Main menu

মানুষের গন্তব্য

হাইস্কুলে ওঠার পর সায়েন্স ফিকশনে খুব আগ্রহ হইছিল। প্রচুর পড়ছি। আজিমভ থেকে জুলভার্ন বা রাশিয়ান ক্লাসিক-কিছুই বাদ দেই নাই। ওই সময়ের একটা গল্প পড়া ছিল। লেখক টেখক আর মনে নাই। গল্পটা এমন যে, একজন ভবিষ্যতের সায়েন্টিস্ট জানতে চায় যে, প্রথম কোন মানুষ আগুন জ্বালাইতে শিখছিলো। এইজন্য সে টাইম মেশিনে করে অতীতে যায়। গিয়ে সেইখানে সে আটকা পড়ে এবং সেই আসলে প্রথম মানুষকে আগুন জ্বালাইতে শিখাইছিলো।

অথবা ইদিপাসের কথা মনে করেন। সে ভবিষ্যতবাণী অনুযায়ী, তার বাপরে মারতে চায় নাই এবং মা’রে বিয়ে করতে চায় নাই। এইটা এভয়েড করতে সে যা করে, তাই-ই বরং তারে একই গন্তব্যে নিয়ে যায়।

এগুলা মূলত ফ্রি উইল সংক্রান্ত সমস্যা। কোয়ান্টাম ফিজিক্স আসার পরও এই ক্লাসিক সমস্যাগুলাই রয়ে গেছে।

পার্টিকালের ডুয়েল বিহেভেরিয়ার এবং অবজার্ভার ইফেক্টের (সুপারপজিশন) অনেকগুলা পসিবল ইন্টারপ্রিটেশন আছে। জগত অনেকগুলা অথবা একই জগত প্রত্যেক চয়েসে নতুন জগত তৈরি করতেছে কিংবা ফিজিকাল রিয়েলিটিই সিমুলেশন বা অবজেক্ট বলতে যা বুঝি, তার কনশাসনেস আছে। এইরকম।

টেড চিয়াঙের একটা গল্প পড়ছি কিছুদিন আগে। নাম-এংজাইটি ইজ দা ডিজিনেস অফ ফ্রিডম/এক্সেলেশন। নামটা কান্টের একটা কোটেশন । যেইখানে, কোয়ান্টাম কম্পিউটারের মাধ্যমে আপনি আপনার অন্য রিয়েলিটির ভেরিয়েন্টের সাথে চ্যাট করতে পারেন। মনে করেন, আপনার কানাডা মাইগ্রেট করার কথা। আপনি করেন নাই। কিন্তু ভিন্ন কোন এক রিয়েলিটির ‘আপনি’ কানাডা মাইগ্রেট করছেন। তার সাথে আপনি যোগাযোগ করতে পারবেন। তার এই চয়েসের কারণে আপনার লাইফ এবং তার লাইফে আকাশ পাতাল চেঞ্জ হইতে পারে। বাটারফ্লাই ইফেক্ট।

তো, আমরা তো ভাবি যে, এইটা না করলে, আরেকটা করলেই ভাল হইতো। কিন্তু রিয়েলি সেইটা কনফ্রন্ট করা আরো কঠিন। স্পেশালি যদি দেখেন, যা করেন নাই, তাতেই ভাল হইতো।

ম্যাট্রিক্সে দুইটা রিয়েলিটি আছে। একটা সিমুলেশন, আরেকটা অথেনটিক রিয়েলিটি। সিমুলেশনের জগত এমনিতে সুন্দর। তাইলে কিয়ানু রিভস কিংবা মর্ফিয়ুস কেন সেইখানে থাকতে চায় না? কারণ, ফ্রি উইল নাই। আপনার সব এক্ট হিসাব করা। প্রিডিটারমাইন্ড। একজন ভিলেন কিন্তু সিমুলেশনে থাকারই ডিসিশান নিয়ে বিট্রে করে। সমস্যা হইতেছে, কিয়ানু রিভসদের অথেনটিক রিয়েলিটির গ্যারান্টি কি?

এলেক্স গারল্যান্ডের ডেভস (সিরিজ) সেই জায়গায় একটা ইন্টারেস্টিং ইনসাইট আনছে। মনে করেন, এইটা অথেনটিক রিয়েলিটি। এইটা বর্তমান। আপনি কোয়ান্টাম কম্পিউটারের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ দেখলেন। কিন্তু আপনি কোন এক্ট আসলে চেঞ্জ করতে পারেন না। যাই-ই করেন, ভবিষ্যতে যেইটা হবে, সেইটাই করতেছেন। কিন্তু আপনার সেইটা ফিল হয় না। মনে হয়, নিজে করতেছেন। কজ ইফেক্ট মেনে চলতেছে। যে ভবিষ্যৎ দেখে নাই, তার জন্য সহজ হইলেও যে ভবিষ্যৎ দেখছে, তারজন্য কঠিন। কারণ, দেখার পরও কিছু করার নাই। অর্থাৎ বর্তমান হইতেছে ভবিষ্যতের সিমুলেশনের মত।

যখন একটা গাড়ির গতিবেগ হিসাব করেন, তখন আপনি তো বলতে পারেন যে, ঢাকা থেকে রওনা হওয়ার দুই ঘন্টা পর কোন জায়গায় গাড়িটা থাকতে পারে। ভবিষ্যতে দেখার মতই। সব ফ্যাক্টর হিসাবে নিলে একুরেটলি বলাও সম্ভব। সব ডেটা থাকলে আসলে থিওরেটিকালি র‍্যান্ডম ইভেন্ট বলে কি কিছু থাকে?

বাইশ বা একুশের ফিজিক্সের নোবেল ছিল কোয়ান্টাম এনট্যাঙ্গেলমেন্টের এক্সপেরিমেন্টের ওপর। সহজ কথায়, জগতের যেকোন জায়গার দুইটা এনট্যাঙ্গেলড পার্টিকেল ডিপেন্ডেন্ডলি এক্ট করে অথচ তাদের মধ্যে কোন যোগাযোগ নাই মানে আলোর বেগেও একে অপরের কাছে ডেটা পাঠানো সম্ভব না। ইন্টারপ্রিটেশনের একটা হইতেছে যে, কজ ইফেক্ট কি সিমুলেশন কিনা? প্রজেকশন কিনা? আইনস্টাইন নাম দিছিলেন, স্পুকি থিংস ওয়ার্কস এট আ ডিস্টেন্স।

আম্মার অসুস্থতার সময় আমি তার খুব ক্রিটিকাল অবস্থা ডিল করছি। ডাক্তারেরা রোগ ধরতে পারতেছিলেন না। প্রত্যেকবার ভাবতাম, রাইট চয়েস হইতেছে কিনা। মানুষের এপিস্টেমোলজিকাল ক্যাপাসিটি বা ভেরিয়েবলস যাচাইয়ের ক্যাপাসিটির সাথে ডেটা ঘাটতি আছে। ফলে কি চয়েস মেক করতেছি, খুবই ক্রুশিয়াল।

ফ্রি উইলের কয়েক ক্যাটাগরির আর্গুমেন্ট আছে।

সেইটাই যাইতে চাই না। কিন্তু অন্তত ফ্রি উইলের ইলুশনের দরকার আছে। এইটার বার্ডেন আছে নিশ্চিত। কিন্তু নাইলে আপনার এক্সিজটেন্স মিনিংলেস হয়ে যায়।

The following two tabs change content below.
Avatar photo

কবির আহমেদ

জীবিকার জন্য একটা চাকরি করি। তবে পড়তে ও লেখতে ভালবাসি। স্পেশালি পাঠক আমি। যা লেখার ফেসবুকেই লেখি। গদ্যই প্রিয়। কিন্তু কোন এক ফাঁকে গত বছর একটা কবিতার বই বের হইছে।

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →