Main menu

স্বাধীন জাতির, স্বাধীন উপলব্ধি – জিয়াউর রহমান

[২০২০ সালে ছাপানো “আমার রাজনীতির রূপরখো” বইয়ের ১০২-১১৫ নাম্বার পেইজ থিকা লেখাটা নেয়া হইছে।] 

আপনারা বাংলাদেশের ইতিহাস পড়েছেন। বাংলাদেশের ইতিহাস হাজার বছরের ইতিহাস, যদি না পড়ে থাকেন তাহলে এর সূত্রটা পাবেন না। গত দুই বাংলা, বঙ্গ। বঙ্গ বুঝতে বর্তমানে যে বাংলাদেশের এলাকা সেটাই বোঝাত।

কিন্তু আপনারা যারা ইতিহাস পড়েছেন তাঁরা জানেন। গত দু’হাজার বছরের ইতিহাস পড়তে হবে। বঙ্গ, বাঙ্গাল, বাংলাদেশ। দুনিয়ার অন্যান্য দেশে এই বাঙ্গাল কথাটার উল্লেখ আছে, আরব দেশে আছে, মধ্যপ্রাচ্যে আছে। বাঙ্গাল এমনকি ইন্দোনেশিয়াতেও আমি এই শব্দটি শুনেছি। যখন সূত্র খুঁজবেন তখন বাংলাদেশের সাথে এর সূত্র খুঁজে পাবেন। পশ্চিমবঙ্গের সাথে নয়। ওরা অন্য নামে পরিচিত। আমাদের জাতীয় সত্তা আলাদা এবং আমাদের ভাষা বাংলা ভাষা। আমাদের এখানকার বাংলা ভাষা হলো মূল বাংলা ভাষা। যেটা বাংলাদেশ থেকে পশ্চিম এবং পূর্বেও গেছে, আসামেও। যদি আসামী কথা শুনেন, আসাম রেডিও কিংবা গৌহাটি রেডিও যখন শুনবেন তখন আপনি অনেক কিছুই বুঝতে পারবেন। দেখবেন বাংলা ভাষার একটি ভগ্ন রূপ বা খণ্ডিত রূপ। তেমনিভাবে যখন পশ্চিম দিকে যাবেন বাংলা ভাষার রূপ বদলে যেতে থাকবে। বাংলাদেশ হলো বাংলা ভাষা, বাংলাদেশী সংস্কৃতি ও কৃষ্টির হেড কোয়ার্টার। এটা বুঝতে হবে। অনেকেই আপনারা বুঝেন না এবং শান্তি নিকেতনের কথা বললে আপনাদের আমাদের মনে-প্রাণে অনেক রকম অনুভূতি হয়। ওখানে যা কিছু নিয়ে গেছে, এখান থেকে নিয়ে সেটাকে আর একটা রূপ দিয়েছে। জিনিসটা বুঝতে হবে। তখন বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন রাজ্য সৃষ্টি হয়েছিল। আপনি অতীতে চলে যান হাজার বছর তারও বেশি, বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে মুসলমানদের প্রভাব বিস্তার শুরু হয়েছিল। বাংলাদেশের ইতিহাস প্রায় ৯/১০ সেঞ্চুরী থেকে। আমি আগেই বলেছি রাজনীতিতে ধর্মটা সবচেয়ে বড় কথা নয় কিন্তু ধর্ম একটা কথা হতে পারে। জাতিগতভাবে আমরা ভিন্ন। যেমন আপনারা দেখবেন মোঙ্গলীয় জাতি আছে। তাদের হেডকোয়ার্টার বলা যেতে পারে চীন দেশের যে কোন একটা মূল বিন্দু থেকে ধরে নিতে পারেন এবং সেখান থেকে বিভিন্ন দিকে এটা ছড়িয়েছে। যেমন করে দূরে ছড়িয়ে পড়ে জিনিসটা লঘু থেকে লঘু হয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ এটা ক্রমশঃ বিস্তার লাভ করছে। বার্মাতে যে জাতি দেখা যায় তারা মোঙ্গলয়েড। মোটামুটি তাদের মধ্যে এবং চীনাদের মধ্যে পার্থক্য দেখবেন। আসামে তারা কিন্তু জাতিগতভাবে মোঙ্গলয়েড কিন্তু চীনাদের থেকে পার্থক্য দেখবেন। যদি আপনি বিভিন্ন জায়গা থেকে মোঙ্গলয়েড সব এক সাথে এক কামরার মধ্যে ভরে দেন তাহলে হঠাৎ মনে হবে যে- আরে এরাই তো সব একই লোক। আসলে কিন্তু এক লোক নয়। কেউ বার্মা, কেউ থাইল্যান্ড, কেউ মালয়েশিয়া, কেউ চীনা, কেউ মোঙ্গলীয়া, কেউ ভূটান, কেউ নেপাল, কেউ সীকিম, কেউ ভারতের পূর্বপ্রান্ত অর্থাৎ আসাম এলাকার। তেমনিভাবে কতকটা আমাদেরও অবস্থা। এটাই হলো আমাদের জাতি, আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের জাতীয়তাবাদের মূল অবস্থান। বাংলাদেশ এবং এখান থেকে চারপাশ আমাদেরই মাল-মশলা বিভিন্ন সময়-ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে ছড়িয়ে পড়েছে। এর ফলে আমরা বলতে পারি যে কোন এলাকার উপর আমাদের দাবি আছে। আমরা হয়তবা এটা বলতে পারব না। কিন্তু তারাও আমাদের উপর দাবি করতে পারে না। সেই জন্য এপার বাংলা ওপার বাংলা কথাটায় কোন বাস্তবতা নেই।

১৯৭১ সালে আমি কোন রাজনীতিবিদ ছিলাম না। ১৯৭১ সালে আমরা যে যুদ্ধ করলাম, কোন ক্ষমতার লোভ করি নাই। আমরা টাকা-পয়সার লোভ করি নাই। আমি জানিনা যে আমি যুদ্ধে নেমেছিলাম, আমি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে ছিলাম, ভালই ছিলাম, কিন্তু বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের চেতনা, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের আদর্শ যার আদর্শ আমি ছোটবেলা থেকেই পেয়েছিলাম। আমি দেখলাম যে বাংলাদেশকে কিভাবে শোষণ করা হচ্ছিল এবং হচ্ছে। সেই সময় ১৯৭১ সালের আগে বর্তমানের বাংলাদেশকে কিভাবে শোষণ করা হয়েছে। কলকাতা কেন্দ্রিক শোষণ, দিল্লী কেন্দ্রিক শোষণ, লন্ডন কেন্দ্রিক শোষণ এবং অন্যান্য কেন্দ্রিক শোষণ। তার কারণ এই ছিল যে, আমাদের মধ্যে এই ভাবধারার চেতনা সম্পূর্ণভাবে বিকাশ করতে পারেনি, যে পর্যায়ে এটাকে একটা স্বাধীনতা হিসেবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়। আপনারা যদি ইতিহাসের পাতা উল্টিয়ে দেখেন, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী চেতনা আজকের নয়, শত শত বছর আগেকার। ইতিহাসের পাতায় পাতায় এগুলোর প্রমাণ পাবেন বিভিন্নভাবে এবং এটা গড়ে উঠতে অনেক সময় লেগেছে। এটা জাতীয় সত্তা গড়ে উঠতে শত শত বছর লাগে। তাহলে দেখা যাচ্ছে, আমাদের বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের চেতনা গড়ে উঠেছে শত সহস্র বছর ধরে এবং সেই যুগ যুগ ধরে আমাদের দেশে বিভিন্নভাবে অনেক পরিবর্তন এসেছে। এই পরিবর্তন যেটাকে বলা যেতে পারে আমাদের জাতীয়তাবাদকে কেন্দ্র করে এই পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে যেখানে এটা একটা সঠিক রূপ নিয়েছে।

১৯৭১ সালে যুদ্ধের সময় অবশ্য ভারত আমাদেরকে সাহায্য করেছিল কিন্তু তার সাথে তারা জুড়ে দিয়েছিল এপার বাংলা ওপার বাংলা তারপর আপনারা জানেন যে, স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে শাসন চালাবার জন্যে তারা অভিজ্ঞ দল পাঠিয়েছিল কয়েক শত। এমন হাবভাব যে আমরা কিছুই জানি না। কিছুই করতে পারি না এবং তাদের সেই চেষ্টার উল্টো ফল হয়েছে। তার কারণ যদিও বাকশালীরা, তখনকার আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে- বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের রাজনীতি ছিল না। সেখানে তারা মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। আসল কথা হলো যে আওয়ামী লীগ কেবলমাত্র পাকিস্তানের ক্ষমতার গদিতে বসতে চেয়েছিলো। কিন্তু বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ, ছাত্রগোষ্ঠি তারা স্বাধীনতা চেয়েছিল। নেতারা যারা ছিলেন তারা এই অনিশ্চয়তার মধ্যে যেতে চাইছিলেন না- এটা করতে গিয়ে যদি আমরা ক্ষমতা না পাই। কারণ আমরা তো অনেক দিন ধরে রাজনীতি করলাম, অনেক কাজ করলাম, আমাদের ক্ষমতায় যেতেই হবে। সেখানে তাদের একটা আত্মসংঘাত লেগে গিয়েছিল। ১৯৭১ সালে আমি যেটা লক্ষ্য করলাম মার্চ মাস থেকে আওয়ামী লীগের মধ্যে দুটো ডিভিশন হয়ে গিয়েছিল। যারা যুবসমাজের প্রতিনিধি তারা বলেছিল স্বাধীনতার কথা, বিভিন্নভাবে বলেছিল। অনেকে কিন্তু বুঝতো না স্বাধীনতার কথা, কেউ কেউ অটোনমির কথা বলেছে, কেউ স্বাধীনতার কথা। কিন্তু জনগণের মানসিকতা স্বাধীনতার জন্য ছিল। তারা বুঝে ফেলেছিল যে পাকিস্তান দিয়ে আমাদের কিছুই হবে না। আওয়ামী লীগ নেতারা চেয়েছিলেন ক্ষমতার আসন। যার ফলে পাকিস্তান সেনাবাহিনী কি করল? তারা চিন্তা করে দেখল আমাদেরকে এখানে ঝুঁকি নিতে হবে। আমাদেরকে এমন একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে হয় আগামী ১০/২০ বছর বাংলাদেশকে আমরা চালায়ে যাব গোলামের মত অথবা যেটাকে আমরা বলি এসপার-ওসপার। এদিক-ওদিক এবং সেভাবেই তারা পরিকল্পনা গ্রহণ করল এবং সেখানেই আবার তারা মস্ত বড় ভুল করলো। তাদের বোঝা উচিত ছিল যে, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের চেতনা এমন এক পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে যেখানে আর কিছু করা যাবে না। এটার সমাধান হলো বাংলাদেশকে স্বাধীনতা দিয়ে দেয়া একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে। যেহেতু তারা সবসময় স্বল্প মেয়াদে কাজ করে থাকে সেজন্য তারা এটার দীর্ঘ মেয়াদের গুরুত্ব বুঝতে পারল না এবং সামরিক পদক্ষেপ গ্রহণ করলো। আমরা যারা ছিলাম আমরা নিজেদের মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলাম, এভাবে যদি তারা হরতাল করে আমরা হরতাল ভঙ্গ করবো এবং সেটা চরম অবস্থায় চলে যাবে এবং চরম অবস্থা মানে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ। আমরা কিন্তু মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিয়েছিলাম তার জন্য। ২৫ মার্চের পরে আমাদের তরফ থেকে যে প্রতিক্রিয়া হলো এগুলো যদি পরীক্ষামূলকভাবে দেখেন তাহলে এটার সত্যতা যাচাই করতে পারবেন। তারপরে যুদ্ধকালীন সময়ে আওয়ামী লীগের তরফ থেকে বারবার চেষ্টা হয়েছিল পাকিস্তানীদের সঙ্গে একটা সমঝোতা করে ক্ষমতায় আসা এবং ভারতও সেটাই চেয়েছিল। ভারতের চেষ্টাও ছিল অন্ততঃপক্ষে আমি যতদূর জানি সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত যে, পাকিস্তানের সাথে একটি সমঝোতা করে একটা কনফেডারেশনের মত করা যার মধ্যে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ এবং তাদেরই একজন যিনি আজকে ইসলামকে বগল দাবা করে চলছেন, তিনিও শেষ পর্যন্ত এর মধ্যে ছিলেন।

এখন আমাদের মধ্যে যারা মুসলমান আছেন তারা অন্য কারোর চেয়ে কম মুসলমান নয়। যারা হিন্দু আছেন তারা অন্য কারোর চেয়ে কম হিন্দু নয়। যারা খৃস্টান আছেন তারা অন্য কারোর চেয়ে কম খৃস্টান নয়। আমরা সকলেই ধর্মকে মনপ্রাণ দিয়ে ভালবাসি। কিন্তু ধর্মকে রাজনৈতিক পুঁজি করলে এটার উল্টো ফল হয়। কারণ ধর্মটা আধ্যাত্মিক, আল্লাহতায়ালার কাছ থেকে এসেছে। রাজনীতিটা জাগতিক বিষয়। এখন তাহলে কি দাঁড়াচ্ছে। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ একটা ক্ষুদ্র কোণ থেকে দেখলেন। যেটা আপনি করতে চেষ্টা করেছেন বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ- যেহেতু পাকিস্তান, তার আগে বৃটিশ আমাদের উপর অন্যায়-অত্যাচার করেছে সেই জন্য বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ হয়েছে- এটা ঠিক নয়। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ গড়ে উঠেছে একটা ঘাত-প্রতিঘাতের সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। একটা ঘাত-প্রতিঘাত না খেলে কোন রাজনৈতিক আদর্শ গড়ে উঠে না। এই যারা আমাদেরকে ঘাত-প্রতিঘাত দিচ্ছে- বাকশালীরা এবং অন্যান্য-এর ফলে আমরা মজবুত হয়ে উঠছি। গতকাল আপনারা যে রমনা গ্রীনে মিটিং করলেন, মিটিং কি ছিল? আলোচনা সভা। কত লোক এসেছিল এবং বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ব্যানারে রাত ৪টা পর্যন্ত যে যাত্রা ইত্যাদি চলছে লোকজন কেন থাকলো জাতীয়তাবাদের নামে? কারণ তারা এখন একটা জাতীয় সত্তা পেয়ে গেছে। মানুষ হিসেবে প্রত্যেকটা মানুষ একটা পরিবার, একটা গোষ্ঠি, একটা সমাজে তারা বসবাস করতে চায়। বাংলাদেশের মানুষকে কেন সেরকম সুযোগ দেয়া হয় নাই। তারা সেই সুযোগ পেয়েছে। এই হলো বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ভিত্তি। যে কোন দেশের প্রত্যেকটি মানুষ গর্ব অনুভব করতে চায় তার দেশকে কেন্দ্র করে, তার জাতিকে কেন্দ্র করে, তার সংস্কৃতিকে কেন্দ্র করে, তার ভাষাকে কেন্দ্র করে, তার অর্থনীতিকে কেন্দ্র করে। তার দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্র সম্বন্ধে যেন গর্ব অনুভব করতে পারে। সেটাই সে চায়। এখন আপনারা আর একটা জিনিস লক্ষ্য করেছেন, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ শেষ হলো ১৬ ডিসেম্বরে। আমরা লক্ষ্য করলাম যে ভারতীয় সেনাবাহিনী ঠিক কাজ করতে শুরু করল, যেটা পাকিস্তান সেনাবাহিনী করেছিল বিভিন্নভাবে এবং আমরা খবর পেতে শুরু করলাম যে তারা এখানে ওখানে লুটপাট করছে, অন্যায় করছে এমনকি মেয়েদের উপর অত্যাচার তারা শুরু করে দিয়েছিল।

তাহলে কি দাঁড়াচ্ছে? আমাদের ছেড়ে কেউই কথা বলবে না। কিন্তু আমাদের বাকশালী ভাই সাহেবেরা এটা বুঝতে পেরেছেন? আমাদের ইতিহাস তো বঞ্চনার ইতিহাস। আমাদের ইতিহাস এটা বাকশালীরা কিভাবে ভুলে যায় আমি তো এটা বুঝি না কি ধরনের? এই ধরনের রাজনীতি এটার শিকড় থাকতে হবে জনগণের মধ্যে। বাংলাদেশ-বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ এই আদর্শের অনুপ্রেরণা বাইরের দেশগুলো থেকে পাবে না, এর অনুপ্রেরণা বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে আছে কিন্তু নেতাদের মধ্যে নেই। নেতারা পালিয়ে গেল, জনগণ পালায় নাই। যার ফলে সেই নেতারা যখন গদিনসীন হলেন তখন তাদের আদর্শগত ভিত্তি ছিল না। আপনি আগেকার আওয়ামী লীগের ঘোষণা পত্র পড়ে দেখবেন, তাদের কোন জনগণভিত্তিক কর্মসূচি ছিল না। সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সর্বক্ষেত্রে তাদের মূল লক্ষ্য হলো পাকিস্তানের রূপরেখার মধ্যে ক্ষমতায় থাকা। এগুলো সত্য, এগুলো বুঝতে হবে। আমাদের চিন্তাধারা হলো জাতীয় ও জাতীয়তাবাদকে কেন্দ্র করে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক কর্মসূচি গড়ে তোলা। মনে রাখবেন যে রাজনৈতিক দর্শন, রাজনৈতিক আদর্শের জন্য যথেষ্ট নয়। সেই রাজনীতি আপনাদেরকে ধাবিত করবে একটি সামাজিক অর্থনৈতিক কর্মসূচির দিকে। সেই সামাজিক অর্থনৈতিক কর্মসূচির দিক যদি একটি রাজনৈতিক আদর্শ আপনাদের ধাবিত না করে তাহলে সেই রাজনৈতিক দর্শন অসম্পূর্ণ থেকে গেল। আমি যে খালি জাতীয়তাবাদী এটা যথেষ্ট নয়।

আমি যে কেবলমাত্র বুঝলাম বাংলাদেশের ইতিহাস, বাংলাদেশ সৃষ্টি হলো যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে- তারপর কি? তার বেশি কিছু না। যেহেতু সেখানে শূন্যতা ছিল সেহেতু তারা সমুদ্রে যেমন নৌকা খাবি খেতে খেতে চলে তেমনিভাবে চলছে এবং ‘৭১-এর পরে স্বাধীনতার পরবর্তীকালে তাদের কোন বাস্তব কর্মসূচি ছিল না। কারণ, তাদের কোন রাজনৈতিক দর্শন ছিল না। কারণ তাদের উদ্দেশ্য কেবলমাত্র পাকিস্তানের রূপরেখার মধ্যে ক্ষমতা দখলের। এখন এগুলো বোঝেন। এখন আমার যেটা মনে হয়, আওয়ামী লীগ নেতৃবর্গ এখনও বিষয়টা বুঝতে পারেনি এবং বুঝতে পারবেও না। যারা আওয়ামী লীগের, তাদের বয়স সেই সীমা পেরিয়ে গেছে। এখন আর তারা নতুন কিছু সৃষ্টি করতে পারবে না। তারা ঐ জিনিস আঘাত করতে করতে ভেঙ্গে যাবে কিন্তু বদলাবে না। কারণ তাদের মাথার মধ্যে আর কিছুই ঢুকবে না বাকশালী ছাড়া। কিন্তু তারা ভুলে যাচ্ছে যে বাকশালইজম পরিত্যাজ্য হয়ে গেছে। জনগণ তাকে পরিত্যাগ করে দিয়েছে। ‘৭৫-এ আবার পরিত্যাগ করে দিয়েছে। আমার মনে হয়, ‘৭৩ সালেই এটা করে দিয়েছিল আওয়ামী লীগকে কারণ আওয়ামী লীগ যে নির্বাচন করেছিল যেটা কোন ন্যায় সংগত নির্বাচন ছিল না। তারপরে ‘৭৫ সালে একদলীয় ব্যবস্থা করে দিল- বাকশালইজম এটার জন্যে তো জনগণের কাছে যায়নি। তাদের রেফারেন্ডাম করা উচিত ছিল তখনই, যেহেতু তাদের সাহস ছিল না জনগণের কাছে যাবার। সেই জন্য রাতারাতি ধমকাধমকি করে তারা এটা পাস করে ফেললো। এটার সম্বন্ধে কোন আলোচনাই হয় নাই, যার ফলে ‘৭৫ সালে এবং তার পরবর্তীকালে বিভিন্ন ঘটনা ঘটেছে এই ঘটনাগুলো এটাই প্রমাণ করে ১৯৭৮ এবং ১৯৭৯ সালের প্রথম দিকে যে দুটি জাতীয় পর্যায়ের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো প্রেসিডেন্ট নির্বাচন এবং সংসদের নির্বাচন, আমি আপনাদের পরিষ্কারভাবে বলতে চাই যে, নির্বাচনগুলোর জন্য তিন বছর থেকে, ১৯৭৬ সালের মাঝামাঝি থেকে আমরা প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। তখন একটা সুষ্ঠু নির্বাচন দেবার সামর্থ আমাদের ছিল না। ১৯৭৬- ৭৭ সালে এর জন্য আমাদেরকে অনেক প্রস্তুতি নিতে হয়েছে। আমরা সংকল্পবদ্ধ ছিলাম যে নির্বাচন যেন একেবারে সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণভাবে হয় এবং সেটা হয়েছে। ভুলভ্রান্তি হয়ত এদিক ওদিক হয়েছে সেটা স্বাভাবিক। এত সমস্যাপূর্ণ সামাজিক অর্থনৈতিক অবস্থার মধ্যে পুরোপুরি সঠিকভাবে নির্বাচন দেয়া সম্ভব নয়। তবে আমরা পেরেছি তার প্রমাণ হলো যে কোন বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয় নাই। নির্বাচনের পরে বাকশালী এবং অন্য দলগুলো যেভাবে তারা কাজ করে চলছে, গত আড়াই বছরেরও আগে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়ে গেছে। আড়াই বছর পার হয়ে গেল।

তারা কোন কিছু করতে পারে নাই কারণ তাদের রাজনৈতিক দর্শন নাই এবং তাদের রাজনীতি জনগণ সমর্থন করে না। যদিও আমাদের পার্টি নতুন এবং আমাদের অনেক ভুলভ্রান্তি রয়েছে। আমাদের যে কি কি ভুলভ্রান্তি রয়েছে তার সম্বন্ধে আর একদিন আমি বক্তব্য রাখব। এখন তাহলে কি হলো? একটা জিনিস আপনাদেরকে পরিষ্কারভাবে বুঝতে হবে সেটা হলো যখন কথাটা আপনারা ব্যবহার করেন সেটা বাংলা বললে বাংলাদেশী বুঝায়। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ বলতে বাংলাদেশের জাতীয়তাবোধ যেটা রয়েছে তাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের সৃষ্টি এবং বাঙালী জাতীয়তাবাদ বলে কিছু নেই। অনেকে বাঙালী জাতীয়তাবাদ বোঝাতে সেই জাতীয়তাবাদ বোঝাতে চেষ্টা করেন যে জাতীয়তাবাদ তাদের মধ্যে হলো বাংলাদেশ, পশ্চিম বাংলা, আসাম, উড়িষ্যা, বিহার। এটা অকল্পনীয় এবং সেই বাঙালী জাতীয়তাবাদের ঘাড়ের উপর তিন-চারটা কোপ ইতিমধ্যে পড়ে গেছে। আসামে পড়েছে, পশ্চিম বাংলায় পড়েছে। ওদের যে বাঙালী খেদাও আন্দোলন আসামে সেটার মধ্যে দিয়ে কোপ পড়েছে। বিহারে যে বাঙালীদের খেদাও- সেটার ওপর কোপ পড়েছে। উড়িষ্যাতে যে ভারতীয় ও অন্যান্যদের বের করে দিচ্ছে সেটায় পড়েছে। আমরা যদি আমাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকি, সেটাই আমাদের জন্য ভাল হবে। কারণ ভারতে তাদের অনেক সমস্যা আছে, তাদের সমস্যা তাদের মত করে সমাধান করতে দেন। আমরা আমাদের ঘর গুছাই। আমাদের ঘর গড়ে তুলি।

আর একটা কথা মনে রাখবেন, যেটা আমি আগে বলেছিলাম- বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে, গোত্র গোষ্ঠি নির্বিশেষে আমাদের আন্তর্জাতিক ও ভৌগোলিক সীমা, আমাদের বর্তমানে বাংলাদেশের যে সীমারেখা রয়েছে সেটাই। আর একটা কথা মনে রাখবেন জাতীয়তাবাদের সৃষ্টিকর্তা জনগণ। এর উত্তরাধিকারীও জনগণ। এটা কোন ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে হয় নাই, এর দর্শন কোন ব্যক্তি দেয় নাই- জনগণ দিয়েছে এবং এটা গড়ে উঠেছে শত সহস্র বছর ধরে। অনেক সময় আপনারা আমাদের কারো কারো নামে জাতীয়তাবাদকে সংযুক্ত করেন এটা ভুল এবং ভবিষ্যতে এটা করবেন না। যখনই করবেন তখনই আমাদের যে আদর্শ, রাজনৈতিক আদর্শ ব্যহত হবে। রাজনৈতিক আদর্শ কখনই কোন মানুষকে কেন্দ্র করে হতে পারে না। অনেক সময় আপনারা আমার নামে খুব সুন্দর সুন্দর কথা বলেন তখন আমার খুব খারাপ লাগে। কারণ আমি জানি ১৯৭১ সালে আমরা যে স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছিলাম, সেটা বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদকে কেন্দ্র করে। নিজেকে কেন্দ্র করে তো করি নাই। আমি তো জানি, আসলটা তো আমি জানি এবং আমি যদি অন্যভাবে এটাকে রূপ দেই তাহলে সেটা হবে রাজনৈতিকভাবে সবচেয়ে ভুল। আমাদের উদ্দেশ্য কি? ইতিহাস থেকে আমাদের শিক্ষা গ্রহণ করা উচিৎ। আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে জাতীয়তাবোধের প্রসারের মাধ্যমে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদকে আমাদের জাতীয় সত্তা হিসেবে একেবারে গেড়ে দেয়া। মানুষের শুধুমাত্র শহরের মানুষের নয়, গ্রামের মানুষ কারণ বাংলাদেশের শতকরা ৯৯ জন মানুষ গ্রামে বাস করে। যেহেতু শহরের মানুষ বেশি শিক্ষিত সে জন্য শহরের মানুষকে বেশি নেতৃত্ব দিতে হবে। কিন্তু যেহেতু আমাদের অতীতের রাজনীতি শহর কেন্দ্রিক এবং ব্যক্তি কেন্দ্রিক এবং কিছু মানুষ কেন্দ্রিক সে জন্য আমাদের দেশে রাজনীতি সব সময় ভুল পথে চলছে। আজকে বিরোধী দলগুলো যে চেষ্টা করা সত্ত্বেও আমাদের ক্ষতিসাধন করতে পারছে না তার কারণ আমাদের শিকড আমরা গেড়ে দিয়েছি গ্রামে। শহর তো অবশ্যই আমাদের শক্তি কিন্তু গ্রামের শক্তি ছাড়া শহরে পারবেন না। মনে আছে ১৯৭১ সালে পালিয়ে গিয়েছিলেন গ্রামে। বাংলাদেশ যে সৃষ্টি হলো, এটার একটা রাজনৈতিক সমাধান হলো একটা যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে। রাজনৈতিক সমস্যা সমাধান হয় বিভিন্নভাবে। অনেক সময় আপনারা দেখেছেন যুদ্ধ ছাড়াই সমাধান হয়ে যায়। যখন সেটা সোজা সমাধান, কিন্তু যখন শক্ত সমাধান তা কেবলমাত্র টেবিলের উপরে হয় না। সে সমাধানটা হলো রাজনৈতিকভাবে। একটা সামরিক অভ্যুত্থান কিংবা একটা যুদ্ধ অনেকগুলো পন্থার একটি পন্থা এবং সেটা হলো সবচেয়ে ভয়াবহ পন্থা। যখন অন্যসব পন্থা অকৃতকার্য হয় তখন এই পন্থা চালাতে হয়। আবার বিদেশী চক্রান্ত রয়েছে। আজকে আমাদের প্রতি তাদের থেকে হুমকি রয়েছে। তাহলে আমাদের কি করতে হবে? কয়েক হাজার সেনাবাহিনী থাকলে আমাদের কাজ হবে না। কারণ আমাদের প্রতিরক্ষাটা হচ্ছে জাতীয়তাবাদকে কেন্দ্র করে। জাতীয়তাবাদের সৃষ্টি কর্তা জনগণ। জনগণকে রক্ষা করতে হবে। বীজটা জনগণের মধ্যে থাকতে হবে। সেই জন্যে আমরা বলছি এখানে বিপ্লবের এক নম্বরে জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সুসংহত করা। শান্তিপূর্ণ বিপ্লব বলতে আরও বুঝায় বিপ্লবটা হলো আমাদের জাতীয়তাকে হাসিল করা বাস্তবমুখীভাবে। বিপ্লব হলো আমাদের উপায়। এটা হলো আমাদের সোসিও ইকোনমিক কালচারাল প্রোগ্রাম। প্রথমেই আপনারা দেখবেন অন্ন, বস্ত্র, গৃহ, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার পূর্ণ সুযোগ। দ্রুততম সময়ে গণমানুষের জন্য নিশ্চিত করাই হবে এই বিপ্লবের উদ্দেশ্য। শান্তিপূর্ণ বিপ্লব বলতে আরও বুঝায় এই পাঁচটা না করলে যতই আপনারা সুন্দর সুন্দর মন্ত্র বলেন কোন লাভ হবে না। সমস্ত রাজনীতি সমস্ত সংগ্রামী জীবনের উন্নয়নের জন্য এবং জীবন উন্নয়নের পাঁচটি মূল লক্ষ্য হলো অন্ন, বস্ত্র, গৃহ, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা। শান্তিপূর্ণ বিপ্লব বলতে আরও বুঝায় জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সুসংহত করা। যদি স্বাধীনতাই না থাকে তবে জাতীয়তাবাদ থাকবে কি করে। সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজন একটি সুষম পররাষ্ট্রনীতি। একই সঙ্গে আমাদের জাতীয় স্বাধীনতা রক্ষার জন্য সমগ্র দেশবাসীকে প্রস্তুত করে তুলতে হবে। ছোট হলেও একটা সদা প্রস্তুত কার্যকর বাহিনী আমাদের থাকতে হবে। আর এই সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে থাকবে আধা সামরিক বাহিনী ও জনগণের মিলিশিয়া।এ ছাড়া স্কুল-কলেজে ক্যাডেট কোরের মাধ্যমে মৌলিক সামরিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকবে। প্রথমে দেশটাকে বাঁচাতে হবে। দেশটাকে বাঁচাতে না পারলে, প্রতিরক্ষা না করতে পারলে জাতীয়তাবাদকে ভেঙ্গে চুরমার করে দেবে। কারণ আমরা লক্ষ্যবস্তু হয়ে গেছি। দুনিয়াটা এমন প্রত্যেকে একজন অপরের লক্ষ্যবস্তু এবং দুনিয়াতে আপনারা লক্ষ্য করেছেন এই যে সমাজতান্ত্রিক বুক যেটাকে বলে এটার মধ্যে একটা আজব জিনিস আছে। যদি এসব দেশগুলোতে যান তাহলে দেখতে পাবেন যে একটা দেশ বাকী সবগুলোকে শোষণ করছে বিভিন্নভাবে। সেজন্য আমরা বলি সারভাইবেল অব-দি-ফিটেস্ট। আমাদের ফিট করতে হবে। আমাদের স্বাধীনতা আমাদেরকেই রক্ষা করতে হবে এবং আপনারা দেখবেন কোন দেশ যদি সাহায্য করে, এতটুকু সাহায্য করলে বলবে এতটা আর তার পরিবর্তে আপনার কাছ থেকে নিয়ে যাবে আরো এতটা যেটা ‘৭১ সালে হয়েছে। যুদ্ধ করলাম আমরা, বাংলাদেশের মানুষ মরল যখন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মেরুদণ্ড ভেঙ্গে গেল তখন অন্য সাহেবরা আসলেন হয়ে গেল তাদের নামধাম। কিন্তু সত্যকে তো ঢাকা যায় না। আমরা যদি স্বাধীন না হতে চেতাম তাহলে কে আমাদের স্বাধীনতা দিতে পারত। আর যদি আমরা স্বাধীনতা চেয়েছিলাম- কে আটকাতে পারত। কোন যদি বিদেশী নাও আসত তাহলেও আমরা স্বাধীন করে নিতাম দেশকে। এর মধ্যে আবার একটা মজার ব্যাপার আছে। ১৯৭১ সালে যখন মুক্তিযোদ্ধারা অর্থাৎ যারা সেই সেনাবাহিনীতে হোক, গেরিলা হোক, যারা দেশের মধ্যে যুদ্ধ করছিল তখন আওয়ামী লীগাররা কলকাতায় বসে দেখল যে আরো যদি বেশি দিন যুদ্ধ চলে তাহলে আমাদের হাত থেকে নেতৃত্ব চলে যাবে। তখন তারা তাদের গুরুদেবকে বলল যে, ভাইসাহেব বাঁচাও। এই রকম চলতে থাকলে আমরা আমাদের অস্তিত্ব হারাব। ওরা নিজেরাই আমাকে বলেছে, আমাদের একটা সেকশন ছিল। তারা বলেছিল যে, যতটা বিদেশ থেকে সাহায্য পাই ভাল। যুদ্ধ চলুক, দুঃখ কষ্ট আরো বেশি হবে। তবে দেশটা জাতিটা দাঁড়িয়ে যাবে। কারণ আমরা সেনাবাহিনীরা ধরে নিয়েছিলাম যে পাকিস্তান বেশি দিন চালাতে পারবে না এই যুদ্ধ। যেভাবে আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠনটা গড়ে উঠেছিল তাতে পাকিস্তানীরা বেশি দিন টেকার কথা ছিল না। স্বাধীনতার জন্য প্রত্যক্ষভাবে যারা যুদ্ধক্ষেত্রে যুদ্ধ করছে তাদের হাতের মধ্যে দিয়ে যেন স্বাধীনতা না আসে সে জন্য একটা ষড়যন্ত্র শুরু হয়ে গেল। আওয়ামী লীগ এবং বিদেশী কেউ কেউ মিলে। কারণ সকলেই চায় আপনারা দুর্বল থাকেন। বিদেশে কেউ চায় না বাংলাদেশ আত্মনির্ভরশীল হোক। এরা সকলেই চায় যে বাংলাদেশ খুব গরীব থাক, ছেঁড়া কাপড় পড়ে বেড়াক, ভিক্ষা করতে হয় কিছু কিছু ভিক্ষা দিয়ে দিবে এবং ভিক্ষা করতে করতে আপনাদের অভ্যাসটা এমন হয়ে গেছে সব বড় বড় মানুষ হয়ে গেছেন। বড় বড় বাড়ি, গাড়ি হয়ে গেছে। তাও ভিক্ষা না পেলে আপনাদের দিনটা ভালভাবে কাটে না। এটা একটা অভ্যাস হয়ে গেছে। সে জন্য আমরা এটাকে রোধ করতে চাই। সাহায্য কম নিয়ে সকলে কাজ করে যান। ভিক্ষা চলবে না এবং আমরা এটাকে রোধ করব। আমি তো আগেই বলেছি এরকমভাবে ভিক্ষা করে আমরা চলতে পারি না। একটা আত্মমর্যাদাপূর্ণ দেশ ও জাতি হিসেবে আমরা থাকতে পারি। সকলকে কাজ করতে হবে। সকলকে কাজ করে খেতে হবে। সেদিন এক মৌলভী সাহেব এসেছিলেন আমার কাছে। উনি বললেন, আমরা তো আপনার দল করি। আপনাকে সাপোর্ট দিচ্ছি। সেই জন্য বাধিত আমি। উনি বললেন, আপনার সব কাজ ভাল লাগে কিন্তু একটা কাজ এই যে মহিলাদেরকে বের করেছেন। উনি আবার ভাবলেন- বলে ঠিক করলাম কি না। আমি বললাম- উত্তরটা দেই। বাংলাদেশের গ্রামে এসব কোন সমস্যা নেই। সমস্যা হচ্ছে শহরে। শহরের কোন কোন এলাকায় যারা বড় বড় গাড়িতে চড়েন, টাকা-পয়সা আছে- সাথে সাথে তাদের মধ্যে মানসিক বিকৃতিও এসেছে। টাকা-পয়সা থাকা ভাল। ইসলামে বলেছে, গরীব থেকো না। কিন্তু টাকা-পয়সার সাথে সাথে মানসিক বিকৃতি এসেছে এটাই খারাপ। আমি তাকে বলেছিলাম মহিলাদের বোরখার মধ্যে রাখলেও যারা গোলমাল করে তারা করবে। যারা করবে না তারা এমনিতেও করবে না। এটা হলো রুচির প্রশ্ন- কে কেমন তার উপর নির্ভর করে। তা শুনে উনি চুপ, আর কথা না। আর একজন পীর সাহেব বলে পরিচয় দিলেন উনিও একই কথা বললেন, উনি বললেন, মহিলাদের পুলিশে নিচ্ছেন। আমি বললাম, আজ-কাল মহিলারাও ক্রিমিনাল হয়ে গেছে। তাদের ধরতে হলে মহিলা পুলিশ থাকতে হবে। বললেন, তাতো ঠিক কথা কিন্তু তারা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে। আমি বললাম, তাদের তো বোরখা পড়তে দেয়া যায় না। তাই তাদের প্যান্ট দেয়া হয়েছে। সাথে লম্বা বুস শার্টও দেয়া হয়েছে।

উনি বললেন, আপনারা মহিলাদের গ্রাম প্রতিরক্ষা দলে নিয়েছেন, আনসারে নিয়েছেন। রাস্তায় তাদের কেমন দেখা যায়। আমি বললাম, আপনার ঘরে বোন-মেয়ে আছে না, তাদের যদি ঘরে কেমন কেমন না দেখায় তবে রাস্তায় অন্য মেয়েদের কেমন কেমন দেখাবে কেন? তারপর আমি তাকে বললাম, মহিলাও আল্লাহতায়ালা বানিয়েছেন- আমরা কি করব? এটা সত্য যে মহিলা ছাড়া চলে না। বিয়ে-সাদী না করলে চলে না। আবার ভাল মুসলমানদেরও চারটি বিয়ে করতে হয়। এরপরও মহিলাদের প্রতি বিদ্বেষ কেন? তারপর আমি তাকে বললাম, আমাদের দেশে অর্ধেক জনসংখ্যা মহিলা। তাদের ক’দিন বসিয়ে বসিয়ে খাওয়াবেন? আমরা পারব না সরকার পারবে না। গণ্ডায় গণ্ডায় সন্তান উৎপাদন করবেন- আমরা খাওয়াতে পারব না। তারপর চুপ। পরে উনি বললেন- ভাই সাহেব আমাদের একটা মাদ্রাসা আছে তার জন্য কিছু টাকা, পয়সা দেন। আমি বললাম, তাই বলেন না কেন? আমি উনাকে এ পর্যায়ে বললাম, এই যে মেয়েরা গ্রাম প্রতিরক্ষা দলে, আনসার-এ আসছে। তারা তো আপনাদের ঘরের মেয়ে। তাদের আটকাতে পারেন না কেন? পারেন না এ জন্য যে, আপনারা এগুলোকে খেতে দিতে পারেন না। এটা তারা বুঝে গেছে। সে জন্য কাজ করতে হবে পুরুষ মহিলা সকলকে। কেউ কাজ না করে খেতে পারবে না। এর মধ্যে বিরাট একটা সমাজতন্ত্র রয়েছে। যদি বাস্তবভাবে উন্নতি করতে চান তবে প্রত্যেকটি কর্মক্ষম হাতকে কাজে লাগাতে হবে। সে জন্য আমরা গ্রামে গেছি। সকলকে কাজে নামিয়েছি, কোদাল ধরেছি। ঢাকা ইউনিভার্সিটির দু’তিনশ ছেলে মেয়েরা গেছে খাল কাটতে। মেয়েরা এখনও যায়নি। আমি ওদের বলেছি তোমরা যাও না- তোমরা কি শুরু করলে? এটা একটা বৈপ্লবিক পদক্ষেপ হয়েছে। আমি দু’তিন দিনের মধ্যে দেখতে যাব ওরা কি করেছে। এই যে যুবসমাজ- তাদের মধ্যে নতুনভাবে নতুন নতুন ধরনের চেতনা সৃষ্টি করার জন্য আমরা চিন্তা করছি। প্রতি বছর নিউ জেনারেশন ডে পালন করবে। আমরা এক সময় বের হয়ে যাব। তখন নতুন নতুন ছেলে-মেয়েরা আসবে। তাদের আগে থেকেই তৈরি করতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে রাজনীতি হয় তা জনগণ ভিত্তিক নয়। গত বছর ডাকসু’র নির্বাচনে জেএসডি বলল- বিরাট সংখ্যক ছাত্র আমাদের দলে এসেছে। আমরা ছাত্রদের মধ্যে থেকে আন্দোলন করে সারাদেশে ছড়িয়ে দেব। কিন্তু আন্দোলন আর হলো না। আন্দোলন হয়নি। কারণ তাদের প্রেক্ষাপটই ভুল। পাকিস্তানের প্রেক্ষাপটেই তাদের আন্দোলনের চিন্তা। তাদের এ প্রেক্ষাপট ঠিক না। তাদের রাজনীতি সময়োপযোগী নয়, ভুল। সে জন্য পুরোনো মার্কসইজম, লেনিনইজম হেরে যাচ্ছে। এখন তারা সবাই মিলে চিন্তা করছে কিভাবে এটাকে বৈজ্ঞানিক করা যায়। এখানে একটা কথা আছে বিজ্ঞান এত দ্রুত গতিতে চলছে যে, এত রাজনৈতিক থিওরি আছে তাতে সব ওলট-পালট হয়ে গেছে। পোল্যান্ড-এ তাই ঘটেছে। পোল্যান্ডের মানুষ দেখেছে আমরা বিজ্ঞানের সাহায্যে তাড়াতাড়ি একই জিনিস করে ফেলতে পারি এবং সেটা সোসালিস্ট ও কমিউনিস্ট জগতকে একটা উচ্চ পর্যায়ে এনে ফেলেছে। মানুষের চোখকে আর বন্ধ করে রাখা যাবে না।

তাই আমরা জাতীয়তাবাদী রাজনীতিতে সকল দরজা খুলে দিয়েছি। খবরের কাগজে বিরোধী দলীয় বক্তব্যে যে যা করতে চাচ্ছে করছে। আমরা একটা জিনিস বুঝে ফেলেছি বাংলাদেশের মানুষ জাতীয়তাবাদী রাজনীতি গ্রহণ করেছে। আমাদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই। সকলকে বলতে দিতে হবে এবং এর মাধ্যমেই আমাদের প্রমাণ করতে হবে যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের রাজনীতি কত উদার। আমাদের যে একটি কর্মসূচি রয়েছে তা সবচেয়ে ভাল।

এটাই বাংলাদেশের জন্য উত্তরণের একমাত্র পথ। ধর্মের কথা বলছেন হিন্দু ভাইয়েরা একচেটিয়াভাবে আওয়ামী লীগ ছিল, এর অবশ্য একটা ঐতিহাসিক কারণও রয়েছে। তবে এখন দেখা যাচ্ছে তাদের মধ্যে কেমন একটা পরিবর্তন আসছে। তারা বুঝতে পারছে তাদের কোন সুবিধা হচ্ছে না। কারণ মানুষ মাত্রই নিজের দিকটি দেখে। কার কত লাভ হচ্ছে তা দেখছে। আমাদের মধ্যে সকলে তো ফেরেস্তা নই। যারা দিনরাত ধর্মকে বিক্রি করে, তারা পোলাও আর গো ছাড়া খেতে চায় না। তাদের কাছে বসলে পোলাও-এর গন্ধ বা বোতলের গন্ধ পাওয়া যায়। দেখবেন যে যত আল্লাহকে বিক্রি করবে, কথায় কথায় কোরআনের উদ্ধৃতি দেবে, পর্দার আড়ালে তাদের কি ঘটছে। মানুষ অনেক চালাক হয়ে গেছে। আজ কালকার বাচ্চারাও অনেক এগিয়ে গেছে। যোগাযোগের অনেক উন্নতি হয়েছে। আগামী বছর প্রতি গ্রামে টেলিভিশন থাকবে। জনসংযোগ আরো উন্নতি হবে। আমরা গ্রামে গ্রামে যাচ্ছি। গত চার বছরে এত মিটিং করেছি। মানুষের চোখ খুলে দিতে হবে। আমি অনেক মিটিংয়ে বলেছি- চাবুক লাগাতে হবে, শক্ত চাকুব। আমি বিভিন্ন পার্টি মিটিংয়ে এবং জনসভায় বলেছি- ভাইসব কতদিন ঘুমিয়ে থাকবেন। বিদ্রোহ করেন। আমার বিরুদ্ধে নয়। শোষণের বিরুদ্ধে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে। আমরা এসব না করলে আমাদের কাজ অসম্পূর্ণ থাকবে। আমি বললাম- বিদ্রোহ অন্যায়ের বিরুদ্ধে, শোষণের বিরুদ্ধে। আমাদের বিরুদ্ধে নয়। কারণ আমরাই বিদ্রোহ করতে বলেছি। আমি জানি আমাদের মধ্যে এমন কিছু লোক আছে, তাদের ঔপনিবেশিক মনোভাব এখনও বিদ্যমান। এমনকি বৃটিশদের চেয়েও বেশি। তাদের এলাকায় তারা সন্ত্রাস সৃষ্টি করে রেখেছে। কিছু দিনের মধ্যে তাদের পিঠে এমন চাপ পড়বে যে, ঠিক হয়ে যাবে। তবে এ কাজ করতে হবে জনগণকে দিয়ে। আমাদের বিরুদ্ধে আমরা একটি বিরোধী শক্তি সৃষ্টি করতে চাই। দেখবেন এটা এক বছরের মধ্যে এসে যাবে, সে ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আর একটি কথা- রাজনীতিকে ঠিক রাখতে হবে। রাজনীতি কোন সময়েই দাঁড়িয়ে থাকে না। আমাদের কিছু মৌলিক বিষয় রয়েছে- এগুলোকে ঠিক রেখে রাজনীতিকে সময়োপযোগী করতে হবে। নইলে রাজনীতিতে ফাটল ধরে যাবে। আর একটা জিনিস মনে রাখবেন- জাতীয়তাবাদের রাজনীতি বহির্মুখী, আন্ত মুখী নয়। ইংরেজিতে তাকে আউট ওয়ার্ড লুক বলে। আপনাকে ঝর্ণার মত ছড়িয়ে যেতে হবে। রাশিয়ানরা যে রাজনীতি করছে তা ভিতরমুখী। ফলে, তাদের রাজনীতি ভেঙ্গে যাচ্ছে। সোসালিস্ট দেশে একচেটিয়াভাবে তা রয়েছে। ওখানে গেলে দেখবেন তারা ভয় পাচ্ছে- যদি অসুবিধা হয়। একজন দুজনের হয়তো অসুবিধা হবে, কিন্তু জাতি হিসেবে লাভবান হবে। আমি কিন্তু খুব সোসালিস্ট, লেফট, প্রোগ্রেসিভ। কারণ আমি হাতিয়ার তুলে নিয়েছিলাম আর্মিতে থাকাকালীন। আমি তো চ্যালেঞ্জ দিয়েছি আমার চেয়ে বামপন্থী কেউ না। যারা বামপন্থী রাজনীতি করেন তাদেরও চ্যালেঞ্জ দিয়েছি। কি হলো? আমাদের জাতীয়তাবাদী রাজনীতি বহির্বিশ্বমুখী হতে হবে। ঝর্ণার পানির মত ছড়িয়ে পড়তে হবে। আবার বাইরে থেকে আনতে হবে- আনতে হবে আবার ছড়িয়ে দিতে হবে। রাজনীতি হলো একটা ইন্টার এ্যাকশন। যেমনভাবে ইঞ্জিনের চাকা, স্টিম ইঞ্জিনের চাকা যেভাবে সামনে যাচ্ছে, পিছনে যাচ্ছে-তেমনি করতে হবে।

রাজনীতির সবচেয়ে বড় বাহন হচ্ছে সংগঠন। সে কথা পরে, আর একটি কথা হলো, জাতীয়তাবাদী রাজনীতি যদি দুর্বল হয় তাহলে আপনারা ধ্বংস হয়ে যাবেন। আপনারা দুর্বল থাকতে পারেন না। যে দেশেই জাতীয়তাবাদী রাজনীতি হয়েছে সেখানেই আক্রমণ হয়েছে। যেমন এখন আমাদের উপর আঘাত আসছে। চাপ খেতে খেতে এক সময় শক্ত হয়ে যাব। আঘাত খাওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। আরো পিটানোর দরকার রয়েছে। আপনাদের শক্ত হতে হবে। বন্দুক, পিস্তল দিয়ে নয়। বন্দুক, পিস্তল দিয়ে রাজনীতি হয় না। আমি একদিন বন্দুকধারী ছিলাম। পুরো যুদ্ধের সময়ও আমি কিন্তু বন্দুক নিয়ে ঘুরে বেড়াইনি। কারণ, বন্দুক যুদ্ধেও জিতায় না। রাজনীতিতেও জিতায় না। একথা বলার কারণ আছে। একটা কথা (পাওয়ার কামস ফ্রম দি ব্যারেল অব এ গান) বন্দুকের নলই ক্ষমতার উৎস। কিন্তু ব্যারেল আসে কোথা থেকে? অন্য কোন জিনিস থেকে। আপনারা যদি বিশ্লেষণ করেন তবে বুঝবেন। আমি নিজেও সামরিক বাহিনীতে ছিলাম। এখন সব ভুলে গেছি। কিন্তু আমি দেখলাম- এটা সত্য নয়। (পলিটিক্যাল পাওয়ার অর মিলিটারী পাওয়ার কামস্ ফ্রম দি পিপলস্) রাজনৈতিক বা সামরিক ক্ষমতা উভয়ই আসে জনগণের কাছে থেকে। আমাদের সশস্ত্র বাহিনী রয়েছে কমসংখ্যক। এর চারপাশে গড়ে তুলছি প্যারা মিলিটারী ফোর্স। আর জনগণের ফোর্স। গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী। এক কোটি যার মোট সংখ্যা, এর মধ্যে মহিলা রয়েছে ৩৫ লাখ। এটাকে বাড়িয়ে আমরা আগামী বছরে দু’কোটি করব। এরা সবাই জাতীয়তাবাদী। এরা অনেকে আমাকে বলেছে- ‘স্যার আমাদের ইউনিফর্ম দেন, হাতিয়ার দেন, আমরাই স্বাধীনতা রক্ষা করব।’ স্কুল-কলেজের মেয়েরা, এমনকি গৃহবধূরাও একথা বলেছে- অনেক জায়গায়। আমাদের মধ্যে জাতীয় চেতনা এসেছে। পুরো জাতিটাকে সংগঠন করতে হবে। এর ফল কিন্তু আপনারা পেতে শুরু করেছেন। বিভিন্নভাবে ফল পাচ্ছেন। অনেকে ব্যবসা-বাণিজ্য করছে। আমরা অনেককেই ফল দিতে পেরেছি। যারা কোটিপতি হবে তারাও মনে রাখবেন যে জাতীয়তাবাদী দলের দরজা দিয়ে ঢুকেছিলেন। আমরা কখনই জাতীয়তাবাদী চোর অঙ্গদল, বাটপার অঙ্গদল করব না। জেএসডি যে সোস্যালিজমের কথা বলেছে কাজে তার উল্টো করেছে। তাদের এক নেতা ওয়েস্ট জার্মানিতে যেয়ে এত টাকা কামিয়েছে যে ওয়েস্ট জার্মানি সরকার বিরক্ত হয়ে ভিসা সিস্টেম চালু করেছে। আগে ভিসা সিস্টেম ছিল না। তাহলে ভাবেন এগুলো কি সমাজতান্ত্রিক নেতা? তাদের অনেক বড় বড় নেতা আমার কাছে এসেছে। আমি তাদের বলেছি ভাই সোস্যালিজমের উপর ১০ মিনিট বলেন তো। তারা দু’মিনিটের বেশি কেউ বলতে পারেনি। তারা শুধু দু’চারটা ইন্টারন্যাশনাল নেতার নাম জানে মার্কস, লেনিন, মাও ইত্যাদি। ট্রটস্কাইট কি? দেখেন উনাদের ঐ ট্রটস্কাইট রাজনীতির দিন শেষ হয়ে গেছে। কাজেই এসব কিছু মনে রেখে আমাদের পথ চলতে হবে। এগিয়ে যেতে হবে।

The following two tabs change content below.

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
জীবিকার জন্য একটা চাকরি করি। তবে পড়তে ও লেখতে ভালবাসি। স্পেশালি পাঠক আমি। যা লেখার ফেসবুকেই লেখি। গদ্যই প্রিয়। কিন্তু কোন এক ফাঁকে গত বছর একটা কবিতার বই বের হইছে।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →