আওয়ামী ফ্যাসিস্ট ন্যারেটিভ যেভাবে তৈয়ার হয়
প্রথমেই দুইটা নোক্তা দিয়ে রাখি যে অমি রহমান পিয়ালরে নিয়া আলাপ করার মতন খারাপ রুচি আমার না এবং প্রথমেই দুইটা নোক্তা দিয়ে রাখি যে পিয়ালরে নিয়া আলাপ করার মতন খারাপ রুচি আমার না এবং যে কোনো হত্যা, নির্যাতন, ধ্বংসযজ্ঞের পক্ষে ইনিয়ে বিনিয়ে যে কোন প্রকার ন্যারেটিভ উৎপাদনের বিপক্ষে আমি।
পিয়ালের এই লেখাটা নিয়া কথা কওয়ার আগে একটা ঘটনা কই। সম্ভবত ২০০৫-২০০৬ এর দিকের কথা।বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সঠিক ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আওয়ামী লীগের ব্যাপক অভিযোগ দেখতাম পত্রপত্রিকায়। তাদের কমন অভিযোগ ছিল সবার যে নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানে না। তো ইতিহাস অনুরাগী হিসেবে ও বেশকিছু ইতিহাসভিত্তিক বইপত্র পড়ার পড়েও মনে হইতো যে আসলেই মনে হয় সঠিক ইতিহাস জানি না। জানতে হবে। সদ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া কনফিউজড কিন্তু জানতে ইচ্ছুক আমার সাথে পরিচয় হয় তখন বিপ্লব দা এর সাথে। বিপ্লব দা তখন ভোরের কাগজ অথবা কোনো একটা পত্রিকার ফটোসাংবাদিক। বিপ্লব দা আমারে নিয়ে গেলেন মহাখালিতে, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির অফিসে।
ঘাদানিকের অফিসে গিয়া ভালই লাগলো কারন প্রচুর বই দেখলাম ছড়ায়ে ছিটায়ে, পুরা অফিসজুড়ে। মহাখালিতে ঐ অফিসেই ঘাদানিকের নিজস্ব প্রেস ছিল। ওই প্রেসেই ছাপা হইতো সব বই।প্রায় সবগুলো বইএর মূল বিষয় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, রণাঙ্গনের ইতিহাস, রাজনৈতিক দলগুলার ভূমিকা ব্লা ব্লা। বিপ্লব দা কইলো সত্যিকারের ইতিহাস জানতে পারবা এই বইগুলা পড়লে। আমি আগ্রহ নিয়া শুরু করলাম পড়া। যেদিন যেতাম একগাদা বই নিয়ে চলে আসতাম। শেষ হইলে আবার যেতাম। ফেরত দেওয়া লাগতো না। কাজী মুকুল ভাই উল্টো ডাবল ডাবল বই ধরায়া দিতো হলের অন্যান্য ছেলেরা যারা বই পড়ে তাদেরকে দিতে।
মাঝে মাঝে মুকুল ভাই ফোন দিয়া অফিসে যেতে কইতো। গিয়া দেখতাম সেমিনার হলে ৩০/৪০ জনের মতন বিভিম্ন বয়েসী মানুষ। পিছে গিয়া চুপচাপ শুনতাম। অধিকাংশ টাইমে বয়ান দিতো শাহরিয়ার কবির ভাই, উনার অনুপস্থিতিতে মুনতাসির মামুন ভাই, মাঝে মাঝে শ্যামলি নাসরিন চৌধুরী, ভাস্কর প্রিয়ভাষিনী প্রমুখ তাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলতেন কীভাবে জামায়াতের নেতারা যুদ্ধাপরাধে জড়িত ছিল এবং কেন তাদের নিষিদ্ধ করা উচিত।
তো তেমনি এক দিনে শাহরিয়ার ভাই রে থামায়া দিয়া প্রশ্ন করছিলাম যে গণতান্ত্রিক দেশে জামায়াত, বিএনপি রে কেন রাজনীতি করতে দিতে সমস্যা? যুদ্ধাপরাধ তো ব্যক্তির। দলকে কেন নিষিদ্ধ করতে হবে?
উত্তরে কইলেন- দেশ একটা রেল লাইনের মতন। একটাই ট্রেন এই রেললাইন ধরে সামনের দিকে আগাইতে পারে। বাংলাদেশ নামক রেললাইন ধরে শুধু আওয়ামী লীগের ট্রেনই চলতে পারে কেননা তারা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি। বিএনপি ও জামায়াত যেহেতু মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারী তাই এই ট্রেন চালানোর অধিকার নাই।
উত্তরে সন্তুষ্ট হইতে না পেরে আরো কী কী যেন বলতে গিয়েছিলাম কিন্তু মুকুল ভাই থামায়ে দিয়ে কইলো সেমিনারের পর অফিসে আলাদভাবে বসবো আমরা। তখন বাকী প্রশ্ন শুনবো।
এরপর বহুদিন বহু যুক্তি-তর্ক-ছাপানো বই থেকে উদ্ধৃতি দিয়া জিজ্ঞাসা- সদুত্তর নাই- এমন অবস্থা কন্টিনিউ থাকায় একটা সময় ‘বেয়াদপ’ উপাধী পাইলাম। শাহরিয়ার ভাই কথা বন্ধ কইরা দিলো। বেয়াদপি কন্টিনিউ করার কারনে একটা সময় বাকিদের সাথেও সকল প্রকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হইয়া গেলো।
শাহরিয়ার কবিরের এই উত্তরের সাথে পিয়ালের এই স্ট্যাটাসের মূল বক্তব্য দেখেন।
মিল পান?
আওয়ামী লীগ বাদে অন্য কোন দল মত পথের কোনো অস্তিত্ব থাকতে পারবে না যেন দেশে- যেন বা তাদের জীবনের দাম নাই, মরণের দাম নাই, দেশের কোনো নাগরিকের কোনো দাম নাই, অধিকার নাই যদি না তারা আওয়ামী লীগ বা সমমনা দলের হার্ড ও সফট সমর্থক না হয়।
মনে করায়ে দেই যে পিয়াল এখন ঘাদানিকের নেতা। আওয়ামী ফ্যাসিবাদী ন্যারেটিভ উৎপাদনের ধুঁকতে থাকা কারখানার হাল ধরছে এখন।
নগ্নভাবে ফ্যাসিস্ট চরিত্র জানান দিতেছে কীভাবে দেখেন। ৩২ নাম্বার ভাংচুরে জড়িতদের বিচার চাইলেন না। খুন করতে চাইলেন। এবং তারা এই খুন করতে চাওয়া ও ইভেন করাকে জায়েজ ভাবেন যেহেতু তারা বাংলাদেশ নামক রেললাইনে উঠার একমাত্র দাবিদার।
এবং পিয়ালের দ্বিতীয় লেখাটা দেখলে আপনারা আরো পরিষ্কার হয়ে যাবেন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলে কেন তারা ইভেন এই দেশের নাগরিক হয়ে থাকতে পছন্দ করেন না বা চান না। ও শাহরিয়ার কবিরের ব্যাখ্যার সাথে পিয়ালের বক্তব্য মিলিয়ে পড়লে বুঝতে আর অসুবিধা থাকার কথা না ফ্যাসিস্ট ন্যারেটিভের ফাঁদ কীভাবে তৈয়ার হয়।
পিয়ালের দুইটি লেখার সংযুক্তিঃ
নাশাদ ময়ুখ
Latest posts by নাশাদ ময়ুখ (see all)
- আওয়ামী ফ্যাসিস্ট ন্যারেটিভ যেভাবে তৈয়ার হয় - আগস্ট 8, 2024