Main menu

এডিটোরিয়াল: উত্তম, শত্যজিৎ, শোমিত্র

১.
এই ছিনামায় অমিতাভ হইলেন ইনডিয়ান, ভারতনগর নামে মুম্বাইর ১টা বস্তির লিডার; এই বস্তির ৪টা ছেকশন–বাংগালি, মাদ্রাজি, পান্জাবি আর মোছলমান ! বস্তির বাংগালি ছেকশনের হেড হইলো উত্তম; এই ৪টা ছেকশনের (হেড) ডনেরা ঝগড়া ফেছাদ করে, তারা বাংগালি বা মোছলমান হইয়াই থাকতে থাকে, ইনডিয়ান হইতেছিল না ঠিক! ইনডিয়ান অমিতাভ তখন ওনাদের মোটিভেট কইরা ইনডিয়ান বানাইয়া তোলেন।

তো, এই ছিনামায় পাটের গুরুত্ত হিশাবে অমিতাভের থিকা জতোটা নিচে উত্তম, নিজেরে উত্তম তাই ভাবতেন অমিতাভের তুলনায়, তাই তো রাজি হইলেন অমন একটা ইস্ক্রিপ্টে; অমিতাভের তুলনায় নিজেরে এমন ভাবার কোন নজির কি তামিল রজনিকান্তের দেখছেন কেউ?

এই উত্তমের চাইতেও নাকি ছোট একজন এক্টর আছিলেন শৌমিত্র; শেই শৌমিত্র ঢাকায় আইলে তার ভাপে মাখনের মতো গইলা জান নুর-জাকের-রামেন্দু-ফেরদৌসিরা! এই এরাই জাগো নায়ক, তারা তাইলে কোন ছাইজের ?

 


২.
‘হিরক রাজার দেশে’, এই ছিনামা শত্যজিৎ বানাইতেছেন ১৯৮০ শালের ইনডিয়া নামের একটা মর্ডান রাশ্টে। মর্ডান রাশ্টের কিছু কি বুঝতেন শত্যজিৎ?

ছিনামার রাজা তার পোরজাদের শিক্ষা ঠেকাইতে চায়, নো ইশকুল। এমন রাজার একটা রাশ্টো মেটাফর হিশাবে মর্ডান রাশ্টের কিছু কি ধরতে পারে?

এই ছিনামায় শত্যজিৎ রাজার জেই মগজ ধোলাইখানা দেখাইতেছেন, ইশকুল জেইটার কাউন্টার, মর্ডান রাশ্টে ইশকুলই শেই জন্তর-মন্তর ঘর, ইশকুল দিয়াই মর্ডান রাশ্টো মগজ ধোলাই কইরা থাকে।

এগুলা বুঝতে অনেক অনেক থিয়োরি গিলতে হয় না আর্টিশের, দুনিয়ার দিকে একটু নজর দিলেই হয়; ১৯৮০ শালের ইনডিয়াতেও গনশিক্ষার বেপারে শরকারের নজর আছিল, বাচ্চাদের ইশকুলে নেবার জন্য ভর্তুকি দিতো রাশ্টো; এবং এইটা কেবল ১৯৪৭ শালের পরে শুরু হয় নাই, রাজা/রানির আমল থিকাই শুরু হইছে, শেই ইংরাজ আমলেই!

এই ইশকুলের ফলও রাজা পাইছে নগদ নগদ; ইশকুলে পড়ুয়ারাই ১৮৫৭ শালের ছিপাই-হুল ঠেকাইয়া দিছে অনেকখানি, তারা কেউ হুলে জয়েন করে নাই, ইংরাজকে জারা খেদাইতে চাইছে, তাগো ডাকাইত-বদমাশ হিশাবে খোদাই করছে নিজেদের খবরের কাগজে!

এখনকার ইনডিয়াতেও দেখেন, বিজেপি-শিবশেনার শবচে রেডিকেল হিন্দুরা শবাই শিক্ষিত, ইশকুলে পয়দা/ধোলাই হওয়া মগজ! ইশকুলের কারিকুলাম দিয়াই দরকারি ধোলাইয়ের কামটা করে বিজেপি। বিজেপি তো খারাপ, কিন্তু মর্ডান রাশ্টের তরিকাই অমন, ইনডিয়ার চাইতে ভালো রাশ্টোগুলা ছেরেফ ভালোর দিকে মগজ ধোলাই করে, ইশকুলের ভিতর দিয়াই!

শোমিত্র, উত্তম কুমার ও শত্যজিৎ। ছবি: গুগুল সার্চ থিকা নেয়া।

 

ছো, শত্যজিৎ-শৌমিত্রের হিরক রাজার দেশের ভিতর দিয়া তখনকার বা এখনকার কোন দেশ-শমাজই খুব ভুল বোঝা হয়, রিভল্ট ধইরা লইয়া আপনে ইশকুলে জাইয়া মগজ ধোলাই হইয়া বাইরাইয়া আশেন! আপনের বাচ্চারা এখন দেশে কেমন কারিকুলামে কোন পোপাগান্ডা মুখস্ত করতেছে, দেইখেন পিলিজ।

 

৩.
জিন্দেগিতে জাগো একটা ফুশলানি বা ইন্সপিরেশন লাগে, তাগো ছাইজ পেরায়ই তাগো খাম্বা মোতাবেক। শেই কারনেই ‘টাওয়ারিং ফিগার’, ‘বামনের দেশে জায়ান্ট’ ইত্যাদি টার্ম হাজির হয় মাঝে মাঝে, কোন একটা ছেক্টরের মোড়ল টাইপের কেউ মরলে এইগুলা হাজির হয় বেশি বেশি!

কলিকাতা আর ঢাকার আট-কালচারের মহাজনদের মগজে এখনো ঐ টাওয়ারিং ফিগার হইলেন রঠা। এক মাইয়া আর্কিটেক্টের বরাতে মনে হইলো, বেপারগুলা খুব পোলা পোলা বইলা টাওয়ারে এতো ফেছিনেশন, নাইলে লেক বা দরিয়াও তো হইতে পারতো!

তা ঘটনা জেইটাই হৌক, শত্যজিৎ, শৌমিত্র বা উত্তমদের টাওয়ারিং ফিগার হইলেন রঠা এবং এই রঠার কাছে বাংলার চাইতে ইনডিয়া বড়ো, বাংলা হইলো তার অন্দরমহর, দুনিয়ার নাম ইনডিয়া, রঠার বানানো এক পোলার টার্মে কইতে পারেন, ঘড়ায় তোলা পানি আর দরিয়া/শাগর।

আজকের কলিকাতা বা ঢাকার কাছে রঠা তো বটেই, শত্যজিৎ বা শৌমিত্ররাও খাম্বা একেকজন; উত্তম নামের খাম্বা ভাই ইনডিয়ার আত্মা বলিউডকে কুর্নিশ করতেন, মইরা না গেলে হয়তো অনন্ত জলিলের কাছে দুইদিন থাইকা একটু দেমাগের ছবক লইতে পারতেন!

কিন্তু রঠা বা শত্যজিৎ তো কলোনিয়াল আমলের লোক, বিলাত/ইউরোপকে কুর্নিশ করাটাই তখন কমন, ইনডিয়া নামের দরিয়া তখনো ইংরাজ দাপাইয়া বেড়াইতেছে! তবু কলিকাতা থিকা ইনডিয়ার কেপিটাল দিল্লি জাওয়া বা হিন্দিই জে ইনডিয়ার ১ নাম্বার ভাশা হবে, এইগুলা ওনারা খুবই নেচারাল ভাবছেন।

তো, শত্যজিতের খাম্বা আছিলেন রঠা এবং রঠার নোবেলের লগে শত্যজিতের অশ্কারের একটা মিলও আছে! ‘ছং অফারিংস’ দিয়া রঠা দেখাইয়া দিলেন ইউরোপকে জে, ইনডিয়া মনোথেইজমের ছবক লইতে পারে, চার্চে গাওয়ার মতো গান লিখতে পারতেছে ইনডিয়া! ঐ ছবকটা কেন আগে থিকাই হাজির ইছলামের থিকা না লইয়া কেন খিরিস্টানদের থিকা লইতে হইলো, শেইটা একটা রহশ্য অবশ্য! কিন্তু পলিথেইজম থিকা মনোথেইজমের দিকে জাবার এনাম দিলো ইউরোপ, রঠার নোবেল হইলো শেই এনাম!

আর শত্যজিৎ কি দেখাইলেন? ইনডিয়া আরবান হইয়া উঠতে পারতেছে, ইভলুশন ঘটতেছে, কেপিটালিজম ডেভলাপ করতে পারতেছে; শাবেক ইনডিয়া আর টিকতে পারতেছে না, নেচারাল ছিলেকশনের মেটাফর হিশাবে মরলো দুর্গা, অপুর বাপ-মা আরবান হইলো, বামুন কেপিটালের ছিস্টেমে আরবান হইতে জাইতেছে, ধর্মরে একটা পোডাক্ট হিশাবে বেচা জায় শহরে, পুরানা জজমানিতে আর পোশায় না, নেচারাল ছিলেকশনে বাতিল হইয়া গেছে।

ইনডিয়ার ঘুনে ধরা, ছার্কুলার, মজবুত খুটায় বান্ধা শমাজের কুয়া থিকা দরিয়ার দিকে জাবার রাস্তায় চলতেছে অপুদের গরুর গাড়ি, চলতেছে পোগতির রাস্তায়… এমন একটা দেশকে তো একটা অশ্কার দেওয়াই উচিত!

নোবেল আর অশ্কার, জতো না রঠা বা শত্যজিৎ পাইছে, তারচে বেশি ইনডিয়ারে দিছে! ইনডিয়ারে স্নেহ করে তারা, ইনডিয়া স্নেহ চায়; অমন আকুল নয়নে ইউরোপের স্নেহ চাওয়া লোকেরাই হইলেন টাওয়ারিং ফিগার, এখনো ঢাকা-কলিকাতায়! আগে এনারা অমিতাভকে কুর্নিশ করা উত্তম কুমার বানাইছে, এখন বানাইতেছে কলিকাতা আর দিল্লির তাবেদার, আট-কালচারে তো বটেই, পলিটিকেল এরেনা তো আট-কালচারের গায়ে গা লাগাইয়াই থাকে! বর্ডারে তাই ইনডিয়া জখন খুন করে, খুন হওয়া শেই বাংলাদেশিরা তখন ছেরেফ বদমাইশ, খুনই তো করার কথা এবং এইটা ইনডিয়ার দাবিও করতে হয় না, রঠা-শত্যজিৎ-উত্তমের কাছে কুর্নিশের তালিম লওয়া বাংলাদেশি ছায়ানটি নেশনালিস্টরাই শিকার কইরা মাফ চাইতে থাকে দিল্লির দরবারে।

 

 

The following two tabs change content below.
Avatar photo

রক মনু

কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →