Main menu

অন পলিটিকাল কাওয়ালি, প্রাতিষ্ঠানিক র.ঠা ও অন্যান্য কালচা(ড়া)ল পেজগি

কালচারাল পলিটিক্সের জায়গা থেকে গত কিছুদিন ধরে ‘কাওয়ালি’ হাজির হইছে।

দূর থেকে বড় ১টা অংশের মধ্যে যে আকাঙ্ক্ষাটা আমি দেখি তা হইতেছে আওয়ামী-ফ্যাসিবাদে, কালচারাল স্ফিয়ারে যে ‘অসাম্প্রদায়িক আবহমান বাঙালি-কাম-মুক্তিযুদ্ধের চেতনা–কাম–প্রগতিশীলতা’ নামের বিষাক্ত ১ ফ্যাসিস্ট ককটেল হিসেবে কাজ করছে তারে প্রতিরোধের আকাঙ্ক্ষা হিসেবে।

প্রথমেই বলতে চাই যে: মুরুব্বি! মুরুব্বি! উহুহুহুম!

কেন বলতেছি?

ব্যাখ্যা করি।

বাংলায় এখনকার কাওয়ালি বলেন বা উচ্চাঙ্গের অন্য কোনো সংগীত বলেন, এর মধ্যে কালচারাল ভার্চ্যু সিগনালিং আছে, যার প্রতি অতি-আকাঙ্ক্ষা, (ও প্রকারান্তরে আমের মধ্যে চালু মিউজিকরে ক্ষ্যাত লাগা, বা ‘ফোক’ মনে হওয়া) মূলত নিজের সংস্কৃতি নিয়া ইনফিরিওরিটির মেনিফেস্টেশন। নিজের আইডেন্টিটি নির্মাণে উচ্চাঙ্গ জিনিসরে ঠেকনা হিসেবে ব্যবহারের খায়েশ।

আওয়ামী কালচারাল ফ্যাসিজমের আইকন হিসেবে র.ঠা যে আবির্ভূত হইছে বাংলায়, বা বাংলায় রঠা ইন্ডাস্ট্রি যে ব্যুরোক্রেসি হিসেবে গড়ে উঠছে—- সেইটারে আপনে এই লাইনে ঠেকাইতে পারবেন না।

কারণ রিয়্যাকশন কালচার স্বভাবে দূর্বল ও ঠুনকো হয়। তার চেও ভয়াবহ বিষয় হইতেছে, জিনিসটা জনবিচ্ছিন্ন হইতে বাধ্য।

ফলে কাওয়ালিরে পলিটিসাইজ কইরা আপনি বেশি দূর যাইতে পারবেন না। তাছাড়া ‘প্রথাগত দরবারী’ গানে বাংলার মানুষ কোনো কালেই অতো জজবা পায় নাই। ‘ওনলি’ দফ যত বেশি বাজাবেন, আপনার কালচারের দম বা শক্তি তত কমতে থাকবে।

নমুনা হিসেবে অফিশিয়াল বাংলারে দ্যাখেন। গানে ভাষা লাগে, ফলে এইখানে প্রাসঙ্গিক।

ফোর্ট উইলিয়ামে ১৯ শতকের গোড়া থেকে বাংলা ভাষার আর্বি-ফার্সি খেদাইয়া বাংলারে সংস্কৃতের মাইয়া (দুহিতা) বানানোর প্রজেক্ট আমরা দেখছি। যেইটা ছিলো মূলত হিন্দু-জাতীয়তাবাদী প্রজেক্ট।

আমজনতার জবানে চালু আরবি-ফার্সি থেকে আগত শব্দ ও ভঙ্গিরে (যেগুলা আসলে বাংলায় আত্তীকৃত, মানে বাংলাই) খেদায়ে বিশুদ্ধ তৎসমগন্ধী বাংলা বানানো হইছে। ফলে ডিকশোনারিতে চালু শব্দ ‘লুফে নেওয়া’ বাদ দিয়া ‘শূন্যে নিক্ষেপ করিয়া পুনরায় হস্তগত করা’ লিখতে পরামর্শ দেওয়া হইলো। আমরা উচ্চারণ করি লখখি কিন্তু সংস্কৃত মাইনা লেখা হইতে থাকলো লক্ষ্মী (লাক্সমি)।

যারে আমজনতা কখনোই নিজের জিনিস ভাবতে পারে নাই। ফলে লিখিত বাংলা ছায়ানট-শান্তিনিকেতনী ক্ষুদ্র ১ আখড়ার বাইরে গিয়া বৃহত্তর সমাজে কোথাও পৌছাইতে পারে নাই।

[অথচ দ্যাখেন, মাতাল রাজ্জাক বা শাহ আব্দুল করিমরা কিন্তু কোনো প্রাতিষ্ঠানিকতা ছাড়াই বৃহত্তর সমাজে ছড়ায়ে পড়তে পারছে। কেমনে পারছে? প্লিজ ভাবেন।]

এবং এই ‘মুসলমানি’ ভাষা খেদানোর প্রতিক্রিয়ায় আমরা আবার পাইলাম ‘হিন্দুয়ানি’ বাংলারে সাইজ করার নিয়তে সহীহ আরবি/ফার্সি জিনিস চালানোর প্রবণতা।

শুরু হইলো জোর কইরা আর্বি ফার্সি আমদানিও। এমনকি, বাংলায় আত্তীকৃত আর্বি-ফার্সি শব্দরেও, সংস্কৃত বিশুদ্ধতার নিয়ম মোতাবেক, এখন সহীহ বা বিশুদ্ধ ফর্মে লেখা লাগতেছে। ফলে শত শত বছর ধইরা যে ‘রমজান’ বা ‘সেহেরি’ বাংলার আমজনতার জবানে চালু ছিল, এখন তারেও জাতে উঠতে ‘রামাদান ‘বা ‘সাহুর’ বলা লাগে।

অথচ ২টাই ইজ্জতে উচা হওয়া বা জাতে ওঠার চেষ্টা। যার মূলে আছে নিজের আইডেন্টিটি নিয়া হীনমন্যতা।

কাওয়ালি হোক আর অন্য কোনো জন্রার মিউজিক হোক, সবকিছুর চর্চা হইতে পারে। মিউজিক বহুবিস্তৃত, বহুবর্ণিল জিনিস। বিচিত্র তার রঙ, ঢং, ধরণ ও চেহারা। আমি গান-পাগলা মানুষ, সকল সুরের পিয়াসি। ফলে সবজন্রাই ওয়েলকাম।

কিন্তু আপনি যদি বৃহত্তর সাংস্কৃতিক ঐক্য নির্মাণের টুল হিসেবে মিউজিকরে চুজ করেন—বা সোজা বাংলায়—- পলিটিকাল পার্পাসে মিউজুকরে চুজ করেন, প্লিজ আরেকবার ভাবেন।

দেশের মেইনস্ট্রিম মিউজিকরে ১টু রেস্পেক্ট দেন।

ভদ্রবিত্তীয় নজরের বাইরে যান।

আমজনতার পপুলার জিনিসরে ঘেন্না কম করেন।

দীর্ঘকাল ধরে হীনমন্যতায় ভুগলে নিজের শক্তির জায়গাগুলিরে নিয়াও সন্দেহ জন্মায়। ‘গর্বিত’ হওয়ার বাসনায় ইরান তুরান বা গুরুকুলে ছুটে যাইতে হয়। অথচ এগুলারে অপরাপর ইনফ্লুয়েন্স হিসেবে, জগতের পরম্পরাগত বিচিত্র সৃজন হিসেবে দেখা যায়, নেওয়াও যায়; দাসখত না দিয়াই।

বাংলার কালচারাল মুক্তি ইরান-তুরান, আরব বা ‘সংস্কৃতের মেয়েরূপী’ ‘কলকাতা’য় নাই।

আছে নিজের ঘরে।

আমি বলবো, বৃহত্তর আইডেন্টিন্টি নির্মাণে প্রকল্প হিসাবে যদি কালচারাল এক্টিভিটিজ করেন, নিজের ঘরে নজর দেন।

নিজের ঘরের যা কিছু ভালো আছে, তারে ওউন করেন।

এই ওউন করা মানে বাংলার আমজনতার শিল্প-সংগীতরে ‘ফোক’ নামের বর্গে ফালানোর যে দীর্ঘকালের কুরাজনীতি ও শ্রেণিঘৃণা, এবং গোপনে ‘ছোটলোকের আর্ট’ বইলা বিবেচনার রাজনীতি—তারে চিনতে শেখা।

পপুলার বা আমজনতার জিনিস মানেই যে ক্ষ্যাত বা ‘ভালগার’ না, এই জিনিস বুঝতে শেখা। (বাদায়ে, ‘ভালগার’ কথাটার মানে আদি লাতিনে কিন্তু জাস্ট ‘জনপ্রিয়’!)

পলিটিকাল কাওয়ালিওয়ালা কিংবা যেকোনো কালচারাল এক্টিভিস্টদের অনুরোধ করবো, ছোটলোকের গীত হিসেবে না দেইখা একটু ওপেন মাইন্ডে দেখতে পারলে দেখবেন ওখানেও মানিক রতন আছে।

মোটকথা, কালচারাল পলিটিক্স করেন কিন্তু আগে কালচার জিনিসটা ভালমতো বুঝতে চেষ্টা করেন।

নয়তো, ‘মুরুব্বি! মুরুব্বি! উহুহুহুম!’ বলার সময় চইলা গেলে, দফ বাজায়ে খালি আফসোসই করা লাগবে।

The following two tabs change content below.
Avatar photo

কে এম রাকিব

গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →