Main menu

‘মুখ ও মুখোশ’ বানানের কথা – আবদুল জব্বার খান Featured

[আবদুল জব্বার খানের জবানিতে লেখছিলেন সিদ্দিক জামাল। ছাপা হইছিল সাযযাদ কাদির সম্পাদিত পাক্ষিক তারকালোক পত্রিকার ১৫-৩১ ডিসেম্বর, ১৯৮৬ এবং ১-১৪ জানুয়ারি ১৯৮৭ সংখ্যায়। হেডলাইন ছিল “আমার কথা”। সেইখান থিকা ‘মুখ ও মুখোশ’ সিনেমার অংশটা নেয়া হইছে এইখানে।]

১৯৫৩ সালের জানুয়ারি। পরিসংখ্যান বিভাগের ডাইরেক্টর ড. আবদুস সাদেক একটা মিটিং ডাকলেন। দাওয়াটা ছিল চা-চক্রের। এতে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ও সংম্পাদক সিনেমা হলের মালিক, পরিবেশক প্রমুখ। আমি ও নুরুজ্জামান সাহেবও গেলাম। তখনকার সেক্রেটারিয়েট, ছনের ঘর। এর ভেতর ৪০/৫০ জন লোক। সাদেক সাহেব খুব আবেগপ্রবণ ভাষায় বললেন, ‘আমাদের দেশে ৯০টি সিনেমা হল আছে। এগুলোতে লাহোর, কোলকাতা, বোম্বের ছবি চলে। চলচ্চিত্র শিল্পকে গড়ে তুলতে, হলগুলোকে বাঁচাতে হলে আমাদের পূর্ব পাকিস্তানে ছবি তৈরি করতে হবে। গুলিস্থানের মালিক এস এম দোসানী উঠে দাঁড়ালেন। বললেন, ‘পূর্ব পাকিস্তানের আবহাওয়া অর্দ্রে, এখানে ছবি তৈরি সম্ভব নয়।’ সাদেক সাহেবের মুখটা কালো হয়ে গেল। আমি উঠে দাঁড়ালাম। বললাম, ‘কথাটা আমার কাছে যুক্তিসংগত মনে হচ্ছে না। আর্দ্র আবহাওয়ায় ছবি হবে না কেন? কোলকাতার ছবিরও কিছু কিছু অংশ পর্ব পাকিস্তানে শ্যুটিং হয়। ছবি দেখার সময় সেগুলো তো আলাদা কিছু মনে হয় না। ভদ্রলোক এবার চটে গিয়ে বললেন, ‘আমার চৌদ্দ পুরুষ ফিল্মের সঙ্গে জড়িত, আমাদের পরিবেশনা আছে, স্টুডিও আছে, সিনেমা হল আছে। অর্থাৎ ফিল্মের সাথে সংশ্লিষ্ট সব শাখাই আমাদের আছে। অতএব আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, পূর্ব পাকিস্তানে যে বাজেট সেই অর্থ দিয়ে কাঁচা মালের একটা কারখানা করা সম্ভব নয়। এভাবে বেশ বড় সড় একটা বক্তৃতা দিলেন তিনি। আমি আবারও উঠে দাঁড়ালাম। বললাম, ‘এটা কোনো যুক্তির কথা নয়। কোলকাতায় যদি ছবি তৈরি হয় তবে ঢাকায় মাটিতে হবে না কেন? ওরা নেগেটিভ বাইরে থেকে এনে ছবি করে। আমরাও পারব। ছবি অবশ্যই হবে। আর এক বছরের মধ্যে যদি কোনো ছবি তৈরি না হয়, কেউ না করে তবে এই জব্বার খানই ছবি বানাবে!’ রীতিমতো চ্যালেঞ্জ দিয়ে ফেললাম। ‘৫২-এর ভাষা আন্দোলনের পর এক বিশেষ চেতনা ছড়িয়ে পড়েছে-আমরা সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চাই, আমরা স্বনির্ভর হব, আমরা দেশাত্মবোধের পরিচয় দিব যার যার ক্ষেত্রে কাজ করে। আমি রাজনীতি করি না — আমি নাটক লিখছি, নাটক করছি। এ মুহূর্তে সিনেমার ওপর চ্যালেঞ্জ দিয়ে ফেললাম-অনেকটা বোকার মতোই। চলে আসার সময় জামান বলল, ‘এটা ভুল করলে হে সিনেমা তুমি করতে পারবে না।’

আমার ‘ডাকাত’ নাটকের রিহার্সেল তখন প্রায় শেষ। ভিক্টোরিয়া ক্লাবে বসে বিকেলে চা খাচ্ছি। এই ক্লাবেই আমি খেলেছি। সরওয়ার সাহেব এলেন। ‘জব্বার সাহেব আপনারা নাকি ছবি বানাচ্ছেন?’ বলে খবরের কাগজে বের করলেন। ‘খান জামান ফিল্ম প্রোডাকশন’-খবর বের হয়েছে। কে দিয়েছে জানি না। আমি অবাক! কই আমরা তো ছবি শুরু করি নি। জামান বলল, তুমি ওই কথা বলেছ তাই এই অবস্থা। এখন বানাও ছবি। আমি পড়লাম মহাবিপাকে। ছবি করব, ক্যামেরা পাবো কোথা? সরওয়ার সাহেব বললেন, ক্যামেরা আমার আছে, কাজ শুরু করেন। বললাম, আপনার ক্যামেরায় কাজ হবে তার প্রমাণ? আমরা মাঠের মধ্যে হাঁটাহাঁটি করছিলাম। আমাদেরই সে সব তুলে পরে দেখালেন। দেখলাম কাজ চলবে। উনি দুই রোল কোডাক ফিল্ম আনতে বললেন, আনলাম। আমরা ঘরে চৌকির তলায় সে ফিল্ম পড়ে রইল অনেকদিন।

ভাবলাম ছবি করবই। কোলকাতার একজন ‘ইকবাল ফিল্মস’ করেছিল কিন্তু ছবি করে নি। সেই ভদ্রলোকের প্রস্তাবে তাকে শেয়ার করে নিলাম। আমি পরিচালক (বলাকা সিনেমার) এম এ হাসান চেয়ারম্যান, নুরুজ্জামান ম্যানেজিং ডিরেক্টর। আমি, মালেক সাহেব, কচি সাহেব সবাই পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে কোম্পানি গঠন করলাম। এরপর জয়েন্ট স্টক কোম্পানি করার অনুমোদন নিলাম। ছবি করার পুরো দায়িত্ব এখন আমার ওপর।

কিউ, এম. জামানের পরামর্শে কোলকাতায় গেলাম। সাথে জসীমউদ্দীন নজরুলের কিছু বই, আমার ‘ডাকাত’ নাটকের পাণ্ডুলিপি। জামান প্রথমে পরিচয় করে দিল মনি বোসের সঙ্গে। মনি বোস পাকা দাড়িওলালা বৃদ্ধ মানুষ। ‘সাপুড়ে’ প্রভৃতি বিখ্যাত ছবির চিত্রনাট্যকার। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, ভাইটি, তোমার বাবা জমিদার?
না।
ব্যবসায়ী?
না।
চ্যালেঞ্জ করে বড় ভুল করে ফেলেছ। তোমার যেখানে বাড়ি সেখানের প্রথমেশ বড়ুয়া অনেক ছবি করেছেন। সে তো রাজার ছেলে। তুমি ব্যবসা করে কয় পয়সা রোজগার কর। এখানে অনেক শিক্ষিত পয়সাওয়ালা লোক ছবি করেছে। এখন তারা বিড়ি খায় আর ছেঁড়া চটি পাঁয়ে দিয়ে হাঁটে। আর এক ক্লাস আছে বাপে খেদানো মায়ে তাড়ানো, মেয়েছেলে বা রঙ্গ তামাসার লোভে এসেছে। এসে পরিচালক, প্রযোজক হয়েছে। ‘এরা টিকে গেছে। দুই ক্লাস লোকের ফিল্মি। এক. পরের টাকা আমার বুদ্ধি। দুই. আমার টাকা তোমার বুদ্ধি, তুমি কোনো ক্লাসেই পড় না। অবাস্তব চ্যালেঞ্জ। বাধ দাও। বাড়ি ঘর যাবে, স্ত্রী-পুত্র না খেয়ে থাকবে।

বললাম, দাদা! আপনার কথা আমি বুঝেছি। আমি যদি দু’লাখ টাকার একটা Risk নিই। দু’লাখ টাকা? কি বলছ হে-এতে তো তোমার যন্ত্রপাতিই হবে না।

ঘাবড়ে গেলাম।

রাতে ‘নিউ থিয়েটার্সের’ চীফ ক্যামেরাম্যান মুরারী মোহনের সাথে কথা হলো: ক্যামেরা ছোঁয়ার কারণে চাকরি গেলেও কিউ. এম. জামানের প্রতি মুরারী মোহনের দুর্বলতা ছিল। তিনি বললেন, ‘ঘাবড়ালে তো হবে না দাদা। একটা পুরনো ক্যামেরা কিনে নিন।’

তারা ক্যামেরা কিনে দিলেন পাঁচ হাজার টাকায়। এটারসাউওগেট নেই। উনি বললেন, ‘ছবিতে কমেন্টারী দেবেন, না হলে ডাবিং করবেন। চ্যালেঞ্জ যখন দিয়ে ফেলেছেন শুরু করুন।’

মুরারী মোহনের সাথে চুক্তি করে ফেললাম-ভারতীয় পাঁচ হাজার টাকা দিতে হবে। তবে শর্ত টাইটেলে তার নাম দিতে পারব না। কিউ. এম. জামানের নাম দেব। গেলাম এবার মনি বোসের কাছে। বললাম সব। এমন কাহিনী মনোনীত করব যাতে আউটডোরে কাজ করা যায় আর কথা কম থকে। সাথের বইগুলো দেখলাম।

দেখে-শুনে বললেন, ‘এতে হবে না।’ আমি ‘ডাকাতের কাহিনী শোনালাম। খুব খুশি হলেন। বললেন, ‘খুব ভালো গল্প। তুমি এখানে ছবি কর, প্রযোজক পাবে। বললাম, আপনি চিত্র নাট্যটা লিখে দিন।’ পয়সা নিতে রাজি হলেন না। তবু জোর করেই এক হাজার টাকা দিলাম। তিনটা দৃশ্য পুরো লিখে বাকিটা লাইনআপ করে দিলেন। বললেন, ‘সংলাপ তুমি বসিয়ে নিও।’

‘এখন ক্যামেরা আনার সমস্যা। ল্যাও রেভিনিউ-এর ডিরেক্টর এ সময় মিটিংয়ে গিয়েছিলেন। তার সহযোগিতায় ক্যামেরা আনলাম। ব্যাগ, স্ট্যাণ্ড এসব আমরা নিজেরাই নিয়ে এলাম।

১৯৫৩ সালের ডিসেম্বর মাসে কালীগঞ্জে প্রথম শ্যুটিং করলাম মহরত ছাড়াই। এর মাঝে অনেক ঝামেলা গেল। সমস্যা হলো মেয়ে পাই না। ভাবলাম পুরুষকেই নামাতে হয় নাকি। পেপারে দিলাম। আসতে শুরু করল। একজন আসে তো আর একজন ভাংগানী দেয়। কলিম শরাফীর স্ত্রীর কামেলা শরাফীকে নিতে চাইলাম। ওদের ইচ্ছাও ছিল। হলো না। পূর্ণিমা সেন গুপ্তের খবর ফেলাম। নাটক করত। গেলাম, বাসায় নেই। স্লিপ রেখে এলাম।’ পরে সে আমার অফিসে এসে হাজির। বলে, ‘আমি ছবিতে কাজ করব।’ বললাম, ‘পয়সা?’ বলল, ‘না-আমার পয়সা লাগবে না। আমাকে ঢাকায় এসে থাকতে খেতে দিবেন।’ এ সময় জহরত আরা, পিয়ারী, রহিমা, বিলকিস এরা এলো। ডাকাতের চরিত্রে অভিনয় করেছিল ইনাম। এসব নিয়ে একটা টিম করে ফেললাম। নায়ক করতে চেয়েছিলাম আমিনুল হককে। তেজগাঁও শিল্প এলাকায় তখন পুরোপুরি জঙ্গল। এর মধ্যে একটা ডাকাতির দৃশ্য করলাম। ১৯৫৪ সাল-ভয়ানক বন্যা। এর মধ্যে কিছু শ্যুটিং হলো। মুরারী মোহনের সঙ্গে বেশ লেগে গেল। আমি পরিচালক, আমি যেমন বলি, উনি বলেন এ শট হবে না। কিন্তু কেন হবে না? রাতে জামানকে ডাকি। তাকে ডাকি। লিখতে বসি। এভাবে পুরো চিত্রনাট্য আবার করলাম নিজে। শ্যুটিংয়ের পর এগুলো পার্সেল করে লাহোর স্টুডিওতে পাঠিয়ে দেই। ওখানে পরিস্ফুটন হয়। কিছুই দেখতে পাই না-কি হলো না হলো।

ছোট্ট একটা ডার্ক রুম করলাম। জেনারেটর কিনলাম। দু’টো টেপ রেকর্ডার কিনলাম। ছোট্ট একটা মাইক দিয়ে গান, সঙ্গীত সব কিভাবে রেকর্ড করব? গানের জন্যে চুক্তি করেছি আবদুল আলীম, মাহবুবা হাসনাতের সঙ্গে। সঙ্গীত পরিচালক সমর দাস। তার সহকারী ধীর আলী অনেক সময় লাগল।

এ সময়ে বন্যা যখন হচ্ছে, তখন বন্যার ওপর একটা প্রামাণ্যচিত্র করলাম। এটা বাংলাদেশের প্রথম প্রামাণ্যচিত্র। এটা সব সিনেমা হলে মুক্তি পেয়েছিল।

আমি আর মুরারী মোহন লাহোর গেলাম। একজন সহকারী সম্পাদক ঠিক করলাম। এক শিফট এডিটিং রুম ভাড়া নিলাম। নিয়ে দেখি গানের সাথে মুখ মেলে না। মুরারী মোহন বলল, ছবি হবে না। এ সময় সে তার স্ত্রীর অসুখের কথা বলে আমার কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে কলকাতা চলে গেল। ফিরে আসার কথা বলে গেলেও আর আসেনি। চুক্তির টাকা সে আগেই নিয়েছিল।

এবার ঢাকায় এসে শাহবাগ হোটেলের ছাদে তৎকালীন গভর্নর ইস্কান্দার মির্জাকে প্রধান অতিথি করে, আরো গণ্যমান্য লোক দাওয়াত করে, মহরত করলাম। পত্রিকায় তার ছবিসহ খবর ছাপা হলো। ছবি আরম্ভ করলাম।

১৯৫৫ সালে পূর্ব পাকিস্তান সরকার নাজির আহম্মদকে ডেপুটি ডিরেক্টর করে একটা চলচ্চিত্র বিভাগ করেছে। বিজি প্রেসে তারা একটা এডিটিং টেবিল বসিয়েছে। নাজির সাহেবের কাছে গেলাম এডিটিংয়ের কোনো সুবিধা পাই কিনা, উনি রাজি হলেন না।

এর মধ্যে ‘ইত্তেহাদে’ একটা খবর দেয়া হলো: ‘মুখ ও মুখোশ’-এর যেসব নেগেটিভ পরিস্ফুটনের জন্যে লাহোরে পাঠানো হয়েছিল সেগুলি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তারা ওগুলো ফেলে দিয়েছে। ছবি হবে না। মামলা করব বলে ভয় দেখালে ‘ইত্তেহাদ’ মাফ চাইল।

আমি শ্যুটিং শেষ করে গান টান সব নিয়ে লাহোরে গেলাম। তিন মাস থেকে সম্পাদনা করলাম। একজন অভিজ্ঞ সম্পাদক, লতিফ সাহেবের সাথে কথা হলো, তিনি হাজার টাকায় সম্পাদনা করে দেবেন। তিনি বললেন, ডাবিং করবেন। এত বেশি নয়েজ কেউ ছবি দেখবে না। ভাবলাম, ডাবিং লাহোরেই করব। শফি (অলিভিয়ার স্বামী) তখন মনোয়ার রিজভীর সহকারী সম্পাদক, আমার কাছে চিত্রনাট্য লেখা শিখত। মুস্তফা নামে কুমিল্লার এক ড্রাইভার ইনকাম ট্যাক্স বিভাগে কর্মরত এক বাঙালি ভদ্রলোকের স্ত্রী ও শ্যালিকার খবর দিল। ডাবিংয়ের জন্যে হাফ শিফট নষ্ট করলাম। কেউই পারল না। সংলাপই বলতে পারে না। সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার বললেন, আগের সংলাপই রাখো। রি-রেকডিং করে সাউন্ড ঠিক করে দেব। এক শিফট নিলাম। নয়েজ কমালে ডায়ালগও কমে যায়। মনটা খারাপ হয়ে গেল। আমি লতিফ সাহেবকে বললাম, ছবিতে আমি ধারা-বর্ণনা দেব। উনি রাজি হলেন না। এতে ছবি চলবে না। এরপর উনি একটা শব্দের প্রত্যেকটা অক্ষর ফ্রেম কেটে কেটে জোড়া দিয়ে অনেক কষ্ট করে এক মাসে সম্পাদনা শেষ করলেন। ওই সময় অনেক টিটকিরি আমাকে শুনতে হয়েছে। গায়িকা নূরজাহান একদিন এসে বলেন, ‘কিয়া বাঙালির ডিরেক্টর সাব! মাকখন-টোস্ট (মুখ ও মুখোশের বিকৃতি উচ্চারণ) আপকে লিয়ে বহুত লজ্জৎদার হোগা।’ নুসরৎ সাবিহা ওরাও আসত। ‘মরদ কা বাত হাতি কা দাঁত’ চ্যালেঞ্জ দিয়েছেন, লাখ টাকা যায় যাবে।

‘মুখ ও মুখোশ’ নিয়ে ঢাকায় ফিরছি। প্লেন ছাড়ার মুহূর্তে আমাকে বলা হলো, ফিল্ম যাবে না। আমি প্লেন থেকে নেমে এলাম। তখনকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিচারপতি আবদুস সাত্তার (বাংলাদেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট) তখন করাচিতে। তার বাসায় গেলাম। সালাম বিনিময়ের পর জানতে চাইলাম আমরা কি পাকিস্তানের নাগরিক? পূর্ব পাকিস্তান কি পাস্তিানের শাসিত রাজ্য? ব্যাপারটা কি জানতে চাইলে সব খুলে বললাম। তিনি কাস্টমস্ কালেক্টরকে ফোন করলেন। তিনি এলেন। জিজ্ঞাস করে বললেন, ফিল্ম কি স্বর্ণ যে যাবে না। আমিও খুব উত্তেজিত ছিলাম। উনিও রেগে গেলেন। যে ফিল্ম আসতে কোনো বাধা পেল না? তার যাওয়ার সময় বাধা কেন? দু’বছর ধরে শ্যুটিং করেছি। ডাক বিভাগের মাধ্যমে ফিল্ম এসেছে। সার্টিফিকেট নিয়ে যখন যাচ্ছে সেই ফিল্ম নামিয়ে দেয়া হলো কেন? বিচারপতি আবদুস সাত্তার ফিল্ম নিয়ে যেতে বললেন। আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কোন ফ্লাইটে যেতে চান?

চলে আসব। সম্ভবত শফির বড় ভাই বলল — আমরা করাচির বাঙালিরা ‘মুখ ও মুখোশ’ দেখতে চাই। আমাকে এজন্যে একদিন দেরি করতে হলো। হল ঠিক করে ছবি দেখানো হলো। প্রথমে প্রদর্শনী হলো করাচিতে অবস্থানরত বাঙালিদের মধ্যে। পরদিন ঢাকায় এলাম বীরদর্পে।

ছবি করেছি কিন্তু হল পাই না। কারণ, তারা শুনেছে এটা কোনো ছবিই হয় নি। দর্শকরা চেয়ার টেবিল ভেঙে ফেলবে। বাঙালি মুসলমান সিদ্দিকী সাহেবের ‘মানসী’ হলের কাছে গেলাম। উনি রাজি হলেন না। বিপদে পড়লাম। হল ভাড়া করতে চেয়েও পাই না। এ সময় পাকিস্তান ফিল্ম ট্রাস্টের মোশাররফ হোসেন চৌধুরী ও আউয়াল সাহেব, ফনীবাবু এরা পরিবেশকের কাজ করতেন। আলাপ করে তাদেরকে দিয়ে দিলাম। তারা চেষ্টা করে নারায়ণগঞ্জে এবং বাইরে দু’একটা হল ঠিক করলেন। কিন্তু ঢাকাতে হয় না। এরপর ‘মুকুল’ (এখন ‘আজাদ’) আর ‘রূপমহলের মালিক কমল বাবুর কাছে গেলে উনি রাজি হয়ে গেলেন। বললেন, জব্বার সাহেব টাকা খরচ করল আর আমার কয়েকটা চেয়ার যদি ভাঙে তো ভাঙুক। আমিই হল দেব।

১৯৫৬ সালের ৩ আগস্ট তারিখ ঠিক হলো। শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের (তখন গভর্নর) কাছে গেলাম। উনি বললেন, স্টুডিও নেই কিন্তু ছবি বানালেন কি করে? বাপের বেটার মতো কাজ করেছেন।

উনি ছবি উদ্বোধন করলেন। সকাল বেলা ‘মুকুল’-এ বেশ জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান হলো। মুক্তি পেল ৩টা শো থেকে ঢাকার ‘রূপমহল’ চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জে। দুরু দুরু বুকে অপেক্ষা করছি-লজ্জা পেতে হয় নাকি। হাউজ ফুল হয়ে ছবি চলল। প্রতি মুহূর্তে হাততালি, হাততালি, হাততালি একদম বিরতি পর্যন্ত।

আমি গেটের বাইরে পায়চারী করছি। ‘আজাদ’ পত্রিকা সম্পাদক আবুল কালাম শামসুদ্দীন তখন এসেছ আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। বললেন, ‘জব্বার সাহেব আনন্দে আমার চোখে পানি পড়ছে। আপনি যে কি দিলেন। কত খুশি আজ সবাই! আজ সবাই সার্থক। চ্যালেঞ্জ তো আপনার একার ছিল না। এ চ্যালেঞ্জ ছিল বাঙালি জাতির।’ আমারও চোখে তখন পানি।

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →