শরিয়া জিনিসটা কি আসলে?
গত একসপ্তাহে নিজের কিউরিওসিটি থেকে আমি আমার পরিচিতদের মধ্যে বিভিন্ন ইকোনমিক ক্লাস, পেশা, বয়সের অন্তত ৫০জন মানুষকে জিজ্ঞেস করেছি, দেশে ইসলামী শাসন/শরিয়াহ চান কিনা? ৪৮ জন উত্তর দিয়েছে হ্যাঁ৷ আর দুজন মাত্র না বলছে। এই দুজনের একজন হচ্ছেন আমার বাবা; যিনি কিনা স্থানীয় মাদরাসার শিক্ষক এবং আমাদের মসজিদের ঈমাম। আর আরেকজন আমাদের বাজারের হিন্দু এক নাপিত, যার কাছে আমি চুল কাটাই বুঝ হওয়ার পর থেকেই।
যারা হ্যাঁ বলছে, তাদের প্রত্যেককে জিজ্ঞেস করেছি, ইসলামী শাসন/শরিয়াহ বলতে তারা আসলে কি বুঝেন?
১৫জনের মতো কোনো উত্তরই দেননি। আরো ১২জনের উত্তর খুবই অগুছালো এবং আগামাথাহীন। উদাহরণ দিয়ে বলি, একজন বললেন, ইসলাম প্রতিষ্টা মানে আল্লার আইন প্রতিষ্টা। আমি বললাম দশটা আল্লার আইন বলেন, বা আল্লার আইন আসলে কি? জবাবে উনি বললেন, আল্লার আইন মানে কোরআন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কোরআন থেকেই আপনি জানেন এমন পাঁচ-দশটা আইনের কথা বলেন। জবাব না দিয় তিনি বললেন, আমার কাজ নাকি খামোখা প্রশ্ন করে ভেজাল লাগানো।
বাকি যারা উত্তর দিয়েছেন, এদের প্রত্যেকের জবাব আমি একজায়গায় করে এই কয়েকটা বিষয় পাচ্ছি,
১. চুরি করলে হাত কাঁ/টা হবে। একই ভাবে খু/নের শাস্তি প্রকাশ্যে গ/র্দা/ন উড়ানো।
২. যে ছেলে বাবা-মায়ের কথা না শুনে বউয়ের কথা শুনবে, তাকে শাস্তি দেয়া হবে।
৩. নামাজ না পড়লে, শাস্তি প্রদান করা হবে।
৪. মেয়েরা বুরখা না পরলে শাস্তি দেয়া হবে।
৫. সিনেমা/গান এইগুলা বন্ধ করা হবে।
৬. কেউ চাইলেই ৪ বিয়ে করতে পারবে।
৭. বিভিন্ন সরকারি কাজে কোনো অন্যধর্মালম্বীদের চাকরি দেয়া যাবে না। তবে তারা দেশে শান্তি থাকার ব্যবস্থা করতে হবে।
৮. নাস্তিক, সম/কামী, ট্রান্স এদের মৃত্যু/দণ্ড দেয়া হবে।
৯. ইফতারী, মিলাদকিয়াম, চল্লিশার সিন্নি এসব চিরকালের জন্য উঠায় দেয়া হবে।
মোটামুটি সবার জবাবই এরমধ্যে ছিলো। এই জবাবগুলো নিয়ে আমি একটু চিন্তা করে দেখলাম, ইকোনমিতে লোয়ার ক্লাস কেউ সিনেমা/গান নিষিদ্ধ সম্পর্কে কিছু বলে নাই। নাস্তিকদের শাস্তি চাওয়া তিনজনেরই বয়স ১৮-২৫ এর মধ্যে। মহিলারা সবচে বেশি চান নামাজ না পড়লে শাস্তি এবং ইসলামের নামে বেদাতি কার্যক্রম বন্ধ। এইরকম আরো বেশ কিছু ইন্টারেস্টিং প্যাটার্ন আমি পাইলাম তাদের উত্তরে।
যাইহোক, আমার আসলে মনে হয়, শরিয়া প্রতিষ্ঠা করার আগে শরিয়া আসলে কি? এইটা ব্যাপক হারে সাধারণ মানুষ লেভেলে পৌছানো উচিত। যারা প্রতিষ্ঠায় নিবেদিত প্রাণ, তারা এক-দুই বছর চেষ্টা করলে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও পৌছে দিতে পারবেন তাদের মেসেজ। যেহেতু শরিয়া মানেই ইসলাম অতএব এটা না চাইলেতো আমার ঈমান থাকবে না টাইপ একটা চিন্তা থেকেই বেশিরভাগ মানুষ শরিয়া চায় বলে আমার ধারণা। শরিয়া প্রতিষ্টার আলাপ থেকেও শরিয়া কি, শরিয়া আসলে কি কি হবে এসব ব্যাপারে বিভিন্ন ঘরনার লোকেরা ব্যাপক পরিমাণে আলাপ করার প্রয়োজন। কওমির শরিয়া আর আহলে হাদীসের শরিয়া কি সমান? আহলে হাদীসের শরিয়া আর জামায়াতের শরিয়া কি সমান? সমান না হলে কি সে আলাদা? আর সমান হলে তাদের মতানৈক্য তবে কি নিয়ে? এসব ব্যাপারে গ্রাম পর্যায়েও আলাপের সময় চলে এসেছে।
বি:দ্র: আমার আব্বারে জিজ্ঞেস করলাম, উনি হুজুর হয়েও শরিয়া চান না কেন? জবাবে একটা কেতাবী জবাব দিয়ে বললেন, ‘ইসলামী রাস্ট্র চালাতে লাগবে একদল দয়ালু, সাহসী, জ্ঞানী এবং ন্যায়পরায়ণ মানুষ। তিনি এইসব গুণের মিশ্রণের মানুষ এখন সমাজে দেখেন না। একজন দুইজন যা দেখেন, এরা কখনোই একটা দল হয়ে কাজ করবে না। অতএব, ইসলামী আইনের নামে একটা শোষণমূলক নিয়ম প্রতিষ্টার সম্ভবনা বেশি। তাই উনি শরিয়া চান না। তবে যদি সমাজের ব্যাপক পরিবর্তন আসে এবং নেতা শ্রেণির লোকেদের মধ্যে এসব গুণ ব্যাপক হারে দেখা যায়, তবে উনি উনার উত্তর বদলাবেন।
ইফতি চৌধুরী
Latest posts by ইফতি চৌধুরী (see all)
- শরিয়া জিনিসটা কি আসলে? - সেপ্টেম্বর 3, 2024