লাবিব ওয়াহিদের কবিতা (২০২৩)
সারাদিন বাসায় থাকা ভালো
সারাদিন বাসায় থাকা ভালো,
দক্ষিণের থাইগ্লাস থেকে
পূর্বের বারান্দা হয়ে
উত্তরের শাদা দেয়াল পর্যন্ত
একুরিয়ামের মাছের মতো
দেয়ালে দেয়ালে বাড়ি খাওয়া ভালো,
সারাদিন শুয়ে বসে থাকা ভালো,
বিছানার চার কোণায় পালা করে
পা ছেড়ে দিয়ে আর পা ভাঁজ করে
কিছুই না করা ভালো,
সারাদিন চুপ থাকা ভালো,
নিজে নিজে হেসে ওঠা ভালো,
রোদের সাবান গায়ে মেখে
মিষ্টি আলুর চামড়া ছেলা ভালো,
ফ্রিজের ভিতর ক্ষির মালাইয়ের
আইস ক্রিম থাকা ভালো,
সারাদিন বাসায় থাকা ভালো
সাদিয়া তাবাসসুম
এরমধ্যে আমাদের মোবাইল সেট
চেঞ্জ হইছে অনেকবার,
এইচ-টি-সি’র তো
মোবাইল ব্যবসা-ই উঠে গেছে,
এরমধ্যে ওবামা গেছে, ট্রাম্প গেছে,
বাইডেন যাবে, মেবি ট্রাম্প আসবে আবার
বার্নি কিছু করতে পারে নাই,
বার্নি’কেও এখন আমাদের
টিনএজের মতো পুরান মনে হয়
টিকটক এসে বদলে দিছে ফেসবুক – ইনস্টা’কেও,
মেসেঞ্জার আর হোয়াটসঅ্যাপের তো এখন
বটগাছের মতো শিকড় – ডালপালা,
চিন্তা করো নিম্বাজ আর ইবাডি’র কথা শুনলে
অনেকে তো এখন চোখ গোল-গোল করে রাখবে
কোথাও তোমার আর একটাও ছবি নাই,
যাদের কাছে আমি তোমার গল্প করতাম
তারাও আমার জীবনে নাই আর
চিন্তা করো কতো সময় চলে গেছে,
কিন্তু চোখ বন্ধ করলে তোমার মোলায়েম মুখ
এখনো কাতর হয়ে আমাকে বলে,
এরকম করিয়ো না লাবিব, সব ঠিক হয়ে যাবে
ভালো আর লাগবে না
ভালো আর লাগবে না,
কারই বা ভালো লাগে বলো
একটা ফটোগ্রাফ হয়া থাকতে,
একটা “দেখুন ভিডিও সহ” নিউজ হয়া থাকতে,
একটা সিনেমার পোস্টার, একটা নভেলের মেইন কারেক্টার,
একটা পলিটিকাল স্লোগান হয়া থাকতে কতক্ষণ
ভালো লাগবে তোমার? ভালো আর লাগবে না
একটা কনটেন্ট হয়া থাকতে, একটা সিজি, একটা গ্রেড,
একটা রেটিং হয়া থাকতে ভালো আর লাগবে না তোমার,
একটা স্টোরি, একটা মোটিভেশন, একটা শিক্ষামূলক গল্প,
একটা ইউনিক পেইন্টিং, একটা এবস্ট্রাক্ট আর্ট,
একটা এড্রেনালিন রাশ –
যেটাই হও না কেন, ভালো আর লাগবে না তোমার,
ভালো লাগা শেষ, তোমার দেরী হয়ে গেছে আসতে
এভারেজ পিপল
দেখুন কিভাবে
মাত্র এক সপ্তাহেই ভূড়ি কমালাম
দেখুন কিভাবে
মাত্র এক মাসে আমার সিক্সপ্যাক হইলো
দেখুন কিভাবে
মাত্র তিন মাসে আমার হইলো
সিক্স ডিজিট স্যালারির জব
দেখুন কিভাবে
এলন মাস্ক প্রতিদিন সাতটা কোম্পানি চালায়
এইরকম গল্পগুলা প্রতিদিন তোমার সামনে আসে,
তুমি এইগুলাকে দেখে ইন্সপায়ার্ড হও,
প্রতিরাতে তুমি ঘুমাইতে যাও
ডিটারমিনেশন নিয়ে
দেখুন কিভাবে
এই সুইসাইডাল লোকটা বদলে দিলো বিশ্ব সাহিত্যকে
দেখুন কিভাবে
এই জেন গল্পটা বদলে দিতে পারে আপনার জীবনকে
দেখুন সেদিনের ব্যর্থ প্রেমিক
আজ কিভাবে বিসিএস ক্যাডার
দেখুন একশো একটি কারণ
হস্তমৈথুন ছেড়ে দেবার
প্রতিরাতে তোমার ভালো ঘুম হয়
কারণ তুমি জানো তুমি কালকে থেকে
সব ঠিক কাজগুলা করবা,
প্রতিরাতে তোমার ভালো ঘুম হয়
কারণ তুমি জীবনের শেষ হস্তমৈথুনের পর
জীবনের শেষ সিগারেট’টা ধরাও,
আর ভাবতে থাকো কালকের কথা,
যখন তুমি ছয়টা বাজে উঠবা, এক্সারসাইজ করবা,
তারপর একটা ফ্রেশ গোসল এবং হেলদি নাস্তা,
তারপর জীবন বদলে দেয়ার সংগ্রাম,
এইগুলা ভাবতে ভাবতে তুমি ঘুমাও
আর পরদিন সকাল বেলায়
পৃথিবি ধ্বংস হয় না,
সবকিছুই ঠিকঠাক থাকে,
তোমার এলার্ম সময়মতো বাজে,
সময়মতো রইদ ওঠে,
আর তুমিও তুমি-ই থাকো
বিছানায় শুয়ে থেকে থেকে তুমি ভাবো –
তুমি এতো এভারেজ,
তোমার জীবনটা এত এভারেজ,
তোমার শপথ গুলা চায়না মাল,
আর তোমার দুঃখ গুলাও এতটা বড় না
পুশ ইয়োরসেলফ
পুশ করো
পুশ করো নিজেকে
আর দশ মিনিট
দশ মিনিটের পর আরো দশ মিনিট,
তারপর আরো দশ মিনিট
দশ মিনিটের উপর দশ মিনিট বসায়ে
অনেক অনেক দশ মিনিটের
পাহাড় হয়ে গেলে
সেই পাহাড়ের চুড়ায় বসে তুমি একা
একটু বাতাস খাও, একটা গান শুনো,
মেবি একটা কবিতাও লিখতে পারো
তারপর পুশ করো
পুশ করো নিজেকে
আর দশ মিনিট
কোনো বাধা ছিল না
শীতের আভাস ছিল। মেঘলা বাতাস ছিল।
বন্ধুরা হাসতে ছিল। কেও কেও কাশতে ছিল।
কোনো বাধা ছিল না। কোথাও পুলিশ ছিল না।
কোনো কারন ছিল না। থেমে যাওয়ার।
কিন্তু কিছুটা ডোপামিন
কম ছিল আমার।
ইউনানি হাকিমি দাওয়াখানার উত্তর পূর্ব পাশে।
মাছের ঘেরের উপর মুরগীর ঘর ভাসে।
পোলাপান ঘাসের উপর বসে।
পায়ের কাছে নড়ে চড়ে ইয়েলো বাটারফ্লাই।
সান ফ্লাওয়ারের পাপড়ির মতো
গোল হয়ে আমরা সবাই।
বিষ্টির ফোটা ছিল না। রইদ-ও বেশি ছিল না।
বোতলে পানি ছিল। সবকিছু ঠিক ছিল।
সিগারেট ঘুরে আসতে ছিল বারবার।
কিন্তু কিছুটা ডোপামিন
কম ছিল আমার।
আমার নানী
আমার নানী যখন তখন
দরজা খুলে চলে যায়,
সিড়ির কাছে এসে দাড়ায়।
যখন বলি, কই যান?
বলে, বাসায়।
এটাই তো বাসা, বলি আমি।
নিয়ে আসি টেনে বারান্দায়।
রাস্তায় জমা বৃষ্টির পানি
নানী আমাকে দেখায়।
এই পুকুরে মাছ হয় কিনা,
সেই কথা জিগায়।
যখন তখন আমার নানী
বলে, তোর নানী কোথায়?
রেন্ডম ইভিনিং
অমিমাংসিত সম্পর্ক’দের ঘাও,
আর এইসব লাইট, এইসব রোড,
অমিমাংসিত কনভার্সেশনের স্ট্রেস,
ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, কসমেটিক্স শপ,
অমিমাংসিত দায়িত্ব আর অধিকার,
আর রিকশা, সিএনজি, আহত বাইকার,
আর পা বেয়ে রক্তের রেখা নেমে যায়,
আর ফুটবল টুর্নামেন্ট, আর কনসার্ট,
আর গরিব দুখি লোকেরা,
আর ট্রমাটাইজড প্রেমিকা ও বইনেরা,
আর ভাতের কথা, ভোটের কথা, যুদ্ধের কথা,
আর রাস্তা পেয়ে যাওয়া লোকেদের কনফিডেন্ট বয়ান,
আর একসাথে অনেকগুলা বেসুরা আজান,
আর গ্যালারির পিছে মরা কুকুরের গর্দান
ভেসে ওঠে নর্দমায়,
আর হৃদয়ের মাঝে আসে ফেইথ, আবার চলে যায়
বিদায়ের পরে
তোমার সাথে গল্প করে
অনেক ভালো লাগলো
এখন আসি, কেমন?
মায়ের দোয়া পরিবহন
আমি ছোট আমাকে মারবেন না
বিস্কুটের কামড়ের মতো
ছোট ছোট স্পিড ব্রেকার
নালা, কবরস্থান, সুপারি গাছ,
পুকুর, মসজিদ, রাস্তার লাইট,
নামাজ বেহেস্তের চাবিকাঠি,
হাইয়া আলাস সালাহ,
মাগরিবের আজান
সাদা ওয়াল,
লাল কালি, স্বাগতম,
রাইট অ্যারো, কমিউনিটি সেন্টার,
ছাতি, ক্যামেরা, আধা ঘোড়া
সাধারন পরিবহন
একশ হাত দূরে থাকুন
পায়রা ফিলিং স্টেশন
পরিবেশকঃ যমুনা অয়েল কোং লিঃ
রিকশা পেইন্টিং,
উল্টানো মুরগী,
সিনেমা হল,
পৌর বাজার,
রহিম মোটরস,
হিরো হোন্ডা,
বিরিজ কালভাট রেলগেট
পাহাড় পর্বত নদীনালা
খালবিল আকাশ বাতাস
গেরাম শহর মফস্বল
দুনিয়াদারি বিড়ি বাদাম
আড্ডা ফাড্ডা, পাবলিক টয়লেট,
ফকির মিসকিন, আল্লার বাস্তে পাঁশটা
টাকা দিয়া যান, কলিকাতা হারবাল,
দ্রুত পতন থিকা মুক্তি চান?
আবেগ কমান
দশটা টাকা দিয়ে শসা খান
এ জার্নি বাই বাস
আমার লম্বা দুই পা
দুই সিটের মাঝখানে
শক্তভাবে এঁটে আছে,
আমার পিঠ নব্বই ডিগ্রি খাড়া,
লোকাল বাসের সিটগুলা
প্রায় সময় এমনই হয়
আর আমাকে যাইতে হবে লম্বা রাস্তা
আমি যাবো মহিপাল থেকে সোনাপুর
যার মানে হইতেছে ফেণী থেকে
নোয়াখালী পর্যন্ত
যার মানে হইতেছে এই
বাসটার সাথে আমি থাকবো
শুরু থেকে শেষ নাগাদ
আর এখন মাত্র শুরু এই যাত্রার,
স্টার্ট দেয়ার আগে বাস’টা
প্যাঁ প্যাঁ করে ডাকতেছে এখন,
লাস্ট মোমেন্টে দৌড়ায়া ওঠার যাত্রীদের
সে খুঁজতেছে
আর ভিতরের যাত্রীরা তাগাদা দিতেছে,
তাদের মধ্যে যারা চুপ করে আছে
তাদের চোখে মুখে দেখা যাইতেছে যে তারাও
কিছু একটা বলে উঠতে চায়,
আর ড্রাইভার’টা বারবার স্টার্ট দিতেছে,
একটু সামনে যাইয়া আবার থামতেছে,
ছেলে ভুলানো ছড়ার ছন্দে সে
আমাদের ভুলাইতেছে
আমি জানালার গ্লাসটারে
সামনের দিকে ঠেইলা দিতেছি
সামনের জন এটারে আবার
পিছে ঠেইলা দিতেছে
আমি জানালার গ্লাসটারে
আবার সামনের দিকে ঠেইলা দিতেছি
সামনের জন এটারে আবার
পিছের দিকে ঠেইলা দিতেছে
আর আমি বড় বড় বাস দেখতেছি
মহিপালের মোড়ে
বড় বড় মিষ্টির দোকান,
আর বড় বড় ফলের ওপর
বড় বড় লাইট গুলাও দেখতেছি
আর বড় একটা ফ্লাইওভার আছে
আমাদের মাথার ওপরে,
যে আমাদেরকে বলতেছে
তোরা এত ছোট কেন ভাই
আমি ফ্লাইওভারের দিকে তাকায়া থাকি
জানালার বাইরে আমার মাথাটা তুলে,
আর মনমতো নিঃশ্বাস নিয়ে নিই বাতাসে,
যতক্ষণ পর্যন্ত না সামনের জন
গ্লাসটারে ঠেইলা দেয়
আমার মুখ বরাবর
আর আমি যদি এইবার
হাল ছাইড়া দিই,
এভাবেই গ্লাসটার
আমার দিকে এক ভাগ
আর তার দিকে দুই ভাগ
খোলা থাকা অবস্থায়
আমি যদি হার মাইনা নিই,
তাহলে আজকের দিনের জন্য
এটাই হবে এই লোকটার
একমাত্র ভিক্টরি
লাবিব ওয়াহিদ
Latest posts by লাবিব ওয়াহিদ (see all)
- সাহিত্য এবং আর্টে কিছু ভড়ং, কিছু মহৎ এটিচিওড ঢুকে গেছে, যেগুলা ডেনজারাস – চেসোয়াফ মিয়শ - ফেব্রুয়ারি 4, 2024
- লাবিব ওয়াহিদের কবিতা (২০২৩) - নভেম্বর 12, 2023
- বিলি কলিন্সের কবিতা - সেপ্টেম্বর 21, 2023