ইমরুল হাসানের কবিতা
।। ইশতেহার ।। গরিব কবিতা ।। কবি ।। বাবুই পাখির জন্য এলিজি ।। পুলিশ ভ্যান ।। লাইকের সমস্যা ।। জিয়ল মাছ ।। একটা মিছা কথার মতন ।। জহির রায়হান ।। ঘোড়ার ডিম ।। ছবির মতো সুন্দর ।। সকাল ।। কবিতা ও ববিতা ।।
……………..
ইশতেহার
ভয় পাবেন।
চুপ থাকবেন।
চিল্লানোটারে প্রতিবাদ করা মনে করবেন না।
চিন্তা করবেন।
চিন্তা করাটারে কাজ করার অল্টারনেটিভ ভাববেন না।
যা কিছু নাই, সেইসব জিনিস থাকতে পারে বইলা
যা কিছু আছে, তারা নাই হয়া যায় না।
যা কিছু আছে, তারা আমাদের কোন না কোন
না-থাকাই।
হাসবেন, হাসতে পারাটা ভালো।
কানবেন, কানতে পারাটা আরো ভালো।
তারপরে চুপ থাকবেন।
কথা বলবেন।
আপনার ইচ্ছাটাই আপনি না।
আপনার ইচ্ছার খরগোশটারে আদর করবেন।
রাগ উঠলে চিল্লাইবেন।
তারপরে পাঁজরের বাঁকা হাড়টার মতন, বাঁইকা থাকবেন।
চুপ থাকবেন।
বাজে ড্রাগস নিয়েন না।
মদ খাইবেন, তবে ভালোটা।
কবিতা লিখতে ইচ্ছা হইলে, লিখবেন।
কবিতা লেখাটারে প্রতিবাদ করা মনে কইরেন না।
কবিতাটা যেন থাকলো, এইরকম ভাববেন না।
হারায়া যাওয়া সব কবিতাই গ্রেট না।
মারা যাওয়া সব কবিই যেমন অমর না।
ডরাইবেন।
ডরাইতে থাকবেন।
চুপ থাকবেন।
তারপরে কথা বলবেন।
মিহি সরিষার দানার মতো পিছলায়া যাবেন।
সিস্টেমে ঢুইকা সিস্টেমরে বদলায়া দিবেন,
এইরকম একটা ভাব-এ থাকতে থাকতে
সিস্টেমের বেনিফিটগুলা নিবেন।
তারপরে বলবেন, সিস্টেমরে আমি চুদি না!
যেমন প্রতিবাদী হন, এইরকম উদাস হইবেন।
নিয়মিত বিরতিতে, তবে সবসময় না।
সময়রে যাইতে দিবেন।
সময়রে তো আপনি ধইরা রাখতে পারবেন না।
কাশি আসলে কাশি দিবেন।
হাই তুলবেন।
ঘুমাইবেন।
স্বপ্ন দেখবেন।
স্বপ্ন দেখবেন, কবিতা লিখতেছেন।
কিন্তু টের পাইবেন, কিছুই হইতেছে না।
কেউ আপনার কথা শুনতেছে না।
কেউ আপনার কথা শুনতেছে বইলাই কথা বইলেন না।
চুপ থাকবেন।
ডরাইবেন।
ডরটা হইতেছে কোর; কারে ডরাইবেন – ভাববেন।
ভাবতে পারাটা একটা কাজ, কিন্তু কাজ করার অল্টারনেটিভ না।
ঘুইরা বেড়াইবেন।
পড়াশোনা করবেন।
চাকরি করবেন।
অফিস থিকা ফিইরা সন্ধ্যাবেলা একলা লেখার টেবিলে বসবেন।
লেখা না আসলে, বইসা থাকবেন।
সময়রে যাইতে দিবেন।
সময়রে তো আপনি ধইরা রাখতে পারবেন না।
কোন কিছু ভাল্লাগতেছে না বইলা প্রেম করা শুরু কইরা দিয়েন না।
প্রেম ছাড়াও কবিতা লেখা পসিবল।
বাঁইচা থাকা পসিবল।
যদি প্রেম চইলাই আসে, তারে ফিরায়া দিয়েন না।
আপনার প্রেমিক বা প্রেমিকারে নিয়া বেশি কবিতা লিখবেন না।
প্রেম নিয়া কবিতা লিখতে পারাটাই প্রেম না।
বাঁইচা থাকাটা লাইফ না-ও হইতে পারে অনেক সময়,
তবে মইরা যাওয়াটাই লাইফ না।
যে আপনারে মাইরা ফেলতে পারে, সে-ই আপনারে বাঁচাইতে পারে না, সবসময়।
৫৭ ধারা বইলা একটা আইন আছে বইলা কথা বলা নিষিদ্ধ না।
কথা বলবেন।
একটা ৫৭ ধারা আছে বইলাই আপনারে কথা বলা লাগবে – এইটা জরুরি না।
আমার বলা কথাগুলাই আমি না।
আমি বইলা যে কন্সট্রাকশনটা করতেছেন, তারে ডরাইবেন।
ভয় পাইবেন।
চুপ থাকবেন।
তারপরে আবার কথা বলবেন।
মনে রাখবেন, আপনার যদি বলার মতন কিছু থাকে,
সেইটা অন্য কেউই বলতে পারবে না।
লাইফরে আর্টের ইকো বানাইয়েন না।
আর্টরে ভাইবেন না যে, এইটারে হইতে হবে জীবনের আয়না।
আপনি একটা আপনি না হওয়ার জন্য তড়পাইয়েন না।
আপনি নিজে একটা আপনি হয়া উইঠেন না।
আপনার কথা বলাটাই আপনারে বাঁচায়া রাখবে না।
আপনার কথা বলাটাই আপনারে মাইরা ফেলবে না।
যদি মাইরাই ফেলে, বুঝবেন, এটলিস্ট একটা কথা কইতে পারছেন আপনি।
একটা কথা বলার লাইগা অনেক অনেক কথা গিইলা ফেলতে হবে আপনারে।
অনেক অনেক কথা বলার পরে টের পাইবেন,
কিছু একটা বলতে চাইতেছিলাম আমি আপনারে।
হয়তো বলতে পারছি, (তবে আমার মনেহয় আমি) হয়তো পারি নাই।
গরিব কবিতা
গরিবের কোন ধর্ম নাই। গরিবের নাস্তিকতা নাই। গরিবের টাকা নাই। গরিবের ক্ষমতা নাই। গরিবেরা মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান না। (মানে, এতোটা গরিব হইলে তারে কি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বলা ঠিক হবে? প্রেস্টিজ থাকবে মুক্তিযুদ্ধের, এই ৫০ বছর পরে? মুক্তিযুদ্ধ-মুক্তিযুদ্ধ করা সরকারের?)
গরিবেরা খুব দুখী। গরিবেরা রাস্তায় টাকা পাইলে থানায় নিয়া ফেরত দেয়। রাস্তায় দামি মোবাইল ফোন পাইলে ফোন কইরা মালিকরে ফেরত দেয়। গরিবেরা খুব ভালো। মালিকানা বুঝে, মালিকদের রেসপেক্ট করে।
খারাপ গরিবও আছে। অরা কাজ করতে চায় না। বড়লোকদের ঘৃণা করে। ফাঁকিবাজ আসলে। রোজা রাখার নাম কইরা কাজ করতে চায় না। বেতন না দিলে মিছিল করে। অদের ছেলেমেয়েরাই মনেহয় মাদরাসায় পড়ে। কারণ অরাও মিছিল করে। আমাদের নরমাল লাইফে ডিস্টার্ব করে। এইগুলি করে বইলা, আইন-শৃঙ্খলা মানে না বইলা পুলিশ অদেরকে গুলি করে। এমনিতেও দুই-চাইরজন গরিব মরলে কিছু হয় না। অরা তো গরিব। এই কারণে কান্দে। (আসলে দান-খয়রাত চায় কিছু, বুঝছো!)
অরা গরিব। অরা হাসতে জানে না। অরা ইআরকি পড়ে না। ফেসবুকে ঢুইকা বাঁশেরকেল্লা পড়ে, হিরো আলমের ভিউ বাড়ায়, রিপন ভিডিও’রে লাইক করে। অদেরকে ফেসবুক থিকা বাইর কইরা দেয়া উচিত। খাইতে পায় না ঠিকমতো, কিন্তু ফেসবুক ঠিকই চালায়! অরা বড়লোকের মেয়েদের দিকে কেমনে জানি তাকায়া থাকে। অরা একেকটা পটেনশিয়াল রেপিস্ট। সাইকোপ্যাথও হইতে পারে। আমরা তো আর গরিব না, এই কারণে অদের সবকিছু জানি না, তবে বুঝা তো যায় কিছু, তাই না?
অ্যাই, তুমি গরিব না তো, আবার? গরিব হবা না কিন্তু। তবে গরিবের পক্ষে মাঝে মধ্যে কথা বলবা! বিপ্লব, শ্রমিক, এইগুলা বুঝাবা। লুঙ্গি পরা আমাদের ঐতিহ্য, গরিব হওয়া দোষের কিছু না, এইগুলা বলবা। অরা তো বুঝে না। বুঝলে কি আর গরিব থাকতো অরা! যদি বুঝতো তাইলে তো বিপ্লবই করতো। আর যদি কাজ করতো তাইলেও তো বড়লোকই হয়া যাইতো! এইগুলা কি মিথ্যা-কথা, বলো?
গরিবের মতো চুপ কইরা থাকবা না। সবসময় ‘জ্বী, জ্বী…’ বলবা। ঠিকাছে!
যাও, বড়লোকদের মতো কাজ করো। তা নাইলে বইসা বইসা বিপ্লবের প্ল্যান করো। গরিব হয়া থাইকো না। পুলিশ আইসা গুলি কইরা দিবে। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বললেও কোন কাজে দিবে না।
গরিবরে নিয়া কবিতা লেখবা, সিনেমা বানাবা, কিন্তু গরিব হয়া থাকবা না! যতো পাপ-ই করো, গরিব হওয়ার মতো পাপ কইরো না। ধর্ম তোমারে নিবে না, নাস্তিকতাও নিবে না। হোটেলে বইসা রুটি খাওয়ার সময় পুলিশ আইসা গুলি কইরা দিবে তোমার বুকে। তুমি জিগাইতেও পারবা না কিছু। কিছু বুঝতে পারার আগেই মারা যাবা।
গরিবের ঘোড়ারোগ ভালো না। ঘোড়ার ডিমটাও তো পারবা না। এই কারণে সবসময় ‘জ্বী, জ্বী…’ বলবা। না পারলে চুপ কইরা থাকবা। গরিবের কথা শুনতে কারো ভাল্লাগে না। গরিব আছো, গরিবের মতোই থাকবা। আর এতো ‘গরিব, গরিব’ও করবা না। তোমরাও তো মানুশ! মানে, তোমরা যাতে নিজেদের মানুশ ভাবতে পারো, সেই চেষ্টা করতেছি আমরা। তোমরাও একটু চেষ্টা কইরো। গরিব বইলা সেইটাও তো করতে পারো না! এই কারণে, তোমাদের কবিতাটাও আমি লিখে দিতেছি। তাই বইলা আমি কিন্তু গরিব না। মনে রাখবা!
কবি
কোট-পরা এক পেঙ্গুইন কইলো,
“আরে, আমি তো ফান করতেছি!”
ফান’টা শেষ হয়া যাওয়ার পরে
সে আর তার কোট’টা খুলতে পারতেছিল না।
বাবুই পাখির জন্য এলিজি
বাবুই পাখিগুলারে কে মারলো?
বাবুই পাখিগুলারে কেন মারলো?
মানুশ’রা কি সব সাইকো হয়া যাইতেছে?
মানুশ না মাইরা মানুশগুলা বাবুই পাখি কেন মারতেছে?
বাবুই পাখির সংখ্যা তো দিন দিন কমে যাইতেছে
মানুশ তো এমনিতেই বেশি দেশে,
দশ-বিশ লাখ মানুশ তো মরা দরকার
মানুশ হইতেছে দুনিয়ার ভাইরাস
বাবুই পাখি তো বাসা বান্ধে
ধানের খেতের পোকা-মাকড় খায়
পরিবেশ বাঁচায়া রাখে
গরিব-অশিক্ষিত মানুশেরা বাবুই পাখি কেন মারে?
সরকার এদেরকে গ্রেফতার করে না কেন?
গুলি কইরা মারে না কেন?
দুই-চাইরটারে মারলেই
বাবুই পাখিগুলারে বাঁচায়া ফেলতে পারতাম আমরা
আচ্ছা, বাবুই পাখিরা কি খালি বাসা-ই বান্ধে,
তৃণলতা মুখে নিয়া খালি উড়ে উড়ে যায়…
নাকি গানও গায়?
আসো, বাবুই পাখিদের জন্য
সেইফ একটা দুনিয়া বানাই আমরা,
মানুশ কিছু করোনায় মইরা সাফ হইলেই
আমরা এইটা করবো
বাবুই পাখি, আমরা সরি!
মানুশ হিসাবে আমাদের অপরাধ তোমরা মাফ কইরা দাও!
কিছু মানুশ গুলি কইরা মারা হইছে
আরো কিছু মানুশ করোনায় মরবে
এরপরে, সবকিছু যখন কাম অ্যান্ড কোয়াইট হবে
একটা বাবুই পাখির অভয়ারণ্য বানানোর প্রস্তাবও
সংসদে তোলার জন্য নিউজ করবো আমরা
একটা ফটো মিউজিয়াম বানাবো আমরা, সুন্দর সুন্দর ফটো দিয়া
একটা বই ছাপাবো আমরা বাবুই পাখির বাসার ম্যাটেরিয়াল দিয়া, বাই-লিঙ্গুয়াল
মানুশ দেখবে, আমরা আসলে এতোটা অ-মানবিক না
যারা বাবুই পাখিদের বাসা পুড়ায়া দিছে, খুন করছে
তাদের বিচার বাংলার মাটিতেই হবে
এই যে কবিতা লেইখা গর্ভমেন্টের কাছে
বিচার দিতেছি এখন, তারপরে পত্রিকায় ছাপা হইলে
বিরাট হই-চই হবে, বিদেশিরাও কথা বলবে
একটা সোশ্যাল মুভমেন্ট শুরু হয়া যাবে…
বাবুই-পাখি, তোমাদের হত্যার প্রতিশোধ আমরা নিবো
গরিব-অশিক্ষিত, ছোটলোক, এনভায়রনমেন্ট বুঝে না – এইরকম
মানুশদেরকে মাইরা ফেলা হোক, আমরা কোন কথা বলবো না
তোমাদের মৃত্যু’তে এই শোক পালন করবো আমরা
(কারণ, তোমরা তো মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি এবং সেক্যুলারও, রাইট?)
আর আমাদের দাবি, একটা আইসিও বানানোর টাকা দিয়া
সংসদ ভবনের চিপায় চাপায়
কয়টা বাবুই পাখির বাসা বানায়া দেয়া হোক!
আজকের দিন’টাকে “বাবুই পাখি দিবস” ঘোষণা করা হোক!
মানুশ খুন করা যাবে,
কিন্তু বাবুই পাখিদেরকে কেন খুন করা হবে?
এর বিচার আজ বাংলার মাটিতেই হোক!
এপ্রিল ১০, ২০১২
পুলিশ ভ্যান
একটা সকাল, সকাল হওয়ার পরে,
চেকপোস্টের পুলিশ ভ্যান তারে জিগাইতেছে
“অ্যাই, তুমি যে সকাল হইছো, পারমিশন নিছো?
তোমার কি মুভমেন্ট পাস আছে?”
লাইকের সমস্যা
একটা লাইক
কম পাইলাম বইলা
আমার কথা’টা
সত্যি হইতে পারলো না।
বুড়া আঙুলে ব্যান্ডেজ বাঁধা
লাইক’টা কইলো,
আপনার কথা ঠিকাছে,
কিন্তু আপনি তো
মানুশ ভালো না!
জিয়ল মাছ
একটা মরণ হইতেছে একটা নিরবতা,
যারা আর কোনদিন কথা বইলা উঠবে না,
আর এই কারণে নিরবতারে আমরা ডরাই
আমরা চিল্লায়া উঠতে চাই,
কিন্তু যেই কথা আমরা বলতে চাই
সেই কথা আমরা বলতে পারি না
আমরা নিরবতার কথাগুলা বলতে চাই
আমরা আমাদের বাঁইচা থাকার কথাগুলা বলতে চাই
‘কুকুর হইতে সাবধান’ সাইনবোর্ড অরা
ঝুলায়া রাখে মোড়ে মোড়ে
মোবাইলে স্পাই-ওয়্যার, সিসি ক্যামেরা আর
টিভি-খবরের চ্যানেলগুলা দেখায়া
বলে, সাবধান! দেখতেছি কিন্তু আমরা!
আমরা মাথা নিচু কইরা রাস্তায় হাঁইটা যাই
রইদগুলা শরম পায় আমাদের দেইখা
আমরা আমাদের নিরবতার কথাগুলা বলতে পারি না
আমরা আমাদের ভিতরে মারা যাই,
খুন করে ফেলি নিজেদের কথাগুলিরে
তা নাইলে তো মামলা দিয়া দিবে,
রিমান্ডে নিয়া পিটাবে পুলিশ
জেলখানায় মাইরা ফেলার পরে বলবে,
হার্ট-অ্যাটাক!
আর আমরা মরতে চাই না,
আর মরণ’টা আমাদের দিকে তাকায়া হাসে,
বলে, বাঁইচা থাকো দুধ-ভাত, বাঁইচা থাকো হাসি-খুশি প্রেম
বাঁইচা থাকো ডেইলি লাইফ, নদীর পানি থিকা
উঠায়া নিয়া আসা, কাঁচা-বাজারের ডেকচিতে
পইড়া থাকা একটা জিয়ল মাছ!
একটা মিছা কথার মতন
মিছা কথা বলতে পারাটারে অরা ভাবে, কবিতা
মিছা কথা বলতে পারাটারে অরা বলে, প্রেম
আর হাসে, কয়, ঘুইরা-ফিরা এক সত্যি কথা ছাড়া কি আছে তোমার!
ইনায়া-বিনায়া, ঘুরায়া-ফিরায়া বলতে থাকো তুমি
একই কথা, একই তো কথা, বারবার…
তোমার এই সত্যি আমাদের মিছা কথাগুলার মতো
এতো কালারফুল তো না!
ভ্যারিয়েশন নাই কোন, নাই কোন একসাইটমেন্ট, বোরিং!
বইলা অরা মুখ ফিরায়া রাখে,
সূর্য ডুইবা যাওয়ার পরে সূর্যমুখী ফুলের মতন
একটা মনোটোনাস মন-খারাপ যেন মাইলের পরে মাইল…
বলতে থাকে,
একটা মিছা কথার মতন কেন তুমি সত্যি হইতে পারো না!
জহির রায়হান
“সামনের ফাল্গুনে আমরা কিন্তু আরেকটু কম ভয় পাবো”
ঘোড়ার ডিম (মিডিয়া-রিয়ালিটি)
টিভি’তে, একটা ঘোড়া
টগবগ টগবগ কইরা দৌড়াইতেছে
আমরা দেখতে দেখতে ভাবতেছি,
ঘোড়া’টা যদি না থামে, ডিম’টা কি
পাড়তে পারবো আমরা?
ছবি’র মতো সুন্দর
একটা সারস-পাখি
তার লম্বা ঠোঁটে একটা মাছ নিয়া
দাঁড়ায়া আছে, একটু পানির উপরে
মাছ’টা বলতেছে, আমি আর কতোদিন
জ্যান্ত-ভাব নিয়া থাকবো?
মরতে পারবো না কোনদিন?
সারস’টা বলতেছে, আমি কি
উইড়া যাইতে পারবো না আর?
আটকা পইড়া থাকবো সবসময়
এইরকম লাইন, ড্রয়িংয়েই?
হাশেম খান কইলেন, আরে,
আমি কি করবো! এইটা তো ছবি-ই
একটা! তোমরা এইরকম কেন করতেছো!
সারস, মাছ আর হাশেম খান
তিনজনই মন-খারাপ কইরা বইসা থাকেন
আমার বই তৃতীয় ভাগ বইয়ের
ছবিটার ভিতর,
তখন
সকাল
সুন্দর একটা সকাল, শেষ বসন্তের।
রাস্তায় কুত্তাগুলা ঝিমাইতে ঝিমাইতে ঘুমায়া পড়তেছে,
কবরস্থানের গাছগুলাতে বইসা পাখিগুলা কথা বলতেছে,
বাচ্চাগুলা খেলতে খেলতে ঘর থিকা বাইর হয়া আসতেছে,
সামনের একটা প্লটে, কন্সট্রাকশনের কাঠ ও লোহা পিটাইতেছে লেবার’রা,
রইদ আইসা দাঁড়াইতেছে বারান্দার টবের কাছে,
বাতাস বলতেছে, হেই সকাল হইছে!
আমাদের রাতের ঘুম কাটতেছে না,
আমাদের সকাল কোনদিনও হবে – আমরা ভাবতে পারতেছি না
সারাক্ষণ তাহাজ্জুদের নামাজের সময়ের অন্ধকারের
একটা ডরের ভিতর আমরা থাকি,
আমাদের সকাল হয় না, আমরা সকাল দেখতে পারি না
সকাল’টা তখন কুত্তাদের ঘুমের ভিতর,
চুপ-হয়া আসা পাখিদের কথা’র ভিতর
ঘরে ফিরা যাওয়া বাচ্চাদের নিরবতার ভিতর
কন্সট্রাকশনের উন্নয়নের আওয়াজের ভিতর
হারায়া যায়; আর আমরা বলি, আমাদের
কোনদিনও সকাল হবে না…
কবিতা ও ববিতা
“আমি একটা কবিতা লিখবো, ববিতা!”
ববিতা কইলো, “আগে জাফর ইকবাল হয়া দেখান!”
Latest posts by ইমরুল হাসান (see all)
- পলিটিকাল ডাইরি – ২০২৪ (দুই) - সেপ্টেম্বর 17, 2024
- পলিটিকাল ডাইরি – ২০২৪ (এক) - সেপ্টেম্বর 4, 2024
- ধর্ম প্রশ্নে পুরান কমিউনিস্টদেরকে ইনডেমনিটি দিতে চাওয়াটা অনেকটা ইন্টেলেকচুয়াল অসততার ঘটনা: ফরহাদ মজহারের ‘মোকাবিলা’ (২০০৬) বই নিয়া আলাপ - আগস্ট 9, 2024