Main menu

ভীতু মধ্যবিত্তের ৫ আগস্ট

এই লেখাটা আমি ২৪ এর আগস্টের ৬ তারিখ থেকে লিখতে চাইতেছিলাম। কিন্তু সেই সময়ে চারদিকে যে ঝড়তুফান চলতেছিল আর একই সাথে নিজের ভিতরে যে অস্থিরতা এবং বিজয়ের আনন্দ পাশাপাশি বিরাজমান ছিল তাতে সেই মেমোরি লেখা হয়ে উঠে নাই। আর এমন লেখার মাঝে আবেগের যেই উথালপাথাল, তাতে এইটা দ্রুত লেখার ক্ষেত্রে আতিশয্যের কিছু রিস্ক থাকে। সেইটা বাদ দিতে কিছু সময় পেরোতে দেওয়া সেইফ। তাতে অবশ্য কিছু স্মৃতিভ্রমের ঝুঁকিও থাকে। কিন্তু মাত্র চার মাসের মাথায় এই মুহূর্তে যে কাদা ছোড়াছুড়ি চলছে চারদিকে, প্রতিদিন নতুন নতুন যেসব বয়ান, ন্যারেটিভ পড়ছি, দেখতেছি, শুনতেছি, নায়ক, খলনায়ক বানানোর প্রবণতা দেখতেছি তাতে কিছুদিন পরে মনে হবে আমি মনে হয় ৫ আগস্টে কল্পনায় ছিলাম। বা ছিলামই না। ফলে লেখাটা জরুরি। অন্য কারও জন্য না হলে নিজের জন্যই জরুরি।

ইন্টারনেট শাট ডাউনের সময়ে বা কারফিউ চলাকালে কাগজে কলমে প্রচুর লিখেছি। সেগুলো এই আলোচনার মুখ্য বিষয় না। প্রাসঙ্গিকভাবে আগের পরের কিছু ঘটনা আসতে পারে। মূলত ৫ তারিখ নিয়েই লিখব। তখনকার জ্ঞানের আন্দাজে লিখব। তখনো যা জানিনা, পরে জেনেছি, সেই তথ্য সেইভাবেই আনব।

এটা একেবারেই ব্যক্তিগত লেন্সের একটা নির্দিষ্ট সময়ের লেখা। ফলে বৃহৎ প্রেক্ষাপটের বিশ্লেষণ আশা করলে হতাশ হবেন।

আমি ১ তারিখ থেকে মাঠে, রাস্তায়, শহীদ মিনারে ঘুরতেছি। কখনো একা, কখনো পরিচিত ছোটভাইদের বা অন্য কোনো সার্কেলের সাথে। আমার কাছের দোস্ত বা সমসাময়িকরা কেউ ঢাকার বাইরে, কেউই দেশের বাইরে কিংবা পরিস্থিতি মেনে নিয়ে খুনী হাসিনাকে তীব্র ঘৃণা করে নিজের বাস্তবতা মেনে বাসায়। আমার পরিচিত সেকেন্ডারি সার্কেলের (পরিচিতের পরিচিত) অন্তত ১৫/২০ জনের নিহত হওয়ার খবর আছে। সবচেয়ে প্যাথেটিক খবরটা ছিল এক পরিচিত ছোটবোনের বান্ধবীর যার জানালা দিয়ে ঢোকা টিয়ারশেলের ধোঁয়ায় বাসার সবাই প্রাণে বেঁচে গেলেও সপ্তাহখানেক বয়সের নবজাত সন্তান মারা গেছে। জাস্ট ইমাজিন! এরই মাঝে মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচী এক দিন এগিয়ে ৬ তারিখের বদলে ৫ তারিখে এগিয়ে আনা হয়েছিল। এমেজিং মুভ। সম্ভবত সরকারকে হতচকিত করতেই এই মুভ।

১৬ তারিখে আবু সাঈদের শহীদ হওয়ার ভিডিও দেখার পর থেকেই আমি মোটামুটি নিশ্চিত যে হাসিনার দিন শেষ। সেই সময়ে কারফিউয়ের মাঝে যাদের সাথে মোবাইলে কথা বলে মাথা ঠিক রাখার চেষ্টা করেছি তাঁদের মাঝে জনাকয়েক লেখক, প্রকাশক, বন্ধু ও আত্মীয়স্বজন আছেন। (তাঁদের কয়েকজনকে ট্যাগ করলাম) ১৭ তারিখ থেকে আমি যা বলেছি সেইটাই ৪ তারিখে পোস্ট করেছিলাম ফেসবুকে। আমার ওয়ালে এখনো আছে। পোস্ট টা কপি করি এখানে –

“রোগীর আত্মীয়স্বজনকে ডাক্তার বলে দিছে, হাসপাতালে রাইখা লাভ নাই। বাড়িতে নিয়া যান। যা খাইতে চায় দেন।
এই মুহূর্তে এই সরকারের অবস্থা সেই রোগীর মতো।
প্রশ্ন শুধু এইটা, কখন?
৩ ঘন্টা, ৩ দিন, নাকি ৩ সপ্তাহ নাকি ৩ মাস…
ইটস অন দ্য কার্ড। আল্লাহ্‌ ভরসা।”

সম্ভবত ৪ আগস্ট দুপুরের দিকে জেনেছিলাম কর্মসূচী এগিয়ে এসেছে। নির্দিষ্ট কিছু এলাকা বাদ দিয়ে সেই সময়ে ঢাকার পরিস্থিতি মোটামুটি স্বাভাবিক। মনে হচ্ছিল সব পক্ষ শক্তি সঞ্চয় করছে চূড়ান্ত লড়াইয়ের জন্য। ২, ৩ তারিখে শহীদ মিনারের যে জমায়েত, তাতে আমি ভেবেছিলাম যেকোনো সময়ে সেখান থেকেই গণভবন ঘেরাওয়ের কর্মসূচী আসতে পারে। কিন্তু আসে নাই। সেই সময়ে অর্গানিকভাবেই যে আবালবৃদ্ধবনিতার যে সমাবেশ, তার বড় একটা অংশের চোখেমুখে মুক্তির জন্য যেকোনো দাম চুকানোর মানসিকতা এবং আগ্রহ ছিল। অন্তত আমার তাই মনে হয়েছে।

এইখানে নিজের একটা অপারগতা স্বীকার করে নেওয়া ভাল। আমি একবারের জন্যও শহীদ হওয়ার কথা ভাবি নাই, কিংবা ভাবতে চাই নাই। সেই সাহস আমার নাই। প্রতিবার মিছিলে, সমাবেশে যাওয়ার আগে আমার দোয়া ছিল, আল্লাহ্‌, শহীদ না, গাজি হওয়া আমার জন্য বেটার অপশন। আমার দুইটা শিশু সন্তান আছে। ওদেরকে আবার সুস্থ শরীরে দেখার তৌফিক দিও। প্রতিটা মোড় ঘুরার আগে আমি আন্দাজ করার চেষ্টা করতাম জনতার সংখ্যা আনুমানিক কত। আশেপাশে উঁচু বিল্ডিং কেমন আছে? সেইখান থেকে টার্জেট হিসেবে জনতাকে ফায়ার করা কতটা পসিবল? জানি, ভাগ্য খণ্ডানোর উপায় নাই। কিন্তু এইটা আমার ব্যক্তিগত সেইফটির জন্য মাথায় কাজ করত। হ্যাঁ, তাতে রাস্তায় না বের হওয়াটাই সবচেয়ে সেইফ। কিন্তু ঐযে, আমার দুইটা শিশু সন্তান। ওরা একদিন হয়তো জিজ্ঞাসা করবে, বাবা, তুমি তখন কী করছিলা যখন তোমার অন্য ভাইয়েরা গুলি খাচ্ছিল? জালিম আর মজলুমের লড়াইতে কোনো গ্রে এরিয়া নেই। আজ আমি রাস্তায় নামব নাকি আরও ১০/১৫/২০ বছর পরে আমার সন্তান রাস্তায় নেমে গুলি খাবে সেইটাও একটা সচেতন চয়েস। স্নাইপারওয়ালারা নিজেদের সেইফটির কথা ভেবে বড় জমায়েতে ১/২০০-৪/৫০০ মিটারের মাঝে ফায়ার করবে না, যেখানে নিজেরা রিস্কে থাকবে, সেইটাও আমার আইডিয়া। ফলে নিজেকে বুঝানো সহজ ছিল।

