Main menu

রাখে আল্লাহ মারে কে? – ভাসানীর বাণী (১৯৭২)।

সাপ্তাহিক হক-কথা পত্রিকায় “ভাসানীর বাণী” নামে একটা কলাম ছাপা হইতো। এই লেখাটা হক-কথা পত্রিকার ২৯শ তম সংখ্যায়, ১৯৭২ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ১৫ তারিখে ছাপা হইছিল। লেখাটা উনার জবানেই লেখা। হইতে পারে, উনি বলছিলেন, বলার পরে অন্য কেউ লেইখা রাখছিলেন। মানে, এইটারে মওলানা ভাসানীর লেখা বইলাই আমরা নিতে চাইতেছি। 

এই লেখাতে মাওলানার ক্লেইম মেইনলি দুইটা। এক হইতেছে, দেশের অবস্থা নিয়া বলা। আরেকটা হইতেছে, নিজের পলিটিক্যাল পজিশন নিয়া বলা। মুক্তিযুদ্ধের তখনো ৯ মাস পার হয় নাই। মওলানা বলতেছেন, বৃটিশরা যেইরকম শোষণ করছে, পশ্চিম পাকিস্তান যেইরকম শোষণ করছে, এইরকম শোষণ করতেছে ইন্ডিয়া। ইন্ডিয়ার তাঁবেদারি ঠেকাইতে হবে। এখন উনি যেহেতু এই কথা কন, উনারে বানানো হইছে, চায়নার দালাল। এই অপবাদ দিতেছেন মনি সিং আর প্রফেসর মোজাফফর। মওলানা নিজেরে কমিউনিস্ট না বইলা বলতেছেন মুসলমান। এই মুসলমানরে তখনো কমিউনিস্টরা নিতে পারে নাই, এখনো যেই ‘বিপ্লবী’ পরিচয় দিতে চায়, সেইখানেও অনেক ‘তবু’ কিন্তু’ ‘তারপরও’ আছে। মওলানারে আগে নেয়া যাইতো না, আর এখন একটা ‘বিপ্লবী সম্ভাবনা’ হিসাবে কনজিউম করা সম্ভব হয়, চে গুয়েভারার মতো।

তো, ভাসানী’র এই স্টেটম্যান্ট ইম্পর্টেন্ট একটা পলিটিক্যাল ডকুমেন্ট। পক্ষ-বিপক্ষের বাইরে, আজকে ৫০ বছর পরে আইসা আরেকবার পড়াটা দরকার আমাদের। পড়েন!   

ই.হা.

…………………….

সোনার বাংলাকে শ্মশান করিয়াছে বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদ সরকার ও পশ্চিম পাকিস্তানের জালেম ও শাসক গোষ্ঠি সরকার। কিন্তু, গত ৯ মাসে বন্ধুত্বের নামে হিন্দুস্তানের সৈন্যগণ ও আন্তার্জাতিক খ্যাতনামা মাড়োয়ারী এবং অন্যান্য শ্রেণীর চোরাকারবারীগণ বাংলাদেশের সোনা-রূপা, রেডিও-টেলিভিশন, মূল্যবান পাট, সরিষা, কলাই, তিল কালজিরা, মাছ, তরীতরকারী, স্কুল-কলেজের লাইব্রেরীর বই পুস্তক, বিজ্ঞান বিভাগের গবেষণামূলক দুলর্ভ যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য মূল্যবান আসবাবপত্র, পিতল, তামা কাসার তৈলসপত্র, ভেড়া-বকরীর চামড়া ইত্যাদি এবং বাংলাদেশে যুদ্ধের জন্য যে সমস্ত মূল্যবান সমরাস্ত্র ছিল তাহার মোট মূল্য আমাদের পক্ষে দেওয়া সম্ভব না হইলেও পাকিস্তানের শোষক গোষ্ঠী গত ২৩ বসরে বাঙ্গালীদিগকে শোষণ করিয়া যেই পরিমাণ ধন-সম্পত্তি পশ্চিম পাকিস্তানে লইয়া গিয়াছিল তাহার চেয়ে শত শত গুণ বেশী নিয়াছে ইহা বলিলে মোটেই সত্যের অপলাপ হইবে না। বর্তমানে বাংলাদেশে যে ভয়াবহ খাদ্য ও অর্থ-সংকট দেখা দিয়াছে তাহার নজির বাংলার ইতিহাসে মোটেই পাওয়া যাইবে না। বৃটিশ সরকারের আমলে চাউল ও অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষের মূল্য যাহা ছিল পাকিস্তান সরকারের আমলে তাহার চেয়ে তিন চারগুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় সারা বাংলাদেশে আপামর জন সাধারণ পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে সভা সমিতি, ভুখা-মিছিল, ধর্মঘট ইত্যাদি নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে করিয়াছে। ইহার দরুন পাকিস্তান সরকার ক্ষিপ্ত হইয়া কখনও কখনও জন নিরাপত্তা আইনের নামে পুলিশী জুলুমের দ্বারা হাজার হাজার ছাত্র-যুবক-কৃষক-শ্রমিককে বিনা বিচারে কারাগারে রাখিয়া কষ্ট দিয়াছে। কিন্তু বড়ই দুঃখের ও পরিতাপের বিষয় এই যে, বর্তমান আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠানের ও আওয়ামী লীগ সরকারের বহু কর্মকর্তাগণ পাকিস্তানের সরকারের নির্মম অত্যাচার ভোগ করা সত্বেও বর্তমানে তাহারাই বিরোধী দলকে ভুয়া আইনের দোহাই দিয়া এবং বাংলার স্বাধীনতার মহা শত্রু বলিয়া বিরোধীদেরকে জনসাধারণের নিকট হেয়-প্রতিপন্ন করিবার জন্য দিবারাত্রি মিথ্যা প্রচার চালাইয়া যাইতেছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে বহু নিরপরাধ মানুষকে আহত-নিহত করিয়াছে। কালিহাতী থানার ভুখা মিছিলের উপর অতর্কিতে গুন্ডা লেলাইয়া দিয়া কাগমারীর মওলানা মোহাম্মদ আলী কলেজের ছাত্র খলিলুর রহমানকে প্রকাশ্য দিবালোকে নির্মমভাবে হত্যা করিয়াছে। অন্যান্য স্থানেও অনুরূপ আক্রমণ হইতেছে এবং ভবিষ্যতে বিরোধী দলকে সম্পূর্ণ নির্মূল করিয়া ফেলিবে বলিয়া ভয় প্রদর্শন করিতেছে।

আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠান ও সরকার প্রচার করিয়া বেড়াইতেছে যে, বাংলাদেশে তাহারা খাঁটি গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা না করিয়া কিছুতেই ছাড়িবে না। তাঁহাদের কথা ও কাজের ভিতর আসমান ও জমিন পাথর্ক্য ইহা আজ বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের মধ্যে একমাত্র আওয়ামী লীগের লুটপাট সমিতির মন্ত্রী-মেম্বর যাহার গত ৯ মাসে রিলিফের মালামাল ও অবাঙ্গালীদের পরিত্যাক্ত সম্পত্তি আত্মসাৎ করিয়া লক্ষ টাকার মালিক সাজিয়াছেন তাহার ব্যতিত সকলেই একবাক্যে স্বীকার করিবে। আওয়ামী সরকার ও প্রতিষ্ঠান বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদ সরকার, পাকিস্তানের স্বৈরাচারী কনভেনশন মুসলিম লীগ সরকার প্রভৃতি ভূতপূর্ব সরকার সমুহের চেয়ে অনেক বেশী স্বজন-প্রীতি, দুর্নীতি, চোরাকারবারী ইত্যাদি সমাজ বিরোধী কাজে উন্নতি লাভ করিয়াছে। বিশেষ করিয়া সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও দেশের আপামর জনতার বাক স্বাধীনতা হরণ করিতে উঠিয়া পড়িয়া লাগিয়াছে। সরকারের অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে কেহ কিছু বলিলে তাহাকে চিরকালের জন্য দুনিয়া হইতে বিদায় করিয়া দেওয়া হইবে বলিয়া লুটপাট সমিতির মেম্বর সাহেবানেরা ভয় প্রদর্শন করিয়া বেড়াইতেছে।

এখন সময় থাকিতে আওয়ামী লীগ সরকার রাশিয়া, হিন্দুস্থান, আমেরিকা প্রভৃতি বিদেশী রাষ্ট্র যাহাদিগকে আপনারা ঘনিষ্ঠ বন্ধু বলিয়া মনে করেন, তাহাদের সহিত বন্ধুত্ব করিতে থাকুন তাহাতে আমাদের কোনই আপত্তি নাই। কিন্তু বন্ধুত্বের নামে বাংলাদেশে স্থায়ী প্রভুত্ব কায়েমের জন্য যে ভাবে শোষণের যাতাকলে পিষিয়া আমাদিগকে মৃত্যুর স্থলে উপস্থিত করিয়াছেন তাহা উপলব্ধি করিয়া সত্বর বিদেশীদের প্রভুত্বকে অস্বীকার করিয়া স্বাধীন বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করিতে আন্তরিকভাবে চেষ্টা করুন। অন্যথায় বাংলাদেশের কৃষক, মজুর, কামার, কুমার, জেলে, মাঝী, তাঁতী ঐক্যবদ্ধ হইয়া বিদেশী শত্রু ও চোরাকারবারীদিগকে চিরকালের অন্য বাংলার মাটি হইতে উৎখাত করিবেই–করিবে।

বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদী সরকারের রাজত্বে সূর্য অস্ত যাইত না বলিয়া প্রবাদ ছিল। এ সরকারকেও বাংলার মাটি হইতে উৎখাত করিতে বাঙ্গালীরাই প্রথম জেহাদ আরম্ভ করিয়াছিল। জনগণ বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদী সরকারের বন্দুক ও কামানের ভয়ে ভীত হইয়া কখনও স্বাধীনতার আন্দোলন পরিত্যাগ করে নাই। হিন্দুস্থান, রাশিয়া, আমেরিকার শক্তির উপর নির্ভর করিয়া বর্তমান বাংলাদেশ সরকার যতই হুঙ্কার দিক না কেন ইনশাল্লাহ বাঙ্গালীরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করিতে কোন কিছুতেই ভয় পাইবে না। হিন্দুস্তান ও অন্যান্য দেশের একচেটিয়া বাজার বাংলাদেশকে কিছুতেই হইতে দিবে না। হিন্দুস্তান অথবা অন্য কোন দেশের একজন সৈন্যকেও বাঙ্গালিরা বাংলাদেশের মাটিতে স্থান দিবে না। 

এক শ্রেণীর স্বার্থপর লোক যাহারা লুটপাট করিয়া গত ৯ মাসে সোনার বাংলাকে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের কবলে পতিত করিয়াছে তাহারই বলিয়া বেড়াইতেছে ‘ভুখা মিছিল করে যারা স্বাধীনতার শত্রু তারা’, ‘ভুঘা মিছিল করে যারা চীনের দালাল তারা’। 

চীনের সঙ্গে আমার, আমার কৃষক সমিতি ও ন্যাপ পার্টির কোন সংশ্রব নাই। আমি বারবার বলিয়াছি চীন সবার ভেটো দিয়া বাংলার জনমতকে অস্বীকার করিয়াছে। আমি ইহার জন্য সংবাদপত্রেও তীব্র প্রতিবাদ করিয়াছি। চীন দেশে অতি প্রথম শেখ মুজিবর রহমান, আতাউর রহমান খান, মানিক মিঞা ভ্রমণ করিতে যায়। আমি তখন ঢাকার সেন্ট্রাল জেলে আবদ্ধ ছিলাম। তাহারা ফিরিয়া আসিয়া ‘চীনে কি দেখে এলাম” বলে যে বর্ণনা – সংবাদপত্রে দিয়াছিল তাহাই পাঠ করিয়া প্রথম চীন সম্পর্কে অবগত হই। দ্বিতীয়বার যখন মরহুম হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী চীনে যান এবং সেখান হইতে ফিরিয়া চীনের প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাইকে স্বাগতম জানাইয়া ঢাকার পল্টন ময়দানে যে ঐতিহাসিক সত্য কলেন তাতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী মিঃ শহীদ সোহরাওয়ার্দী চীৎকার করিয়া শ্লোগান দিয়েছিলেন চৌ এন লাই জিন্দাবাদ, চীন পাকিস্তান ভাই ভাই। 

১৯৪৭ সালে আমি যখন এশিয়া সম্মেলনে দিল্লীতে যাই ভারতের প্রধানমন্ত্রী স্বর্গীয় পণ্ডিত জওহর লাল নেহেরু আমাকে বলিয়াছিলেন ‘মওলানা তুমি যেভাবেই হোক চীন যাইবে। চীনে না পেলে মানুষ চরিত্র ও কঠোর পরিশ্রমের দ্বারা অল্প দিনের মধ্যে এত বেশী উন্নতি করিতে পারে তাহা অন্য কোন দেশ দেখিয়া বুঝিতে পারিবে না।’ আমি সেই সময় ভারতের বিভিন্ন প্রদেশগুলি ভ্রমণ করিয়াছি; সর্বত্রই শুনিয়াছি, চীন-হিন্দি ভাই।

বর্তমানে যখন আমরা বাংলাদেশের মরণাপন্ন মানুষকে দুর্ভিক্ষের করাল গ্রাস হইতে রক্ষা করিবার জন্য বাংলাদেশ ও পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সরকার ও জনতার দৃষ্টি আকর্ষণ করিতে সভা-সমিতি, ভুখা মিছিল ইত্যাদি আরম্ভ করিয়াছি সেই সময় আওয়ামী লীগের মুজিব বাহিনী, লালবাহিনী, রক্ষীবাহিনী ও নানা রং বেরঙ্গের বাহিনী আমার বিরুদ্ধে সারাদেশে তোলপাড় করিয়া বেড়াইতেছে – চীন ভেটো দিয়াছে তজ্জন আমাদিগকে দায় করিয়া। চীনে প্রায় আশি কোটি লোকের বাস। চীন সরকার দুনিয়ার কাহাকেও তোয়াক্কা করিবে না ইহা সকলেই জানে। এমতাবস্থায় চীন কি করে না করে তাহার জন্য আমরা কেন দায়ী হইব?

চীনের সহিত বাংলাদেশ সরকার ও হিন্দুস্থান সরকারের বন্ধুত্ব ও ব্যবসা-বাণিজ্য অল্পদিনের মধ্যেই যদি পুরাদমে শুরু হইয়া যায় তাহা হইলে হিন্দুস্থান ও কোন নেতাই বলিবে না একমাত্র ভাসানীর দ্বারাই ইহা সম্ভব হইয়াছে। চীনের ভেটো-প্রদানের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের মোসাহেবগণ প্রতি মাসে একবার করিয়া প্রতিবাদ দিবস পালন করুন তাহাতে আমার ও আমার পার্টির কোন আপত্তি নাই। কিন্তু আমি আপনাদিগকে বার বার সাবধান করিয়া দিতেছি যে আমার বিরুদ্ধে মনিসিং ও প্রফেসর মোজাফফর সাহেবরা যেরূপ লাগামহীন মুখে পালাগালি করিয়া বাংলাদেশকে স্বীয় পৈতৃক সম্পত্তি ভাবিয়া আমাকে হিজরত করিবার উপদেশ দেয় তাদের পথ কিছুতেই অনুসরণ করিবেন না। বর্তমানে বাংলাদেশের ৫২ হাজার গ্রামে গঞ্জে খোঁজ নিয়ে দেখুন মনিসিং ও মোজাফফর সাহেবের দল ‘গায়ে মানে না নিজেই মোড়ল’ সাজিয়া রাজনীতি করিতেছেন। তাহারা অত্যাধিকভাবে হিন্দুস্থানের দালালী করিতে গিয়া বাংলাদেশের ৯৯ জনেরও বেশী মুসলমান কৃষক ও ৯৫ জনেরও বেশী শ্রমিকের নিকট ‘মায়ের চেয়ে দরদ বেশী তাকেই বলে ডাইনী’ প্রবাদে পরিণত হইয়াছে। 

আমার রাজনীতির সহিত মার্কসবাদ ও লেনিনবাদের কোন সম্পর্ক নাই। কারণ, আমি কমিউনিজমের কোন বই পুস্তক পড়ি নাই, বিদ্যাবুদ্ধিও নাই, আমি একজন গোড়া মুসলমান – এই সমস্ত বয়ান করিয়া মনিসিংয়ের দল মনে করিয়াছিল ভাসানীর নীতি চিরকালের জন্য খতম হইয়া গিয়াছে। এতএব বাংলাদেশে আমাকে থাকিতে না দেওয়া প্রফেসর মোজাফফর ও মনিসিং-এর মর্জির উপর নির্ভর করে। 

