ইনকেলাব ও নয়া ইনসান

বিগত প্রায় ১২ বছর যাবত, অনলাইনে ও অফলাইনে, নানাভাবে, হাসিনার জুলুমশাহির বিরুদ্ধে আমি কথা বলতেছি। যেহেতু আমার কোনো উচ্চাশা ছিল না, সরকারি পদ-পদবির লোভ ছিল না, সুশীল সমাজে গৃহীত হওয়ার কোনো বিশেষ তাড়না ছিল না— ফলে তেমন কিছু হারানোর ভয়ও ছিল না। তাই হাসিনাশাহির বিরুদ্ধে আমি অবিরাম কথা বলে গেছি। ইন্টেনশনালি এক মুহূর্তের জন্যেও আমি নিজের মোরাল গ্রাউন্ডচ্যুত হই নাই।
সে-সময়ে যারা নানা কারণে, নানা কিছুর লোভে বা ভয়ে, নানা পিছুটানের কারণে, এই ফ্যাশিস্ট সিস্টেম নির্মাণের অংশ হইছে, তাদের অনেকরেই এই বিপ্লবের পর মহাবিপ্লবী ভূমিকায় অবতীর্ণ হইতে দেখলাম। দেখে ভালো লাগছে। দেশ তো কারো একার না। দেশ সবার। আওয়ামি লীগ যে এক বাপের এক দেশ বানাইতে চায়, সেটার বিরুদ্ধেই আমাদের সংগ্রাম। ফলত অভ্যুত্থানের লাভের গুড় সবাই খাবে— এটাই আমার চাওয়া।
তাই সমন্বয়করা ঘোষণা করার আগেই ফেসবুকে এক দফার কথা বলায় যারা আমারে গোপন মেসেজে সতর্ক করছিল, হুমকি দিছিল, বা বিরক্তি প্রকাশ করছিল, তাদের আমি মাফ করে দিছি। আন্দোলন চলাকালে পুলিশের তৎকালীন আইজিপির ছেলে আমারে ফোন দিয়া যে হুমকি দিছিল, সেজন্য ওরেও মাফ করে দিছি। বিপ্লব চলাকালে যারা আমাদের বিপ্লবী তৎপরতারে নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ বা মক করার ট্রাই করছিল, পার্সোনালি ও কালেক্টিভলি, তাদেরও আমি মাফ করে দিছি। এরকম আরো বহু লোকেরে মাফ করে দিয়া সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করছি আরো আগেই।
কিন্তু আমি জানি, যা যা কিছুর বিরুদ্ধে আমি লড়ছি, কথা বলছি, কলম ধরছি, তা তা কিছুই আবার ফিরা আসতে পারে, ভিন্ন নামে, বিভিন্ন চেহারায়। মোবাইলের পার্সোনাল গ্যালারি চেকিং ফেরত আসতে পারে নাশকতাকারী ধরার নামে, নিরাপত্তার নামে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দখলের রাজনীতি ফিরা আসতে পারে ফ্যাসিবাদ উৎখাতের নামে। গণআদালত বা ‘ফাঁসিবাদ’ ফিরা আসতে পারে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার নামে। মব জাস্টিস ফিরা আসতে পারে প্রতিবিপ্লব ঠেকানোর নামে। গত ১৫ বছরের ভীতুরা ফিরতে পারে প্রবল বিপ্লবী হয়ে। আর কে না জানে, ভীতুরা যখন মহাবিপ্লবী হয়ে ফেরে, তখন সে একটু অতিরিক্ত সাহসেরই জানান দিতে চায়। ১৫ বছর ভীতু হয়ে থাকার কাফফারা দিতে চায়। তার উপর, যারা সুবিধাবাদী, চাটুকার ও বাটপার, যাদের চিরকালই পৌষমাস ও সব ঋতুই বসন্ত, তারা তো আছেনই। দিব্যি বেঁচেবর্তে। Continue reading