৪ তারিখ সন্ধ্যা থেকে ফোন। আম্মা, আব্বা, ছোট ফুফু, আমার মামা, আমার আম্মার মামা, প্রবাসী খালা, শ্বশুরবাড়ির দিকের আত্মীয়…। সবার কথা একটাই। আমি যেন পরের দিন বাইরে বের না হই। অনেকে আমার বউকে কল দিয়েছে। আমার কপাল ভাল যে ওর কাছে আসা কল থেকে আমার কাছে কোনো মেসেজ পৌঁছে দেয় নাই। রাতে ঘুমাতে দেরি হয়েছে। ২/৩ টার দিকে ঘুমিয়ে আবার ভোরে জেগে গেছি। ফজরের নামাজ পড়ে আরও দুই রাকাত নফল নামাজ পড়লাম। লম্বা সিজদায় প্রাণ ভিক্ষা চাইলাম আল্লাহর কাছে। স্ত্রী সন্তানের কাছে সুস্থ শরীরে ফিরে আসতে পারার সৌভাগ্য চাইলাম। এই বয়সে এসে আমার বাবা-মাকে যেন সন্তান হারানোর কষ্ট সহ্য করতে না হয় মালিক। এর মাঝে বেশ গুঁড়িগুঁড়ি বা তার একটু অধিক বৃষ্টি। এই বৃষ্টি কি আন্দোলনের আগুন ভিজিয়ে দিবে নাকি?

পরিচিত ছোটভাই সাকিবকে কল করলাম। গত কয়েকদিনে ওর সাথেই ঘুরাঘুরি করেছি। জিজ্ঞাসা করলাম ও শাহবাগ যাবে কি না। ওর বাসা হাজারিবাগ। আমি থাকি আজিমপুর। পিলখানার ৩ নাম্বার গেইটের কাছে। পিলখানার পাশে হওয়ায় গত কিছুদিনে গাড়ি ভর্তি বর্ডার গার্ডদের অস্ত্র সজ্জিত হয়ে যুদ্ধসাজে নিজ দেশের মানুষ মারতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে আসা যাওয়ার দৃশ্যে আমি অভ্যস্ত হয়ে গেছি ততদিনে। সীমান্তে ফেলানিদের বাঁচানো বা লাশ উদ্ধারের বেশি কিছু করার অকাদ নাই, এইখানে রাজধানীতে আসছে নিরস্ত্র মানূষ মারতে। নিজের দেশের মানুষ। রাস্তার দুইপাশের মানুষ ঘৃণাভরা চোখে ওদের দেখত। যেই ঘৃণায় ওদের কিছু আসে যায় বলে মনে হতো না। পিলখানার কাছে হওয়াতে এই এলাকায় ক্যাজুয়াল্টি বেশি। আমার বাচ্চাদের যেই ছেলে পড়াতো, ঢাকা কলেজের স্টুডেন্ট। আজিমপুরে একটা মেসে থাকে। ওদের মেসে ছাত্রলীগ আর পুলিশ এক রাতে একসাথে হামলা করে। দরজা ভাঙতে পারলে জানে মেরে ফেলবে এমন সিচুয়েশোনে কল দিয়েছিল আমাকে। আমি বলি ভেতরে যারা আছ সবাই হাতে যা পাও নিয়ে অপেক্ষা করো। নিচের মেইন গেট আর তোমাদের দরজা যদি ভেঙেই ফেলে তাহলে নিজেরাি নিজেদের রক্ষা করার ট্রাই করো। সকাল পর্যন্ত বেঁচে থাকলে আকাশ পরিস্কার হলে আমার বাসায় চলে আসো। ছেলেটা ভোরে আমার বাসায় এসেছিল। ৪/৫ দিন লুকিয়ে ছিল। বাচ্চাদের স্কুলের আরেক মিসের কাছে শুনেছিলাম পরে যে নিচে পুলিশ, বিজিবি আর উপরে হেলিকপ্টার থেকে টার্গেট করে করে কোথাও বাসার গেইটে, কোথাও ছাদে শ্যুট করে করে মেরেছে ছাত্রদের। ঢাকা কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছাকাছি হওয়াতে এই এলাকায় প্রচুর স্টুডেন্টদের বসবাস। পাশে বিল্ডিং কন্সট্রাকশনের কাজ করা লেবারদের মোবাইলে দেখেছি আসা যাওয়ার পথেও টার্গেট প্র‍্যাকটিস করে মেরে ফেলা ডেড বডির তাজা রক্তের ভিডিও। শুরুর দিকে মেরে ডেডবডি ফেলে রেখে যেত। সময় যত গেছে, জেনেছি ওরা ডেডবডি আর ফেলে রেখে যাচ্ছেনা। ফলে মৃতদেহের কোনো ট্র‍্যাক নাই, রেকর্ড নাই। আমাদেএ ভাইদের দেহ আর কোনো সংখ্যাও না। অনুমান মাত্র।

যাই হোক। সাকিব জানালো ও বের হবে। আমি যেন অপেক্ষা করি। যেহেতু ও হাজারিবাগ থেকে রওয়ানা দিয়ে আজিমপুর আসবে, ফলে আমি গোসল করে আজিমপুর কবরস্থানের সুপার মার্কেটের দিকে এগিয়ে গেলাম। সকাল ৭/৮ টার দিকে আমার বন্ধু কানাডা প্রবাসী রাব্বী কল করেছিল। তখনো ইন্টারনেট ছিল। বলল, দোস্ত আমি জানি তুই বের হবি। তাই তোর বিকাশে কিছু টাকা পাঠালাম। বাইরে গেলে খাবার বা পানি যা লাগে নিজের বা অন্যদের, খরচ করিস। পরে অবশ্য সেই টাকার বেশিরভাগ আমি খরচ করেছি শাহবাগ মোড়ে বিকাশ থেকে কোড চেপে থেকে মানুষের মোবাইলে রিচার্জ করে দিয়ে। যারা বাইরে বের হয়েছিল, অনেকের মোবাইলেই টাকা ছিল না। সাথে অন্য কিছু খরচ ছিল। মানুষ যে যেভাবে পেরেছে নিজের অবস্থা থেকে হেল্প করেছি। এই আন্দোলন যে কীভাবে গণমানুষের হয়ে উঠেছিল সেটা বারবার দেখেছি। কোনো জমায়েতে যখন কারও হাতের বোতলে এক ঢোঁক পানি আছে, সেটাও যখন কেউ চেয়েছে, একজনকেও দেখিনি কাউকে কেউ কাছে থাকা সর্বশেষ ঢোঁক পানি না দিয়ে রিজেক্ট করেছে।

কিছুক্ষণ পরে বন্ধু রাসেল কল দিল। বলল ওর ব্যাচের বুয়েটিয়ান বন্ধুরা বুয়েট শহীদ মিনারে আসবে। ও বের হবে। আমি গেলে দেখা হবে। আমি খুব অবাক হয়েছিলাম। রাসেল আমাদের ব্যাচের পোলাপানদের মধ্যে ওয়ান অব দ্য মোস্ট ব্রিলিয়ান্ট। মানে শেরপুর থেকে আমরা যেই ব্যাচ বিভিন্ন ইউনিভার্সিটিতে জায়গা করে নিয়ে একসাথে ঘর ছেড়েছিলাম ইন্টারের পরে। স্কুল কলেজ আমলের দোস্তি। বুয়েট সিএসই। স্মার্ট প্রোগ্রামার। এক্সাক্ট ফিগার জানিনা, তবে সিক্স ডিজিট ড্র করে নিশ্চিত। ভাবি ডাক্তার। একটা ছেলে, হাঁটতে পারে। কথা বলা শিখেছে কিছু। কোনো যুক্তিতেই ওর বের হওয়ার হিসাব মিলাতে পারলাম না। বললাম আমি বেরোচ্ছি। বের হয়ে কল দিব। তারপরে তুই বের হইস। মেডিকেল মোড়ে পুলিশের শক্ত ব্যারিকেড থাকাও ও ঘন্টাখানেক বাইরে ঘুরাঘুরি করেও শেষ বুয়েটে আসতে পারে নাই শেষ পর্যন্ত।

সকাল থেকে আম্মার কল রিসিভ করা অফ করে দিয়েছি। বসায় শ্বশুর, শাশুড়ি ছিলেন। তাঁদের এডিয়ে গেলাম। আমি বের হয়ে আজিমপুর কবরস্থানের দিকে এগোলাম। সাকিব বলেছে ও রিক্সা নিয়ে আসবে। অপেক্ষা করছি। বের হওয়ার সময় চুপচাপ বের হলাম। বাচ্চা দুইটার কপালে চুমা দিলাম। বউয়ের চোখের দিকে তাকানোর সাহস ছিল না। সাকিব একটা ব্যাটারি রিক্সা নিয়ে আসলো। একেবারে শাহবাগ পর্যন্ত ঠিক করা। আজিমপুর বাস স্ট্যান্ড পার হয়ে পলাশী। সেখানে দেখি কিছু মানুষ জড়ো হয়ে আছে। শ্লোগান দিচ্ছে। পলাশির মোড় হলো ৫ টা রাস্তার মোড়। পলাশী থেকে নীলক্ষেতের দিকে আর্মি ব্যারিকেড দিয়ে আছে। বাকি ৪ দিক খোলা। এগিয়ে গেলাম। শহীদমিনার হয়ে যাব ভাবলাম। জগন্নাথ হল গেইটের কাছে আসতে দেখলাম বুয়েট, ঢাকা মেডিকেল আর বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্ডার যেখানে, শহীদ মিনারের সামনে সেখানে পুলিশের ব্যারিকেড। রিক্সাওয়ালা, পথচারি দুয়েকজনকে জিজ্ঞাসা করে জানলাম সকালেও গোলাগুলি হয়েছে শহীদ মিনারে। দুই জন মারা গেছে শুনলাম।

পুলিশ হারামজাদাদের ভরসা নেই, রিক্সা দাঁড়াতে বললাম। কিছুক্ষণ দাড়িয়ে রিক্সা পিছিয়ে ফুলার রোড দিয়ে টিএসসি হয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। বৃটিশ কাউন্সিলের গেইট পেরিয়েইও দেখি ভিসির বাসভবনের পরে পুলিশের ব্যারিকেড। রিক্সাকে বললাম ওদিকে যাওয়ার দরকার নাই। নীলক্ষেত দিয়ে কাঁটাবন হয়ে শাহবগ যাও। বামে ঘুরে দেখি নীলক্ষেতের মোড়ে পুলিশের ব্যারিকেড। চুপচাপ দোয়া পড়ে ভাবতেছি যেই রাস্তায় এসেছি, সেই রাস্তায় ফেরত যাই।

মনে হচ্ছিল যেহেতু দুইটা ব্যারিকেডের পুলিশের রেঞ্জে আছি, বাঁচলে হয়। সূরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসী আর কালিমা শাহাদাত এই তিনটা রিপিট করতেছি মনে মনে। আলহামদুলিল্লাহ, পলাশী পৌছালাম। সেখানে আগের থেকে লোক কিছু বেড়েছে। আপাতত সেখানেই অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিলাম আমি আর সাকিব। পরিচিত কিছু মুখও দেখলাম। রাখাল রাহা এই আন্দোলনে এবং আগে থেকেই খুনি হাসিনার শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে কথা বলে সরকারের ব্ল্যাক লিস্টে। তাঁকে দেখলাম একটা ব্যানার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। সাথে তার সার্কেলের দুই/তিন জন। এছাড়াও আরও অনেক নাম না জানা লোক। মানুষ বাড়ে, শ্লোগানের আওয়াজ পোক্ত হয়।

এর মাঝেই মিলিটারিদের একজন জড়ো হওয়া লোকদের কয়েকজনকে ডেকে বলল, আপ্নারা এখানেই থাকেন। যথেষ্ট মানুষ না হলে এখান থেকে মুভ করবেন না। কারণ এখানে আর্মি আছে ওরা গুলি করবে না। কিন্তু আর্মি না থাকলে অন্য কোনো ফোর্স কী করবে সেটা ওদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। এর মাঝে দেখলাম একটা লোক আর্মির এগেন্সটে শ্লোগান দিয়ে আজেবাজে কথা বলে পাবলিককে খেপিয়ে তোলার চেষ্টা করছে। রাখাল রাহার সাথে থাকা একজন ভদ্রমহিলা সেটা এড্রেস করে তাকে থামালেন। আমি বুঝলাম এই লোক স্যাবোটাজের ট্রাই করতেছে। এইখানে আর্মিকে খেপিয়ে পাবলিকের উপর এটাক করাতে পারলে বা পাবলিককে খেপিয়ে আর্মির উপরে চড়াও করাতে পারলে অনেকেরই বিশাল ফায়দা হবে। এি লোক হলো খুনিদের দলের সাজানো গুটি। কিন্তু জমায়েত হওয়া লোকজন খুব সেন্সেবিলিটির পরিচয় দিয়েছে। কোনো উস্কানীতে পা দেয় নাই। এর মাঝে দুয়েকবার বিস্কুট আর পানির কার্টন থেকে সবাইকে পানি বিস্কুট বিতরণ করা হলো। কে দিচ্ছে জানিনা। জানা গুরুত্বপূর্ণও না। গত কয়েকদিনে এইসবে অভ্যস্ত হয়ে গেছি।

এর মাঝেি কয়েকজনের সাথে পরিচয় হলো। আমার ক্যাম্পাস জগন্নাথের এক ছোট ভাই। ডিপার্টমেন্ট মনে নাই। তবে আমার প্রায় ১৪/১৫ বছরের জুনিয়র, রানিং স্টুডেন্ট, ওর সাথে কথা হলো। পুরো পলাশী মোড় জুড়ে তখন জমায়েত ৫০/১০০ ছাড়িয়ে আনুমানিক ৩০০/৪০০+। অনেকের সাথেই কথা হচ্ছে আশেপাশের। বিভিন্ন জায়গার খবর আসতেছে। নারায়নগঞ্জ, শনির আখড়া, যাত্রাবাড়ি থেকে রওয়ানা করা লাখের উপরে মানুষ যাত্রাবাড়ীতে আটকে আছে। একইভাবে উত্তরা, খিলগাঁও, সাভার, বসুন্ধরা, কেরানীগঞ্জ বিভিন্ন জায়গার লোক কোনো না কোনো ব্যারিকেডে আটকা। মনে হচ্ছিল একটা টিপিং পয়েন্টের খুব কাছে আমরা। একবার কোথাও একটা ব্যারিকেড ভেঙে ফেললে আটকানোর ক্ষমতা কারও নাই। চা খেতে খেতে ৪/৫ জনের সাথে কথা হলো। এরা কেউ স্টুডেন্ট না। প্রাইভেট জব করে। কিছু পাওয়ার নাই, খোয়ানোর স্টেক অনেক বড়। কারও কারও বাসায় স্ত্রী, শিশু সন্তান, কারও বৃদ্ধ বাবা-মা। একটু পরে সবাই আশেপাশের গাছের ডাল ভাঙা শুরু করল। উদ্দেশ্য, শাহবাগ রওয়ানা করব। এক চাওয়ালা, যে এতক্ষণ আমাদের কাছে চা বিক্রি করছিল, সে তার বসার টূল ভেঙে ফেলল। টুলের চারটা পায়া এনে রাস্তায় ফেলে বলল “লাডি লাগলে লন’। আমি সেখান থেকে একটা নিলাম।

দল বেঁধে আগাচ্ছি। ছাড়াছাড়াভাবে প্রায় ১০০ মিটার মতো লম্বা হবে। আমি সাকিব পাশাপাশি। সাকিবের বাসায়ও জানেনা যে ও শাহবাগে যাবে। ছেলেটা এক মেসে থাকে। বাড়ি কক্সবাজার। ইন্টেলিজেন্ট ছেলে। প্রাইভেট সেক্টরে একটা জব করছে। ওর বের হওয়ার প্রতি কঠোর নিষেধাজ্ঞা। কেবল একজন বড় ভাবিকে জানিয়েছে ও। শাহবাগ যাওয়ার সময়ে যেই দলের সাথে যাচ্ছি তাঁদের মোটামুটি মাঝামাঝি থাকার চেষ্টা করলাম। যেন কোনো দিক থেকে আক্রমণ করলে একেবারে টের পাওয়ার আগেই শুয়ে না পড়ি। ব্রিটীশ কাউন্সিলের সামনে এক স্টুডেন্ট নেতা গোছের কেউ হবে টাইপ ভাব নিয়ে আমাদের থামানোর চেষ্টা করল। বলতেছে, ওরা স্টুডেন্ট লিডার।ওদের কাছে ইনফরমেশন আছে। এখন যাওয়া যাবে না। আমজনতা কেউ শুনল না। ডু ওর ডাই ম্যাচ। টিএসসিতে পৌছে দেখি অন্যান্য রাস্তা দিয়েও লোকজন আসছে। আশ্চর্যের বিষয় হলো সকালের দেখা পুলিশের ব্যারিকেড এখন দেখলাম না কোথাও। ব্যাপারটা আশাবাদী করার মতো। তবে চূড়ান্ত কোনো ভাল সংবাদের আগে কোনো বিশ্বাস নাই হারামজাদাদের। (***পরে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জেনেছি অধিকাংশ জায়গাতে পুলিশের এম্যুনিশন শেষ হয়ে গিয়েছিল। ফলে জায়গা ছেড়ে দেওয়ার কোনো বিকল্প ছিল না)

শাহবাগ গিয়ে দেখি, রাস্তার দুই পাশে একদিকে জাদুঘরের সামনে, আরেকদিকে শাহবাগ থানার সামনে দুই পাশেই দুই সারিতে প্রথমে আর্মি, পিছনে পুলিশ দাঁড়ানো। আর্মি সবার হাত থেকে লাঠিসোঁটা নিয়ে নিচ্ছে। দিব কি না ভাবতে ভাবতে মনে হলো, বুলেটের সামনে লাঠি আসলে কোনো কাজের জিনিস না। যদিও মনে একটু সাহস বাড়ে, কিন্তু ফায়দা বিশেষ নাই। দিয়ে দেওয়াই যায়। আর্মিরাও খুব ভদ্র ভাষায় রিকোয়েস্ট করতেছিল। ফেলে দিলাম লাঠি। আমরা যখন গেলাম তখন শাহবাগে লোকের সংখ্যা ৩/৪ হাজারের বেশি হবে বলে মনে হলো না। বেশিরভাগ মানুষ বেশ বিপ্লবি কিন্তু চিল মুডে আছে মনে হলো। সাকিব বেশ খুশি। কিন্তু আমার সংসারি লোয়ার মিডল ক্লাস মন তখনো শান্ত না। ওভার ব্রিজে উঠে বুঝার চেষ্টা করলাম যেকোনো এক/দুই /তিন দিক থেকে ফায়ার করলে এইখানে যত মানুষ আছে, কিছু মারা যাবে, বাকিরাপালিয়ে যাবে। শাপলা চত্বরে হেফাজতের উপর এটাকের কথা মনে ভাসলো। শাহবাগের এই জায়গা খালি করতে ১৫ মিনিটের বেশি লাগবে না। ম্যাজিক দেখলাম পরের ১৫/২০/৩০ মিনিটে। ৩০-৫০ হাজার লোকের জমায়েত। মিনিটে কয়েক হাজার লোক আসতেছে। আমি তখন মোটামুটি নিশ্চিত, এইখানে ব্রাশ ফায়ার করে খালি করে দিবে এই ক্ষমতা এখন আর কারও নাই। মোড়ের মাঝেখানে লাউড স্পিকার বা মাইকের একটা ছোট ব্যবস্থা। কিছু নেতৃস্থানীয় স্টুডেন্ট সেখানে বক্তব্য দিচ্ছে। ইওনাদের অনেককে সম্ভবত পরে আমরা সমন্বয়ক হিসেবে জেনেছি। কে কে ছিল মনে নাই। তখন পর্যন্ত পরবর্তী পরিস্কার কোনো পদক্ষেপের ঘোষণা নাই। কিন্তু আমার আন্দাজ বলে, এখান থেকে গণভবনের দিকে রওয়ানা হওয়ার সিদ্ধান্ত দেওয়ার মাঝে কেবল একটা ঘোষণার অপেক্ষা। এর মাঝে বাসা থেকে ফোনের অত্যাচার তো আছেই। আম্মা নাকি তার ছেলের বউকে কল দিয়ে কানতেছে। আমারে কেন বের হইতে দিল?

আমি নিম্নমধ্যবিত্ত মন নিয়ে হিসাব মিলাতে চেষ্টা করলাম। আরও ঘন্টাখানেক পরে গণভবনের দিকে রওয়ানা করলে কয়েক লাখ লোক হবে। তাতে যদি অল আউট এটাক করে এসএসএফ বা মিলিটারি ও পুলিশ, শুরুতে ৫/১০/১৫ বা ৫০ হাজার অব্দি লোক আগের দিনের যুদ্ধে পদাতিক সৈন্যের মতো ফার্স্ট লাইন অব ডিফেন্স হিসেবে নির্ঘাত মারা পড়বে। কিন্তু পরের যারা থাকবে এরা কেউ কোনো ইউনিফর্ম পরা কারও একটা সুতা রাখবে না। হাসিনা সেইখানে থাকলে হাড় ছাড়া কোনো গোশত পাওয়া যাবে না ফর শিউর। ভিতু হিসেবে আমার কাজ হলো প্রথম ৫০ হাজারের মাঝে না থেকে একটু পিছনে থাকা।

এর মাঝে খবর, সেনাপ্রধান ভাষণ দিবেন। তখন অনেকে হিসাব মিলিয়ে নিল। খেলা শেষ। নিশ্চিত হতে আমি আমার এক জ্ঞানী দোস্ত জিয়ন-কে কল দিলাম। ও বলল প্রটোকল ভেঙে এই ভাষণ দেওয়ার মানে হলো খেলা আসলেই শেষ। আমি কোথায় আছি জিজ্ঞাসা করে ও বলল, তুই থাক, আমি আসতেছি। শাহবাগের সেই জনসমুদ্রে আমরা একজন আরেকজনকে আর খুঁজেই পাইলাম না। এর একটু পরে শুধু একটাই কথা। পলাইছে রে পলাইছে। একজনের বুকে আরেকজন। আমি একটা পতাকা ধার করে সাকিবকে বললাম, আমার একটা ছবি তুইলা দাও। একটা স্মৃতি থাক। আমিও তুলে দিলাম ওর ছবি।

একটা কমন এনিমির এগেন্সটে আমরা নিরস্ত্র হয়েও যেই প্রতিরোধ দেখিয়েছিলাম, সেইটা অতুলনীয়। যখন ছেলেরা ব্যাকফুটে তখন মেয়েরা/বোনেরা, যখন পাবলিক ইউনির পোলাপান ব্যাকফুটে, তখন প্রাইভেটে ভাই বোনেরা…। যখন দেশের একটিভিস্টরা ডিসকানেক্টেড, তখন প্রবাসী এক্টিভিস্টরা, যখন একটিভিস্টরা একটূ স্তিমিত, তখন রেমিট্যান্স যোদ্ধারা…।

এই আন্দোলন ছিল একটা প্রকৃত গণ আন্দোলন। খুনি হাসিনা আর ওর দোসর বাদে প্রত্যেকটা মানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল এতে। বাংলাদেশকে এত বেশি করে নিজের এর আগে পরে আরও কোনোদিন আমাদের মনে হয় নাই। খুনি হাসিনা দেশটাকে ওর বাপের তালুক বানিয়ে রেখেছিল। আমরা ছিলাম প্রজা। নাগরিক হইতে পারি নাই। এই আন্দোলন আমাদেরকে নাগরিক হওয়ার একটা সুযোগ দিয়েছে। এখনকার লড়াইটা নাগরিক হওয়ার, একটা প্রপার রিপাবলিক তৈরির।

এই আন্দোলন নিয়ে কয়েকটা বইয়ের কাজ চলতেছে আমার। নিজের লেখা না। অন্যের। স্বরে অ থেকে আসবে। ক্ষুদ্র প্রকাশক হিসেবে আমি আর কিই বা করতে পারি। এই বিষয়ে আরও কেউ আগ্রহী থাকলে জানায়েন। অজ্ঞাতকুলশীল এক প্রকাশক হিসেবে ভবিষ্যতের জন্য কোনো অবদান রাখতে পারলে আমি নিজেকে ভাগ্যবান ভাবব।

কারফিউতে/ইন্টারনেট শাট ডাউনের সময়ে আমি এই দেশ নিয়ে যত স্বপ্নের কথা লিখে ডায়েরির পাতা ভরিয়েছি, তা থেকে বাংলাদেশপন্থী একটা পলিটিকাল পার্টির ম্যানিফেস্টো ঘোষণা করা যাইতে পারে বইলা আমার শক্ত বিশ্বাস।

আমি কথাসাহিত্যিক না। কিন্তু জুলাই ২৪ নিয়ে একটা উপন্যাস লিখব কোনোদিন, সেই আশা। বড় গোপন আশা।

আন্দোলন নিয়ে ৫ তারিখের আগের পরের আরও অনেক গল্প আছে। অনেকেরই আছে। স্বপ্ন বাস্তব হওয়ার গল্প আছে। আছে স্বপ্নভঙ্গের হতাশাও। প্রিয়জন হারানোর গল্প, অঙ্গপ্রত্যঙ্গ হারানোর গল্প। এর মাঝে আমরা শহীদদের মনে রাখব, আহতদের মর্যাদা দিব, সুচিকিৎসা দিব ইনশাআল্লাহ্‌।

জুলাই ২৪ আমরা মনে রাখব, ধারণ করব। ইনকিলাব জিন্দাবাদ।

The following two tabs change content below.
Avatar photo

আবু বকর সিদ্দিক রাজু

প্রো-বাংলাদেশি, মুসলিম, ফাদার, বুক পাবলিশার। ফাউন্ডার @ স্বরে 'অ' - Swore 'O'
Avatar photo

Latest posts by আবু বকর সিদ্দিক রাজু (see all)

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →