আমরা কি ক্ষমতার নতুন সিনেমাটিক রিয়েলিটিতে প্রবেশ করতেছি কিনা?

ফিকশন হ্যাজ দা স্ট্রাকচার অফ ট্রুথ- লাঁকা
পর্তুগিজ রাইটার হোসে সারামাগোর বিখ্যাত ডিস্টোপিয়ান উপন্যাস ‘ব্লাইন্ডনেস’। ব্লাইন্ডনেসের প্লট হইতেছে এমন যে, হঠাৎ কোন কারণে কোন এক শহরের লোকজন অন্ধ হইতে থাকে। ধীরে ধীরে সংক্রামক রোগের মত ছড়ায়া পড়ে। কোন কারণ ঠিক বোঝা যায় না। কাইন্ড অফ মহামারীর মত। তবে অন্ধ লোকেরা অন্ধকার দেখে না, বরং সব কিছু সাদা দেখে।
সরকার প্যানিকড হয়ে এইসব লোকজনের কোয়ারিন্টিনের ব্যবস্থা করে। ধীরে ধীরে সোসাইটির যে সাইকি, তা এংজাইটি ইত্যাদিতে ভেঙে পড়তে থাকে। অর্থাৎ না দেখলে, আমরা কোন ট্রাস্টেড রিয়েলিটি তৈরি করতে পারি না।
‘ব্ল্যাক ব্যাগ’ (২০২৫) স্টিফেন সদারবার্গের স্পাই থ্রিলার। পিওর থ্রিলার।
কয়েকজন স্পাই বা সিক্রেট এজেন্টদের মধ্যকার বিট্রেয়ালের ঘটনা। তারা একই এজেন্সিতে কাজ করে। তাদের চাকরির একটা শর্ত হইতেছে, তারা ওই এজেন্সির বাইরে ডেট বা বিয়ে করতে পারবে না। মাইকেল ফেসবেন্ডার এবং কেট ব্লাঞ্চেট ওইরকম দুইজন বিবাহিত স্পাই।
এই রকম পাঁচজন স্পাই বা এজেন্টদের নিয়েই সিনেমা। তারা ডেট বা বিয়ে করলেও একে অপরের কাজকর্ম সবকিছু শেয়ার করতে পারে না। যেইটা শেয়ার করবে না বা করা যাবে না-সেই জায়গায় পার্টনার প্রশ্ন করলে, তারা উত্তর দেয় ‘ব্ল্যাক ব্যাগ’। অর্থাৎ ওই বিষয়ে আর আলাপ নাই।
অর্থাৎ এমন একটা পরিবেশ, যেইখানে আপনি আপনার পার্টনারকে কমপ্লিটলি জানতে পারবেন না। কোনটা আসলে ব্ল্যাক ব্যাগ আর কোনটা তার পার্টনার সুবিধা অনুযায়ী ব্যবহার করতেছে, তা বোঝা মুশকিল। ফলে, ফিলোসোফিকালি এই পরিবেশকে এক রকম রিকগনাইজড ব্লাইন্ডনেস বলতে পারেন। সিনেমা কোন দার্শনিকতার মধ্যে হাঁটে নাই। টিপিক্যাল ভালো থ্রিলার।
যাই হোক, এই পরিবেশ হইতেছে এমন একটা ব্যবস্থা, যেইখানে আপনার পার্টনার সম্পর্কে আপনি আপনার কৌতূহল মেটাইতে পারবেন না।
জানতে পারবেন না। এইরকম পরিস্থিতিতে, আপনি কেমনে সারভাইভ করবেন?
আপনার ইন্টেলিজেন্সের ওপরে আস্থা রাখবেন? নাকি পার্টনারের প্রতি ফেইথকে প্রায়োরিটি দিবেন? কোন কোন সময়, দুইটা বিপরীতমুখী হইতে পারে। আপনার পার্টনারকে ট্রাস্ট করবেন, কিন্তু আপনার হিসাব নিকাশ বলতেছে, কোথাও সমস্যা আছে।
এইটা ছোট স্কেলের ঘটনা। একটা রিলেশনশিপের। কিন্তু এইটাকে আমরা আরো কমপ্লেক্স বা সামাজিক সম্পর্কের দিকে নিয়ে যাই।
মডার্ন মানুষের রিয়েলিটি তৈরি হয় তার রিজনের ব্যাবহার করে যে ট্রুথ পায়, তার মধ্যে দিয়ে। দর্শনে এইটা পুরান হিসাব। অর্থাৎ একটা মোটামুটি অবজেক্টিভ রিয়েলিটি আছে বা সারভাইভালের জন্য ধরে নিতে হয়। পোস্ট মডার্ন ফিলোসফি – রর্টি, বদ্রিয়া, ফুঁকো, দেরিদা, লাকা ইত্যাদি থিঙ্কারের পর আমরা এই হিসাবে আর থাকতে পারি নাই। ইভেন কোয়ান্টাম ফিজিক্সও রেফারেন্স ডিপেন্ডেন্ড।
আমাদের কারেন্ট টেকনোলজি যে জায়গায় আছে বা যে পথে হাঁটতেছে, তাতে কিছু সমস্যা তৈরি হইছে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের কথা বলতেছি।
আমরা যে রিজন ইউজ করি, তার জন্য ফ্যাক্ট লাগে। কম-বেশি কংক্রিট ফ্যাক্টস। এক্সপেরিয়েন্স মেশিন হিসাবে আমরা শুনতে পাই। দেখতে পাই। মানে, ইন্দ্রিয় যা প্রসেস করে, তাই আমাদের রিয়েলিটি।
বাংলা পুরান সিনেমাগুলায় আমরা দেখতাম যে, নায়ক নায়িকা যখন গান গায়, তখন শত্রুপক্ষের গুপ্তচর ছবি তুলে অভিভাবকদের দেখায়া ঝামেলা তৈরি করে। আবার, অনেক সময় যেকোন দুইজনের ছবি এডিট করে দেখায় যে, কোন দুইজনের মধ্যে অনৈতিক সম্পর্ক আছে। এইটা দেখার পর, অভিভাবক সমাজের নতুন রিয়েলিটি তৈরি হয় এবং তারা প্রতিক্রিয়া দেখায়।
এখন, আমরা যা দেখি বা শুনি, তার বহু কিছুই ফ্যাক্ট চেক করা সম্ভব না। ভিডিও বা অডিও এমন হইতে পারে যে, তা সত্য মনে হইতে পারে। সত্য-মিথ্যার ইনস্ট্যান্টলি ফারাক করা সম্ভব হবে না। বিভিন্ন এআই সফটওয়াগুলার ভবিষ্যৎ সেইদিকেই।
আপনি সত্যি এবং মিথ্যার মধ্যে সিগনিফিকেন্ট প্রসেস ছাড়া পার্থক্য করতে পারবেন না। সত্যের ক্ষমতা তো আমরা সবাই মানি। তো, মিথ্যাও এইটা জানে। ফলে, সে মিথ্যা হিসাবে উপস্থিত হয় না। সে সত্যের মত উপস্থিত হয়। আদম এবং ইভের পতনে শয়তান বন্ধু হয়েই আসছে।
ইন্ডিয়ার একটা কমেডি সিনেমা আছে। নাম ‘তেরে বিন লাদেন’। সিনেমায় লাদেনের ভিডিও শুট করে ছাড়া হয় টিভি চ্যানেগুলায়। সিনেমা হয়তো সিরিয়াস প্লটে যায় নাই। কিন্তু এগুলা সিরিয়াস হয়ে ওঠা সম্ভব।
১৯৯৩ সালের সিনেমা ‘ডেভ’ (Dave)। মার্কিন প্রেসিডেন্টের বডি ডাবল খুঁজে আনা হয় বিশেষ দরকারে। এদিকে অরিজিনাল প্রেসিডেন্ট স্ট্রোক করে এবং বডি ডাবল ওই রোলে আটকা পড়ে। আল্টিমেটলি, বডি ডাবল প্রেসিডেন্ট আর ক্ষমতা ছাড়তে চায় না।
সত্য এবং মিথ্যার ক্ষমতার জায়গা তার অরিজিনালিটি না। সত্যের সাথে পাওয়ার স্ট্রাকচারের সম্পর্ক আছে। কারণ, আইডিয়ার জগতে মোরালিটি পাওয়ারফুল জিনিস যার সাথে রাষ্ট্রের/ প্রতিষ্ঠানের শক্তির সরাসরি সম্পর্ক আছে।
আমরা যখন ব্ল্যাক ব্যাগের মত রিয়েলিটিতে বসবাস করি, তখন ফেইথও গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। বরং, রিজনের চেয়ে কোন কোন সময় অন গুড ফেইথ বহু কিছু করতে হবে।
হাইপাররিয়েল এই সময়ে এইটা দুরুহ এবং কঠিন কাজ। ভবিষ্যতের আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলেজিন্সে দেখা নিঁখুত অডিও এবং ভিডিও আপনি কিভাবে ডিনাই করবেন? আপনার ইন্দ্রিয়কে আপনার কোন কোন সময় অগ্রাহ্য করতে হবে। রিজন যে ফেইল করে এবং একা কমপ্লিট না, সেইটা দর্শনে বহু আগেই টের পাওয়া গেছে।
আমরা যে দেখতে গেলেও বিপদে পড়তে পারি অথবা শোনাও বিপদজনক হয়ে উঠতে পারে, তার দুইটা সাম্প্রতিক মেটাফোরিক ভাল আইডিয়ার সিনেমা হইতেছে ‘বার্ড বক্স’ আর ‘দা কোয়াইট প্লেস’।
‘ম্যাট্রিক্স’ সিনেমায় কিয়ানু রিভস বা নিও’র কথা মনে আছে যে, প্রথমে তার চারপাশের সিমুলেটেড রিয়েলিটি অস্বীকার করতে পারতেছিলো না? মর্ফিয়ুসকে হাতে কলমে বোঝাইতে হয় যে, তার বসবাসের জগত মিথ্যা?
আমরা নিও’র মত অবস্থায় পড়তে যাইতেছি। ক্যাপিটালিজম এবং এআই কনফ্রন্ট করতে শুধু রিজন আমাদের সঠিক রাস্তা দেখাইতে পারবে না। গুড ফেইথের একটা রিভাইভাল লাগবে। কিন্তু মানুষের ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, যেকোন ফেইথের ইডিওলজিকাল কাজ-কারবার বিপদজনক হয়ে উঠতে পারে মুহূর্তেই। ডিস্টোপিয়ান কল্পনা হয়ে উঠতে পারে স্কিনডিপ রিয়েলিটি। মিরর হয়ে উঠতে পারে ব্ল্যাক মিরর।
কারণ, ‘ট্রুথ ক্যান বি স্ট্রেনজার দ্যান ফিকশন।’

কবির আহমেদ

Latest posts by কবির আহমেদ (see all)
- আমরা কি ক্ষমতার নতুন সিনেমাটিক রিয়েলিটিতে প্রবেশ করতেছি কিনা? - এপ্রিল 13, 2025
- পোস্ট পলিটিকাল ক্রাইসিস - মার্চ 29, 2025
- মানুষের গন্তব্য - ফেব্রুয়ারি 2, 2025