৩৬শে জুলাইয়ের এক মাস পরে একটা সকাল
সকালে বাইরে গেছিলাম, ভালোই লাগতেছিল সব মোটামুটি।
ইস্কুল-অফিসগামী গিট্টু লাগা জ্যাম ছাড়া আর কোথাও কোন প্রব্লেম পাইলাম না! ট্রাফিক ভাইজানেরা আর ২/৪ জন সার্জেন্ট আস্তে-ধীরে রিলাক্সে, ভুড়ি হেলায়ে-দুলায়ে ট্রাফিক ছাড়তেছেন, মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডে এক ইয়াং বাইকারের বাইকে লাগায় দিলো এক মুড়ির টিন বাস। সেতো দিলো আটকায় বাসখান! আর পিছনে লাইগা গেলো গিট্টু! বাইকার চ্যাংড়া পোলা, শুকনা-পটকা কিন্তু একটা ছাত্র ছাত্র ভাব আছে চেহারায়, কন্ডাকটর মামা নাইমা আইসা মিউচুয়াল করতে লাগলো। স্টুডেন্ট ইমেজের বাইকারের মুখের ভাবও মনে হইল না খুব বেশি মারমুখি টাইপ কিছু! এইটা ছুইটা যাবে একটু পরেই।
আরেকটু আগাইতেই ২৭-এর কোনায় আমার অটোরিকশা তেছরা কইরা তার অটো রাখায়, পিছের কাভার্ড ভ্যান ড্রাইভার চিল্লাইতে লাগলো। আমাদের নেয়া অটো দেখি লড়ে-চড়ে না। পাশের আরেক আধা-বয়সী হোন্ডা সওয়ারী লাগাইলো ঝাড়ি, আমিও দিলাম হাল্কা ঝাড়ি- ‘আরে সরাও মিয়া, পিছেরটার রাস্তা আটকাইছো ক্যান, যাইতে দিবা না?’ সে সরাইলো।
এই কইরা কইরা বাচ্চাদেরে ইস্কুলে নামায়া দিয়া আইসা শাক কিনলাম। কি জানি নতুন নামের একটা, আখর না কাকর কি জানি! বুঝি নাই ভালো। শাকওয়ালা আমারে রেসিপিও বইলা দিলেন, কালিজিরা দিতে হবে বার বার কইলেন। মনোযোগ দিয়া মাথায় টুইকা নিলাম। এইটাই রান্না হবে আজকে বিকালে। ২ রকম শাক, ৫টাকা ছাড় দিয়া দিলেন!
তারপর কিনলাম জালি কুমড়া, অসময়ের ফুলকপি আর ১০টাকার কাঃমরিচ। ১০টাকার মরিচ শুইনা সব্জিওয়ালা বলে- ১০টাকার মরিচ আর কি নিবেন!! ‘কাঃমরিচ দ্রুত পচে, ঐটাতেই হবে, লাগলে আবার নিব’ বলাতে বলেন যে- আচ্ছা দেই! এইখানেও ছাড় পায়া গেলাম মোটের উপরে আরও ১০টাকা! মনে হইল, মরিচগুলাই ফ্রি-তে পাইলাম মনে হয়। মাত্রই ভ্যান নিয়া আসছেন, আমিই বউনি কাস্টমার ছিলাম নাকি কে জানে! একটু পরেই আরেক কাস্টমার আসলো উনার, মনে হইল পুরানা চেনা এবং তারা ২জনে খোশমেজাজে কেনাকাটার আলাপ জুইড়া দিলেন।
এদিকে আমার সেই অটো-রিকশা ভাড়া একটু বেশি চাইতেছিল মনে হয়- আসলে ভাড়া ঠিক না কইরাই তাড়াহুড়ায় আপ-ডাউন নিয়া নিছিলাম। কিন্তু সেও একটুখানি মুলামুলির পরে রফা যা হইল, নিয়া নিলো, আপত্তি ছাড়াই।
সো, মনে হইতেছিল- আজকের সকালে মোহাম্মদপুর টু সোবহানবাগের মানুষেরা হ্যাপীলিই সকাল শুরু করতে পারছেন। মানুষজন ওভারওল হাসিখুশিই, শান্ত আমেজেই একরকম। ভ্যান ড্রাইভারদের চান্দা-ফান্দা দিতে হইতেছে কিনা যদিও তা জিগাই নাই। কিন্তু যাহোক, হাসিনা রেজিমের পরে দেশের মানুষ দেশটারে ওউন করতেছে, নিজেদের বলে ভাবতাছে সবাই, সবাই দায়িত্ববোধ করতাছে, আলগা কোন লিডারের চাপ নাই – এইটাই একরকম মনে হয় আমার। ৫ আগস্টের পরে যতোবার বাইরে যাই, ততোবার।
খালি ফেসবুকে ঢুকলেই অন্যরকম লাগে দেশটারে… মনে হয় যে এই বুঝি গেলো!!
নানান টেনশন, ঝগড়াঝাটি, মাইর-পিট। বলতেছি না যে, ওইগুলাও সব সত্যি না যে, তা না। ওইগুলাও আছে, এইটাও আছে।
সকালের আলাপ তো মাঝেমধ্যে লেখি আমি। অনেকদিন লিখতে পারতেছিলাম না। আজকের সকালটারে লেখতে পাইরা ভালো লাগতেছে!
দিলশাদ সিদ্দিকা স্বাতি
Latest posts by দিলশাদ সিদ্দিকা স্বাতি (see all)
- ৩৬শে জুলাইয়ের এক মাস পরে একটা সকাল - সেপ্টেম্বর 9, 2024