ভাষার ক্ষেত্রে গোঁড়ামি বা ছুৎমার্গের কোন স্থান নেই – মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্
[৩১/১২/১৯৪৮ সালে পূব পাকিস্তান সাহিত্য সম্মেলন, ঢাকা অধিবেশনে মূল সভাপতির ভাষনের সিলেক্টেড অংশ।]
স্বাধীন পূর্ব বাংলার স্বাধীন নাগরিক রূপে আজ আমাদের প্রয়োজন হয়েছে সর্ব শাখায় সুসমৃদ্ধ এক সাহিত্য। এই সাহিত্যে আমরা আজাদ পাক-নাগরিক গঠনের উপযুক্ত প্রয়োজনীয় বিষয়ের অনুশীলন চাই। এই সাহিত্য হবে আমাদের মাতৃভাষা বাংলায়। পৃথিবীর কোন জাতি জাতীয় সাহিতা ছেড়ে বিদেশী ভাষায় সাহিত্য রচনা ক’রে যশস্বী হতে পারে নি। ইসলামের ইতিহাসের একেবারে গোড়ার দিকেই পারস্য আরব কর্ত্তৃক বিজিত হয়েছিল, পারস্য আরবের ধর্ম্ম নিয়েছিল, আরবী সাহিত্যেরও চর্চা ক’রেছিল। কিন্তু তাঁর নিজের সাহিত্য ছাড়ে নি। তাই রুদাগী, ফিরদৌসী, নিযামী, সাদী, হাবিব, উর্ফি, খাকানী, বুআলী সীনা, গাযালী, খ’য়্যাম প্রমুখ কবি, ভাবুক, সুফী ও দার্শনিক লেখকগণের রচনায় পারস্য সাহিতা গৌরব-সমুজ্জ্বল। বাংলা সাহিত্যের চর্চ্চা আমাদের মধ্যে আজ নুতন নয়। বাংলা দেশ যখন দিল্লীর অধীনতা-নিগড় থেকে মুক্ত হয়ে গৌড়ে এক স্বাধীন সুলতানত প্রতিষ্ঠা করে, তখন থেকেই বাংলা সাহিত্য সৃষ্টির দিকে রাজার মনোযোগ পড়ে। ইউসুফ শাহ, হোসেন শাহ, নসরত শাহ্, ফীরোয শাহ, নিযাম শাহ শুর, ছুটীখাঁ, পরাগল খাঁ প্রভৃতি রাজা ও রাজপুরুষগণ বাংলা সাহিত্যের উৎসাহদাতা ছিলেন। হিন্দু কবিবা মুক্তকণ্ঠে তাঁদের যশ কীর্ত্তন ক’রে গেছেন। কৃত্তিবাসের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন এক গৌড়েশ্বর। তাঁর প্রশংসায় কবি বলেছেন-
“পঞ্চ গৌড় চাপিয়া গৌড়েশ্বর রাজা।
গৌড়েশ্বর পুজা কৈলে গুণের হয় পূজা।”
এই গৌড়েশ্বর খুব সম্ভবতঃ রাজা গণেশ নন। কিন্তু তাঁর পুত্র ও উত্তরাধিকারী জালালুদ্দীন মুহম্মদ শাহ্। রাজা গণেশের রাজত্বকাল অল্প এবং অশান্তিপূর্ণ ছিল। আমরা তাকে সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষকরূপে কোথাও দেখি না। অন্যপক্ষে জালালুদ্দীন মুহম্মদ শাহ্, দীর্ঘকাল শান্তিতে রাজত্ব করেন (১৪১৯-১৪৩১ খ্রীঃ)। তিনি ভরত মল্লিককে নানা উপহার সহ বৃহস্পতি ও রায়মুকুট এই দুই উপাধি দিয়েছিলেন। কৃত্তিবাস স্বধৰ্ম্মত্যাগী ব’লে বোধ হয় এই গৌড়েশ্বরের নাম উল্লেখ করেন নি।
কবীন্দ্র পরমেশ্বর সুলতান খালাউদ্দীন হোসেন শাহের প্রশংসায় বলেছেন-
“কলিযুগ অবতার গুণের আধার
পৃথিবী ভরিয়া যার যশের বিস্তার।
সুলতান আলাউদ্দিন প্রভু গৌড়েশ্বর
এ তিন ভুবনে যাঁর যশের প্রসার।”
শ্রীকর নন্দী নসরত শাহের প্রশংসায় বলেছেন-
“নসরত শাহ, নামে তথি অধিরাজ।
রাম সম প্রজ্য পালে করে রাজ-কাজ।”
কবি শেখর এই নসরত শাহের প্রশংসায় বলেছেন-
“কবিশেখর ভণ অপরূপ রূপ দেখি
রায় নসরত শাহ, ভঙ্গলি কমলমুখী।”
(মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে মুসলমানের অবদান হিন্দু অপেক্ষা কম নয়।) পল্লীগীতিকায় মুসলমানের দান অতি মহৎ। কলিকাতা বিশ্ববিজ্ঞালয়ের অর্থ-সাহায্যে জেঠসহোদরকল্প পরলোকগত দীনেশচন্দ্র সেনের আগ্রহে ও উৎসাহে যে গাথাগুলি সংগৃহীত হয়েছে, তা ছাড়া আরও বহু পল্লী-কবিতা পূর্ববঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং পূর্ববঙ্গের সরকার কি এদিকে মনোযোগ দিবেন? এই পল্লীকাব্য সম্বন্ধে দীনেশবাবু বলেছেন “এই বিরাট সাহিত্যের সূচনা আমি যেদিন পাইয়াছিলাম, সেদিন আমার জীবনের এক স্মরণীয় দিন। আমি সেদিন দেশ-মাতৃকার মোহিনীমূর্ত্তি দেখিয়া মুগ্ধ হইয়াছিলাম, আমাদের বাংলা ভাষার শক্তি ও প্রসার দেখিয়া বিস্মিত হইয়াছিলাম এবং হিন্দু ও মুসলমানের যে যুগলরূপ দেখিয়াছিলাম – তাহাতে চক্ষু জুড়াইয়া গিয়াছিল।” এ পর্যন্ত কলিকাতা বিশ্ববিদ্যলয় ৪৫টি পল্লীগাথা প্রকাশ করেছেন। এর মধ্যে ২৩টি মুসলমান কবির রচিত।
গত ব্রিটিশ যুগের ও বর্তমানের মুসলমানের সাহিত্য সাধনার কথা সকলের সুবিদিত। সুতরাং এখানে বলা নিষ্প্রয়োজন। আমাদের প্রয়োজন আছে আদি কাল থেকে অধুনিক কাল পর্যন্ত বাংলার মুসলমানের সাহিত্য সাধনার বিস্তৃত ইতিহাস লেখা এবং প্রাচীন মুসলিম লেখকদের গ্রন্থ প্রকাশ করা। আমাদের সাইত্যিক বন্ধুরা কি এ দিকে অবহিত এবং অগ্রসর হবেন? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এবং সরকারের অবশ্য কর্তব্য পূর্ববাংলার সকল স্থান থেকে পুথি, পল্লীগীতি, পল্লীকাব্য ও উপকথা সংগ্রহ ক’রে রক্ষা করা। বিশ্ববিদ্যালয়ের পুথিবিভাগকে আরও সমৃদ্ধ করতে হবে। মোট কথা আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে পূর্ববঙ্গের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়রূপে দেখতে চাই, সরকারী নওকরখানা রূপে নয়। এখানে আমি অষ্টাদশ শতাব্দীর কবি “নুরনামার” লেখক নোয়াখালির সন্দ্বীপনিবাসী শ্রাবস্তুল হাকিমের একটি কথা আমাদের দেশের একশ্রেণীর লোককে শুনিয়ে রাখছি –
“যে সবে বঙ্গেতে জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী।
সে সবার কিবা রীতি নির্ণয় না জানি ।।
মাতা পিতামহ ক্রমে বঙ্গেতে বসতি।
দেশীভাষা উপদেশ মনে হিত অতি।।
দেশীভাষা বিদ্যা যার মনে না জুরায়।
নিজ দেশ তেয়াগি কেন বিদেশে না যায়।”
যেমন আমরা বাংলার হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ খ্রীস্টান এক মিশ্রিত জাতি, আমাদের ভাষা বাংলাও তেমনি এক মিশ্রিত ভাষা। বাংলার উৎপত্তি গৌড় অপভ্রংশ থেকে। সংস্কৃতের সঙ্গে তার সম্পর্কটা অতিদূরের। তবুও যেমন কেউ বড় মানুষের সঙ্গে একটা সম্পর্ক আবিষ্কার বা উদ্ভাবন করেন আত্মগৌরবের জন্য, তা তিনি মেসো মশায়ের খড়তুত বোনের মামা শ্বশুরের পিসতুত ভাই হোন না কেন, সেই রকমই আমরা বাংলার সঙ্গে সংস্কৃতের কুটুম্বিতা পাতাই। কথাটা কিছু অতিরঞ্জিত হ’ল বটে। বিশেষ করে সংস্কৃতের ঋণ বাংলা ভাষার আপাদমস্তক এমন ভাড়াক্রান্ত করেছে, যে সম্পর্কটা স্বীকার না করেই অনেকে পারেন না। ভাষাতত্ত্বামোদীদের জন্য একটা উদাহরণ দেই – “তোমরা ঐ গাছটা দেখো” এই গৌড় অপভ্রংশ হবে – “তুমহেলোআ ওহি গচ্ছং দেক্খহ”। এর সংস্কৃত হচ্ছে – ‘যুয়ং অমুং বৃক্ষং পশ্যত।” যুয়ং – তোমার, অমুঙ – ঐ বৃক্ষং-গাছ, পশ্যত-দেখ, – বাংলার কোন শব্দই সংস্কৃত থেকে আসে নি। তবে বাংলার গোড়ায় যে আর্য্য ভাষা, তা কেউ অস্বীকার করতে পারেন না।
সেই আর্য্যভাষার সঙ্গে মিশেছে আদি যুগে কোল, মধ্যযুগে পারসী ও পারসীর ভিতর দিয়ে কিছু আরবী ও যৎসামান্য তুর্কি, এবং পরবর্তী যুগে পর্তুগিজ আর ইংরেজি। দু’চারটা দ্রাবিড়, মোঙ্গলীয়, ফরাসী, ওলন্দাজ প্রভৃতি ভাষার শব্দও বাংলায় আছে। মিশ্রভাষা বলে আমাদের কিছু লজ্জা নেই। পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা চলিত ভাষা ইংরেজির প্রায় পনের আনা শব্দসমষ্টি বিদেশী। পশ্চিম বঙ্গের পরিভাষা-নির্মাণ সমিতি খাঁটি সংস্কৃতভাষায় পরিভাষা রচনা করেছেন। পাঠ্যপুস্তকে এরূপ খাঁটি আর্যভাষ্য চলতে পাবে: কিন্তু ভাষায় চলে না। বহুদিন পূর্ব্বে রেলওয়ের স্থানে লৌহবর্ত্ম, টেলিগ্রাফের স্থানে তাড়িতবার্ত্তাবহ প্রভৃতি সংস্কৃত প্রতিশব্দ তৈরি করা হয়েছিল; কিন্তু সেগুলি পৌরাণিক বিশ্বামিত্রের সৃষ্টির মতই অচল হয়ে গেছে। আমাদের মনে রাখতে হবে ভাষার ক্ষেত্রে গোঁড়ামি, বা ছুৎমার্গের কোনও স্থান নেই।
ঘৃণা ঘৃণাকে জন্ম দেয়। গোঁড়ামি গোঁড়ামিকে জন্ম দেয়। এক দল যেমন বাংলাকে সংস্কৃত-ঘেঁষা করতে চেয়েছে, তেমনি আর একদল বাংলাকে আরবী পারসী ঘেঁষা করতে উদ্যত হয়েছে। এক দল চাচ্ছে খাঁটি বাংলাকে বলি দিতে, আর এক দল চাচ্ছে ‘জবে’ করতে। একদিকে কামারের খাঁড়া, আর একদিকে কসাইয়ের ছুরি।
নদীর গতিপথ যেমন নির্দেশ করে দেওয়া যায় না, ভাষায়ও তেমনি। একমাত্র কালই ভাষার গতি নির্দিষ্ট করে। ভাষার রীতি (Style) ও গতি কোন নির্দ্দিষ্ট ধরা বাঁধা নিয়মের অধীন হ’তে পারে না। ফরাসী ভাষায় বলে Le style c’est I’homme – ভাষার রীতি সেটা মানুষ – অর্থাৎ মানুষে মানুষে যেমন তফাৎ, প্রত্যেক লোকের রচনাতেও তেমনি তফাৎ থাকা স্বাভাবিক। এই পার্থক্য নির্ভর করে লেখকের শিক্ষাদীক্ষা, বংশ এবং পরিবেষ্টনীর উপর। মোট কথা ভাষা হওয়া চাই সহজ, সরল এবং ভাষার রীতি (style) হওয়া চাই স্বতঃস্ফূর্ত, সুন্দর ও মধুর। এ সাধনার ধন। ঘষে মেজে রূপ আর ধ’রে বেঁধে পীরিত যেমন, নিয়মে বেঁধে ভাষার রীতি শেখানও তেমন। অবশ্য প্রয়োজনবোধে (খামখেয়ালিতে নয়) সংস্কৃত, আরবী, পারসী, ইংরেজি, জার্ম্মান, রুস যে কোন ভাষা থেকে আমাদের শব্দ ধার করতে হবে। কিন্তু আমাদের দু’টি কথা স্মরণ রাখা উচিত – ভাষা, ভাব প্রকাশের জন্য ভাব-গোপনের জন্ম নয়; আর সাহিত্যের প্রাণ সৌন্দর্যা, গোড়ামি নয়।
কিছু দিন থেকে বানান ও অক্ষর সমস্যা দেশে দেখা দিয়েছে। সংস্কার-মুক্তভাবে এগুলির আলোচনা করা উচিত এবং তার জন্য বিশেষজ্ঞদের নিয়ে পরামর্শ সমিতি গঠন করা আবশ্যক। যাঁরা পালী, প্রাকৃত ও ধ্বনিতত্ত্বের সংবাদ রাখেন, তাঁরা স্বীকার করতে বাধ্য যে বাংলা বানান অনেকটা অবৈজ্ঞানিক, সুতরাং তার সংস্কার দরকার। স্বাধীন পূর্ববাংলায় কেউ আরবী হরফে, কেউ বা রোমান অক্ষরে বাংলা লিখতে উপদেশ দিচ্ছেন। কিন্তু বাংলার শতকরা ৮৫ জন যে নিরক্ষর, তাদের মধ্যে অক্ষরজ্ঞান বিস্তারের জন্য কি চেষ্টা হচ্ছে? যদি পূর্ববাংলার বাইরে বাংলা দেশ না থাকত আর যদি গোটা বাংলা দেশে মুসলমান ভিন্ন অন্য সম্প্রদায় না থাকৃত, তবে এই অক্ষরের প্রশ্নটা এত সঙ্গীন হত না। আমাদের বাংলাভাষী প্রতিবেশী রাষ্ট্র ও সম্প্রদায়ের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে হবে। কাজেই বাংলা অক্ষর ছাড়তে পারা যায় না। পাকিস্তান বাষ্ট্র ও মুসলিম জগতের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার প্রয়োজনীয়তা আমরা স্বীকার করি। তার উপায় আরবী হরফ নয়। তার উপায় আরবী ভাষা। আরবী হরফে বাংলা লিখলে বাংলার বিরাট সাহিত্য ভাণ্ডার থেকে আমাদিগে বঞ্চিত হ’তে হবে। অধিকন্তু আরবীতে এতগুলি নুতন অক্ষর ও স্বরচিহ্ন যোগ করতে হবে যে বাংলার বাইরে তা যে কেউ অনায়াসে পড়তে পারবে, তা বোধ হয় না। ফলে যেমন উর্দু ভাষা না জানলে কেউ উর্দু পড়তে পারে না, তেমনই হবে বাংলা।
বিদেশীর জন্য অক্ষর জ্ঞানের পূর্বে ভাষাজ্ঞান – এমন অদ্ভুত কল্পনা এ বৈজ্ঞানিক যুগে খাটেনা। মীম –য়া-নুন এই বানানে মেঁ’, মাঁয়, ময়ন, মিয়ন, মুয়িন, ময়ুন মীন, মেন, মুয়ন এই রকম বহু রূপেই পড়া যেতে পারে। যদি কোন বৈজ্ঞানিক অক্ষর নিতে হয়, তবে International Phonetic Script ব্যবহার করতে হয়। অক্ষর সম্বন্ধে বিবেচনা করতে হলে ছাপাখানা, টাইপ-রাইটার, শর্টহ্যাণ্ড এবং টেলিগ্রাফের সুবিধা ও অসুবিধার কথা মনে করতে হবে। বিশেষ ক’রে আজ যখন বাংলাকে প্রাদেশিক রাষ্ট্রভাষারূপে গ্রহণ করা হয়েছে এবং ভবিষ্যতে পাকিস্তান ও ভারত রাষ্ট্রের অন্যতম রাষ্ট্রভাষারূপে গ্রহণেরও সম্ভাবনা রয়েছে, তখন বাংলা ভাষার রাজনৈতিক সম্ভাবনা ও উপযোগিতার কথা চিন্তা করারও প্রয়োজন রয়েছে। জনগণের মধ্যে শিক্ষা ও জ্ঞান বিস্তারের জন্ম Basic English-এর মত এক সোজা বাংলার বিষয় আমাদের বিবেচনা করা কর্ত্তব্য। যদি ৮৫০টি ইংরেজি কথায় সমস্ত প্রয়োজনীয় ভাব প্রকাশ করতে পারা যায়, তবে বাংলায় তা কেন সম্ভব নয়?
আমরা পূর্ববাংলার সরকারকে ধন্যবাদ দেই যে তাঁরা বাংলাকে পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক রাষ্ট্রভাষা রূপে গ্রহণ ক’রে বাংলা ভাষার দাবীকে আংশিকরূপে স্বীকার করেছেন। কিন্তু সরকারের ও জনসাধারণের এক বিপুল কর্তব্য সন্মুখে রয়েছে। পূর্ববাংলা জনসংখ্যায় গ্রেটব্রিটেন ফ্রান্স, ইতালি, স্পেন, পর্তুগাল, আরব, পারস্য, তুর্কি, প্রভৃতি দেশের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। এই সোনার বাংলাকে কেবল জনে নয়, ধনে ধান্যে, জ্ঞানে গুণে, শিল্প-বিজ্ঞানে পৃথিবীর যে কোন সভ্য দেশের সমকক্ষ করতে হবে। তাই কেবল কাব্য ও উপন্যাসের ক্ষেত্রে বাংলাকে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। দর্শন, ইতিহাস, ভূগোল, গণিত রসায়ন, পদার্থবিদ্যা, ভূতত্ত্ব, জীবতত্ত্ব, ভাষাতত্ত্ব, অর্থনীতি, মনোবিজ্ঞান, প্রত্নতত্ত্ব, প্রভৃতি জ্ঞানবিজ্ঞানের সকল বিভাগে বাংলাকে উচ্চ আসন নিতে ও দিতে হবে। তার জন্য শিক্ষার মাধ্যম স্কুল কলেজ মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে আগাগোড়া বাংলা করতে হবে।…
আমাদিগকে একটি একাডেমী (পরিষদ) গড়তে হবে, যার কর্তব্য হবে পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষা থেকে জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সাহিতা বিষয়ে শ্রেষ্ঠ গ্রন্থাবলীর অনুবাদ বাংলায় প্রকাশ। এজন্য এক পরিভাষা-সমিতির প্রয়োজন আছে। বিশেষ ক’রে, আরবী, পারসী এবং উর্দু ভাষা থেকে ইসলাম, ধৰ্ম্ম ও সংস্কৃতি সম্বন্ধে বইগুলির অনুবাদ একান্ত প্রয়োজনীয় হ’য়ে পড়েছে।
বাছবিচার
Latest posts by বাছবিচার (see all)
- আমি – জহির রায়হান (১৯৬৭) - অক্টোবর 31, 2024
- (বই থিকা) ঈশ্বর কোটির রঙ্গকৌতুক – কমলকুমার মজুমদার - অক্টোবর 12, 2024
- নজরুলের চিঠি: ফজিলাতুন্নেসা ও নারগিস’কে - জুন 13, 2024