Main menu

তর্ক: “আসল কোরান কোথায়?” (১৮৯২) – মুনশি মোহাম্মদ মেহেরুল্লা ও পাদ্রী জমিরউদ্দিন Featured

[১৮ শতকের শুরুর দিকে বাংলা ভাষায় বই ছাপানো শুরু হইলেও, শেষের দিকে আইসা এইটা ছড়াইতে থাকে; তো, বই হিসাবে ধর্মিয় পুস্তকই বেশি ছাপা হইতো পত্রিকার বাইরে, স্পেশালি খ্রিষ্টধর্মের উপদেশ বানী… এর ফলে ব্রাহ্মণদের (এবং অন্য জাতের হিন্দুদের) খ্রিষ্টান হওয়ার ঘটনা যে বাড়তেছিল – তা না, মুসলমানদের ভিতরেও খ্রিষ্টান হওয়ার ট্রেন্ড শুরু হইতেছিল…

অই সময়ের একজন খ্রিষ্টান, পাদ্রী জমিরউদ্দিন শেখ (যিনি মুসলমান থিকা খ্রিষ্টান হইছিলেন) “ খ্রীস্টীয় বান্ধব” নামের মাসিক পত্রিকায় কোরানের বিষয়ে লেখেন যে, কোরান তো আসল না! তখন মুন্সি মেহেরুল্লাহ এর জবাব দেন মাসিক “ সুধাকর” পত্রিকায়; এর পরে আরো এক দফা উনাদের তর্ক চলে, এবং জমিরউদ্দিন (১৮৭০ – ১৯৩৭) খ্রিষ্ট-ধর্ম বাদ দিয়া ইসলাম ধর্মে ফিরা আসেন, কিছু বইও লেখেন… এরপরে মুন্সি মেহেরুল্লাহ (১৮৬১ – ১৯০৭) কাল্ট ফিগারে পরিনত হন, বেশ কিছু বই উনি লেখেন এবং ইসলাম ধর্ম বিষয়ে এক্টিভিজমও করেন

এই তর্কের টেক্সট’টা শেখ হবিবর রহমানের লেখা “ কর্ম্মবীর মুনশী মেহেরুল্লা” (১৯৩৪) থিকা নেয়া হইছে; তর্কের বাইরেও বাংলা-ভাষার হিস্ট্রিকাল রেফারেন্স হিসাবেও এইটা পড়া যাইতে পারে]

এক.

১৮৯২ সালের জুন মাসের “খ্রীষ্টীয় বান্ধব” নামের মাসিক পত্রিকায় এই লেখাটা ছাপা হয়:

“আসল কোরান কোথায়?”

আমরা যখন মুসলমানদের নিকট সুসমাচার প্রচার করি, তখন অনেক মুসলমানেই কহিয়া থাকেন যে, ‘আপনাদের ধর্মশাস্ত্র পরিবর্তিত হইয়াছে। কিন্তু আমাদের কোরান কখনই পরিবর্তিত হয় নাই। খোদাতা’লা মোহাম্মদ (দঃ) এর উপর যাহা নাজেল করিয়াছিলেন অদ্যাপি অবিকল তাহাই রহিয়াছে।” আমাদের ধর্মশাস্ত্র যে কখন পরিবর্তিত হয় ‘নাই, একথা মুসলমানদিগকে অনেক পুস্তকে লিখিয়াছি। ……… যিনি মুসলমান শাস্ত্রে অজ্ঞ, তিনিই বলেন যে, কোরান কখনই পরিবর্তিত হয় নাই। আমরা মুসলমানদিগের হাদিছ এবং অন্যান্য ধর্মগ্রন্থ হইতে প্রমাণ দিতেছি যে, আসল কোরান বিকৃত ও পরিবর্তিত হইয়াছে। সুতরাং
মুসলমানদিগের হস্তে এখন আসল কোরান নাই।

(১) কোরান মোহাম্মদ (দঃ) এর সময় একত্র সংগৃহীত হয় নাই। দেখ – “তিমিক্তি” – সুন্নী মুসলমানদিগের হাদিছ।

(২) মোহাম্মদ (দঃ) এর মৃত্যুর পর খলিফা আবুবকর (রাজিঃ) জয়েদ দ্বারা কোরান শরিফের সুরাগুলি একত্র এবং শৃঙ্খলাবদ্ধ করিয়াছিলেন। দেখ – “বোখারী” গ্রন্থে।

(৩) ওসমান (রাজিঃ) দুইবার কোরান দগ্ধ করেন। দেখ – “মেশ কাত উল মশাবী”।

(৪) শিয়া সম্প্রদায় কহিতেছেন যে, কোরানে আলীর (রাজিঃ) এবং তাঁহার বংশের মাহাত্ম্যের বিষয় অনেক কথা লেখা ছিল। কিন্তু কাফের ওসমান (রাজিঃ) তাহা কোরান শরিফ হইতে উদ্ধৃত করিয়া দগ্ধ করিয়া ফেলিয়া দিলেন। দেখ – “নহল আলবালাগত” এবং শিয়াদিগের হাদিছ। কলিকাতা, দিল্লী, এলাহাবাদ প্রভৃতি ভারতের নানা নগরে শিয়াগণ বাস করিতেছেন, তাঁহাদিগকে একবার জিজ্ঞাসা কর।

(৫) এমাম জাফর কহিতেছেন যে, – সুরা আহজাবে কোরেশের স্ত্রী ও পুরুষের ভ্রষ্টতার বিষয় বর্ণিত ছিল; ঐ সুরাটি সুরা বকর হইতে বড়। দেখ – “আইনুল হক” গ্রন্থের দুই শত আট ওরকের দ্বিতীয় পৃষ্ঠা। আনিস এবনে মালিক কহিতেছেন, যখন আর্মিনিয়ায় সুরীয় দেশের লোকদিগের সহিত আজার মিজান ইরাফ লোকদিগের যুদ্ধ হইতেছিল, তখন হাফিজা এবনে ইমাম ওসমানের (রাজিঃ) নিকট আসিয়া কোরান পাঠকের পাঠে অমিল হইবে এইরূপ ভয় করিয়া কহিল, – হে বিশ্বাসী লোকের পথ- প্রদর্শক, শিষ্যদিগের তথ্য লউন। পাছে তাহারা ইহুদী ও নাছারাদিগের নায় শাস্ত্রে গোলযোগ উৎপন্ন করে। তাহাতে ওসমান (রাজিঃ) হাফিজার (মোহাম্মদ (দঃ) এর স্ত্রী) নিকট লোক প্রেরণ করিয়া কহিলেন যে, তুমি কোরানের হস্তলিপিখানি আমার নিকট পাঠাইয়া দাও। আমরা নকল করিয়া ইহা তোমার নিকট পুনরায় পাঠাইয়া দিব। তখন ওসমান (রাজিঃ) জৈয়দ এবনে শাবিৎ, ‘আবদুল্লা এবনে জবির এবং হারিৎ এবনে ইমাম এই তিনজনকে আদেশ দিলেন যে, তোমরা উহা নকল কর। তাহারা উহা নকল করিলেন। আর ওসমান (রাজিঃ) উক্ত তিনজনকে কহিলেন, – যখন তোমাদের এবং জায়েদের কোরানের সঙ্গে পরস্পর অমিল হইবে, তখন তাহা কোরেশের ভাষায় লিখিও। কারণ কোরান এই ভাষায় নাজেল হইয়াছে। তাঁহারা ঠিক সেইরূপ করিলেন। খাতাটা নকল হইয়া গেলে, ওসমান (রাজিঃ) পুনরায় তাহা জয়েদের নিকট পাঠাইয়া দিলেন। আর যাহা লেখা হইল, তাহার এক একখানি প্রতিলিপি নানা প্রদেশে পাঠাইয়া দেওয়া হইল এবং পূর্ব্বকার যত খাতা ছিল, তাহা দগ্ধ কবিবার আদেশ দিলেন। দেখ, -বোখারী-সুন্নিদিগের হাদিছ গ্রন্থ।

(৬) সকল মোসলমানই জানেন যে, মোহাম্মদ (দঃ) স্বয়ং নিরক্ষর অর্থাৎ বিদ্যাহীন লোক ছিলেন। উক্ত আছে যে, যখন কোরানের আয়েত সকল মোহাম্মদ (দঃ) এর উপর নাজেল হইত, তখন হাফেজেরা তাহা মুখস্থ করিয়া রাখিত। আবার কখন কখন চর্ম্মে, খোরমা-পত্র প্রভৃতি বস্তুতে লিখিয়া একটা বাক্সেতে ফেলিয়া রাখা হইত। যাহা লিখিত হইত, তাহা মুখস্থ হইত না, আবার যাহা মুখস্থ হইত তাহা লিখিত হইত না। এই প্রকারে ২৩ বৎসর মধ্যে কোরান নাজেল শেষ হয়। সকলেই জানেন, মুখস্থ করা অনেক সময় বেঠিক হইয়া থাকে। হাফেজেরা ভুল করিলে মোহাম্মদ (দঃ) এর ধরিবার সাধ্য ছিল না। ইহাতে দেখা যাইতেছে যে, নিশ্চয় আসল কোরান এখন নাই। এখনকার মুসলমানদিগের হস্তে যাহা আছে, তাহা নকল এবং সংশোধিত কোরান। আমরা এ-সম্বন্ধে আরও অনেক প্রমাণ দিতে পারি, কিন্তু অধিক লেখা বাহুল্যমাত্র এবং “খ্রীষ্টীয় বান্ধব” সম্পাদক মহাশয়ের অনুরোধ এই, “প্রবন্ধটা যেন অতিশয় দীর্ঘ না হয়।” অতএব আমরা এখন মুসলমানদিগের নিকট উক্ত ছয়টা প্রমাণ প্রদর্শন করিয়া নিঃসন্দেহে জিজ্ঞাসা করিতে পারি, আপনাদিগের আসল কোরান শরিফ কোথায়?

মাদ্রাছায়ে ইলমে ইলাহী } শ্রীজন্ জমিরুদ্দীন শেখ
এলাহাবাদ
৪-৪-৯২

[আসল কোরান কোথায়? প্রবন্ধের প্রুফ দেখার পরে কয়েকটা ভুল থাকে। পরে ১৮৯২ সালের জুলাই মাসের খ্রীষ্টীয় বান্ধবে এই কারেকশন ছাপা হয়]

আসল কোরান কোথায়?
ভ্রম সংশোধন-

“তালিম মহম্মদ” স্থানে “তালিম মহম্মদী”, “তীৰ্ম্মিক্তি” স্থানে “তীমিজি”, “মিশকাউল মাবি” স্থানে-“মিশকাতউল মশাবী”, “নহল আলবলায়েত” স্থানে “নহল আলবলাগত” হইবে।

অনুগ্রহ পূর্বক সংশোধন করিবেন, নতুবা অনেক গোলযোগ হইবার সম্ভাবনা।

জে, জে, শেখ
এলাহাবাদ।


দুই.

মুন্সী মোহাম্মদ মেহেরুল্লা সুধাকর পত্রিকায় এই লেখাটা লেখেন :


ইসাই বা খ্রীষ্টানী ধোকা ভঞ্জন

(সুধাকর সম্পাদকের প্রতি)।

পরম শ্রদ্ধাস্পদ ও মহামান্য সম্পাদক সাহেব! নিম্নোক্ত বিষয়টা আপনার সুবিখ্যাত পত্রিকায় প্রকাশ করতঃ বিজাতীয় আক্রমণের প্রতীকার ও ইসলাম সমাজের ব্যথিত-হৃদয় আনন্দিত করিবেন। বিষয়টী এই:-

বিগত ১৮৯২ সালের জুন মাসের “খ্রীষ্টীয় বান্ধব” পত্রিকার ১৩০ পৃষ্ঠায় ‘আসল কোরান কোথায়’ শীর্ষক ধোকাপূর্ণ একটি সুদীর্ঘ প্রবন্ধ মুদ্রিত হইয়াছে। উহার লেখক জন্ জমিরুদ্দীন শেখ মহাশয় পাত্রী ফাণ্ডার কৃত মিজানউল-হক ও (উর্দু) পাদ্রী আমানুদ্দীন প্রণীত ‘তালিমে মোহাম্মদী (উর্দু) এবং পাদ্রী য্যাকব কান্তিনাথ বিশ্বাস কৃত ‘এসলাম দর্শন’ (বাঙ্গালা) ইত্যাদি গ্রন্থসমূহের আশ্রয় লইয়া সংশয়শূন্য মহাকোরানের প্রতি অযথা আক্রমণ ও ব্যঙ্গোক্তি করিয়া বোধকরি ইসাই সমাজের ‘ট্যাংরা বাবুদের’ নিকট অগণ্য ধন্যবাদও পাইয়াছেন। তিনি উক্ত গ্রন্থদ্বয় পাঠে ঈদৃশ চেতনাশূন্য হইয়া পড়িয়াছেন যে, ইসাই শাস্ত্রের সত্যতা ও ইসলাম শাস্ত্রের অসত্যতা প্রমাণ দর্শাইবার জন্যই সমুদয় মুসলমান ভাইকেই ঐ পুস্তক পাঠ করিতে অনুরোধ করিয়াছেন। আমরা বলি ভায়া! ইহার অনেকদিন পূর্ব্বে মুসলমানগণ উহা পাঠ করিয়াছেন। যেদিন খৃষ্টানদিগের তর্কবাগীশ মুরব্বী ফাণ্ডার সাহেব ‘মিজান-উল-হক’ জনসমাজে প্রকাশ করিলেন, তাহার পরদিনই ত মুসলমান ধর্মবীর স্বর্গীয় মওলানা রহমতুল্লা মরহুম উহার দান্দানশেকেন্ত প্রতিবাদ (‘রদ্দে মিজানউল মিজান’) এজাযে ইছুবি’ (১) নামক গ্রন্থদ্বয়) প্রচার করিয়াছিলেন। উক্ত প্রতিবাদগ্রন্থ প্রকাশিত হইলেও ফাণ্ডার সাহেব অনেকদিন জীবিত ছিলেন, কিন্তু উহার বিরুদ্ধে টু শব্দটী করিতেও পাদ্রী সাহেবের শক্তি অপারগ ছিল। পাদ্রী আমাদুদ্দীন ও তৎপ্রণীত তালিমে মোহাম্মদী জন সাহেবের দ্বিতীয় আশ্রয়। কিন্তু কানপুর নিবাসী মৌলভী মোহাম্মদ আলি সাহেব কর্তৃক তাহার পুস্তকের যে কঠোর প্রতিবাদ হইয়াছে, শেখজীর নজরে তাহা কি (মিরাতুল একিন নামক গ্রন্থখানি) আজিও পড়ে নাই? যদিও বঙ্গীয় মুসলমানদিগের কাপুরুষতা ও নির্জীবতা হেতু পাদ্রী য্যাকব কান্তিনাথ বিশ্বাস কৃত ইসলাম দর্শনের প্রতিবাদ বঙ্গ ভাষায় আজিও সম্পাদিত হয় নাই, তথাপি উর্দু ও পাসি ভাষাতে উহায় শত শত প্রতিবাদ পুস্তক বর্ত্তমান এবং যেদিন তাহা বঙ্গভাষার সম্পন্ন হইবে, খোদা চাহেত সেদিন অতি নিকটবর্তী। দ্বিতীয়তঃ ইসলাম দর্শনে এমন কোন বিষয় নাই, যাহা পাদ্রী ফাণ্ডার সাহেব রচিত গ্রন্থ সমূহে মুদ্রিত করেন নাই এবং পাদ্রী ফাণ্ডারের এমন কোন প্রশ্নই নাই, ধর্মবীর মওলানা রহমতউল্লা সাহেব যাহার যুক্তি ও শাস্ত্র সঙ্গত ৪০টী করিয়া উত্তর না লিখিয়াছেন।

খ্রীষ্টভক্ত শেখ মহাশয় জগতের যাবতীয় কোরান বিশ্বাসী মুসলমানকে অজ্ঞ বা মূর্খ বলিতে কসুর করেন নাই। তিনি লিখিয়াছেন – ‘যিনি মুসলমান শাস্ত্রে অজ্ঞ তিনিই বলেন যে কোরান কখনও পরিবর্তিত হয় নাই’। আহা! খ্রীষ্টভক্তের কি অদ্ভুত শিক্ষা! নৈলে কি মহাশয়ের এত অভিজ্ঞতা? হায়! যে মহাকোরানের বিমলালোকে আজ ভূমণ্ডল আলোকময়, খ্রীষ্ট শিষ্যের চক্ষে তাহা অন্ধকার কেন? সে দোষ কার? ঐ যে চৰ্ম্ম চটিকা দিবসে দেখিতে পায় না, সে জন্য সূর্য্যের কোন অপরাধ নাই। ইসাই ভাষার ওপ্রকার বাক-চাতুর্য্যে আমাদের মনঃক্ষুণ্ণ হইবার ত কোনই কারণ নাই; কেননা তাহাদের ধর্মশাস্ত্র বাইবেলে যখন সেই জগতকারণ করুণাময় বিশ্বপতি খোদাতা’লার প্রতি প্রলাপ, অজ্ঞ, দুর্ব্বল, নাদান এবং কমজোরি শব্দসমূহ ব্যবহৃত হইয়াছে (বাইবেল ১ম কর পুস্তক অধ্যায় ২৫ দেখ) তখন উক্ত শাস্ত্রধারিগণ সেই খোদা-প্রেমিক মুসলমানকে অজ্ঞ বলিবেন না কেন? যাক্ সে কথা; এখন ইসাই ভায়া ফাণ্ডারী ফণ্ড হইতে যে ৬টা ধোকা নকল করিয়া আবার সদর্পে উহার উত্তরপ্রার্থী হইয়াছেন পাঠক, কিঞ্চিৎ ধীরচিত্তে তাহার বাদ-প্রতিবাদ বিচার করুন।


উত্তর

প্রথম তিনটা প্রমাণ দ্বারা খৃষ্টান বন্ধুর কোন্ বাসনা পূর্ণ হইল, তাহা ত বুঝিলাম না। আমরাও স্বীকার করি, হজরতের বর্তমানে মহা কোরানের লিখিত অংশগুলি একত্র সংগৃহীত হয় নাই; সমুদয় কোরান ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে লেখা ছিল। কিন্তু মহা কোরানের কোন একটা অক্ষরও পরিবর্তিত হইতে না পারে, এই উদ্দেশ্যে হজরত স্বয়ং সহস্রাধিক হাফেজ (কোরান কণ্ঠস্থকারী) প্রস্তুত করিয়া স্বর্গধামে গমন করেন। শেখজী দ্বিতীয় ধোকাতে বোখারী হাদিছ শরিফের নাম করিয়া, উহার অর্থ প্রকাশের বেলায় ঘোমটার তলে মুখ লুকাইয়াছেন, নতুবা বিজ্ঞ পাঠকবর্গ শেখজীর নিজের লেখাতেই মহা কোরানের আসলত্বের প্রমাণ পাইতেন। পাঠকের কৌতূহল নিবারণার্থে জন্ সাহেবের মানিত হাদিছটীর মর্ম প্রকাশ করিতেছি, – খলিফা আবুবকরের (রাজিঃ) শাসনকালে যখন এমামার জেহাদে (ধৰ্ম্ম সংগ্রামে) বহুতর কোরানের হাফেজ ধর্মার্থে পঞ্চত্ব পাইতেছিলেন, সেই সময় মহাপুরুষ হজরত’ আবুবকর (রাজিঃ) ও হজরত ওমর (রাজিঃ) একত্রে এই পরামর্শ স্থির করিলেন যে, যদি অন্যান্য যুদ্ধে এই প্রকার হাফেজ শহিদ হন ও দেশ হাফেজশূন্য হয়, তবে ভবিষ্যতে সম্ভবতঃ কোরানের কোন অংশ গোলমাল হইলেও হইতে পারে; অতএব যাহাতে ঈদৃশ আশঙ্কা কোন সময়েই না থাকে, এখনই তাহার ব্যবস্থা করা দরকার। (এই পরামর্শানুযায়ী) তাঁহারা যুদ্ধস্থল হইতে সুলেখক জায়েদকে আহ্বান করতঃ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে খোরমাপত্র ইত্যাদিতে লিখিত সুরাগুলি উদ্ধৃত ও হাফেজদিগের দ্বারা উহা শৃঙ্খলাবদ্ধ করাইলেন। (১) [এই লিখিত কোরান শরিফখানি হজরত আবুবকরের (রাজিঃ) মৃত্যু অে হজরত ওমরের (রাজিঃ) নিকট এবং হজরত ওমরের (রাজিঃ) মৃত্যুর পর তাঁহার কন্যা হাফিজার। রাজিঃ) নিকট থাকে, এই হস্তলিখিত কোরানখানি আজিও বর্তমান আছে।] (বোখারী গ্রন্থ) প্রিয় পাঠক! খৃষ্টান সাহেবের মানিত হাদিছটাই আসলত্বের পাকা প্রমাণ কিনা তাহা বিচার করুন। মহা কোরানকে অক্ষুণ্ণ রাখিতে মুসলমান খলিফাগণ কতদূর তৎপর ছিলেন, উক্ত হাদিছটী তাহার জ্বলন্ত নিদর্শন।

তৃতীয় ধোকায় ইসাই সাহেব ওমানের (রাজিঃ) “কোরান দগ্ধ কোরান দগ্ধ” করিয়া হঠাৎ “মিশকাতুল মাবি” এই একটা উৎকট উৎভঙ্গি ও স্বীয় গৃহগঠিত নামের আবিষ্কার করিয়া ভয়ানক বীরত্ব প্রকাশ করিয়াছেন। কেননা আজিও ইসলাম-জগতে উক্ত নামে কোন গ্রন্থ নাই, তবে “মিশকাতুল মসাবি” নামক হাদিছ শরিফ আছে।* [মুদ্রাকরের ত্রুটীতে নামটি ছাপিতে ভুল হইয়াছিল এ-কথা পাদ্রী সাহেব পূর্ব্বেই প্রকাশ করিয়াছিলেন।] স্বয়ং সর্বশক্তিমান খোদাতা’লা যখন স্বীয় উক্তিতে বলিয়াছেন যে, আমিই কোরানের সংরক্ষক (সুরা হেজর-৯ আয়াত), তখন কোন্ মানুষের শক্তি যে, সেই কোরানকে দগ্ধ করিতে পারে? হজরত ওসমান (রাজিঃ) কি দগ্ধ করিয়াছেন তাহাও পাঠক শুনুন।

যে কোন কাগজ বা বৃক্ষপত্র হউক, যাহাতেই কোরানের আয়াত বা খোদাতা’লার নামাঙ্কিত থাকে, উহাকে যথোচিত সম্মান করা শাস্ত্রের দৃঢ় আদেশ; তাই যখন হজরত ওসমান (রাজিঃ) দেখিলেন যে, কোরানের বহুতর আয়াত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খোরমাপত্রাদিতে লিখিত আছে, এবং সমুদয় কোরানও এক্ষণে শৃঙ্খলাবদ্ধ হইয়া গিয়াছে, তখন তিনি ভাবিলেন যে, ঐ ক্ষুদ্র পত্রগুলির আর কোন আবশ্যকতা নাই, এবং পত্রগুলি সাবধানে রাখাও দুরূহ। কোনক্রমে যদি এগুলি কোন কদর্য্য স্থানে পড়িয়া বিনষ্ট হয়, তাহাও শাস্ত্রবিরুদ্ধ; সুতরাং পত্রগুলি দগ্ধ করিয়া ফেলিলে, আর সে আশঙ্কা থাকিবে না। এই উদ্দেশ্যে তিনি সেই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পত্রগুলি দগ্ধ করিবার আদেশ দেন। (মিশকাতুল মসাবি); এখন কোরান দগ্ধ, না খ্রীষ্টভক্তের দু’কাল দগ্ধ হইল, তাহা নিরপেক্ষ পাঠক- বর্গের বিচারাধীন।


শেখজীর চতুর্থ ধোকার উত্তর

(১) খ্রীষ্টভক্তকে আমরা ধন্যবাদ না দিয়া থাকিতে পারিলাম না; কেননা, ঝটাপট একটা ‘ইটাতল হাদিছের’ নামাবিষ্কার করাও ভারি অভিজ্ঞতার লক্ষণ। শিয়াদিগের মধ্যে উক্ত নামের কোন গ্রন্থই নাই; জন্ সাহেক যখন সেই নামটীর আবিষ্কারক, তখন তিনি অশেষ ধন্যবাদের পাত্র।

(২) শিয়াদিগের কোন প্রামাণিক পুস্তকেই হজরত ওসমানের (রাজিঃ) প্রতি “কাফের” শব্দ ব্যবহৃত হয় নাই, এবং আজিও কোন শিক্ষিত শিয়ার মুখ হইতে ঈদৃশ কুৎসিত বাক্য নির্গত হয় নাই। তবে যদি ভায়া কোনদিন কোন ষণ্ডা-গুণ্ডা শিয়ার মুখে এরূপ শুনিয়া থাকেন, তবে প্রোটেস্ট্যান্ট-গুরু পাদ্রী লুথারের প্রতি রোমান মণ্ডলীর সুধামাখা বোলগুলি স্মরণ করিতে অনুরোধ করি। কলিকাতা ও অন্যান্য, স্থানের রোমান খ্রীষ্টানদিগের নিকট তিনি জিজ্ঞাসা করিলে তাঁহারা একবাক্যে বলিবেন যে, পাদ্রী লুথার ও প্রোটেস্ট্যান্ট খ্রীষ্টানগণ বাইবেলের অনেক অংশ বাদ দিয়াছেন।

(৩) হজরত ওসমান (রাজিঃ) সম্বন্ধে শিয়াদিগের কোন প্রামাণিক গ্রন্থেই “কাফের” শব্দ ব্যবহৃত হয় নাই; বরং তাঁহার প্রতি শিয়াদিগের শিরোধার্য্য ও সর্ব্বপ্রধান “হেঞ্জাল বালাগ তাহ্” নামক গ্রন্থে কি লিখিত আছে তাহা দেখ – “খোদাতা’লার অনুগ্রহবর্ত্তক হজরত ওসমান (রাজিঃ) ও হজরত ওমরের (রাজিঃ) প্রতি, কেননা নিশ্চয় তাঁহারা বক্রপথের পথিকদিগকে সোজা ও সরল পথের পান্থ করিয়াছেন এবং কুসংস্কার সমূহকে সমূলে উচ্ছেদ করতঃ, সুসংস্কার ও দীনে-মোহাম্মদী বা সুন্নতকে প্রতিষ্ঠিত করিয়াছেন।” ‘কাশফল গামতাহ’ নামক গ্রন্থখানিতেও মহাপুরুষ ওসমান (রাজিঃ) সম্বন্ধে ঐ প্রকার বণিত আছে। শিয়াদিগের শিরোধার্য্য গ্রন্থসমূহে যখন মহাত্মা ওসমানের (রাজিঃ) প্রতি ঈদৃশ মাহাত্ম্যপূর্ণ বচনাবলী বর্তমান, তখন সেই শিয়াদিগের স্কন্ধে ভর করিয়া যদি কেহ হজরত ওস্নান (রাজিঃ)কে দোষী করিতে চান, সেটা তাঁহার বাতুলতা বা সারশূন্য ধোকা বই আর কি?


জন্ সাহেবের ৫ম ধোকা

“এমাম জাফর কহিতেছেন যে, সুরা আহযাবে কোরেশের পুরুষ ও স্ত্রীদিগের ভ্রষ্টতার বিষয় বর্ণিত ছিল। এ-সুরাটী সুরা বকর হইতে বড়।” দেখ – ‘আয়ন-উল-হক’ গ্রন্থের ২০৮ ওরক।

(১) ‘আয়ন-উল-হক’ নামক গ্রন্থে ঈদৃশ কোন কথা লেখা নাই। জনৈক বিকৃতমনা শিয়া ‘আয়নুল হায়াত’ নামক একখানি খামখেয়ালী পুস্তকে ঐরূপ ভিত্তি ও প্রমাণশূন্য কয়েকটা প্রলাপোক্তি করিয়াছিল সত্য; কিন্তু উক্ত পুস্তক প্রকাশ হওয়া মাত্রই যে স্বয়ং শিয়া পণ্ডিতগণই উহার কঠোর প্রতিবাদ ও সেই ভণ্ড শিয়াটীকে সম্পূর্ণ প্রতারক নির্দেশ করিয়াছিলেন, শেখ মহাশয় কি তাহা কখনই শুনেন নাই?

(২) কোরান সম্বন্ধে যে-কোন বিষয়ই হউক না কেন, প্রামাণিক হাদিছবিরুদ্ধ হইলেই তাহা অগ্রাহ্য; সুতরাং আয়নুল হায়াত-প্রণেতা যখন হাদিছ হইতে কোনই প্রমাণ দিতে পারেন নাই, তখন তাঁহার কথা বাতুলতা মাত্র।

(৩) আবু জাফর সাহেব কখনই ঐ কথা বলেন নাই, উহা সম্পূর্ণ সেই ভণ্ড শিয়াটীর প্রতারণা। আবু জাফর সাহেবের স্বরচিত গ্রন্থই এ-বিষয়ের জ্বলন্ত প্রমাণ প্রদর্শন করিতেছে। “এৎকাদাৎ” নামক যে গ্রন্থখানি আজিও শিয়া সম্প্রদায়ের শিরোধার্য্য, সেই গ্রন্থে তিনি স্বয়ং বলিয়াছেন যে, “কোরানের প্রতি আমার বিশ্বাস এইরূপ, – আল্লাহতা’লা স্বীয় প্রেরিত হজরত মোহাম্মদের (দঃ) প্রতি যে কোরান অবতীর্ণ (নাজেল) করিয়াছেন, তাহা দুইটা উৎকৃষ্ট প্রণালীতে (লিখিত ও কণ্ঠস্থ) বর্তমান লোকদিগের নিকট পাওয়া যায়। ইহা অপেক্ষা কম বা বেশী নয়। কিন্তু অন্যের নিকট সুরা আলামনাশরা ও অদ্দোহা পৃথক পৃথক দুইটি সুরা। উহা আমার বিবেচনায় (উভয় মিলিয়া) একটা সুরা। এতদ্ভিন্ন যে কেহ আমার সম্বন্ধে বলে যে আমি বলি, ‘কোরানে ইহা অপেক্ষা বেশী ছিল’ সে প্রকাশ্য প্রতারক।” আবু জাফর প্রণীত এৎকাবাৎ গ্রন্থ।

প্রিয় পাঠক, যে আবু জাফর সাহেব বর্তমান কোরানের একটি অক্ষর বা আকার একারেরও কমিবেশী স্বীকার করেন নাই, সেই মহাপুরুষের মাথায় এতবড় দোষ চাপাইয়া যাহারা সুপথগামীকে বিপথগামী করিতে নিয়ত চেষ্টিত, তাহারা কোন্ নামে অভিহিত হইবার যোগ্য, তাহার মীমাংসা আপনারাই করুন। ধোকাবাজ খ্রীষ্টানগণ কোরানের বিরুদ্ধে বক্তৃতাকালে সর্ব্বদাই শিয়াদিগের মাথায় ভর দিয়া নানা প্রকার ব্যঙ্গোক্তি করিয়া থাকে। এজন্য সৈয়দ মরতজা নামক একজন প্রবীণ শিয়া পণ্ডিতের মত নিম্নে উদ্ধৃত হইল। শিয়াদিগের শিরোধার্য্য “জামেউল্- বয়ান নামক গ্রন্থে উক্ত মহাত্মা লিখিয়াছেন, – “নিশ্চয়ই কোরানের এলম্ একটি অত্যাশ্চর্য্য বিষয়; নিশ্চয়ই আরবীয় ওলামাগণ (পণ্ডিতমণ্ডলী) স্বীয় শাস্ত্র মহা কোরানকে পৃথিবীতে অক্ষুণ্ণ রাখিতে সর্ব্বোন্নত স্থানের অধিকারী। যেহেতু কোরান প্রেরিতত্বের (নবুয়তের) একটি পূর্ণ মোজেজা (নিদর্শন), সুতরাং কোরান শরিফই ব্যবস্থা, বিজ্ঞান, ঐহিক এবং পারমার্থিক বিষয়ক শিক্ষার মূল। মোসলেম ওলামাগণ কোরানকে ঈদৃশ অক্ষুণ্ণ রাখিতে সক্ষম হইয়াছেন যে, উহার একটি জের জবরেরও (আকার একার) পরিবর্তন হয় নাই।

প্রিয় ইসাই, দেখুন, আপনাদের মানিত সাক্ষী শিয়া পণ্ডিতের মুখেই কোরানের অকৃত্রিমতার কি সুন্দর প্রমাণ হইল। এক্ষণেও কি আপনাদের সেই অসার স্বপ্ন ভঙ্গ হইবে না?

পঞ্চম প্রশ্নে জন্ সাহেব যে হাদিছটির অবতারণা করিয়াছেন, তাহাই কোরানের অপরিবর্তনীয়তার অকাট্য প্রমাণ। কিন্তু জন্ সাহেব হাদিছটির অনুবাদে ঠিক তাঁহাদের বাইবেলের ন্যায় “মন পোলাও” পাকাইয়া ফেলিয়াছেন। আমরা হাদিছটির যথার্থ অনুবাদ এখানে প্রকাশ করিতেছি: – মালেকের পুত্র আনেছ রওয়ায়েত করিতেছেন, – যখন ইমানের পুত্র হোজায়ফা আর্মেনিয়ায় সুরিয়াবাসীদের এবং আজর-বিজানে ইরাফী সম্প্রদায়ের সহিত সংগ্রামে প্রবৃত্ত ছিলেন, তখন তিনি (ইমানের পুত্র হোজায়ফা) কোরানপাঠকের পাঠোচ্চারণে অমিল হইবে এই আশঙ্কায় (১) [এই ঘটনার পূর্ব্বে যে কোরান শরিফের কোন অংশই গোলমাল হয় নাই, “হইবে আশঙ্কা” শব্দ দ্বারা তাহা পরিষ্কার বুঝা যাইতেছে। উক্ত যুদ্ধে বহুতর হাফেজকে শহিদ হইতে দেখিয়া হোজায়ফার মনে ঈদৃশ আশঙ্কা উপস্থিত হইয়াছিল।] হজরত ওসমানের (রাজিঃ) নিকট আসিয়া কহিলেন, হে আমিরুল মুমেনিন, ইহুদী ও ইসায়ীদিগের বাইবেলের ন্যায় মুসলমান শাস্ত্রে (কোরানে) গোলযোগ উৎপন্ন হইবার পূর্ব্বে (১) [ উক্ত পদটির দ্বারা প্রমাণিত হইতেছে যে, এই সময়ের পূর্বেই বাইবেলে গোলযোগ উৎপন্ন হইয়াছিল; তদ্দর্শনে মুসলমানগণ ভীত হইয়া ঈদৃশ দোষ স্পর্শ করিবার পূর্ব্বেই মহা কোরানকে অক্ষুণ্ণ রাখিতে বদ্ধপরিকর হইয়াছিলেন।] মোসলেম শিষ্যগণের তত্ত্ব লউন। তখন হজরত ওসম্মান হাফিজার (রাজিঃ) নিকট লোক পাঠাইয়া কহিলেন,- আপনি (কোরানের) হস্তলিপি আমাদের নিকট পাঠাইয়া দিবেন। আমরা উহা উদ্ধৃত করিয়া পুনরায় আপনার নিকট পাঠাইয়া দিব। (২) [এই হস্তলিপিটা এখনো কা’বাতে বর্তমান আছে। দাফেওল বিসাত গ্রন্থ দেখ।] হজরত হাফিজা (রাজিঃ) তৎক্ষণাৎ হস্তলিপিটি পাঠাইয়া দিলেন। তখন হজরত ওসমান (রাজিঃ) সাবেতের পুত্র জয়েদ, জাবিরের পুত্র আবদুল্লা, আল আসের পুত্র সয়িদ এবং হাম্মামের পৌত্র ও হারেসের পুত্র আবদুল্লা এই চারিজনকে (৩) [পাদ্রী সাহেব এই চারিটি নাম লিখিতেও খিচুড়ি পাকাইয়াছেন; বরং চারি স্থলে তিন জন বলিয়াই পালাসায় করিয়াছেন।] তাহা নকল করিতে আদেশ দিলেন। কিন্তু আদেশকালে বলিলেন,- যখন তোমাদের সহিত (অন্য স্থানের ও বংশের) জয়েদের (৪) [জায়দ ভিন্ন আর তিন জনেই কোরেশ বংশোদ্ভব ছিলেন। এক দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ভাষার উচ্চারণে পার্থক্য হইয়া থাকে। জায়দ উপযুক্ত শিক্ষিত এবং কোরেশ ভাষায় সুপণ্ডিত হইলেও কথার উচ্চারণে কিছু কিছু পার্থক্য ছিল; তাহা স্বাভাবিক। লিখিত ভাষাতেও এইরূপ ভুল দেখা যায়। মহাপুরুষ ওমান ইহা বিবেচনা করিয়া যাহাতে কোরানে ঈদৃশ বিকৃতভাবে উচ্চারিত কোন শব্দের সমাবেশ হইতে না পারে এই উদ্দেশ্যে কোরেশ বংশীয় উক্ত তিন ব্যক্তিকে পূর্ব্বেই সতর্ক করিয়া দিয়া বলিলেন যে, যদি তোমাদের তিন জনের সহিত জায়েদের শব্দোচ্চারণে কোন অনৈক্য হয় তবে তাহা কোরেশের ভাষায় লিখিও। কারণ, কোরান কোরেশ ভাষায় নাজেল হইয়াছে। এস্থলে মাত্র উচ্চারণের অমিলের কথা বলা হইয়াছে; কোন শব্দ বা অধ্যায় বিষয়ক অমিলের কথা নহে।] কোরানের শব্দোচ্চারণের অনৈক্য হয়, তখন তাহা কোরেশের ভাষার উচ্চারণানুযায়ী লিখিও। কারণ কোরান শরিফ কোরেশের ভাষায় নাজেল হইয়াছে। পরে তাঁহাদের লেখা শেষ হইলে হজরত ওসমান (রাজিঃ) হস্তলিপিটি হাফিজার (রাজিঃ) নিকট পাঠাইয়া দিলেন। আর ঐরূপ এক এক খণ্ড কোরান লেখাইয়া প্রত্যেক দেশে প্রেরণ করিলেন। আর যে সমস্ত সহিফ। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পত্রাদিতে বিচ্ছিন্নভাবে লেখা ছিল, তাহা দগ্ধ করিবার আদেশ দিলেন। (দেখ মিশকাত, ও বোখারী।) প্রিয় পাঠক! উক্ত হাদিছটির মূলতত্ত্ব-যাহা পাদ টাকায় লিখিত হইল, কিঞ্চিৎ স্থিরভাবে গভীর চিত্তে পাঠ করুন; দেখিবেন, মূল কোরানের ইহাই আসলত্বের প্রমাণ।


৬ষ্ঠ ধোকার উত্তর

হজরত মোহাম্মদ (দঃ) সাধারণ বিদ্যায় নিরক্ষর ছিলেন এ-কথা সত্য; ইহা তাঁহার প্রেরিতত্বের বা নবুয়তের একটি জ্বলন্ত প্রমাণ। আমরা স্বীকার করি, তিনি কোন মানুষের নিকট কোন দিন কোন বিদ্যা শিক্ষা করেন নাই। কিন্তু সেই নিরক্ষর মহাপুরুষের পবিত্র রসনাগ্র-নিঃসৃত অনন্ত জ্ঞান ও যুক্তিযুক্ত এবং ব্যাকরণবিশুদ্ধ অলঙ্কারপূর্ণ বচনাবলীর নিকট যখন সমুদয় জগতের ভাষাবিদ বিদ্যাবাগীশ পণ্ডিতমণ্ডলীকে অবনত মস্তক দেখি, তখন তিনি যে নিশ্চয়ই সেই সর্ব্বোপরিস্থ মহামহিমের প্রদত্ত বচন প্রাপ্ত হইয়াছিলেন তাহা স্থির নিশ্চয়।……হজরত খোদাতা’লা প্রদত্ত আয়াতসমূহ বিশুদ্ধরূপে উচ্চারণ ও কণ্ঠস্থ করিয়া জগৎবাসীকে শিক্ষাদানে পূর্ণ শক্তিমান হইয়াছিলেন। কোরানের আয়াতসমূহ নাজেল হওয়া মাত্র তিনি স্বয়ং তৎসমূদয় কণ্ঠস্থ করিয়া তৎক্ষণাৎ সহস্রাধিক সাহাবীগণকে তাহা মুখস্থ করাইতে প্রবৃত্ত হইতেন। আয়াতসমূহ কাহারো কাহারো তৎক্ষণাৎ মুখস্থ হইয়া যাইত; আর যাঁহাদের মুখস্থ করিতে বিলম্ব হইত, তাঁহারা তখন খোর্মাপত্রাদিতে লিখিয়া লইতেন।

হাফেজগণ সমস্ত কোরানই মুখস্থ করিয়া রাখিতেন। “যাহা লিখিত হইত তাহা মুখস্থ হইত না, আর যাহা মুখস্থ হইত তাহা লিখিত হইত না”, ইহা মিথ্যা কথা। দুই চারিজন হাফেজের মুখস্থ বিষয় বেঠিক হওয়া সম্ভব, কিন্তু যে বিষয়টি সহস্র সহস্র লোকে তখনি মুখস্থ করিত, তাহা সকলেরই বেঠিক হওয়া সম্ভবপর নহে। কোন হাফেজের কোরান পাঠে ভুল হইলে হজরত নিজেই তাহা সংশোধন করিয়া দিতেন; কারণ তিনি নিজেই হাফেজ ছিলেন। জন্ সাহেবকে আমরা অনুরোধ করি, তিনি যেন এলাহাবাদী কোন হাফেজের নিকট গিয়া কোরানের যে কোন স্থানের একটি পদ কেন, একটি আকার বা একার মাত্র ভুল করিয়া পরীক্ষা ল’ন যে, হাফেজদিগের ভুল ধরিবার সাধ্য আছে কি না।*

আশা করি, এখন বেশ বুঝা যাইতেছে যে, কোরানের আসলত্বে কোন প্রকারেই কোন গোলমাল হয় নাই। আজ আমরা তর্করূপ রণপ্রান্তরে দণ্ডায়মান হইয়া সগর্ব্বে উচ্চৈঃস্বরে বলিতে পারি যে, যদি ঘটনাক্রমে একই সময়ে জগতের সমস্ত লিখিত কাগজপত্র, প্রস্তর ইত্যাদি বিলুপ্ত হইয়া যায়, তবে পৃথিবীস্থ অন্য কোন জাতির ধর্মগ্রন্থ অঙ্গহীন অবস্থায় ব্যতীত পাওয়া যাইবে না। কেবল কোরান শাস্ত্রই সর্বাঙ্গপূর্ণ অটলভাবে বিদ্যমান থাকিবে; তাহার আসলত্বের বিন্দুবিসর্গও ক্ষতি হইবে না। খ্রীষ্টীয়ান বন্ধুগণ, ধৰ্ম্মতঃ বল দেখি, তোমরা বাইবেলের বলে এরূপ সাহস বাঁধিতে পার কি?


তিন

প্রতিবাদের উত্তর

জন্ জমিরুদ্দীন সাহেব-উক্ত প্রতিবাদের উত্তরে সুধাকরে একটা ক্ষুদ্র প্রবন্ধ প্রকাশিত করেন। উক্ত প্রবন্ধের প্রয়োজনীয় অংশ নিয়ে লিখিত হইতেছে:-

“সুদীর্ঘ প্রবন্ধটি পাঠ করিয়া অতিশয় আশ্চর্যান্বিত হইয়াছি। প্রবন্ধ-লেখক আমার লিখিত প্রবন্ধটির ঠিক মৰ্ম্ম অবগত না হইয়া ও আমার লিখিত ছয়টি প্রশ্নের প্রকৃত উত্তর না দিয়া আমার প্রতি অনর্থক কটুক্তি প্রয়োগ করিয়াছেন। কিন্তু তিনি সেটি ভাল কাজ করেন নাই।

“পরিশেষে লিখিতব্য এই যে, কোরান শরিফ যদি পরিবর্তিত না হইত, তবে শিয়া ও সুন্নীদিগের কোরান শরিফে পরস্পর মিল থাকিত। সুন্নী ও শিয়া উভয় সম্প্রদায়ের কোরান শরিফের পরস্পর মিল নাই। শিয়াদিগের কোরানে যে সুরা আছে সুন্নীদিগের কোরানে সেই সুরা নাই। যদি কোন মহাশয় উক্ত সুরা দেখিতে চান, তাহা হইলে পাঞ্জাবস্থ অমৃতসরের পাদ্রী শ্রীযুক্ত রেভারেও মৌলভী এমাদ উদ্দীন লাহিজ ডি, ডি, সাহেবের কৃত “তহকিকল্ ইমান” নামক কেতাবের ৯ম পৃষ্ঠা হইতে ১১শ পৃষ্ঠা পর্যন্ত পাঠ করিয়া দেখুন। উক্ত কেতাব এলাহাবাদ ও লাহোর ট্রাস্ট সোসাইটিতে পাওয়া যায়। শিয়া সম্প্রদায় মুক্তকণ্ঠে সাক্ষ্য দিতেছে যে, সুন্নীদিগের কোরান তহরিফ (পরিবর্তিত) হইয়াছে। ভাই মোহাম্মদী, আপনি অনুসন্ধান করিয়া দেখুন, যাহা সম্পূর্ণ সত্য তাহা গ্রহণ করুন। তাহাতে আপনার মঙ্গল হইবে।”

শ্রীজন্ জমিরুদ্দীন
এলাহাবাদ


চাইর

উক্ত প্রবন্ধটি প্রকাশিত হইবার পর মুনশী মেহেরুল্লা সাহেব নিম্নলিখিত প্রবন্ধটি প্রকাশিত করেন।

সর্বত্রই আসল কোরান

“খ্রীষ্টিয় বান্ধব পত্রিকায়” “আসল কোরান কোথায়?” শীর্ষক প্রবন্ধে মুসলমানদিগের নিকটে কোরানের বিরুদ্ধে যে ছয়টি প্রশ্ন করা হইয়াছিল, “সুধাকরে” তাহার সমস্তগুলিরই ধারাবাহিক উত্তর দেওয়া হইয়াছে। কিন্তু প্রতিবাদী সাহেব লিখিয়াছেন,-“সুধাকরে ইসায়ী বা খৃষ্টানী ধোকা নামক সুদীর্ঘ প্রবন্ধটি পাঠ করিয়া অতিশয় আশ্চর্যান্বিত হইলাম। প্রবন্ধ- লেখক আমার লিখিত প্রবন্ধের ঠিক মৰ্ম্ম অবগত না হইয়া আমার প্রতি অনর্থক কটূক্তি প্রয়োগ করিয়াছেন।”

জন্ সাহেবের ছয়টি প্রশ্নই অবিকল উদ্ধৃত করিয়া পদে পদে প্রতিবাদ এবং তাঁহার মানিত হাদিছসমূহের দ্বারাই বর্তমান কোরানের আসলত্ব বা নির্ভুলতার প্রমাণ প্রদর্শন করা হইয়াছে। উত্তর লেখক তাহার কোন্ কথার ঠিক মর্ম বুঝিতে পারেন নাই, সে কথার আলোচনা না করিয়া “আমার প্রবন্ধের মর্ম্ম অবগত হন নাই, প্রকৃত উত্তর দেন নাই।” এবম্বিধ ভুয়া মন্তব্য ঝাড়া বা লক্ষ্যশূন্য উড়ো ফায়ার করা কি তাঁহার “পক্ষে ভদ্রতাবিরুদ্ধ কাজ হয় নাই? প্রশ্নকারী হাদিছগুলির উচ্চারণ-দোষ না হয় কম্পোজিটারের মাথায় দিয়াই পার পাইলেন। কিন্তু আনেস্ বেন মালেক বর্ণিত হাদিছটির অনুবাদেও তিনি যে স্বরুচি মোতাবেক খিচুড়ি পাকাইয়া ফেলিয়াছেন, সেটি কি তাঁহার হৃদ্যন্ত্রের জ্ঞান-কম্পোজিটারের দোষ নয়? শেখজী বোধহয় আমার ৪র্থ ও ৫ম প্রশ্নের উত্তর কয়টি পাঠ করেন নাই; তাহা না হইলে তিনি বারংবার সেই শিয়া কাহিনীই গাহিবেন কেন? তাঁহার মানিত শিয়াদিগের প্রমাণিত ও শিরোধার্য্য গ্রন্থসমূহের দ্বারাই ত প্রমাণিত হইয়াছে যে, বর্তমান কোরানই আসল কোরান।

প্রশ্নকারী শেখ মহাশয় ৪র্থ ও ৫ম প্রশ্নে শিয়াদিগের মাথায় হাত রাখিয়া বলিয়াছিলেন যে, যে সুরাটী হজরত ওসমান (রাজিঃ) কোরান হইতে তুলিয়া দগ্ধ করিয়া ফেলিয়াছিলেন তাহা সুরা বকর হইতে বড়। পাঠক! স্মরণ রাখিবেন যে, সুরা বকরটী অন্যূন ৮০/৯০ পৃষ্ঠায় পূর্ণ। কিন্তু প্রতিবাদী ২৩শে বৈশাখের সুধাকরে লিখিয়াছেন যে, “যদি কেহ শিয়াদিগের কোরানোক্ত সুরাটি দেখিতে চান, তবে পাদ্রী আমাদুদ্দীন কৃত “তহ কিকল ইমান” পুস্তকের ৯ হইতে ১১ পৃষ্টা দেখুন।

আমরা বলি, সুরা বকর হইতে বড় সুরাটি অগত্যা শতাধিক পৃষ্ঠা হওয়া চাই। সেই সুরাটি পাদ্রীজী নাকি ৯ হইতে ১১ অর্থাৎ ২।৩ পৃষ্ঠায় সমাবেশ করিয়াছেন, এ-কথার বুনিয়াদে কি পরিমাণ সত্যের সম্পর্ক আছে, তাহা আবার বুঝাইতে হইবে? ধোকা ইহারই নাম!

দ্বিতীয়তঃ, প্রশ্নকারী শেখজী পূর্ব্বেই ৪র্থ ও ৫ম প্রশ্নে স্বয়ং সাক্ষ্য দিয়াছেন যে, হজরত ওসমান (রাজিঃ) তাহা দগ্ধ করিয়া ফেলিয়াছিলেন। দগ্ধীভূত সুরাটি পাদ্রীজী কোথায় পাইলেন? তৃতীয়তঃ-এই, বিশাল বঙ্গদেশের নানাস্থানে অসংখ্য শিয়া ও শিয়াদিগের পাঠ্য কোরান বর্তমান থাকিতে সেই পাঞ্জাবস্থ জনৈক বিকৃতমনা ব্যক্তির কৃত পুস্তক যাহা সহজে পাঠকের দৃষ্টিগোচর হওয়া সম্ভবপর নহে, তাহার বরাত দিয়া শেখ মহাশয় ভাল করিয়াছেন কি? আমরা কিন্তু শিয়া সুন্নিদিগের সহস্র সহস্র পাঠ্য কোরান একত্র করিয়া তাহার অভিন্নতা দর্শাইতে পারি। কিন্তু একই সহরে যদি রোমান ও প্রটেস্ট্যান্ট উভয় সম্প্রদায়ের খ্রীষ্টান থাকে, তবে তাহাদের দুই দলের বাইবেল লইয়া মিলাইয়া দেখিবেন যে, উভয় বাইবেলে সম্পূর্ণ অমিল হইবে। যিনি ল্যাটিন ভাষা না জানেন, তিনি যেন রোমান পাদ্রীকে এ-কথা জিজ্ঞাসা করেন; দেখিবেন, তিনি বলিবেন যে, “আমাদের রোমান ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের বাইবেল আজিও বঙ্গভাষায় অনুবাদিত হয় নাই।”

ইসাই বন্ধুকে আমরা অনুরোধ করি, তিনি পৃথিবীর সমস্ত দেশের কোরান একত্র করিয়া পরস্পর ঐক্য করিয়া দেখুন; তাহা হইলে বুঝিতে পারিবেন, তাহাদের মধ্যে বিন্দুমাত্রও পার্থক্য নহে। তাই বলি, সর্বত্রই আসল কোরান।

মোহাম্মদ মেহেরুল্লা
যশোহর

শেখ জমিরুদ্দীন সাহেব এই প্রবন্ধের আর কোনই উত্তর দিতে পারেন নাই। এই ঘটনার অল্পদিন পরেই তিনি ইসলামধর্ম গ্রহণ করেন।

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →