এইটা একটা পাইপ না – মিশেল ফুকো (১) Featured

১
পাইপ দুইজন
পয়লা ভার্সনটা, আমার যত দূর মনে পড়ে: একটা যত্ন নিয়া আঁকা পাইপ, নিচে (মক্তব থেকে নেওয়া লেখার ধাঁচে, ইশকুলের ছাত্রর নোটবুকের মলাটে যেম্নে লেখা থাকে, নাইলে জিনিসপত্র চিনানের ক্লাসের i শেষে ব্ল্যাকবোর্ডে যেমন ধাঁচে লেখা হয়, এমন বানোয়াট একটা ধাঁচে, কষ্ট করে, মজবুত হাতে) একটা নোট লেখা: “এইটা পাইপ না”।
অন্য ভার্সনটা — মনে হয় একেবারে শেষেরটা — Aube à l’Antipodes-এii গেলে দেখা যাবে। একই পাইপ, একই এজহার, একই হাতের লেখা। কিন্তু বেতরফা [নিরপেক্ষ], সীমাছাড়া, অনির্দিষ্ট জায়গায় পাশাপাশি বসার বদলে লেখা আর তছবির দুইটাই একটা ফ্রেমের ভিত্রে রাখা। ফ্রেমটা নিজে আবার একটা ইজেলের উপ্রে রাখা, ইজেল আবার গিয়া ঘরের মেঝের তক্তাগুলার উপ্রে বসা, তক্তাগুলাও পষ্ট দেখা যাইতেছে। সব কিছুর উপ্রে, ছবির মতই হুবহু একটা পাইপ, কিন্তু বহুত বড়।
পয়লা সংস্করণটা নিজেরই কটকটা সহজামি দিয়া আমরারে অসোয়াস্তিতে ফালায়। দুই নম্বরটা আমরার চোক্ষের সামনে ইচ্ছা করে বানানো আবছালিরে [Ambiguity] বহু গুণ করতে থাকে। ইজেলের গায়ে ঠেস দিয়া কাঠের পায়াগুলার উপ্রে দাঁড়ায়া ফ্রেমটা বুঝাইতেছে যে এইটা একজন পেইন্টারের পেইন্টিং: একটা কামেল কাম, কোনো এক দর্শকের লেইগা লেখাটা-সহ খাড়া কইরা রাখা, লেখাটা ওই পেন্টিংয়ের উপ্রে কমেন্ট করবে বা দর্শকেরে বুঝায়া দিবে। তার পরও এই মাসুম হাতের লেখা যেইটা না ঠিক পেন্টিংটার টাইটেল না আবার এর ছবির কোনো অংশ; শিল্পী হাজির থাকার অন্য কোনো হদিসের গরহাজিরি; গোটা আয়োজনটার খসখসা অবস্থা; মেঝের পাশ পাশ [wide] তক্তা — সব কিছু কইতে চাইতাছে এইটা কোনো ক্লাসরুমের একটা ব্ল্যাকবোর্ড। হয়তো এক্ষনই মুছনির এক মোছা চিত্র আর লেখা দুইটারেই মিটায়ে দিবে। হয়তো “ভুল”টারে (আসলেই পাইপ বাদে অন্য কিছু কিছু একটা এঁকে, নায়লে এইটা আসলেই একটা পাইপ কইয়া এলান করে এমন কোনো বাক্য লেখে) সোধরানের লেইগা কোনো একটা বা অন্যটারে মিটায়ে দিবে। একটা সাময়িক প্যাঁচাল— (“ভুল-লেখালেখি” যেইটা থেকে ভুল-বোঝাবুঝি হইসে বোঝা যায়)-রে ওই এক পোছেই সাদা ধুলা বানায় উড়ায়া দিবে?
কিন্তু এরপরেও এইগুলা সবচেয়ে পাতলা কিসিমের আবছালি; এগুলা বাদে আর কয়েকটা দেখা যাক। পাইপ এখানে দুইটা। নাকি কওয়া উচিত হবে, একই পাইপের দুইটা ড্রয়িং? নাকি আবার একটা পাইপ আর ওই পাইপের ড্রয়িং, আবার নায়লে দুইটা আলাদা পাইপরে রিপ্রেজেন্ট করে এমন আলাদা দুইটা ড্রয়িং? কিংবা দুইটা ড্রয়িং একটা কোনো পাইপরে রিপ্রেজেন্ট করে আরেকটা করে না, নাকি আবার দুইটা ড্রয়িং যার এইটা বা ওইটা কোনোটাই পাইপ বা পাইপরে রিপ্রেজেন্ট করে না? নাকি আবার, কোনো পাইপরে রিপ্রেজেন্ট করার বদলে অন্য একটা ড্রয়িংরে রিপ্রেজেন্ট করে যেই ড্রয়িংটা আবার একটা পাইপরে এত ভালো রিপ্রেজেন্ট করে যে আমি নিজেরে না জিগায়া পারি না: পেন্টিংয়ের মধ্যে লেখাটার সম্পর্ক কিসের সাথে? “ব্ল্যাকবোর্ডে সাজানো লাইনগুলা দেখো — এগুলার উপ্রে যেইটা দেখানো হইতেছে ওইটারে এরা নূন্যতম পাও না হড়কায়ে বা নাফরমানি না করে নকল করতেছে। ভুল কইরো না য্যান; পাইপটা হইলো উপ্রে, এই ছেলেমানুষি হিজিবিজির ভিত্রে না।”
আর নায়লে হয়তো বাক্যটা সোজা ওই বে-সাইজ, ভাসমান, পরম পাইপখানের — মানে পাইপের সহজ খেয়াল বা খোয়াবের দিকে আঙুল দেখায়তেছে। তায়লে আমরার পড়া উচিৎ, “সত্যিকার পাইপ দেখনের লেইগা উপ্রে চাইও না। ওইটা একটা পাইপ স্বপন। পেন্টিংয়ের ভিত্রের পোক্ত এবং পইপই করে আদল দেওয়া চিত্রটারেই সাক্ষাত সত্য কয়া মেনে নিতে হইব।”
এর পরেও ব্যাপারটা আমার চোখে লাগে যে, চিত্রের মধ্যে — ব্ল্যাকবোর্ডে না ক্যানভাসে যে ছাইয়েই হোক গিয়া — যেই পাইপরে রিপ্রেজেন্ট করা হইসে, এই “নিচা” পাইপটারে প্রস্থ (লেখা বাক্যটা, ফ্রেমের উপর আর নিচের বর্ডার দুইটা), লম্বাই (ফ্রেমেরে দুই সাইড, ইজেলের পায়া), আর গভীরতা (মেঝের তক্তার মাঝে মাঝে ফাঁকগুলা) দিয়া দেখার লায়েক একটা স্থানাঙ্কের ভিত্রে শক্ত করে আটকায় দেওয়া আছে। একটা পোক্ত জেল। উল্টা দিকে উঁচা পাইপটার কোনো স্থানাঙ্ক নাই। এর বিশাল সাইজ এর অবস্থানরে অনিশ্চিত করে দেয় (Tombeau des lutteurs-এ iii দানবীয় আকার সবচেয়ে ভালো সীমানা-বান্ধা জায়গার মধ্যে আটকায়ে যাওয়া থেকে যেই ভাবটা বাইরয়া আসে, এইখানে তার উল্টা ভাবটা পাওয়া যায়)। এই বে-সাইজা পাইপটা কি পেন্টিংটার সামনে আঁকা, যার মানে পেন্টিংটা আরো পেছনে বইসা আছে? নাকি আসলেই এইটা একেবারে ইজেলের বরাবর উপরে লট্কায় আছে, একটা ভাপ বা কুয়াশার মতন, পেন্টিংটা থেকে এই মাত্র আল্গা হইতাছে — পাইপের ধোঁয়ায় (La Bataille de l’Argonne-এ iv ধোঁয়াসা আর কঠিনের মধ্যে যেমন উপমা আর তফাতের খেল দেখা যায় ওই খেলার নিয়মে) পাইপের আকার, গোলগাল ভাব নিয়া পাইপের বিরোধিতা করতেছে আবার পাইপরে রিপ্রেজেন্টও করে যায়তেছে? অথবা শেষমেষ আমরার ধরে নেওয়া কি উচিত না যে, ওই পাইপটা ইজেল আর পেন্টিংটার থেকে পেছনের দিকে ভাসতেছে, যেমন দেখায়তেছে আসলে তার চেয়ে আরো বিরাট? সেই ক্ষেত্রে ত এর উপড়ায় আসা গভীরতাটা, ক্যানভাস (বা প্যানেল)- ফাটায়া দিতে থাকা ইনার ডাইমেনশনটা আস্তে আস্তে, কোনো রেফারেন্স পয়েন্ট পাওয়া যায় না এমন এক জায়গায়, উইঠা আইসা অসীমতক ফেপে উঠতেছে?
এই আবছালি নিয়াও দেখা যাইতেছে আমি আবাছায় আছি। বা বলা যায় আমার কাছে যেইটারে খুবই সন্দেহ লাগতেছে তা হইলো উঁচা পাইপের জায়গাছুট ভাসাভাব আর নিচা-টার পোক্ত অবস্থানের মধ্যের সহজ বিরোধটা। আরেকটু কাছ থেকে দেখলে চট করে আমরার চোখে পড়ে, যেই মেঝেরে তার খসখসা ভাবের কারণে নিরাপদ আর পষ্ট দেখা যায় ওইটার ওপর ইজেলের পায়াগুলা, যেগুলার উপর ঠেস দিয়া ক্যানভাসে ছবিটা আটকানো অবস্থায় নিয়া ফ্রেমটা দাঁড়ায়া আছে — সেগুলা আসলে গোল করে কাটা। পায়াগুলা মাত্র তিনটা ছোট্ট ছোট্ট বিন্দুতে মেঝেরে টাচ করে থাকার ব্যাপারটা, গোটা আয়োজন, আয়োজন বলা যায় কিনা সেটাও এখন ভাববার বিষয়, আয়োজনটা থেকে সব মজবুতি কেড়ে নেয়। কোনো আসন্ন পতন? ইজেল, ফ্রেম, ক্যানভাস বা প্যানেল, ছবি, লেখার ধ্বস? চৌচির কাঠ, খানখান ছুরত, একটা থেকে আরেকটা অক্ষর লন্ডভন্ড হইতে হইতে আর কোনো শব্দই সাজানো না যাওয়ার মতন অবস্থা হয়তো? সব কিছু মাটিতে ছড়ায় ছিটায় পড়ে থাকবে, তখনও উপ্রে, মাপজোখ বা রেফারেন্স পয়েন্ট ছাড়া বিশাল পাইপটা তার অধরা, বেলুন-মতন অনড় অবস্থা নিয়া থমথম করবে?
২
প্যাঁচ খোলা ক্যালিগ্রাম
ম্যাগ্রিটের ড্রয়িংটা (আপাতত পয়লা ভার্সনটা নিয়াই আলাপ করমু) বোটানিকাল ম্যানুয়েল থেকে নেয়া যে কোনো পাতার মতনই সহজ: একটা তছবির আর একটা লেখা তছবিরটারে নাম দিতেছে। এমনে আঁকা হইবার পরে, একটা পাইপ চেনার থেকে সহজ আর কিছু হয় না; আমরার ভাষায়ও ভালোই জানে — একটা “পাইপের নাম”v থেকে সহজ আর কোনো কওয়ার মত নাম নাই। কথা হইলো, তছবিরটার আজিবপনা ছবি আর লেখার “কন্ট্রাডিকশন” থেকে আসতেছে না। ভালো কথা, কয়া রাখি: কন্ট্রাডিকশন খালিমাত্র দুইটা স্টেটমেন্টের মধ্যে, নায়লে একই স্টেটমেন্টের নিজের মধ্যে হইতে পারে। এইখানে দেখাই যায়তেছে স্টেটমেন্ট মাত্র একটা, কিন্তু এইটা কন্ট্রাডিক্টরি হইতেই পারবো না, কারণ এর [সাবজেক্ট] উদ্দেশ্য একটা সোজাসাপ্টা ইশারা। সুতরাং মিছা, কারণ স্টেটমেন্টটা যেইটারে — দেখাই যায়তেছে একটা পাইপরে— ইশারা করে সেইটা তারে ভেরিফাই করে না? কিন্তু কেডাই বা সিরিয়াসলি তর্ক করবে, লেখাটার উপ্রের দাগগুলা আসলেই একটা পাইপ? আমরার কি কয়তেই হইবো: আল্লারে, ক্যামন কাঁচাবুদ্ধ্যামি! স্টেটমেন্টটা পার্ফেক্টলি সত্য, যেহেতু পষ্টই দেখা যায়তেছে ড্রয়িংটা একটা পাইপরে রিপ্রেজেন্ট করতেছে, নিজে কোনো পাইপ না। তারপরেও, ভাষার রেওয়াজ হইলো: এই ড্রয়িংটা কি? কেন, এইটা একটা বাছুর, চৌকা, ফুল। আগিলা দিনের রীতি, তবে বনিয়াদ ছাড়া না, কারণ এমন একটা ওস্তাদি, এমন একটা একাডেমিক ড্রয়িংয়ের মোদ্দা কাজই হইলো চেনায়ে দেওয়া, যেই বস্তুরে রিপ্রেজেন্ট করতেছে সেইটারে কোনো রকম খটকা বা ধোঁয়াশা না রেখে বুঝায়ে দেওয়া। ড্রয়িংটা কাগজের পাতা বা ব্ল্যাকবোর্ডের উপ্রে পেন্সিলের শীষ অথবা চকের পাতলা একটা আস্তর হওয়াতে কোনো প্যারা নাই। ছবিটা কোনো তীর বা আঙ্গুলের মতন দূরের বা অন্য জায়গার নির্দিষ্ট কোনো পাইপের দিকে তাক করে না। ছবিটাই পাইপ।
ড্রয়িংটার সাথে লেখাটারে অনিবার্যভাবে মিলায়াই ফেলা (ডেমোন্স্ট্রেটিভ প্রোনাউন, পাইপ শব্দটার মানে, আর ছবিটার আদল সব কিছুই আমরারে মিলায়ে ফেলার জন্য সাধতে থাকে) — এবং দাবিটা সত্য, মিছা, নাকি কন্ট্রাডিক্টরি বলার মত কোনো পারস্পেক্টিভ ঠিক কইরা উঠতে না পারা আমরারে মূলত ধান্ধাটা লাগায়।
জাদুগিরিটা এইখানের একটা অপারেশনের মধ্যে লুকায়া আছে – এই মত ফালায়া দিতে পারি না, ফলাফলের সহজামি অপারেশনটারে অদৃশ্য করে দিছে কিন্তু ভাসাভাসা অসোয়াস্তিটারে একমাত্র এই অপারেশন দিয়াই ব্যাখ্যা করা যাইতে পারে। অপারেশনটা হইলো একটা ক্যালিগ্রামvi যেইটা ম্যাগ্রিট তলে তলে বানাইছে, তারপর প্যাঁচগুলা সাবধানে খুলে ফেলছে। তছবিরের প্রত্যেকটা উপাদান, প্যাঁচ খোলার কাজটা থেকে বাইরওয়া উপাদানগুলার দুইতরফা অবস্থান এবং সম্পর্ক, সব কিছু কমপ্লিট হওয়ার সাথে সাথে আবার নাকচ হয়া যায়। ড্রয়িং আর শব্দগুলার পিছে, কেউ কোনো কিছু লেখারও আগে, ছবিটা (আর তার ভিত্রে পাইপের ড্রয়িংটা) আকার পাওয়ার আগে, বিশাল, ভাসমান পাইপটা ভেসে ওঠার আগে — আমার বিশ্বাস, আমাদের ধরে নিতেই হবে একটা ক্যালিগ্রাম তৈরি হইছে, তারপর খুলেও গেছে। এইখানে ব্যর্থতা আর ব্যর্থতার আয়রনিক অবশেষের হদিস আমরা পাইতেছি।
হাজার বছরের রেওয়াজে ক্যালিগ্রাম তিন ধারা পাট চুকায়ে আসতেছে: বর্ণমালারে উঁচায়ে ধরা, রেটরিকের ধার না ধাইরা কিছু একটারে আবার বলা, জিনিসপত্ররে দুই পরত শিলুকের মধ্যে আটকানো। ক্যালিগ্রাম প্রথমত লেখা আর গড়নরে যতটা পারা যায় কাছাকাছি আনে। ক্যালিগ্রাম জিনিসের ছুরত ফুটায়ে তোলার মত দাগ থেকে তৈরি হয়া আবার হরফগুলারও সিরিয়াল ঠিক করে দেয়। স্টেটমেন্টগুলারে একটা ছাঁচের ভিত্রে ভরে দেয়, ড্রয়িং যেইটার রিপ্রেজেন্টেশন করে লেখারে দিয়া সেইটা বলায়। এক দিকে, ক্যালিগ্রাম প্রতীকরে অক্ষর মাফিক করে, কাটাকাটা হরফ দিয়া আবাদ করে, এবং ফলত টানা-দাগের নিরবতারে জেরা করতে থাকে।vii আবার অন্যদিকে, লেখারে এমন একটা জমিনে ছড়ায় দেয় যেখানে কাগজের নিরপেক্ষতাটা, খোলাখুলিভাবটা, খালিভাবটা আর নাই । প্রতীকটারে এক বহুরূপী ছুরতের আইন মেনে নিজেরে সাজায়তে বাধ্য করে। এক পলকের জন্য, শব্দের বানানরে একটা ঝিঝি আওয়াজ বানায় দেয়, যেই আওয়াজ একটা গড়নের ঢপ ফুটায়ে তোলার কাজ ছাড়া আর কিছু করে না; আবার রূপরেখারে পাতলা একটা চামড়া বানায় দেয়, ভিতর থেকে উপচায় বের হয়া আসতে থাকা লেখাগুলারে অক্ষরে অক্ষরে ফলো করতে গেলে যেই চামড়া ছেদা করতেই হয়।
ক্যালিগ্রাম এই কারণে টটলজিক্যাল। কিন্তু রেটরিকের এন্টিতে। রেটরিক ভাষার পূর্ণতারে নিয়া খেলা করে। একই কথারে অন্য শব্দে কইতে পারার সামর্থ্যটা ব্যবহার করে, আর একই শব্দ দিয়া আলাদা আলাদা জিনিস কওয়ার বিলাসিতা থেকে মুনাফা নেয়। রেটরিকের সার হইলো রূপক। জমিনের উপ্রে সাজানো যায় এমন দাগ এবং আওয়াজের একটা ইউনিক ধারা মেনে খোলে এমন চিহ্ন, অক্ষরের এক সাথে দুইটা ভাব দিতে পারার এই ক্ষমতাটা ব্যবহার করে ক্যালিগ্রাম। চিহ্ন হিসাবে, অক্ষর আমরারে শব্দ ঠিক করতে দেয়; দাগ হিসাবে, জিনিসের ছুরত বানাইতে দেয়। ক্যালিগ্রাম এমনে খেলার ছলে আমরার আল্ফাবেটিকাল সিভিলাইজেশনের সবচেয়ে পুরানা দ্বন্দ্বরে মুইচ্ছা দেওয়ার গোস্তাকি করে: দেখানো আর নাম নেওয়া; ছুরত দেওয়া আর কওয়া; প্রতিরূপ বানানো আর ব্যক্ত করা; নকল করা আর ইশারা করা; দেখা আর পড়া।
দুই দিক থেকে ধাওয়া করে ক্যালিগ্রাম তার শিকারের জন্য সবচেয়ে পার্ফেক্ট ফাঁদটা পাতে। ডাবল ফাংশন ব্যবহার করে আটক নিশ্চিত করে, একা ডিস্কোর্স বা নিখাদ ড্রয়িং যেই কাজটা করতে পারতো না। জমিনের মধ্যে চেহারা পায় এমন লেখাজোখার ভাওতা ব্যবহার করে শব্দগুলার উপ্রে তাদের রেফারেন্টের জাহেরি ছুরতটা চাপায় দিয়া, যেই জবরজঙ্গ গরহাজিরিটার কথা বলে বোঝানো অসম্ভব আছিলো ওইটারে খেদায়ে দেয়। চিহ্নগুলা যেই জিনিসের কথা বলে, পাতার উপ্রে খুব চাতুরির সাথে একের পর এক বসে বসে ঠিক ওই জিনিসটারে নামায়েও আনে— বাইরে থেকে দেখলে, কাগজের খালি জমিনে চিহ্নগুলার ছাপ, আউটলাইন করা সীমানা জিনিসটারে নাময়ে আনে । এবং বদলা হিসাবে, জাহেরি ছুরতরে খোঁড়াখুড়ি করা হয়, ভিত্রে থেকে কাজ করে এমন শব্দগুলা দিয়া চষা হয়; খোঁড়াখুড়ি চষাচষি অনড়, আবছা, বেনামি হাজিরিটারে মিটমাট করে দিয়া বিশেষায়ণের জাল বুনতে শুরু করে, যেই জাল গড়নটারে আলাপের জগতে নাম দেয়, পষ্ট করে, আটকায়ে দেয়। এইটা একটা জোড়া ফাঁদ, উভয়সংকট: তাইলে পাখির উড়াল, ফুলের ফুল হয়া উঠা, পড়তে থাকা বৃষ্টিরা পলাইবে ক্যাম্নে?
এখন ম্যাগ্রিটের ড্রয়িংয়ের কথায় আসি। পয়লা আর সব চেয়ে সোজাটা দিয়া শুরু করা যাক। দেখলে মনে হয় একটা প্যাঁচ খোলা ক্যালিগ্রামের টুকরা-টাকরা দিয়া তৈরি করা। পেইন্টিংটা আগের অবস্থায় ফিরে যাওয়ার নাম করে ক্যালিগ্রামের ফাংশন তিনটারে উদ্ধার করে আনে — কিন্তু ফাংশনগুলার চরিত্র নষ্ট করার উদ্দেশ্য নিয়া, এর লেইগ্যা ভাষা আর ছবির সবগুলা বনিয়াদি সম্পর্করে আওলায়ে দেয়।
পুরানা প্রতীকটারে আবার খাড়া করার জন্য তছবিরটাতে হানা দেওয়ার পরে লেখাটা নিজের জায়গায় আইসা বসছে। ছবির নিচে নিজের স্বভাবগত জায়গায় ফেরত আসছে, আইসা ছবিটারে সাপোর্ট করার, নাম দেওয়ার, বুঝায়ে দেওয়ার, বিশ্লেষণ করার, বইয়ের পাতায় লেখার সারিগুলার ভেতর ঢুকায়ে দেওয়ার কাজ করতেছে। আরো একবার ছবিটা একটা “কিচ্ছা” হয়া গেল। ছুরত নিজে আবার সেই হওয়ায় উঠে গেল, জমিনের সাথে মিলে হরফের কুকাম যেখান থেকে তারে এক পলকের লেইগ্যা নেমে আসতে বাধ্য করছিলো। সবরকম আলাপি পিছটান থেকে ছাড়া পেয়ে এখন আবার নতুন করে নিজের স্বভাবগত নিরবতায় ভাসতে পারতেছে। আমরাও বইয়ে পাতায় আর তার ভাগ বাটোয়ারার পুরানা রীতির কাছে ফেরত আসি — কিন্তু আসলে না। কারণ ড্রয়িংটার নিচে যেই লেখাগুলা এখন পড়তে পারতেছি সেগুলাও ড্রয়িং করা — পাইপের ছবি থেকে আলাদা করে কিন্তু ছবির (এখনও আনডিফাইন্ড) সীমানার ভিত্রে পেইন্টার কিছু শব্দের ছবি আঁইক্যা রাখছেন। এইগুলারে নিজের উপর নিজেরে বসায়া দেওয়া মনে করেই পড়তে হবে। এরা হইলো শব্দ দিয়া আঁকা শব্দ; এগুলা ছবির ঠিক সামনাটায় ‘এইটা পাইপ না’ বলতেছে এমন একটা বাক্যের রিফ্লেক্শন তৈরি করে। একটা লেখার ইমেজ। কিন্তু উল্টাভাবে, যেই পাইপটারে রিপ্রেজেন্ট করা হইতেছে সেইটাও একই হাত এবং একই কলম দিয়া আঁকা: পাইপের ছবিটা লেখাটারে যতটা না চিত্রের সাহায্যে ব্যাখ্যা করে বা অভাবটা মিটায় তার চেয়ে বেশি ছড়ায়ে দেয়। ছবিটা ছোটছোট আউলা ঝাউলা হরফ আর ভেঙে টুকরা টুকরা করে পুরাটা জুড়ে ছড়ায় দেওয়া সাংকেতিক চিহ্নে গিজগিজ করতেছে ভাবতে পারি। লেখার মত গড়ন দেওয়া একটা তছবির ভাবতে পারি। পয়লা অদৃশ্য ক্যালিগ্রাফিক কাজটা লেখা আর ড্রয়িং দুইটারে গুলায়ে দিছিলো: তারপরে ম্যাগ্রিট যখন জিনিসগুলারে নিজেরার আসল জায়গায় তুলে রাখছে তখন গড়নটা যাতে লেখার ধৈর্য বজায় রাখে আর লেখাটা যাতে সবসময় একটা রিপ্রেজেন্টেশনের ড্রয়িংই থেকে যায় সেদিকে খেয়াল রাখছে।
টটলজির বেলাও সেইম। পয়লা নজরে ম্যাগ্রিট ক্যালিগ্রাফিক ডাবলিং বাদ দিয়া ছবি আর ছবির কিচ্ছার সহজ খাতিরটাতে ফিরে গেছে মনে হয়। বোবা কিন্তু চেনার লেইগ্যা যথেষ্ট পষ্ট একটা তছবির কিছু না বলেও একটা বস্তুর সার তুলে ধরে; ছবিটা থেকে নিচে লেখা নামটা “অর্থ” পায় বা ব্যবহারের নিয়ম পায়। কিন্তু, কিচ্ছার প্রথাগত কাজের সাথে তুলনা করলে ম্যাগ্রিটের লেখাটা দুই পল্লা প্যারাডক্সিক্যাল। এমন একটা জিনিসের নাম দিতেছে যেইটার নাম দেওয়ার তেমন কোনো দরকারই নাই (ছুরতটা মানুষ খুব ভালো করেই চেনে, লেবেলটাও ভালোই জানা)। কিন্তু যেই মুহূর্তে কিনা নামটা প্রকাশ করতে নিছে, ওই জিনিসটারে ওই জিনিস বলে অস্বীকার করে নাম দিছে। এই আজব খেলাটা আসতেছে কই থেকে, ক্যালিগ্রাম থেকে না আসলে? যেই ক্যালিগ্রাম এক কথা দুই বার বলে (যেখানে একবারই যথেষ্ট হইতো); যেই ক্যালিগ্রাম বলা আর দেখানোরে তালগোল পাকায়ে একটার থেকে আরেকটারে লুকায়ে দেয়। লেখাটার নিজেরে গড়ন দিতে দেওয়ার জন্য, চিপাচিপি করতে থাকা চিহ্নগুলারে কবুতর, ফুল, ঝড়বৃষ্টির আকার দিতে দেওয়ার জন্য চোখরে কোনো রকম পড়া থেকে বিরত থাকতেই হয়। অক্ষরগুলারে ফোঁটা, বাক্যরে দাগ, প্যারাগ্রাফরে জমিন বা ছোপ — ডানা, ডাল, বা পাপড়ি হয়া থাকতে হবে। তার উপ্রে চায়া থাকা লোকরে লেখাটা কিছুই বলতে পারবে না, লোকটা কোনো পাঠক না, দর্শক। ঠিক পড়তে শুরু করার সাথে সাথে গড়নটা মিলায়ে যায়। চেনা শব্দ আর বোঝা বাক্যের চার পাশ থেকে চিত্রলিপিগুলা উড়াল দিতে শুরু করে, সাথে করে গড়নের জাহিরি জাকজমক নিয়া যায়, আর সারি ধরে পাক খুলতে থাকা অর্থ রেখে যায় শুধু — পালক বা কোনো ছেঁড়া পাতার কথা বাদ, একটা ফোঁটা বৃষ্টিও তারপর আর পড়ে না। দেখে যাই মনে হোক, পাখি, ফুল, বৃষ্টির আকার ধরতে গিয়া ক্যালিগ্রাম কখনো বলে না: এইগুলা কবুতর, ফুল, বৃষ্টি। যখনই বলতে শুরু করে, বোঝাইতে শুরু করে, ততক্ষণে পাখিটা উড়ে গেছে, বৃষ্টি শুকায়ে গেছে। যে এগুলারে দেখতে পারে ক্যালিগ্রামে তারে বলে দেয় না, বলে দিতে পারে না: এইটা একটা ফুল, একটা পাখি। তখনও এমন একটা দাবি করার পক্ষে লেখাগুলা গড়নের ভিত্রে বেশিই আটকা, বেশিই চেহারার মিল দিয়া রিপ্রেজেন্ট করায় ব্যস্ত। আর যেই আমরা পড়া শুরু করি, শিলুক ভাঙ্গায়ে বাক্যটারে বের করে আনি (“এইটা কবুতর”, “এইটা ঝড়বৃষ্টি”) তখন সেইটা আর পাখি থাকে না, বৃষ্টির ফোঁটাগুলা আর ঝরতে থাকে না। চালাকি করেই হউক বা জোর কম থাকার কারণেই হউক — ক্যালিগ্রাম বলা আর রিপ্রেজেন্ট করার কাজ একই সাথে করে না। ঠিক যেই জিনিসটারে দেখাও যায় পড়াও যায় সেইটারে দেখার সময় ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়া শ্শ্ করে দেওয়া হয়, আর পড়ার সময় চোখের সামনে থেকে লুকায়ে ফেলা হয়।
ম্যাগ্রিট টেক্সট আর ইমেজরে স্পেসের মধ্যে আবার ভাগাভাগি করে দিছে। দুইটাই নিজের নিজের জায়গা ফেরত পাইছে, কিন্তু ক্যালিগ্রামের বাটপারির কিছুটা রয়াই গেছে। পাইপের ড্রয়িং করা ছুরতটা চেনা এত সহজ যে, বুঝায়ে বা বলে দিবে এমন কোনো লেখালেখির দরকার শেষ হয়া যায়। এর একাডেমিক রূপকল্পনাবাদ খুব খোলাখুলি বলে দেয়: “তুমি আমারে এত পষ্ট দেখতেছ যে আমার নিজেরে সাজায়ে নিয়ে “এইটা পাইপ” বলতে গেলে ব্যাপারটা হাইস্যকর হয়া যায়। জানায়া রাখা ভালো, আমি আমারে যতটা রিপ্রেজেন্ট করি শব্দগুলা অত ভালো করে আমারে আঁকতে পারব না।” আরেক দিকে এই যে দাগগুলা একটা হাতের লেখারে রিপ্রেজেন্ট করতেছে সেগুলা উপদেশ দিতে থাকে: “আমারে সেইটা হিসেবেই মাইনা নেও যা সাক্ষাত দেখতেছ— একটার পাশে একটা করে বসানো অক্ষর, এমন ভাবে ছুরত দেওয়া আর সাজানো হইছে যাতে পড়া সহজ হয়, নিশ্চিত হয়া চেনা যায়, একেবারে সবচেয়ে ধাক্কা খাওয়া স্কুলের পোলাটার কাছেও সোজা মনে হয়। আমি আগে ফোলা দিয়া তারপরে টানা দিয়া প্রথমে পাইপের গামলা হয়া পরে পাইপের ডাঁটি হওয়ার দাবি করি না। তুমি এখন যেই শব্দগুলা পড়তেছ আমি এরচেয়ে বেশি কিছুই না।” ক্যালিগ্রাম জুড়ে দুই পক্ষের টক্করে “এখনই বলার না” এবং “আর রিপ্রেজেন্ট করার না”-র খানাখন্দ পড়ে থাকে। ম্যাগ্রিটের পাইপে এই না-না-গুলার জন্মানোর জায়গাটা এগুলারে যেখানে খাটানো হইছে সেইখান থেকে পুরাই আলাদা। “এখনই বলার না”-টা কোনো হ্যাঁ-তে ফেরত যায় না, বরং একটা জোড়া মতামতে ফেরত যায়। একদিকে, উপ্রের, পালিশ করা, নিরব, জাহিরি ছুরতটা, যার বুকফুলা এবং বেজ্জতিভরা হদিসের উপ্রে লেখাটারে মন খুশি মত কথা বলতে দেওয়া আছে। আরেক দিকে, নিচের, লেখাটা, যেটারে এর নিজস্ব নিয়ম মাইনাই দেখানো হইছে, এ যারে নাম দিতেছে তার থেকে নিজের স্বাধীনতাটারে সমর্থন করতেছে। ক্যালিগ্রামে বাড়াবাড়িটা একটা এক্সক্লুশনের সম্পর্কের উপ্রে দাঁড়ায় থাকতো। ম্যাগ্রিটের কাজটায় উপাদান দুইটার মধ্যের তফাত, ড্রয়িংয়ে কোনো অক্ষর না থাকা, টেক্সটটার মধ্যে বুঝায়ে দেওয়া অমতটা — সত্যি সত্যিই দুইটা মতামতরে চোখের সামনে তুলে আনে।
কিন্তু আমি ডরাইতেছি, আমি মনয় ম্যাগ্রিটের পাইপের সার ব্যাপারটারেই পাত্তা দিতে ভুলে গেছি। যেন ধরেই নিছি লেখাটা বলতেছে, “আমি (যেই শব্দের সারিটা তুমি এখন পড়তেছ) পাইপ না।” ধরে নিয়ে এতক্ষণ কথা চালায়ে আসছি। এমনভাবে বলে গেছি যে, এইখানে দুইটা যুগপৎ এবং পষ্ট করে আলাদা করা মতামত এক জায়গাতে আছে: তছবিরটার একটা আর লেখাটার একটা। কিন্তু একটা মতের উপ্রে আরেকটার জেদি অথচ দোটানা পাতলা নড়বড়া ডিপেন্ডেন্সির ইঙ্গিত এড়ায়ে গেছি। ইঙ্গিতটা করা হইছে “এই” শব্দটা দিয়া। সুতরাং টেক্সট আর তছবিরের মধ্যে অনেকগুলা দেখাশোনা— বা বলা যায় একজনে বিরুদ্ধে আরেকজনের আক্রমণ, দুশমনরে তাক কইরা মারা তীর, বিনাশ আর ধ্বংসের চেষ্টা, প্রহারের ঘা, যুদ্ধ — হইছে, আমাদের মাইনা নিতে হবে। যেমন ধরা যাক, “এই” (যেই ড্রয়িংয়ের ছুরতটা তুমি নিসন্দেহ হয়া চিনতে পারছ, যেটার ক্যালিগ্রাফিক বংশের গুণ এতক্ষণ গাইলাম ওই) -“টা” (উপাদানের বিচারে, গড়নের বিচারে, জিনিসের বিচারে) “পাইপ” (মানে তোমার ভাষার এই শব্দটা, অক্ষরগুলারে তর্জমা করে মুখে করা আওয়াজটা) “না”। সুতরাং, এইটা পাইপ না-রে এমনে পড়া যায়:
কিন্তু একই সময়ে লেখাটা একেবারে আলাদা আরেকটা দাবি তুলে: “এই” (যে তোমার চোখের সামনে স্টেটমেন্টটা কাটা কাটা অক্ষরে নিজেরে সাজায়তেছে, যার মধ্যে এই হইলো একটা ইশারা আবার পয়লা শব্দ) “-টা” (লেখাটার উপ্রে যেই অদলবদল করা যায় এমন, বেনামি, কোনো নামের নাগালের বাইরের জিনিসটার একটা পসিবল রেন্ডিশন দেখা যায়তেছে সেই) “পাইপ” (-এর বরাবর হইতে…., বদলা হইতে …, ঠিকঠাক মতো রিপ্রেজেন্ট করতে পারে…) “না”। তাইলে আমাদের বরং এভাবে পড়তে হবে:
এবার, পুরাটার বিচারে সহজেই দেখা যায় যে ম্যাগ্রিটের স্টেটমেন্টটা পাইপের ড্রয়িং আর যেই লেখাটা থেকে পাইপটারে নাম দেওয়া যায় তাদের মধ্যেকার ইমিডিয়েট আর দুই তরফা ডিপেন্ডেন্সি দিয়া নাকচ হয়া যায়তেছে। আয়োজনটার ব্যাকগ্রাউন্ডে ভাসতে থাকা ক্যালিগ্রাফিক খেল এবং সাথে সাথে টেক্সট, ড্রয়িং আর তাদের মধ্যের বর্তমান তফাতটা মিলে খেলটারে ঝেড়ে নামায়ে দেওয়ার কাজের বাইরে অন্য কোথাও ডেজিগ্নেশন আর ডিজাইন ওভারলেপ করে না। এই কারণে স্টেটমেন্টটার তিন নাম্বার ফাংশনটা ধরা পড়ে: “এই” (লেখানি পাইপ আর আঁকানি লেখার আয়োজন) “টা” (আলাপ আর ইমেজ থেকে একই সাথে যেই মিশ্র উপাদানটা উঠে আসতেছে, যার আবছা সত্ত্বাটারে ক্যালিগ্রামের জবানি [ভার্বাল] আর নজরি [ভিজ্যুয়াল] খেলটা হাজির করতে চাইতেছে, সেইটা) “পাইপ” (-এর সাথে কম্পিটেবল) “না”।
ক্যালিগ্রাম বাখান [ডিস্ক্রিপ্টশন] করা জিনিসটারে যেই ফাঁদে আটকায়ে দিছিলো ম্যাগ্রিট আবার সেটা খুলে দিছে। কিন্তু খুলতে খোদ জিনিসটা ছুটে গেছে। ছবিঅলা বইয়ের পাতায় লেখাগুলার উপ্রে আর চিত্রগুলার নিচে আজীবনের জন্য ফ্রন্টিয়ার হিসাবে কাজ করে এমন চিপা জায়গাটার দিকে আমরা খেয়াল দেই না। ঠিক এই জায়গাটাতেই, এই সাদা কয়েকটা মিলি মিটারে, কাগজের শান্ত খসখসায়, ডেজিগ্নেশন, নমিনেশন, ডেস্ক্রিপশন, ক্লাসিফিকেশনের সবগুলা সম্পর্ক খাড়া করানো। ক্যালিগ্রাম এই ফাঁকটারে শুষে নিছে, কিন্তু একবার খোলার পরে আর আগের অবস্থায় ফিরায়ে দেয় নাই। ফাঁদটা শূণ্যতার উপ্রে ভেঙে পড়ছে: ইমেজ আর টেক্সট যার যার জায়গায় গিয়া পড়ছে। না তাদের মধ্যে আর কোনো কমন গ্রাউন্ড রইলো, না কোনো জায়গা রইলো যেখানে তাদের মধ্যে সাক্ষাত হইতে পারে, যেখানে শব্দরা ছুরত নিতে পারে এবং ছবিরা আলাপের ভিত্রে ঢুকে যায়তে পারে। যেই ফিকা, হ্যাংলা, বেতরফা [নিরপেক্ষ] ফিতার মত জায়গাটা ম্যাগ্রিটের ড্রয়িংয়ে টেক্সট আর তছবিরের মাঝে তফতটা বানায়ে রাখে সেই জায়গাটারে একটা চিড় বা ফাঁটল — নিজের ছবিয়ালি আসমানে ভাসতে থাকা পাইপরে মাটির জমিনে লাইনের পর লাইন বামডানবাম করে চলতে থাকা শব্দগুলার থেকে আলাদা করে দেয় এমন একটা অনিশ্চিত, ঝাপসা এলাকা হিসাবেই — দেখতে হবে। কিন্তু খালি জায়গা বা চিপা বললেও বেশি বলা হয়া যায়: বরং এইটা স্পেসের গরহাজিরি, লেখার চিহ্ন আর ইমেজের লাইনগুলার মধ্যের মুছে দেওয়া “কমনপ্লেস”। নাম দিতে থাকা স্টেটমেন্ট আর রিপ্রেজেন্ট করতে থাকা ড্রয়িং দুইটার সাথেই এক হয়া থাকা যেই “পাইপ”টা আছিলো — শব্দের আঁশ দিয়া ছুরতের চেহারা বুনতে থাকা ওই ছায়া পাইপটা — একেবারেই হাওয়া হয়া গেছে। যেই মিলায়ে যাওয়াটা দেইখা চিক্কণ গড়ানটারviii আরেক পাশ থেকে লেখাটা তাজ্জবের সাথে সায় দেয়: এইটা পাইপ না। যেই শেপরে সাধারণত পাইপ শব্দটা দিয়া নাম দেওয়া হয়, একলা হয়া পড়া ড্রয়িংটা এখন ফাউফাউ ওইটারে যতটা পারতেছে নকল করে যাইতেছে; লেখাটাও ফাউ-ই ওস্তাদি বইয়ে থাকা লেবেলগুলার সজাগ ফরমায়েশদারী ঠিক রেখে মেলতেছে। টেক্সটের রেফারেন্স আর ড্রয়িংয়ের নাম নিয়া সমান তালে বাদাবাদি করতে থাকা স্টেটমেন্টটা বাদে, তালাক নামাটা বাদে, তাদের মধ্যে অন্যকিছু দেওয়া-নেওয়া আর চলতে পারে না।
কোনোখানেই কোনো পাইপ নাই।
এই ব্যাপারটা মাথায় রাখলে, ম্যাগ্রিটের এইটা পাইপ না -র দুই নম্বর ভার্সনটা আমরা বুঝতে পারমু। পাইপের ড্রয়িং আর ড্রয়িংয়ের কিচ্ছার কাজ করে যাওয়া লেখাটারে খুব পরিষ্কার করে ডিফাইন করা ছবির (ছবিটা পেইন্টিং হয়া থাকলে অক্ষরগুলা অক্ষরের ছবি; ব্ল্যাকবোর্ড হয়া থাকলে তছবিরটা উপদেশঅলা আলাপের কন্টিনিউয়েশন) উপ্রে রেখে, ছবিটারে মোটা একটা পোক্ত কাঠের তেপায়ার উপ্রে রেখে ম্যাগ্রিট (হইলে কোনো আর্ট ওয়ার্কের স্থায়িত্ব দিয়া আর নাইলে জিনিসপত্রের তালিমের সত্য দিয়া) ভাষা আর ইমেজের কমন স্পেসটারে আবার তৈরি করার লেইগ্যা দরকারী সব রকমের কাজ করছে।
সবকিছু একটা ওস্তাদিয়ানা স্পেসের মধ্যে শক্ত করে নোঙ্গর করা। একটা পেইন্টিং একটা ড্রয়িং দেখায়তেছে, যে ড্রয়িংটা একটা পাইপের ছুরত দেখায়তেছে; এক উদ্যমী মাস্টারের লেখা দেখায়ে দিতেছে এখানে মূলত পাইপ-ই বোঝানো হইছে। মাস্টারের বেত আমরা দেখতে পাইতেছি না, কিন্তু বেতটা পুরাটা জুড়ে রাজত্ব করতেছে — ঠিক তার গলার আওয়াজের মতই, খুব স্পষ্ট করে বলতেছে, “এইটা একটা পাইপ।” পেইন্টিং থেকে ইমেজে, ইমেজ থেকে টেক্সটে, টেক্সট থেকে গলার আওয়াজে, এক রকম কল্পনার একটা বেত নড়ে নড়ে বুঝায়ে, দেখায়ে, ঠিক করে, ঠিকানা করে, একটা রেফারেন্সের সিস্টেম চাপায় দেয়, একটা ইউনিক স্পেসরে স্থির করার চেষ্টা করে। কিন্তু এইখানে মাস্টারের গলার আওয়াজ আনতে গেলাম কেন্? কারণ, মাস্টার “এইটা একটা পাইপ” কথাটা কইতে না কইতেই একটু থতমত খেয়ে নিজেরে সোধরায়ে নিয়ে বলতে হবে, “এইটা পাইপ না, বরং পাইপের ড্রয়িং,” “এইটা পাইপ না, বরং একটা বাক্য যেটা বলতেছে, এইটা পাইপ না,” “ ‘এইটা পাইপ না’ বাক্যটা পাইপ না,” “ ‘এইটা পাইপ না’ বাক্যটার মধ্যে এই -টা পাইপ না: পেইন্টিং, লেখা, পাইপের ড্রয়িং সবগুলার একটাও পাইপ না।”
না-না-গুলা নিজেরারে নামতার মত বাড়ায়তে থাকে, আওয়াজটা দিশা হারায়ে গলার মধ্যে আটকায় যায়। হতভম্ব মাস্টার তার তাক করে রাখা বেতটা নামায়ে বোর্ড থেকে মুখ ঘুরায়ে দাড়ায়, হৈহৈ করে ওঠা ছাত্রগুলারে নিরিখে, বুঝতে পারে না ছাত্রগুলা এভাবে হাসতেছে কারণ ব্ল্যাকবোর্ড আর তার থতমত খেয়ে বলা না-গুলারে ছাপায়ে একটা ভাপ এই মাত্র ওপরে উঠে আসছে, একটু একটু করে গড়ন নিতেছে, গড়ন নিয়া কোনো সন্দেহ ছাড়া ঠিকঠিক একটা পাইপ বানায়তেছে। “পাইপ, পাইপ,” বলে ছাত্ররা চিল্লায়ে উঠে সব তল্ ফালায়ে দেয়, আর মাস্টারের গলা সেই গোঁধরা জেদটা নিয়া চিল্লানির আওয়াজের তলে মিলাইতে মিলাইতে ফিসফিসায়ে বলতে থাকে, “কিন্তু এইটাও পাইপ না,” যদিও কেউ তার কথা শুনতে পায় না। মাস্টার ভুল কইতেছে না; কারণ মাথার উপ্রে এমন সাফসাফ ভাসতে থাকা পাইপটা নিজেও আসলে একটা ড্রয়িংই খালি (ব্ল্যাকবোর্ডের ড্রয়িংটার মত একটা জিনিসরে রেফার করে, যেই জিনিসের দোহায় দিয়া লেখাটা বলতে পারে এই ড্রয়িংটা সত্যি সত্যি পাইপ না)। এইটা পাইপ না। বোর্ডে যেমন পাইছিলো না বোর্ডের উপ্রেও তেমন পাইপের ড্রয়িংটা আর ড্রয়িংরে নাম দিতেছে ধরে নেওয়া লেখাটা দেখাসাক্ষাত করার বা একটা আরেকটা উপ্রে বসে যাওয়ার জায়গা পায় না, ক্যালিগ্রাফার অত দেমাগের জোরে যে ব্যাপারটা ফুটায়ে তুলতে চাইছিলো।
তো, গোল করে কাটা এবং পষ্টই লড়বড়া পায়ার উপ্রে দাঁড়ানো ইজেলটার একটু কাত হওয়া, ফ্রেমটার ঢিল হওয়া, পেইন্টিংটার গড়ায়ে পড়ে যাওয়া, কাঠখড়িগুলার ছাড়ায়ে ছিটায়ে যাওয়া বাকি। “পাইপ” “ভাঙতে” পারে: কমন প্লেস ix — গতানুগতিক আর্ট কিংবা রোজকার তালিম — হাওয়া হয়া গেছে।
(টু বি কন্টিনিউ…)

মুহাম্মদ আলী মুজাহিদ

Latest posts by মুহাম্মদ আলী মুজাহিদ (see all)
- এইটা একটা পাইপ না – মিশেল ফুকো (১) - এপ্রিল 15, 2025