কিন্তু আমি মুসলমান ইংরেজ আমলে ও পাকিস্তান আমলে ছিলাম। চীন ও অন্যান্য দেশে ভ্রমণ করিয়াছি মুসলমান হিসাবেই। ইনশাল্লাহ মুসলমান হিসাবেই থাকিব এবং মুসলমান থাকিয়াই মরিব। পবিত্র ইসলামের আদর্শ অনুযায়ী হিন্দু, মুসলমান, খ্ৰীষ্টান, বৌদ্ধ, জৈন, পাশি যে কোন ধর্মের, যে কোন বর্ণের বা গোত্রের, যে কোন দেশের মানুষই হউক না কেন আমার হাতের দ্বারা, আমার মুখের দ্বারা এবং আমার কাজের দ্বারা কোন প্রকার কষ্ট যাহাতে না পায় তৎপ্রতি বিশেষ দৃষ্টি রাখিতে জীবনে কখনো ভুলি নাই – ভবিষ্যতেও ভুলিব না। কিন্তু যাহারা শতকরা ৮৬ জন মানুষের ধর্মীয় শিক্ষাকে হাতের তুবড়িতে উড়াইয়া দিয়া দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চান তাহা পাগল না হইলেও মাথা খারাপ তাতে কোনই সন্দেহ নাই।

যতদিন মন্ত্রীত্ব থাকে ততদিনই সেই দলের কর্মকর্তা ও মন্ত্রী সাহেবান ক্ষমতার জোরেই অনেক কথা বলিয়া থাকেন। কিন্তু যেদিন মন্ত্রীত্বের অবসান হয় – তাহার পর হইতে দেখা যায় ভাসানীর ছত্রছায়ায় আশ্রয় লইয়া পুনরায় বিরোধী দল গঠন করিতে উৎসাহী হন। আমি কাহারও বিশ্বাসঘাতকতা কোন দিনই মনে রাখি না। তাই যাহারা কখনো ঘাড়ে চড়ে, কখনো পায়ে পড়ে ভিগবাজী যতই খেলুক ন কেন আমার সারা জীবনের আদর্শ ও কর্মসূটা বহাল রাখিয়া দুনিয়ার নির্যাতিত সর্বহায়া মানুষের মুক্তির সংগ্রাম চালাইয়া যাইবই। ভয়ে কোন দিন কোন সরকার বা সাম্রাজ্যবাদ, পুঁজিবাদ, সামন্তবাদ প্রভৃতি শোষকগোষ্ঠীর নিকট মাথা নত করি নাই, ইন্শাল্লাহ-জীবনে কখনো কৱিবও না। 

অন্ধকার রাত্রিতে গুলি করিয়া অথবা ছোরা-ডেগাযর দিয়া লালবাহিনী, রক্ষীবাহিনী, মুজিববাহিনী প্রভৃতি সরকারী বাহিনী আমাকে সংগ্রামের পথ হইতে ফিরাইতে পারিবে না। এক ভাসানী মারা গেলে লক্ষ লক্ষ ভাসানী বাংলাদেশে শুধু নয়, সারা জাহানে জন্ম নিবে। কত মন্ত্রীসভা গত ২৪ বছরে জন্মগ্রহণ করিয়াছে আবার ধূলায় লুটাইয়া গিয়াছে। বর্তমান মন্ত্রী মহোদয়গণ ও আওয়ামী লীগের চেলাচামুণ্ডারা আমার বিরুদ্ধে যতই মিথ্যা প্রচার ও হত্যা করার হুমকি দেখান না কেন আপনারা যদি আল্লাহর দরবারে তুওবা না করিয়া লুটপাট সমিতির সদস্যদিগকে কঠোর হস্তে দমন করিতে না পারেন তাহা হইলে আপনাদের ভবিষ্যত স্বৈরাচারী পাকিস্তান জালেম সরকারের মতই হইবে। জয় সর্বহারা মানুষের অবধারিত। নছরুম মিনাল্লাহে ওয়া ফতহুন কারিব। 

 

The following two tabs change content below.

বাছবিচার

এডিটর, বাছবিচার।

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →