লিবারালিজম
লিবারালরা বুঝিবা কনজার্ভেটিভদের চাইতে ভালো; লিবারালরা প্রগ্রেসিভ, নামের ভিত্রেই ওৎ পাইতা লুকাইয়া আছে মানুষের মুক্তি, তাবত মাকলুকাতের হক, দুনিয়াদারির ইনসাফ!
এখন তুলনা তো এক জটিল ব্যাপার! তুলনার জন্য একটা ‘জিরো ভ্যালু’ দরকার, কিন্তু চিন্তার দুনিয়ায় ‘জিরো ভ্যালু’ কই পাই! আবার, না পাইলে তো আমরা কোন বেসিসই পাইলাম না, তুলনাটা কেমনে করি তাইলে![pullquote][AWD_comments][/pullquote]
কিন্তু লিবারাল আর কনজার্ভেটিভদের তুলনার জন্য একটা ‘প্লান বি’ পাইছি আমি! প্লানটা হইলো, লিবারাল স্ট্যান্ডার্ডগুলারেই ‘জিরো ভ্যালু’ বা বেসিস ধইরা তুলনা করা! এমন তুলনায়ও যদি লিবারালদের ভালো কইতে কষ্ট হয়, যদি দেখা যায়, কনজার্ভেটিভদের যেইসব গালি হরদম দিয়া থাকে লিবারালরা সেইসব দোষ লিবারালদের আছে–প্রায় সমান বা আরো বেশি তাইলে মনে হয় সবাই মানবেন যে, যদি কোন ‘জিরো ভ্যালু’ পাইতাম তাইলেও লিবারালরা জিততে পারতো না!
তো, দেখা যাক!
লিবারাল স্ট্যান্ডার্ড হিসাবে শুরুতে ১৭৮৯ সালের ফ্রান্সে হওয়া ‘রেভল্যুশন’-এর শ্লোগানটারে লইলাম। শ্লোগানটা আছিল, ‘লিবার্টি, ইক্যুয়ালিটি এবং ফ্রেটার্নিটি’। রেভল্যুশন হইলো; মার্ক্সিজম কইবে, এই লিবার্টি এবং ইক্যুয়ালিটি পার্শিয়াল; কেননা, এই রেভল্যুশন কেবল সুপারস্ট্রাকচারের ঘটনা, ইকোনমি বা পয়সা বা মালিকানার ইনফ্রাস্ট্রাকচারের কিছুই বদলাইলো না তো! আমরা মার্ক্সিজমের স্ট্রাকচারালিজমের বাইরে থাইকাও দেখতে পারি, ইকোনমিক ভাগাভাগি বাদে কতটা পাইলাম আমরা।
১৭৭৬ সালে বৃটেন থিকা আমেরিকা স্বাধীন হইলো, ফ্রান্স আমেরিকারে স্ট্যাচু অব লিবার্টি গিফট পাঠাইলো। কিন্তু ফ্রেঞ্চ রেভল্যুশনের ঠিক ১০০ বছর পরে, ১৮৮৯ সালের প্যারিসে ইতিহাসের সবচে বড়ো ‘হিউম্যান জ্যু’ বা মানুষের চিড়িয়াখানা বানাইলো ফ্রান্সের লিবারালরা। এই চিড়িয়াখানায় ফ্রান্সের আফ্রিকান কলোনি থিকা কালা মানুষের আনা হইলো, একটা আর্টিফিশিয়াল আফ্রিকা বানাইয়া সেইখানে ল্যাংটা কইরা রাখা হইলো ঐ কালা আদমীদের। আরো রাখা হইলো বান্দর, ওরাংওটাং। ঐ কালা আদমীরা বান্দরদের লগে কাড়াকাড়ি কইরা খাইলো, হাগলো, মুতলো, সেক্স করলো, ঘুমাইলো, যুদ্ধ করলো। ‘লাইভ আফ্রিকা’ এক্সিবিশন করলো লিবারালরা, লাখ লাখ মানুষ আফ্রিকা দেইখা ফেলতে পারলো প্যারিসের সেই চিড়িয়াখানায়।
ফ্রান্স-বেলজিয়াম-জার্মানি, সারা ইউরোপেই এমন এক্সিবিশন চললো ১৯৫০ সালের পরেও। এই ঘটনা দিয়া তাইলে আমরা সাফ সাফ কইতে পারি কিনা যে, ঐ লিবার্টি এবং ইক্যুয়ালিটি আসলে সাদা আদমীদের মামলা, কালারা তো ইভেন আদমীই না! মানুষ হইলে না পরে লিবার্টি আর ইক্যুয়ালিটি লইয়া আলাপ!
আগের ইতিহাসের কোন কনজার্ভেটিভ কালাদের মানুষের পাটাতন থিকা নামাইয়া দেয় নাই, নামাইয়া দিল লিবারালরা! ইতিহাস কইতেছে, ঐ হিউম্যান জ্যু’কে হারাম বইলা ফরমান জারি করেন লিবারালদের কাছে সবচে বড় ডেভিল, কনজার্ভেটিভ হিটলার!
ইতিহাসে আগেও আমরা স্লেভারি/গোলামী পাইছি, আমাদের ঈশা খা’ও এক ইরানির কেনা গোলাম আছিল, কিন্তু তাঁর চাচা তাঁরে আজাদ করেন ১৫ বছর পরে। স্বাধীন বা গোলাম–মানুষেরই দুইটা দশা আছিল। সাদা বা কালা বা মঙ্গোলয়েড–যে কেউ গোলাম হইতে পারতো, মানুষ থাইকাই। কিন্তু ইউরোপের সো কল্ড রেনেসার পরে আমরা যেই মডার্ন গোলামী পাইলাম তাতে আফ্রিকার কালা মানুষেরা আর মানুষই থাকতে পারলো না, তারা আরেকটা মাকলুকাত/স্পেসিস/জাত–শিম্পাঞ্জির কাছের কেউ।
আগের কনজার্ভেটিভ চিন্তায় রেসিজম আছিল, গোলামী বা স্লেভারি জিনিসটা রেশিয়াল ঘটনা হইতে পারে নাই। কারণ, থিয়োরির অভাব আছিল, কোন একটা রেসকে অমানুষ বইলা ফরমান জারি করে নাই আগে কোন থিয়োরি। তখনকার লিবারালিজম এই ঘাটতি পূরণ করে :)। ইভোল্যুশনের আইডিয়া দিয়া ভাবা সম্ভব হইলো যে, কালারা এখনো মানুষ হয় নাই, বাকি আছে ইভোল্যুশনে; কালারা তাই গরু বা ঘোড়ার মতোই ক্যাটল ভাবা যায়, মানুষের সার্ভিসে এস্তেমাল করা যায়। তবে গরুর চাইতে কালাদের ইজ্জত একটু বেশি আছিল মনে হয়, বান্দরের সমান–বান্দর বা কালা মানুষের গোশত খাবার ঘটনা পাওয়া যায় না তেমন! তবে হইতে পারে, ট্রাই কইরা দেখা গেছে বান্দর বা কালাদের গোশত টেস্টি না তেমন!
কইতেছিলাম, ঐ হিউম্যান জ্যু ব্যান করে হিটলার। তো, হিটলারের মোটিভ বোঝা শক্ত। এমনো হইতে পারে যে, এন্টারটেইনমেন্ট হিসাবে হিউম্যান জ্যু জার্মানদের বিজি রাখলে প্রোডাক্টিভিটি কইমা যাবে, এইটা হিটলারের অপছন্দ। বা ইভোল্যুশনিস্ট হিসাবে হিটলার আরেকটু বেশি খৃস্টান, তাই নাজায়েজ মনে হইছে ব্যাপারটা; তারচে মানুষ হিসাবে ধইরা কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে গোলাম বানাইলেই লাভ বেশি!
তবে, কালা আদমীদের মানুষ হিসাবে সবচে বেশি মানতো মনে হয় মডার্ন মেডিকেল সায়েন্স! মেডিকেল সায়েন্টিস্টরা দেখলো, এই বডিগুলা টেস্ট ড্রাগে মানুষের বডির মতোই রিঅ্যাক্ট/রেসপন্ড করে, এবং কালা বডি বাজারে জিন্দাই কেনা যাইতেছে, লিগ্যাল ঝামেলা নাই, টেস্ট ড্রাগে মরা স্রেফ কয়টা পয়সা গচ্চা দেওয়া মাত্র :)! তবে মরলে অ্যানাটমিক্যাল এলেম পাওয়া যাইতেছে বডিগুলা কাটাকুটি কইরা। যদিও জিন্দা দশায় কাটলেও নো প্রোবলেম, কেনা গোলাম তো! হিউম্যান হার্ট কেমনে পাম্প করে সেইটা বরং বোঝা যায় ভালো জিন্দা কাটলে! এছাড়া রেপিস্টরাও হয়তো মানুষই ভাবতো কালাদের; অবশ্য না ভাবলেই হয়তো বেটার, বিস্ট সেক্সের এক্সোটিক মজা পাওয়া যাইতে পারে তাতে :)।
লিবারালদের লিবার্টি আর ইক্যুয়ালিটি এমনই রেশিয়াল ঘটনা সেই কালে। কিন্তু কেবল কি রেশিয়াল? নাহ। লিবারাল ইউরোপের বহু দেশে আমরা পাবো, হোয়াইট কিন্তু মাইয়া হইলে ভোট দিতে পারতেছে না! পর্তুগালে এই তো সেদিন, ১৯৭৬ সালে, ফ্রেঞ্চ রেভল্যুশনের প্রায় ২০০ বছর পরে মাত্র ভোট দিতে পারলো মাইয়ারা! তাইলে ফ্রেটার্নিটির অর্থও ক্লিয়ার হইতেছে এতে; ঐটা আছিল সাদা ভাইদের মামলা কেবল, সাদা বইনেরাও বাদ।
কিন্তু আজকের লিবারালদের যদি আমরা পুরানা সেই লিবারালিজম দিয়া বিচার করি তাইলে ইনসাফ হয় না। লিবারালিজম নিজেরে আপডেট করছে বহুবার। গোলামী উঠাইয়া নিছে সে, রেসিজমকে অফিশিয়ালি ডিনাই করছে, মাইয়াদের হক মাইনা নিছে। লিবারালিজম এখন নতুন নতুন কসম খায়। এখন সে হিউম্যান রাইটসের শ্রোগান দেয়, টর্চারের বিপক্ষে খাড়ায়, যুদ্ধও যেন চায় না, কানা-খোড়া-নুলাসহ ডিজঅ্যাবলদের হকের কথা কয়, জেন্ডার সেন্সিটিভ হইতে কয়, রেসিজম এড়াইতে চায়, ডাইভার্সিটি মানতে চায় যেন, এনভায়রনমেন্টের গান গায়।
কতটা ভরসা করতে পারি আমরা? বিশ্বাস হয় ঐসব লিবারাল কসমে? মানুষের বা দুনিয়ার নসিবে কতটা হেরফের ঘটলো তাতে?
দুসরা বিশ্বযুদ্ধে আমরা দেখছি, এটম বোমা মাইরা লিবারালিজম জাপানের দুইটা শহর পোড়াইয়া দিছে পুরা, রেডিয়েশনের ভাপ এমনকি না হওয়া বাচ্চাদের উপরও হামলা চালাইছে! কেউ কইবেন, সে তো কতদিন আগের কথা, লিবারালিজম কি আর সেইখানে আছে!
বটে! তো, আমরা কি এখনো নিউক্লিয়ার কম্পিটিশনে আছি না? মিলিটারি বাজেট কত লিবারাল দেশগুলার? খুন করার এফিসিয়েন্সি লিবারালরা কি আরো বাড়াইতেছে না দিনে দিনে? মিসাইল-সাবমেরিন থিকা ড্রোনের এফিসিয়েন্সিরে যদি খুন করার এফিসিয়েন্সি কই, ভুল হয়?
ভিন দেশে খুন করা বাদ রাখলাম, কিন্তু এইসব করতে যাইয়া লিবারাল দেশগুলার কত কত সিটিজেনকে প্রতিদিন কোরবানি দিতে হয়?
আরো আরো দিকে যাই। আফ্রিকা-এশিয়ার গরিব মানুষেরা স্লেভারি যুগের সেই কালা গোলামদের মতোই এখনো মেডিকেল বডির যোগান দেয়। বাংলাদেশের বস্তির বাচ্চারা এখনো ইউরোপ-আমেরিকার টেস্ট ড্রাগের সাবজেক্ট। আফ্রো-এশিয়ান মাইয়ারা বার্থ কন্ট্রোল ড্রাগের টেস্টের বডি। এর লগে যোগ হইছে কৃষি টেস্টিং। কেমিক্যাল এবং জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং দিয়া লিবারালিজম হামলা চালাইতেছে হরদম!
মানুষের সেই চিড়িয়াখানা নাই, কিন্তু সেই চিড়িয়াখানা যেই এন্টারটেইনমেন্ট দিতো সেইটা পাইতে লিবারালিজম ফটোগ্রাফি কামে লাগাইতেছে, আফ্রো-এশিয়ানদের জীবন লাইভ ব্রডকাস্টিং হইতেছে এক্সোটিক হিসাবে। মাইয়াদের ভার্জিনিটি কেনা-বেচার মার্কেট ডেভলাপ করতেছে লিবারালিজম!
এদিকে, সারা দুনিয়ার লিবারাল রাষ্ট্রগুলা নিজেদের তাবত সিটিজেনের তাবত নড়াচড়া রেকর্ড করতেছে! নাগর লইয়া আপনে ধানখেতে ঢুইকা দেখতে চাইলেন যে, চান্দের আলোয় কেমন লাগে আপনাদের–কেউ তো দেখতেছে না আর! কিন্তু না, আপনাদের ল্যাংটা ছবি তুইলা ফেলছে বৃটিশ-আমেরিকান-ফ্রেঞ্চ লিবারাল স্পাই স্যাটেলাইট! বা গুগোলের ক্যামেরায় অটো তোলা হইয়া সার্ভারে জমা হইছে ছবি। গুগোলেরটা তবু হয়তো জানতে পারবেন, কিন্তু সরকারিগুলা কখনো না! লিবার্টি আর প্রাইভেসির শ্লোগান দেওয়া সেই লিবারালিজমের শাসনে দুনিয়ায় ১ ইঞ্চিও মুক্ত জমিন রাখে নাই, কোন মানুষ কইতে পারে না যে, আমি কোন দেশের সিটিজেন হবো না! আপনের দেশ থাকবেই, এবং আপনে চাইলেই দুনিয়ার আর কোথাও যাইয়া থাকতে পারবেন না, কিন্তু আপনে নাকি মুক্ত বা ফ্রি বা আজাদ! সেন্ট্রাল একটা এডুকেশন সিস্টেমে পইড়া হোমোজেনাস হইয়া উঠতে হবে সবাইকে।
আপনার সিকিউরিটির জন্যই আপনারে বন্দী বা কয়েদ করা হইছে :)! দুনিয়া যখন থিকা লিবারালিজমের শাসনে গেল তখন থিকাই এই সিকিউরিটি ইস্যু দিন দিন পোক্ত হইছে। এখন তো এমনই পোক্ত যে, টর্চার এবং খুন জায়েজ কইরা দিতেছে ঐ সিকিউরিটির শ্লোগান!
লিবারাল লিগ্যাল সিস্টেমে কনফেশন পাইছি আমরা। টর্চার কইরা কনফেশন আদায় এবং পুলিশ রিম্যান্ড চেনেন সবাই। এর আগে ফাসি/গিলোটিন আছিল, দোররা/চাবুক আছিল, হাত-কাটা আছিল, লিবারাল বা লিবারালের বাইরে এখনো আছে বহু দেশেই। কিন্তু আগে এইটা আছিল বিচারের পরের ঘটনা, ক্রাইম প্রমাণ হবার পরে রায়ের ভিতর দিয়া। টর্চার আগেও আছিল, কোন একটা ষড়যন্ত্রে কারা আছে জানতে রাজা টর্চার করতেন হামেশাই, কিন্তু সারা দেশে কমন ফৌজদারি ক্রাইমের বেলায়? না, লিবারাল ইন্টারোগেশন/ টর্চার কনফেশন সিস্টেম ইউনিক।
কনফেশন আছিল চার্চে, বা ইসলামে যেমন আছে, মনে মনে আল্লার কাছে পাপ স্বীকার কইরা তোবা/তওবা পড়া/ করা। কিন্তু চার্চের কনফেশনে পাদ্রি বা ফাদার লাগলেও ঐ কনফেশনও আছিল ফ্রি উইলের ব্যাপার! লিবারাল সিস্টেম বরং ফ্রি উইলকে চার্চের চাইতে কম মানে, টর্চার বা ইন্টারোগেশনের ভিতর দিয়া কনফেশন আদায় করে, টর্চার এইখানে অফিশিয়াল, কনফেশন আর দেবার ব্যাপারই নাই, আদায় করার জিনিস!
কিন্তু আগে যেমন কইতেছিলাম, লিবারালিজম নিজেরে আপডেট করে। ইন্টারোগেশন আর টর্চারকেও এখন যেমন এন্টি হিউম্যান রাইটস্ হিসাবে কওয়া হইতেছে। তাতে অবশ্য ব্যাপারটা আনঅফিসিয়াল হইলো মাত্র, কিন্তু আমরা দেখতেছি, সেই সিকিউরিটির নামে ট্রান্সপারেসি কমানো জায়েজ হইলো, বিদেশে বা অফশোর টর্চার চেম্বার পাইলাম আমরা, লিগ্যাল সিস্টেমের কাছে হাজির না কইরা খুন কইরা ফেলা পাইলাম আমরা, তার আগে দরকারি টর্চার তো আছেই! টর্চার হইয়া উঠছে সিভিলাইজেশনের নিশানা। মডার্ন ফার্মিং লইয়া আলাপে না যাই, মেশিন দিয়া গরুর দুধ দোয়াবার একটা ভিডিও দেইখা নিয়েন পারলে!
লিবারালিজমের কাছে আমরা মাইয়াদের হকের কথা পাইলাম, মানুষের লিবার্টির কসম পাইলাম কিন্তু পাসপোর্ট/ভিসার ইউনিভার্সাল কন্ট্রোলের লগে আরো পাইলাম বিয়া এবং তালাকে লিবার্টি কইমা যাওয়া, কয়েক ধাপ রেজিস্ট্রেশনের ভিতর দিয়া কন্ট্রোল আরো বাইড়া যাওয়া! লিবারাল গল্প হইলো, এইটা মাইয়াদের হক এনসিওর করবে। তাই কি? তেমন হইলে তালাক পোলাদের জন্য রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম, মাইয়াদের জন্য ইন্সট্যান্ট হবার কথা! কেননা, তালাক দেওয়া আগেও মাইয়াদের জন্য কঠিন আছিল, এখন আরো কঠিন হইলো! আর বিয়া করা মাইয়াদের জন্য কঠিন করা হইলো, পোলাদের ভিতর অনিচ্ছা বাড়াইলো! মোটের উপর তাইলে লিবার্টি কমলো না বাড়লো? স্রেফ এই হইলো যে, মাইয়াদের হকের শ্লোগান এবিউজ কইরা মানুষের লিবার্টি কমাইলো রাষ্ট্র! এর নেসেসারি ফল হইলো, সমাজে জারজ বাইড়া যাওয়া অথবা মাইয়াদের অ্যাবর্শনের দরকার বাইড়া যাওয়া! এর সমাধান হিসাবে এখন যেই ডিএনএ টেস্টিং পাইলাম তাতে কন্ট্রোল বাড়লো আরেক দফা, বাড়তি হিসাবে মেডিকেল ভায়োলেন্সের আওতায় গেলাম আমরা সবাই!
আরেক দিকে যাই এইবার। লিবারালিজম আমাদের দিল কলোনিয়ালিজম। দিল কালচারাল ইভোল্যুশনের আইডিয়া। আমরা তাই কলোনিগুলায় পাইলাম সিভিলাইজিং প্রজেক্ট। এই প্রজেক্টে সিভিলাইজ করা হইতে থাকলো ইউরোপের স্ট্যান্ডার্ডে পিছাইয়া পড়া কলোনিগুলাকে। বাংলায়/ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সিভিলাইজিং প্রজেক্টের মাস্টারমাইন্ড যেমন আছিলেন জন স্টুয়ার্ট মিল। কলোনিগুলার ওয়েলফেয়ার এবং সিভিলাইজিং এজেন্ডা এমন একটা এথিক্যাল বেইজ যোগান দিলো যেইটা আসলে গিলোটিনের মতো কাম করলো! কলোনিগুলায় নেটিভদের ভিতর যারা ঠেকাইতে চাইলো ইউরোপকে, রেজিস্ট করতে চাইলো তাগো ঐ গিলোটিনে কোরবানি দেওয়া গেল। লিবারালিজম সাফাই গাইলো, নেটিভদের কোরবানি না দিলে নেটিভদের ভালো ফলবে কেমনে! কলোনির নেটিভদের খুন এবং টর্চার জায়েজ কইয়া ফরমান দিল লিবারালিজম!
ইউরোপের দুসরা বিশ্বযুদ্ধের পরে লিবারালিজম নিজেরে আপডেট করলো আরেকবার। কলোনিগুলায় আধা ইউরোপীয় ধাচের স্বাধীন দেশ পাইলাম আমরা।
সিভিলাইজিং প্রজেক্ট কি খতম হইলো এইবার? কলোনিয়াল রেসিজম কি মরলো? টর্চার? কই! আমরা আসলে নয়া ভার্সন পাইলাম! কখনো নতুন নাম, এসেন্স সেই একই, কিন্তু আরো মুন্সিয়ানা বা এফিসিয়েন্সি পাইলাম আমরা!
সিভিলাইজিং প্রজেক্ট নতুন নাম নিয়া হইলো, ডেভলাপমেন্ট। ভেভলাভমেন্ট প্রজেক্টের ভিতর দিয়া আরামে চলতে পারলো রেসিজমও। মাতুব্বরির শাসনের নাম হইলো ডেভলাপমেন্ট/ওয়েলফেয়ার ইন্টারভেনশন, এইসব প্রজেক্ট আরো অবাধ করতে কনসাসনেস বিল্ডিং ঘটতে থাকলো।
শাসনের ক্ষমতা থাকলো লোকাল লিবারালদের হাতে। এনারা লিবারাল হিসাবে নিজেদের চিনাইতে চাইলেও আসলে সাবেক কলোনিয়াল মাস্টারদের লোকাল এজেন্ট। এই এজেন্টরা ডেভলাপমেন্ট প্রজেক্টগুলারে কামিয়াব বানাইয়া দেয়। এদের হাতে ডোনেশন দেওয়া হয়; কলোনির ভিতর দিয়া ডাকাতি কইরা লওয়া আমার পয়সা আজকে আমারেই খয়রাত দেয়!
আমার পয়সা আমারে খয়রাত দিয়া আমারে শিখায় কালচারাল স্ট্যান্ডার্ড। সাবেক সেইসব কলোনিয়াল মাস্টারদের কালচারাল স্ট্যান্ডার্ড হজম করতে করতে দুনিয়ারে হোমোজেনাস কইরা তোলে এইসব ডেভলাপমেন্ট প্রজেক্ট। ওয়েলফেয়ারের নামে চলতে থাকে গাছ-মাছ-মাটি-মানুষের উপর বেরহম হামলা।
দুনিয়ায় কালা মানুষ কমাবার গোপন এজেন্ডা চলতে থাকে বার্থ কন্ট্রোলের নামে। যেই আপডেটেড লিবারালিজম মাইয়াদের লিবার্টির নামে ডেভলাপমেন্ট প্রজেক্ট চালায়, সেইটাই আবার বার্থ কন্ট্রোল প্রজেক্টের ভিতর দিয়া মাইয়াদের উপর হামলা করে! ঐ লিবার্টি আসলে এইসব হামলা নিতে রাজি হবার ট্রেনিং! নয়া টেকনোলজির টেস্ট এবং বাতিল সব টেকনোলজি এক্সপোর্ট চলতে থাকে ডেভলাপমেন্ট প্রজেক্টের নামে। মানুষ এবং পরিবেশের উপর হামলা চলতে থাকে। পুরা এই মেকানিজমের আর্কিটেক্ট হিসাবে আজকেও লিবারালিজমকে দেখতে পাই আমরা!
তাইলে মানুষ আর দুনিয়ার মুক্তি আর ভালো থাকার উপায় হিসাবে লিবারালিজম কি আমাদের মনে ভরসা দিতে পারে আর? এই নাম-পরিচয়ের কাউকে কি দুনিয়ার মানুষ বিশ্বাস করে আর?
যুগে যুগে লিবারালিজম নিজেরে আপডেট করছে, কিন্তু এই নামে মানুষের ভরসা এতটাই নাইমা গেছে যে, এইবার আর আপডেট করলে চলবে না! এইবার নামটারেই পাল্টাইয়া ফেলতে হবে! লিবারালিজম এখন যুদ্ধ আর হামলার প্রোপাগান্ডা, হিউম্যান রাইটস্, মাইয়াদের হক, বাচ্চাপিরিতের/লাভ টু চিলড্রেনের প্রোপাগান্ডা এখন হামলার এথিক্যাল গ্রাউন্ড বানাইয়া দেয়। একটা ছবি আমাদের মনে যেই দোলা দিতে পারে, তাতে হামলাকে মনে হইতে পারে জাস্টিস/ইনসাফ/বিচার! ছবি হইলো ভিলেন বানাবার ফন্দি, সিভিলাইজেশনের দুশমন বানাইয়া তারে চিনাইয়া দেয় আমাদের, খুন হইয়া ওঠে তখন আমাদের প্লেজার! পুরা আর্ট হিস্ট্রিকে এই প্রোপাগান্ডার কামে লাগায় লিবারালিজম।
————————————————
হাউ এ সিমিংলি এন্টি-ওয়ার ইমেজ ইজ একচুয়ালি প্রোভোকিং ওয়ার
বাচ্চা জেসাসকে দুধ খাওয়াইতেছে ভার্জিন মেরি, বাট সামবডি কিলড মেরি–কোনভাবে মানা যায়? ক্রুসেড শুরু করা উচিত না?
আসল ছবিটা ঝামেলার, ন্যারেটিভ পোক্ত হইতে পারে না, অনেক বাড়তি জিনিস, ফ্রেমে এলিমেন্টের ভীড়ের কোণায় পইড়া রইছে, সেন্টার হইতে পারে নাই! তাই ম্যাডোনা এন্ড চাইল্ডকে রেফার করতে পারতেছে না যুৎসই!
এই মুশকিলের আসান হইলো ক্রপিং, রেফারেন্সটা কায়দা মতো হইছে। ক্রপিং কি তাইলে ইমেজটাকে ‘ফেক’ বানাইয়া তুললো আসলে!!
ম্যাডোনার খুনের রিভেঞ্জ তাবত খৃস্টানের ফরজ না এখন, রেডি হন, ক্রুসেডে যাইতে হবে।
ন্যারেটিভ খুব জমজমাট রাখতে হবে, হুশিয়ার! ম্যাডোনা মরলে ন্যারেটিভটা জমে; যদি জানা যায়, এই ম্যাডোনা মরে নাই, চাইপা যান, এই ম্যাডোনার মরণই এক্সপেক্টেড। ম্যাডোনা জিন্দা আছেন, এমন খবরকে গুজব বানাইয়া তোলেন, নাইলে ক্রুসেডের জোশে ভাটা লাগবে কিন্তু!
আর্ট এবং তার ইতিহাস এইভাবে কাম করে।
————————————————
এই নাম-পরিচয় আর চিন্তা দুনিয়ারে ভালো রাখতে পারবে না, মানুষের বিশ্বাস আর ভরসা খতম হইয়া গেছে। আর কিছু লাগবে যেইখানে ভরসা পাবে মানুষ। তালাশ করতে হবে আমাদের। এমন কিছু যেইখানে পোলা-মাইয়া-হিজড়া মানুষ, সাদা বা কালো বা বাদামী মানুষ, চিন্তা, ভাষা আর ধর্মে মাছ বা গরু–তাবত এনভায়রনমেন্ট লিবারালিজমের চাইতে ভালো জিন্দেগি পাবে।
ট্রাম্প বিরোধী আমেরিকান মাইয়ারা যেই মুভমেন্ট করলো, তাগো সামনে হিলারি থাকলেও মুভমেন্টের মোদ্দা সুর ঠিক হিলারির মতো যুদ্ধবাজ আর আর্মস ম্যানুফ্যাকচারের গোলাম না; এইটা আশার কথা, কিন্তু যুগে যুগে লিবারালিজম এইগুলারে এক্সপ্লয়েট করছে। হুশিয়ার থাকতে হবে আমাদের; আমেরিকার তুফানের বাড়ি লাগে দূর-দূরান্তে; ঐ মুভমেন্ট আখের পোলাদের বহু বহু মুভমেন্টের মতো ‘মব’ পয়দা করে নাই, এইটাই সবচে বেশি ভরসা জাগাইতে পারে; তারা খৃস্টান বাদে দুনিয়ার আর সব মানুষের ব্যাপারেও বেশ আরাম দেখাইছে।
নর্ডিক/স্ক্যান্ডিনেভিয়ান মডেলে কি দিশা আছে কোন? তারা লিবারালিজমের আওতার বাইরে কতটা যাইতে পারলো? পুরানা সেই এজেন্ডা পুরা করতে এইটা কি আরেকটা নয়া সুরত? মার্ক্সের চিন্তার মডেলের দেশগুলা কি আশা দেখায় আমাদের? তারা কি যুদ্ধ আর হামলার ব্যাপারে নয়া কোন স্টেটমেন্ট দিছে আমাদের? মাইয়াদের? এনভায়রনমেন্টের? ইরানে কি গণতন্ত্রের আর কোন মডেল চলতেছে? ইরানের প্রেসিডেন্ট ক্যান্ডিডেট যেমন একটা সুপ্রিম কাউন্সিলে পারমিশন পাইতে হয় ঠিক সেইটাই কি আর সব গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে ইলেকশন কমিশন করে না? প্লেটোর এলেমের শাসন আর মডার্ন গণতন্ত্রের একটা ব্লেন্ড কি চলতেছে ইরানে?
জানি না আমি। কিন্তু জিগাইতে থাকতে হবে আমাদের, তালাশ করতে হবে সবখানেই, ঘেন্না যতো কমবে, পাবার সম্ভাবনা ততো বাড়বে। আমরা হয়তো ভালোর ভালোটা লইয়া ভালো থাকতে রাজি হবো একদিন…।
মার্চ ২, ২০১৮
রক মনু
Latest posts by রক মনু (see all)
- ‘শোনার বাংলা’র এছথেটিক দলা - নভেম্বর 8, 2024
- হিস্ট্রিওগেরাফি এন্ড পলিটিকেল লয়ালটি - অক্টোবর 18, 2024
- খলিফা হইয়া ওঠা - সেপ্টেম্বর 2, 2024