তোমারি দরোজার গোলাম তোমারি দুয়ারে
এই ছবিটা তুলছিলাম মাতুয়াইলের বাসায় থাকতে। বাড়িওলার নাম মোহন কাকা। আমি তাপস আর মিসবাহ থাকতাম। যেই দরজাটা দেখা যাইতেছে এইটা বাথরুম। বেশি একটা ইউজ হইত না। কমন বাথরুমটা একটু বড় ছিল। তাই সবাই ওইটাই ইউজ করতাম। এই ছবিটা মার্চ মাসে তোলা। জানুয়ারি মাসের এক রাত্রে শুইতে গিয়া একটামাত্র শ্বাস নিতে একটু সমস্যা হইল। সিরিয়াস কিছু না। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ঠিক হয়ে গেছে। তবে অই একটা নিঃশ্বাস আমারে অনেক লেসন দিয়া গেল যে মানুষের শ্বাস যেকোনো সময় বন্ধ হইয়া যাইতে পারে। এটা সম্ভব। এর আগে কখনো মনে হয় নাই আমি মারা যাইতে পারি। মারা যাবে দূরের মানুষ। মৃত্যুর খবর খালি মাইকেই শুনতে পাব। ওইদিন রিয়ালাইজ করলাম যে ছোট বড় যে কেউ যে কোনো সময় মারা যাইতে পারে। মানুষ খুবই ভালনারেবল একটা প্রানী। এমন প্যারা খাইলাম। যেদিকেই তাকাই মনে হয় শেষ দেখা। আজকে যাই কালকে যাই। অই সময় অল্প কিছুদিনের ব্যবধানে আমার ৪-৫টা ব্রেকাপ হয়। নানান জায়গা থেকা নিজেরে সরাইয়া আনতে শুরু করি। দুনিয়ায় সংযোগ যত বাড়ব কবরে হিসাব নিকাশ তত কঠিন হইব। কি দরকার বিপদ বাড়ানোর। ছোটবেলায় আমাদের মাদরসার এক বাবুর্চি চাচা মারা গেছিল। তখন একটা কথা জানতে পারছিলাম যে মারা যাওয়ার ৪০ দিন আগে মৃত্যু আসন্ন ব্যক্তি কিছুটা আচ করতে পারে। আমি সেই রাত্র থেকে ৪০ দিন গোনা শুরু করলাম। লাইফের দীর্ঘতম ৪০ টি দিন। মরনের অপেক্ষা সহজে কি আর ফুরায়? বিআইডিএসে খন্ডকালিন চাকরি করতাম। অইখানে কাজ শেশ হয়ে যাওার পর হয়ে গেলাম ফুলটাইম বেকার। প্রেম ট্রেম নাই। আমি আর মিসবাহ সারাদিন স্যাড স্যাড গজল শুনতাম। একটা গজল যতবারই শুনতাম, কান্দন এসে পরত।
‘রহিম জানি আসিয়াছি মাওলারি দরবারে
আল্লাহ তাড়াইও না মোরে
তোমারি দরোজার গোলাম
তোমারি দুয়ারে ‘
বড় হয়ে যাওার পর কান্দাকাটি বিষয়টা লজ্জাজনকই। কিন্তু মরণের ভয়ে আমি আসলেই অনেক অনেক রাত কানছি। মনে হইত এই আসমান জমিনের সমুদয় শুন্যতার মাঝখানে একটা বিন্দুর মতো একা দাড়াআ আছি। পিছনে ফেলে আসছি লাইফ, মেমোরিজ, পরিবার পরিজন। জন্ম থেকে ২৩ টা বছর হেটে হেটে একটা লাইনে এসে দাড়াইলাম। যার ওপারে দুনিয়া বেকার। এক আল্লাহ ছাড়া আর কিছু নাই।
ছবিটা কী মনে করে তুলছিলাম মনে নাই, বাপের সঙ্গে তখন অত বনিবনা নাই। কোনোকালেই খুব বেশি ছিল না। খারাপ লাগত। আমি ফ্যামিলিতে সবার ছোট। আমার বড়বোনরা বাপের সুযোগ সুবিধাও পেয়ে থাকবে হয়ত আর আমি খালি পাইলাম ক্রাইসিস। হয়ত বিষয়টা এইরকম না। কিন্তু অই বয়সে এমনই লাগত। তবে আমি তাকে পছন্দ করতাম। টাকা পয়সা নিয়া বাপের সঙ্গে মন খারাপ করা সারা দুনিয়াতেই কমন ঘটনা। যেহেতু তাকে পছন্দ করতাম তাই মনে হইত সে মারা গেলে তাকে মিস করব। ছবিটার ক্যাপশন দিয়েছিলাম, আমাদের সাফল্য হইল আমরা আমাদের পিতামাতাকে মহিমান্বিত মৃত্যু পর্যন্ত পৌছে দিতে পারছি। এই ঘটনার দুই মাস পর আমার বাবা মারা যায়। আমারও আস্তে আস্তে মৃত্যুর ভয় কেটে যায়। মনে হয় অত সিরিয়াস কিছু না। মৃত্যু দেখতে পাহাড়ের মতো যারে গিলতে হবে। আনফর্চুনেটলি তা গেলা সম্ভব। এই পাহাড় হইল নলেজের পাহাড়। যার ফলে সকল মৃত ব্যক্তি এক নতুন রিয়ালিটিতে প্রবেশ করে যেখানে ইহজাগতিক ক্ষুদ্রতাগুলি অনুপ্সথিত। এই নদীমাতৃক কাদামাটির নিচে, নরম ঘাসের নিচে যেখানে শুয়ে আছেন আমার পিতা, আমি যদি মারা যাই তাইলে আমরা একই রিয়ালিটির অধিবাসি হয়ে যাব। সে জগত হবে আরো মোহনীয়। সেখানে আমাদের নলেজের কোনো ত্রুটি থাকবে না। এবং দেখা হবে আরও অনেক মৃত মানুষের সঙ্গে, যাদেরকে দুনিয়ার মানুষ বিগত দিনে হারায়ে ফেলছে।
কাজী মাহবুবুর রহমান
Latest posts by কাজী মাহবুবুর রহমান (see all)
- তোমারি দরোজার গোলাম তোমারি দুয়ারে - অক্টোবর 2, 2022