Main menu

মুর্দার কানে দিতেছি মরণের খবর

আগামী ১৫০ বছরে অন্তত ৬০০ কোটি মানুষ মরবে। এই স্টেটমেন্ট দিতে কয়েকটা জিনিস কনস্ট্যান্ট হিসাবে নিলাম আর কি:

ক. দুনিয়ায় এখন ৬০০ কোটি মানুষ আছে।
খ. এদের কেউ ১৫০ বছরের বেশি বাঁচবে না।
গ. মানুষের আর কোন বাচ্চা হবে না।[pullquote][AWD_comments][/pullquote]

কী হবে তাইলে? দুনিয়ায় মানুষ থাকবে না আর। মানুষের যদি বাচ্চা হইতে থাকে তাইলে মরণের এই নাম্বার আরো বড়ো হবে। সো স্যাড 🙁 । স্যাড? নট এক্সাক্টলি; মরণ ৬০০ কোটি ছাড়াইয়া যাবার আরো অর্থ হইলো, ১৫০ বছরের পরেও মানুষ থাকছে দুনিয়ায় !

তাইলে রিপ্রোডাকশনের গুরুত্ব দেখেন! তো, বাংলা বা তামিল–কোন একটা বুলি বা কালচারের বেলায় রিপ্রোডাকশনের গুরুত্ব কেমন? মনে হচ্ছে আমরা কইতে পারি, একটা কালচারের আয়ু বেশি হইলে ১৫০ বছর – যদি না সেই কালচারের রিপ্রোডাকশন চালু থাকে।

বাট কালচারাল রিপ্রোডাকশন তো অমন একটা ব্যাপার না তো যে, আচমকা একদিন পুরা বন্ধ হইয়া গেল! তবু মরে তো কালচার, বুলি; আমেরিকা বা অস্ট্রেলিয়ার বহু আদিবাসী কালচার মরছে সাদারা সেইসব কালচারের সবাইরে খুন কইরা ফেলছিল! এমনে সবাইরে খুন না করলেও বুলি বা কালচার মরে কিন্তু! ধরেন, সংস্কৃত বা এনসিয়েন্ট ঈজিপ্ট! এগুলি মরছে পাওয়ার হারাইয়া; সংস্কৃতে হয়তো এখনো কেউ লেখে তবু মরাই তো! কেমনে পাওয়ার হারাইলো?

পয়লা কারণ সমাজের লগে সিঙ্ক করে চলতে রাজি হয় নাই সংস্কৃত; পণ্ডিতরা লিটারেচার পয়দা করছে, ভাল পোয়েট্রি বা মিউজিক বা নাটক পয়দা করছে মে বি, সমাজ সেগুলি খায় নাই; পণ্ডিতরা পাত্তা দেয় নাই সমাজের এই না খাওয়া। তাঁরা মে বি খুশি হইছে, আম জনতা না বোঝায়, না খাওয়ায় ভাল আর্ট হইছে বইলা ভাবছে মে বি!

সমাজ প্রাকৃত কয় আর খায়; সংস্কৃত পণ্ডিত বা কবি ভাবলেন, ওরা বেকুব ছোটলোক, আর্টের কী বুঝবে ওরা! সংস্কৃত হয়তো টেরই পায় নাই যে, সমাজ আসলে আরেকটা বুলি কয় বা খায়!

আরামেই আছিলেন এই কবি আর পণ্ডিতরা; কেননা, সমাজের শাসন আর পাওয়ার সংস্কৃতঅলাদের হাতেই তো আছে! তো, কোন এক প্রাকৃত যখন রাজা হইলেন তখন 🙂? দেখা গেল, কয়েকজন মাত্র সংস্কৃত–তাগো এখন পাওয়ারও নাই, ইজ্জতও নাই! সো, কে আর শেখে সংস্কৃত, পুরা অদরকারি হইয়া পড়লো! বোঝার জন্য একটা ঘটনা কই; মাইকেল মধুসূদন যশোরে তাগো বাড়ির কাছে এক মসজিদে ফার্সি শিখছিল–ফার্সি তখনো রাজভাষা ভারতে। আজকে প্রায় ২০০ বছর পরে আমাদের মসজিদ-ফার্সি-হিন্দু ব্রাহ্মণ জমিদার কত কত দূরের জিনিস মনে হয়!

এখনকার বাংলাদেশের দশা কেমন? শাসন আর পাওয়ার এখনো ‘শুদ্ধ বাংলা’র হাতে বটে; সমাজে? সমাজের আম বাংলা মাইল মাইল দূরে; ‘শুদ্ধ বাংলা’য় আর্ট পয়দা হয় সমাজ খায় না, ঐ বাংলার সিনেমার শো’তে টিকিট বেচা হয় ৫টা! আর্টিস্টরা খুশি; পিপল বোঝে না মানেই তো আর্ট হিসাবে ভালো! পিপলের বুলি যুদা বলে আদৌ মালুম হয় না ঐ আর্টিস্টদের!

পাওয়ার কি থাকবে তাগো হাতে? নো; কেন? কারণ, সমাজে এরা ইজ্জত হারাইছেন অলরেডি। ঐ বাংলার এজেন্টরাই নিজেদের পোলা-মাইয়া ইংরাজি মিডিয়ামে পড়াইতেছেন; হিন্দি আর ইংরাজি স্মার্টনেস সমাজ দখলে নিতাছে; আম বাংলা হিন্দি-ইংরাজির লগে খাতির কইরা ধনী হইতাছে; লিটারেচার/আর্ট পয়দা হইতাছে ঐ আপোসী আম বাংলায়। খাইতেছে মানুষ।

পাওয়ার সিস্টেমের বিভিন্ন পয়েন্টে থাকা ‘শুদ্ধ বাংলা’ লোকেরা এখনো আছে, তাঁরা রিটায়ার করবেন, মরবেন; কারা বইবে সেইসব চেয়ারে/পয়েন্টে!

কয় বছর আছে তাগো আয়ু? ৫০ নাকি ৪০ বছর? রিপ্রোডাকশন আছে নাকি? কই! নিজেরা নিজেরাই পড়ে আর আড্ডা দেয়, ঝগড়া করে! দুইচার জন রিপ্রোডিউস করতাছে, কেউ পড়েও না, সমাজে ইজ্জতও নাই আর–কমতাছে আরো!

মরা সংস্কৃতের জিন্দা কবির মতো এরাও মরা বাংলার জিন্দা রাইটারের বেশি কিছু কি হইতে পারবেন? কিছুদিন পরে হয়তো লেখার ক্যরেজই হারাইবেন পুরা! নিজেদের পোলা মাইয়ারে হিন্দি-ইংরাজি স্মার্টনেস শিখাইবেন আর গালি দেবেন বাংলা না পড়ার জন্য, না কইবার জন্য! বাট তাই কি! নাকি সেই সংস্কৃত পণ্ডিতের মতো এনারা আসলে চিনতে পারতাছেন না যে, ঐ মাইয়া-পোলাদের বুলি আরেকটা কিছু — নয়া আম বাংলা! স্রেফ নামটা একই!

যে যেমনে পারেন ফিউনারেলের এন্তেজাম করতে থাকেন আপনার এ্যনসেস্টরদের জন্য।

 

[youtube id=”yPpsXHwx-Ho”]

 

 

The following two tabs change content below.
Avatar photo

রক মনু

কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →