এডিটোরিয়াল: হেপি বার্থডে, আনু মুহাম্মদ!
১.
কালচারাল ও পলিটিক্যাল মিল-অমিল
মু.জা.ই. এবং আ.মু.’র মিল যেমন আছে, অমিলও আছে। মিল’টা হইতেছে দুইজনেই ভালো-মানুশ, সৎ, ভদ্রলোক। আবার অমিল’টা হইতেছে, মু.জা.ই. যতোটা বাকশালি, আ.মু. তা না। কিন্তু যেই মিল’টা ভিজিবল নাই এতোটা সেইটা হইতেছে – বিএনপি-বিরোধিতা। উনারা দুইজনেই বাকশালের ব্যাপারে একই মাত্রায় ক্রিটিক্যাল না হইতে পারেন, কিন্তু বিএনপি বা খালেদা জিয়া ভালো না – এই ব্যাপারে আমার ধারণা, দুইজনেই সমান লেভেলের একমত আছেন, বা হইতে পারবেন।
উনারা দুইজনই কম-বেশি ‘হাজার বছরের বাঙালি ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির’ও সার্পোটার হওয়ার কথা। মানে, কালচারালি একই ঘরানার লোক হওয়ার কথা, যেইটা উনাদের পলিটিক্যাল পজিশনটারে সিগনিফিকেন্টলি আলাদা করতে পারে না আসলে। বাকশাল সবসময় একটা ‘মন্দের ভালো’ ঘটনা, দুইজনের কাছে। (আ.মু.’র কাছে হয়তো কম, মু.জা.ই’র কাছে যেইটা হইতেছে ‘বিকল্প নাই!’)
উনারা দুইজনই খারাপ-বাকশালের জায়গায় ভালো-বাকশালের শাসন চান। এইটা পলিটিক্যালি বেটার না, বরং আরো বাজে একটা ঘটনাই। উনাদের নিজ নিজ ডিফরেন্সের পরেও।
ফেব্রুয়ারি ১, ২০২২
২.
পলিটিক্যাল যে কোন ইস্যুরে “কালচারাল উপাদান” বানায়া ফেলাটা পলিটিক্যাল এক্টের জায়গাটারে আন্ডারমাইন কইরা রাখে
“তেল-গ্যাস-বন্দর রক্ষা কমিটি” বা “সুন্দরবন বাঁচাও আন্দোলন” সবচে বড় যেই ক্ষতি’টা করছে, পলিটিক্যাল ইস্যুগুলারে ‘সাহিত্যের উপাদান’ বানায়া ফেলছে। এখন দেখবেন, কোন পলিটিক্যাল ইস্যু সামনে আসলেই কবিতা লেখা, গান বান্ধা শুরু হয়া যায়। (২০১৩ সালে শাহবাগে নাটক কইরা টিভি-নিউজ-ফটোগ্রাফারদের ক্যামেরা’র ফোকাস পাওয়ার পর থিকা এই ট্রেন্ড বেশি কইরা চালু হইছে।)
এতে কইরা পলিটিক্যাল সমস্যাটার কোন সলিউশন হয় না, বরং এই কালচারাল নাটক-গান-কবিতা কইরা ভাবা যায় যে, আমরা আমাদের ‘দায়িত্ব পালন’ করতেছি; ‘চাপে’ ফেলতেছি অথরিটি’রে!
আর অথরিটি এই ‘চাপ’ নিয়া আপসে আপ কাজ-কামগুলা আগায়া নিয়া যাইতে থাকে। কারণ, পলিটিক্যালি কোন বাধা বা অবস্টেকল ফেইস করা লাগে না। কালচারাল প্রটেস্টগুলা অ্যাপিয়েরেন্সটারে মেইন কইরা তোলার ভিতর দিয়া এই কাজ-কাম করাটারে সহজ কইরা দেয় আরো।
শহীদুল আলমদের কাজ-কাম (দৃক) এইভাবে পাওয়রের যতোটা না এগেনেস্টে তার চাইতে বেশি ফেভারেই কাজ করে বইলা আমার মনেহয়। মানে, উনারা ইচ্ছা কইরা এই ফেভার’টা করতেছেন – এইটা আমার ক্লেইম না; উনারা যে পলিটিক্যাল যেকোন ইস্যু’রে “কালচারাল উপাদান” বানায়া ফেলতে পারেন, এইটা উনাদের স্ট্রেংথ, আর এইটাই উইকনেসেনের পয়েন্ট’টাও।
আনু মুহাম্মদ, কফিল আহমদের’দের কালচারাল “প্রতিবাদ” আল্টিমেটলি পলিটিক্যাল অ্যাক্টের জায়গাটারে ইন্সটিগেট করে না, বরং এক ভাবে হেল্প-ই করে ব্যাপারটারে পলিটিক্যাল ইস্যু থিকা একটা কালচারাল ফেনোমেনা’র জায়গাতে শিফট করার ব্যাপারে। (একটা কালচারাল সুপিরিয়রিটিই ক্লেইম করতে চায় আসলে।)
এখন এই শিফট’টা কালচারাল বইলা বাজে না, বরং যেই কালচারটারে উনারা প্রমোট করেন, সেইটা পলিটিক্যাল অ্যাকশনের জায়গাটারেও আন্ডারমাইন করে, ইনফিরিয়র, ‘বাড়তি’ ও ‘কম ইর্ম্পটেন্ট’ একটা ব্যাপার বানায়া রাখে।
তো, ব্যাপার’টা এইরকম না যে, এইগুলা করা যাবে না; বরং “প্রতিবাদ” তো অনেক হইলো, হইতেছে, হবেও; কিন্তু এইগুলা আসলে একটা অ্যাক্ট হিসাবে “কি করতেছে” – সেইটাও খেয়াল করতে পারাটা দরকার তো!
সেপ্টেম্বর ০৪, ২০২০
৩.
বাংলাদেশে ইন্টেলেকচুয়াল হওয়া মানে হইতেছে ‘ভালো-মানুশ’ হওয়া
বাংলাদেশে ইন্টেলেকচুয়াল টেনডেন্সির যেই ঘটনা, সেইটারে মুহাম্মদ জাফর ইকবালের মধ্যে রিডিউস করলে প্রবলেমটারে প্রপারলি এড্রেস করা হবে না আসলে।
বাংলাদেশে ইন্টেলেকচুয়াল হওয়া মানে হইতেছে ‘ভালো-মানুশ’ হওয়া। এখন কাউরে ‘খারাপ-মানুশ’ হইতে হবে – এইটা ঘটনা না, কিন্তু এই ‘ভালো-মানুশের’ ক্রাইটেরিয়াগুলা সবসময় পলিটিক্যাল একটা ঘটনা, ডমিনেন্ট আইডিওলজিরও বাই-প্রডাক্ট অনেকটা। যার ফলে, যখনই আপনার ইন্টেলেকচুয়াল কাজকামের ভিতরে অই ‘ভালো-মানুশ’ হওয়ার ঘটনা’টা থাকে, সেইটা একটা অবস্টেকল হিসাবেই কাজ করে। এমনকি আপনার যেই ‘ভালো-মানুশি’ সেইটাতে ফোকাস করলে, সেইটা ইন্টেলেকচুয়ালি সিউডো একটা ঘটনাতেই পরিণত হয় অনেক সময়। আনু মুহাম্মদ, সরদার ফজলুল করিমদের ব্যাপারে বলছিলাম, উনারা তো ভালো-মানুশ, কোন সন্দেহ নাই। কিন্তু এইটাই যে উনাদের ইন্টেলেকচুয়ালিটির ঘটনা হয়া উঠে – সেইটা বাজে জিনিসই এক রকমের।
মানে, আমি বলতে চাইতেছি, মুহাম্মদ জাফর ইকবাল হইতেছেন এই ঘটনা’টার একটা এক্সট্রিম এক্সাম্পল; কিন্তু বাংলাদেশের ইন্টেলেকচুয়াল টেনডেন্সি তো এইরকমেরই, কম-বেশি। অইটা খেয়াল করাটা দরকার আর কি।
৪.
বাকশাল এবং বাংলাদেশের সেকুলার রাজনীতি
বাংলাদেশে যারা সেকুলার, লিবারাল রাজনীতির সার্পোটার তাদের বুঝতে পারা দরকার যে, আওয়ামী লীগরে দিয়া হবে না।
ইন ফ্যাক্ট, রাজনৈতিক দল হিসাবে আওয়ামী লীগ বইলা কিছু নাই আর। আমার কথারে লিটারালি নিয়েন না। খুব দাপটের সাথেই আছে, কিন্তু পলিটিক্যালি ডেড একটা ঘটনা। যেমন ধরেন, কয়জন মন্ত্রী-মিনিস্টারের নাম আপনি জানেন বা শুনেন মিডিয়াতে, ঘুইরা-ফিরা দুই-চাইরজনরেই; কিন্তু তাদের চাইতে পাওয়ারফুল হইতেছেন পুলিশের এসপি’রা, উনাদের কথা বেশি শোনার কথা, কারণ দেশ চালাইতেছে পুলিশ-আমলা-মিডিয়া-মিলিটারিদের দেশ-বিরোধী একটা গং, আওয়ামী লীগ হইতেছে জাস্ট ফেইসটা। পাবলিক ইল্যুশনের জায়গাটা। এইটা আছে, কিন্তু নাই।
আওয়ামী লীগ গত পার্লামেন্ট ইলেকশনেই মারা গেছে, যখন পুলিশ-মিলিটারি-সরকারি কমর্চারিদেরকে দিয়া ভোট দেয়াইছে। বাংলাদেশের মানুশের উপরে পলিটিক্যাল পার্টি হিসাবে আওয়ামী লীগের কখনোই বিশ্বাস ছিল না। এখন এইরকম নন-ইলেক্টেড, এন্টি-পিপল একটা পলিটিক্যাল পার্টির ইল্যুশনরে সার্পোট দিয়া বাংলাদেশের সেক্যুলার ও লিবারাল’রা নিজেদের পায়ে কুড়ালই মারতেছেন।
মানে, একজন ভালো-মানুশ হিসাবে আপনি যদি কোন খারাপ কাজরে সার্পোট করেন, আপনি আর ভালো মানুশ থাকতে পারেন না। এই কারণে বাংলাদেশের সেক্যুলার-লিবারাল’রা এই খারাপ-মানুশদের দলে আছেন এখন। যদি সত্যিকারভাবে উনারা সেকুলার-লিবারাল পজিশন ধইরা রাখতে চান নতুন কোন পলিটিক্যাল পার্টি বানাইতে হবে, যারা নয়া বাকশালের এগেনেস্টে কথা কইতে পারবে, একটা পজিশন নিতে পারবে।
এই কাজ যারা করতে চান উনাদেরকে (আমি আশা করি যে, আনু মুহাম্মদ, রেহনুমা আহমেদ, শহীদুল আলমদের ছোট একটা গ্রুপ আছে, যারা সেক্যুলার-লিবারাল পজিশন ধইরা রাখতে চান) অবশ্যই একটা পলিটিক্যাল প্লাটফর্ম তৈরি করতে পারতে হবে, তা নাইলে যট্টুক পলিটিক্যাল রিলিভেন্স আছে উনাদের, ততটুকও থাকবে না।
এইরকম ভালো-মানুশ সেকুলার, লিবারালদের কবর যদি বাংলাদেশের মাটিতে হয়, সেইটা কোন পজিটিভ ঘটনা হবে বইলা আমার মনেহয় না। কিন্তু “টক্সিক পার্টনারের প্রতি ডিভোটেড লাভারের মতন” উনাদের আওয়ামী-ভালোবাসা উনাদেরকে মাইরাই ফেলবে। কিন্তু এই বুঝ উনাদের নাই – এইটা ভাবতে পারাটা তো মুশকিলই আসলে। বরং উনারা, এই সেকুলার-লিবারাল’রা পলিটিক্যাল স্পেইসটারে লগে এক ধরণের হেইট্রেটের জায়গা থিকা এটাচড থাকেন, যার ফলে আওয়ামী লীগের লগেই নিজেদের এটাচমেন্ট’টা খুঁইজা পান।
এই পজিশন চেইঞ্জ না করতে পারলে, নিজেরাই পলিটিক্যালি ইন-ভ্যালিড হয়া যাবেন, আওয়ামী-লীগ ইনভ্যালিড হওয়ার আগেই। কারণ, আওয়ামী-লীগের যেই আইডিওলজি “বাঙালি জাতীয়তাবাদ” সেইটা তার কোর জায়গা থিকা “বাংলাদেশ-বিরোধী” একটা ঘটনা, এই জায়গাটা কেউ মার্ক করতেছেন বইলা আমার মনেহয় না।
এপ্রিল ২১, ২০২১
৫.
“রাজনৈতিক ব্যর্থতা”
হেফাজত যদি রাজনৈতিক শক্তি হিসাবে আজকে উঠে আসতে থাকে, রিলিভেন্ট হয়া উঠে, এর আসল কারণ হইতেছে, আপনারা আপনাদের রাজনৈতিক দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হইছেন, স্যার আনু মুহাম্মদ!
দেশের মানুশের মুখের কথা আপনারা বলতে পারেন নাই, বুকের ব্যথা আপনারা বুঝেন নাই!
এখন আপনাদের এই ব্যর্থতারে জালিমের ক্ষমতার থাকার যুক্তি হিসাবে হাজির কইরেন না। তাইলে সেইটা আর ‘রাজনৈতিক ব্যর্থতা’ হিসাবে থাকবে না, ইট উইল বি অ্যা শেইম।
মার্চ ২৭, ২০২১
৬.
পলিটিক্যাল পজিশন
আনু মুহাম্মদদেরকে কোনদিন এই বাকশালি-সরকাররে ‘অবৈধ’ বলতে দেখছেন? উনারাই না-বলার ভিতর দিয়া রাতের ভোটের বৈধতা দিছেন, দিয়া যাইতেছেন…
এখন একটা কথারে ন্যারো কইরা তোলার সবচে ভালো-উপায় হইতেছে তারে “আক্ষরিক অর্থের” ভিতরে রিডিউস করা। আমার ধারণা, একটু চিন্তা করলে এইটা বুঝতে পারার কথা যে, উনি বলছেন কি বলেন নাই – এই হ্যাঁ বা না এর উত্তর এইখানে আমি জানতে চাই নাই।
বরং উনারা (উনি একলাই না) যে, এই ভোট-ডাকাতির অবৈধ সরকাররে এক নাম্বার সমস্যা মনে করেন না, সেইটা নিয়া আমি বলতে চাইছি। ‘সাম্প্রদায়িকতা’ যেইরকম ক্রুশিয়াল সমস্যা, ‘বুর্জোয়া’ 🙂 রাজনীতি যেইরকম বড় সমস্যা, পিপলের কনসেন্ট ছাড়া একটা অবৈধ সরকার থাকাটা যেন অই লেভেলের সমস্যা না! কারণ, বাকশালের বিরোধিতা করলে তো ‘মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি’ মাথা-চাড়া দিয়া উঠতে পারে আবার! 🥱 এই যে পজিশন, এইটারে হাইলাইট করার, বাতিল করতে চাওয়ার ঘটনা, আমার দিক থিকা। মানে, ব্যক্তি হিসাবে উনারে পছন্দ-অপছন্দ করার মামলা না এইটা। পলিটিক্যাল পজিশন হিসাবে নিতে চাওয়ার বা না নিতে চাওয়ার ঘটনা।
/অগাস্ট ৭, ২০২২
৭.
হেপি বার্থডে
একটা বাটপারির সিস্টেমের বিপরীতে, অনেকগুলা খারাপ-মানুশের বিরুদ্ধে আমাদের একজন সৎ-মানুশ, একজন ভালো-মানুশের দরকার যে নাই – তা না; কিন্তু ঘটনা’টারে এই জায়গাটা থিকা দেখাটা মোকাবেলার জায়গাটারে স্পষ্ট করতে পারে না আসলে;
এই কারণে একটা এন্টি-পিপল সিস্টেমের বিপরীতে, পিপলস-এজেন্সিগুলা গায়েব হয়া যাওয়ার জায়গাটাতে, সব পলিটিক্যাল এজেন্ডা কালচারাল-পলিটিক্স ও ক্লাস-হেইট্রেট হয়া উঠার টাইমে, একজন পলিটিক্যালি এফেক্টিভ মানুশ, মানুশের কাছাকাছি মানুশ, তারচে বেশি দরকার আমাদের।
হেপি বার্থডে, আনু মুহাম্মদ!
/সেপ্টেম্বর ২২, ২০২১
Latest posts by ইমরুল হাসান (see all)
- পলিটিকাল ডাইরি – ২০২৪ (দুই) - সেপ্টেম্বর 17, 2024
- পলিটিকাল ডাইরি – ২০২৪ (এক) - সেপ্টেম্বর 4, 2024
- ধর্ম প্রশ্নে পুরান কমিউনিস্টদেরকে ইনডেমনিটি দিতে চাওয়াটা অনেকটা ইন্টেলেকচুয়াল অসততার ঘটনা: ফরহাদ মজহারের ‘মোকাবিলা’ (২০০৬) বই নিয়া আলাপ - আগস্ট 9, 2024