ফিকশন: পার্সেল
এ বছর নামতেছে আগে আগে শীত, সেই ফুরফুরা আনন্দে সকালে দরজা খুলতেই তোমার ফেডএক্সের কার্ডবোর্ড বাক্স পাইলাম। ওজন তিন কেজির কম তো না, কী আছে ভিত্রে? আজকাল কিছু অর্ডার করার পরপরই হুটহাট জিনিস আইসা পড়ে, ঠিকানা নেয়ার এক সপ্তাহও হয় নাই। ঠিকানা জানার প্রশ্নে তোমার ভণিতা ছিলো না, স্যাডিস্টিকরা যেমন – ডাইরেক্ট ল্যান্ডিং। ভণিতা থাকলেও খারাপ লাগতো না কিছু, তাও সত্য।
বক্সকাটার দিয়া যত্নমতন বাক্স খুললাম। উপহার দিলা, কার্ডফার্ডে কোনো লিখলামিখলা না কিছু ভালোমন্দ। ভারী বাক্স হইতে বের হইলো ক্যালেন্ডার। ২০২৩ টু ২০৫৭, গুণে গুণে ৩৫ খানা দেয়ালে ঝুলানোর ক্যালেন্ডার। আধুনিক যুগে মানুষ এইসব আন-এস্থেটিক জিনিস বর্জন করে ফেলছে প্রায়। ভাড়াটিয়া বাসায় দেয়াল ফুটা করলেও আবার জরিমানা। ফোন দিয়া কৈফিয়ত তলব করতে তোমার উচ্ছ্বসিত কন্ঠ শোনা গেলো।
– পাইছো তাইলে আমার যুগান্তকারী, অনবদ্য, অভিনব উপহার?
– হ, তো তোমার ধারণা আমি ৬৮ বচ্ছর পর্যন্ত বাঁচবো?
– এইটা একটা সলিড হাঞ্চ আমার, তোমার অন্যান্য মৃত ফ্যামিলি মেম্বারদের সময়সীমা হিসাব করে; গর্বিত শোনা গেলো তোমাকে, নিজের মেধার ওপর আস্থায়।
– বুঝলাম।
– না বুঝো নাই। আমি দেখাইতে চাইতেছি তোমার জীবদ্দশায় বড়জোর এই ৩৫ টা ক্যালেন্ডার দরকার পড়বে তোমার। সবগুলা ক্যালেন্ডারের ওজনও সমান হবে না। ধরো ২০২৯-এ একটা বাড়ি কিনলা, ২০৩৩-এ হারাইলা চাকরি, আবার ২০৪১-এ গিয়া পাইলা এওয়ার্ড কোনো আবার ২০৪১-এই বড় কোনো সার্জারি।
– তা তো সবারই হইতে পারে। যে কারোই হইতে পারে। তা এই ক্যালেন্ডারগুলার মধ্যে তুমি কোনটায়?
– আমি-তুমির ঘটনা আবার কোত্থেকে টেনে আনলা! মূল পয়েন্টটাই মিস করতেছো। আমি বুঝাইতে চাইতেছি, তোমার সময় কতটা লিমিটেড, যে ৫ কেজিও ওজন হয় নাই তোমার আসন্ন সবগুলা বছর মিলায়ে।
– জগতের সবার সময়ই লিমিটেড, বিরক্ত হয়ে বললাম আমি। এমনও হইতে পারে ৩৫টা ক্যালেন্ডারের ১০টাও লাগলো না আমার।
উপহারের ফিলোসফি শুনে আপ্লুত না হওয়ায় হয়তো মেজাজ বিগড়ে গেছিলো তোমার, ক্রুর হাসি দিয়া বললা – না লাগলেও সমস্যা নাই। ওগুলা বানাইতে বেশি খরচ পড়ে নাই। পার্সেল সার্ভিসও সস্তা।
শুনে দুঃখ পাইলাম কি? বললাম, সমস্যা আর অ-সমস্যা। আমার তো মনে হইতেছে তুমি জাস্ট নিজের রেলিভেন্স টিকায়ে রাখার জন্য এতোগুলা বছরের ক্যালেন্ডার পাঠাইছো। যেন ক্যালেন্ডার বদলানোর জন্য হইলেও বছরে অন্তত কেউ একবার তোমাকে স্মরণ করে। তবে আমার অবস্থা তো জানো। ভাড়াটিয়া মানুষ। দেখা যাবে আগামী বছর বাড়ি বদলানোর সময় সবগুলা ক্যালেন্ডার ফেলে দিতে হইছে। এত ওজন বহন করে কে!
এরকম একটা ব্রুটাল স্যাডিস্টিক রেসপন্স দিতে পারায় সকালের ফুরফুরা আমেজটা আবার ধরা দিলো। অবশ্য বিকালে আবার ক্যালেন্ডারগুলা নিয়ে বসছিলাম। অতো হাবভাব নিলা অথচ এই ক্যালেন্ডারগুলার মাঝেই কোনো একটায় তুমি আর থাকবা না। অনেকগুলা দিন তারিখের মধ্যে সেই কোনো একটা দিন কোনটা? তোমার ক্রুয়েল্টি আর খিলখিল হাসি মনে পড়লো।
রওনক মিরাশদার
Latest posts by রওনক মিরাশদার (see all)
- ফিকশন: পার্সেল - সেপ্টেম্বর 8, 2023
- Poetry in prose: Bankim Chandra Chattopadhyay - এপ্রিল 20, 2022
- প্রোফাইলিং, ইল্যুশন ও অন্যান্য আলাপ - ডিসেম্বর 12, 2021