Main menu

সাফা প্রামাণিকের কবিতা

স্থির স্বপ্নে ৷ আমার ঘুমের ওপাড়ে ৷ নভেম্বরের শীতে ৷ কেমন শোক করবেন ৷ শহিদদের নাম ৷ স্বপ্নের প্যাটার্ন ৷ বিষ্টি নামলো অনেক বছর পর ৷ আফগানি নাম ৷ রাতের ট্রেনে ৷ আংটি বদল ৷

স্থির স্বপ্নে

একটা স্বপ্ন দেখে শেষ করার পর পরই
আমার ঘুম ভাঙে—
আর তারপর দেখি চোখের স্ক্রিনের ভিতর দৃশ্যগুলা
একে একে পার হয়
বিষাদ বিষণ্ণ হরিনের মত ৷
যোগাযোগ কি কখনো শেষ হয় বলো?
স্বপ্নে ঠিক দেখা হবে, জানো তুমিও

আমাদের আত্মা থেকে ছিটকে বের হওয়া
সেইসব নাবাল স্মৃতি
বিষ্টির আদর ছাড়াই বাড়তে থাকা তেজি ঘাসের মত
তোমার রিদয়ে পৌছেছিল ৷
লিভিংরুমের বাতাসে গোঙানি ছড়ানো স্বর আর ইতস্তত টুকরা টুকরা টান ধরা কান্না
তোমার রিদয়ে পৌছেছিল ৷

এই আজকে সকালেই,
চোখ মুছতে মুছতে তোমার সুন্দর সুশ্রী মোলায়েম চেহারাটা স্বপ্নের দৃশ্য থেকে আরো একবার মনে পড়ে যাবে—

১৭ ডিসেম্বর ‘২৪

 

আমার ঘুমের ওপাড়ে

আমার ঘুমের ওপাড় থেকে যে শব্দের দোলানি
আমার কানে এসে লাগত
সেখানে আমি আমার মায়ের গলা শুনতাম

আমি শুনতাম—থেমে থেমে একটা মৃদু ছন্দের আওড়ানি
এক তালে বাতাসের সাথে বেজে বেজে আসত
আমার মাথার কাছে এই উত্তুরে জানলার শিকের ওপর—

যেনো একদল সুফি তাদের দরগা থেকে ছড়ায়ে দিচ্ছে খোদার জিকিরের খুশবু আর বাতাসের ফেরেশতা তাকে আমার কান পর্যন্ত পৌছে দিচ্ছে উড়ে আসা পাতলা জরিদার পর্দার মত

আমার এখনো কিভাবে যে মনে পড়ে যায় ! পাচতলা ছাদের বাসাটাতে আমরা ছিলাম যখন সেই সময়ের কথা
আমি ত কখনোই আগে জাগতে পারিনাই তাহাজ্জুদে!

আমার মায়ের মোনাজাতে ঘরের ভিতর বাতাসের যে গোঙানি উঠত সেই শব্দ আমার ঘুম ভাঙে দিত প্রতিদিন
আমি চোখ মেলে দেখতাম তার নীল মখমল জায়নামাজের
সুতার পাড় মেঝেতে বিছিয়ে আছে
বিগলিত প্রার্থনার মত
আর সেখানে একটা নাবাল আত্মা সেজদার ভিতর শুধুই হাহাকার করছে—

তখন আমার মনে পড়ে যেত তুরে সিনার কথা
তখন আমার মনে পড়ে যেত সেই রোশনির কথা
যে উজ্জ্বল রোশনি আমার নবী মূসা দেখেছিলেন সফরের পথে—

আমি কতটুকু আর ডাকতে পারলাম খোদা তোমাকে? আমার ফজর ত শুধু কাযাই হয়ে যায়

আমার মায়ের যেই তাসবি অন্ধকারেও জ্বলে উঠত আমি আমার কবরে সেই তাসবিটাই শুধু আমি নিতে চাই!

২১ নভেম্বর ‘২৪
Continue reading

পপুলারিটির ধান্দা

জুলাই ম্যাসাকার আর্কাইভের হাসান ইনাম একটা পোস্ট দিছিলো, অর্থনৈতিক এবং লজিস্টিক সাপোর্ট না পেয়ে কাজ করতে না পারা প্রসঙ্গে। পোস্টটা ভাইরাল হয়।

সেইখানে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ কমেন্ট করে, আমার অফিসে এসে দেখা করো, কি কি লাগবে বলো।

এই কমেন্ট দেখে যে কী পরিমাণ বিরক্ত হ‌ইছি! বিরক্তির কারণগুলা বলি।

প্রথমত, আসিফ মাহমুদের নেটওয়ার্ক এত বাজে না যে, হাসান ইনামের নম্বর ম্যানেজ করতে ৫ মিনিটের বেশি সময় লাগবে। তারে ফোন দিয়েই পার্সোনালি বলা যায়, তাইলে আরো বেশি আন্তরিকতা থাকে। কিন্তু সে আন্তরিকতার বদলে পপুলারিটি বাইছা নিলো!

দ্বিতীয়ত, কাজ তো শুধু জুলাই ম্যাসাকার আর্কাইভ করতেছে না, এরকম কমসে কম ২০টা প্রতিষ্ঠান শুধু রাজধানীতেই আছে যারা জুলাই নিয়ে কাজ করতেছে। তাদের যদি এমন অর্থনৈতিক এবং লজিস্টিক সমস্যা হয় তাইলে কি করবে? পোস্ট করবে, ভাইরাল হবে, তারপর সেখানে গিয়া আসিফ মাহমুদ কমেন্ট করবে? এইটা কি সম্ভব? এইটা কোনো সমাধান?

মানে বলতে চাইতেছি, সিস্টেম আপগ্রেড না ক‌ইরা পার্সোনাল শো অফ করে পপুলারিটি বাইছা নিচ্ছে কেন? জুলাই নিয়ে কাজ করার সবগুলো প্রতিষ্ঠানরে সহায়তা করার মতো সিস্টেম না তৈরি করে পার্সোনাল শো অফ করে কেন?

আজকেও আসিফ মাহমুদের এক‌ই ধরনের কাজ।

ফেলানীর পরিবারের লগে দেখা করছে। তারপর ঘোষণা দিছে, তাদের পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্ব সে নিবে।

কথা হ‌ইলো, বর্ডারে বিএসএফের গুলিতে তো শুধু ফেলানী না, এরকম হাজারো ফেলানী খু-ন হয়, তাদের পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্ব কে নেবে? ফেলানীর মতো তারা ভাইরাল না বলে কেউ নিবে না দায়িত্ব? Continue reading

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের বিভীষিকাময় নির্বাচন ও কিছু অভিজ্ঞতা

অভিজ্ঞতা জঘন্য, কেঁদেছি নিজের অক্ষমতায়।

আমি প্রিজাইডিং অফিসার ছিলাম। দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়েও পাইনি, যদিও তখনো জানতাম না কি ঘটতে যাচ্ছে। ট্রেনিং-এর সময়ও প্রশাসনের হাবেভাবে মনে হয় নি এমন ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে। আমার কিছুই করার ছিলনা। আমার কেন্দ্রে ভোটার ছিল ২৩৮৭ টা। ওরা রাতেই (২৯ ডিসেম্বর,২০১৮) ১৫০০ ব্যালটে সীল মেরেছে। দিনেও জোর করে আরো ৪০০ ব্যালট নিয়া নিজেদের লোক দিয়ে সিল মেরে বাক্সে ঢুকিয়েছে। শুধু এভাবেই ওরা ভোট নিয়া নেয় ১৯০০; এই কেন্দ্রে ধানের শীষ পেয়েছে মাত্র ২৭ ভোট, তাতেই তাদের মাথা গরম। এই ২৭ জন কারা, এটাও তাদের মাথা ব্যথার কারণ হয়েছে!

আসল কথা বলি: এসপি, ডিসি, নৌকার প্রার্থী এরা সকলে বসে মিটিং করে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, এভাবেই ভোট হবে। সকালে আর কোন লুকোছাপা ছিলনা। ছিলনা কোন গোপনীয়তার ব্যাপারও। ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতাকর্মীরা প্রশাসন ও উচ্চপর্যায়ের পুলিশ অফিসারদের প্রশ্রয়ে ও সম্মতিতে খুব নিরাপদে, উৎসাহ ও উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট ডাকাতি করছে, কিছুই করার ছিলনা অন্য কারো! তাদের সামনে আমরা সকলে ছিলাম অসহায়।

আমাকে ইউএনও, এসপি, ডিসি সবাই ফোনে কল দিয়েছে। একইভাবে অন্য কেন্দ্রে দায়িত্বরত আমাদের সহকর্মীদেরও কল দিয়ে বলে দেয়া হয়েছে, কি করা যাবে না এবং কাদের কথা শুনে কাজ করতে হবে।

বলা হয়েছিল, স্থানীয় নেতারা যেভাবে বলে ঠিক সেভাবেই সহযোগিতা করতে হবে। একই মিটিং-এ এসপি, ডিসি ও প্রার্থী বসে থেকে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ফোনে কল দিয়া বেশীর ভাগ ব্যালট রাতেই আওয়ামী লীগের কর্মীদের দিয়ে দিতে বলছিল। তা না করলে, আমাদের সমস্যা হবে বলে শাসিয়েছিল!

আমাদের এখানে সব কেন্দ্রে একই ঘটনা ঘটছে। আমার কাছ থেকে জোরাজুরি করে প্রথমে ৬০০ ব্যালট (৬ বান্ডিল) নিয়া নেয় । সীল শেষে আবার চাইতে আসে ব্যালট, আমি নিষেধ করায় ফোনের পর ফোন। পরে আরো ৬ বান্ডিল নেয় তারা । সেগুলো সীল মারার পর আবার আসে। এবারো দিতে চাই নাই বলে স্থানীয় আওয়ামী নেতা হুমকি দেয়। তার পর আরো ৩ বান্ডিল দেই, মোট ১৫০০ (পনের শ’)। এই সকল কর্মীদের নাকি এসপি, ডিসি বলে দিয়েছে, যে কেন্দ্রে নৌকার প্রার্থী সবচেয়ে বেশি ভোট পাবে, সে কেন্দ্রের দায়িত্বশীল গ্রুপ পুরস্কার পাবে। ওই নেতা রেগেমেগে চিৎকার করে বলে, আপনি আমাকে পুরস্কার থেকে বঞ্চিত করতে চান?

এই সব কিছুই প্রশাসনের সহায়তায় হয়েছে। দুই দিনের অসহনীয় ও অসম্মানজনক ঘটনার ভেতর দিয়ে কষ্টকর বিপুল অভিজ্ঞতা আমাদের সকল সহকর্মীদের হয়েছে। এমন কি, আমাদের নারী কলিগদের একই ধরণের ঘটনার ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে! সবাই একে অন্যের ঘটনা আমরা জানি। আজকে আরো জানছি!

আমি মাঝখানে আওয়ামী লীগের পোলিং এজেন্টদের কয়েকজনকে সরিয়ে দিয়ে, ইয়াং ভোটারদের জোর দিয়ে বলছি, তোমরা যাকে ইচ্ছে তাকে ভোট দাও, এদের কথা শুনবা না। তাতেও লাভ হয়েছে বলে মনে হয় নাই। Continue reading

বিচারপতির স্কাইপি কনভারসেশন (২০১২) – পার্ট ২: বাবু হলো জেএসডি, আর ওই ঠাকুর হলো সিপিবি। আমরা আওয়ামী লীগ দিব।

পার্ট ১

তাঁর নাম হইল সোনা জাহাঙ্গীর

২৭ আগস্ট ২০১২

.

নাসিম: হ্যালো
জিয়াউদ্দিন: হ্যালো
নাসিম: কেমন আছেন?
জিয়াউদ্দিন: আছি আছি। আমি তো বুজতেছি না। আপনাদের ওইখানে কী হইতেছে। এই লোক এই যে, নাম আসছে এই লোকটা কে আসলে?
নাসিম: জাহাঙ্গীর।
জিয়াউদ্দিন: এ কি আপনার মানে… অ্যা… অ্যা… অ্যা…। এটা আমার তো কোনো ধারণাই নেই এই লোক সম্পর্কে।
নাসিম: আমাদের চয়েসও না, আমার জানা মতে ল’মিনিস্টারের চয়েসও না। কিন্তু তার নাম আইসা চিফ জাস্টিসের রিকোমেন্ডেশন হইয়া গেছে। সে হলো জজকোর্টে ল’ইয়ার ছিল। জজকোর্টের লেবেল থেকে মনে হয় হইছে। কামরুল-টামরুল করছে আর কি। যা-ই হোক, মনে হচ্ছে আমার। জজকোর্টে ল’ইয়ার ছিল। আপনার অ্যা… স্মাগলিং কোর্টের পিপি আছিলে। তাঁর নাম হলো সোনা জাহাঙ্গীর।
জিয়াউদ্দিন: হেয়… হে য়ে, ও মাই গড! এইটা হইল কী কইরা!
নাসিম: হেডা আমি জানি না। আমার সঙ্গে ল’মিনিস্টারের যে কথা, তাতে আওনের কথা বাবু (বিচারপতি রুহুল কুদ্দুস বাবু। বর্তমান সরকারের আমলে বিচারপতি হওয়ার দুই দিন আগে পর্যন্ত যিনি খুনের মামলার প্রধান আসামি ছিলেন) বা গোবিন্দ (বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর), ল’মিনিস্টার তাই বলছেন। কালকে চিফ জাস্টিসের লগে দেখা হইলো। কালকে উনি এমন কিছু বলেন নাই। এসব আলাপ করেন নাই। উনি বলছেন যে, আপনাদের খুব সুনাম আছে এবং বায়-টায় কোনো বদনাম নাই, এইটা মেইনটেন করতেছেন। এটা খুব ভালো। কোনো ধরনের বদনাম আপনাদের নাই। আইজকে দেখলাম যে নাম দিছে। এখন যাক, কী আর করার।
জিয়াউদ্দিন: এইটা তো… তার মানে একটা করাপ্ট মানুষকে দেওয়া হইছে?
নাসিম: অন্ততপক্ষে হি ওয়াজ করাপ্ট—এটা বলা যাইবে।
জিয়াউদ্দিন: আরে এইটা কি এমন একটা জিনিস যে, কালকে ছিলেন করাপ্ট, আজকে ভদ্রলোক হয়া গেলেন?
নাসিম: হা… হা… হা… হা…। যা-ই হোক, কী কমু আমি?
জিয়াউদ্দিন: এটা আরেকটা ভেজাল, আরেক ভেজাল লেগে যাবে আমাদের।
নাসিম: ভেজাল লাগবে না। কারণ তারে বলা হইছে… বলা হইছে যে, চেয়ারম্যান যা কইবে, তুমি খালি ইয়েস কবা। এমনে সে লেখাপড়া জানে। এইডা আমি বলমু, বুঝলেন।
জিয়াউদ্দিন: হু?
নাসিম: লেখাপড়া জানে?
জিয়াউদ্দিন: লেখাপড়া জানে মানে! কোন সেন্স থেকে? পড়ালেখা কী করেছেন উনি?
নাসিম: না… এমনে কেইস-টেইস…। ল’ইয়ার, ভালো ছেলে। অ্যা.. কোর্ট পারফরম্যান্সও ভালো ছিল। এগুলা ঠিক আছে কিন্তু।
জিয়াউদ্দিন: জুডিশিয়ারিতে ছিলেন এর আগে?
নাসিম : না না, ল’ইয়ার।
জিয়াউদ্দিন: ও আচ্ছা তার মানে, এ ইয়ের কোটায় আসছে আর কি।
নাসিম : কামরুল কোটায়। আমার ধারণা, হে কামরুল কোটায় আসছে।
জিয়াউদ্দিন: এটা কীভাবে সম্ভব হইতেছে? এটা কি প্রধানমন্ত্রী কিছুই জানেন না!
নাসিম: প্রধানমন্ত্রী তো আবার হেদের খুব পছন্দ করেন। সাহারা খাতুন… টাতুন এদের বুঝেন না!
জিয়াউদ্দিন: আপনি কি জানতেন? ও জহির সাহেব ইয়ে করতেছে। উনি কিছু বলছেন টলছেন আপনাকে?
নাসিম: না না না, উনি ফাস্ট হাফে আমার লগে কোর্ট করছেন। কোর্ট কইরা নামছেন নিচে। নামার পরে উনি পট কইরা দশ মিনিট পর ফোন কইরা বলল, স্যার, আমি একটু ইমারজেন্সি…। আমি আসতেছি, স্যার। এই কথা কইয়া চইলা গেল। তখন নাকি তারে ল’মিনিস্টার ডাকাইয়া সেক্রেটারিয়েট নিছে। সে আইসা আমারে বলে, ‘আই এম নো মোর ইয়োর মেম্বার’। আমি কই মানে! কী বলছেন আপনে? উনি বললেন, আপনি কোর্টে উঠেন…। আপনার লগে দেখা করে যাব। তবে আমি কোর্টে উঠবো না, উঠতে পারতেছি না আমি। শ্যাষে আমি কোর্টে উঠলাম। কোর্ট সাইরা চারডার সময় দেখা করল। তখন আমাকে বলল যে, এ রকম ডাকাইল… ডাকাই নিয়া বলল যে, রিজাইন করেন। রিজাইন করলাম… রিজাইন দিয়ে আসলাম। আর আজকে স্বীকার পাইছেন উনি যে, পরশু দিন রাতরে উনারে মন্ত্রী ডাকাইছিলেন বাসায়।
জিয়াউদ্দিন: আইনমন্ত্রী?
নাসিম: এবং বাসায় নিয়া বলতেছে…, আপনারে আমরা ই তে নিব। ল’ কমিশনে নিব। আপনি রিজাইন দেন। আজকে ডাকাই নিয়ে একেবারে রেজিগনেশন রাইকখা দেছে এককেরে।
জিয়াউদ্দিন: ল’কমিশন দিলে খারাপ না, এটা একদিক থেকে।
নাসিম: এইডা আমার সঙ্গে আলাপ করছে সে। বলছে ওইখানেই দেবে।
জিয়াউদ্দিন: সো এইটা আইনমন্ত্রী বলেছেন।
নাসিম: হু আমারে আইন মন্ত্রীই কইছে।
জিয়াউদ্দিন: এটা ঠিক আছে। হ ওইটা ঠিক আছে। ইট উইল বি গুড। অ্যাট সট অব ওয়ার্ক। Continue reading

তর্ক: “আসল কোরান কোথায়?” (১৮৯২) – মুনশি মোহাম্মদ মেহেরুল্লা ও পাদ্রী জমিরউদ্দিন

[১৮ শতকের শুরুর দিকে বাংলা ভাষায় বই ছাপানো শুরু হইলেও, শেষের দিকে আইসা এইটা ছড়াইতে থাকে; তো, বই হিসাবে ধর্মিয় পুস্তকই বেশি ছাপা হইতো পত্রিকার বাইরে, স্পেশালি খ্রিষ্টধর্মের উপদেশ বানী… এর ফলে ব্রাহ্মণদের (এবং অন্য জাতের হিন্দুদের) খ্রিষ্টান হওয়ার ঘটনা যে বাড়তেছিল – তা না, মুসলমানদের ভিতরেও খ্রিষ্টান হওয়ার ট্রেন্ড শুরু হইতেছিল…

অই সময়ের একজন খ্রিষ্টান, পাদ্রী জমিরউদ্দিন শেখ (যিনি মুসলমান থিকা খ্রিষ্টান হইছিলেন) “ খ্রীস্টীয় বান্ধব” নামের মাসিক পত্রিকায় কোরানের বিষয়ে লেখেন যে, কোরান তো আসল না! তখন মুন্সি মেহেরুল্লাহ এর জবাব দেন মাসিক “ সুধাকর” পত্রিকায়; এর পরে আরো এক দফা উনাদের তর্ক চলে, এবং জমিরউদ্দিন (১৮৭০ – ১৯৩৭) খ্রিষ্ট-ধর্ম বাদ দিয়া ইসলাম ধর্মে ফিরা আসেন, কিছু বইও লেখেন… এরপরে মুন্সি মেহেরুল্লাহ (১৮৬১ – ১৯০৭) কাল্ট ফিগারে পরিনত হন, বেশ কিছু বই উনি লেখেন এবং ইসলাম ধর্ম বিষয়ে এক্টিভিজমও করেন

এই তর্কের টেক্সট’টা শেখ হবিবর রহমানের লেখা “ কর্ম্মবীর মুনশী মেহেরুল্লা” (১৯৩৪) থিকা নেয়া হইছে; তর্কের বাইরেও বাংলা-ভাষার হিস্ট্রিকাল রেফারেন্স হিসাবেও এইটা পড়া যাইতে পারে]

এক.

১৮৯২ সালের জুন মাসের “খ্রীষ্টীয় বান্ধব” নামের মাসিক পত্রিকায় এই লেখাটা ছাপা হয়:

“আসল কোরান কোথায়?”

আমরা যখন মুসলমানদের নিকট সুসমাচার প্রচার করি, তখন অনেক মুসলমানেই কহিয়া থাকেন যে, ‘আপনাদের ধর্মশাস্ত্র পরিবর্তিত হইয়াছে। কিন্তু আমাদের কোরান কখনই পরিবর্তিত হয় নাই। খোদাতা’লা মোহাম্মদ (দঃ) এর উপর যাহা নাজেল করিয়াছিলেন অদ্যাপি অবিকল তাহাই রহিয়াছে।” আমাদের ধর্মশাস্ত্র যে কখন পরিবর্তিত হয় ‘নাই, একথা মুসলমানদিগকে অনেক পুস্তকে লিখিয়াছি। ……… যিনি মুসলমান শাস্ত্রে অজ্ঞ, তিনিই বলেন যে, কোরান কখনই পরিবর্তিত হয় নাই। আমরা মুসলমানদিগের হাদিছ এবং অন্যান্য ধর্মগ্রন্থ হইতে প্রমাণ দিতেছি যে, আসল কোরান বিকৃত ও পরিবর্তিত হইয়াছে। সুতরাং
মুসলমানদিগের হস্তে এখন আসল কোরান নাই।

(১) কোরান মোহাম্মদ (দঃ) এর সময় একত্র সংগৃহীত হয় নাই। দেখ – “তিমিক্তি” – সুন্নী মুসলমানদিগের হাদিছ।

(২) মোহাম্মদ (দঃ) এর মৃত্যুর পর খলিফা আবুবকর (রাজিঃ) জয়েদ দ্বারা কোরান শরিফের সুরাগুলি একত্র এবং শৃঙ্খলাবদ্ধ করিয়াছিলেন। দেখ – “বোখারী” গ্রন্থে।

(৩) ওসমান (রাজিঃ) দুইবার কোরান দগ্ধ করেন। দেখ – “মেশ কাত উল মশাবী”।

(৪) শিয়া সম্প্রদায় কহিতেছেন যে, কোরানে আলীর (রাজিঃ) এবং তাঁহার বংশের মাহাত্ম্যের বিষয় অনেক কথা লেখা ছিল। কিন্তু কাফের ওসমান (রাজিঃ) তাহা কোরান শরিফ হইতে উদ্ধৃত করিয়া দগ্ধ করিয়া ফেলিয়া দিলেন। দেখ – “নহল আলবালাগত” এবং শিয়াদিগের হাদিছ। কলিকাতা, দিল্লী, এলাহাবাদ প্রভৃতি ভারতের নানা নগরে শিয়াগণ বাস করিতেছেন, তাঁহাদিগকে একবার জিজ্ঞাসা কর।

(৫) এমাম জাফর কহিতেছেন যে, – সুরা আহজাবে কোরেশের স্ত্রী ও পুরুষের ভ্রষ্টতার বিষয় বর্ণিত ছিল; ঐ সুরাটি সুরা বকর হইতে বড়। দেখ – “আইনুল হক” গ্রন্থের দুই শত আট ওরকের দ্বিতীয় পৃষ্ঠা। আনিস এবনে মালিক কহিতেছেন, যখন আর্মিনিয়ায় সুরীয় দেশের লোকদিগের সহিত আজার মিজান ইরাফ লোকদিগের যুদ্ধ হইতেছিল, তখন হাফিজা এবনে ইমাম ওসমানের (রাজিঃ) নিকট আসিয়া কোরান পাঠকের পাঠে অমিল হইবে এইরূপ ভয় করিয়া কহিল, – হে বিশ্বাসী লোকের পথ- প্রদর্শক, শিষ্যদিগের তথ্য লউন। পাছে তাহারা ইহুদী ও নাছারাদিগের নায় শাস্ত্রে গোলযোগ উৎপন্ন করে। তাহাতে ওসমান (রাজিঃ) হাফিজার (মোহাম্মদ (দঃ) এর স্ত্রী) নিকট লোক প্রেরণ করিয়া কহিলেন যে, তুমি কোরানের হস্তলিপিখানি আমার নিকট পাঠাইয়া দাও। আমরা নকল করিয়া ইহা তোমার নিকট পুনরায় পাঠাইয়া দিব। তখন ওসমান (রাজিঃ) জৈয়দ এবনে শাবিৎ, ‘আবদুল্লা এবনে জবির এবং হারিৎ এবনে ইমাম এই তিনজনকে আদেশ দিলেন যে, তোমরা উহা নকল কর। তাহারা উহা নকল করিলেন। আর ওসমান (রাজিঃ) উক্ত তিনজনকে কহিলেন, – যখন তোমাদের এবং জায়েদের কোরানের সঙ্গে পরস্পর অমিল হইবে, তখন তাহা কোরেশের ভাষায় লিখিও। কারণ কোরান এই ভাষায় নাজেল হইয়াছে। তাঁহারা ঠিক সেইরূপ করিলেন। খাতাটা নকল হইয়া গেলে, ওসমান (রাজিঃ) পুনরায় তাহা জয়েদের নিকট পাঠাইয়া দিলেন। আর যাহা লেখা হইল, তাহার এক একখানি প্রতিলিপি নানা প্রদেশে পাঠাইয়া দেওয়া হইল এবং পূর্ব্বকার যত খাতা ছিল, তাহা দগ্ধ কবিবার আদেশ দিলেন। দেখ, -বোখারী-সুন্নিদিগের হাদিছ গ্রন্থ। Continue reading

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
জীবিকার জন্য একটা চাকরি করি। তবে পড়তে ও লেখতে ভালবাসি। স্পেশালি পাঠক আমি। যা লেখার ফেসবুকেই লেখি। গদ্যই প্রিয়। কিন্তু কোন এক ফাঁকে গত বছর একটা কবিতার বই বের হইছে।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →