পপুলারিটির ধান্দা
জুলাই ম্যাসাকার আর্কাইভের হাসান ইনাম একটা পোস্ট দিছিলো, অর্থনৈতিক এবং লজিস্টিক সাপোর্ট না পেয়ে কাজ করতে না পারা প্রসঙ্গে। পোস্টটা ভাইরাল হয়।
সেইখানে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ কমেন্ট করে, আমার অফিসে এসে দেখা করো, কি কি লাগবে বলো।
এই কমেন্ট দেখে যে কী পরিমাণ বিরক্ত হইছি! বিরক্তির কারণগুলা বলি।
প্রথমত, আসিফ মাহমুদের নেটওয়ার্ক এত বাজে না যে, হাসান ইনামের নম্বর ম্যানেজ করতে ৫ মিনিটের বেশি সময় লাগবে। তারে ফোন দিয়েই পার্সোনালি বলা যায়, তাইলে আরো বেশি আন্তরিকতা থাকে। কিন্তু সে আন্তরিকতার বদলে পপুলারিটি বাইছা নিলো!
দ্বিতীয়ত, কাজ তো শুধু জুলাই ম্যাসাকার আর্কাইভ করতেছে না, এরকম কমসে কম ২০টা প্রতিষ্ঠান শুধু রাজধানীতেই আছে যারা জুলাই নিয়ে কাজ করতেছে। তাদের যদি এমন অর্থনৈতিক এবং লজিস্টিক সমস্যা হয় তাইলে কি করবে? পোস্ট করবে, ভাইরাল হবে, তারপর সেখানে গিয়া আসিফ মাহমুদ কমেন্ট করবে? এইটা কি সম্ভব? এইটা কোনো সমাধান?
মানে বলতে চাইতেছি, সিস্টেম আপগ্রেড না কইরা পার্সোনাল শো অফ করে পপুলারিটি বাইছা নিচ্ছে কেন? জুলাই নিয়ে কাজ করার সবগুলো প্রতিষ্ঠানরে সহায়তা করার মতো সিস্টেম না তৈরি করে পার্সোনাল শো অফ করে কেন?
আজকেও আসিফ মাহমুদের একই ধরনের কাজ।
ফেলানীর পরিবারের লগে দেখা করছে। তারপর ঘোষণা দিছে, তাদের পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্ব সে নিবে।
কথা হইলো, বর্ডারে বিএসএফের গুলিতে তো শুধু ফেলানী না, এরকম হাজারো ফেলানী খু-ন হয়, তাদের পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্ব কে নেবে? ফেলানীর মতো তারা ভাইরাল না বলে কেউ নিবে না দায়িত্ব?
এইখানে আসিফ মাহমুদ পপুলারিটির ধান্দা না করে যদি একটা সিস্টেম আপগ্রেড করতো যে, বর্ডারে বিএসএফের গুলিতে নিরপরাধ কেউ খুন হলে তারে অমুক মন্ত্রণালয় থেকে এককালীন বা যে কোনোভাবে সহায়তা করা হবে। তাইলে একটা কথা ছিল। কিন্তু তা না করে শুধু এক ফেলানী পরিবারের দায়িত্ব নিয়া পপুলারিটির ধান্দা করলো।
আবার আজকে জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের আলাপে সারজিস কমেন্ট করলো, আরেকজনকে দায়িত্ব নিতে। আরে বাল, ব্যক্তি চেঞ্জ হলেই কি সব ঠিক হয়ে যাবে? হাসিনার জায়গায় ইউনুস বসছে, কোনো চেঞ্জ হইছে? কামালের জায়গায় জাহাঙ্গীর বসছে, কোন্ বালের চেঞ্জ হইছে?
তুই কেন পারতেছস না এইটা খোলাসা কর, তোরা কেন ব্যর্থ এইটা খোলাসা কর, যারা কথা বলতেছে তাদের লগে বসে কথা বল, পরামর্শ নে, কেমনে কাজ করলে এক মাসে সব সমাধান হবে সেই ব্যাপারে আলাপ কর। কিন্তু তা না করে দায়িত্ব ছাড়ার কথা বলে! আরে বাল, দায়িত্বে তুই থাকলেই কি আর রিপন থাকলেই কি?
আমরা তো পার্সোনাল কোনো সহানুভূতির জন্য জুলাই অভ্যুত্থান করি নাই। আমরা একটা সিস্টেম চেঞ্জ করতে চাইছি। ১ দফার ঘোষণায় লেখা ছিল, “ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ এবং নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত”।
তো, ব্যবস্থা, মানে আগের সিস্টেম চেঞ্জ করে আপগ্রেড না করে এরকম পার্সোনাল শো অফ করে পপুলারিটি ধান্দা করতেছে কেন?
পার্সোনাল শো অফ বাদ দেন। পুরানা সিস্টেম বদলাইয়া নতুন সিস্টেম বসান, যেভাবে দ্রুত কাজ হবে। নিজস্বার্থ বাদ দিয়া জনস্বার্থে কাজ করেন।
আমরা হাসিনার স্বৈরাচারের গোঁড়া বাকশালী মুজিবরে ধইরা ফেলতে পারছি, আর আপনাগো পপুলারিটির ধান্দা ধরতে পারমু না?
মোহাম্মদ আবু সাঈদ
Latest posts by মোহাম্মদ আবু সাঈদ (see all)
- পপুলারিটির ধান্দা - জানুয়ারি 9, 2025