জায়ান্টদের পালে আরেকজন জায়ান্ট না হবার ফজিলত 🙂
ইতিহাস তো আমার পছন্দ; কিন্তু বাংলা বা বঙ্গের আতেলদের লগে ডায়ালেক্টিক্যালি আমার ইতিহাস বোঝাপড়া বানাইতে চাই না! বা আরেকটু সহিভাবে কওয়া যায়, এই আতেলরা আমজনতার সমাজ বা কালচারে যতটা রিফ্লেক্টেড হইতেছে, ততটাই মাত্র আমার ইন্টারেস্ট! চিন্তার ইতিহাস মোটামুটি আগের যুগের লিগেসি, কিন্তু এই লিগেসি ঘন হইতে পারে, তাই হয় প্রায়ই, আর আমি এইটারে যতটা পারি পাতলা কইরা তুলতে চাই![pullquote][AWD_comments][/pullquote]
ব্যাপারটা ক্লিয়ার করার দরকারে ড. সলিমুল্লাহ খানের ইন্টারভিউ লইয়া দুইটা কথা কই। ইন্টারভিউটা নিছেন কে এম এ রাকিব ( K M A Rakib ) , ছাপা হইছে পরস্পর নামে একটা অনলাইন প্লাটফর্মে, সোহেল হাসান গালিব আছেন মনে হয় পরস্পরের এডিটোরিয়াল প্যানেলে।
ঢাকা-কোলকাতার আতেলদের মাঝে ছোট-বড়-মাঝারি কবি, আতেল, লেখকের একটা আলাপ পপআপ করে প্রায়ই; কবিতা বা আর সব লেখা হয় বা হয় না, পারে বা পারে না – এমন আলাপও চলে ঐটার তালে তালে। এই আলাপের আখেরি মঞ্জিল হইলো, ‘ডুয়র্ফের পালে একজন জায়ান্ট’! তাইলে দেখেন, চিন্তার ব্যাপারটা কেমনে আকার আর জ্যামিতিতে যাইয়া ঠেকলো! এতে বুদ্ধি হইয়া উঠলো হাইটের একচেটিয়া! এগুলা সিম্বলিক বটে, কিন্তু ভাবেন, সমাজে এই আলাপ কেমনে হুমায়ুন সাধুদের (বা একজন নরওয়েজিয়ান জায়ান্টের তুলনায় আমি এক ডুয়র্ফ) উপর হামলা জারি রাখে; এমন হামলা প্রায়ই স্রেফ এটিচ্যুডের, বড় খতিটা সমাজের, এমন সব মানুষের চিন্তা সমাজ লইতে পারে না ঐ প্রিজুডিসের কারণে, সমাজের লসের সম্ভাবনা তাতে! ড. খান এই আলাপটাকে আবার উসকাইলেন তার ইন্টারভিউতে!
আপনে কি এই লিগেসিতে থাকবেন তাইলে? কি কি লাভ, কন আমাদের!
তারপরে চলেন আরো দুয়েকটা জিনিস ভাবি আমরা। বাংলা আতেলরা কম্যুনিটি লইয়া ভাবেন প্রায়ই, কন বা লেখেন, ড. খানের আলাপেও এইটা আছে কিছুটা! কিন্তু কম্যুনিটি কি এবং কয়টা কম্যুনিটি আছে, এইসব ব্যাপারে আমাদের আতেলরা কলোনিয়াল ইতিহাসের ধামাই ধইরা আছেন মনে হয়! কলোনিয়াল প্রেসক্রিপশন মোতাবেক দেখলে মোগল আমলে শিয়া-সূন্নি টেনশন নজর এড়ায়, হিন্দু মানেও তো কোন সিঙ্গুলার কম্যুনিটি নাই, আবার বাঙালি মানে তো নিউইয়র্কে একটা কম্যুনিটিই! কিন্তু কম্যুনিটি লইয়া আলাপের আসল বিপদটা হইলো, হয় আমজনতা এইটা বোঝেই না, বা খুবই পপুলিস্ট অর্থে হিন্দু-মোসলমান ফ্যাসাদের একটা ভার্সন, ফ্যাসাদটা কন্টিনিউ করা, ফয়সালার দিকে যাওয়া হয় না মনে হয় আমার!
কম্যুনিটির ঐ ভাবনা আর কলোনিয়াল লিগেসির সবচে কড়া ছাপটা পড়ে ভাষায়; কোন বাংলায় আলাপ করবেন আপনে, সেইটা ঠিক করবেন কেমনে? কলোনিয়াল কোলকাতায় কম্যুনাল এবং রেসিয়াল এজেন্ডা থিকা আজব একটা বাংলা পয়দা করছিল পণ্ডিত-মুন্সিরা, আমজনতার বাংলারে যেই বাংলায় ধরা হইছে ভালগার বা বিদেশি! আসল বাংলা আসলে যেন সংস্কৃত, সংস্কৃত না জাইনা বাংলা জানতে পারেন না আপনে! পরে আরেক দল ঐ ঘটনার কম্যুনাল জবাব দিছেন, সংস্কৃতরে ফার্সি পিছায় খেদাইয়া! সেই ফ্যাসাদের আখেরি ফল এখন ফলতেছে, আরো সহি হইতে চাইয়া এখন ফার্সি খেদাইয়া দিতে চাইতেছে আরবীঅলারা!
এইটারে আমি কইতেছি কলোনিয়াল লিগেসি; এইটা এতোই পোক্ত যে, ঐ দুই-তিন দল তো যায়ই নাই, এমনকি মার্ক্সের তরিকার লোকেরাও বাংলার কম্যুনাল-রেসিয়াল বোঝাবুঝি উতরাইয়া আমজনতার কাছে যাইতে পারে নাই! বাংলা যে বাংলাই, সংস্কৃত বা ফার্সি বা ইংরাজি না জাইনাই তো আপনের বাংলা পারার কথা! ঐ কম্যুনাল-রেসিয়াল এজেন্ডার দখলে আপনের মন গেলে আপনে হয় সংস্কৃতরে ভাববেন দুশমন, বা ফার্সিরে বা ইংরাজিরে, ঘেন্নার চাষ হইতে থাকবে মনে! অথচ আপনে যদি আমজনতার বাংলা লন, গণতান্ত্রিক হন, দেখবেন, মানুষ আর আদম, পিছার লগে সাফ, নদী-আসমান-আকাশ-মেঘ-বিষ্টি-সাগর-মাছ-দরিয়া-তুফান-টেবিল-লেবার-আনারস-কুলা-হুদাই-ডিজিটাল-ঘাড়ত্যাড়া… এমন কত কত সোর্সের কত কত শব্দেরা বাংলার কানুনে নিজেদের সুরত বদলাইয়া পাশাপাশি শুইয়া আছে!
সো, আপনে যদি ঐ লিগেসিতে থাকেন, আমজনতার কাছে যাইতেই পারবেন না, আপনের গণতন্ত্রের খায়েশ স্রেফ নিজেরে ভুলাবার মায়া হইয়াই থাকবে!
ঐ লিগেসি আপনারে আরো একটা প্রিজুডিসের দিকে লইয়া যায় প্রায়ই, হামবড়া হইয়া উঠতে পারেন আপনে! এমন হামবড়া ভাবের আসল লসটা হইলো, সমাজের ভিতর থিকা কোন এলেম লইতেই পারবেন না আপনে! কইতেছি, বই পড়ার প্রিজুডিসের কথা।
কে কয়টা বই পড়লো সেই হিসাব করার ফাকে খেয়াল করেন, বইয়ের একটা প্লুরালাইজেশন ঘইটা গেছে উপরে উপরে, আপনে খুব তলে (গভীরে) আছেন বইলা মালুম করতে পারেন নাই! বাংলায় সিনেমারেও কয় বই; যেই লোক খালি ডকুমেন্টারি বানায় তারে কি আপনে লেখক কইবেন না? সে কি এলেমদার, নাকি না? যে কেবল ফিকশন বা ডকু সিনেমা দেখে, তার ঐ দেখাই কি পড়া না? যারা গুরুবাদী এলেমের ব্যাপারে, তার গুরুর লগে ডিবেট করাটা কেন পড়া না? ইউটিউবে লাকা লইয়া জিজেকের লেকচার কি জিজেক পড়া কইবেন, নাকি না? ইবনে রুশদ লইয়া একটা লেকচার? সলিম খানের ওয়াজ, ফানোর উপর? ঢাকার চায়ের দোকানের আড্ডা কি বাংলাদেশ লইয়া একটা বই পড়া হইতে পারে না?
বই এবং পড়ার এই যে প্লুরালাইজেশন, এইটা আপনে বুঝবেন না একদমই, যদি কোটেশনের প্রিজুডিসের ভিতর থাকেন! ১৮৪০-৫০’র সময়ের কলিকাতায় শেক্সপিয়ারের কোটেশন আছিল এলেমের মিটারিং সিস্টেম, তারো আগে থিকাই হাফেজি পড়া তো আছিলোই, বা শ্লোক মুখস্ত করা। এগুলা দরকারি, ইবাদতে কামে লাগে; একজন গায়কের মনে রাখা দরকার গানের কথা, যাত্রার পাটেও কামে লাগে। কিন্তু ভাবের আলাপে ভাবটাই আসল, এবং ভাবের লগে পরিচয় আপনের হইতে পারে সমাজে, শালিস বৈঠকে, রাস্তায়, আড্ডায়, গুরুর কাছে, ইউটিউবে, ওয়াজে, সিনেমায় বা বইতে, গানে–কত ভাবেই তো!
বাংলার আতলামীর ইতিহাসের এইসব খাসলতের কারণে আমি ঐ ইতিহাসের লিগেসি নিজের ভিতর যতটা পারি পাতলা রাখতে চাই। এলাহী ভরসা।
৭জুন ২০১৮
রক মনু
Latest posts by রক মনু (see all)
- ‘শোনার বাংলা’র এছথেটিক দলা - নভেম্বর 8, 2024
- হিস্ট্রিওগেরাফি এন্ড পলিটিকেল লয়ালটি - অক্টোবর 18, 2024
- খলিফা হইয়া ওঠা - সেপ্টেম্বর 2, 2024