটা বোঝানো হইল পোস্ট মডার্নিজমের কাম। যেটা দেরিদা বলতে চাইছেন যে ভুইলা যাওয়ার আরম্ভও হইছে ওইখান থেকে, মানে আর্কাইভাইজেশন যে জ্ঞানের রিপ্রেজেনটেটিভ হইয়া উঠছে সেইখান থেকেই ভুইলা যাওয়া শুরু। এখনো দেখবেন যেইখানে জ্ঞানের লেনাদেনা আছে সেইখানে ওরাল ট্রেডিশনটারে নিতে হইছে, টিচারের লেকচার লাগে এখনো। পশ্চিমা দীক্ষা আপনেরে বলতে থাকবে ওরাল সিলসিলাটা সাস্টেইনেবল না। কিন্তু বুঝতে হবে বলাবলির জায়গাটা সবসময়ই ইম্পর্টেন্ট, এইটাই আল্টিমেটলি পাবলিক ইমাজিনেশন তৈরি করে।

তো এর বিপরীতে পোস্ট মডার্নিস্ট হইয়া যাওয়া বলতে একটা ব্যাপার আমরা দেখতে পাই। তখন না জানতে পারাই একটা ঢং, গরীবি তখন হইয়া উঠতে পারে একটা এস্থেটিক ঢং। এইভাবে পোস্ট মডার্নিস্ট হইতে পারে। এইটা স্রেফ লাইফস্টাইল বা মতাদর্শের মামলা না। যে কারণে আমি বলছিলাম এর আগে একবার যে ফেমিনিস্ট, বা মার্ক্সিস্ট বা এনার্কিস্ট হওয়া প্রবলেমেটিক। মানুষের কামে লাগানোর থেকে তখন ইম্পর্টেন্ট হইয়া দাঁড়ায় এগুলির মান রক্ষা করা। আবার এগুলির যে থিওরেটিকাল কনস্ট্রাক্ট সেগুলিরে ডিনাই করারও কিছু নাই। জেমস বল্ডউইনের এক ইন্টারভিউতে উনি বলতেছিলেন যে, কালোদের ভেতর রেপিস্ট, এডিক্ট, ক্রিমিনাল সবই আছে, সমস্যা হইল এগুলিরে ব্ল্যাকদের এক্সক্লুসিভ ট্রেইট বানায় ফেলা। যেন সমস্যাটা হইল কালো হওয়া। কালো হইছে বইলাই এরা রেপিস্ট হইছে। এইসব জিনিস এড়াইতেই আমার মনে হয় ফেমিনিজম, এনার্কিজম, পোস্টমডার্নিজম এগুলির থিওরেটিকাল বেইজটা ইম্পর্টেন্ট। এই বেইজগুলা স্ট্রাকচারাল জুলুমগুলির ট্রেডিশনাল বেইজরে নিউট্রালাইজ করতে পারছে। স্টেরিওটাইপগুলি ভাংতে পারছে। ফলে ধরেন অপরাধ কমাইতে কালোদের ওপর জুলুম বাড়ানোর স্ট্রাটেজি এখন ভুল বলতে পারি আমরা। এবং এই থিওরেটিকাল কনস্ট্রাক্টগুলি এখনো দরকার আছে। কিন্তু ভুইলা গেলে চলে না যে, নয়া হেজেমনি হিসাবে এগুলির প্রতিষ্ঠা জুলুমের নতুন বেইজ তৈরি করে। সুতরাং সেন্টারটা হওয়া দরকার মানুষের ওয়েলফেয়ার; তাতে কোন ভাবাদর্শ, মতাদর্শের ইজ্জত গেল তা নিয়া পইড়া থাকলে চলবে না; ইন ফ্যাক্ট এই অ্যাবস্ট্রাক্টগুলির যে কনস্ট্রাক্ট করছি আমরা, যাতে এগুলির অপমান হইলে মানুষের গায়ের উপর দিয়া না যায়।

দেরিদা এই কথাগুলা বলতেছিলেন ইসরাইলে, ইয়াদ ভাশেমে। যেইখানে একটা আর্কাইভ বানানো হইছ। ইয়াদ ভাশেমের কিছু ভিডিও আছে।… ১৯৯৮ সালের ইন্টারভিউ এইটা।

এই বইটাসহ আমাদের ছাপানো অন্য আরো কিছু বই কিনতে পারবেন, এই লিংকে ক্লিক কইরা:
(1) ইন্টারভিউ সিরিজ এবং বাছবিচার ও প্রিন্ট পোয়েট্রি’র বই – Posts | Facebook

ইমরুল হাসান: আলাপের প্রেক্ষিতে আমার দুইটা জিনিস মনে হচ্ছিল। ফর্ম একটা ঘটনা। কোন ফর্মে রাখা হচ্ছে। আমি রিসেন্টলি হিস্ট্রি নিয়া পড়তেছিলাম, তখন যেইটা দেখলাম, প্রাচীন ভারতে ফর্ম যেইটা ছিল বাজারের মধ্যে একটা স্তম্ভ স্থাপন করা। যেমন, অশোক স্বম্ভ ছিল। যখন যে রাজা ছিল সে বাজারের মধ্যে এইরকম একটা বাণী-টানি, আদেশ লেইখা রাখতো। অইটা ছিল একটা ফর্ম। আরেকটা ফর্ম আপনি যেইটা বললেন, গ্রামের মানুশের মুখে মুখে ছিল। অইটা ছিল একটা ফর্ম। গত দেড়শ দুইশ বছর ধরে একটা রিটেন ফর্মে আসছি আমরা। কোন কিছু লেখা হইলো মানে হইতেছে অইটা থাইকা গেলো। গত ১৫/২০ ধরে একটা অনলাইন দুনিয়ায় আসছি যে, অইটার সফটকপি নাই, তার মানে তো দুনিয়াতে নাই। ফর্মের একটা প্রায়োরিটি আছে, যখন যেইটা থাকতেছে। একটা ফর্মের জায়গাতে যখন আরেকটা ফর্ম আসতেছে, ট্রান্সফর্ম হইতেছে কিছু জিনিস মুইছাও যাচ্ছে, হারায়াও যাচ্ছে। এবং নতুন কইরা আবার হিস্ট্রি’টা লেখা হচ্ছে। ফর্মেরও একটা হিস্ট্রি আছে। আর্কাভাইজেশনটা কোন ফর্মে থাকতেছে, এইটাও একটা ঘটনা। আরেকটা পয়েন্ট আর কি।

আর ওরালের ব্যাপারটা যেইটা বলতেছিলেন, সেইখানে কয়দিন আগে কথা হইতেছিল, সবচে এফেক্টিভ ফর্ম কোনটা? তো, এখনো পর্যন্ত ম্যান টু ম্যান, একজন আরেকজনের সাথে কথা বলতেছে, এইটা হইতেছে আনডাউটেডলি সবচে স্ট্রং ফর্ম।

তো, ফর্মের জায়গা থিকা মনে হইলো, মর্ডানিস্ট যেই জায়গাটা সেইটা রিটেন ফর্মের সাথে রিলেটেড কোন ঘটনা কিনা…

রক মনু: শুরুতেই বললেন না, গুগুল, ফেসবুকে কি জানি ঝামেলা হচ্ছে। তো, এই ক্যাশের আইডিয়াটা কিন্তু ইন্টারেস্টিং।… গুগুল, ফেসবুকের যেই সার্ভার সেইখানে সকল ইনফরমেশন জমা আছে, এখন আপনি ধরেন ফেসবুক ইউজ করতেছেন ১২ বছর। এই ১২ বছরের ভিতরে গত এক মাসে যা যা করছেন, এই জিনিসগুলা হইতেছে একটু নাড়াচাড়া হয়, বা অন্যরা নাড়াচাড়া করে, আপনার টাইমলাইনে যারা ঘুরতে আসে।… তার আগে তত যায় না। এই যে একমাস বা যেই যেই জিনিসগুলা সে সার্চ করে, সেইগুলা হইতেছে ক্যাশে রাখে, আর বাকিটা হইতেছে ডিপার সার্ভারে রাখে।

এইটা যদি সোসাইটিতে চিন্তা করেন, কিছু জিনিস ইন্সটিটিউশনে থাকলো, আর কিছু জিনিস থাকলো কমনসেন্সে। একটা হইতেছে লাইব্রেরি, আরেকটা হইতেছে কমনসেন্সে, সবার ভিতরে একভাবে জারি আছে, যেইটা দিয়া এভরিডে ওয়ার্ক চলে, তার বাইরে হইতেছে ধরেন আর্কাইভে, লাইব্রেরিতে।

এখন আপনি যেইটা বললেন নাই, সেইটা আসলে কিনতে হয়। এইটা একটা কমোডিটি। কিনা মানে দাম যেইটা বলা হয়, দেখা যায়, দাম আসলে তার অন্তত দ্বিগুণ। আপনি যে নলেজ নাড়াচড়া করবেন, তার জন্য তো একটা টাইম দিতে হয়। এমনিতে ধরেন, একসেসের জন্য একটা পে করতে হবে… এর পরে ৫/৬ ঘন্টা অইখানে টাইম দিবেন। এর মানে, অই সময়টাতে আপনি কামাই করবেন না।…

তো, অই কিনতে হয়। এই পয়েন্ট অফ ভিউ’র যেইটা প্রব্লেমেটিক লাগতেছে, এম্পেরিক্যালি কিছু জিনিস আসলে মেলে না, আমার মনেহয়। একটা দিকে আমরা বলতে পারি, ওরাল যে ট্রাডিশন ছিল, এই যে ইন্সিটিটিউশন বা আর্কাইভবাদী যে লোকজন, তারা এমনভাবে পুল করছে যে, কিছু জিনিস ওরালি আমরা পাই না। কিন্তু এই যে ওয়ার্ল্ড হিস্ট্রি সম্পর্কে আমরা যা কিছু জানি বা জানতে পাই, সেইটা তো রিটেন হিস্ট্রি চালু হওয়ার পরে।… তো, আর্কাইভিং তো হিস্ট্রি অফ রাইটিংয়ের সাথে রিলেটেড।

আপনি যদি খেয়াল করেন, কোন সব মেমোরি আমাদের ভিতরে তাজা। তখন আসলে দেখবেন যেইসব আর্কাইভ হইছে অইগুলাই তাজা। রিসেন্ট হিস্ট্রিতে সবচে বেশি আর্কাইভিং হইছে আসলে সেকেন্ড ওয়ার্ল্ড ওয়ার।…

ইব্রাকর ঝিল্লী: এইখানে আমার একটু দ্বিমত আছে। আমার মনেহয় সবকিছুই তো আর্কাইভ হইতেছে। সেইটাই টিইকা আছে যেইটা পাবলিক ইমাজিনেশনের ভিতরে ছড়ায়া দেয়া গেছে।…

এখনো দেখবেন, ঢাকা ইউনিভার্সিটি লাইব্রেরিতে ১৯৭১ থেকে ১৯৭৫’র পেপারগুলা দেখার ব্যাপারে পাবলিক একসেস নাই। তার মানে আর্কাইভ আছে অইগুলি। অইগুলা নিয়া কোন সমস্যা নাই।… তাইলে অরা কি চাইতেছে? অই ইমাজিনেশনটারে আটকাইতে চাইছে যেইখানে এইটা ঘটতে পারে।

রক মনু: মোস্ট প্রভাবলি, দেরিদা এইটা ইমাজিনই করতে পারে নাই! আর্কাইভ বইলা কিছু জিনিস আছে, কিন্তু দেখতে দিবে না। এইটা যে তালা মারা, সিন্দুকে ঢোকানো, এইটা সে বুঝতে পারার কথা না, বাংলাদেশের (কনটেক্সটে)।…

কোন জিনিসটা ছড়াবে সেইটা সার্টেন এজেন্সি ডিটারমাইন করে। তার যে পলিটিক্যাল নিড, সেই নিডকে স্যাটিসফাই করার জন্য।

ইব্রাকার ঝিল্লী: এইটা হয়তো স্বাভাবিকই। কিন্তু এইটা নিয়া সচেতন থাকা। যে, এইটা হইতেছে।

রক মনু: আমি দেখতেছি, যখন থেকে আর্কাইভিংয়ের শুরু, তখন থেকে আমাদের মেমোরিও শুরু। প্রি-আর্কাইভিং মেমোরি আমাদের নাই। যদি কালেক্টিভ মেমোরির কথা চিন্তা করেন।… হইতে পারে ইন্সটিটিউশন এইটারে পুরাপুরি খুন কইরা ফেলছে। আরেকটা হইতে পারে, ওরাল যেই ট্রাডিশন অইটার যে ট্রান্সফর্মেশন হয়, সেইটার ভিতর দিয়া এভরিডে কনটেম্পরারি হইয়া থাকা।… স্টোরি ভিতর দিয়া যেইটা আসে, সেইটা তো অনেকবেশি মেমোরি-বেইজড। এই সময়ের মেটাফোর, এই সময়ের ঘটনা এইসবের সাথে মিলায়া বলা হয়। …এইটাও আসলে কদ্দূর পর্যন্ত ভুলায়া দেয় আমাদেরকে, আগের জিনিস।

দোষটা হয়তো আর্কাইভিংয়ের না, দোষটা হয়তো অন্য যে এক্টরস, সেই তাদের।

ইব্রাকার ঝিল্লী: আমি আসলে এইখানে যেইটা করতে চাইছি, সেইটা দেরিদা না, আমি চাইছি। আর্কাইভিংয়ের ব্যাপারে সর্তক থাকা।  আর্কাভাইজেশন ছাড়া তো কিছু কিছু বিকাশের কথা তো আমরা ভাবতেই পারি না। আপনি যেইটা বললেন শেয়ারড মেমোরি, সেইটা তো আর্কাভাইজেশন ছাড়া সম্ভবই না।… পাওয়ারের একক মনোপলি থাকার চে সেইখানে সবার পার্টিসিপেট করতে পারাটা বেটার।… আর্কাভাইজেশনের সমস্যা নিয়া আমরা যদি সর্তক না থাকি তাইলে সমস্যা।

ইমরুল হাসান: এইখানে আমি একটা পয়েন্ট অ্যাড করতে চাচ্ছিলাম। যেইভাবে আর্কাভাইজেশনটা হচ্ছে, একটা ফর্ম থিকা আরেকটা ফর্মে যাচ্ছে। … স্টোরির একটা লাইন আছে।… বেইজটা হচ্ছে আমাদের এখনকার লাইফ, আমাদের সময়টা। কিন্তু সার্টেন মিথের ফ্রেমওয়ার্কটাকে আমরা নিতেছি। যে, এইটা এই ফ্রেমওয়ার্কের সাথে মিলে যাচ্ছে, ও আচ্ছা, তাইলে এইটা এইরকম মনেহয়। আমার মনে হইছে, এইরকম ফ্রেমওয়ার্কের একটা ঝামেলা আছে। এভরিডে লাইফেরই যেইটা ঘটতেছে সেইটা একটা ফ্রেমের ভিতর দিয়াই আমরা দেখতেছি।… এতে কইরা হচ্ছে কি, আমরা যেই ফ্রেমওয়ার্কটা চুজ করতেছি, আমাদের দেখাদেখিগুলি এবং ঘটনাগুলিও এর বাইরে যাইতে পারতেছে না – তা না, যেইটাই যাইতেছে, সেইটা আসলে কাট-অফ হয়া যাইতেছে।… এই ফ্রেমওয়ার্কটাও একটা ঘটনা।

যেই সময়েই একটা ফর্ম চেইঞ্জ হচ্ছে, তখনই আসলে কিছু মুশকিল হচ্ছে। কিছু জিনিস নতুন করে অ্যাড হচ্ছে, কিছু জিনিস আবার বাদ পইড়া যাচ্ছে। আমরা যেই ফ্রেমওয়ার্কটা চুজ করতেছি, সেইখানেও কনসার্ন থাকাটা ভালো।

ইব্রাকার ঝিল্লী: আর্কাভাইজেশন মানেই ধইরা নেয়া হইতেছে, এইটা সবাই জানে। এইটা একটা ফলস নোশন। আসলে এইটা নাই। মানুশ-জন এই জ্ঞান থিকা একটু দূরে দূরেই আছে। ফ্রাকচারের জায়গাটা আছে। আমি এই আলাপটা আনতে চাইছি। অইটা ধরতে চাইছি।

না-জানাটা সমস্যা না। কিন্তু অই ভাইব’টা সমস্যা যে, আমরা জানি। যেহেতু আমাদের সোসাইটি এতোকিছু জানে। আমাদের ইন্সটিটিউশন, আমাদের আর্কাইভ, আমাদের মিউজিয়াম এতোকিছু জানে, তার মানে আমরা জানি। তো, আমরা আসলে জানি কিনা, একটা গ্যাপ আছে কিনা। এইটাই কনসার্নের জায়গা।

রক মনু: আগেও মানুশ জানতো না, এখনো আমরা জানি না। আগে মানুশ-জন ভাবতে পারতো যে, আমরা জানি না। এখন আমরা ভাব নেই যে, আমরা জানি। এইটা হইলো ডিফরেন্স।… এখন দেরিদার মত লোকজনের একটা টাইপ অফ প্রপাগান্ডা আছে। নিজেদের মতো একটা টাইপ।

ইব্রাকর ঝিল্লী: এর মধ্যে একটা রেটরিকের ব্যাপার আছে। একটা নাটকীয়তা আছে। এইটা হইতেছে হুক করার একটা ব্যাপার। এইটা হইতেছে অনেকটা ক্লিকবেইট বলা যাইতে পারে। লিটারারি না নেয়াটাই বেটার।

আমি মর্ডানিটির ক্লিকবেইটারে ধরতে চাইছি দেরিদার ক্লিকবেইট’টারে ইউজ কইরা।

 

The following two tabs change content below.

বাছবিচার

এডিটর, বাছবিচার।

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →